#মনের_গভীরে_তুমি❤
#পর্ব_১৩
#M_Marufa_Yasmin
টিপ আরাভ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল
—” চলুন এবার রেডি হয়ে নিন।অনেক টাইম হয়ে গেল।
—” হুম।তুমি আজ ব্লাক শাড়ি পরবে ।
—“ওকে ।
টিপ একটা ব্লাক স্লিক শাড়ি পরেছে চোখে গাঢ় কাজল।ব্লাক কানের।চুলটা খোলা।
আরাভ ব্লাক কোটের ভেতরে।সাদা টি শার্ট।চুলটা স্টাইল করা। হাতে একটা হ্যান্ড ওয়াচ ।
আরাভ নিজে রেডি হয়ে টিপ দিকে তাকাতেই আর এক দফা টিপের প্রেমে পড়ে যায়।হা করে তাকিয়ে আছে টিপের দিকে।টিপ চুল ঠিক করতে করতে বলল,,,,,,,,
—” ও ভাবে কি দেখছেন?
টিপের কথায় ধ্যান ভেঙে আরাভের,,,
—“তোমাকে!
—“আমাকে কোনোদিন দেখেননি?
আরাভ একভাবে টিপের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
—” তোমাকে প্রতিদিন দেখি আর প্রতিদিন নতুন করে তোমার প্রেমে পড়ে যায়।
টিপ একটু লজ্জা পেয়ে বলল
—” হুম হয়েছে।চলুন এবার ।
মইন খান এর দিকে অনেক মেয়ে তাকিয়ে আছে।মইন খান নীল কোটের ভেতরে সাদা টি শার্ট পরেছে।স্লিকি চুল বারবার কপালে পড়ছে আর মইন খান বারবার চুলটা সরাচ্ছে।মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে।
নিক ও কম কিছু লাগছে না। নিক একটা গোলাপি কোটের ভেতরে সাদা টি শার্ট পরেছে । চোখটা হালকা নীল তারপর চশমা।চুলটা স্পাইক করা।
মেয়েরা ভেবে পাচ্ছে না কার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
আরাভ ও টিপ
দুজনেই এক সাথে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।আর নিচে উপস্থিত থাকা সকলে ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
নিক আর মইন এক সাথে দুজন টিপের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।মইন মনে মনে বলছে
—” আজ আমার রাতপরি কে আরো সুন্দর লাগছে রাতপরি আমি তোমাকে যত দেখছি তত প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।
অন্য দিকে নিক ভাবছে
—” তোমাকে তো প্রথম দেখা প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।আজ আবার ও পড়লাম তোমার প্রেমে ।সত্যি আল্লাহ অনেক সুন্দর করে তৈরি করেছে তোমাকে। যদি তোমার বিয়ে না হতো তাহলে আমি তোমাকে আমার করেই নিতাম কিন্তু আল্লাহ হয়তো চাইনি।
আরাভ টিপের হাত ধরে নিচে নিয়ে এলো।আবির ইশরার চোখ বেঁধে সবার কাছে নিয়ে আসছে।ইশরা তো বুঝতেই পারছে না কি হচ্ছে।
আবির আস্তে আস্তে ইশরার চোখের বাঁধন খুলে দিল আর ওমনি সবাই হ্যাপি বার্থডে ইশরা বলে চেঁচিয়ে উঠলো ।
ইশরা পুরো অবাক।
ইশরা খুশিতে আরাভ আর টিপ কে জড়িয়ে ধরল।
কিছুক্ষন পর কেক কাটলো।
তার মধ্যে কেয়া এসে ইশরা কে জড়িয়ে ধরল।
—” হ্যাপি বার্থডে ইশরা।
—” তুই?
—” আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি প্লিজ তোমরা সবাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।জানি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না তাও বলছি প্লিজ ক্ষমা করে দাও ।
টিপ বলল
—” আমরা সকলেই তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।এখন এসব কথা বাদ দাও ।
সবাই অনেক মজা করতে লাগল।
আরাভ আর টিপ ইশরাত চৌধুরী কে অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
—” মা আজ আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো সব সত্যি সত্যি বলবে।
ইশরাত চৌধুরী অবাক হয়ে বলল
—” কি জিজ্ঞেস করবি কর?
—” মা সেই দিন দি যা বলল সত্যি? দি বাবার মেয়ে না? বাবা দি এর বাবা কে খুন করেছে?
বলো মা এই গুলো সব সত্যি?
ইশরাত চৌধুরী করুন মুখে তাকিয়ে আছে টিপ আর আরাভের দিকে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।
আরাভ পুনরায় জিজ্ঞেস করলো
—” কি হলো চুপ কেনো বলো? মা তোমাকে আমার কসম তুমি বলো ।
—” আরাভ!!!!
ঠিক আছে বলছি।
আমি আর কেয়ার বাবা তামিম খান বিয়ের সাত বছর পর পাঁচ বছরের মেয়ে কেয়া কে নিয়ে তার দাদুর বাড়ি যাচ্ছিলাম।কেয়ার বাবা আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন।সেই দিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল।যার কারনে রাস্তায় ভালো কিছু দেখা যাচ্ছিল না।হঠাত আর একটা গাড়ি এসে আমাদের গাড়ি কেনার ধাক্কা দেয়।আমাদের এক্সিডেন্ট হয়।যখন চোখ খুললাম দেখলাম তোর বাবা আমার মেয়ে কেয়া কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি চেঁচিয়ে বললাম।আমার স্বামী কই ।সবাই চুপ কেও কিছু বলছিলো না ।
আমি আবার চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম।আমার স্বামী কই তারপর একজন নার্স এসে আমার স্বামীর লাশটা আমাকে দেখালো।এর পর আমি জ্ঞান হারায়।তারপর তামিম এর পুরো ফ্যামিলির দ্বায়িত্ব নেয়।তোর বাবা কয় এক মাস পর।কেয়ার দাদু। তোর বাবার সাথে আমি বিয়ে ঠিক করে কিন্তু
আমি রাজি ছিলাম না।তাও উনি ওনার কসম দেয় আর কেয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েটা করে নিই প্রথম প্রথম তোর বাবা কে মেনে নিতে পারিনি।তারপর একটা সময় মেনে নিয়েছি।
বলেই কাঁদতে লাগে।
আরাভ আর টিপের চোখে ও পানি।আরাভ ওর মা কে জড়িয়ে ধরে।আরাভ ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল
—” মা প্লিজ তুমি আর কেঁদো না এবার বাইরে চলো সবাই খুজবে।
টিপ বলল
—” মা তুমি আর কষ্ট পেও না চলো আমরা বাইরে যায়।
পার্টি শেষ হয়ে।যে যার মতো চলে গেল রুমে ।
পরেরদিন সকালে টিপ রান্না ঘরে ব্রেক ফাস্ট বানাচ্ছিল।সবাই এসে টেবিলে বসে আছে।টিপ খাবার দিতে দিতে হঠাত মাথা ঘুরে পরে যেতে নেয়।ওমনি আরাভ ধরে নেয়।
আরাভ ভয় পেয়ে যায় ।টিপের কিছু হয়ে গেলো নাকি তাই ভাবছে আরাভ।
তাড়াতাড়ি করে টিপ কে কোলে নিয়ে সোফায় শুয়ে দিল।তারপর ডাক্তার করে ফোন করে ডাকল।ডাক্তার এসে দেখল।কিছুক্ষন দেখার পর।ডাক্তার মুখে হাসি নিয়ে বলল
—” congratulations আপনি বাবা হতে চলেছেন।
আরাভ উৎসাহিত হয়ে বলল
—” সত্যি! Thank you doctor
—” thank you আপনার স্ত্রী কে বলুন ।
সবাই তো মহা খুশি।
কিন্তু মইন খান খুশি না।
মইন খান রেগে চলে গেলো।
সবাই এসে টিপ কে জড়িয়ে ধরছে।এতে টিপ একটু লজ্জা ও পাচ্ছে। আরাভ টিপ কে কোলে নিয়ে রুমে যায়।রুমে গিয়ে শুয়ে দিল।আর টিপের হাত দুটো ধরে বলল
—” আজ থেকে কোনো কাজ তুমি করবে না যা করার অন্যরা করবে।thank you আমাকে এত বড়ো একটা গিফট দাওয়ার জন্য।
—” পাগল আপনি।
—” তুমি কিছু খাওনি তো? Wait আমিতো কিছু নিয়ে আসি বিছানা থেকে উঠবে না ওকে ।
—” ব্যাস্ত হচ্ছেন কেনো? আমি পরে খাবো।
—” চুপ যা বলব তাই করবে।
—” ওকে ।
আরাভ গিয়ে দুধ আর কিছু ফল নিয়ে আসে।
তারপর টিপ কে খাইয়ে দেয়।খাইয়ে টিপ কে বলল
—” এখন ঘুমাও।
কপালে চুমু খেয়ে বলল
বিকাল বেলা আরাভ টিপ কে নিয়ে ঘুরতে বের হয়।
টিপ আরাভের ঘাড়ে মাথা দিয়ে আছে।
হঠাত বলল
—” আরাভ দাঁড়ান আমার বমি পাচ্ছে ।
—” ওকে ওকে ।
আরাভ তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নামে আর টিপ কেও নামায।তারপর টিপ বমি করে।আরাভ ওর মুখটা ধুয়ে দিয়ে কোলে করে গাড়িতে আবার বসায়।
—“এখন ঠিক আছো?
—” হুম চলুন।
—” আমার মেয়ের নাম রাখবো নিথি।
—” আগেই জেনে নিলেন।কিন্তু আমার ছেলে চাই।আর আমার ছেলের নাম রাখবো নীল।
—” না আমাদের মেয়ে হবে।
—” না না আমার তো ছেলে চাই।
—” ওকে তাই হবে।
অন্য দিকে মইন খান রেগে বলছে ।
—” একবার শুধু বেবিটা হক তারপর আমি তোমাকে আরাভের থেকে দূরে করেই ছাড়বো।
তুমি শুধু আমার।আর কারো না কারো হতে দেবো না তোমাকে টিপ তুমি আমার রাত পরি।
দরজার সামনে দিয়ে নিক যাচ্ছিল তখনই মইন এর সব কথা নিক শুনে ফেলে।
নিক মইন এর কাছে গিয়ে বলল
—” দা ভাই এটা তুই কি বলছিস টিপ অন্য কারো বউ। তুই ওকে আরাভের কাছে থেকে কেঁরে নিতে পারিস না।প্লিজ ওদের কে সুন্দর ভাবে থাকতে দে।
—” তুই চুপ ।আমি আরাভ কে মেরে টিপ কে নিজের করে নেবো ।
—” আমি এটা হতে দেবো না ।
—” দেখায় যাবে কে আমাকে আটকায়।
নিক রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ।
এই ভাবে আট মাস কেটে গেলো নিক মইন খান কে কোন সুযোগ দেয়নি টিপের ক্ষতি করার।
এখন টিপের নয় মাস চলছে।
পেট টাও অনেকটা বড়ো হয়েছে।আরাভ তো টিপ কে চোখে হারায়।বাড়ির সবাই টিপের খুব খেয়াল রাখে।এই আট মাস আরাভ টিপ কে কোনো কাজ করতে দেয়নি।
সকাল বেলা আরাভ চা নিয়ে টিপের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।টিপ এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি।আরাভ চা এর ট্রে টা টেবিলে রেখে আলতো করে টিপের কপালে তারপর পেটে চুমু দেয়।তারপর টিপের পাশে বসে বলল
—” টিপ এই টিপ উঠো।
—” সকাল হয়ে গেছে ।
—“হুম।
আরাভ টিপ কে আস্তে আস্তে করে বাথরুমে নিয়ে যায়।
—” তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।
কিছুক্ষন পর টিপ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।
আরাভ টিপ কে যত্ন করে চুল বেঁধে দিল।সাজিয়ে দিল তারপর খাইয়ে দিল।টিপ কে বিছানায় বসিয়ে বলল
—” তুমি এখন বসো আমি আসছি ।
—“কোথায় যাবে?আমাকে আচার এনে দাও।
—“ওকে এনে দিচ্ছি ।
আরাভ টিপের জন্য আচার আনতে যায়।ওমনি কেয়া টিপের রুমে।
—” টিপ কি করছো?
—” এই তো বসে ।
—“ভাই তোমাকে নিচে ডাকল একবার ।
—” কিন্তু এখনই তো উনি আমার কাছ থেকে গেলেন ।
—” তা জানি না তবে ডাকল কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবে তাই ।চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি ।
—“আচ্ছা চলো ।
কেয়া ধরে ধরে ওকে নিয়ে যায়।সিঁড়ির কাছে আসতেই বলে উঠল
—“আরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।আমার একজন কে ফোন করতে হবে তুমি যাও আমি আসছি আস্তে যাবে হ্যা ।
—“ওকে ।
টিপ আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়।আর সাত টা সিঁড়ি নামতে বাকি যেই সিঁড়ি নামতে যায় ওমনি কিছুতে পা পিছলে পড়ে যায়।সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পরেছে।
টিপ পরা মাত্র চেঁচিয়ে ওঠে আআআআআআআআ করে রান্না ঘর থেকে আরাভ টিপের গলার আওয়াজ শুনে ছুটে আসে।দেখে টিপ মেঝেতে ঝটপট করছে।রক্ত তে ছাড়াছাড়ি।
আরাভ চেঁচিয়ে কেঁদে ওঠে
—“টিপপপপপপপ।মা বাবা ইশরা তাড়াতাড়ি আয় ।
সবাই ছুটে আসে।
আরাভ তাড়াতাড়ি করে টিপ কে কোলে নিয়ে হসপিটালে যায়।
পুরো হসপিটাল মাথায় করে নিয়েছে।চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে।টিপ কে ডাক্তাররা অপারেশন থিয়েটার এ ঢুকায় আরাভ এখনো কেঁদে যাচ্ছে।
সবাই হসপিটাল এসছে শুধু কেয়া বাদ
ডাক্তার এখনও কিছু বলেনি।আরাভ কেঁদেই যাচ্ছে। আর্য জোর করে ইশরা আর তার মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল।টিপের কাছে অনেকে আছে বাড়িতে কেও নেয়।কিছুক্ষন পর ইশরা আর্য কে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে
আর্য হসপিটাল এর বাইরে গিয়ে কথা বলে
—“হ্য় বল
—” দা কেয়া দি! কেয়া দি কে কেও খুন করে দিয়েছে ।
*
*
*
*
*
বাকি
(আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ যারা গঠনমূলক মন্তব্য করতে পারবেন না তারা কমেন্ট করবেন না তারা শুধু গল্পটা পরে লাইক দিয়ে চলে যাবেন।নেক্সট নাইস লিখবেন না ।যারা গঠনমূলক কমেন্ট করবেন তারা কমেন্ট করবেন ।)