মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব -১৬+১৭

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৬
ভার্সিটির পিছনে রয়েছে একটি ছোটো নদী।সময়টা তখন ঠিক সকাল গড়িয়ে দুপুর নামার পথে। ক্লান্ত সূর্যটা হেলে পড়তে শুরু করেছে পশ্চিমাকাশে। জলে চোখ ফেরালেই তীক্ষ্ণ আলোর ঝলকানির দৃশ্য। আকাশের রক্তিম রঙে নদীর জল যেন রঙিন হয়ে উঠেছে। নদীর বুকে খেলা করছে জোয়ার–ভাটার স্রোত । যে স্রোতের কুল কুল ধ্বনিতে তৈরি হয়েছে ঢেউ। ঢেউয়ের আঘাতে নদীর পাড় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

এদিকে সূর্যের চিকচিক আলো যেন ঢেউয়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছে। ঝিলিমিলি ঢেউ খেলানো সেই সোনারঙের জলে নৌকা ভেসে যাওয়ার দৃশ্য যেন সবাইকে যেন মুগ্ধ করবে সবাইকে।নদীর পাড়ে রয়েছে ঘাসের সমারোহ।সেখানে একটা ভাঙা গাছের অংশ পরে রয়েছে।সেই গাছের অংশেই বসে রয়েছে রুদ্রিক।একটু আগেই রিফাত নামের ছেলেটি অথৈকে এখানে নিয়ে এসে তৎক্ষনাত এখান থেকে প্রস্থান করে।অথৈ কিছু বলারও সুযোগ পায়নি।রুদ্রিক আজ ধূসর রঙের শার্ট গায়ে জড়িয়েছে,তার সাথে কালো ডেনিম প্যান্ট,রুদ্রিকের সিল্কি চুলগুলো বাতাসের দাপটে উড়ছে।ফলে তা এলোমেলো হয়ে আছে।রুদ্রিককে পিছন থেকে দেখতেই ভীষণ আকর্ষনীয় লাগছে অথৈয়ের কাছে।শুকনো ঢোক গিলছে অথৈ।কেমন যেন লাগছে ওর।কেমন একটা ভয়,জড়তা,লজ্জা,সংকোচবোধ কাজ করছে ওর মাঝে।কই আগে তো অথৈয়ের এমন কিছু অনুভব হয়নি।তাহলে আজ কেন ওর এমন লাগছে?ওর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে রুদ্রিকের গম্ভীর স্বরের কারনে।

‘ এমন স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকার জন্যে কি ডেকেছি আমি?’

রুদ্রিকের এমন কথায় নাক মুখ কোঁচকালো অথৈ।এই লোক ভালো হবার নয়।নিজের এটিটিউট তার সবখানে দেখানো চাই-ই চাই।এদিকে অথৈয়ের নড়চড় না দেখে রুদ্রিক ফের বলল,
‘ কি হলো তোমার?আসছ না কেন?এখন কি আমার কোলে করে এখানে আনতে হবে তোমাকে?অবশ্য এতে আমার কোনো প্রবলেম নেই।তুমি চাইলে আমি তোমায় কোলে নিতেই পারি।’

রুদ্রিকের কথায় অথৈ হতবাক।রুদ্রিক যে ওকে অনায়াসে এসব কথা বলে ফেলবে ভাবতে পারিনি ও।অথৈ আর দেরি করল নাহ।ধীর পায়ে কদম ফেলে রুদ্রিকের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।রুদ্রিকের নজর সোজা নদীর ঢেউ তোলা পানির দিকে।অথৈ চোখ পিটপিট করে তাকাল রুদ্রিকের দিকে।চটপটে কণ্ঠে বলল,
‘ কি শাস্তি দিবেন আমায়?যা করার তাড়াতাড়ি করুন।বাড়ি ফিরতে হবে আমায়।’

রুদ্রিক অথৈয়ের কথায় শান্ত চোখে তাকালো অথৈয়ের দিকে।রুদ্রিকের শীতল দৃষ্টি অথৈয়ের মুখশ্রী পর্যবেক্ষন করছে যেমন।অথৈ নড়েচড়ে উঠল।রুদ্রিকের এহেন শীতলতা ভড়পুর দৃষ্টি অথৈ নিতে পারছে না একদম পারছে নাহ।রুদ্রিক ভরাট গলায় বলে উঠল,
‘ আমার দেওয়া শাস্তির জন্যে তুমি প্রস্তুত?’

‘ হ…হ্যাঁ!’ রুদ্রিকের প্রশ্নে থেমে থেমে উত্তর দেয় অথৈ।

রুদ্রিক ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করে হাসল।তারপর বলে উঠল,
‘ ঘাসের উপর বসো।’

রুদ্রিকের এই একবাক্যের কথাটা ঠিক ঠাওর করতে পারল না অথৈ। জিজ্ঞাসূচক চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
‘ মানে?ঠিক বুঝলাম নাহ?’
‘ মানে এই ঘাসের উপর বসো।’
‘ কেন?’

‘ এতো প্রশ্ন করো কেন?’ ধমকে উঠল রুদ্রিক।
রুদ্রিকের আকস্মিক ধমকে ঘাবড়ে গেল অথৈ। তড়িঘড়ি করে বসে পরল ঘাসের উপর।অথৈ নিজেও বুঝতে পারল নাহ আশ্চর্য! সে রুদ্রিকের ধমকে ভয় কেন পাচ্ছে?অথৈ তো এতো ভীতু নাহ।তবে আজ কেন ভয় পেল?
অথৈ চুপচাপ ঘাসের উপর বসে ঘাসের পাতাগুলো ছিড়তে লাগল।নিজের উপর নিজেই বিরক্ত সে।এতো কেন নার্ভাস লাগছে ওর? অথৈকে চরম আশ্চর্যের ধাপে পৌছে দিয়ে রুদ্রিক ঠাস করে অথৈয়ের পাশে বসে পরল।তারপর বিনা বাক্যে অথৈয়ের কোলে মাথা রেখে সুয়ে পরল।চোখজোড়া বন্ধ করে আদেশের সুরে বলল,
‘ মাথায় হাত বুলিয়ে দেও।’

অথৈ পুরো হা করে আছে।ওর সাথে ঠিক কি হলো ও বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলো ওকে।অথৈয়ের সারা শরীর কাঁপছে।হৃৎপিণ্ড কাঁপছে অস্বাভাবিকভাবে।পাথরের মতো জমে গিয়েছে ও যেন।ইহান,প্রিয়ান আর আহিদ বাদে আজ প্রথম কোনো ছেলে ওর এতোটা কাছে এসেছে।অথৈয়ের গলা শুকিয়ে গিয়েছে।অথৈকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে রুদ্রিক চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই শীতল কণ্ঠ বলল,
‘ কি হলো?এক কথা কতোবার বলব আমি?’

অথৈ একের পর এক শুকনো ঢোক গিলে গলা ভিজানোর চেষ্টা করল।হার্ট এতো জোড়ে জোড়ে বিট করছে যে মনে হয় আশেপাশের মানুষগুলোও শুনতে পাবে।অথৈ কাঁপতে থাকা হাতটা রুদ্রিকের চুলে ছুঁইয়ে দিল।সাথে সাথে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো অথৈ। ভালোলাগায় মনটা ভড়ে গিয়েছে।অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেলো ওর সারাশরীর জুড়ে।পায়ের তলা শিরশির করছে।নাম না জানা অনুভুতির বেড়াজালে বাজেভাবে আটকে যাচ্ছে অথৈ। তলিয়ে যাচ্ছে এক অজানা সমুদ্রে।যেখানে একমাত্র ঠাই যে রুদ্রিক তা বুঝতে মোটেও অসুবিধে হলো না ওর।আচ্ছা বিয়ের বন্ধনটা কি এতোই মজবুত?যে মাত্র কবুল বলার মাধ্যমেই বিপরিত মানুষটার প্রতি অল্প সময়ের ব্যবধানে মায়ায় জড়িয়ে যায়।মানুষটাকে খুব কাছের মনে হয়।একান্ত নিজের ব্যক্তিগত কেউ।যে সবসময় ওর সবটা জুড়ে থাকবে।ওর একমাত্র ভরসাস্থল,শান্তির স্থান,নিরাপদ স্থান।রুদিককেও ওর কাছে ঠিক এমনই লাগছে।অতি কাছের কেউ।যাকে সে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস,ভরসা করতে পারবে।নিজেকে বিলীন করে দিতে পারবে লোকটার কাছে।এতো অল্প সময়ের ওর মনে এমন অনুভুতি সৃষ্টি হয়ে যাবে তা অথৈ ভাবতেই পারেনি।অথৈ গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রুদ্রিকের দিকে।মাথা ভর্তি লোকটার সিল্কি চুল, ঘন কালো ভ্রু জোড়া খুব নিখুঁত।বন্ধ করে রাখা চোখদুটোও যেন অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওর কাছে।লোকটার চোখের পাপরিগুলো কি সুন্দর ঘনকালো আর লম্বা।ও মেয়ে হয়েও ওর চোখের পাপরিগুলো এতো সুন্দর নাহ।খারা নাকটার ঠিক মাঝ বরাবর একটা তিল আছে রুদ্রিকের।তিলটায় আলতো করে ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছে জাগলো ওর মনে।অথৈ বিরবির করল,
‘ এই তিলটা এতো সুন্দর কেন?আমার যে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।’

পরমুহূর্তেই নিজের ভাবনায় নিজেই হতবাক অথৈ। এতোটা নির্লজ্জ চিন্তাভাবনা কিভাবে আসে ওর মাথায়? অথৈয়ের চোখ যায় ওই পুরু ঠোঁটটার দিকে।সিগারেটের আগুনে পুড়ে যাওয়া ওই কালচে ঠোঁটজোড়ার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না অথৈ। বেষামাল হয়ে যাচ্ছে ও।এই শক্তপোক্ত দেহির অধিকারি সুদর্শন লোকটা ওর সম্পূর্ণ অস্তিত্বকে এলোমেলো করে দিচ্ছে।নিজেকে সামলানো যেন দায় হয়ে পরেছে।নিজের বেহায়াপনায় অথৈয়ের সারা মুখশ্রী জুড়ে লজ্জার লাল আভা ছেঁয়ে গেল।চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিলো অথৈ।নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগল।কিন্তু রুদ্রিক তা হতে দিলে তো।

‘ আমি মানুষটা যেখানে সম্পূর্ণ তোমারই।সেখানে আমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছাটুকু দমিয়ে রাখার কোনো মানে নেই অথৈ।’

রুদ্রিকের আচমকা বলা এহেন কথায় শ্বাস আটকে গেল অথৈয়ের।লোকটা কি তবে ওর কথা শুনে ফেলেছে?লজ্জায় হাশফাশ করতে লাগল অথৈ। একি সর্বনাষ হয়ে গেল তার।রুদ্রিক অথৈয়ের কোল থেকে মাথা তুলে উঠে বসল।প্রগাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল অথৈয়ের দিকে।অথৈয়ের সারা দেহ শিরশির করছে রুদ্রিকের ওই দৃষ্টির কবলে পরে।এভাবে কেন তাকাচ্ছে লোকটা?লোকটা এমন চাহনী অথৈ সহ্য করতে পারছে না।একদমই পারছে না।ভীতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।তোলপাড় হচ্ছে ওর বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে।সেটা কি বুঝতে পারছে না লোকটা। রুদ্রিক কণ্ঠে মাদকতা মিশিয়ে ধীর কণ্ঠে বলে উঠল,
‘ আই এম ইয়্যুরস অথৈ।জাস্ট অনলি ইয়্যুরস।ইউ ক্যান টাচ মি হোয়েনএভার ইউ ওয়ান্ট।ইউ হেভ ফুল রাইটস্।আই এম ইয়্যুর হাজবেন্ট।’

একটু থেমে রুদ্রিক ফের বলে,
‘ তোমার যখন ইচ্ছে হবে। তুমি শুধু ছুঁয়ে দিবে আমায়।আর আমি অনুভব করব তোমায়।’

অথৈয়ের মুখশ্রী জুড়ে লজ্জা রক্তিম আভা ছড়িয়ে পরেছে।রুদ্রিকের বলা প্রতিটা বাক্য ওর শ্রবণেন্দ্রিয় ভেদ করে ঠিক হৃৎপিণ্ড বরাবর গিয়ে লাগছে।ঝংকার তুলছে লোকটার বলা প্রতিটা শব্দগুচ্ছ।মনটাকে নতুন অনুভূতিরা আরও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিচ্ছে ওকে।যেখান থেকে অথৈ বোধহয় আর এই ইহজনমে ছাড়া পাবে না।মনের বাগানে ভালোলাগার প্রজিপ্রতিরা এদিক সেদিন ডানা ঝাপ্টে উড়াউড়ি করে বেড়াচ্ছে।যাদের নিয়ন্ত্রণ করা দায় ঠেকেছে অথৈয়ের।তবে কি সে এই সামনে বসা মানুষটার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলল?

রুদ্রিক হঠাৎ গভীর কণ্ঠে ডেকে উঠল,
‘ অথৈ?’

‘ জ…জি বলুন।’
অথৈ রুদ্রিকের দিকে তাকালো না।সেই সাধ্য যে এখন ওর মাঝে নেই।

‘ আমি তোমার কে হই অথৈ?’

রুদ্রিক আবেগমিশ্রিত কণ্ঠে কথাটা বলে উঠল।অথৈ রুদ্রিকের প্রশ্নে কি উত্তর দিবে?গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।মনে হচ্ছে কেউ যেন ওর গলা চেপে ধরে আছে।বহু কষ্টে অথৈ কাঁপা গলায় বলল,
‘ আ…আপনি আমার স্ব..স্বামী।’
‘ মেনে নিয়েছ আমায় নিজের স্বামী হিসেবে?’

অথৈ এইবার পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল অথৈ।লজ্জাটুকু সরিয়ে রাখল। রুদ্রিকের চোখে চোখ ফেখে অকপটে বলল,
‘ তিন কবুল বলে আপনাকে আমার স্বামীর স্থান দিয়েছি।নিজেকে আপনার নামে করে দিয়েছি।আমার অস্তিত্বকে আপনার করে দিয়েছি।আমার ধ্যান,জ্ঞান,পরিচয় সবটা আপনার মাঝে নিবদ্ধ।সেই সম্পূর্ণ আমিটাকে তিন কবুল বলে আপনাকে দিয়ে দিয়েছি।এতো কিছুর পরেও আপনি এই প্রশ্ন কিভাবে করেন?আপনার কি মনে হয়?আমি কি অবলা মেয়েদের মতো?যে পরিবারের চাপে পরে বিয়ে করে নিবে?এতোদিনে আমাকে দেখে এইটুকু নিশ্চয়ই জেনেছেন যে জাফ্রিন অথৈকে কেউ কখনও জোড় করতে পারবে না।সে যা করুক আর যাই সিদ্ধান্তই নেক না কেন ওটা সম্পূর্ণ ওর নিজের ইচ্ছেতে হয়।কারো জোড় জবরদস্তি আমার উপর চলে নাহ।’

অত্যন্ত সাহসের সাথে কথাগুলো পর পর বলে ফেলল অথৈ।রুদ্রিকের ওই প্রশ্নটায় কেন যেন খুব রাগ হয়েছে অথৈয়ের।অথৈ নদীর পানির দিকে তাকিয়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করল।যতোই রেগে যাক। রুদ্রিক ওর স্বামী।আর স্বামীর সাথে বেয়াদবি অথৈ করবে না।ও দেখে এসেছে ওর মা ওর বাবাকে ঠিক কতোটা সম্মান করে।আর ওর বাবা ওর মাকে ঠিক এই কারনেই এতোটা ভালোবাসে আর সম্মানও করে।অথৈয়ের বোঝার বয়স হতে ওর বাবা মাকে কোনোদিন ঝগড়া করতে দেখেনি।এখন তাদের থেকে আড়ালে যদি করেও থাকে তবে সেটা খুব সাময়িক।কারন অথৈয়ের বাবা আর মা দুজন দুজনের সাথে একমুহূর্তও কথা না বলে থাকতে পারবে না।তাই অথৈ নিজেও চায় ও সম্পূর্ণ ওর মায়ের মতো হতে।নিজের স্বামীকে ওর সবটা দিয়ে ভালোবাসতে।সবথেকে বেশি যেটা সেটা হলো ও সম্মান করবে।আর বিপরীত মানুষটাও যেন ঠিক ওর বাবার মতো যেন হয়।ওর বাবা যেমন ওর মাকে ভালোবাসে, সম্মান করে।ওর স্বামীও যেন ঠিক একইভাবে ওকে ভালোবাসায় মুরিয়ে রাখে,সবসময় সম্মান দেয় যেন।আর রুদ্রিকের মাঝে সেই সত্তাটুকু খুব করে খুঁজে পায় অথৈ।
নিজের অনুভূতিগুলোকে সামলাতে পারছে না অথৈ।তাই চট করে উঠে দাঁড়ালো।দৃষ্টি এদিকসেদিক ছড়িয়ে বলে,
‘ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।মা চিন্তা করবে আমার জন্যে।আমি এখন যেতে পারি।’

রুদ্রিকও উঠে দাঁড়ালো।প্যান্টের পকেটে হাত রেখে টান টান হয়ে বলে,
‘ হুঁ! তবে আমি পৌছে দিব।’

কোনোপ্রকার নাকচ করল না অথৈ। রুদ্রিকের কথাই মেনে নিল।ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে বলে,
‘ জি চলুন তাহলে।’

রুদ্রিককে না করার কোনো কারন নেই।এমন না যে ও একা যেতে পারে না।অথৈ সবই পারে।তবে যেখানে ওর স্বামী চাইছে ওকে নিজে পৌছে দিবে।সেখানে দ্বিমত করার কোনো স্পেসিফিক কারন নেই।আর ওকে নিরাপদে রাখা রুদ্রিকের দ্বায়িত্ব।তাই রুদ্রিকের দ্বায়িত্ব রুদ্রিককে পালন করতে দিল অথৈ।এদিকে অথৈয়ের এক একটা কথায় আর কান্ডে রুদ্রিকের মনে যে কি তোলপাড় সৃষ্টি হচ্ছে সেটা ও কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না।মেয়েটা এতো বুদ্ধিমতি।সব কিছু ইজিলি হ্যান্ডেল করে নেয়।এইজন্যেই তো এই মেয়েটাকে এতো ভালোবাসে রুদ্রিক।আজ আবারও অথৈয়ের এই চমৎকার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পরল রুদ্রিক।রুদ্রিক যে ঠিক কতোবার ওর সামনে দাঁড়ানো ওর অর্ধাঙ্গিনীফ উপর প্রেমে পরেছে সেটা গুনে শেষ করা যাবে না।রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।সে একটা হাত অথৈয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘ অনুমতি আছে?’

অথৈ এই কথায় ওর দিকে তাকালে রুদ্রিক চোখের ইশারায় ওর হাত দেখায়।মানে হাত ধরার অনুমতি চাইছে রুদ্রিক।অথৈ হাসল।ওই হাসিতে যেন রুদ্রিকের হৃৎপিণ্ড এফো’ড়-ওফো’ড় হয়ে গেল।কারো হাসিটাও বুঝি এতো মারাত্মক হয়?মানুষকে বেষামাল করে দিতে পারে মুহূর্তেই।
অথৈ নিজের হাতটা রুদ্রিকের হাতের মাঝে দিয়ে তা আঁকড়ে ধরল।লজ্জা লাগছে ওর।মাথা নিচু করে নিলো অথৈ। বাতাসের তোড়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিতে দিতে বলল,
‘ অধিকার আছে আপনার।’

রুদ্রিকের মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল অথৈয়ের এই একবাক্যে।অতি যত্নে অথৈয়ের নরম তুলতুলে হাতটা ওর শক্তপোক্ত হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নিয়ে হাটতে শুরু করল।অথৈ রুদ্রিকের পায়ে পা মিলিয়ে হাটছে।বেশ ভালো লাগছে ওর। ভার্সিটি পুরো খালি হয়ে গিয়েছে।শুধু তিন চারজন ছেলে আছে।রুদ্রিক অথৈকে নিয়ে ওর বাইকের সামনে আসল।রুদ্রিক অথৈকে ছেড়ে দিয়ে ওর বাইকে উঠে বসল।বাইল স্টার্ট দিয়ে বলে উঠল,
‘ উঠো পরো।’

অথৈ বাইকে উঠে বসল।তারপর এক হাত রাখল রুদ্রিকের কাধে।রুদ্রিক মুঁচকি হাসল।তারপর শা করে বাইক চালিয়ে চলল।পথের মধ্যে কেউ কারো সাথে কথা বলল না।শুধু দুজন দুজম খুব করে একান্তে মনের মাঝে অনুভব করে গেল।অথৈদের বাড়ির সামনে বাইক থামতেই অথৈ বাইক থেকে নেমে দাঁড়াল।বাইকে বসা রুদ্রিকের উদ্দেশ্যে কোমল স্বরে বলে,
‘ বাড়িতে আসুন।এভাবে শশুড়বাড়ির সামনে থেকে চলে যাবেন। বিষয়টা খারাপ দেখায়।’

রুদ্রিক বাঁকা হেসে অথৈয়ের কথার জবাব দেয়,
‘ যেদিন বউকে নিজের বাড়ি তুলব।এরপরেই নিজের শশুড়বাড়ি আসব।’
‘ ভেবে বলছেন তো?এসব ব্যাপারে কিন্তু একদম গ্যারান্টি দেওয়া যায় না।’

এইবার যেন থেনে গেল রুদ্রিক।আসলেই তো যদি অথৈ রুদ্রিককে ভালোবেসে ফেলে।তাহলে কিভাবে নিজেকে আটকাবে রুদ্রিক? তখন যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বড্ড কঠিন হয়ে পরবে।এখনই তো মন চায় মেয়েটাকে চব্বিশ ঘন্টা কলি’জার ভীতর ঢুকিয়ে রাখতে।আর যখন অথৈ ওকে পূর্ণ অধিকার দিবে।ওর ভালোবাসায় ধরা দিবে তখন যে নিজেকে সামলাতে পারবে রুদ্রিক।এলোমেলো।ভাবনা নিয়ে রুদ্রিক বলল,
‘ শুধু এটুকু শুনে রাখ যেদিন তোমার মনের ঘরে প্রবেশ করতে পারব।সেদিনই এই বাড়িতে আসব।এই কথার খেলাফ রুদ্রিক কোনোদিন করবে না।’
‘ আচ্ছা?’
‘ হ্যাঁ! এখন যাও বাড়িতে।’

অথৈ মুচঁকি হাসি রুদ্রিককে উপহার দিয়ে বাড়ির ভীতরে চলে গেল।ওকে ঠিকঠাকমতো পৌছাতে দেখে তবেই রুদ্রিক বাইক স্টার্ট করে ওর গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলল।

#চলবে___________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।সবার সুন্দর সুন্দর মন্তব্য চাই।আজ অনেক বড়ো পর্ব দিয়েছি।#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৭
ভার্সিটির প্রবেশ করতেই আহিদের চোখে পরে সিনিয়র কিছু ছেলে মিলে একটা মেয়েকে র‍্যাগিং করছে।র‍্যাগিং বললে ভুল হবে। একে বলে একপ্রকার হ্যারেসমেন্ট।কারন ছেলেটা মেয়েটার গায়ের ওড়না হাতে পেচিয়ে নিয়ে তা ক্রমাগত টানছে।আর মেয়েটা কেঁদে কেঁদে ওর ওড়না ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছে ।এইসব র‍্যাগিং ট্যাগিং আহিদের একদম পছন্দ না।অকারনে কেন একটা মানুষকে এইভাবে হেনস্তা করবে? কি মজা পায় এরা।আহিদ এগিয়ে যায় সেখানে।মেয়েটা মাথা নিচু করে কাঁদছে।ফলে মেয়েটার চেহারা এখনও ভালোভাবে দেখেনি আহিদ।সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে আহিদ এইবার ওই ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বলল,
‘ কি সমস্যা ভাইয়া’রা?মেয়েটাকে কেন শুধু শুধু আটকে রেখেছেন? আর ওর ওড়না এইভাবে টানছেন কেন?’

আহিদের মাঝখানে এসে ব্যাঘাত দেওয়ায় তারা বেশ খানিক বিরক্তবোধ করল।রাগি স্বরে বলে,
‘ এটা আমাদের ব্যাপার।তুমি তোমার কাজে যাও।’

আহিদ যথাসম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।আহিদ বেশ শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ নিজেদের ব্যাপার হলে নিজেরা বাড়ি গিয়ে স্যাটেল করবেন।এখানে ভার্সিটির মাঠে এসব করলে তো আর চুপ থাকা যায় না।’
‘ বেশি কথা বলছ তুমি ছেলে।’

রেগে গেল আহিদ।বলল,
‘ হ্যা বলছি।তো? কি করবেন?’
‘ নিজের ভালো চাইলে এখান থেকে কেটে পরো।’
‘ মেয়েটাকে যেতে দিন।’ আহিদ শক্ত গলায় বলল।
‘ তা তো সম্ভব না।এই মেয়েটাকে যা করতে বলেছি তা না করা পর্যন্ত একে ছাড়ব না।’

আহিদ এইবার ভয়া’নকভাবে রেগে গেল।রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ধুম করে একটা ঘুষি মেরে দেয় সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার মুখে।ছেলেটা ছিটকে গিয়ে পরল মাঠে।ওর সাথে দাঁড়ানো আরও তিনটে ছেলে দ্রুত ওই ছেলেটাকে টেনে তুলল।তারপর আহিদকে উদ্দেশ্য করে ক্ষুব্ধ স্বরে বলে,
‘ তোর এতো বড়ো সাহস।তুই আমাদের বন্ধুর গায়ে হাত তুলিস।আজ তোকে ছাড়ছি না।’

ছেলেটা এসে আহিদকে মারতে নিলেই আহিদ সজোড়ে চ’ড় মারে ছেলেটার গালে।অন্য ছেলেরা তেড়ে আসতে গেলেই সেখানে হাজির হয় অথৈ,রিধি,পিহু আর প্রিয়ান।প্রিয়ান আর অথৈ এসে অন্য ছেলেদের মারতে এগিয়ে যায়।কিন্তু তার আগেই সেখানে এসে উপস্থিত হয় রুদ্রিক,ইহান,সাফাত,নীল,অনিক,মারিয়া,জেনি আর সিয়া।রুদ্রিককে দেখেই ওই বদমা’শ ছেলেগুলো ঘাবড়ে যায়।রুদ্রিক রক্তিম চোখে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ কি হয়েছে এখানে?’

ছেলেগুলোর মধ্যে যে লিডার সে এগিয়ে এসে বলে,
‘ কিছু না ভাই।আমরা জাস্ট এই মেয়েটাকে একটু র‍্যাগিং দিচ্ছিলাম।আর এই ছেলেটা এসে আমাদের কাজে বাধা প্রদান করে।এখন আপনিই বলুন ভাই।ভার্সিটিতে তো একটু আধটু এমন হয়েই থাকে তাই নাহ?’

আহিদ রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
‘ কুত্তার দল মিথ্যে বলছিস কেন?ভাই এরা এই মেয়েটার ওড়না টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।আমি বাধা দিলেই আমাকে আগে মারতে আসে।আর তাই আমি ওদের মেরে’ছি।’

রুদ্রিক কড়া গলায় আহিদকে ধমকে উঠল,
‘ এটা কিভাবে করেছ তুমি?’

অথৈ ভ্রু-কোচকালো।আশ্চর্য লোক।সাহস কতো বড়ো ওর বন্ধুদের ধমকাচ্ছে।দেখে নিবে একে।মনে মনে কথাগুলো বলে রুদ্রিককে মুখ ভেংচি মারল।এদিকে আহিদ রুদ্রিকের এমন কথায় অবাক হয়ে বলল,
‘ মানে?কি বলছেন এসব?’
‘ দাঁড়াও দেখাচ্ছি।’

রুদ্রিক দু ধাপ এগিয়ে গিয়ে ওই ছেলেটার সামনাসামনি দাঁড়ায়।তারপর খপ করে ছেলেটার হাত ধরে সজোডে মুচড়ে দেয়।ছেলেটা ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠে।রুদ্রিক ঘাড় ঘুরিয়ে আহিদের দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
‘ মেয়েদের ইজ্জতের দিকে যে বাজেভাবে হাত বাড়ায়।তার হাত এইভাবে ভে’ঙে দিতে হয়।বুঝেছ?’

আহিদ চওড়া হেসে বলে,
‘ জি ভাই বুঝেছি।’

অথৈর মন ছোটো হয়ে গেল।ইস,লোকটাকে শুধু গালমন্দ করল।মনে মনে রুদ্রিককে সরি বলে দিল।রুদ্রিক ছেলেটার হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে দিল।ছেলেটা হাতের ব্যথায় কাতরাচ্ছে।তারপর রক্তচক্ষু নিয়ে বাকি ছেলেদের দিকে তাকালো।ওই ছেলেগুলো রুদ্রিকের রাগি দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে গেল।দ্রুত তাদের লিডারকে সাথে নিয়ে তৎক্ষনাত জায়গা ত্যাগ করল।
রুদ্রিকের কাজে বেশ খুশি হলো।তবে তা প্রকাশ করল না।রুদ্রিক অতি সন্তর্পণে অথৈয়ের পাশে দাঁড়ালো।এই সুযোগে অথৈ কণ্ঠ খাদে নামিয়ে দুষ্টুমির স্বরে বলে,
‘ আমাকে ইমপ্রেস করার জন্যে বুঝি এসব করলেন?’

রুদ্রিক প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে টান হয়ে দাঁড়ালো।দৃষ্টি সামনের দিকে রেখেই ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করে হাসল।বলল,
‘ তোমাকে ইমপ্রেস করতে আমার এসব করা লাগবে না।রুদ্রিক তার বউকে স্পেশালভাবে ইমপ্রেস করতে জানে।ডিড ইউ আ্যন্ডর্স্টান্ড মাই ক্যাডেল বাগ।’

রুদ্রিকের মুখে বউ মুখে এমন কথা শুনে বেশ লজ্জা পেল অথৈ।’ক্যাডেল বাগ ‘ কথাটার মানে বুঝতে পেরেই অথৈ লজ্জায় নুইয়ে গেল।অথৈ নিজেও বুঝতে পারছে না।ইদানিং ওর এতো লজ্জা আসে কোথা থেকে?তাও শুধু রুদ্রিকের সামনেই ওর লজ্জা লাগে।এমন কেন হয়?
এদিকে রুদ্রিক অথৈয়ের লজ্জায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে যাওয়া মুখশ্রী দেখে তৃপ্তির হাসি দিল।প্রিয় মানুষটার লজ্জা পাওয়ার কারন হতে পেরে ভালোলাগায় হৃদয় জুড়িয়ে গেল।এদিকে অথৈ আর রুদ্রিককে ফিসফিস করে কথা বলতে দেখেছে রিধি।ও অথৈয়ের লজ্জামাখা মুখটা দেখে নিয়ে ঠোঁট টিপে হাসল।ওর এই ঘাড়ত্যাড়া,রাগি বান্ধবীটাও যে এইভাবে লজ্জা পেতে পারে জানা ছিলো না ওদের।রুদ্রিকের সংস্পর্শে এসে মেয়েটা কেমন নরম হয়ে যাচ্ছে।রিধি অথৈয়ের কানে কানে দুষ্টুমির স্বরে বলে,
‘ রুদ্রিক ভাইয়া কি এমন বলল যে তুই এইভাবে লজ্জায় লাল, নীল হচ্ছিস।আমাদেরকেও বল।’

রিধির এমন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল অথৈ।নিজেকে সামলে নিয়ে মিথ্যে রাগ দেখানোর ভাণ ধরে বলে,
‘ চুপ থাক এমন কিছুই না।আমি লজ্জা পাচ্ছি না।’
‘ সেটা তো তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি জানেমন।’

হেসে দিলো অথ। বলল,
‘ চুপ কর না ইয়ার।উনি এখানে আছেন।শুনে ফেলবেন।’
‘ বাহ বাহ উনিইইইইই।’ লাস্ট ওয়ার্ডটা টেনে টেনে বলল রিধি।হেসে ফেলল অথৈ।অথৈকে এইভাবে হাসতে দেখে রুদ্রিক বলে উঠে,
‘ হাসছ যে?’

অথৈ আশেপাশে তাকিয়ে নরম স্বরে বলে,
‘ এমনি।’

রুদ্রিক আর কিছু বলবে তার আগেই নীল বলল ওদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।এখন যেতে হবে ওদের।রুদ্রিক ছোট্টো স্বরে ‘ ওকে’ বলল।তারপর অথৈকে সরল গলায় বলল,
‘ কালকের ওখানেই আমি থাকব।যদি এসে আমায় না পাও তাহলে একটু অপেক্ষা করো।আমি আসব।’
‘ জি আচ্ছা।’

রুদ্রিক উলটো ঘুরে গেল।অথৈয়ের একদম গা ঘেষে যাওয়ার সময় অথৈয়ের কানে কানে বলে গেল,
‘ ইউ ন্যো ইয়্যু আর সো কিউট। সো ইয়্যু ডিজার্ব অ্যা বিলিয়নস্ ওফ কিসেস্ ফ্রোম মি।’

কথাটা শেষ করে বড় বড় পা ফেলে চলে গেল রুদ্রিক আর ওর বাকি বন্ধুরাও।এদিকে রুদ্রিকের শেষের বলা বাক্যে শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে রইলো অথৈ।রুদ্রিকের বলা প্রতিটা শব্দ যেন এখনও ওর কানে বাজছে।দ্রিম দ্রিম করে সজোড়ে বিট করছে হৃৎপিণ্ডটা।শরীরটাও কাঁপছে।সেই সাথে যেন শরীরের প্রতিটা লোমকূপ দাঁড়িয়ে গিয়েছে রুদ্রিকের ওই ফিসফিসানো আওয়াজে।কারো ফিসফিস করে বলা কথাটাতেও এতোটা মাদকতা থাকে জানা ছিলো না অথৈয়ের।রুদ্রিকের বলা বাক্যটা অথৈকে ভয়ানক লজ্জার সাগরে ডুবিয়ে দিল।রুদ্রিক আঁড়চোখে পিছনে ফিরে তাকালো।রুদ্রিকও একই সময়ে তাকিয়েছে।অথৈকে ওর দিকে তাকাতে দেখে বাঁকা হেসে চোখ মেরে দিল।এরপর চলে গেল।অথৈ দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নিচু করে নিল বিরবির করল,
‘ এ কোন চরম অস’ভ্য এক লোকের খপ্পরে পরে গিয়েছি আমি।’

কান্নারত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে আহিদ।কেন যে ওই ক্রোদনরত লাল হয়ে যাওয়া ছোটো খাটো বাচ্চা চেহারাটা দেখতে ওর ভালো লাগছে।মেয়েটার চেহারায় যেন এক আকাশসম মায়া উপচে পরছে।আহিদের কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে।আহিফ ধীর পায়ে মেয়েটার কাছে এগিয়ে গেল।নরম গলায় বলল,
‘ তুমি ঠিক আছ?’

আহিদের প্রশ্নে মেয়েটা নড়ে উঠল যেন।দু হাতে চোখ মুছে নিল।তারপর ভেজা কণ্ঠে বলে,
‘ হুঁ!’
‘ নাম কি তোমার?’ আহিদের সোজাসাপ্টা প্রশ্নে মেয়েটা ঘাবড়ে গেল একটু বোধহয়।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘ মাইশা জেরিন।’
‘ নামটা সুন্দর।এখন বলো কোন ডিপার্টমেন্ট? ‘
‘ ডিপার্টমেন্ট ওফ ম্যানেজমেন্ট ফার্স্ট ইয়ার।’

মাইশার মুখে এই কথা শুনে আহিদ বলে,
‘ ওহ তারমানে আমরা একই ক্লাসের।শুধু ডিপার্টমেন্ট আলাদা।’

অবাক হলো মাইশা।বলল,
‘ আপনিও ফার্স্ট ইয়ার?’

ভ্রু-কুচকালো আহিদ।
‘ হ্যা কোনো সমস্যা?’

ভয় পেলো মাইশা।বলে,
‘ ন..না সমস্যা হবে কেন।’

আসলে মাইশার বিশ্বাস হচ্ছে না।এমন লম্বা-চওড়া সুদর্শন দেখতে ছেলেটা ওর সাথেই পড়ে।মানে একই ক্লাস।ও তো ভেবে নিয়েছিল ছেলেটা বোধহয় থার্ড ইয়ার বা ফাইনাল ইয়ারে পড়ে।নিজের ভাবনায় নিজেই বোকা বনে গেল মাইশা।মাইশার ধ্যান ভঙ হয় আহিদের গম্ভীর পুরুষালি কণ্ঠে,
‘ মেয়ে মানুষ হয়েছ বলে যে নিজেকে সবার কাছে দূর্বল প্রমান করবে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা।মেয়েরা চাইলেই সব করতে পারে।এইযে একটু আগে তোমার সাথে যা হলো তুমি চাইলেই প্রতিবাদ করতে পারতে।থা’পড়িয়ে গাল লাল করে দিতে পারতে।কিন্তু তুমি তা করোনি।শুধু তোমার মনে এই কথাটা বাদা বেধেছে যে তুমি মেয়ে তুমি দূর্বল।এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।পরিস্থিতি দেখে নিজেকে প্রেজেন্ট করার চেষ্টা করো।নিজেকে ভীতু নয় সাহসী করে তোলো।দেখবে লাইফটা কতো সুন্দর হয়ে গিয়েছে তোমার।’

মাইশার মনে আহিদের বলা প্রতিটা কথা গভীরভাবে দাগ কাটল।মুগ্ধ হয়ে শুনল আহিদের কথা।আহিদ ফের বল,
‘ বুঝতে পেরেছ আমি কি বলেছি?’

ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে মাইশা বলে,
‘ জি বুঝেছি।ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে আমাকে বোঝানোর জন্যে।’
‘ হুম ভালো।এখন যাও নিজের ক্লাসে।’

মাইশা আহিদের কথায় ক্লাসে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।কি মনে করে যেন আবার পিছনে ফিরে তাকালো।আহিদকে উদ্দেশ্য বলল,
‘ ধন্যবাদ আপনাকে। আমাকে প্রোটেক্ট করার জন্যে।’

তারপর পিছনে দাঁড়ানো অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ আপনাদেরকেও ধন্যবাদ আমার বিপদে এগিয়ে আসার জন্যে।আর হ্যা ওইযে ভাইয়াগুলো আসল না? তাদেরকেও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয় দিবেন। আসি তাহলে।আল্লাহ্ হাফেজ।’

মাইশা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে গেল।আর মাইশার সেই হাসিটা যেন আহিদের ঠিক বুকে গিয়ে লাগল।মন আটকে গেল সেই হাসিতে।এখন আদৌ কি এই মেয়ের মিষ্টি হাসির মায়াজাল থেকে বের হতে পারবে ও?

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।জানি আজকের পর্বটা এলোমেলো হয়েছে।লিখতে গিয়েও বার বার ফিরে এসেছি।লিখতে ইচ্ছে করে না।তাও আপনাদের খুশির জন্যে লিখলাম।এইজন্যে অগোছালো হয়েছে।ভুল হলে ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here