#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_6
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain
পাত্রপক্ষরা কিছুক্ষণ আগেই নাফিয়াকে দেখে চলে গেছে ।যাওয়ার আগে এও বলে গেছে তাদের মেয়ে খুব পছন্দ হয়েছে ।শিগ্রই তারা আকদটা করিয়ে ফেলতে চায় । নাফিয়ার বাবা , চাচাও পাত্রপক্ষকে সম্মতি জানিয়েছে তারাও আকদ করিয়ে ফেলতে চায় ।ছেলেরা আকদ করার ডেট সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের কাছে জানাবে বলেছে ।
পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর থেকে নাফিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মায়ের কাছে ।কিছুক্ষণ কেঁটে যাবার পর ফাতেমা আরা মুখ খুললেন ।তিনি বললেন
ছেলেটাকে দেখে ভালোই মনে হল ।
নাফিয়া মায়ের কথা শুনে মায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে আমি পড়াশোনা করতে চাই মা ।
এইখানে থাকলে তুই মরে যাবি মা ।শান্তিতে বাঁচতে পারবিনা এদের জন্য তাই বলছি বিয়েতে রাজী হয়ে যা ।শ্বশুরবাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করিস ফাতেমা আরা থমথমে গলায় বললেন ।
নাফিয়া মায়ের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে এই বাড়ির মত শ্বশুরবাড়ি-ও যদি খারাপ হয় তো ?
ফাতেমা আরা কি জবাব দিবেন মেয়েকে ভেবে পাচ্ছেন না ।সত্যিই যদি শ্বশুরবাড়ি খারাপ হয় মেয়ের তখন কি হবে ? তারপর-ও তিনি মেয়েকে আশ্বস্ত করে বললেন আমি ছেলেদের বাড়ির সব খোঁজ খবর নিব ।ছেলেদের ব্যাকগ্রাউন্ড যদি ভালো হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই আর যদি খারাপ হয় আমি বেঁচে থাকতে ঐ ছেলের সাথে তোর বিয়ে হতে দিবনা ।তুই চিন্তা করিস না ।
নাফিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল তুমি কিভাবে খোঁজ নিবে ? তুমি নিজেই তো বাইরে বের হতে পারোনা ।
ফাতেমা আরা বললেন জরির ছেলেকে দিয়ে খোঁজ লাগাব ।
আমাদের বাড়ি কাজ করে যে সেই জরি খালার ছেলে ?
ফাতেমা আরা মাথা ঝুলিয়ে বললেন হুম ।তবে তোকে আমায় কথা দিতে হবে যদি ছেলে ভালো হয় তাহলে কোনো কথা ছাড়াই তুই বিয়ে করে নিবি ।
নাফিয়া কিছুক্ষণ ভেবে মুচকি হেঁসে মাথা ঝুলিয়ে বলল ঠিক আছে ।
সারারাত তনয় বাইরেই ছিল ।দুপুর বারোটায় বাড়িতে এসে যখন শুনল নাফিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন তার মাথায় যেন আগুন ধরে গেল । সে রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে রুমের সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করা শুরু করেছে ।
আরিফ খাঁন ছেলেকে দুইহাতে জড়িয়ে বললেন শান্ত হ বাপ এমন করিস না ।আমি নিজেও জানতামনা আজম নাফিয়ার বিয়ে ঠিক করছে ।
তনয় আরিফ খাঁনকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল তুমি তোমার ভাইকে এক্ষুনি গিয়ে বলবে নাফিয়ার বিয়ে ভাঙতে ।নাহলে আমি এই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিব ।
ছেলের কথা শুনে আরিফ খাঁনের মুখ থমথমে হয়ে গেল ।তিনি আজম খাঁনের বড় ভাই হলেও তিনি ছোট ভাইকে ভীষন ভয় পান ।তিনি কিভাবে বলবেন ভাইকে মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিতে ? এমনিতেই আজম যে রাগী দেখা যাবে শেষে তাকেই রেগেমেগে খুন করে বসবে ।যে নাকি নিজের মেয়েকে খুন করতে পেরেছে নিজ হাতে , তাকে খুন করতে-ও দুইবার-ও ভাববেনা আজম ।আর এইদিকে তনয়ের যে নাফিয়াকে মনে ধরেছে সেটা তিনি অনেক আগেই টের পেয়েছিলেন ।একদিকে নিজের ছেলে আরেকদিকে আজম কি করবেন তিনি ? আরিফ খাঁন ভাবে ।
আরিফ খাঁনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তনয় বলে উঠে কি হল চুপ মেরে আছো যে ? যাও……
ছেলের কথায় আরিফ খাঁন সম্ভিত ফিরে পেলেন ।তিনি গম্ভীর গলায় বললেন এটা আমার দ্বারা কোনোদিন-ও সম্ভব না ।
তনয় তাচ্ছল্য হেঁসে বলল ও…. বুঝেছি তুমি তো আবার তোমার ছোট ভাইয়ের পা চাটা গোলাম হাহ ।তোমায় কিছু করতে হবেনা যা করার আমি-ই করব ।এখন যাও আমার চোখের সামনে থেকে ।
আরিফ খাঁন চলে গেলে তনয় ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয় ।তারপর পকেট থেকে ফোনটা বের করে পাত্রের বাবা নাজিম শেখের কাছে ফোন লাগায় ।
ফোন রিসিভ করতেই তনয় বলল ,
আপনারা মেয়ের ব্যাপারে সব জানেন তো ?
নাজিম শেখ চমকে বললেন মানে ? আর আপনি কে ?
আমি কে তা আপনার না জানলেও চলবে ।কিন্তু আমি আপনার ছেলের ভালোর জন্য-ই বলছি আজকে যাকে দেখতে এসেছিলেন তার চরিত্র ভালোনা ।রাত বিরাতে ছেলেদের সাথে ঘুরতে চলে যায় এই মেয়ে ।আমি আপনাদের এসব বলতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু আপনার ছেলের কথা ভেবে আপনাকে না বলেও পারলাম না ।আপনার ছেলের ভালো চাইলে এই পরিবারের সাথে সম্পর্ক করিয়েন না ।
নাজিম শেখ কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু বলতে পারলেন না তার আগেই তনয় ফোন কেঁটে বাকা হাঁসি দিল ।
নাজিম শেখ গম্ভীরভাবে কিছু একটা ভেবে স্ত্রী নাইমা আর ছেলে শান্তকে ডেকে বললেন
আজম খাঁনের সাথে সম্পর্ক করা যাবেনা ।
শান্ত চমকে বলল কেন বাবা ?
নাজিম খাঁন গম্ভীরগলায় বললেন মেয়ের চরিত্রে সমস্যা আছে ।মেয়ে ভালোনা এই মেয়েকে ঘরে আনলে তোমার ভবিষ্যতটাই নষ্ট হয়ে যাবে আর সাথে আমাদের-ও মান সম্মান যাবে ।
মিসেস নাইমা বললেন দেখতে দেখা যায় কত সাধাসিধা আর ভেতর কত নোংরা এই মেয়ের ।তুমি এক্ষুণি আজম খাঁনকে ফোন দিয়ে না বলে দাও ।কোনো প্রয়োজন নেই এই মেয়েকে ঘরে বৌ করে আনার ।
নাজিম শেখ শান্তর দিকে তাকালেন ।
শান্ত বাবার চাহনি বুজতে পেরে বলল বাবা তোমরা যা ভালো বোঝ তাই করো ।
নাজিম শেখের খুব রাগ লাগছে ।ছেলেটা যদি ফোন করে মেয়ের ব্যাপারে তাদের কাছে না জানাত তাহলে তো তারা জানতেই পারত না ।উল্টো বিয়ে হয়ে যেত ঐ মেয়ের সাথে ,ছেলের লাইফটাও নষ্ট হয়ে যেত , মান সম্মান কিছু বাকি থাকত না তাদের ।ছেলের আকদ হওয়ার আগেই ভাগ্যিস ছেলেটা ফোন করে তাদের সব বলে দিয়েছে নাহলে পরে কিছুই করার থাকত না ।তাই তিনি ঠিক করলেন আজম খাঁনকে কিছু কড়া কথা শোনাবেন ।তিনি আর সময় নষ্ট না করে আজম খাঁনকে ফোন দিয়ে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিলেন । তারপর না করে দিলেন তারা এই সম্পর্কটা করতে চায়না এই বলে নাজিম শেখ আজম খাঁনকে কিছু বলার সু্যোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলেন ।
___________________
সন্ধ্যা সাতটা বাজে নাফিয়া এখন দুপুরের ভাত খাচ্ছে ।
ফাতেমা আরা নাফিয়ার রুমে এসে হাঁসিমুখে বললেন ছেলে আর ছেলেদের পরিবার খুব ভালো ।ঐ বাড়িতে গেলে তুই খুব সুখী হবি মা ।
নাফিয়া ভাত খাওয়া রেখে মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলল তুমি এই বিয়েতে খুশী থাকলে আমিও খুশী মা ।
এদিকে আজম খাঁন বাড়ি ফিরে এসে হনহন করে নাফিয়ার রুমে ঢুকলেন ।নাফিয়া মাত্রই ভাত মুখে দিতে যাচ্ছিল তখনি আজম খাঁন ভাতের প্লেট টা দূরে ছুরে ফেললেন ।
ফাতেমা আরা কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন ক্ কি হয়েছে ?
আজম খান ফাতেমা আরার গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারলেন আর বললেন এবার শান্তি হইছিস মা মেয়ে বিয়ে ভেঙে ।তোর মেয়ের কুকীর্তির কথা তারা জেনে গেছে ।আজম খাঁন নাফিয়ার দিকে ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে তাকালেন ।নাফিয়ার চুল ধরে টানতে টানতে ড্রইংরুমে নিয়ে এলেন।ফাতেমা আরা-ও কাঁদতে কাঁদতে আজম খানের পেছন পেছন চলে এলেন ।
ড্রইংরুমে আরিফ খাঁন , তনয় , নিলয় বসে ছিল ।আজম খাঁনকে এভাবে ক্ষিপ্ত হতে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পড়ল ।
যে-ই না আজম খাঁন নাফিয়াকে ঘাঢ় ধরে বের করে দিবেন তখনি নিলয় বলে
উঠল কি হয়েছে চাচা ?
আজম খাঁন নাফিয়াকে ফ্লোরে ধাক্কা মেরে বলল
ওরা বিয়ে ভেঙে দিসে ।
নাফিয়া ফ্লোরে বসে শব্ধহীনভাবে কাঁদছে ।
তনয় মনে মনে খুব খুশি হল ।সে ভাবে এটাই মুক্ষম সময় টোপটা ফেলার ।সে আজম খাঁনের কাছে এসে স্বাভাবিক গলায় বলল
চাচা আমি নাফিয়াকে বিয়ে করতে চাই ।
নাফিয়া স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তনয়ের দিকে ।
চলবে,
@Nusrat Hossain