মনের উঠোন জুড়ে পর্ব -১১+১২

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_১১

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” প্লীজ ভাইয়া! আমার এতো বড়ো স’র্ব’না’শ করো না।আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করি নি।না তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা আছে। প্লীজ ভাইয়া আমি তোমার বোনের মতো।একটা বোন তার ভাইয়ের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করছে তাকে ছেড়ে দেওয়ার। প্লীজ বোনের অনুরোধ টা রাখার চেষ্টা করো। আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দাও। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।”

-” হা হা হা হা।সবাই কে যদি মা , বোনের নজরে দেখি তাহলে ব‌উয়ের নজরে কাকে দেখবো বলো তো? ইনফ্যাক্ট তোমার প্রতি এখন আর আমার কোনো ফিলিংস আসে না। কিন্তু কি আর করার বলো? দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হচ্ছে বলে আবৃত্তির শাড়ির আঁচলে হাত দেওয়ার আগেই কেউ একজন তার কাঁধে টোকা দেয়। এহেন কাজে সে বিরক্ত হয়ে বললো,আবে কে রে তুই?”

-” ধরে নে তোর আম্মাজান।কারণ এই শিক্ষার হাতের কেলানি যে একবার খেয়েছে ট্রাস্ট মি সে আমার চোখের দিকে তাকানো দূরে থাক আমাকে আম্মা বলে সম্বোধন করেছে।আর আজকের পর থেকে আমার ছেলের তালিকায় আরো একটা নাম যুক্ত হবে। তোকে আমি আগেই বলেছিলাম মেয়েদের দূর্বল ভাবিস না। কিন্তু তুই তো তাদের শুধু দূর্বল না, তাদের ভোগ্যপণ্য মনে করিস ।”

-” দিগন্ত শিক্ষার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বললো, তোমার আর কতো রুপ দেখাতে বাকি আছে বলো তো সুন্দরী?তোমাকে সব রুপে দেখে নিয়েছি শুধুমাত্র….. অবশ্য তুমি চায়লে এক্ষুনি বাকিটা বলার আগেই শিক্ষা দিগন্তের নাক বরাবর ঘুষি মে’রে দেয়।যার ফলে দিগন্ত ছিটকে গিয়ে নিচে পড়ে। দিগন্ত কে আঘাত করার ফলে তার ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ সে ফোন করে তার গ্যাংয়ের চার থেকে পাঁচ টা লোক নিয়ে আসে।যা দেখে একটু ও ভড়কে যায় না শিক্ষা। বরং কোনো প্রকার অস্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাত ও পায়ের সাহায্য নিয়ে একটার পর একটা মানুষ রুপি পশু কে কুপোকাত করে দিচ্ছে। শিক্ষাকে এই রুপে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় আবৃত্তি।তার এই রুপ সম্পর্কে অবগত নয় সে। আবৃত্তি বিরবির করে আওড়াতে থাকে ,কে এই শিক্ষা?”( লেখিকা নূন মাহবুব )

___________________________________

-” সাহিত্য শিক্ষার রুম সার্চ করে ফোন ছাড়া আর কিছু পেলো না। ফোনে কোনো লক দেওয়া নাই।যার কারণে খুব সহজে শিক্ষার ফোন ও সার্চ করতে পারে। কিন্তু তেমন কোনো কাঙ্খিত তথ্য পায় না। সাহিত্য নির্জন কে কল করার জন্য ফোন বের করে তখনি দেখে স্ক্রিনে নিতু নাম থেকে কল এসেছে। সাহিত্য কল রিসিভ করে বললো,ইজ এনিথিং নিউ গোয়িং অন?”

-” ইয়েস স্যার।”

-” গুড। তোমাকে যে ব্যাপারে ইনফরমেশন জোগাড় করতে বলেছিলাম,পেয়েছো কি?”

-” ইয়েস স্যার।আপনি বলেছিলেন শহরে একজন ছদ্মবেশ ধরে পড়াশোনা করার নামে বিভিন্ন ভার্সিটি , স্কুল , কলেজে ড্রাগ সাপ্লাই করে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ড্রাগ এডেক্টেড করে তুলছে। শুধু তাই নয় ।সেই ব্যক্তি বড় বড় স্মাগলারদের সাথে ও জড়িত রয়েছে।তার ব্যাপারে সমস্ত ইনফরমেশন দিতে বলেছিলেন।যদিও আমি অসুস্থতার জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার খুবই কাছের একজন আমার হয়ে কাজটা করে দিয়েছে।তবে সে কোনো পুলিশ, সিআইডি বা ক্রাইম ব্রাঞ্চের কেউ নয়। তবু তার বুদ্ধি, বিচক্ষণতার সঙ্গে আমার হয়ে ঐ ক্রি’মি’না’ল এর ব্যাপারে সমস্ত তথ্য জোগাড় করে দিয়েছে।”

-” দেখো নিতু আমি পরে তোমার ঐ কাছের মানুষের ব্যাপারে শুনবো। ইনফ্যাক্ট তাকে আমি স্পেশাল ভাবে থ্যাংকস জানাবো।এখন আপাতত তুমি ঐ ক্রিমিনাল এর ব্যাপারে বলো।”

-” স্যার ছেলেটার আসল নাম বাচ্চু বিল্লা। একজন বড় মাপের রাজনীতিবিদের সন্তান। বয়স খুব একটা বেশি না। আনুমানিক চব্বিশ থেকে পঁচিশ । ব্রাইট ফিউচার গড়ার সময়। কিন্তু সেই সময় টা পড়াশোনার পেছনে ব্যয় না করে ছেলেটা এসব অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সে একজন ড্রাগ ব্যবসায়ী, স্মাগলারদের কাজে জড়িত,সাথে একজন প্লেবয়। মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তাদের জীবন নষ্ট করে সে পৈশাচিক আনন্দ পায়। বাপের টাকা আর ক্ষমতার জোরে এ পর্যন্ত যে কতো গুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে তার ইয়ত্তা নেই।ওর ক্রিমিনাল রেকর্ড চেক করে দেখলাম ওর নামে মা’র্ডা’রের ও অভিযোগ আছে। দুই থেকে তিন টা মেয়ে ওর জালে ফেঁসে গিয়ে পরে সু’ই’সা’ই’ড করেছে।যার জন্য তাদের বাবা মা ঐ ছেলের নামে কেস করে। অবশ্য পুলিশ ওকে ধরে নিয়েছিলো। কিন্তু বেশিক্ষণ থানায় রাখতে পারে নি।তার আগেই উকিল এসে ওর জামিন করে নিয়ে গেছে।আমি ওর লোকেশন আপনাকে সেন্ড করছি।আশা করি ওখানে ওকে পেয়ে যাবেন।”

-” থ্যাংক ইউ সো মাচ নিতু।”

-” ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই স্যার। ইটস্ মাই ডিউটি।”

-” সাহিত্য কল কে’টে দেওয়ার পর শিক্ষার ফোনে একটা ভিডিও আসে।যা দেখে সাহিত্য বললো, ওহ্ তাহলে এই ব্যাপার। এক ঢিলে দুই পাখি ম’র’বে আজ। সাহিত্য নির্জন কে সাথে নিয়ে অতি দ্রুত নিতুর দেওয়া লোকেশনে উপস্থিত হয়ে দেখলো অলরেডি ফাইটিং চলছে শিক্ষা আর গুন্ডাদের মধ্যে। আবৃত্তি কে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।সে যন্ত্রনায় ছটফট করছে। সাহিত্য গুন্ডাদের দিকে এগিয়ে যেতে গেলে নির্জন তাকে বাধা দিয়ে বললো,থাক না সাহিত্য।শিক্ষার চ্যাপ্টার শিক্ষা নিজে ক্লোজ করুক। তারপরের টা না হয় আমরা দেখবো।গুন্ডারা এটা দেখুক যে মেয়েরা চায়লে অনেক কিছু করতে পারে।কিন্তু একটা বিষয় আমি বুঝতে পারছি না।শিক্ষা এইভাবে গুন্ডাদের সাথে একা লড়ছে।এটা কিভাবে সম্ভব? আমাদের অফিসার নম্রতা মির্জা তাকে ও এখনো এইভাবে কৌশলে ফাইটিং করতে দেখি নি। শিক্ষার মতো একটা মেয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টের জন্য খুবই প্রয়োজন।”

-” আমি যতটুকু জানি ড্যাড শিক্ষা কে কুড়িয়ে পেয়েছিলো।হয়তো আমাদের বাড়িতে আসার আগে ও কোনো চোর ছিলো।আর চুরি করে ধরা পড়লে পাবলিক নিশ্চয় ছেড়ে কথা বলে না।হতে পারে শিক্ষা যার হয়ে কাজ করতো সে এইটুকু মা’রপিট শিখিয়েছে। যাতে চুরি করে ও বেঁচে ফিরতে পারে।”

-” না সাহিত্য।তোর ধারণা ভুল। শিক্ষার শত্রু পক্ষ কে আঘাত করার প্রত্যেক টা স্টেপ বলে দিচ্ছে ও একজন মার্শাল আর্টিস্ট।কারাতে , বক্সিং, অস্ত্র চালাতে পারদর্শী শিক্ষা। কারাতে এমন একটা কৌশল যার মাধ্যমে…

-“সাহিত্য হাত উঁচু করে নির্জন কে থামিয়ে দিয়ে বললো, আই নো এবাউট কারাতে। কারাতে একটি আঘাতের কৌশল যেটি ঘুষি, লা’থি হাঁটু এবং কনুইয়ের আঘাত ও মুক্তহস্ত কৌশল যেমন ছুরিহস্ত ব্যবহার করে কিছু স্টাইলে আঁকড়ে ধরা,আবদ্ধ করা, আছাড় এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আঘাত শেখানো হয়।কারাতে মূলত খালি হাতে আত্মরক্ষার কৌশল। যেখানে ৫০% হাতের কাজ ও ৫০% পায়ের কাজ। আমার জানা মতে সাধারণ কোনো ফ্যামিলির মেয়েরা কারাতে শিখতে পারে না। এক্ষেত্রে অনেক বাধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।আর সেইখানে তুই শিক্ষার কথা কিভাবে বলছিস ভাই?”

-” আমার মনে হলো তাই বললাম।”

-” ইদানিং তুই মনে হয় শিক্ষাকে নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করছিস? সারাক্ষণ শুধু শিক্ষা আর শিক্ষা করে আমার কানের বারোটা বাজিয়ে দিস।তোর মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছি না আমি। তুই ঠিক কি করতে চয়ছিস বল তো?”

-” কিছু না ইয়ার।বাদ দে সেসব কথা।”

-” আমরা সবসময় তার কথা বলতে পছন্দ করি,যাকে আমরা পছন্দ করি, ভালোবাসি।বাই এনি চান্স তুই শিক্ষাকে ভালোবাসিস না তো?”

-” দেখ সাহিত্য ,আমরা এইখানে ক্রি’মি’না’ল ধরতে এসেছি।কে কাকে ভালোবাসে সেটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক সৃষ্টি করতে নয়।তার থেকে বেটার হবে আমরা আমাদের নিজেদের কাজে ফোকাস করি।”

-” ইয়েস বস।”

___________________________________

-“অনেকক্ষণ ধরে চেয়ারের সাথে হাত বেঁধে রাখার কারণে ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে আবৃত্তি। শিক্ষার প্রতি তার সমস্ত রাগ, অভিমান দূর হয়ে গিয়ে এক আকাশ সমান ভালোবাসার জন্ম নিয়েছে। আবৃত্তি ভাবে বাসায় ফিরে শিক্ষার সাথে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিবে।তাকে তার পরিপূর্ণ মর্যাদা দিবে। মেয়েটা কে চিনতে সে ভুল করেছিলো। কিন্তু আর নয়। এখন সময় এসেছে সমস্ত শত্রুতা শেষ করার। আবৃত্তি কাতর চোখে শিক্ষার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শিক্ষা গুন্ডাদের আহত করে নিচে ফেলে দিয়ে আবৃত্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই কেউ একজন শিক্ষার পেট বরাবর ছুরি চালিয়ে দেয়।।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_১২ ( বোনাস )

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” শিক্ষা গুন্ডাদের আহত করে নিচে ফেলে দিয়ে আবৃত্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই কেউ একজন শিক্ষার পেট বরাবর ছুরি চালিয়ে দেয়। মূহুর্তের মধ্যে ফোঁটা ফোঁটা র’ক্ত ফ্লোরে পড়তে থাকে।তবে সেটা শিক্ষার পেট থেকে নয়। সাহিত্যের হাত থেকে।গুন্ডা টা যখন শিক্ষার পেট বরাবর ছুরি চালিয়ে দিতে যায়,তার আগেই সাহিত্যে এসে হাত দিয়ে ছুরি ধরে ফেলে।যার ফলস্বরূপ সাহিত্যের হাত কে’টে যায়। সাহিত্য গুন্ডাটার নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। পরক্ষণেই আবার গুন্ডাটার শার্টের কলার ধরে টেনে তুলে বললো, কি মিস্টার দিগন্ত আগার‌ওয়াল ওরফে বাচ্চু বিল্লা।কি ভেবেছিলি তুই তোর নাম আর ছদ্মবেশ চেঞ্জ করলে সিআইডি তোকে চিনতে পারবে না? বোকা কোথাকার।তোর বিষয়ে অনেক আগেই জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য আর প্রমাণের জন্য তোকে হাতেনাতে ধরতে পারছিলাম না। এবার বুঝতে পারবি মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসানোর আসল মজা।”

-” বাচ্চু বিল্লা ঘাবড়ে গিয়ে বললো, দেখুন স্যার! এইখানে যা হয়েছে ভুলে যান। বিনিময়ে আমি আপনাকে অনেক টাকা দিবো। সিআইডি তে চাকরি করে মাত্র কয়েক টাকা পান। আমার কথা মেনে নিলে আমি আপনাকে টাকার পাহাড় বানিয়ে দিবো।বাকি জীবন ব‌উ বাচ্চা নিয়ে ‌হাসি খুশি তে কাটাতে পারবেন।”

-” সাহিত্য বাচ্চু বিল্লার গলা চেপে ধরে বললো,হাউ ডেয়ার ইউ? তোর সাহস হলো কি করে সিআইডি অফিসার কে টাকা অফার করার? অনেক টাকার মালিক তুই তাই না? কিন্তু এবার এই টাকাও তোকে বাঁচাতে পারবে না। ফাঁ’সি’র দড়িতে ঝুলতে হবে তোর।তোর বিরুদ্ধে একটা নয় হাজার টা প্রমাণ রয়েছে। তুই একজন ‌ড্রাগ ব্যবসায়ী , স্মাগলারদের সাথে জড়িত, তোর জন্য হাজার হাজার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও কিডন্যাপিংয়ের কাজ ও করেছিস। সিআইডি অফিসার কে টাকার লোভ দেখিয়েছিস। এরকম আরো হাজার টা রেকর্ড আছে তোর।তোর তো ম’রা’র সময় এসে গেছে। প্রথমে জেলে পঁচে মরবি।আর তারপর ফাঁ’সি’র দড়িতে। ( লেখিকা নূন মাহবুব )

-” হা হা হা হা। পৃথিবীতে এমন কোনো জেল তৈরি হয় নি যেইখানে এই বাচ্চু বিল্লা কে আটকে রাখতে পারবে।তার থেকে বরং সবকিছু ভুলে যাওয়া আপনার জন্যে ও মঙ্গল আর আমার জন্যেও।”

-“সাহিত্য বাচ্চু বিল্লার হাত পেছনে মুচড়ে দিয়ে বললো, কি ভুলে যেতে বলছিস তুই হ্যাঁ? তুই জানিস কার দিকে হাত বাড়িয়েছিস ? তুই সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বোনের দিকে হাত বাড়িয়েছিস। যে বোনের গায়ে আমি একটা আঁচড় ও লাগতে দেই না , তুই তাকে আঘাত করেছিস।তোর এই হাত আমি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো।”

-” অবস্থা বেগতিক দেখে নির্জন এসে সাহিত্য কে ছাড়িয়ে বললো,কি করছিস সাহিত্য? ও তো এখানেই ম’রে যাবে।তাহলে ওর জন্য যে ফাঁ”সি’র দড়ি অপেক্ষা করছে তার কি হবে? ছেড়ে দে ভাই।”

-” এদের সব কটা কে নিয়ে যা নির্জন। এবার আমি ও দেখবো তোর বাপের টাকা কিভাবে তোর ফাঁ’সি হ‌ওয়া থেকে আটকাতে পারে।”

__________________________________

-” শিক্ষা এসে আবৃত্তির হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে বললো,আপনি ঠিক আছেন আবৃত্তি ম্যাম? খুব কষ্ট হয়েছে তাই না?”

-” আবৃত্তি শিক্ষা কে বুকে টেনে নিয়ে বললো, আমার কথা ছাড় শিক্ষা।তোর এই প্রতিদান আমি কখনো ভুলতে পারবো না।আজ যদি তুই ছুটে না আসতি ,হয়তো কাল আর আমার মুখ দেখতে পারতি না।প্রেস মিডিয়ায় ছড়িয়ে যেত সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বোনের মৃত্যুর খবর।যদিও বাচ্চু বিল্লা আমাকে প্রাণে মা’রতো না। কিন্তু আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতাম। আমার জন্য ড্যাড, ভাইয়ার মুখে চুনকালি লাগতে দিতাম না।তোকে আমি কতোভাবে অপমান করেছি।এই নিয়ে তুই আমাকে দুই বার বাঁচিয়ে নিলি। একবার ও নিজের কথা ভাবলি না শিক্ষা? আমাকে বাঁচাতে এসে নিজের কি হাল করেছিস তুই? হাত দিয়ে র’ক্ত বের হচ্ছে, জায়গায় জায়গায় র’ক্ত জমাট বেঁধে গেছে।তোর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না শিক্ষা।”

-” এসব কথা ছাড়ুন আবৃত্তি ম্যাম। আমার শরীর খারাপ লাগছে।বাড়ি যাবো আমি।”

-” আচ্ছা তুই এটা বল তুই মার্শাল আর্ট কবে ,কখন , কোথা থেকে শিখলি?”

-” আমি কিছু জানি না বলে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো শিক্ষা।”

-” শিক্ষা কে নিচে পড়ে যেতে দেখে নির্জন ছুটে এসে বললো, শিক্ষা কি হলো তোর? চোখ খোল শিক্ষা।”

-” তুই দেখতে পাচ্ছিস শিক্ষা অজ্ঞান হয়ে গেছে।আর অজ্ঞান হ‌ওয়া ব্যক্তি নিশ্চয় তোর কথা শুনতে পাবে না। দাঁতে দাঁত চেপে বললো সাহিত্য।”

-” আহ্ সাহিত্য রেগে যাচ্ছিস কেন? শিক্ষা অনেক আঘাত পেয়েছে।একা একা এতো গুলো গুন্ডাদের সাথে লড়েছে। আই থিংক ওকে হসপিটালে বা বাসায় নিয়ে যাওয়া উচিত।এক কাজ কর সাহিত্য। আমি শিক্ষা কে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি। তুই ঐ বাচ্চু বিল্লা কে নিয়ে যা।”

-” শোন নির্জন, এইখানে শুধু শিক্ষা নয় আমার বোন ও আছে। আমি এইদিক টা দেখছি । তুই ওদের কে নিয়ে যা।”

-” সাহিত্যের কথার বিপরীতে আর কথা বাড়ালো না নির্জন।সে বাচ্চু বিল্লার পুরো গ্যাং নিয়ে ছুটে চললো তার গন্তব্যে।”

-“নির্জন যাওয়ার পর আবৃত্তি সাহিত্যের হাত ধরে বললো, তোমার হাত থেকে তো র’ক্ত পড়ছে। ইস্ কতোখানি কে’টে গেছে বলে আবৃত্তি শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে সাহিত্যের হাত বেঁধে দিলো।”

-” আমার কিছু হয় নি বোন।এসবে অভ্যস্ত আমি। তুই শিক্ষার কথা ভাব।শিক্ষা কে হসপিটালে না নিয়ে বরং বাসায় নিয়ে যাই।বাসায় গিয়ে ডক্টর কে কল করে নিবো।”

-” না ভাইয়া। শিক্ষা কে এই অবস্থায় বাসায় বা হসপিটালে নিয়ে যাওয়া যাবে না।”

-” কেন?”

-” একচুয়ালি এর আগেও শিক্ষা ঐ বাচ্চু বিল্লার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করছিলো।আর ওকে থা’প্প’ড় ও দিয়েছিলো।এই ব্যাপারটা ড্যাডের কানে কিভাবে জানি পৌঁছে যায়।ড্যাড শিক্ষা কে বলেছিলো,এর পর যদি আবারো শিক্ষা মা’র’পিট করে , তাহলে শিক্ষার বাড়ির বাইরে আসা বন্ধ করে দিবে। এমনকি ভার্সিটিতে ও আসতে দিবে না। শিক্ষা অনেক করছে আমার জন্য। কিন্তু আমি ওর জন্য কখনো কিছু করতে পারি নি।তাই আমি চাই না আমার জন্য পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাক।”

-” এতো কিছু হয়ে গেছে আর আমাকে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না তুই ।”

-” আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়া।তোমরা আমাকে ঐ ভার্সিটি তে ভর্তি করতে চাও নি। আমি নিজের ইচ্ছাতে ভর্তি হয়েছিলাম।তাই কিছু বলতে পারি নি।সরি ভাইয়া।”

-” ইটস্ ওকে।বাট শিক্ষা কে নিয়ে কোথায় যাবো? ওর শরীরের অবস্থা বেশি একটা ভালো না।”

-” আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে ভাইয়া। এইখান থেকে কয়েক কিলো দূরে আমার বান্ধবী প্রিয়ার বাসা।আমরা তো প্রিয়াদের বাসায় ও যেতে পারি।”

-” কিন্তু?”

-” আমি জানি তুমি কেন যেতে চায়ছো না। টেনশন করো না তুমি। আমি সবটা ম্যানেজ করে নিবো। তাছাড়া আঙ্কেল, আন্টি বাসায় নেই। বাসায় শুধু প্রিয়া আর ওর বোন পাখি আছে। খুব বেশি সমস্যা হবে না তোমার।”

-” ঠিক আছে,চল বলে সাহিত্য শিক্ষা কে পাঁজা কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টাট দিলো ।প্রিয়াদের বাসায় পৌঁছাতে তাদের বেশি সময় লাগলো না। সাহিত্য শিক্ষা কে কোলে করে দরজা খোলার জন্য দরজার বাইরে অপেক্ষা করছে, এমন সময় অপরিচিত কেউ একজন দরজা খুলে দিয়ে সাহিত্যে কে জড়িয়ে ধরলো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here