#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_০৯
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-” রাতে ডিনার শেষ করে শিক্ষা নিজের রুমে বসে ফেসবুকিং করছে এমন সময় আবৃত্তি তার রুমে আসে। আবৃত্তি কে দেখে শিক্ষা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনি হঠাৎ আমার রুমে?কিছু লাগবে আবৃত্তি ম্যাম? কিছু লাগলে আমাকে কল করতে পারতেন।আমি দিয়ে আসতাম আপনার রুমে।আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট করে এইখানে আসতে হতো না।”
-” আমি খুব খারাপ তাই না রে শিক্ষা?আমাকে তুই খুব ঘৃণা করিস তাই না?
-” বড় বোন হচ্ছে মায়ের মতো।মায়ের পরে কেউ যদি আপন হয়ে থাকে সেটা হচ্ছে বড় বোন।বড় বোন থাকা ভাগ্যের ব্যাপার।তারা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য,ঘৃণার নয়।”
-“তোর থেকে এমন উত্তর আমি কখনো আশা করি নি।শুনে অনেক ভালো লাগলো আমার। আগামীকাল আমার ফ্রেন্ড বর্ণের জন্মদিন।সব ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করেছে।তোকে ও নিয়ে যেতে বলেছে।যাবি তুই? চল গেলে তোর ভালো লাগবে।”
-” আপনার ফ্রেন্ডের জন্মদিন সেইখানে আমি গিয়ে কি করবো? তাছাড়া বড় আব্বু এমনিতেই আমার উপর রেগে আছে।আমাকে কি যেতে দিবে?”
-” পাপা কে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।এটা তুই আমার উপর ছেড়ে দে।আমি তোকে নিয়ে যেতে চাইলে পাপা অবশ্যই যেতে দিবে।”
-” ঠিক আছে।আপনি যখন এতো করে বলছেন অবশ্যই যাবো।”
-“আবৃত্তি শিক্ষার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললো , প্যাকেট খুলে দেখ তোর পছন্দ হয় নাকি?”
-” কি আছে প্যাকেটের মধ্যে?”
-” একটা শাড়ি।আমরা সবাই শাড়ি পরে যাবো।তাই তোর জন্যে ও একটা এনেছি। পছন্দ হয়েছে তোর?”
-” হ্যাঁ খুব পছন্দ হয়েছে। থ্যাংক ইউ সো মাচ। কিন্তু কখন যেতে হবে?”
-” রাত বারোটায় বর্ণের ফ্যামিলির সবাই মিলে একবার কেক কাটবে। দুপুরে পার্টির আয়োজন করেছে। তখন ফ্রেন্ডদের সাথে আবার কেক কাটবে। আমাদের একটু সকাল সকাল যেতে হবে।সব ফ্রেন্ড মিলে বর্ণের জন্য একটা সারপ্রাইজের প্লান করছি। তুই সকাল সকাল রেডি হয়ে থাকিস।”(লেখিকা নূন মাহবুব )
-” ঠিক আছে ।”
-” ওকে গুড নাইট বলে আবৃত্তি দরজার দিকে পা বাড়ানোর আগেই গাড়ির হর্ন শুনতে পেল। আবৃত্তি ফিরে এসে শিক্ষাকে বললো, মনে হয় ভাইয়া এসেছে।গিয়ে একটু দরজা খুলে খাবার টা দিয়ে আয় তো।”
-” আপনার ভাইয়ের সামনে যেতে আমার ভালো লাগে না। সবসময় আমাকে সন্দেহ করে। আমি যাচ্ছি না।বড় আম্মু বা সাথী দরজা খুলে খাবার দিবে তাকে।মাপ করবেন আমাকে।আমি আপনার কথা রাখতে পারলাম না।”
-” মম মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সাথীর নাকি শরীর খারাপ করছে ।তাই সাথী ও ঘুমিয়ে পড়েছে।আর তুই দেখতেই পাচ্ছিস আমি মুখে ব্লাক মাক্স লাগিয়েছি।এই অবস্থায় ভাইয়ার সামনে গেলে নিশ্চিত আমাকে দু চার ঘা দিয়ে দিবে। তুই যা না একটু।”
-” সরি ম্যাম ।”
-” আমি বুঝতে পারছি না ,তোর যেতে সমস্যা কোথায়? ভাইয়া বাঘ ,ভাল্লুক নয় যে তোকে খেয়ে ফেলবে। ঠিক আছে তোর যাওয়া লাগবে না।আমি ফ্রেশ হয়ে তারপর যাচ্ছি।”
-” আপনার মুখ ধুতে হবে না ম্যাম। আমি যাচ্ছি । শিক্ষা নিচে এসে দরজা খুলে দেখে সাহিত্য হাতে একটা গিফট বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কপালে মৃদু মৃদু ঘাম জমা হয়েছে। শিক্ষা কে দেখে সাহিত্য বললো, সবাই কি ঘুমিয়ে পড়েছে? তুই দরজা খুলে দিলি যে।”
-“হ্যাঁ সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।”
-” তুই বুঝি আমার ফেরার অপেক্ষায় ছিলি।যেমন টা বাড়ির বউ বরের জন্য করে থাকে। তুই আবার মনে মনে আমাকে বর ভাবতে শুরু করিস নি তো শিক্ষা?”
-” আমার বয়েই গেছে আপনাকে আমার বর ভাবতে।”
-” দেখতেই তো পাচ্ছি না ঘুমিয়ে এতো রাত পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছিস। যায় হোক অপেক্ষা যখন করেছিস এখন বাড়ির বউয়ের মতো তোর ওড়না দিয়ে আমার কপালের ঘাম মুছে দে।”
-” এসব আজাইরা কাজ করার সময় বা ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই। আপনার যদি খাবার খেতে হয়,তাড়াতাড়ি খেতে হবে।আমার ঘুম পাচ্ছে।আমি ঘুমোতে যাবো।”
-” ঠিক আছে। আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। তুই খাবার নিয়ে উপরে আয়।”
-” প্রায় বিশ মিনিট পরে শিক্ষা সাহিত্যের রুমে খাবার নিয়ে এসে দেখে সাহিত্য ল্যাপটপে কাজ করছে।শিক্ষা খাবার রেখে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগেই সাহিত্য বলে উঠলো, এতো দেরি হলো কেন? খাবারের মধ্যে আবার বিষ মিশিয়ে দিস নি তো? না মানে আমি তোর চরম শত্রু। শত্রু কে শেষ করার জন্য এমন টা করতে ও পারিস।”
-” শিক্ষা কোনো উত্তর না দিয়ে বেসিং থেকে হাত ধুয়ে এসে ভাত মেখে এক লোকমা খাবার খেয়ে বললো, এই যে দেখুন মিস্টার সাহিত্য আমি আপনার প্লেট থেকে খাবার খাচ্ছি।আমি যখন ম’রি নি ,তাহলে আপনি ও নিঃসন্দেহে এই খাবার খেতে পারেন। আমি শিওর আপনি ও ম’র’বেন না।”
-” তুই তো আমার খাবার খেয়ে এঁটো করে দিলি। আমি কি তোর এঁটো খাবো?”
-” না ,না । আপনি পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন। আমি এক্ষুনি আপনার জন্য নতুন করে খাবার নিয়ে আসছি।”
-” তার কোনো প্রয়োজন নেই। তুই খুব ভালো করে জানিস আমি খাবার নষ্ট করা এমনিতেই পছন্দ করি না।এক কাজ কর তুই যখন খাবার মেখেছিস তুই নিজেই আমাকে খাইয়ে দে।তাছাড়া এখন থেকে আমাকে রোজ খাইয়ে দিয়ে অভ্যাস করে নে। ভবিষ্যতে তোর কাজে লাগবে।”
-” বড় আব্বু আমাকে খুব ভালোবাসে। বড় আব্বু নিশ্চয় প্রথম বারের মতো দ্বিতীয় বার ও একই ভুল করবে না।”
-” মানে?”
-” ভবিষ্যতে নিশ্চয় আমি কোনো লুলা কে বিয়ে করবো না যে তাকে আমার খাইয়ে দিতে হবে।”
-” লুলা ও তোর কপালে জুটবে কি না সন্দেহ? সবশেষে এই সাহিত্য শিকদারের গলায় ঝুলতে হবে তোর। পরক্ষণে সাহিত্য মনে মনে বললো, তুই একটা ক্রি’মি’না’ল ,খু’নি। আর কোনো ছেলে চায়বে না একটা খু’নি কে তার জীবনসঙ্গী করতে। আমার ধারণা যদি সঠিক হয় এসব খু’নে’র পেছনে তোর হাত রয়েছে। এখন শুধুমাত্র প্রমাণ সংগ্রহ করার অপেক্ষায় আছি। প্রমাণ হাতে পাওয়া মাত্রই তোর খেলা শেষ হয়ে যাবে। আমি নিজে তোকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যাবো। একজন সিআইডি অফিসার হিসেবে ক্রি’মি’না’ল কে ধরিয়ে দেওয়া আমার কর্তব্য।সে হোক আমার পরিবার, আমার আপনজন বা একান্ত আমার নিজের কেউ।”
___________________________________
-” কিরে শিক্ষা হলো তোর? তোকে রাতে আমি বারবার করে বলেছিলাম একটু সকাল সকাল রেডি হোস।দশটা বেজে গেছে এখনো তুই রেডি হতে পারলি না?কি এতো সাজছিস বল তো?তোর জন্য এমনিতেই ছেলেরা পাগল।আজ আবার তাদের কে খু’ন করার সাধ জেগেছে নাকি তোর?”
-” খু’ ন করা আমার পেশা।খু’ন তো করতেই হবে।”
-” হোয়াট?”
-” শিক্ষা আবৃত্তির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বললো, মাশাআল্লাহ তোর জেল্লা আমায় ঘায়েল করছে।আপনি এমনিতেই সুন্দরী আর মেরুন রঙের শাড়িতে আরো সুন্দর লাগছে।আমি নিজেই আপনার উপর ক্রাশ খেয়েছি।না জানি আপনার ফ্রেন্ডদের কি হাল হবে আজকে।”
-” আবৃত্তি বিরবির করে বললো,যার জন্য সেজেছি সে তো আর আমার দিকে ভুলে ও তাকাবে না।তার নজর তো অন্য দিকে। তবু ও বেহায়া মন মানতে চাইলো না।তার জন্য নিজেকে সাজিয়ে তুললাম। ”
-” বিরবির করে কি বলছেন আপনি?”
-” তুই তো এখনো রেডি হোস নি। কিন্তু আমার তো এক্ষুনি প্রিয়ার বাসায় যেতে হবে।প্রিয়া ফোন করেছিলো।ওর মা বাবা নাকি গ্ৰামে গিয়েছে।ওর কোন চাচা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ।তাকে দেখতে ওর মা বাবা গিয়েছে।প্রিয়া শাড়ি পরতে পারে না।আন্টি ওকে শাড়ি পরিয়ে দেয়।এখন তো আন্টি ও নাই।তাই আমাকে যেতে হবে। তুই এক কাজ কর। তুই আস্তে আস্তে রেডি হ। আমি পাপা কে বলে যাচ্ছি ।আমি ফোন দিলে পাপা তোকে ভার্সিটির সামনে ড্রপ করে দিবে।আমি আর প্রিয়া ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো।”
-” ঠিক আছে । আপনি যা বলবেন তাই হবে।”
-” সাবধানে আসিস সুন্দরী।দেখিস আবার কেউ কিডন্যাপ করে না নিয়ে যায় বলে হো হো করে হেসে প্রিয়ার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো আবৃত্তি।”
___________________________________
-” মন্ত্রীর বাড়ি জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়েছে।তার একমাত্র ছেলে বর্ণ মির্জার জন্মদিন বলে কথা। কিছু দিন আগে ধুমধাম করে মেয়ের জন্মদিন পালন করছেন।তাই ছেলের জন্মদিনে ও কোনো ত্রুটি রাখতে চান না মন্ত্রী মশায়। ইতিমধ্যে সিআইডির পুরো টিম এসে উপস্থিত হয়েছে মন্ত্রীর বাড়িতে।বর্ণ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে তার কাঙ্খিত মানুষ কে খুঁজে চলেছে।যদিও ঠিক রাত ১২ টায় তার #মনের_উঠোন_জুড়ে থাকা ব্যক্তি তাকে উইশ করেছে। তবু ও তার মন মানতে চায়ছে না।বর্ণের চোখে তৃষ্ণা জেগেছে তার প্রেয়সীকে দেখার। মূলত তাকে ভালোবাসার কথা জানতে আর পরিবারের সবার সাথে তার ভালোবাসার মানুষ কে পরিচয় করে দেওয়ার জন্যই তার এই আয়োজন।বর্ণ সাহিত্য কে দেখে এগিয়ে এসে হ্যান্ডসেক করে আবৃত্তির কথা জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই সাহিত্যের ফোন বেজে ওঠে। সাহিত্য দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। সাহিত্য কল রিসিভ করার সাথেই ঐ পাশ থেকে বলে, আপনি কি সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদার বলছেন?”
-” হ্যাঁ । কিন্তু আপনি কে?”
-” আমি কে সেটা না জানলে ও চলবে। আপনার বোন আবৃত্তি কিডন্যাপ হয়েছে।কয়েকটা গুন্ডা তাকে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছে।”
-” আবৃত্তি কিডন্যাপ হয়েছে শুনে সাহিত্যের ফোন নিচে পড়ে যায়।বোন কে সে নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসে।কখনো আবৃত্তির গায়ে একটা টোকা ও লাগতে ও দেয় নি সে। সাহিত্য হুঙ্কার দিয়ে বললো,
, কার এতো বড় কলিজা সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বোন কে কিডন্যাপ করে? আমার জানা মতে আবৃত্তি কারো সাথে কোনো প্রকার শত্রুতা নেই। একমাত্র শিক্ষাকে আবৃত্তি দুচোখে সহ্য করতে পারে না। তবে কি শিক্ষা আবৃত্তির উপর প্রতিশোধ নিতে আবৃত্তি কে কিডন্যাপ করিয়েছে ??
চলবে ইনশাআল্লাহ।।।#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_১০
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-” শিক্ষা আবৃত্তির দেওয়া রয়েল ব্লু কালারের শাড়ি টা পরেছে। চোখে দিয়েছে হালকা কাজল, ঠোঁটে খয়েরী লিপস্টিক, লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। মোটামুটি শিক্ষা সাজ কম্পিলিট করেছে তখনি শিক্ষা আয়নাতে দেখে তার কানের দুল পরা হয় নি। শিক্ষা কোন দুল জোড়া পরবে ভাবতে ভাবতে তার চোখ যায় রাতে সাহিত্যের দেওয়া সেই গিফট বক্সের দিকে। গতরাতে সাহিত্যের খাওয়া শেষ হলে শিক্ষা যখন তার রুম থেকে বেরোতে যাবে ,তখন সাহিত্য শিক্ষার হাতে গিফট বক্স দিয়ে বলে, এটা তোর জন্য শিক্ষা।তোকে তো কখনো কিছু দিতে পারি নি।তাই আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য এই ছোট্ট উপহার।”
-” কি আছে এর মধ্যে?”
-” এয়ারিং ।আমি নিজে পছন্দ করে তোর জন্য কিনেছি।তোর কাছে একটা অনুরোধ এই এয়ারিং জোড়া সবসময় কানে পরে থাকবি। আমার ভালো লাগবে।”
-” ঠিক আছে। শিক্ষা কি মনে করে সাহিত্যের দেওয়া এয়ারিং জোড়া পরে।বেশ সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে।হয়তো এয়ারিং জোড়া তার সাজ পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। শিক্ষা সবে রুম থেকে বের হতে যাবে তখনি দেখে আবৃত্তি ভিডিও কল করেছে। শিক্ষা খুশি মনে কল রিসিভ করে চমকে উঠে।শিক্ষার সামনে ভেসে ওঠে পরিচিত একটা মুখ। শিক্ষা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে আবৃত্তি আপুর ফোন তোর কাছে কেন দিগন্ত আগারবা’ল? আবৃত্তি আপুর সাথে কি করেছিস তুই? উত্তর দিচ্ছিস না কেন?”( লেখিকা নূন মাহবুব )
-” তোমাকে যা লাগছে না সুন্দরী?শাড়িতে দারুন হট লাগছে তোমাকে। নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যাচ্ছে আমার। তোমার রুপের আগুনে ঝলসে যাচ্ছি আমি।”
-” তোর ননস্টপ বকবক যদি বন্ধ না করিস ট্রাস মি আমি তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে দিবো।তোকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি। আবৃত্তি আপুর ফোন তোর কাছে কেন? আবৃত্তি আপুর সাথে নিশ্চয় খারাপ কিছু করেছিস তাই না?”
-“খারাপ কিছু করি নি।তবে করতে কতোক্ষণ? দেখতে চাও আবৃত্তি ডার্লিং কোথায় ? দিগন্ত পেছনের ক্যামেরা অন করে দিয়ে বললো, ঐ যে দেখ ।”
-” শিক্ষা দেখতে পেল আবৃত্তি কে কোনো একটা পরিত্যাক্ত রুমে চেয়ারে বসিয়ে হাত পা বেঁধে মুখের মধ্যে কাপড়ের দলা পাকিয়ে দেওয়া হয়েছে ।যাতে চিৎকার করতে না পারে। আবৃত্তির চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে, চোখের কাজল লেপ্টে গিয়েছে। অনেক সময় কান্নার ফলে চোখ ফুলে উঠেছে।যা দেখে শিক্ষার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো। শিক্ষা চিৎকার করে বললো, তুই কি আদৌ কোনো মানুষ? আমার মনে হয় না তুই কোনো মানুষ। তুই একটা জা’নো’য়া’রে’র থেকে ও নিকৃষ্ট। ”
-” কিপ ইউর ভয়েস ডাউন বেবি। জা’নো’য়া’রে’র মতো এখনো কিছু করি নি ।তবে করবো।”
-” ভুলেও আবৃত্তি আপুর দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করবি না।আমি এক্ষুনি সিআইডি কে জানাচ্ছি।আই হ্যাভ টু ইনফর্ম সিআইডি।”
-” হা হা হা। সিআইডি কে জানানোর মতো ভুল করো না বেবি।এর ফল ভালো হবে না।জানো তো আমি আবৃত্তি বেবি কে কিডন্যাপ করতে চাই নি। ইনফ্যাক্ট তোমাকে দেখার পর ওর প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট কাজ করছে না আমার। আমার শিকার তো তুমি।আই নিড ইউ ব্যাডলি বেবি। কিন্তু আমি জানতাম এতো সহজে আমি তোমার নাগাল পাবো না।তাই তো আবৃত্তি বেবি কে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছি।আমি জানতাম আবৃত্তির ডাকে তুমি ঠিক ছুটে আসবে।এখন তুমি যদি আমার খাঁচায় ধরা দাও ,আমি নিজেই আবৃত্তি বেবি কে ছেড়ে দিবো, অন্যথায় কি হবে নিশ্চয় বুঝতে পারছো? আবৃত্তির মুখে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো দিগন্ত।”
-” আবৃত্তির গোঙানি শুনে দিগন্ত বললো, তুমি কিছু বলতে চাও বেবি? ওকে বলো বলে আবৃত্তির মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো দিগন্ত। মুখের মধ্যে থেকে কাপড় সরিয়ে দিলে আবৃত্তি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, তুই আসবি না শিক্ষা।এই ব’দ’মা’শ তোকে আস্ত রাখবে না।তোকে খুবলে খুবলে খাবে।আমি নিজের জন্য তোকে বিপদে ফেলতে পারি না শিক্ষা। আমার যা হয় হোক তুই এই জা’নো’য়া’রে’র কথা শুনবি না।আসবি না তুই এইখানে।”
-” আমি থাকতে আপনার কিচ্ছু হবে না আবৃত্তি ম্যাম। ডোন্ট টেক এ টেনশন।আ’ম কামিং বলে ফোন কেটে দেয় শিক্ষা। শিক্ষা রুম থেকে বেরিয়ে দেখে সাদ্দাম শিকদার,অন্তরা , জাকিয়া জেসমিন সবাই ড্রয়িং রুমে বসে রয়েছে। শিক্ষা মনে মনে বললো, আমি তো কাউকে এই বিষয়ে জানাতে পারবো না।যা করার আমার একার করতে হবে। কিন্তু আমি বাড়ির বাইরে যাবো কি করে? শিক্ষাকে নিচে নামতে দেখে সাদ্দাম শিকদার এগিয়ে এসে বললো, তুই তো রেডি হয়ে গেছিস। আবৃত্তি বলেছিলো আমাকে কল করলে আমি যেন তোকে ভার্সিটির সামনে ড্রপ করে দিয়ে আসি। কিন্তু মেয়েটা এখনো কল করে নি। মাত্রই আমি কল করেছিলাম । ফোন বন্ধ বলছে।”
-“আসলে বড় আব্বু আমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। আমি উপরে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি। তুমি তোমার কাজে চলে যাও।”
-” ঠিক আছে। তাহলে উপরে গিয়ে চেন্জ করে মাথা ব্যথার ঔষধ খেয়ে নে।”
-” ঠিক আছে বলে শিক্ষা উপরে এসে শাড়ি পাল্টে আলমারি থেকে একটা জিন্স আর কামিজ পরে নিলো।সাথে কামিজের উপরের একটা কটি পরে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে বেলকনির দরজা খুলে উপর থেকে সতর্কতার সাথে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে দিগন্তের দেওয়া লোকেশনে ছুটতে লাগলো।
___________________________________
-” বর্ণ সাহিত্যের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো , এনি প্রবলেম স্যার।”
-” নো ডেয়ার। এভরিথিং ইজ ওকে।বাট নাউ আই হ্যাভ টু লিভ।ইনজয় ইউরসেল্ফ।”
-” কিন্তু কেন স্যার? এখনো পার্টি শুরু হলো না।আর আপনি এভাবে চলে যাবেন?”
-” আমার একটা জরুরী কাজ পড়ে গিয়েছে।আমাকে যেতে হবে। তুমি প্লীজ কিছু মনে করো না বর্ণ । সাহিত্যের চলে যাওয়া দেখে নির্জন এগিয়ে এসে বললো, কিরে শা’লা কি হয়েছে? কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
-” আবৃত্তি কে পাওয়া যাচ্ছে না।কেউ আবৃত্তি কে কিডন্যাপ করেছে।”
-“হোয়াট?”
-” তুই এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলিস না। আবৃত্তির মানসম্মানের ব্যাপার।”
-” ডোন্ট ওয়ারি ।এই চিনেছিস তুই আমাকে? তোর বোন মানে আমারো বোন। চল আমি ও যাচ্ছি তোর সাথে।”
-” না ,না। তুই এইখানে থাক। আমি দেখছি ব্যাপার টা। প্রয়োজনে তোকে কল করবো।”
-” ওকে।”
-” সাহিত্য মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের বাসায় এসে কাজের মেয়ে সাথী কে দেখে জিজ্ঞেস করে, শিক্ষা কোথায় জানিস কিছু?”
-” হ জানি। শিক্ষা আফা আবৃত্তি আফার লগে কনে জানি যাতি চায়ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে আফার নাকি মাথা ঘুরে পেছনে চলে গেছিল আই মিন মাথা ঘুরছিলো ।তাই আর শিক্ষা আফায় কোথাও যায় নি।তবে আবৃত্তি আফায় দশটা নাগাদ বাড়িরতে বাহির হয়ে গেছে।আপনি দুই মিনিট খাঁড়ান আমি পাঁচ মিনিটে শিক্ষা আফারে নিচে লইয়া আইতেছি।”
-” থাক! তোর দুই মিনিটে গিয়ে পাঁচ মিনিটে আসার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি নিজে গিয়ে দেখছি মহারানী কোথায় আছে। সাহিত্য শিক্ষার রুমে এসে দেখে বিছানার উপর চাদর মুড়ি দিয়ে কেউ শুয়ে রয়েছে। সাহিত্য চাদর উঠিয়ে দেখে কোলবালিশের গায়ে চাদর দিয়ে রাখা রয়েছে।সবাই কে বোকা বানানোর জন্য।সবাই যাতে এটায় মনে করে সে অসুস্থ তাই চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। সাহিত্যে সব জায়গায় শিক্ষা খোঁজে কিন্তু শিক্ষা কোথাও নেই। পরক্ষণেই সাহিত্যের চোখ যায় বেলকনির দরজার দিকে। বেলকনির দরজা খোলা রয়েছে। সাহিত্য ভাবে , তারমানে শিক্ষা বেলকনির দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষা এতো উঁচু থেকে নামলো কিভাবে? সাহিত্য মাথা ধরে বিছানায় বসে পড়ে। হঠাৎ তার মনে পড়ে গত রাতে শিক্ষা কে দেওয়া এয়ারিং এর কথা।যার মধ্যে সে একটা চিপ লাগিয়ে দিয়েছিলো।যাতে খুব সহজে শিক্ষা কোথায় কোথায় যায় সেটা জানতে পারে। সাহিত্য আর দেরি না করে শিক্ষার লোকেশন ট্রাক করে দেখে তাদের বাড়ির পেছনে শিক্ষার লোকেশন দেখাচ্ছে। সাহিত্য দরজায় লাথি দিয়ে বললো ওহ্ শিট !তার মানে শিক্ষা হয়তো জেনে গিয়েছে আমি এয়ারিং এর মধ্যে চিপ লাগিয়ে দিয়েছি।আর শিক্ষা ইচ্ছা করে চিপ লাগানো এয়ারিং বাড়ির পেছনে ফেলে রেখে গেছে। কিন্তু কেন? কি করতে চায়ছে শিক্ষা??
চলবে ইনশাআল্লাহ।।