মন নিয়ে কাছাকাছি পর্ব – ৩৬+৩৭+৩৮

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
Jerin Afrin Nipa
৩৬

মীরা মাহিমাকে বলে দিয়েছিল কলেজ থেকে যেন এখানে ফিরে। গাধীটা এখানে না এসে বাড়ি চলে গেছে। মীরা জ্বর নিয়ে কষ্ট করে কতবার কল করছে। কইতরি কলও তুলছে না। এই মেয়ের সাথে সে এক সপ্তাহ কথা বলবে না।
মীরাকে দেখার জন্য আবির ওবাড়ি যাচ্ছে। বেরুবার আগে সে বোনের ঘরে এলো। মাহিমা চিত হয়ে শুয়ে দু’হাতে ফোন ধরে উপরের দিকে তুলে রেখেছে।

“ফোন আকাশে তুলে সিগনাল খুঁজছিস নাকি?”

ভাইয়ের কথা শুনে মাহিমা উঠে বসলো। আজ তার মন ভালো নেই। মুবিন ভাইয়ের ব্যাপারটা জানার পর থেকেই মীরার কল তুলছে না। মীরা জেনে গেলে কষ্ট পাবে।

“মামার বাড়ি যাচ্ছি। গেলে এক মিনিটে রেডি হয়ে আয়। এক মিনিটের বেশি এক সেকেন্ডও দাঁড়াব না।”

মাহিমার যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বলল,

“আমি যাব না। তুমি চলে যাও।”

বোনের কথা শুনে আবির চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল। এগিয়ে এসে মাহিমার কপালে হাত রেখে বলল,

“দেখি তোরও জ্বর এসেছে নাকি। নিশ্চয় জ্বরের ঘোরে যাবি না বলছিস। নইলে সুস্থ থাকলে তুই তোর দ্বিতীয় আস্তানায় যেতে না করতি!”

মাহিমা কপাল থেকে ভাইয়ের হাত সরিয়ে দিয়ে মুখ ভোঁতা করে বসে রইল। আবির ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

“সত্যিই যাবি না?”

“না।”

“আজ রাতে গ্রিল নানের আড্ডা হবে। তবুও যাবি না!”

মাহিমা নাকি কেঁদে বলল,

“ভাইয়া তুমি আমাকে লোভ দেখাচ্ছ!”

“না। সত্যিটা বলছি। মীরার জ্বর কিছু খেতে পারছে না। তাই ইভান ভাইয়ের কাছে গ্রিল খাওয়ার আবদার করেছে। তুই তো জানিস ইভান ভাই দয়ার সাগর। আমাদের রেখে সে কি মীরাকে একা খাওয়াবে? কী আর করার? তুই যেতে না চাইলে আমি তো আর জোর করতে পারব না। বাড়িতে থাক। মা পুঁটি মাছের তরকারি রান্না করেছে ওটাই মজা করে খাস।”

আবির দরজা পর্যন্ত চলে গেলে মাহিমা লাফিয়ে বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। চেঁচিয়ে বলল,

“তুমি এক সেকেন্ড দাঁড়াও ভাইয়া। আমি শুধু চুলটা বাঁধব।”

“কেন, তুই তো যাবি না।”

“না না যাব। কে বলেছে যাব না? আমি তো রেডি। সন্ধ্যা থেকে বসে ছিলাম তুমি এসে কখন যাওয়ার কথা বলবে।”

….

মাহিমা এলেও মীরা মাহিমার সাথে কথা বলছে না। মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে বসে আছে। মাহিমা এটা ভেবে ভয় পাচ্ছে মীরা কি কোন ভাবে মুবিন ভাইয়ের কথা জেনে গেছে? নইলে তার সাথে রাগ করে আছে কেন?

“মীরা। মীরা আমার কোন দোষ নেই বিশ্বাস কর। আমি কিছুই জান…

মীরা মাহিমার দিকে ফিরে নাক ফুলিয়ে বলল,

” সব দোষ তোর। এহহ, কঁচি খুকী। তার নাকি কোন দোষ নেই।”

“আমার দোষ কীভাবে তুই বল। আমি কি বলেছিলাম মুব…

মীরা ঠাস করে মাহিমার পিঠে কিল মেরে বলল,

” বলেছিলাম কলেজ থেকে এখানে চলে আসিস। বলেছিলাম কি-না বল?”

“হ্যাঁ বলেছিলি।”

“তাহলে আসিসনি কেন? ফোনও তুলিসনি।”

মাহিমা অবিশ্বাস্য গলায় বলল,

“তুই এজন্য রেগে আছিস?”

“না। তোর কাছে এটা রাগার কারণ না হলেও, আমি একারণেই রেগে আছি।”

মাহিমা খুশি হয়ে মীরাকে জড়িয়ে ধরলো। গদগদ গলায় বলল,

“ওলে আমাল মীরাবাঈরে! রেগে আছো আমার উপর? কী করলে তোমার রাগ কমবে শুনি?”

ইভান এখনও বাড়ি ফিরেনি। আবিরও মাহিমাকে দিয়ে বেরিয়েছে। মীরা হলরুমে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে নাক বন্ধ হয়ে আছে। শ্বাস টানতে পারছে না। তাই ছোট চাচী আদা চা করে দিয়েছে। মাহিমা মাহাকে কোলে নিয়ে খেলছে। রুশমি হল জুড়ে ছোটাছুটি করছে। মীরা চায়ের কাপের কাছে নাক নিয়ে বড়ো করে দম টেনে বলল,

“না। কোন গন্ধই পাচ্ছি না। এই নাক সবসময় আমার সাথে বেইমানি করে।”

“নাক কেটে ফেলে দে।”

“নাক ছাড়া আমাকে কেমন লাগবে ভাব একবার।”

মাহিমা হেসে ফেলে বলল,

“ভালোই লাগবে।”

“তাহলে আয় তোর নাকটাও কেটে দিই।”

“আমার নাক তোর নাকের মতো দুই নাম্বার না।”

“এহহ আসছে আমার এক নাম্বার। সর চোখের সামনে থেকে।”

মাহিমা ইভাকে ডেকে বলল,

“ও ভাবী, কল করে দেখো না তোমার বরটা কোথায় রয়ে গেল। ভাইয়া এমন লোভ দেখিয়েছে, না খেয়ে এসেছি আমি। এখন পেটের ভেতর এক হাতি খেয়ে ফেলার মতো খিদে পেয়েছে।”

মাহিমার কথা শেষ হওয়ার আগেই কলিংবেল বাজলো। মাহিমা লাফিয়ে উঠে বলল,

“ইভান ভাই এসেছে।”

মাহা কোলে থাকায় মাহিমা সাথে সাথে উঠতে পারলো না। কিন্তু মীরা চায়ের কাপ নিয়েই দরজা খুলতে ছুটলো। ছোটার কারণে তার পরনের শাল বেহুলার শাড়ির আঁচলের মতো মাটিতে গড়াচ্ছে। মীরা দরজা খুলেই সামনে যে মানুষটাকে দেখলো তাকে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। আবির ভাইয়ার সাথে জায়িন ভাইও দাঁড়িয়ে আছে। নাক দিয়ে দম নিতে না পাড়ায় মুখ হাঁ করে দিম নিলো। যে লোকের জন্য মীরার এই অবস্থা তাকে সামনে দেখে হাতের ধরা চা-টা গায়ের উপর ঢেলে দিতে ইচ্ছে করছে। ব্যাটা তোর জন্য আমার জ্বর এসে নাক বন্ধ হয়ে আছে। এবার তুই মজা বোঝ।

“কিরে হাঁ করে দাঁড়িয়ে না থেকে আমাদের ভেতরে যেতে দে। খাম্বার মতো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস। সর।”

মীরা আবিরের দিকে কটমট করে তাকিয়ে সরে দাঁড়াল।

“আয় জায়িন।”

ওরা ভেতরে চলে গেলে মীরা মনে মনে বলল,

“বন্ধুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাও না। আমাদের মাথার উপর কেন নিয়ে এসেছ? অসহ্য।”

মীরা দরজা লাগিয়ে এগিয়ে এলো। আবির মীরাকে দেখে বলল,

“ও বেহুলা, আপনার শাড়ি মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে।”

মীরা আবিরকে কিছু না বলে শাল ঠিক করে নিলো। জায়িন আসার পর থেকে মীরাকেই লক্ষ করছে। মীরা যে তাকে দেখে অখুশি তা ছোট্ট মাহাও বুঝতে পারবে।
ইভা জায়িনকে এখানে দেখে বিশ্বাসই করতে পারল না। এই ছেলেকে জোর করেও কোথাও নেওয়া যায় না। অথচ আজ সে না বলাতেও চলে এসেছে! জায়িন যখন বোনকে জানাল,

“তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। তাই চলে এসেছি।”

এই কথা শুনে তো ইভা খুশিতে আত্মহারা। জায়িনটা তাকে কতো ভালোবাসে!

“মুবিনকেও নিয়ে আসতি।”

মুবিনের নামটা শুনেই মাহিমা চুপসে গেল। আজ সে জায়িন ভাইকে দেখেও খুশি হতে পারছে না। জায়িন ভাইকে নিয়ে মজা করে এতদিন কতকিছু বলেছে। ক্রাশ খেয়েছে। বয়ফ্রেন্ড বানানোর কথা বলেছে। এখন জানতে পারছে জায়িন ভাই তো না। তার ছোট ভাই তাকে পছন্দ করে! এটা কিছু হয়?

“তোর আবার কী হয়েছে? মুখ দেখে মনে হচ্ছে পেট খারাপের রোগী।”

মাহিমা উদাস নয়নে মীরার দিকে তাকালো। ইয়ারফোনের তারের মতো সবকিছু কেমন প্যাঁচ লেগে গেছে। ভেবেছিল, জায়িন ভাইয়ের সাথে সে। মুবিন ভাইয়ের সাথে মীরা। এখন মুবিন ভাই তাকে পছন্দ করে। মীরা আবার মুবিন ভাইকে পছন্দ করে। সে-ও আবার জায়িন ভাইকে একটু একটু পছন্দ করে। জায়িন ভাই কাকে পছন্দ করে এটা এখন প্রশ্ন। সবকিছু পুরাই হযবরল।

~~~

জায়িন যাওয়ার জন্য আসেনি। সে মূলত মীরাকে দেখতে ও মীরার সাথে কিছুটা সময় কাটাতেই এসেছে। তাই সে মুখে চলে যাব, চলে যাব বললেও মনে মনে জানতো ইভা আপু তাকে কিছুতেই যেতে দিবে না। জায়িন সকলের সামনে এমন দেখাল যে, সে ইভা আপুর জোড়াজুড়িতে থেকে গেছে।
জায়িনের উপস্থিতিতে মীরা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না। প্রতিদিন রাতে জায়িন ভাইকে নিয়ে সে যে স্বপ্ন গুলো দেখে, সেই স্বপ্নের কথা জায়িন ভাই জানতে পারলে মীরার মুখ লুকানোর জায়গা থাকবে না। কত দোয়া, দুরুদ পড়ে শোয় তবুও ওসব স্বপ্ন দেখবেই। মীরা চোরা চোখে জায়িনকে দেখছে। জায়িনও হুট করে এদিকে তাকালে ওদের চোখাচোখি হয়ে গেল। মীরা ঝট করে উল্টো ফিরে বসলো। জায়িন মুচকি হাসলো। মীরা চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলছে,

“আমার স্বপ্নে বাসা বেঁধেও কি আপনার শান্তি হয়নি? আমাদের বাড়িতে কেন এসেছেন? আপনাকে সামনে দেখলে আমার সবকিছু কেমন উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। এরকম কেন হচ্ছে আমি জানি না। তবে আপনি আশেপাশে থাকলে কিছু একটা তো হচ্ছে।”

রাতের আড্ডায় জায়িনও ছিল। পুরোটা সময় সে মীরাকেই দেখেছে। কখনও আড়চোখে, কখনও সরাসরি। তবে মীরা ভুলেও জায়িনের দিকে তাকায়নি।
মাহিমার মনটাও আজ আড্ডায় লাগছে না। সে বারবার মুবিনের কথাই ভাবছে। প্রথম দিন থেকে মুবিন ভাই তাকে পছন্দ করতো। কিন্তু সে বিশ্ব গাধী, মীরাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মুবিন ভাই সম্পর্কে ওর মনে অনুভূতি জাগিয়েছে। তনি মীরা মাহিমাকে ঠেলা দিলে বলল,

“হলো কি আজ তোদের? কেউ মরেছে? শোক পালন করছিস কেন?”

মীরা নাক টেনে বলল,

“এক বক্স টিস্যু শেষ করে ফেলেছি। এখনও নাক পিটপিট করছে। মনে হচ্ছে একটু নুলেই কিছু একটা বেরিয়ে আসবে। বারবার নাক মুছায় জ্বলছে জানো। আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি। মনে হচ্ছে বজ্জাত জ্বর আবার আসছে।”

তনি মীরার কপালে হাত দিয়ে দেখল কপাল এখনও যথেষ্ট গরম। নাকের ডগাটাও লাল হয়ে গেছে।

“আচ্ছা। ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়।”

মীরা জায়িনের সামনে থেকে চলে যাওয়ার অজুহাতই খুঁজছিল এতক্ষণ। এখন যেতে পেরে স্বস্তি পেলো। মীরার সাথে মাহিমাও চলে যাচ্ছে। আবির ওদেরকে চলে যেতে দেখে বলল,

“কোথায় যাচ্ছে ওরা? যাচ্ছিস কেন তোরা? মীরাবাঈ, কইতরি কই যাস?”

তনি আবিরের পাশে বসতে বসতে বলল,

“যেতে দাও। মীরার জ্বর আসছে। মীরাকে ছাড়া মাহিমাও থাকবে না।”

“হতচ্ছাড়া জ্বর যাচ্ছে না কেন এখনও? বাচ্চাটাকে কষ্ট দিচ্ছে।”

“দোষ তো ওরই। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়লেই জ্বর আসে জেনেও বৃষ্টিতে ভিজে কেন?”

জায়িন পাশ থেকে ওদের কথা শুনে ভাবল, বৃষ্টি তোমার যতটা প্রিয়, মায়াবতী। তোমার কপালের উষ্ণতা আমার ততটাই অপ্রিয়। তাই আজকের পর থেকে তোমার জন্য বৃষ্টি বিলাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
Jerin Afrin Nipa
৩৭💜

মীরার জ্বর ভালো হয়ে গেলেও সে বাড়িতে থেকে আরও কয়টা দিন শুয়ে বসে কাটানোর জন্য জ্বরের বাহানা নিয়ে বিছানায় পড়ে রইল। কেউ তার কপালে হাত রেখে দেখছে না। দেখলে তার মিথ্যা এক সেকেন্ডে ধরে ফেলত। ঠেলা ধাক্কা বকা দিয়ে কলেজ পাঠাত। প্রাইভেটে যেতে হতো। সেখানে আবার জায়িন ভাইয়ের সাথে দেখা হবে। এটা ভেবেই মীরা কোমরের কাছ থেকে চাদর টেনে নাক মুখ ঘোরে নিল।

“না বাবা না। আমার জ্বর এখনও ভালো হয়নি।”

মীরার শান্তিতে বাড়ি বসে সময় কাটানোও স্যার ম্যামদের সহ্য হলো না। মাহিমা এসে জানালো,

” পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে। চৌদ্দ দিন পর পরীক্ষা। তুমি আরও দুধ কলা দিয়ে জ্বর পোষো।”

পরীক্ষার কথা শুনেই মীরার সকল শান্তি অশান্তিতে রুপান্তরিত হলো। মাহিমা হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে ফলের বাটিটা নিলো। ছোট মামী একটু আগে দিয়ে গেছে। মাহিমা আপেলে কামড় বসাতে বসাতে বলল,

“আপেল খাবি?”

“না। পরীক্ষার খবর শুনিয়ে খাওয়ার মজা শেষ করে দিয়েছিস। তুই-ই খা।”

“আমি তো খাচ্ছিই। তুই রোগী মানুষ তাই মানবতা দেখিয়ে সাধছি।”

“পরীক্ষা দেওয়ার সিস্টেমটা কে চালু করেছিল রে? পড়াশোনা করতে তো ভালোই লাগে। কিন্তু পরীক্ষা দিতে আমার একদম ভালো লাগে না।”

“আমার কি ভালো লাগে? তবুও দিতে হয়। তুই এত টেনশন করছিস কেন? মুবিন ভাই তো তোকে সব সাবজেক্ট গুলিয়ে খাইয়ে রেখেছে।”

“সেগুলো আমি হজম করে কবেই বাথরুমে ছেড়ে এসেছি। পেটে কিছুই নেই।”

মাহিমা দীর্ঘশ্বাস চেপে অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবতে লাগলো। মুবিন ভাই মানুষটা খারাপ না। সে কোনও দিন মুবিন ভাইকে ওই চোখে দেখেনি ঠিক। কিন্তু বেচারা তো তাকে দেখেছে। বাসায় ফেরার সময় আজও মুবিন ভাইকে দেখেছে। কিন্তু মুবিন ভাই আজ তার কাছাকাছি আসার আগেই মাহিমা রিকশায় উঠে পড়েছে। আহা বেচারা অপাত্রে ভালোবাসা দান করে কষ্ট পাচ্ছে।

সামনে পরীক্ষা এখন নাটক করে শুয়ে থাকলে ক্ষতি অন্য কারো হবে না। যা ক্ষতি হওয়ার তারই হবে। তাই মীরা নিজেই আজ প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য রেডি হলো। তনি ঘরে এসে মীরাকে রেডি দেখে অবাক হয়ে বলল,

“ও মা! তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?”

মীরা আয়নায় নিজেকে দেখে তনির কথার জবাবে বলল,

“কোথায় আবার? আমার কাজ তো একটাই। পড়াশোনা করে তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করা। ফেয়ার এন্ড লাভলী দিয়ে তো কাজ হচ্ছে না।”

তনি এগিয়ে এসে মীরার কপালে হাত রেখে বলল,

“জ্বর নেই। কিন্তু আজকের দিনটা রেস্ট নিয়ে কাল থেকে গেলে হতো না।”

“পরীক্ষার রুটিন দিয়ে ফেলেছে গো আপু। আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য স্যাররা বাঁশ রেডি করছে।”

“আচ্ছা যা তাহলে।”

মীরা ব্যাগ গুছানোর সময় দেখল ব্যাগে কোন টাকা নেই। সে ড্রয়ারে দেখল। এক টাকার একটা পয়সাও নেই। বাবাও তো মনে হয় বাড়ি নেই। মীরা তনির দিকে তাকিয়ে বলল,

“আপু টাকা লাগবে। চকলেট খাওয়ার জন্যও এক টাকা নেই।”

“থাকবে কীভাবে? সব একদিনে খেয়ে ফেললে। রুম থেকে এসে নিয়ে যা। আমি কিন্তু ধার দিচ্ছি। ফেরত দিয়ে দিতে হবে।”

“থাক তোমার টাকা লাগবে না। আমি ইভান ভাইয়ের থেকে চেয়ে নিব। ইভান ভাই জীবনেও ফেরত চাইবে না।”

“আমি ইভান ভাইয়ের মতো বড়লোক না।”

“টাকাপয়সা তো হাতের ময়লা আপু। মনটা বড় করতে হয়।”

“তোর মন তো অনেক বড়। আমাকে এক লাখ দিতে পারবি?”

মীরা সেন্টি খাওয়া মুখে তনির দিকে তাকালো। তার কাছে এক লাখ টাকা থাকলে সে বিশ্বের সবচেয়ে বড়লোক হয়ে যেত। তনির থেকে টাকা নিয়ে মীরা মুবিনদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।

সুমনা দরজা খুলে মীরাকে দেখে খুশি হয়ে বলল,

“ও মা, মীরা তোর জ্বর ভালো হয়েছে? আহারে, কয়টা দিনে মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। হেঁটে এসেছিস?”

“না। এতদূর হাঁটলে মাথা ঘুরে এতক্ষণে রাস্তায় পড়ে থাকতাম।”

“আয় আয়, তোকে শরবত বানিয়ে দিই। তোকে দেখতে পেয়ে আমার যে কী ভালো লাগছে!”

মুবিন জানতো না আজ মীরা পড়তে আসবে। সে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে ছিল। মীরাকে দেখে তাড়াহুড়ো করে প্যান্ট পাল্টে এলো। পড়ানোর সময় আজ মুবিনকে বেশ চুপচাপ লাগছে। মীরা কলম রেখে দিয়ে বলল,

“মুবিন ভাই আজ পড়তে ভালো লাগছে না। একটা গান শোনান তো।”

“পড়ো মীরা।”

“আপনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন আমার সব কথা শুনবেন।”

“তুমিও তো কথা দিয়েছিলে ওই ব্যাপারটা দেখবে।”

“দেখছিই তো। আপনি জানেন আপনার জন্য আমি কত কষ্ট করছি।”

“হুম। এজন্যই তো মাহিমা আমাকে ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিয়েছে।”

মীরা কপালে ভাঁজ ফেলে মুবিনের দিকে দেখল। এজন্যই কি মুবিন ভাই আজ তার সাথে ভালো করে কথা বলছে না?

“ব্লক করে দিয়েছে! কেন? আচ্ছা, আমার কাছে কইতরির আইডির পাস আছে। আমি আপনাকে আন ব্লক করে দিচ্ছি।”

“কথা সেটা না মীরা। মাহিমা হঠাৎ কেন আমাকে ব্লক করলো? তুমি কি ওকে কিছু বলেছ?”

“আমি! আমি কী বলবো মুবিন ভাই?”

“জানি না। আচ্ছা এই বিষয়ে আলোচনা এখানেই শেষ করি।”

“না, শেষ কেন করবো? কইতরি এমন কেন করলো? আমি আপনাকে দুলাভাই বানানোর জন্য কত কষ্ট করছি। কইতরি আমার কষ্ট মাটি করবে কোন অধিকারে?”

“মাহিমা হয়তো আমাকে পছন্দ করে না।”

“কেন করবে না? আপনি কত ভালো। আপনার মতো আর কাউকে পাবে ও? পছন্দ কেন করবে না?”

“জোর করে কি কাউকে পছন্দ করানো যায় মীরা?”

“আপনি জানেন না দেখে এমন বলছেন। কইতরি আমার বোন আমি জানি। আমি কয়দিন ওর সামনে আপনার নামে সুনাম করলেই কইতরি আপনার প্রতি গলে যাবে। আপনি মন খারাপ করে থাকবেন না তো।”

“হুম।”

“তাহলে এবার একটা গান শোনান দুলাভাই। তিন মাত্র শালির থেকে বড় শালির আবদার।”

মুবিন হেসে ফেললো। এই মেয়ে পাগল। পড়ানো শেষ হলে মীরা ড্রয়িংরুমে সোফায় এসে বসলো। জায়িনের রুমের দিকে সাবধানে উঁকি দিল। সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তার মানে জায়িন ভাই মনে হয় বাড়িতে নেই। সুমনা ঘর থেকে মীরাকে ডেকে বলল,

“পড়া শেষ মীরা?”

“হ্যাঁ আন্টি। আমি আজ বেশি দেরি করব না।”

“বোস একটু। নারিকেলের নাড়ু বানিয়েছিলাম। খাবি?”

“জিজ্ঞেস করছো কেন? নিয়ে আসো।”

সুমনা বক্সে করে অনেকগুলো নাড়ু নিয়ে এসে মীরার হাতে দিয়ে বলল,

“এখানে বসে যতগুলো খেতে পারিস খা। বাকি যা বাঁচবে বাড়ি নিয়ে যাস।”

মীরা বক্স খুলেই একটা নাড়ু হাতে নিয়ে মুখে পুরে দিয়ে চিবোতে চিবোতে বলল,

“আন্টি তুমি কত্তো ভালো! আমার দেখা খুব কম সংখ্যক ভালো মানুষের মাঝে তুমি এক নাম্বারে আছো।”

“পাম দিচ্ছিস না তো?”

“সত্যি। বড়মা, ছোট চাচী, বাবা, চাচ্চু, বড় আব্বু, ইভান ভাই, ইভা আপু, আবির ভাই, সবাই অনেক ভালো। তুমি সবার থেকে বেশি ভালো।”

সুমনা হেসে সস্নেহে মীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। মেয়েটাকে কেনই যেন খুব বেশি আপন মনে হয়। মা হারা বলেই হয়তো এত বেশি মায়া লাগে। মুবিন বাইরের কাপড় পরে তৈরি হয়ে কোথাও যাচ্ছে দেখে সুমনা জিজ্ঞেস করল,

“কোথায় যাচ্ছিস?”

“কুরিয়ার অফিসে। পার্সেল এসেছে।”

মুবিন বেরিয়ে গেলে সুমনা রান্নাঘরে চা আনতে গেল। চা খেতে খেতে মীরার সাথে গল্প করবে। মীরা টিভি দেখতে দেখতে মনের সুখে নাড়ু খাচ্ছে এমন সময় জায়িনকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে মীরার গলায় নাড়ু আটকে গেল। সে জায়িনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। এই লোক বাড়িতেই ছিল! তবুও একটা টু শব্দ পায়নি? মীরা মনে মনে নিজেকে গালি দিল।

“তুই একটা গাধার বাচ্চা মীরা। নিজে থেকে কেন ভেবে নিলি উনি বাড়িতে নেই? মুবিন ভাই বা আন্টির কাছে জিজ্ঞেস করে নিলে কি তোর জেল হতো?”

মীরা জায়িনের দিকে তাকিয়ে স্ট্যাচু হয়ে সোফায় বসে আছে। জায়িন মীরাকে দেখেও অলস ভঙ্গিতে অন্য একটা সোফায় বসে পড়লো। জায়িন ভাই কি মাত্র ঘুম থেকে উঠে এসেছে? চুলও ঠিক করেনি। চোখে মুখে এখনও ঘুমের রেশ লেগে আছে। লোকটাকে বরাবরের থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে। ভাবনাটা মনে আসতেই মীরা তাৎক্ষণাৎ মাথা ঝাঁকিয়ে সেটাকে তাড়িয়ে দিলো। কী ভাবছে সে এসব? নিজের ভাবনার উপরই মীরা অবাক হলো। জায়িন ভাইকে খুঁটিয়ে দেখছিল সে! কেন? এই কেন’র উত্তর খুঁজতে গিয়ে মীরার হেঁচকি উঠে গেল। মীরা জায়িনের দিকে তাকিয়ে সমানে হেঁচকি তুলে যাচ্ছে। সুমনা রান্নাঘর থেকে জিজ্ঞেস করছে,

“মীরা, কী হয়েছে?”

মীরা জবাব দিতে পারলে তো! জায়িন ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে গিয়ে ডাইনিং থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এলো। মীরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“নাও।”

মীরা হেঁচকি তুলতে তুলতেই মাথা তুলে ফ্যালফ্যাল চোখে জায়িনকে দেখতে থাকলে জায়িন বলল,

“পরে দেখো। আগে পানি খাও।”

চলবে..#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৩৮

মীরা জায়িনের হাত থেকে একপ্রকার পানির গ্লাস ছিনিয়ে নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগল। জায়িন এই মেয়ের সব উদ্ভট আচরণের সাথে পরিচিত বিধায় ওর কোন কাজে নতুন করে অবাক হতে হচ্ছে না। সুমনা পানি নিয়ে এসে দেখল মীরা পাচ্ছি খাচ্ছে। জায়িনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুই পানি দিয়েছিস? ভালো করেছিস। কি যে করিস তুই মীরা!”

মীরা পানি খেয়ে শান্ত হয়ে চোরা চোখে জায়িনকে দেখছে। সেদিক রাতে জায়িন ভাই তাদের বাড়ি গিয়েছিল। কিন্তু মীরা উনার সাথে কথা বলবে তো দূর উনার সামনেই বেশিক্ষণ থাকেনি। কীভাবে থাকবে? জায়িন ভাই যে স্বপ্নে এসে তাকে বড্ড জ্বালাচ্ছে।
সুমনা রান্নাঘরে ফিরে গেলে মুবিন আবার বাসায় এলো। মীরা মুবিনকে দেখে একটু স্বস্তি পেলো। একা এই লোকের সাথে থাকতে হবে না। মুবিন ভাই ফিরে এসেছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কুরিয়ার অফিস থেকে কীভাবে ফিরে এলো? মীরা গলায় জোর এনে জিজ্ঞেস করলো,

“কুরিয়ার অফিস থেকে চলে এসেছেন মুবিন ভাই?”

“যেতেই তো পারিনি। এতটুকু পথ ভাবলাম হেঁটে চলে যাই। রাস্তায় নামতেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। ছাতা ছাড়া কুরিয়ার অফিস পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভিজে যাব। তাই ফিরে এসেছি।”

মীরা চট করে বলে বসল,

“তাহলে আজ আর আপনার যাওয়া হবে না। বৃষ্টি না থামলে যেতে পারবেন না।”

“এটা কি বর্ষাকাল চলছে? এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিই হচ্ছে। আজ একটু সময় পেলাম। বৃষ্টি বাঁধা দিয়ে বসলো। মা কোথায় মীরা?”

“রান্নাঘরে।”

মুবিন গলা উঁচিয়ে ডাকল,

“মা। মা একটা ছাতা দাও তো।”

মীরা সবজান্তার মতো মাথা নাড়িয়ে বলল,

“ছাতা তো নেই মুবিন ভাই।”

“নেই? কে বলেছে?”

সুমনা চায়ের কাপ হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মীরার সামনের টেবিলের উপর রেখে কোথাও চলে গেল। একটু পরেই ছাতা হাতে ফিরে এলো। মীরা আন্টির হাতে ছাতা দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। তার হতভম্ব ভাব কেটে উঠতেই মীরা ঝট করে জায়িনের দিকে তাকালো। জায়িন পরিস্থিতি সুবিধার না বুঝে আস্তেধীরে এখান থেকে কেটে পড়তে চাইল। মীরা ঝনঝনে গলায় জিজ্ঞেস করল,

“আন্টি তোমাদের ছাতা আছে?”

সুমনা হেসে বলল,

“ছাতা থাকবে না কেন?”

“কয়টা ছাতা আছে?”

“আছে তিন চারটা। কেন বল তো?”

“বাড়িতে ছাতা আছে এই কথা জায়িন ভাই জানতো না?”

জায়িন রুমে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিল। মীরা মা’র সাথে কথা বললেও রাগান্বিত চোখ দু’টো তার দিকেই রেখেছে। জায়িন মীরার রাগকে ভয় পাচ্ছে না। সে ভয় পাচ্ছে মেয়েটার ঠোঁটকাটা স্বভাবকে। মা’র সামনে উলটাপালটা কিছু একটা বলে না ফেললেই হয়। সুমনা মীরার কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। সে-ও ছেলের দিকে তাকিয়েছে। মায়ের চোখে চোখ পড়তে জায়িন কষ্ট করে হাসলো। মীরা আগের মতোই তীক্ষ্ণ স্বরে একেকটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে।

“ছাতা কোথায় রেখেছিলে আন্টি?”

“ঘরেই।”

“অনেক খুঁজলেও পাওয়া যাবে না এমন জায়গায় নিশ্চয় রাখোনি?”

“না। কিন্তু তুই এসব কথা কেন জিজ্ঞেস করছিস বল তো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

মীরা জায়িনের দিকে তাকিয়ে রাগে কিড়মিড় করছে। কতটা বাজে হলে এমন মিথ্যা বলে তাকে ছাতা দিলো না। বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে মীরার জ্বর এলো। তার থেকেও যেটা বড় কথা, সেদিনের ওই ঘটনার পর জায়িন ভাই বারবার তার স্বপ্নে আসে। স্বপ্ন গুলো স্বাভাবিক না। স্বপ্নে জায়িন ভাই তার প্রেমিক পুরুষের ভূমিকায় থাকে। জায়িন ভাইকে নিয়ে ওরকম রোমান্টিক স্বপ্ন দেখে উনার সামনে আসতে মীরার অস্বস্তি হয়। এই স্বপ্নের ভয়ে সে কয়েকদিন ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি। স্বপ্ন গুলো তাকে পুরোটা দিনই ভাবায়। মীরা নিজেও বুঝতে পারছে জায়িন ভাইকে নিয়ে তার মাঝে অন্যরকম একটা চিন্তাভাবনা কাজ করছে। না চাইতেও এমন হচ্ছে। এতে দোষটা কার? এই কাঠখোট্টা লোককে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখে মীরা কেন নিজের পায়ে কুড়াল মারবে?
সুমনা নানান প্রশ্ন করলেও মীরা একটা প্রশ্নের উত্তরও না দিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নাড়ুর বক্স হাতে নিয়ে বাড়ির উদেশ্যে রওনা দিল। সুমনা বোকার মতো ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“পাগলিটার কী হয়েছে রে? ওরকমভাবে চলে গেল কেন? মীরা, এই মীরা দাঁড়া বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ছাতা নিয়ে যা।”

বলতে বলতে সুমনা মীরাকে আটকাতে চলে গেলো। জায়িন বড় করে একটা দম ফেলে সোফায় বসে পড়লো। এই মেয়ে গাধা না হলে জায়িনের উদ্দেশ্য, অনুভূতি দুটোই জেনে যাবে। মীরাকে দীর্ঘ সময় চোখের সামনে দেখার জন্যই বাসায় ছাতা আছে জেনেও জায়িন সেদিন ইচ্ছে করে ছাতা দেয়নি। অসৎ কোন উদ্দেশ্য তার মনে ছিল না। শুধুমাত্র মীরার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে চেয়েছিল। সেদিন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, বাজ পড়া, অন্ধকারে মীরার ভয় পাওয়া কোনটাই জায়িনের হাতে ছিল না। সে নিজেও পরে অনুতপ্ত হয়েছে। মিথ্যা বলে মীরাকে আটকানো তার উচিত হয়নি।

“মাঝে মাঝে জেনে-বুঝেও আমরা ভুল করি। যেমন তোমার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলাটাও আমার একটা ভুলই। আমি একজনের কাছে ওয়াদা বদ্ধ থাকা স্বত্বেও তোমাকে ভালোবাসা থেকে নিজেকে আটকাতে পারিনি। যেদিন তুমিও আমার জন্য একইরকম অনুভূতি অনুভব করবে সেদিন কি আমি খুশি হতে পারবো? সমস্ত পিছুটান থেকে নিজেকে মুক্ত করে তোমাকে আপন করে নিতে পারব?”

….

মীরা অনেকদিন পর ছোট ফুপির বাসায় রাতে থাকতে এসেছে। আবির ভাই জোর করে মীরাকে নিয়ে এসেছে। মীরার মনটাও কিছুটা বিক্ষিপ্ত ছিল। মাহিমার সাথে কথা বলাও জরুরি ছিল। মীরা আর লুকোচুরি করতে পারল না। সরাসরি মাহিমাকে আজ বলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

“তুই মুবিন ভাইকে ব্লক করেছিস?”

“হ্যাঁ। তুই জেনেছিস কীভাবে?”

“কেন করেছিস?”

“এমনি। কিন্তু তুই জানলি কীভাবে?”

“সেটা বড় কথা না। তুই এমন কেন করছিস?”

“কেমন করছি মীরা? তুই আমাকে দোষ দিবি!”

“অবশ্যই।”

মীরা ঝগড়া করার মুডে থাকলেও মাহিমা কেঁদে ফেলবে অবস্থা। সে তো মুবিন ভাইকে বলেনি আপনি আমাকে পছন্দ করুন। মীরা কি তাকেই ভুল বুঝবে?

“তুই একটা মানুষের অনুভূতির মূল্য দিচ্ছিস না পাষাণী। এত ইশারা ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইলাম তুই কিছু না বোঝার পণ করে রেখেছিস। এত কিসের ভাব তোর? না, বল আমাকে নিজেকে কী ভাবিস তুই? মিস ইউনিভার্স?”

মাহিমা এবার কেঁদেই ফেলল। মীরা মাহিমাকে কাঁদতে দেখে হতবুদ্ধি হয়ে চেয়ে রইলো। এই মেয়ে কাঁদছে কেন? সে কী এমন বলেছে?

“কাঁদছিস কেন তুই? আশ্চর্য! আমি তোকে মেরেছি? নাকি বকেছি?”

“তুই আমাকে ভুল বুঝছিস মীরা।”

“ভুল বুঝবো না তো কী করব? মুবিন ভাইয়ের মাঝে দোষটা কি? কিসের কমতি উনার? কেন উনাকে পছন্দ না তোর? উনার বজ্জাত ভাইটার উপর মন এসে গেছে? তাহলে জেনে রাখ, তোদের মধ্যে পৃথিবীর সবথেকে বড় বাধা আমি হয়ে দাঁড়াব। ওরকম একটা হিংসুটে শয়তান লোকের সাথে তোর কিছুই হতে দিব না। তুই মুবিন ভাইকেই বিয়ে করবি। তারপর ওবাড়িতে গিয়ে শাঁকচুন্নি হয়ে ভাসুর নামের বজ্জাতটার রক্ত চুষে খাবি।”

মীরা এতগুলো কথা বলে ফেলেছে। কিন্তু মাহিমা মীরার একটা কথাতেই আটকে আছে। সে ফ্যালফ্যাল চোখে মীরার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

“তুই মুবিন ভাইকে পছন্দ করিস না?”

প্রশ্নটা শুনে মীরা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। সে কথা বলতেই ভুলে গেল। মুবিন ভাইকে সে পছন্দ করবে কেন? মাহিমা একইভাবে মীরার দিকে তাকিয়ে আছে। মীরা এবার বুঝতে পারলো। গাধীটা ভাবছিল, সে মুবিন ভাইকে পছন্দ করে! মীরা ধড়াম করে মাহিমার পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিল,

“গাধার বাচ্চা। আমার ফুপুকে বলছি না। আমার ফুপু মানুষই। কিন্তু তুই ফুপুর পেট থেকে গাধা হয়েছিস। আমি কেন মুবিন ভাইকে পছন্দ করবো? মুবিন ভাই তোকে পছন্দ করে।”

“তুই জানতি?”

“ইভা আপুর হলুদের দিন থেকেই তো। আমি তোদের এক করার জন্য কত কাঠখড় পোড়াচ্ছি। আর তুই আমাদের মাঝে কিছু আছে ভেবে বসেছিলি?”

মাহিমা নিজের ভাবনায় নিজেই বেআক্কেল হয়ে বসে রইল। মীরা প্রথমে রাগ করলেও এখন হাসতে লাগল,

“ওরে কইতরি অন্যের লাভ কেসে পিএইচডি করে নিজের লাভ লাইফে লবডঙ্কা। নিজের বেলা বুদ্ধি গুলো কি মাঠে ঘাস খেতে গিয়েছিল? মুবিন ভাই তোকে পছন্দ করে রে গাধা। আমি তো মুবিন ভাইকে দুলাভাই হিসেবে পছন্দ করি।”

মাহিমা বোকার মতো বসে রইল। আস্তে আস্তে তার খারাপ লাগা কমে গিয়ে ভালো লাগতে শুরু করেছে। মীরা মাহিমাকে সময় দিলো। কিছুটা সময় পর বলল,

“মুবিন ভাইকে কি তোর ভালো লাগে?”

মাহিমা লাজুক লাজুক মুখে সদ্য হাতপা ভেঙে প্রেমে পড়া নিব্বির মতো মিনমিনে গলায় বলল,

“খারাপ লাগে না। আবার ওই টাইপ ভালো লাগে কি-না সেটাও বুঝতে পারছি না।”

“বুঝতে না পারলে বাদ দে। আমি মুবিন ভাইকে না করে দিই। বলে দিই, তোর দিক থেকে ওরকম কিছু নেই। বেচারা যেন শুধু শুধু আশায় বুক না বাঁধে। দেখি আমার ফোনটা কই?”

মীরা মিছেমিছি ফোন খুঁজতে লাগলে মাহিমা তাড়াহুড়ো করে বলে উঠল,

“না না। ভালো লাগে।”

মীরা হেসে বলল,

“এইতো লাইনে এসেছিস।”

চলবে…

(
চলবে…

পাঠক মহল, কমেন্ট করেন না কেন? আমি বুঝবো কীভাবে গল্প কেমন হচ্ছে।🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here