মনের গহীনে পর্ব ১৮+১৯

#মনের_গহীনে
১৮তম পর্ব
লেখনীতে: নাদিয়া হোসাইন

প্রাচুর্য প্রিয়র বাসার নিচে দাঁড়িয়ে চারপাশটা পর্যবেক্ষণ করে নিলো। প্রাচুর্যদের বাসায় সিকিউরিটি গার্ড নেই, তাই প্রিয়র কোন সমস্যা হলো না। দো’তলার শেষ রুমটা প্রাচুর্যের। বাইরে থেকে বারান্দাটা খুব ভালো করে দেখা যাচ্ছে। প্রাচুর্যের বারান্দাটাও অনেকটা প্রিয়র মতো। দো’তলায় পাইপ বেয়ে উঠতে প্রিয়র কোন সমস্যা-ই হলো না। দরজা খোলা-ই ছিলো, তাই নীরবে রুমে ঢুকে গেলো। রাত তখন একটা। এই সময়টায় খুব কম মানুষ-ই জাগ্রত থাকে। প্রাচুর্যের ক’দিন ধরে শরীর খুব দুর্বল যাচ্ছে, তাই এগারোটার দিকেই ঘুমিয়েছে। প্রিয় প্রাচুর্যের ঘুমন্ত মুখটার পাশে দেখলো তার একটা ছবি ফ্রেমে বন্দি। ছবিটা দেখে নিমিষেই প্রিয়র মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। এতো কিছুর পরও যে মেয়েটা প্রিয়কে নীরবে এতোটা ভালোবাসে, তা ওর ভাবনার বাইরে। তার ইচ্ছে করছে প্রাচুর্যকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিতে , কিন্তু প্রাচুর্যর বিষন্ন মুখটা দেখে ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখলো । সে একটা সোফায় বসে প্রাচুর্যের রুমটা পর্যবেক্ষন করে দেখলো। রুমটা বেশ গুছানো। স্টাডি টেবিলের পাশেই প্রাচুর্যের ভাঙা ফোনটা পরে আছে। প্রিয় বুঝতে পারলো, তার উপর সমস্ত রাগ ফোন ভেঙে মিটিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আবার নজর প্রাচুর্যের উপর গেলো। কাঁথা অনেকটা সরিয়ে ফেলেছে শরীর থেকে। শীতে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে প্রাচুর্য নিজেকে। তাই প্রিয় উঠে কাঁথাটা নিয়ে প্রাচুর্যের শরীরে দিয়ে দিলো। পরম উষ্ণতায় ঘুমের মধ্যে প্রাচুর্যর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

প্রিয় প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টের পেলো না। ভোর চারটার দিকে প্রাচুর্যর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হলো। ব্যাথায় খানিকটা কুকিয়ে উঠলো প্রাচুর্য । প্রিয়র ঘুম বরাবরই খুব পাতলা। তাই শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো। দেখতে পেলো প্রাচুর্যে চোখ বন্ধ করেই কেঁদে যাচ্ছে। প্রাচুর্যের কান্না দেখেই প্রিয়র মন ব্যাকুল হয়ে গেলো। প্রাচুর্যের কাছে এগিয়ে গিয়ে গালে আলতো করে হাত রেখে বললো, ___এই প্রাচুর্য ! কি হইছে তোমার, খারাপ লাগছে? প্লিজ বলো আমাকে।
হঠাৎ প্রিয়র গলা পেয়ে থমকে গেলো প্রাচুর্য। ব্যাথার মাঝেও বেশ কোতুহল জেগে উঠলো প্রিয়কে দেখার। তাই মলিন কণ্ঠে বললো, __প্রিয়!
হ্যাঁ আমি প্রিয়। দেখো তোমার কাছে আসছি। কি হইছে বাচ্ছাটা তোমার, কষ্ট হচ্ছে?
প্রাচুর্য মাথা নাড়িয়ে না বলেই আবার ঘুমের ঘোরে হারিয়ে গেলো। মাথা ব্যাথা হলে প্রাচুর্যের একটা স্বভাব, খুব দ্রুতই ঘুমিয়ে যায়। প্রিয় বেশ ভয় পেয়ে গেলো। এক সপ্তাহের ব্যবধানেই মেয়েটা কিছুটা রুগ্ন হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালচে হয়ে গেছে অনেকটা।
নিজের কাছে এক রকম প্রতিজ্ঞা করলো, প্রাচুর্যকে আর কষ্ট পেতেই দিবে না। আবার আগের মতো করে দিবে প্রাচুর্যকে। প্রিয়কে খুব ভাবাচ্ছে প্রাচুর্যের এহেন অসুস্থতা। হুটহাট মাথা ব্যাথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এসব কোন বড় রোগের লক্ষণ নয় তো? প্রাচুর্য যদি তার থেকে হারিয়ে যায়৷ পরক্ষণেই প্রিয় তার ভাবনাকে ধিক্কার দিলো। এসব সে কি ভাবছে। হয়তো সে ডক্টর, তাই এসব তাকে ভাবতে বাধ্য করছে। কিন্তু মন তাকে এসব ভাবতে বারণ করছে। প্রাচুর্যের কিছুই হয় নি। সে তার ভালোবাসাকে হারাতে কখনোই দিবে না। প্রিয় আর ঘুমাতে পারলো না। প্রাচুর্যের পাশেই বসে রইলো। মাঝে মাঝে প্রাচুর্যের চুলেও হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। প্রাচুর্য ঘুমের মাঝে শুরশুরি পেয়ে বারবার হেঁসে যাচ্ছিলো।

শীতের সকাল, তাই সূর্যের আলোও দেরিতে উঠে। জানালা খোলা বিধায় আটটার দিকে তীব্র সূর্যর আলো প্রাচুর্যের মুখে লাগায় ঘুমটা ভেঙে গেলো। পরক্ষণেই মনে পরলো, ভোরের দিকে প্রাচুর্যকে দেখেছিলো। প্রিয়র ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর ও সে শুনেছিলো। কিন্তু উঠার শক্তি ছিলো না, তাই ঘুমিয়ে পরেছিলো। আচ্ছা তখন কি তার ভ্রম ছিলো, নাকি প্রিয় এসেছিলো। ধূর কি ভাবছে সে। প্রিয় কিভাবে এখানে আসবে। চোখ ভালোমতো খুলে আরোও থতমত খেয়ে গেলো। এখানে সত্যিই প্রিয় আছে। লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে প্রিয়র সামনে গিয়ে তার গালে হাত দিয়ে দু’গাল টিপে দিলো। খানিকটা ব্যাথায় ” আহ ” শব্দ করে উঠলো প্রিয়। প্রাচুর্য খানিকটা ভয় পেয়ে প্রিয়র গাল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে স্থির হয়ে দাড়ালো প্রাচুর্য।

সরি প্রাচুর্য! আমি অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায় বাচ্ছাটা। খুব খারাপ আমি। কিন্তু ইয়্যু নো দ্যেট, আমি এখন রিয়েলাইজ করেছি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি। ম্যাজিকের মতো আমার মনে তুমি যায়গা করে নিয়েছো। কখনো ভাবতেও পারি নি, এতো তাড়াতাড়ি তোমাকে এতোটা ভালোবাসতে পারবো, যে তোমাকে ছাড়া আমার এখন অসম্ভব মনে হয়। আমি জানি, ক্ষমার যোগ্য না আমি। প্লিজ, আর একটিবার দিবে সুযোগ আমায়? কথা দিচ্ছি, আর কোন সুযোগ দিবো না আমার ভালোবাসার খাদ ধরার। প্লিজ বাচ্ছাটা সরি এক্সেপ্ট করে নাও।
প্রাচুর্য এতোক্ষণ নীরবে প্রিয়র সব কথা শুনলো। হুট করেই প্রিয়র বুকে গিয়ে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো। প্রিয় ব্যাপারটায় বোকা বনে গেলো। ভাবতেও পারে নি, এতোটা সহজে তাকে ক্ষমা করে দিবে। প্রিয়ও দু’হাতে প্রাচুর্যকে আলিঙ্গন করে নিলো। দু’মিনিটের মাঝেই প্রাচুর্য নিজেকে প্রিয়র বাহুদ্বয় থেকে ছাড়িয়ে নিলো। পা দুটো একটু উপরে উঠিয়ে নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা প্রিয়র কপালে একটা উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে দিলো। প্রিয় অবাকের অষ্টম পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছে। এক অজানা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে দু’জনের মাঝে।
#মনের_গহীনে
১৯তম পর্ব
লেখনীতে: নাদিয়া হোসাইন

আচমকাই প্রাচুর্য প্রিয়কে ছেড়ে দিলো। প্রিয়র মাথায় কিছুই ঢুকছে না। হুট করেই জরিয়ে ধরছে, চুমু খাচ্ছে আবার ছেড়েও দিচ্ছে। প্রাচুর্য সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রিয়কে উদ্যেশ্য করে বললো, __ চলে যান আপনি! আমি এখন কেন, আর কখনোই আমার সামনে আপনাকে দেখতে চাই না।
প্রিয় বিষ্মিত হয়ে বললো, __ প্লিজ প্রাচুর্য! একটা সুযোগ দাও আমাকে। তোমার থেকেও বেশি ভালোবেসে দেখাবো তোমাকে। আমি অনেক ভুল করেছি, কিন্তু ভুল তো মানুষ-ই করে। আর এতোক্ষণ যা ছিলো, তা স্পষ্ট বলে দেয় -তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো। ইনফেক্ট থাকতেও পারবে না আমার স্মৃতি ছাড়া। তুমি আমাকে শাস্তি দাও, কিন্তু নিজের কাছে রেখেই দাও! তোমার থেকে দূরে থেকে শাস্তি ভোগ করতে পারবো না।
প্লিজ প্রিয় আপনি যান। আমি আপনাকে ভালোবাসি, কিন্তু আমি চাই না আপনাকে। আপনি আমার না পাওয়া ভালোবাসা হয়েই থাকুন। আপনি তো সামায়াকে ভালোবাসতেন। তাকে যখন ভুলতে পেরেছেন, তো আমাকেও দিব্যি ভুলতে পারবেন কোন এক নতুন মানুষের প্রচেষ্টায়।
প্লিজ প্রাচুর্য , থামো! তোমাদের দু’বোনের কি আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না? দুজনেই আমাকে ভুলে যাওয়ার কথা বলেছো। বিশ্বাস করবে কি-না জানি না, কিন্তু সামায়াকে যতোটা ভালোবেসেছিলাম, এ ক’দিন তোমাকে তার চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। এখন বুঝতে পারছি, সামায়া আমার তেমন ভালোবাসা ছিল না। যদি হতো তাহলে অনেক আগেই ওর কাছে নিজের অনুভূতিটা রপ্ত করতে পারতাম। বাট এখন বলছি, আমি তোমাকে ছাড়া একদমই থাকতে পারবো না। তুমি আমাকে শিখিয়েছো, ভালোবাসার মানে। প্লিজ দূরে যেতে বলো না আমাকে।
প্রাচুর্যের চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। ও পারছে না প্রিয়কে এভাবে দেখতে। দু’হাত দিয়ে গালের পানি মুছে নিলো। প্রিয়র কাছে গিয়ে তার হাতটা ধরে বললো, ___ দু’মাস সময় দিবেন আমাকে? সব কিছু ঠিক করে দিবো। আমি চাই না আপনাকে কোন শাস্তি দিতে। যাকে এতো ভালোবাসি, তাকে শাস্তি কীভাবে দিতে হয় আমার জানা নেই। চারদিন পর থেকে আমার পরীক্ষা। আমি এই সময়টা আপনার সাথে থাকতে চাচ্ছি না। নিজেকে একা গুছিয়ে নিতে চাচ্ছি। এই প্রাচুর্যর যা কিছুই হয়ে যাক না কেন, আপনাকে সব সময় ভালোবেসে যাবে। আপনি আমাকে ভালো না বাসতে পারেন, ভুলে যেতে পারেন। কিন্তু আপনার কাছে এসে আমি আত্নমর্যাদাহীণ হয়ে যাই। আমি শুধু কিছুটা সময় চাচ্ছি। এই সময়টা আমাকে একটু একা স্পেস দিন প্লিজ!
প্রাচুর্যর কথা শুনে প্রিয় কেঁদে দিলো। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। প্রাচুর্য তাকে এতোটা ভালোবাসে, সেই ভালোবাসার সম্মান দেওয়ার জন্য অনেক বড় স্ট্রাগল করতে হবে তাকে। প্রাচুর্য প্রিয়র চোখের পানি নিজ হাতে মুছে দিলো। পা দুটো উঁচু করে প্রিয়র চোখের উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে দিলো। এরপর চোখের পাতায় ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা স্পর্শ করে দিলো। প্রিয়র দু গালে হাত রেখে বললো, __ আমার উত্তর পেলাম না আমি। দিবা না আমাকে উত্তর?
প্রিয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, __ হুম, তুমি টাইম নাও। এতোদিন তো আমার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছো। এখন তুমি বললে আমি মৃত্যু পর্যন্ত তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষা করবো। শুধু তোমাকে দেখার একটু অধিকার দিও, তাহলেই হবে।
এইতো গুড বয়। কিন্তু না চাওয়া পর্যন্ত দেখতেও পারবে না। যদি আমি ভুল ক্রমে তোমার সামনে এসে পরি, তবেই একটু দেখতে পারবে। এখন বাসায় যাও। দ্যেন একটু ঘুমাও। ইস.. চোখের নিচে কালচে হয়ে যাচ্ছে।
এখনি যাব, একটু থাকি না?
না! আর শুনুন, যদি একটুও ভালোবেসে থাকেন তাহলে স্মোক করাটা ছেড়ে দিয়েন প্লিজ। আপনাকে অকালে অসুস্থ হতে দেখতে পারবো না। আমি যদি কখনো না-ও থাকি, তাও আপনার মাঝে আমি বাঁচতে চাই। প্লিজ আমার এই রিকুয়েষ্ট গুলো রাখিয়েন। আপনার কষ্ট গুলো আমাকে আরো বেশি কষ্ট দেয়।
ওকে বাচ্ছা। এখন থেকে সব কিছুই বাদ। শুধু তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষা করে যাব। লাফ ইয়্যু বাচ্ছাটা। তোমার হাতে কি একটা চুমু দিতে পারি?
প্রাচুর্য হেঁসে প্রিয়র দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলো। প্রিয় পরম আবেশে প্রাচুর্যের হাতে চুমু এঁকে দিলো।

দক্ষিণের জানালা দিয়ে বাতাস বইছে। প্রাচুর্য এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে নোনা অশ্রু ঝরে যাচ্ছে। আজ প্রাচুর্যের অনেক খুশি হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু নিয়তি তাকে খুশি হতে দিচ্ছে না। সব প্রাপ্তির মাঝে নিয়তি তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। জীবন তো খুব বড় নয়, তারপর-ও কতো হাহাকার। তার উচিত ছিলো প্রিয়কে কিছুদিন ঘুরানো। যেনো প্রিয় তার রাগ ভাঙায়৷ কিন্তু ভালোবাসার মানে তো তা নয়। ভালোবাসার মাঝে আত্নসম্মান টাও খুব একটা কাজ করে না। কেউ সুযোগ দিয়ে ঠকে, আর কেউ সুযোগ দিয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু পায়। সে কখনোই পারবে না প্রিয়কে কষ্ট দিতে শাস্তি নামক শিকলে বেঁধে। কিন্তু প্রিয়কে তার থেকে দূরে যেতে হবে। প্রিয়র একবার ভাঙা হৃদয় সে আবার ভাঙতে পারবে না। প্রিয়কে নিয়ে সংসার করা, প্রিয়র বউ হওয়া যে তার কপালে নেই। আজ খুব কষ্ট হচ্ছিলো, প্রিয়কে দু’মাসের কন্য দূরে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু সে নিরুপায়। আবেগের বসে খুব বড় ভুল করে ফেলেছে সে।আজ সেই আবেগটা না থাকলে, প্রিয়কে আর তাকে কেউ আলাদা করতে পারতো না।

এক সপ্তাহ হয়ে এলো। দু’জন মানুষ বিরহে আছে। কেউ শান্তি পাচ্ছে না। প্রিয় দুই মাস পরের মিষ্টি দিন গুলোর অপেক্ষায় আছে। আর প্রাচুর্য বাকি সময় কি হবে তা দেখার। প্রাচুর্যের বাসায় লোকজনও কিছুটা ভেঙে পরেছে। ক্রমশ রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। সময়ের অভাবে ডাক্তারও দেখাতে পারছে না তাকে। প্রাচুর্যের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। সবে একটা পরীক্ষা শেষ। প্রাচুর্যর প্রিপারেশন তেমন ভালো না, তাও মন প্রান দিয়ে চাইছে যেনো পরীক্ষা গুলো ভালোয় ভালোয় দিয়ে শেষ করতে পারে।

দ্বিতীয় পরীক্ষা হলো ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধ ঘন্টার মাঝেই প্রাচুর্যের তীব্র মাথা ব্যাথা শুরু হলো। হাতও চলছে না কোনভাবেই। অনেক চেষ্টা করলো নিজেকে ঠিক রাখার। কিন্তু মিনিট খানিকের মধ্যে-ই আর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পরলো। নিথর দেখ বেঞ্চের উপর পরে গেলো। পুরো হল জুড়ে একটা বিদঘুটে অবস্থা। সবার নজর প্রাচুর্যের দিকে। হলের শিক্ষকরা তার কাছে এগিয়ে এসে দ্রুত মেডিকেল টিমকে খবর দিলো। তারা এসে প্রাচুর্যকে হস্পিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করলো। কলেজের পরিচিত টিচাররা প্রাচুর্যের বাবা সুবহাব সালেহ-কে কল দিলো।

প্রাচুর্য এখন স্কোয়ার হস্পিটালে এডমিড আছে। ইতোমধ্যে প্রাচুর্যের বাসার সবাই হসপিটালে উপস্থিত আছে। প্রিয়ও হসপিটালে এসেছে। মিসেস শান্তাকে তার ভাই প্রাচুর্যের অসুস্থতার কথা ইনফর্ম করেছে। উনি কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়কে সব জানায়। প্রিয় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। তার প্রেয়সীর নিঃশ্চয়-ই বড় কিছু হয়েছে। তার আগেই লক্ষ করার কথা ছিলো। কিন্তু ভালোবাসায় ডুবে গিয়ে মনে কোন খারাপ চিন্তা আসে নি। সেই যে প্রাচুর্যের সেন্স গিয়েছিলো তিন ঘন্টা হতে চললো এখনো ফিরে নি।

সবার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে ডক্টর. তারিফ বেড় হয়ে গেলো প্রাচুর্যের কেবিন থেকে। ড.তারিফ প্রাচুর্যের বাবার বন্ধুর ছেলে। প্রাচুর্যের বাবা তাকে চিনতো কিন্তু তারিফ চেহারা ভুলে গিয়েছিলো। আজ দেখে মনে পরলো। তারিফ আগে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ছিলো। কিছু ঝামেলার জন্য স্কোয়ারে এসেছে। উনি প্রাচুর্যের বাবার দিকে এগিয়ে এসে বললো , __আংকেল, আপনার মেয়ে এর আগে দু’বার আমার চেম্বারে গিয়েছিলো। উনার ব্রেইন টিউমার ছিলো। কিছু সমস্যার জন্য টেস্ট করতে এসে ধরা পরে। উনি বরাবরই উদাসীন ছিলো। আমি তখন পরামর্শ দিয়েছিলাম যেনো এখন থেকে ট্রিটমেন্ট শুরু করে। কিন্তু সে আমাকে বলেছিলো তার ফ্যামেলিতে কার জানো বিয়ে হচ্ছে।তাই বিয়ের পর পর-ই ট্রিটমেন্ট করবে। তখন আমি জানতাম না উনি আপনার মেয়ে।জানলে ইনফর্ম করে দিতাম। ও ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয় নি। আমরা ধারণা করছি ওর টিউমারটা ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। এখন টেস্ট করতে দিয়েছি, দেখি কোন অবস্থায় আছে। কিন্তু ব্যাপারটা খারাপ পর্যায়ে পোছে গেছে। তাও আমাদের মেডিকেল টিম বেস্ট ট্রাই করবে৷
প্রাচুর্যর বাবা থমকে গেলেন। এখন সব দোষ উনাদের। মেয়েটার অসুস্থতার দিকে তেমন নজর দিতে পারে নি। আর ছোট মেয়ে, তাই প্রাচুর্যও তেমন গুরুত্ব দেয় নি। প্রাচুর্যের ফ্যামেলির সবাই স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। প্রাচুর্য বরাবরই সবার আদরের। আজ কেউ প্রাচুর্যের এহেন অবস্থা দেখতে পারছে না।

প্রিয় এক কোনায় দাঁড়িয়ে চোখের জ্বল ফেলে যাচ্ছে। বুকের মধ্যে হাঁড়ানোর ভয় তাড়া করে যাচ্ছে। এটা দুঃস্বপ্নেও ভাবে নি। প্রিয় যেহেতু ডাক্তারি পরছে, তাই ড.তারিফের কথা বুঝতে বেশি দেরি হলো না। এখন বুঝতে পারছে প্রাচুর্যের সেই সব হেয়ালির কারন। তিন বছর পর কেনো প্রথম প্রাচুর্যের সাথে হসপিটালেই দেখা হয়েছিলো, তা প্রিয়র কাছে স্পষ্ট। খুব রাগ হচ্ছে প্রাচুর্যের প্রতি৷ তাকে এতোটা ভালোবাসতো, সব সময় প্রিয়.. প্রিয়.. করে গেছে। আজ সেই প্রিয়র থেকেই সব গোপন করে গেলো। তাও আবার দু’মাস সময় চেয়ে নিলো, যেনো দু’মাসে প্রিয়র থেকে অনেক দূরে যেতে পারে। নাহ প্রিয় বারবার তার ভালোবাসার কাছে হেরে যাবে না। প্রাচুর্যকে এবার শক্ত হাতে ধরে রাখবে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here