#মনের_গভীরে_তুমি❤
#পর্ব_১২
#M_Marufa_Yasmin
টিপ রান্না ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।আর চুপিচুপি দেখছে কেয়া কি করতে চাইছে। কেয়া অনেক গুলো লঙ্কা গুঁড়ো নিয়ে।আলাদা করে রাখা মাংসের বাটিতে লঙ্কা গুঁড়ো গুলো দিয়ে দেয়।
টিপ মনে মনে ভাবছে ।
—” কেয়া দি বাবার মাংসের বাটিতে কেনো এও গুলো লঙ্কা গুঁড়ো দিল? ওর শত্রুতা তো আমার সাথে ?তাহলে কি? বাবা যদি এই মাংস খাই তাহলে তো অনেক বড়ো কিছু হতে পারে। না আজ এর শেষ দেখেই ছাড়বো।
টিপ সেখান থেকে চলে যায়।সবাই খাবার খেতে বসেছে। টিপ সবাই কে খাবার দিচ্ছে। কেয়া তো ভিষন খুশি। তার প্ল্যান কাজ করবে ভেবে ।
টিপ বাটি টা ইমরান চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দিল।
ইমরান চৌধুরী খেতে যাবে এমন সময় টিপ বলল
—“বাবা দাঁড়ান ।আমি আপনাদের কিছু দেখাতে চাই ।
কেয়ার দিকে তাকিয়ে টিপ বলল কেয়া তো ভয়ে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে।
ইমরান চৌধুরী ও বাড়ির বাকি সদস্যরা আগ্রহ নিয়ে টিপের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইমরান চৌধুরী টিপ কে মলিন হেসে বললেন
—” কি দেখাবি?
টিপ কিছু না বলে তার ফোন এ একটা ভিডিও বের করে সবাই কে দেখাচ্ছে।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেয়া ভয়ে কাঁপতে লেগেছে।
লঙ্কা গুঁড়ো মিশানোর ভিডিও এটা।তখন টিপ ভিডিও করে নিয়েছিলো কারণ তার কথা হয়তো কেও বিশ্বাস নাও করতে পারে। ইমরান চৌধুরী ছলছল চোখে কেয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন
—” আমি তোর কি ক্ষতি করেছি রে বল?তুই আমার ক্ষতি করতে চাইছিলি?
কেনো বল?
ইশরাত চৌধুরী এসে কেয়া সজোরে একটা চর মারে কেয়া গালে হাত দিয়ে বলল
—” মা তুমি আমাকে মারলে ।
ইশরাত চৌধুরী রেগে বলল ….
—” চুপ একদম চুপ কি ।তুই মানুষ? ছি আমার লজ্জা করতে তোকে নিজের মেয়ে বলতে ।
টিপ এসে ইশরাত চৌধুরী কে থামিয়ে বলল
—“কেনো করলে এটা ?উনি তোমার নিজের বাবা আর মেয়ে হয়ে বাবার ক্ষতি কি করে চাও তুমি?
কেয়া এবার নিজেকে শক্ত করে বলল
—” হ্যা যা করেছি ঠিকই করেছি ।আর কে আমার বাবা এই মানুষটা? না উনি আমার বাবা না। আর না আমি ওনার মেয়ে।হ্যা আমি ইশরাত চৌধুরীর মেয়ে ইমরান চৌধুরীর নয়। উনি আমার বাবাকে মেরেছেন।গাড়ি এক্সিডেন্ট করে।আমি ছাড়বো না ওনাকে তিলে তিলে মারবো।
টিপ রেগে এক চর দেয়।আর বলে
—” ব্যাস অনেক হয়েছে। এবার থামো। নিজের বাড়ি যাও।এই বাড়িতে তুমি আর আসবে না।
টিপ কেয়ার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে দিল।সবার চোখে পানি ।
সবাই খাওয়া ছেড়ে চলে যায়।টিপ ও আটকায় না।কারন ওদের একটু একা থাকার প্রয়োজন।
মইন খান ও চলে যাচ্ছিল ।টিপ বলল
—“আরে আপনি কেনো যাচ্ছেন? আপনি খান ।
মইন খান আলতো হেসে বলল
—” না না ঠিক আছে বাড়ির সবাই খেলো না আর আমি খেয়ে নেবো এটা ঠিক না ।খারাপ দেখায়।
—” ঠিক আছে আপনি রুমে যান।আমি আপনার জন্য হালকা কিছু বানিয়ে দিচ্ছি ।
—” ওকে ।
মইন চলে যায়। রুমে বসে বসে টিপের ছবি দেখছে আর হাসছে।
আর ভাবছে
—“তোমাকে তো আমি আমার করেই ছাড়বো রাতপরি। তুমি আমার না হলে কারো হতে দেবো না।তুমি এই বাদশার রাজ প্রসাদের রানি হয়ে থাকবে।
—“আসবো?
মইন খান দরজায় দিকে তাকিয়ে দেখে টিপ দাঁড়িয়ে।
—“আরে এসো ।
টিপ ভেতরে গিয়ে সুপটা রেখে দিয়ে বলল
—” আপনার সুপ ।আসি ।
টিপ চলে যায়।
বিকেল বেলা টিপ ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আরাভ গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে টিপ কেঁপে উঠে ।
—“আবার শুরু হলো আপনার দুষ্টুমি।ছাড়ুন কেও এসে পড়বে।
—” না ছাড়বো না ।বউ এর সাথে ঠিক ভাবে romance ও করতে পারবো না নাকি ।
—“ইশশ কি শখ ।
—” শখ হবে না কেনো দশটা নয় পাঁচটা নয় একটা মাত্র বউ আমার ।শখ তো হবেই ।
—” হয়েছে হয়েছে এবার ছাড়ুন ।
আরাভ হঠাত টিপের মুখটা চেপে ধরে বলল
—“চুপ কেও ফিসফিস করে কথা বলছে।
—” নিচে থেকে আসছে হয়তো।
—“না এটা নিচে তলার বারান্দা থেকে আসছে।
সেকেন্ড ফ্লোর থেকে ।
—“চলেন তো দেখি ।
এটা তো ইশরার রুম থেকে আসছে ।
—“হুম তাই তো চলো দেখি ।
আরাভ আর টিপ চুপি চুপি যায় ইশরার রুমে দরজা খোলায় ছিল ।দুজনে তাকিয়ে দেখে ঈশরা আর আবির কথা বলছে।
আরাভ আর টিপ জোরে একটা কাশি দিয়ে বলল
—“এই তোরা কি করছিস?
আবির আর ইশরা তাকায়।
—“ভাবি পড়া বোঝাচ্ছিলাম।কদিন পর আমাদের পরীক্ষা তো তাই ।
—” ও তাই নাকি গো নন্দিনী তা হাত ধরে বুঝি পড়া বোঝা ছিলে।
—” না মানে ভাবি ।
ইশরা আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আবির কারো সাথে কথা না বলে বেরিয়ে গেলো।আরাভ আর টিপ একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল
—“এটা কি ছিল ।
—“সত্যি তো কুছ তো গারবার হৈ।
আরাভ আর টিপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
তারপর নিজের রুমে এসে বসল ।
—“টিপ কাল কে ইশরার জন্মদিন।কিছু একটা প্ল্যান করতে হবে।কি করা যায় বলতো ।
— “ও ওকে কাল ইশরা কে আমারা সবাই মিলে সারপ্রাইজ দেবো কেমন।
—“হ্যা এটা ভালো হবে ।
—” আজ থেকে সব আয়োজন শুরু করি দিই।
—“হ্যা ।
পরেরদিন সকালে টিপ রান্না করছে। আর ইমরান চৌধুরী এবং মইন খান সোফায় বসে কাজ করছে।
আরাভ অফিসে গেছে ।অনেক দিন অফিসে যাওয়া হয়নি।ইশরাত চৌধুরী রান্নাতে টিপের সাহায্য করছে ।
এমন সময় দরজার কলিং বেল বাজল।টিপ চেঁচিয়ে আসছি বলে ছুটে দরজা খুলতে গেলো।দরজা খুলে দুজন অচেনা ছেলে কে দেখল। দুজনেই তো খুব সুন্দর হ্যান্ডসাম। কোট প্যান্ট পরে।একজন হা করে টিপের দিকে তাকিয়ে আছে।আর একজন টিপ কে জিজ্ঞেস করল।
—” আপনি কে? আপনাকে তো চিনলাম না ।
—“আমি এই বাড়ির বউ ।কিন্তু আপনি কে?
—“ওওও ভাবি omg আমার ভাবি এত সুন্দর ।
—“wait wait তুমি কে আগে বলো ।
—“আমি কে? এটা তোমার বাড়ির লোকজন কে জিজ্ঞেস করলো ।
ছেলে দুটো ভেতরে ঢুকে পড়ে ।একজন গিয়ে ইমরান চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে বলল
—“মামা কেমন আছো?
—“আরে আর্য যে হঠাত ?বলিসনি তো যে আসবি ।
—“মামা সারপ্রাইজ ছিল ।
—“আচ্ছা ।ছেলেটা কে?
—“ও ও আমার বন্ধু নিক ।
নামটা কানে যেতেই মইন খান চোখ তুলে তাকালেন এতক্ষন নিচে দিকে মুখ করে ছিল।
আর বললেন
—“তুই?
ছেলেটা ও মইন খান কে জড়িয়ে ধরলো ।
—“দাভাই।
ইমরান চৌধুরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
—“আপনারা একে অপর কে চিনেন?
—“হুম ও আমার ছোট ভাই ।
—“ভালো তো ।
ইমরান চৌধুরী টিপ কে দেখিযে বললেন ।
—“আর্য তোর ভাবি কে দেখলি ?
আর্য এক গাল হেসে বলল
—“মামা ভাবী তো পুরো পরির মতো।
কথাটা শুনে মইন খান হাত দুটো মুঠো করে নিলো রাগে।আর মনে মনে বলল
—“আমার পরি কে কেও পরি বলতে পারবি না তোদের কে ছাড়বো না ।
অন্য দিকে নিক ভাবছে ।
—“তুমি তাহলে বিবাহিত ।
ইশরাত চৌধুরী চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে বাইরে এলো ওমনি আর্য গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল
—“মামি কেমন আছো তুমি জানো তোমাকে কত মিস করেছি ।
—“হয়েছে হয়েছে আর নেকামো করতে হবে না ।ওখানে গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গিযেছিলি।
—“ও মামি এত কাজের চাপ আচ্ছা আরাভ ইশরা কেয়া দি রা কই?
ইশরাত চৌধুরী কথাটা ঘুমানোর জন্য বলল
—“ওরা আছে আগে তুই ফ্রেশ হয়ে আয় যা তো।
—“ওকে এই নিক আয়।
ওরা রুমে চলে যায়।
টিপ গিয়ে তার কাজ করতে লাগল।ইমরান চৌধুরী ও নিজের কাজে
করতে লাগল ।
আজ ইশরা বাড়িতে ছিলো না সেই ফাঁকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়েছে।টিপ।সাজানোর লোকজন এসেছিল।টিপ লোকজন কে দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় বেলুন গুলো লাগানো হবে।এর মধ্যে আরাভ বাড়ি ঢুকে ।
—বাহহ বউটা তো অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে ।
টিপ পেছনে ঘুরে দেখে আরাভ।আরাভের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলল
—“ফ্রেশ হয়ে আসুন।দিয়ে খেয়ে নিন।
— “একবার রুমে এসো।
—” ওকে ।
আরাভ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়না দেখছে।তখনই টিপ রুমে এসে আলমারি খুলতে খুলতে বলল
—” আপনি আজ কোন ড্রেসটা পড়বেন ?
—“হু
—“কি হু?বলুন কোনটা পড়বেন?
আরাভ আবারো আয়নায় তাকিয়ে বলল
—হু।
—“এই এই কি হচ্ছে টা কি হ্যা কিছু তো জিজ্ঞেস করছি নাকি তার উত্তর না দিয়ে হু হু করছেন।মনটা কোথায় আছে শুনি।
—উফফফ তোমার যেটা ভালো লাগে ওটা বের করে রেখে দাও না
—আপনি আমার সাথে এই ভাবে কথা বলবেন?
বিরক্ত হচ্ছেন না আমাকে নিয়ে বুঝেছি নতুন কাওকে পেয়েছেন হু হু হু আল্লাহ তুমি আমার একি সর্বনাশ করলে শেষ পর্যন্ত তো সতীনের মুখ দেখতে হবে ।
আরাভ দমক দিয়ে বলল
— চুপ কি সব আবোল তাবোল বকছ মাথাটা পুরো গেছে তোমার সাধে বলি না তার কাঁটা। আর আমি কখনো বললাম আমি তোমাকে নিয়ে বিরক্ত? নিজে নিজে সব বুঝে যাও তাই না?
—দেখুন দেখুন আপনি নিজেই দেখুন আপনি আমাকে কি ভাবে বকছেন এখন তো আমাকে আর ভালো লাগে না তাই তো?
আরাভ আর কিছু না বলে টিপের কোমরে হাত দিয়ে কাছে টেনে নিয়ে কিস করতে থাকে।টিপ বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে।আরাভ কিস করেই যাচ্ছে।
কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে বলল
—বেশি বকার জন্য শাস্তি এটা ।
—অসভ্য একটা যখন তখন কিস করবে ।
—কি সব উল্টো পাল্টা বলছিলি ?শোনো আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে ভালোবাসতে পারবো না ।কারণ তোমার মতো করে আমাকে কেও ভালোবাসতে পারবে না।আর তোমার ভালোবাসায় তুমি আমাকে বেঁধেছ অনেক শক্তি আমাদের ভালোবাসায় ।
—জানি তো আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন। ।
বলে টিপ আরাভ কে জড়িয়ে ধরে ।
*
*
*
*
*
বাকি
(