#মনের_গহীনে
২য়+৩য় পর্ব
লেখনীতে:নাদিয়া হোসাইন
প্রাচুর্য তার বাবা আর ফুপি শান্তার দিকে নীরবে তাকিয়ে রইলো। পরমুহূর্তেই তার মনে হলো যে,কিছুদিন পর সামায়ার এনগেজমেন্ট। বিয়েটা যেহেতু প্রিয়র সাথে হবে তাহলে ওনাদের এখানে আসা স্বাভাবিক। কথাটা মনে হতেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো।
মিসেস শান্তা প্রাচুর্যের কাছে এসে কপালে একটা চুম্বন দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
কেমন আছিস প্রাচু?
প্রাচুর্য স্লান হেসে জবাব দিলো, __ভালো আছি ফুপি। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।এ অসম্ভব কীভাবে সম্ভব হলো?
সব ছোট ভাইয়ার জন্য সম্ভব হলো রে মা।তুই বুঝতে পারবি না আজ আমি কতো খুশি। তেরো বছর পর এবাড়িতে এলাম। বড় ভাইয়া আমায় আজ মেনে নিয়েছে একথা আমি ভাবতেই পারছি না।মিসেস শান্তা কেঁদে দিলো।
সুবহান সালেহ বোনের কাধে হাত রাখলেন, __ক্ষমা করে দিস শান্তা।এতোদিন ইগো দেখিয়েছি অনেক।তোর প্রাপ্য হক আমার জন্য নষ্ট হলো। কিন্তু বিশ্বাস কর, তোকে অনেক মিস করতাম।যদি একবার এসে ভাইয়া বলে ডাক দিতি। আমি সব ভুলে যেতাম!
প্রাচুর্য রুমে চলে এলো। এখানে প্রিয় আছে। প্রিয়কে এভাবে দেখলে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।
সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে খোলা আকাশ দেখছে প্রাচুর্য ।সারাদিন আর প্রাচুর্য প্রিয়কে এবাড়িতে দেখেনি হয়তো চলে গেছে। জীবন কতো কিছুই না উপহার দিয়ে যায়, তার মধ্যে ভালোবাসা অন্যতম।আর সেই ভালোবাসার মানুষটাকে না পাওয়ার কষ্টটা শুধু সে-ই বুঝে । কালো আকাশটার দিকে তাকিয়ে আনমনে প্রাচুর্য বলা শুরু করলো,
তুমি যদি কাছে থেকেও দূরে রও,
তবে দূরে থাকাই শ্রেয়।
তোমার সেই মানুষটা,
না ই বা হলাম আমি!
তুমি তো আমারি থাকবে
মনের গোপন কুঠুরে।
হাজার তারার ভীরে,
তুমি এক চাঁদ।
আর আমি নাহয়
কোন আঁধারে ঘেরা তারা।
যার থাকবে না কোন চাহিদা।
শুধু অপেক্ষা নামক শব্দ ছাড়া।
প্রাচুর্য জীবনের হিসেব মিলাতে লাগলো। তিনটি বছর ধরে এই দহনে জর্জরিত হচ্ছে। প্রাচুর্য তখন সবে ক্লাস নাইনের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করেছিলো। দুই ভাইয়ের এক বোন তাই অনেক আদরের।
ঢাকার বনশ্রীতে প্রাচুর্যদের বাড়িটা তিন তলা বিশিষ্ট । দুই তলায় থাকে প্রাচুর্যরা আর তিন তলায় প্রাচুর্যে ছোট চাচা তার বউ আর দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকতো। প্রাচুর্যের বাবা মা দুজনেই ব্যাংকার। সেই সুবাদে প্রাচুর্য ছোট থেকে বাসায় একা থাকতো। বেশির ভাগ সময়ই সামায়াদের বাসায় সামায়ার সাথে থাকতো। প্রাচুর্যের ছয় বছর বয়স পর্যন্ত সে তার ফুপি শান্তার কাছে থাকতো। কিন্তু হঠাৎ শান্তা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে, যা প্রাচুর্যের বাবা মানতে পারে নি।কিন্তু কেনো সেটা তখনো প্রাচুর্যের অবগত ছিলো না।প্রাচুর্যের বাবা সুবহান সালেহ’ র স্পষ্ট আদেশ ছিলো, যেনো শান্তার সাথে কেউ সম্পর্ক না রাখে। সেজন্য প্রাচুর্যের ছোট চাচা লুকিয়ে শান্তার সাথে যোগাযোগ রাখতো। এছাড়াও প্রাচুর্যের বড় ভাই দিহানও ফুপির সাথে সম্পর্ক রেখেছিলো। প্রাচুর্য ফুপিকে অনেক ভালোবাসে, কিন্তু বাবার নিষেধের জন্য কিছু করতে পারতো না। একদিন প্রাচুর্য সামায়ার সাথে মিলে প্লেন করলো, সে লুকিয়ে ফুপির বাসায় যাবে।
সামু আমি যেতে চাই ফুপির কাছে। তুই তো অনেকবার গিয়েছিস। প্লিজ এইবার গেলে আমাকে তোর সাথে নিয়ে যা।
হ্যাঁ নিয়ে যাই, পরে চাচ্চু জানতে পারলে আমাকে আর আব্বুকে কি করবে তুই জানিস?
আরে এমন করছিস কেনো। কিছু হবে না। আম্মুর থেকে পার্মিশন দেওয়া আছে। তুই শুধু বলবি যে আমাকে তোর নানুর বাসায় নিয়ে যাবি। আমি তো তোর নানুর বাসায় অনেক বার গিয়েছি। আব্বু এতে মানা করবে না।
আচ্ছা দেখি, চাচ্চু রাজি হলে তো আমার আর সমস্যা নেই। ফুপিও তোকে অনেক দেখতে যায়। খুব মন খারাপ করে তোর জন্য।
আমিও তো ফুপিকে সেই ছোট থেকে কতো মনে করি। তাই তো যাওয়ার জন্য লাফাচ্ছি।
তার দুদিন পর ছোট চাচ্চু আব্বুকে মানিয়ে নিলো। আব্বুর ভয়ে আর মোবাইল নিয়ে যাই নি, যদি ফোন করে এই ভয়ে!
সেখানে গিয়েই আমার প্রিয় ভাইয়ার সাথে দেখা হয়। প্রিয় ভাইয়া ছিলো ফুপির ভাসুরের ছেলে। তাদের যৌথ পরিবার ছিলো। ফুপিদের বাড়িটা ছিলো আশকোনা। এখানে এসে ফুপির দুই ছেলে-মেয়েও পেয়ে গিয়েছিলাম৷ সব-ই ঠিকঠাক ছিলো, শুধু আমার আবেগি মনই ঠিক থাকতে পারে নি। কীভাবে যেনো আমি আমার মধ্য থেকে হাড়িয়ে গেলাম প্রিয় ভাইয়ার মায়ায়।
হঠাৎ কানে ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো আর আমি আমার সেই কল্পনা থেকে বেড়িয়ে এলাম। একটা অচেনা নাম্বার ক্রমাগত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। মাথাটাও ব্যাথা করছে ফোনের শব্দে। তাই ফোনটা ধরেই ফেললাম৷
হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম।
পাশ থেকে সালামের উত্তর না এসেই একটা পুরুষের কন্ঠ ভেসে এলো।
প্রাচুর্য, আমি প্রিয় বলছি!
নামটা শুনেই যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলাম। নিঃশ্বাস ভারী হভে লাগলো ক্রমাগত। কথা বলার শক্তি-ই পাচ্ছিলাম না, কারন মনে হচ্ছিলো গলা শুকিয়ে গেছে, আর শরীর কাপছে।
হ্যালো, প্রাচুর্য শুনতে পাচ্ছো তুমি। হ্যালো… হ্যালো…
জ..জ্বী হ্যাঁ…. বলুন শুনছি..।
প্রাচুর্য আই নিড ইয়্যুর হেল্প। প্লিজ হেল্প মি।
উনার গলাটা শুনে খুব সিরিয়াল কিছু মনে হচ্ছে।কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না তাও বললাম,__হ্যাঁ বলুন, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
প্রাচুর্য, আমি তোমার বাসার নিচে আছি। প্লিজ! একবার আসতে পারবে?
এখন তো সাড়ে সাতটার মতো বাজে। এখন কীভাবে আসবো আমি।
ওহ ইট’স ওকে। কাললেই এসো।
কেনো জানি উনাকে না করতে ইচ্ছা করলো না।হয়তো উনাকে আর কাছে পাবো না, সেই ভয়ে আবার হ্যাঁ বলে দিলাম। তৎক্ষনাৎ আম্মুর কাছে চলে গেলাম৷
আম্মু.. আমি একটু ছাদ থেকে আসছি প্লিজ। ইট’স আরজেন্ট।
কিন্তু এই সময় ছাদে কেন যাবি। কোন সমস্যা।
প্লিজ আম্মু একটুর-ই তো ব্যাপার।আর বাসায় ভালোও লাগছে না।
আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি আসিস।
প্রায় বিশ মিনিট আমি আর প্রিয় ভাইয়া হেটে হাতিরঝিল গেলাম। জানি না উনি কেনো আমায় এখানে নিয়ে এলো। পুরো রাস্তা আমার সাথে একটা কথাও বললো না।মানুষটাকে খুব বিষন্ন মনে হচ্ছে, যার কারন আমার অজানা। উনার তো এখন খুশি থাকার কথা।উনার খুশির জন্যই তো একদিন নিজের ভালোবাসাকে ত্যাগ করেছিলাম।এমনকি নিজের অনুভূতিটার কথা প্রকাশও করতে পারি নি।
পানির দিকে তাকিয়ে আনমনে এসব ভাবছিলাম। কেমন জানি মাথা ঘুরাচ্ছিলো। আমার এমনটা হচ্ছে উচ্চতা ভীতির জন্য। উপর থেকে পানি প্রায় অনেকটা নিচে। সেই জন্যই এমনটা হচ্ছে।ঠিক তখনি প্রিয় ভাইয়া কান্নারত স্বরে বললো,__আমি কি করবো প্রাচুর্য। কীভাবে ভালোবাসার মানুষটা কে অন্যের হতে দেখবো আমি।
মানে, কি বলছেন আপনি?আপনার ভালোবাসার মানুষটা তো সামায়া। আর তাকে তো খুব শীঘ্রই পেতে যাচ্ছেন।
কীভাবে পাবো তাকে আমি। সে যে অন্যের হচ্ছে যাচ্ছে। চারদিন বাদের নাকি তার এনগেজমেন্ট। আমার চার বছরের ভালোবাসাকে কীভাবে অন্যের হতে দেখবো আমি।
কি বলছেন আপনি এসব,সামায়ার সাথে তো আপনারই এনগেজমেন্ট হচ্ছে।
নাহ হচ্ছে না।তুমি তো জানো, সামায়াকে আমি কখনো সেভাবে প্রপোজ করি নি।আমি চেয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কটাকে পবিত্র করে ওকে পেতে।সেই জন্য রিলেশনে জড়াইনি। আমার তো এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি৷ সোহাগ আংকেল তো সামায়ার বিয়ে অন্য যায়গায় দিয়ে দিচ্ছে। আমি আব্বুকে দিয়ে আংকেলের সাথে কথা বলতে রাজি করিয়েছিলাম৷ কিন্তু আংকেল চায় না আত্নীয়দের মধ্যে নতুন সম্পর্কে জড়াতে। আর সামায়াও তার বাবার কথার অবাধ্য হবে না৷ প্রিয় হঠাৎ-ই কেঁদে দিলো।
কি হচ্ছে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।উনার কথার অধিকাংশ-ই আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। তার উপর আমার উনার কান্না একদমই সহ্য হচ্ছে না।তীব্র মাথা ব্যাথা হচ্ছে, যা সহ্য সীমার বাইরে। হঠাৎ কি হলো জানি না।চারপাশ কেমন অন্ধকার মনে হলো, আমি যেমন শূন্যে ভাসছি…
চলবে,
#মনের_গহীনে
লেখনীতে :নাদিয়া হোসাইন
৩য় পর্ব
প্রিয় হঠাৎ খেলাল করলো প্রাচুর্য কেমন জানো করছে। খানিক সময়ের মধ্যেই প্রাচুর্য পরে যেতে নিলো তৎক্ষনাৎ খুব দ্রুতই প্রিয় প্রাচুর্যকে ধরে ফেললো।
প্রিয় কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আশেপাশের অনেক মানুষই তাদেরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। পাশ থেকে একটা ছেলে প্রিয়র দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো। প্রিয় হাতে খানিকটা পানি নিয়ে প্রাচুর্যর মুখে ছুটাতে লাগলো, কিন্তু কোন লাভ হলো না!
তখনি পাশ থেকে একজন বললো, __ভাই হয় বাসায় আর নাহলে হসপিটালে নিয়ে যান। এভাবে বসে থেকে ভীড় বাড়িয়ে লাভ নেই।
প্রিয় মনে মনে ভাবলো,__ওকে তো এভাবে আমি বাসায় নিয়ে যেতে পারবো না। আর এতো রাতে হাসপাতালে নিলে সারা রাতেও বাসায় ফিরতে পারবে কিনা সন্দেহ । বুঝলাম না কি হলো ওর, কিন্তু এখন বাসা থেকে হসপিটালই ভালো হবে। দুটো ছেলেকে বলে প্রিয় একটা রিক্সার ব্যবস্থা করলো। প্রাচুর্যকে কোলে তুলে নিলো প্রিয়। কোনমতে রিক্সায় বসিয়ে প্রাচুর্যের পাশে বসে পরলো। না চাইতেও প্রাচুর্যের মাথাটা নিজের ঘাড়ে রাখতে হলো।
প্রাচুর্য হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি যে, এভাবে প্রিয়র এতো কাছে কোনদিন আসতে পারবে। আজ এসেই পরলো, কিন্তু নিজের সঙ্গানে নয়।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে প্রাচুর্যের ঙ্গান ফিরে এলো। নিজের অবস্থাটা বুঝতে পারছে না৷ প্রিয়র ঘাড় থেকে মাথা উঠিয়ে বুঝতে পারলো সে চলন্তু রিক্সার উপর আছে। প্রিয়ও বুঝতে পারলো যে প্রাচুর্য চোখ খুলেছে। প্রাচুর্যকে দেখে বুঝতে পারলো ও অনেকটা লজ্জা পেয়েছে, তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললো, __আর ইয়্যু ওকে প্রাচুর্য?
প্রাচুর্য কিছুটা সংকোচ নিয়ে উত্তর দিলো, __হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। কিন্তু আমরা রিক্সায় কেনো, কোথাও কি যাচ্ছি আমরা?
হ্যাঁ, তুমি তো সেন্স লেস ছিলে। এই অবস্থায় তোমার বাসায় কীভাবে নিবো তোমায়। তাই হসপিটালে নেওয়াটাই বেটার অপশন ছিলো।
প্রিয়র কথায় প্রাচুর্য ভয় পেয়ে গেলো৷ আর কোন কিছু না ভেবেই চিল্লিয়ে বলে উঠলো, __নাহ কোথাও নিয়ে যেতে হবে না আমায়। আমি ঠিক আছি। রিক্সা ঘুরিয়ে বনশ্রী নিতে বলুন।
আচ্ছা, এতো উত্তেজিত হওয়া ঠিক না এখন তোমার।জাস্ট ক্লেইম! আর বলো তো কি হয়েছে।
তেমন কিছুই না। আমার একটু উচ্চতা ভীতি আছে, সেই জন্য আমি তেমন একটা হাতিরঝিল আসি না।তখন আমার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি আমি পানিতে পরে যাচ্ছি।
সেটা তুমি আমাকে আগেও বলতে পারতে। তাছাড়া আমি তো তোমায় জোরও করি-নি।
প্রাচুর্য চুপ করে রইলো। কীভাবে বলবে ও প্রিয়কে যে প্রিয়র সাথে এতোদিন পর এক মুহুর্ত সময় কাটানোও ওর জন্য অনেক কিছু। প্রাচুর্যের মনে এখন কিছুটা খুশি কাজ করছে। তিন বছর ধরে যাকে মনের গহীনে ভালোবেসে আসছে, একবার বলতেও পারে-নি যে কতোটা ভালোবাসে তাকে। আর আজ তিন বছর পর সেই মানুষটাকে পাওয়ার একটু হলেও সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া প্রয়র কাছে যতটুকু শুনলো, তাতে তো মনে হচ্ছে সামায়া প্রিয়কে ভালোবাসে না, তাদের মধ্যে কোন সম্পর্কও নেই। তাদের দু’জনের মধ্যে কতো মিল। দু’জনই ভালোবাসে শুধু এক জনের ভালোবাসার মানুষটা অন্য জন। আর দু’জনই তাদের ভালোবাসার মানুষটাকে পাচ্ছে না।
প্রিয় প্রাচুর্যকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিলো,কিন্তু নিজে আর ভেতরে গেলো না। প্রাচুর্যও প্রিয়কে জোর করেনি।কারণ ভালোবাসার মানুষকে অন্যের সাথে দেখা মোটেও সম্ভব নয়। তাই প্রাচুর্যও চায় না প্রিয় এই কষ্টটা ফিল করুক। প্রিয়র কষ্ট যে প্রাচুর্যের কাছেও এক আকাশ কষ্টের সমান।
রাতের খাবার খাওয়ার পর প্রাচুর্য রুমে এসে মোবাইল নিয়ে বসলো৷ তখনি দেখতে পেলো প্রিয়র নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে। প্রিয়র ম্যাসেজটা দেখে বুকটা ধক করে উঠলো। ভালোবাসার মানুষটার সাথে যেভাবেই কথা হোক না কেনো, ফিলিংস্টা ঠিক একই থাকে।
ম্যাসেজটা সিন করলো প্রাচুর্য।
এখন কেমন আছো প্রাচুর্য?
প্রাচুর্য ম্যাসেজের কি রিপ্লাই দিবে ভেবে পাচ্ছে না। প্রথমবার লিখলো, __এইতো এখন কিছুটা ভালো আছি। কিন্তু ম্যাসেজটা আবার মুছে ফেললো। কেনো জানি মানানসই উত্তর খুজে পাচ্ছে না। পরক্ষনেই আবার লিখলো,__এখন অনেক ভালো আছি।
প্রাচুর্যের ম্যাসেজটা সিন হলো, কিন্তু প্রিয় আর কোন উত্তর দিলো না।প্রাচুর্য প্রথমে ভাবলো আবার ম্যাসেজ দিবে কি-না। পরক্ষণেই না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।প্রাচুর্য তো প্রিয়র কাছে তেমন ইম্পর্টেন্ট না। তাও সে তার এই ক্রাইসিসের মধ্যে প্রাচুর্যর জন্য এটুকু টাইম বেড় করেছিলো। এটাই বা কম কি!
প্রিয়দের বাড়িতে প্রাচুর্য মোট পনেরো দিন ছিলো। আর সেই পনেরো দিনেই প্রাচুর্যের মনের গহীনে প্রিয় নামক মানুষটা স্থান করে নিয়েছিলো।
প্রিয়কে যখন প্রাচুর্য প্রথম দেখেছিলো তখন সর্বপ্রথম তার চোখ যায় প্রিয়র চোখ দুটির দিকে।তার নাম যেমন প্রিয়, তেমনে সে তার এই চোখের মায়ার জন্য সকলের কাছে প্রিয় হতে বাধ্য৷ একটা ছেলের চোখও যে এতো সুন্দর হতে পারে, তা প্রাচুর্যর জানা ছিলো না।প্রিয় তখন উনিশ বছরের পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির যুবক।সবে ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে। আর প্রাচুর্য ষোল বছরের কিশোরী।লম্বায় পাঁচ ফুট পাঁচ।
প্রাচুর্য তখনো জানতো না যে প্রিয় সামায়াকে ভালোবাসে। জানলে হয়তো নিজের মনকে কিছুটা হলেও সংযত করে ফেলতো।
রাত তখন বারোটা। সামায়া কানে ইয়ারফোন দিয়ে গান শুনছিলো। আর প্রাচুর্য বিছানায় শুয়ে জানালার উপর পা দিয়ে আকাশের চাঁদ,তারাদের মেলা দেখছিলো।তখন বাচ্ছারা যেভাবে ছড়া কাটে সেভাবে বেসুরো গলায় ছড়া কাটছিলো। সামায়ার কানে ইয়ারফোন ছিলো বিধায় শুনতে পায় নি।
মেঘের কোলে রোদ হেসেছে
বাদল গেছে টুটি,
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই
আজ আমাদের ছুটি
আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা,
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।
পরদিন সকালে নাস্তা করতে এলো প্রাচুর্য। আর তখনি প্রিয়র আবির্ভাব হলো। প্রিয়কে দেখে প্রথম প্রথম প্রাচুর্যর খুব লজ্জা লাগতো তখন।তাই প্রিয়র দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে খাবারে মনযোগ দিলো।হঠাৎ প্রাচুর্য খাওয়া থামিয়ে দিলো। কারব প্রিয় খাচ্ছে আর চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে রাতে প্রাচুর্য যেই কবিতা গুলো বলেছিলো সেগুলো বলছে। প্রাচুর্য কিছুই বুঝতে পারছে না। এমন সময় শান্তা ফুপি বললো, __ কি হচ্ছে প্রিয়। তুমি এগুলা কি বলছো বাচ্ছাদের মতো।
কি করবো কাকি মা বলো। কালকে রাতে কেউ একজন এতো জোরে জোরে এগুলা বলছিলো তাও কোন সুর ছাড়া যে এখন এগুলা ছাড়া মুখে আর কিছু আসছে না।
কি বলছো? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। কে এমন করবে। কালকে তো যোহরা আমার সাথে ঘুমিয়েছে। আর জারিফ তো কথাই বলতে পারে না। তো আর কোন বাচ্ছা এগুলা বলবে রাতের বেলা।
সামায়া হঠাৎ পাশ থেকে হেসে দিলো আর বললো, __আমি বুঝতে পেরেছি এটা কার কাজ। ফুপি তুমি বুঝতে পারছো না যে এটা প্রাচুর্য করেছে।
মিসেস শান্তা আর কিছু বললো না।হেসে নিঃশব্দে চলে গেলো। প্রাচুর্য না পারছে মাটিতে মিশে যেতে।ইস.. ও ভুলে কীভাবে গেলো যে পাশের রুমটা প্রিয়র ছিলো। লজ্জায় প্রাচুর্যের কান প্রায় গরম হয়ে গেলো। পরক্ষনেই মাথা তুলে প্রিয়র দিকে তাকালো। নিমিষেই যেনো লজ্জা ভালোলাগায় রূপান্তরিত হলো। এ হাসির দিকে তাকিয়ে যেনো হাজার জনম পাড় করা যায়।
চলবে,