মন নিয়ে কাছাকাছি পর্ব – ৭১+৭২+৭৩ ও শেষ

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৭১

আবির! কোথায় আবির? মীরা তার ছোট্ট দেহটি জায়িনের বুকে লুকিয়ে ফেলতে চাচ্ছে। আজ সত্যি সত্যিই তার কপালে শনি নাচছে। নইলে এত সাহস দেখাতে যেত না। আবির ভাই দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। জায়িন মীরার কথা শুনে আবিরকে খুঁজছে। মীরা ভয়ার্ত গলায় চাপা ধমক দিয়ে বলল,

“ছাতাটা নিচু করুন না। আমি মরলে আপনি খুশি হবেন?”

জায়িন মীরার ভয় পাওয়ার কারণ বুঝতে পারছে। কিন্তু একদিন না একদিন সবাই তো জানবেই। কতদিন লুকিয়ে রাখা যাবে?

“একদিন সবাইকে জানাতে হবে মীরা। সেই দিনটা আজ হলে সমস্যা কী?”

“আমি জানি না। আমার ভয় করছে। মনে হচ্ছে বাড়িতে যদি মেনে না নেয়। আমাকে আপনার সাথে দেখা করতে না দেয়। রুমে আটকে রাখে। ফোন নিয়ে নিলে আপনার সাথে কথা বলতে না পারলে তো আমি মরেই যাব।”

“তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছ। মেনে না নেওয়ার তো কারণ নেই।”

“আমার যতগুলো ক্লাসমেট বাড়িতে ধরা খেয়েছে কারো রিলেশনই মেনে নেয়নি। সবার বাবা মা’ই অনেক রাগ করেছে।”

“তোমার পরিবারের সবাই অনেক ভালো। আর উনারা আমাকে পছন্দও করেন।”

“এটাই যা একটু স্বস্তি।”

মীরা মাথা উঁচিয়ে আবিরকে খুঁজছে। আবির মনে হয় চলে গেছে। মীরা আর দেরি করল না। এই সুযোগে মাহিমাকে খুঁজে পেয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। মাহিমার অবস্থাও ভয়ে কাহিল।

“আমার ভীষণ ভয় করছে রে মীরা। আজ আমরা দু’জনই মরব।”

“কবর খুঁড়ে রেখেছে। আমরা গেলেই জানাজা।”

“কেন যে এত সাহস দেখাতে গেলাম?”

“নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার কথা সবসময় শুনে এসেছি। এবার নিজেরাই মারলাম।”

বৃষ্টি এখনও থামছে না। বরং আকাশ আরও অন্ধকার হয়ে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দু’জনের পা চলছে না। দু’টো পা দু’মণ ওজনের পাথর মনে হচ্ছে। ছাতা থাকার পরেও বৃষ্টির ছাঁটে দু’জনই আধ ভেজা। মাঝে মাঝে দমকা বাতাসে দাঁতে দাঁতে বাড়ি লাগছে। মাহিমা মীরার হাত ধরে কাঁপতে কাঁপতে বলল,

“জীবনে শেষ বারের মতো আজকে কোনভাবে বাঁচিয়ে নিস মীরা। সারাজীবন তোর চাকরানী হয়ে থাকব। শুধু আজকে বাঁচিয়ে নিস।”

মীরা বলল,

“আমাকে বাঁচাবে কে? নিজে বেঁচে থাকলে তো তোকে বাঁচাতে পারব।”

বাড়িতে এলে সবাই বকবে এই ভয় পাচ্ছিল ওরা। ভেবেছিল আজ হয়তো কপালে মারও আছে। কিন্তু ওদের ভাবনার মতো তেমন কিছুই হলো না। বরং উল্টোটা ঘটল। ওদের দু’জনকে দেখেই ছোট চাচী, বড়মা কাঁদতে কাঁদতে বুকে জড়িয়ে নিলেন। কপালে, গালে অজস্র চুমু দিতে দিতে বললেন,

“কোথায় গিয়েছিলি তোরা? আর একটু হলে আমাদের জীবন চলে যেত। হারিয়ে গিয়েছিলি ভালো কথা। তোরা কি বাড়ির পথ চিনতি না? সাথে সাথে কেন ফিরে আসিসনি।”

মীরা মাহিমা নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করল। কেউ ওদের বকছে না। সবাই ওদের চার পাঁচ বছরের বাচ্চা মনে করছে। যেন ওদের হারিয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। ওরা যে নিজেদের ইচ্ছেতে কোথাও যেতে পারে এটা কারো মনেই আসছে না। তনি সব বিষয় নিয়ে মীরাকে বকাবকি করলেও আজ সে-ও ভয় পেয়ে গিয়েছিল।

“তোদেরকে কত খুঁজেছি। পেছন থেকে কোথায় চলে গিয়েছিলি?”

ওরা কিছু বলার আগেই আবির বাড়ি ফিরল। বৃষ্টিতে ভিজে পাগলের মতো দুই বোনকে খুঁজেছে। আবিরকে কাক ভেজা অবস্থায় দেখে ইভদ বলল,

“ওরা ফিরে এসেছে। তুমি আসার একটু আগেই ফিরেছে।”

“ওহ।”

“আমি তোমার ভাইকেও কল করে বলে দেই। ও হয়তো এখনও ওদের খুঁজছে।”

ইভা ইভানকে কল করতে চলে গেল। বড় মামী আবিরকে বলল,

“বাবা তুই আর ভেজা কাপড়ে থাকিস না। জ্বর এসে যাবে। তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টে নে।”

আবির একবার দুই বোনের দিকে তাকিয়ে ওদের কোন প্রশ্ন না করে উপরে চলে গেল। মীরা ভয়ে আবিরের সাথে চোখ মেলাতে পারল না। তার মন বলছে আবির তাকে জায়িনের সাথে দেখে ফেলেছে। বড়মা, ছোট চাচী দুই মেয়েকে সহিসালামত বাড়ি ফিরতে দেখেই খুশি। তনি নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেও আগে ওদের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। পুরোপুরি না ভিজলেও ভেজা কাপড়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে। মীরা মাহিমার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল,

“আজকের কাজটা একদম ঠিক হয়নি। আমি কসম কাটছি আর জীবনে এমন কোন কাজ করব না। আমাদের জন্য সবাই কত টেনশন করেছে।”

“হুম। আমরা ভেবেছিলাম সবাই হয়তো বকবে। কিন্তু সবাই আমাদের দেখে কত খুশি হয়েছে দেখেছিস? সবার ভালোবাসার মূল্য আমরা মিথ্যা বলে, ঠকিয়ে দিতে পারি না।”

“চল দু’জন প্রমিজ করি, এখন থেকে ভালো মেয়ে হয়ে থাকব। আর মিথ্যা বলে কোথাও যাব না। কাউকে টেনশনও দিব না।”

…..

“তুই যে মেয়েটাকে ভালোবাসিস তাকে কি আমি চিনি?”

আবিরের এই প্রশ্নে জায়িন ওর দিকে তাকাল। আবির মজা করছে না বুঝতে পেরে জায়িনও সিরিয়াস হলো। সে বন্ধুর থেকে আর লুকিয়ে রাখতে চাইল না। তাই একটু সময় নিয়ে বলল,

“হুম।”

“সম্পর্কের কত বছর গড়াল?”

“এক।”

“আমার থেকে লুকিয়ে রাখার কারণ? যদিও এই প্রশ্নটা করার অধিকার আমার নেই।”

“তুইও আমাকে ভুল বুঝবি!”

“ভুল বুঝতাম বন্ধুত্বটা যদি সলিড হতো। এখন তো.. যাকগে আমার কাছে স্বীকার করেছিস এতেই সন্তুষ্ট।”

আবিরের রাগ করাটা জায়েজ। কারণ জায়িন তার একমাত্র বেস্টকে জানায়নি। আবির এতটা রাগ হয়তো করত না যদি না মেয়েটা মীরা হতো। ওর বোনের সাথেই সম্পর্ক করে ওকেই অন্ধকারে রেখেছে। আবির উঠতে নিল। জায়িন ওর হাত ধরে ফেলে বলল,

“কোথায় যাচ্ছিস?”

“কাজ আছে।”

“কথা শেষ করে যা।”

“শেষ।”

“আমার উপর তুই রাগ করতেই পারিস। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব..

জায়িন বলার আগেই আবির তার মনের কথা বুঝে নিল। সামান্য হেসে বলল,

“বন্ধুত্ব শেষ এই কথাটা বলে দিলেও যে বন্ধুত্ব শেষ হবে না তা আমিও জানি। তাই তো বলছি না। বন্ধুর কাছে এক্সপেকটেশন অনেক বেশি ছিল। তাই হয়তো কষ্ট লাগছে।
ভাবতাম তোর ব্যক্তিগত সব কথা জানার অধিকার আমার আছে। যেমন আমার সব কথা তুই জানিস। হ্যাঁ, তুই কখনও নিজে থেকে জানতে চাসনি। আমিই বলেছি। তোর থেকেও এমনটা আশা করা আমারই বোকামি ছিল।”

আবির চলে গেলে জায়িন অনেকটা সময় থম মেরে বসে রইল। তার সবথেকে কাছের বন্ধুটাই তাকে ভুল বুঝেছে।

মীরা কলে জায়িনের কন্ঠ শুনেই বুঝে ফেলল। আজকে জায়িনের কন্ঠ অন্য রকম লাগছে। সে দূর থেকেই বেশ বুঝতে পারছে কোন কারণে হয়তো জায়িনের মন খারাপ।

“আপনার কি মন খারাপ?”

“হয়তো।”

“অনেক বেশি।”

জায়িন উত্তর করল না। জায়িনের মন ভালো নেই শুনেই মীরা অস্থির হয়ে পড়ল।

“কেন মন খারাপ?”

“আমার সবথেকে কাছের বন্ধুটা আমার উপর রাগ করেছে।”

“কে? আবির ভাই? আপনার সবথেকে কাছের বন্ধু তো আবির ভাইয়াই।”

“হুম।”

“কেন রাগ করেছে? আবির ভাই তাহলে সেদিন আমাদের দেখে ফেলেছিল! আমার মনে হয়েছিল আবির ভাই আমাদের দেখে ফেলেছে। কিন্তু কিছু তো জিজ্ঞেস করেনি।”

দুইটা দিন ধরে মীরা এই কথাটা ভেবে ভেবেই অস্থির হচ্ছিল।তার সাথে আবির ভাইয়ের আচরণে কোথায় যেন একটু পরিবর্তন এসেছে। মীরা ঠিক বুঝতে পেরেছে। কিন্তু সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারেনি।

“আবির ভাই কী বলেছে? অনেক রাগ করেছে?”

“কিছু বলেনি। এটাই তো খারাপ লাগছে। আমার উপর আবিরের অধিকার খাটানোই আমার সবথেকে বেশি ভালো লাগত। এই ব্যাপারে ও কিছুই বলেনি। আমি ওর থেকে লুকাবো আশা করেনি।”

“এখন আমরা কী করব?”

“বুঝতে পারছি না।”

“আবির ভাই কি আমাদের সম্পর্ক মানবে না?”

“বলতে পারছি না।”

জায়িন কাছে থাকলে দেখতে পেত মীরার চোখ জোড়া কেমন টলমল করছে। এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে এমন।

….

এক সমস্যা সমাধান হওয়ার আগেই জায়িনের জীবনে আরেক সমস্যা দেখা দিল। আবিরের সাথে কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারছে না। ছেলেটা তার কলই তুলছে না। দ্বিতীয় সমস্যাটা বাবা তৈরি করল। তার বিয়ের কথা উঠেছিল। কিন্তু জায়িন বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাবা তাকে মেয়ে দেখতে যেতে বলছে। এমনকি তাকে জিজ্ঞেস না করেই রবিবারে মেয়েদের বাড়িতে যাওয়ার কথা দিয়ে ফেলেছে। মা’র কাছে এই কথা শুনে কিছুটা রাগ ও বিরক্তি নিয়ে বলল,

“আমি তো বলেছিলাম এখন বিয়ে করব না।”

সুমনা বাপ ছেলের নাটক আর নিতে পারছে না। বাপ বলে, ছেলে বিয়ে করবে। বয়স হয়েছে। ছেলে বলে, এখন বিয়ে করবে না। ক্যারিয়ার গোছাবে। মাঝখান থেকে স্বামীর রাগ, ছেলের বিরক্তি সব তাকে সহ্য করতে হয়।

“এই কথাটা আমাকে না বলে তোর বাপকে গিয়ে বল।”

“তুমি বাবাকে বলে দিও। বিয়ের জন্য এত তাড়া কিসের? কয়েকটা বছর যাক।”

“আমি কি তোর আর তোর বাপের কবুতর? তোর খবর তোর বাপের কাছে, তোর বাপের খবর তোর কাছে ঠোঁটে ঝুলিয়ে নিয়ে আসব? আল্লাহ জবান দিয়েছে। নিজেরা কথা বল। আমাকে বাবা তোদের বাপ ছেলের নাটক থেকে মুক্তি দে।”

…..

মীরা ফোঁস করে বড় একটা দম ফেলে বলল,

“আবির ভাই সব জেনে গেছে। সেদিন আমাকে জায়িন ভাইয়ের সাথে দেখে ফেলেছে।”

কথাটা শুনে মাহিমা বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল।

“বলিস কি! ভাইয়া তোকে কিছু বলেছে?”

“আমাকে কিছু বলেনি। কিন্তু বন্ধুর সাথে রাগ করেছে।”

“কী বলিস! জায়িন ভাই ভাইয়ার এত ভালো বন্ধু। স্কুল থেকে একসাথে আছে। তবুও রাগ করেছে!”

“তুইও তো প্রথম জেনে রাগ করেছিলি। ভাই বোন দুইটাই একরকম। চার মাস পরে কেন বলেছি এজন্য মুখে তেলের পিঠা দিয়ে এক সপ্তাহ কথা বলিস নি। আবির ভাই তো একবছর পরে জেনেছে। তবুও আমরা জানাইনি। নিজে থেকে জেনেছে। রাগ করারই তো কথা।”

“হুম। কিন্তু এখন কী হবে?”

“জানি না রে। জীবনটা পানির মতো সহজ হলে কতই না ভালো হত! ”

” জায়িন ভাই এত ভালো বন্ধু হওয়া স্বত্বেও ভাইয়া তোদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। আমার আর মুবিন ভাইয়ের সম্পর্ক তো তাহলে জীবনেও মেনে নিবে না।”

“আমারটা মেনে না নিলে তোরাটাও না মানুক।”

“কী হারামি রে তুই! ভাইয়া তোকে জায়িন ভাইয়ের সাথে দেখেছে মানে আমি যে তোর সাথে ছিলাম না এটাও দেখেছে। এই মীরা, ভাইয়া আমার আর মুবিন ভাইয়ের ব্যাপারটাও জেনে যায়নি তো?”

“আল্লাহ করুক জেনে যাক।”

মাহিমা ভয়ে আবোলতাবোল বলতে লাগল,

“আল্লাহ, এখন আমি কী করব? ভাইয়া আমাকে মেরেই ফেলবে। মা জানলে আমার হাড্ডি একটাও আস্ত থাকবে না।”

“আল্লাহ আমাদের ভাই গুলোকে এত চালাক বানিয়েছেন কেন? মাথা ভর্তি ব্রেইন দিয়ে রেখেছে। একটু কম চালাক হাবাগোবা টাইপ বানালে কী হতো? বোনেরা যে একটু লুকিয়ে প্রেম করবে সেটা হতে দিবে না।”

চলবে

বিঃদ্রঃ বানান ভুল ক্ষমা করবেন।#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৭২

সেদিনের ঘটনার পর মীরার বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বললেই চলে। বড়মা কেন এত ভয় পাচ্ছে? সে কি ছোট বাচ্চা? ছোট চাচী কি ভাবে মেলায় হারিয়ে গিয়েছিল বলে কি এখনও হারিয়ে যাবে? আর মেলায় তো হারিয়ে যায়নি। ইচ্ছে করে হারালে না করবে কে? কিন্তু এই কথাটা তো এই মহিলারা বুঝতে চাইছে না। কী এক যন্ত্রণা! তাই মীরা আজ সুমনা আন্টিকে দেখতে যাওয়ার বাহানা করে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। যদিও জানে এখন গেলে জায়িনের সাথে দেখা হবে না। কিন্তু শাশুড়ির খোঁজ খবরও তো রাখা উচিত। সুমনা মীরাকে দেখে প্রতি বারের মতোই খুশি হয়েছে। ঘরে যা খাবার আছে মীরার জন্য নিয়ে আসছে। মেয়েটা আচার খেতে ভীষণ পছন্দ করে। শখ করে খায়। সুমনা সামনে বসে মুগ্ধ হয়ে দেখে।

“তুই সবসময় কেন আসিস না মীরা? তুই এলে আমার কত ভালো লাগে জানিস তুই!”

“কীভাবে আসব আন্টি? কেউ বাড়ি থেকে বেরই হতে দেয় না। নইলে আমার তো আসতে ইচ্ছেই করে।”

“আমার কথা বলবি। তাহলেই আসতে দিবে।”

“আচ্ছা।”

মীরা সুমনার ঘরে বসে আছে। বাড়িতে কেউ নেই এখন। আন্টি একা একা সারাটা দিন কীভাবে থাকে? এই ঘরের দেয়ালে তিন চারটা ছবি ঝুলানো। মীরা সেগুলোর কাছে গিয়ে দাঁড়াল।

“এটা কি জায়িন ভাই আন্টি?”

“কোনটা? লাল হাফপ্যান্ট পরাটা মুবিন। পাশেরটা জায়িন।”

মীরা ছবিটা ভালো করে দেখতে লাগল। ছবিতে জায়িনের মুখ ভর্তি হাসি। সে মুবিনের কান টেনে ধরে রেখেছে। মুবিন কাঁদছে। এতেই যেন জায়িন ভীষণ মজা পাচ্ছে। মীরার বিশ্বাস হতে চাইল না। সে জিজ্ঞেস করল,

“জায়িন ভাই মুবিন ভাইয়ের কান টেনে ধরে রেখেছে?”

“হুম। ছোটবেলায় জায়িন অনেক দুষ্টু ছিল। ওর দুষ্টুমির কারণে আমি টিকতে পারতাম না। এখন তো ভদ্র হয়ে গেছে। কেউ দেখে বিশ্বাসই করবে না এই ছেলে ছোটবেলায় আমাকে কী জ্বালানিই না জ্বালিয়েছে।”

জায়িন ভাই ছোট বেলায় দুষ্টু ছিল! অসম্ভব। এই লোকের পক্ষে দুষ্টুমি করা সম্ভবই না। এই বয়সেই এমন গম্ভীর হয়ে থাকে যেন বয়স সত্তর পেরিয়েছে।

“মুবিনকে যেমন আদর করত তেমনই কাঁদাত। আমি চোখের আড়াল হলেই কানে ধরে, চুলে ধরে টান মারত। চিমটি মেরে কাঁদিয়ে নিজেই শান্ত করত।”

“আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে তুমি বানিয়ে বলছো। তোমার ছেলেকে দেখে বোঝাই যায়না।”

“আমারও বিশ্বাস হয় না। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরেও জায়িন অনেক বাঁদরামি করেছে। টিচারদের কত নালিশ যে আসত। একে মারত, ওকে মারত। মাঝে মাঝে আমি নিজেও বিরক্ত হয়ে যেতাম। কিন্তু ক্লাস ফোরে উঠে হুট করেই আমার দুষ্টু ছেলেটা ভালো হয়ে গেল। কারো সাথে ঝগড়াঝাটি মারামারি করে না। বাড়িতে আমাকেও বিরক্ত করে না। ছোট ভাইয়ের খেয়াল রাখে। আমার সব কথা শুনে। বিশেষ করে ওর বাবার কথা ছাড়া চোখের পলকও ফেলে না এমন অবস্থা। একদম সভ্য ভদ্র। ছেলেটার হঠাৎ এই পরিবর্তনের কারণ আমি আজও জানতে পারিনি।”

“হুম।”

মীরা এমনভাবে মাথা দুলিয়ে হুম বলল সুমনা হেসে ফেলল।

“বোস তুই। আরও কিছুক্ষণ থাকবি? দুপুরে খেয়ে যা।”

“না না। বড়মা বকবে। আজ চলে যাই। আরেকদিন আবার আসব।”

সুমনা বলতে ভুলে গিয়েছিল। মীরা উঠতে নিলে বলল,

“রোববারে জায়িনের পাত্রী দেখতে যাব।”

কথাটা শুনে মীরা একমুহূর্তের জন্য ধমকে গেল। জায়িন ভাইয়ের পাত্রী দেখতে যাবে! মীরার চোখ জ্বালা করতে লাগল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

“জায়িন ভাই বিয়ে করবে!”

“ও তো না করছে। কিন্তু ওর বাবা মেয়ে পছন্দ করে রেখেছে। এখন দেখা যাক কী হয়।”

আঙ্কেল জায়িন ভাইয়ের জন্য মেয়েও পছন্দ করে ফেলেছে। এই কথাটা জায়িন তাকে জানায়নি! লুকিয়ে লুকিয়ে পাত্রীও দেখে আসবে। মীরাকে সে ভালোবাসে তারপরেও বাবার পছন্দ করা পাত্রী দেখতে যাবে? মীরা মনে মনে বলল,

“জায়িন ভাই আপনি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারলেন! আপনার বিয়ের কথা হচ্ছে তবুও আপনি আমাকে জানালেন না। আপনি কি সত্যিই আঙ্কেলের পছন্দ করা মেয়েটাকে বিয়ে করবেন! তাহলে আমার সাথে কেন ভালোবাসার নাটক করেছেন।”

বাড়ি ফিরে রুমে এসেই মীরা দরজা বন্ধ করে নিল। কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলল। জায়িন তাকে ঠকিয়েছে। তাকে ভালোবাসার কথা বলে এখন অন্য মেয়েকে বিয়ে করছে। দুপুরে খাবার সময় হলে তনি মীরাকে ডাকতে এলো। মীরা দরজা খুললো না। মাথা ব্যথার কথা বলে তনিকে পাঠিয়ে দিল। পুরোটা দুপুর মীরা বন্ধ ঘরে কাঁদল। কেঁদেকেটে চোখ ফুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। বিকালে বড়মা ডাকতে এলো। মীরা তখনও দরজা খুলতে না চাইলে বকা দিয়ে জোর করে দরজা খুলালো। মীরাকে দেখে বড়মা হতভম্ব হয়ে গেল। কী হয়েছে মেয়েটার!

“এই মীরা কী হয়েছে তোর? তোর চোখে কী হয়েছে? এমন লাল কেন? আর চোখমুখ এরকম ফুলেছে কীভাবে?”

বড়মাকে দেখেই মীরার কান্না পেয়ে গেল। বড়মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করল।

“বল না রে মা। কী হয়েছে তোর?”

“মাথা ব্যথা করছিল বড়মা। সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই কান্না করেছি।”

“মাথা ব্যথা করছিল তুই আমাকে ডাকিসনি কেন? একা একা ঘরে পড়ে কাঁদলে মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যাবে? ওঠ। আয় আমার সাথে ঔষধ দেই।”

মীরা বড়মাকে জড়িয়ে ধরে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলল। মীরার এরকম কাজে তিনি হতবাক। তিনি মীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

“কাঁদছিস কেন? এই পাগল মেয়ে। চল এক্ষুনি ডাক্তারের কাছে যাব। এত ঘনঘন মাথা ব্যথা হওয়া ভালো লক্ষণ না।”

“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বড়মা। আমি কী করব?”

মীরা কাউকে বলতে পারছে না। আবার সইতেও পারছে না। সে কীভাবে বড়মাকে বলবে যাকে সে ভালোবাসে সেই মানুষটা অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। মানুষটা তার সাথে কেন এমন করল?
সন্ধ্যা পর্যন্ত মীরার জ্বর এসে গেল। মূলত অতিরিক্ত কান্না করা থেকেই এই জ্বর। সবাই মীরাকে নিয়ে অস্থির হয়ে পড়ল। সুস্থসবল মেয়েটার হঠাৎ কেন মাথা ব্যথা করে জ্বর আসবে?
ছোট ফুপুরা সবাই মীরাকে দেখতে এলো। আবির এখানে এসে অবশ্য মীরার জ্বরের আসল কারণ বুঝতে পারল। ইভার মুখে সে জায়িনের মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথাটা শুনেছে। তার আর বুঝতে বাকি রইল না। আবির এটা ভেবে অবাক হলো, তার বোনটা জায়িনকে এতটাই ভালোবাসে যে, জায়িনের বিয়ের কথা শুনেই বিছানা ধরে ফেলল। মীরার এই অবস্থা দেখে স্বাভাবিক ভাবেই জায়িনের উপর রাগ হচ্ছে। মীরাকে কষ্ট দিলে জায়িনকে সে ছাড়বে না। যত ভালো বন্ধুই হোক জায়িনের বাপের নাম ভুলিয়ে দিবে।

….

মুবিন ফ্রিজ থেকে পানির বোতল নিয়ে রুমে যাবার সময় জায়িনের ঘরে আলো দেখে থামল। ভাই এখনও জেগে আছে? বেচারার ঘুমই বা আসবে কিকরে? ভালোবাসে একজনকে বাবা বিয়ে করাতে চাচ্ছে আরেকজনকে। মুবিন ভাইকে খোঁচা দেওয়ার লোভ সামলাতে পারল না। নিঃশ্বাস পায়ে জায়িনের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। একবার না দু’বার না, জায়িন অসংখ্য বার মীরাকে কল করেছে। কিন্তু মীরা কল তুলছে না। সকালেও তো কথা হয়েছে। হঠাৎ কী হলো মীরার? জায়িন আর ভাবতে পারছে না। ওদিকে বাবাকেও মীরার কথা কিছুই বলতে পারছে না। অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করা তো দূর দেখতেও যাবে না। কিন্তু এই কথাটা বাবাকে কীভাবে বলবে? টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে।

“কল তুলছো না কেন মীরা? সবাই মিলে আমাকে টেনশন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছ!”

মুবিন মিটমিট করে হাসছে। গলা ঝেড়ে শব্দ করে বলল,

“এখনও ঘুমাওনি? জেগে আছো কেন?”

জায়িন মুবিনের দিকে তাকাল। কপাল থেকে চিন্তার ভাঁজ মুছে সহজ ভাবে বলল,

“ঘুম আসছে না। তুই কী করছিস?”

“রুমে পানি ছিল না। এখান দিয়ে যাবার সময় দেখলাম তোমার রুমে আলো জ্বলছে।”

“ঘুম আসছিল না তাই জেগে আছি।”

“ওহ। কাউকে কল করছিলে নাকি?”

জায়িন হাতে ধরা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“না। এমনিতেই।”

“পরশু তাহলে মেয়ে দেখতে যাচ্ছ?”

মেয়ে দেখতে যাবার কথা শুনেই জায়িনের মুখ ছোট হয়ে গেল। মুবিন ভাইয়ের প্রতিটা আচরণ খুব ভালো ভাবেই লক্ষ করছে।

“আমি যেতে পারব না। কলেজের একটা প্রোগ্রামে ছেলেপুলেরা ডেকেছে। একসময় ওই কলেজ থেকেই পড়ে এসেছি। স্যারদের নিরাশ করতে পারলাম না। তুমি এক কাজ কোরো। আমাকে মেয়ে, স্যরি ভাবীর ছবি পাঠিয়ে দিও।”

“ভাবী ডাকছিস কেন? বিয়েটা কি হয়ে গেছে?”

“না হবার কোন সম্ভাবনা আছে নাকি? তোমার বাবার পছন্দ করা মেয়ে। তোমারও পছন্দ হয়েই যাবে।”

“হবে না। বিয়ে আমি আমার পছন্দের মেয়েকেই করব।”

কথাটা জায়িন রাগ থেকেই মুখ ফসকে বলে ফেলেছে। মুবিন তো এই কথাটাই শুনতে চেয়েছিল।

“আমিও এটাই ভেবেছিলাম যে, মীরাই আমার ভাবী হবে। কিন্তু তোমার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে না এটা আর সম্ভব হবে। এখনও কাউকে বলতেই পারলে না।”

মীরার নাম শুনে জায়িন চোখ বড়ো বড়ো করে মুবিনের দিকে তাকাল।

“তুইও জানিস?”

মুবিন কিছু না বলে হাসল। জায়িন বড় করে দম ফেলে বলল,

“সবাই জেনে বসে আছিস। শুধু আমিই জানি না তোরাও যে জানিস।”

“আমাদের জানা না জানা দিয়ে কিছু হবে না। তোমার বাবাকে জানানোটাই আসল কাজ। কবে জানাবে? নাকি সবসময়ের মতো এখনও বাধ্য ছেলে হয়ে বিয়ে করে ফেলবে।
তোমাকে নিয়ে অবশ্য আমার তেমন কোন আশা ভরসা নেই। শুধু মীরার জন্য কষ্ট হচ্ছে। বেচারি ভালোবাসার জন্য আর মানুষ পেল না।”
#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৭৩ [শেষ]

জায়িন যখন শুনেছে আবির এসেছে, তখন সে খুশি হয়ে নিজেই আবিরের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই আবির তার ক্যাবিনে চলে আসে। জায়িন জানত আবির কখনও তার উপর রাগ করে থাকতে পারবে না। এক দু’দিনের অভিমান ছিল। কিন্তু রাগ, উঁহু। জায়িন নিজের চেয়ার ছেড়ে বন্ধুর দিকে এগিয়ে গিয়ে দু-হাত মেলে হাসি মুখে ওকে জড়িয়ে ধরতে চাইল। কিন্তু তার আগেই আবির জায়িনের কলার ধরে ফেলল। আবিরের এমন আচরণে জায়িন হতবাক। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। আবির রাগী গলায় বলল,

“কী ভেবেছিস তুই? তোর যা খুশি তা করে যাবি তোকে কেউ কিছু বলবে না! অন্তত আমার বোনের সাথে অন্যায় করে তুই পার পেয়ে যাবি না। এটা তো মাথায় রাখা উচিত ছিল।”

“কী হয়েছে তোর? কী বলছিস এসব? মাথা ঠিক আছে তোর?”

“মাথা এখন খারাপ হবে। বন্ধু হয়েছিস বলে ছাড় পাবি ভাবিস না। চৌদ্দ গোষ্ঠীর নাম ভুলিয়ে দেব শালা তোর।”

“আবির পাগলামি পরে করিস। আগে বল কী হয়েছে? আমি কী করেছি?”

“কী করেছিস বুঝতে পারছিস না, না?”

“আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।”

জায়িনের সত্যকে লুকিয়ে যাওয়া দেখে আবির আরও রেগে গেল। সম্পর্কের কথা লুকিয়েছে ঠিক আছে। এখন তার সাথে মিথ্যাও বলছে। জায়িন কিছু বুঝে উঠার আগেই আবির ওর পেটে ঘুসি মারল। জায়িন ঘুসি খেয়ে বাঁকা হয়ে গেছে। দম আটকে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা হজম করে অবিশ্বাস্য চোখে আবিরের দিকে তাকাল।

“আগে তো কথা লুকাতি। এখন মিথ্যা বলাও শুরু করেছিস। আমার সাথে তেড়িবেড়ি চলবে না। মেরে মাথা থেকে ভূত নামিয়ে দেব।”

“ভাই তুই মার, কাট। যা খুশি কর। কিন্তু আগে আমার অপরাধ কী সেটা তো বলে নে।”

“প্রেম করার সময় আমার বোন। বিয়ে করার সময় বাপের পছন্দ করা মেয়ে! শালা তোর এমন অবস্থা করব যে বিয়ের নাম শুনলেই আতঙ্কে কেঁপে উঠবি। আমার বোন তোর জন্য কেঁদেকেটে অসুখ বাঁধিয়ে বিছানা ধরেছে। আর তুই মজা করে বিয়ে করতে যাবি? দরকার পড়লে তোকে গুম করে দেব। তবুও তোর বিয়ে অন্য মেয়ের সাথে হতে দিব না।”

আবিরের রাগের কারণ এবার বুঝতে পারল জায়িন। সে পেট থেকে হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। আবির এখনও ফুঁসছে। জায়িন বলল,

“এটাই কর ভাই। তবুও যেভাবে হোক আমার বিয়ে আটকা।”

জায়িনের কথা শুনে আবিরের ভ্রু কুঁচকে গেল।

“মানে?”

“মানে আমিও তোর বোনকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারব না। তার থেকে ভালো নিজেই গুম হয়ে যাই।”

আবির এখনও জায়িনের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু তার রাগ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে।

“তুই সত্যিই বিয়ে করতে চাস না?”

“মীরাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে বিয়ের কথা আমি ভাবতেও পারি না।”

“তাহলে কাল মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস কেন? তুই মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস এটুকু শুনেই মীরা খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।”

“মেয়েটাকে বাবা পছন্দ করেছে। আমি না।”

“তাহলে আঙ্কেলকে না করছিস না কেন তুই?”

“চেষ্টা করেছি। কিন্তু..

“চেষ্টা করেছি মানে কি? তুই মীরাকে পছন্দ করলে আঙ্কেলকে মীরার কথা জানাচ্ছিস না কেন? নাকি তুই মীরার সাথে শুধুমাত্র টাইম পাস করার জন্য…

“আবির প্লিজ। তুই অন্তত এই কথা বলিস না। আমি কেমন তা তোর থেকে ভালো কেউ জানবে না।”

“তাহলে আঙ্কেলকে বলতে বাধা কোথায় তোর?”

জায়িন উত্তরহীন ভাবে অনেকক্ষণ আবিরের দিকে তাকিয়ে রইল। আবির নিজেও বুঝতে পারছে না জায়িন তার থেকে কী লোকাচ্ছে। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে জায়িন নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল। আবিরও মুখোমুখি চেয়ারটায় বসল। নরম গলায় জিজ্ঞেস করল,

“কী লোকাচ্ছিস?”

“হু?”

“তুই সবটা বলছিস না। কিছু তো লোকাচ্ছিস? আঙ্কেলকে নিয়ে কোন সমস্যা? আঙ্কেল কি মীরাকে পছন্দ করে না?”

জায়িন বন্ধুর দিকে তাকিয়েই রইল। জবাব দিতে পারল না। ওকে নিশ্চুপ দেখে আবির রেগে বলল,

“বোবা লেগে আছিস কেন? তোকে আমাদের বাড়িতে যে হারে পছন্দ করে তাতে সম্বন্ধ নিয়ে গেলে নাচতে নাচতে তোর সাথে মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিবে। মামা মামীদের দিক থেকে সমস্যা না তাহলে। সমস্যা যদি থেকেই থাকে তাহলে সেটা তোর পরিবারের। আন্টি মীরাকে অপছন্দ করতে পারে না। তাহলে কি আঙ্কেল?”

জায়িন সামান্য একটু মাথা নাড়ল। আবির জায়িনের দিকে ঝুঁকে এসে বলল,

“আঙ্কেল আমাদের পরিবার পছন্দ করে না। ভাবীর বিয়ের সময়ই ক্যাঁচাল লাগাতে চেয়েছিল। তোর বাপের সমস্যা কী? মীরাকে কেন পছন্দ না উনার?”

আবির কথা শেষ করার আগেই তার ফোন বেজে উঠল। ফোনে আবির কী শুনলো জায়িন জানে না। কিন্তু আবির এক মুহূর্তও দেরি না করে সাথে সাথে উঠে চলে গেছে। কিন্তু জায়িন কপাল চেপে ধরে সে অবস্থাতেই বসে রইল। মীরাকে বাবার পছন্দ না করার কারণ জায়িন জানে। সে চাইলেই বাবাকে জানিয়ে দিতে পারে, বাবার পছন্দ করা মেয়ে সে বিয়ে করবে না। সে মীরাকে বিয়ে করবে। কিন্তু জায়িন এটা করতে গিয়েও একটা জায়গায় থেমে যায়।

(অতীত…)
জায়িন একটু পরপর চোখ খুলে মাথা উঁচিয়ে দেখছে মা ঘুমিয়ে পড়েছে কি-না। মা ঘুমিয়ে পড়লে সে বাইরে খেলতে যাবে। মুবিন মা’কে জড়িয়ে ধরে মুখ হা করে ঘুমাচ্ছে। জায়িন শেষবার মিটমিট করে চোখ খুলে মা’কে দেখে নিল। বেশি নড়াচড়া না করে নিঃশব্দে উঠার চেষ্টা করছিল। এমন সময় পাশের ঘরে কিছু একটা শব্দ পেল। ওই ঘরে তো বাবা আছে। জায়িন আবার ঘাপটি মেরে শুয়ে পড়ল। স্কুল থেকে ফিরে দুপুরের এই সময়টা তাকে ঘুমাতে হয়। আজ বাবাও বাড়িতে আছে। তাই মা’র কথা অমান্য করে খেলতে যাওয়ার সাহস হয়নি। পাশের ঘর থেকে আর শব্দে পাওয়া যাচ্ছে না। জায়িন ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার আগে বাবার ঘরে উঁকি দিল। বাবা বিছানার উপর চেয়ার তুলে সেটার উপর দাঁড়িয়ে ফ্যানের সাথে মা’র শাড়ি বাঁধছে। জায়িন তখন এতটাও ছোট না যে, এই দৃশ্য দেখে বাবা কী করতে যাচ্ছে বুঝতে পারবে না। আবার এতটা বড়ও না যে এটা বুঝতে পারবে এই পরিস্থিতিতে তার কী করা উচিত। জামান হোসেন জীবনের কাছে হেরে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্ত্রীর স্বর্ণ গহনা বিক্রি করে জমানো কিছু টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল। কিন্তু তিনি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলেন। যাদের বন্ধু ভেবে বিশ্বাস করেছিল, তারাই তাকে নিঃস্ব করে পথে বসিয়ে দিয়েছে। ধারদেনায় গলা পর্যন্ত ডুবে আছে। তিনি জানেন না কাল সন্তানদের মুখে খাবার কোত্থেকে তুলে দিবেন। চোখের সামনে অন্ধকার দেখছেন তিনি। তার মতো মানুষের মরে যাওয়াই উচিত। সুমনা বারণ করেছিল, তোমার বন্ধুদের আমার সুবিধার মনে হয় না। চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস করো না। তিনি তা-ই করেছেন। এখন স্ত্রীর সাথেও চোখ মেলাতে পারছেন না। জামান হোসেন চোখ বন্ধ করে মনে মনে দুই ছেলের কাছে ক্ষমা চাইল। তিনি পায়ের তলা থেকে চেয়ার ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার আগেই জায়িন ঘরে ঢুকে পড়ল। জামান হোসেন ছেলেকে দেখে থমকে গেলেন। জায়িন বোকার মতো বাবাকে দেখছে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলছে,

“বাবা, তুমি কী করছো বাবা?”

জামান হোসেন ছেলের নিস্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। হু হু করে কেঁদে ফেললেন। বাবাকে কাঁদতে দেখে জায়িনের চোখ দিয়েও পানি পড়তে লাগল। সে ধরা গলায় আবার বলল,

“তুমি কী করছো বাবা? আমি তোমার কথা শুনি না বলে তুমি রাগ করেছ? আমি দুপুর বেলা আর খেলতে যাব না। মুবিনকেও আর মারব না। আর দুষ্টুমি করব না। তোমার সব কথা শুনব।”

জামান হোসেন চেয়ার থেকে নেমে ছেলেকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন। জায়িন তখনও ভয়ে কাঁপছে।

“তুমি যা বলবে আমি তা-ই করব। তোমার সব কথা শুনব। তোমাকে একটুও বিরক্ত করব না। প্রমিজ বাবা। আমি ভালো ছেলে হয়ে যাব।”

জামান হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

“আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস বাবা। আমি কী করতে যাচ্ছিলাম এটা! এই স্বার্থপর দুনিয়ায় তোকে একা রেখে কীভাবে নিজের মুক্তির কথা ভাবছিলাম? আমি তোর জন্য বাঁচব বাবা। তোদের জন্য লড়াই করে যাব। আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস। তোর বাবা বেঁচে থাকতে কখনও তোদের কোনকিছুর অভাব বোধ করতে দেব না।”

(বর্তমান…)

জায়িন দু-হাতে মুখ ঢেকে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। বাবার কথা সে অমান্য করতে পারবে না। মানুষটা তার জন্যই বেঁচে আছে। সে কীভাবে এই মানুষটাকে কষ্ট দিবে? মীরাকে ভালোবাসা থেকে নিজেকে কতভাবেই তো আটকাতে চেয়েছে। কিন্তু তারপরও কেন ভালোবেসে ফেলল।

“কেন, কেন? বাবাকে আমি কষ্ট দিতে পারব না। মীরাকে কষ্ট দেওয়ার কথা আমি ভাবতেও পারি না। আমি কী করব? এখন কী করব আমি?”

….

মীরার জ্বর এতটাই বেড়েছে যে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। চিন্তায় চিন্তায় সবাই অস্থির হয়ে পড়েছে। হুট করে মেয়েটার কী হয়ে গেল? পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রাখা মেয়েটা একটা গোটা দিন ধরে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। ছোটবেলা থেকে মীরার এত বড় অসুখ কখনও হয়নি। তাই সবাই আরও বেশি চিন্তা করছে।
আবির মামা মামীদের কষ্ট পেতে দেখে মনে মনে বলছে,

“তোমাদের মেয়ের এই অবস্থার জন্য যে দায়ী তাকে আমি ছাড়ব না মামী। আমার বোনটা তোর জন্য কষ্ট পেলে তোকেও আমি ভালো থাকতে দেব না।”

জায়িন মীরার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু সে মীরাকে কল করতে পারছে না। মীরার সামনে কীভাবে দাঁড়াবে সে? মীরাকে কী বলবে?
জায়িন বাড়ি ফিরেও শান্তি পাচ্ছে না। ভীষণ অস্বস্তি লাগছে তার। রুমের ভেতর দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাই সে খোলা হাওয়ার জন্য ছাঁদে চলে গেল। জায়িন সিগারেট খায় না। অভ্যাস নেই। কিন্তু আজ সন্ধ্যার পর থেকে কয়েকটা সিগারেট শেষ করে ফেলেছে। তবুও তার অস্থিরতা কমছে না। ছাঁদে অনেকটা সময় কাটিয়ে জায়িন নেমে এলো। রুমে যাওয়ার পথে বাবার সাথে দেখা হয়ে গেল। জামান হোসেন এই সময় ছেলেকে বাইরে থেকে আসতে দেখে বললেন,

“কোথাও গিয়েছিলে?”

“ছাদে ছিলাম।”

“ওহ।”

জামান হোসেন ছেলেকে দেখছেন। কয়েকদিন ধরেই ছেলের আচরণ তিনি লক্ষ করছিলেন।

“হসপিটালে কিছু হয়েছে?”

“না তো। কেন জিজ্ঞেস করছো?”

“না। তুমি যেন কেমন অস্থির থাকো। তাই ভাবলাম।”

বাবা ঠিকই তার অস্থিরতা ধরতে পেরেছে। বাবাকে কি সে বলে দিবে? আজ না বলতে পারলে আর কখনও বলা হবে না।

“জায়িন, তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?”

জায়িন মাথা নাড়ল। জামান হোসেন তীক্ষ্ণ চোখে ছেলেকে লক্ষ করছেন।

“হাঁটতে যাবে?”

জায়িন বাবার পাশাপাশি হাঁটছে। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না বাবাকে কীভাবে বলবে।

“হসপিটালে সবকিছু কেমন চলছে?”

“ভালো।”

“কাল আমরা যাচ্ছি তাহলে?”

“হু? বাবা আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।”

“হ্যাঁ বলো।”

জায়িন দাঁড়িয়ে পড়ল। তার অস্থির লাগছে। বাবা কথাটা শুনে কী বলবে? বাবা যদি তার উপর রেগে যায়। যদি রাজি না হয়। জামান হোসেন ছেলের কাঁধে হাত রেখে মৃদু হেসে বললেন,

“এই মুহূর্তে তুমি আমাকে বন্ধু মনে করতে পারো।”

“আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।”

“শুধুই পছন্দ?”

“না। ভালোবাসি।”

“কতটুকু?”

“কতটুকু জানি না। কিন্তু আমার মনে হয় ওকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারব না।”

“তুমি কি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাও?”

“হুম।”

“এখন কি আমার থেকে অনুমতি চাইছো?”

“হ্যাঁ।”

“যদি আমি না করি? বলি মেয়েটাকে তুমি ভুলে যাও।”

“হয়তো কখনও ভুলতে পারব না। কিন্তু আমি তোমার অবাধ্যও হবো না।”

….

জায়িন বাবাকে বলে দিয়েছে। কিন্তু বাবা তাকে কিছুই বলেনি। এমনকি মেয়েটা কে এটাও জিজ্ঞেস করেনি। মুবিন এসে তাকে রেডি হতে তাগাদা দিয়ে গেল। আজ শুধু দেখাদেখি পর্বই হবে না। বিয়েও ঠিক করে ফেলা হবে। জায়িন বুঝতে পারছে না সে কী করবে। মীরার কথা মনে পড়ে বুকের ভেতরটা ভেঙেচুরে যাচ্ছে। জামান হোসেন নিজে তৈরি হয়ে ছেলেদের ডাকলেন।

“কোথায় তোমরা? আর কতক্ষণ লাগবে? তাড়াতাড়ি এসো।”

মুবিন বেরিয়ে পড়েছে। বাবাকে দেখে বলল,

“আমি ভাইয়াকে নিয়ে আসছি।”

“তাড়াতাড়ি করো।”

মুবিন জায়িনের রুমে গিয়ে দেখে জায়িন এখনও তৈরি হয়নি। জানালার সামনে উদাস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।

“আরে ভাই, তুমি এখনও তৈরি হওনি? ভাবী তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। বেচারিকে অপেক্ষা করানো কি ঠিক হবে? তাড়াতাড়ি চলো।”

“আমি যাব না।”

“যাবে না মানে? তোমার বাপ যাচ্ছে। তুমি যাবে না কেন?”

“মুবিন বিরক্ত করিস না। আমার ভালো লাগছে না।”

“ভাবীকে দেখলেই সব ভালো না লাগা দূর হয়ে যাবে। এভাবেই চলো তুমি। রেডি হতে হবে না। বাবা দাঁড়িয়ে আছে।”

গাড়িতে বসে জায়িন অসহায় চোখে বাবার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু বাবা একবারও তার দিকে দেখছে না। জায়িন গাড়ি থেকে নেমে অবাক হলো। এটা তো হসপিটাল। তারা এখানে কেন এসেছে? জামান হোসেন ছেলের পাশে এসে বললেন,

“এখানে একটা জরুরি কাজ আছে। চলো।”

হসপিটালে কী কাজ থাকতে পারে? জায়িন ভেবে পেল না। তার এতকিছু ভাবতে ইচ্ছেও করছে না। মীরার কাছে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
জায়িনের জন্য এই ধাক্কাটা সামলানো সহজ ছিল না। বাবা মীরাকে দেখতে এসেছে! মীরা হসপিটালে এটা সে জানতোই না। মীরাদের পরিবারের লোক জায়িনদের এখানে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই আশ্চর্য হলো। জামান হোসেন মীরার সামনে এসে দাঁড়ালেন। হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন,

“কেমন আছো তুমি?”

মীরা জায়িনের থেকে চোখ ফিরিয়ে এনে দূর্বল গলায় বলল,

“ভালো। আপনি কেমন আছেন আঙ্কেল?”

“আমার ছেলে ভালো নেই। ও ভালো না থাকলে আমিও ভালো থাকি না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমরা দু’জনই ভালো হয়ে যাব।”

জামান হোসেনের কথা কেউ বুঝতে পারছেন না। মীরার বাবা বললেন,

“ভাই সাহেব আপনি বসুন।”

“আজ তো আমি বসতে আসিনি ভাই সাহেব। আজ আমি একটা চাওয়া নিয়ে এসেছি।”

“চাওয়া?”

“হ্যাঁ। আপনার মেয়েটাকে আমার চাই। ওকে আমি আমার ছেলের বউ রুপে আমার মেয়ে করে নিতে চাই। আমার এই চাওয়াটা রাখলে তবেই আমি বসবো।”

জায়িন ঝট করে বাবার দিকে তাকাল। তার বিশ্বাস হচ্ছে না। বাবা সত্যিই মীরাকে তার জন্য চাচ্ছে! তার মানে বাবা আগে থেকেই জানত সে মীরাকে পছন্দ করে। বায়েজিদ সাহেব একটু থতমত খেয়ে গেলেন। কারণ হাসপাতালে কেউ বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসেন তার জানা ছিল না। মাহিমা দু’পা পেছনে গিয়ে মুবিনের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

“হাসপাতালেও বিয়ের কথা হয়?”

“ডাক্তারের বিয়ের কথা হচ্ছে। আমার তো মনে হয় ডাক্তার রোগীর বিয়েটাও হাসপাতালেই হওয়া উচিত।”

বায়েজিদ সাহেব কিছু বলছেন না দেখে জামান হোসেন বললেন,

“আমার ছেলে আপনাদের পছন্দ না-ও হতে পারে। কিন্তু আপনার মেয়েকে আমার পছন্দ হয়েছে। এখন আপনি না চাইলেও আপনার মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাব। আপনি বাধা দিতে পারবেন না। মীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেই আমি বরযাত্রী নিয়ে আপনাদের বাড়িতে যাব।”

এখানে যা হচ্ছে জায়িন নিজের চোখে দেখে, নিজের কানে শুনেও বিশ্বাস করতে পারছে না। বাবা এভাবে তাকে সারপ্রাইজ দিবে জায়িন কল্পনাও করেনি। কিন্তু মীরা জায়িনের উপর রাগ করেছে। তাই সে বলল,

“কিন্তু আঙ্কেল, আমি আপনার ছেলেকে বিয়ে করব না।”

জামান হোসেন চিন্তিত মুখে বললেন,

“কেন মা? আমার ছেলেটাকে কি তোমার পছন্দ না? জীবনের প্রথম আমার ছেলে আমার কাছে কিছু চেয়েছে। ও আমার কাছে তোমাকে চেয়েছে। ওর এই চাওয়াটা আমি অপূর্ণ রাখতে পারব না। তুমি রাজি হয়ে যাও মা। আমার ছেলে তোমাকে অনেক ভালো রাখবে।”

“উঁহু। আপনার ছেলে আমাকে কীভাবে ভালো রাখবে? আপনি জানেন উনি আমাকে পছন্দ করেন। তবুও আপনার কথাতে উনি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গিয়েছিল। আপনি রাজি না হলে উনি আমাকে ভুলে যেত। এমন একটা মানুষকে আমি কেন বিয়ে করব? আপনি বললে তো বিয়ের পরও উনি আমাকে ছেড়ে দিবেন।”

“কে বলেছে? এই জায়িন, এদিকে আয়। তুই নাকি আমার কথাতে মীরাকে ভুলে যেতে চেয়েছিলি? এত বড় সাহস তোর! আজ থেকে তুমি আমার কোন কথা শুনবি না। আমার বৌমা যা বলবে তা-ই শুনবি। মনে থাকবে?”

জায়িন বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

“তুমি যা বলবে।”

জামান হোসেন চোখ পাকিয়ে বললেন,

“কী বললি?”

জায়িন তার ভুল ঠিক করে নিয়ে বলল,

“তোমার বৌমা যা বলবে।”

সমাপ্ত
চলবে
(এডিট ছাড়া পর্ব। ভুলত্রুটি সহই পড়ে নিয়েন🌚 আগামী পর্বে গল্প শেষ হবে। আপনাদের কাছে যদি মনে হয় এখনও কোন বিষয় ক্লিয়ার করা হয়নি তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here