#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৩৯
মীরা নিজেই মাহিমার ফোন নিয়ে মুবিনকে আন ব্লক করে দিলো। মীরা মেসেজ পাঠাতে চাইলেও মাহিমা তা করতে না দিয়ে জোর করে ফোন কেড়ে নিলো।
“ফোন কেড়ে নিলি কেন? এখন তো তুইও মেনে গেছিস। তাহলে মেসেজে আইলাভু লিখে দে।”
“তোর লজ্জা না থাকতে পারে। কিন্তু আমার লজ্জা আছে। মেয়ে হয়ে হ্যাংলার মতো আমি আগে আই লাভ ইউ বলে দিই!”
“ওমা, তুমি কি চাও মুবিন ভাই হাঁটু গেঁড়ে বসে হাজারটা লাল গোলাপ দিয়ে তোমাকে প্রেম নিবেদন করুক? তবেই তুমি রাজি হবে?”
“করলে মন্দ হয় না।”
“এহহ মাইয়ার শখ কত!”
ফুপু খাওয়ার জন্য ডাকছে। মীরা মাহিমা এতক্ষণ আসি আসি করলেও এখনও খাবার টেবিলে যায়নি দেখে ফুপুই চলে এসেছে।
“ঘরে বসে ডিমে তা দিচ্ছিস? আর একবার ডাকতে হলে কপালে খাবারের বদলি লাঠি আছে।”
ফুপির সাথে কোন বিশ্বাস নেই। ছোট ফুপি ভালোর ভালো খারাপের খারাপ। রাগ উঠলে সত্যি সত্যিই লাঠি নিয়ে মারতে শুরু করবে। ওরা খেয়ে এসে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে। শুয়ে শুয়েও দু’জন কুটকুট করে আলাপ করছে। আলাপের একফাঁকে মাহিমা মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল,
“আমার তো জায়িন ভাইকেও ভালো লাগতো। কত হ্যান্ডসাম। উনার ভাইয়ের সাথে প্রেম করলে বয়ফ্রেন্ডের বড়ো ভাইয়ের দিকে কি আর এসব নজরে তাকানো যাবে? পাপ লাগবে না? কিন্তু এত্ত হ্যান্ডসাম একটা ছেলেকে ভাসুর বানাতেও মন সাই দিচ্ছে না। মুবিন ভাইয়ের আগে জায়িন ভাই প্রপোজ করলে আমি খুশি খুশি রাজি হয়ে যেতাম রে মীরা। জায়িন ভাই চান্স মিস করলো। মুবিন ভাই ছোট হয়েও এই ব্যাপারে বড়ো ভাইকে পেছনে ফেলে নিজে এগিয়ে গেছে।”
লুচ্চি কইতরির মুখে এসব কথা শুনে মীরা অন্ধকারেই মাহিমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
“লুচির বাচ্চা দাঁড়া তুই। তোর চরিত্র আমি ওয়াশিং মেশিনে ফেলে পরিষ্কার করে দিব।”
মাহিমা এই হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে চেঁচিয়ে বলল,
“মীরা কী করছিস? পাগল হয়ে গেছিস? এই পাগলের বাচ্চা, মারছিস কেন? দাঁড়া, আমিও তোকে ছেড়ে দিব না। তুই দশটা মারলে আমি দুইটা তো মারতে পারব।”
অন্ধকারে দু’জন বালিশ নিয়ে মারামারি লেগে গেল। দু’জন দু’জনকে বালিশ দিয়ে উথালপাতাল বাড়ি দিচ্ছে।
“মুবিন ভাইয়ের মতো একটা ভালো মানুষের তুলনা কোন সাহসে ওর বজ্জাত ভাইটার সাথে করিস তুই? এই অধিকার তোকে কে দিয়েছে? কিয়ের সাথে কী মিলিয়ে পান্তা ভাতে কেন ঘি ঢালবি?”
….
কইতরি , মুবিন ভাইয়ের প্রেমটা হয়েই গেল। মীরা নিজে করিয়ে দিয়েছে। এখন বেচারি পস্তাচ্ছে। বেস্ট ফ্রেন্ড ততক্ষণই বেস্ট ফ্রেন্ড থাকে যতক্ষণ সে সিঙ্গেল থাকে। মাহিমা এখন দিনের বেশিরভাগ সময়ই মুবিন ভাইয়ের সাথে কুটুর কুটুর আলাপ করে কাটায়। মীরা অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখে যায়। তার তো এমন কেউ নেই। সে কার সাথে কথা বলবে? মীরা বিরক্তি নিয়ে মাহিমার দিকে তাকাল,
” এবার ফোনটা রাখবি প্লিজ? আর কত কথা বলিস?”
“একটু দাঁড়া প্লিজ। না, না আপনাকে বলছি না। মীরাকে বলেছি। হ্যাঁ। পরীক্ষা তো ভালোই হচ্ছে।”
মীরা হতাশ হয়ে মাহিমাকে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তার বয়ফ্রেন্ড নেই। আজ থেকে বোন বান্ধবী কিচ্ছু নেই। এই দুনিয়ায় একা এসেছে একা যাবে।
মীরাদের পরীক্ষা চলছে। তিনটা পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছে। রোজই মুবিন ভাইয়ের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। কিন্তু জায়িন ভাই বাড়ি নেই। সেবারের পর জায়িন ভাই এখনও বাড়ি আসেনি। মীরা কি আজকাল জায়িন ভাইকে নিয়ে খুব বেশি ভাবছে? ছাতা থেকেও জায়িন ভাই মিথ্যা কেন বললো? শুধু শুধু তাকে আটকে রেখে লাভ কি? জায়িন ভাই তো বরং তার উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়। এই হিসেবটাই মীরা মিলাতে পারছে না। জায়িন ভাইয়ের অনেকগুলো আচরণ তার কাছে অদ্ভুত ঠেকছে।
মাহিমার কেমিস্ট্রি পরীক্ষা ভালো হয়নি। হল থেকে বেরিয়েই তার মন খারাপ। মীরা সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে বেচারিকে কথা শোনাচ্ছে।
“আরও পরীক্ষার আগের রাতে বয়ফ্রেন্ডের সাথে গুটুরগুটুর আলাপ করো। তাহলেই পরীক্ষা ভালো হবে। তোদের দুইটার লাইন করিয়ে দেওয়াই আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল।”
মাহিমা মীরাকে কিছু না বলে মুখ কালো করে বাড়ি ফিরলো। মুবিন ভাই কত ভালো ছাত্র। তার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে শুনলে নিশ্চয় বলবে, গাধা একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছি। এটা ভেবে মাহিমা মুবিনের কল না তুলে বিকেলে ঘুম দিলো।
ওদিকে মুবিন মাহিমাকে কলে না পেয়ে মীরার ফোনে কল দিতে দিতে ফোন হ্যাং করিয়ে দিচ্ছে। মীরা রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে বলল,
“মুবিন ভাই আপনার সমস্যা কি? আমার নতুন ফোন হ্যাং করিয়ে দিচ্ছেন। চাইছেনটা কি?”
“তোমার বোন আমার কল তুলছে না কী করব বলো?”
“আপনাকে কিন্তু আগে আমি মোটেও এরকম ভাবতাম না। আপনার নতুন নতুন রুপ দেখে আমিও অবাক। আপনি এরকম নিব্বা আগে জানতাম না।”
“তুমিও কাউকে ভালোবাসো, তখনই আমার পরিস্থিতি বুঝবে। তার আগে বুঝবে না।”
“থাক ভাই। আমাকে সুখে থাকতে ভূতে কিলায় না।”
“ভালোবাসা কিন্তু বাছবিচার করে হয়না গার্লফ্রেন্ডের বোন। যেদিন হয়ে যাবে সেদিন বুঝবে। আমি কিন্তু তোমার মতো না। আমার সাহায্য সবসময় তোমার জন্য তোলা থাকবে।”
“ওহ-হো, আপনি আমার মতো না! আমার জন্যই এতদূর এগোতে পেরেছেন। নয়তো এখনও ভালোবাসার সমুদ্রের কিনারে পড়ে খাবি খেতেন।”
মুবিন হাসল। বলল,
“আচ্ছা এখন বলো মাহিমার কী হয়েছে?”
“তেমন কিছুই হয়নি। আজকের পরীক্ষাটা একটু খারাপ হয়েছে। আপনি জানলে বলবেন, গার্লফ্রেন্ডের মাথায় গোবর তাই হয়তো কল তুলছে না।”
মাহিমা এরকম একটা সামান্য কারণে তার কল তুলছে না! একটা পরীক্ষা নাহয় একটু খারাপ হয়েছে। তাই বলে মাহিমা মন খারাপ করে তার কল তুলবে না! গার্লফ্রেন্ডের মন খারাপ। মুবিনকে তো কিছু করতেই হবে। সে এক মুহূর্তও দেরি করলো না। তাৎক্ষণাৎ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো।
মাহিমার ঘুম ভাঙলে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো মুবিনের বাষট্টিটা মিসড কল এসেছে।
“এইরে, ব্যাটা পুরো পাগল হয়ে গেছে মনে হয়।”
মাহিমা হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। আর তক্ষুনি ফোনটা আবার বেজে উঠল। মাহিমা দেরি না করে ঝটপট কর রিসিভ করলে মুবিন বলল,
“একটু বাইরে আসতে পারবে?”
কথাটা শুনে মাহিমা অবাক হয়ে বলল,
“আপনি কোথায়?”
“তোমাদের বাসার পেছনের রাস্তায়। আসবে একটু?”
“আপনি কেন এসেছেন? কেউ দেখে ফেললে! আপনি কি পাগল? ”
“হুম। এবার একটু আসো।”
মাহিমা দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে মুখে পানি দিয়ে ফিরে এলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোনরকমে চুলটা ঠিক করে ওড়না নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো। বিকেলের আলো মরে এসে সন্ধ্যা নেমে গেছে। চারিদিকে মাগরিবের আজান হচ্ছে। মুবিনকে দেখেই তার হার্টবিট দ্রুত হতে লাগল। মানুষের চোখে পড়ে যাওয়ার ভয়ের সাথে সাথে সামনাসামনি মানুষটার সাথে কথা বলতেও নার্ভাস লাগছে। মুবিন মাহিমাকে দেখে হাসলো। মাহিমা সরাসরি মুবিনের চোখে তাকাতে পারল না। সে চোখ নামিয়ে মৃদু গলায় বলল,
“কেন এসেছেন?”
“তোমাকে দেখতে। ”
সহজ স্বীকারোক্তি। মাহিমা গালে রঙ ছুঁইয়ে দিলো যেন কেউ। সে লজ্জায় দৃষ্টি নত করে দাঁড়িয়ে রইল। মুবিন পেছন থেকে হাত বের করে মাহিমার সামনে অনেকগুলো গোলাপ ও একটা চকলেটের বক্স ধরলো।
“এগুলো তোমার জন্য।”
মানুষটার থেকে পাওয়া প্রথম উপহার। মাহিমা মনে মনে খুশিতে বাক-বাকুম করতে লাগলো। হায়! মানুষটা তার মন ভালো করার জন্য এসব করছে! ইশশ, কী রোমান্টিক!
“তোমার যতবার মন খারাপ হবে, আমি এভাবেই তোমার মন ভালো করার চেষ্টা করব।”
মাহিমা মুখ ফসকে বলে ফেলল,
“তাহলে বছরের তিনশো পঁয়ষট্টি দিনই আমার মন খারাপ থাকবে।”
মাহিমার কথা শুনে মুবিন হাসতে হাসতে বলল,
“তাহলে আমিও তিনশো পঁয়ষট্টি দিনই চেষ্টা চালিয়ে যাব।”
“বিরক্ত হয়ে যাবেন না তো?”
“কোনদিনও না।”
“ভেবে বলছেন তো?”
“এখন আর ভাবাভাবির কিছু নেই। ওই সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।”
…
মুবিন চলে যাওয়ার পর মাহিমা রুমে এসেই মীরাকে গোলাপ আর চকলেটের পিক সেন্ড করলো। মীরা অসহায় বাচ্চা এসব দেখে আফসোস করা ছাড়া আর কি-ই বা করতে পারবে। হায়, কইতরিটার কপাল! আর তার ফোটা কপাল। গোলাপ তো দূর গোলাপের পাতা দেওয়ার মতোও কেউ নেই। চকলেট তো দূর কারো থেকে আজ পর্যন্ত চকলেটের কাগজও পায়নি।
মীরা মনের দুঃখে চকলেট আর গোলাপের পিক নিয়ে ফেসবুক স্টোরি দিল,
“আজ নিজের একটা ব্যক্তিগত বেডা নেই বলে, বান্ধবীর বেডার ঢঙ দেখি। এই অসহায়ের কপালে গোলাপের কাটাও লেখা নাই। সাথে অনেকগুলো সেন্টি ইমোজি।”
স্টোরি দিয়ে মীরা ফোন রেখে পড়তে বসে গেছে। এর মাঝে তনি আপু মাহাকে কোলে নিয়ে এসে কতক্ষণ বিরক্ত করেছে। ইভা এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে জোর করে খাইয়ে দিয়ে গেছে। দশটার দিকে মীরা খেতে নিচে এসেছে।
“ও বড়মা, তাড়াতাড়ি খেতে দাও।”
“তাড়াহুড়ো না করে চুপচাপ বোস।”
তক্ষুনি কলিংবেল বাজলে মীরা ভাবল, হয়তো আবির ভাই নয় ইভান ভাই এসেছে। সে উঠতে নিলে তনি বলল,
“তুই বোস। আমি যাচ্ছি।”
তনি দরজা খুলতে চলে গেল। কিন্তু দরজা খুলে সম্পূর্ণ অচেনা একটা ছেলেকে দেখে জিজ্ঞেস করল,
“কাকে চাই?”
“মিস মীরা আছেন?”
তনির কপালে ভাঁজ পড়ে দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো। ছেলেটার হাতে অনেক গুলো লাল গোলাপ।
“কেন?”
“উনার জন্য গিফট এসেছে।”
চলবে#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৪০
“কে পাঠিয়েছে।”
“তা তো বলতে পারব না আপু। উনি নিজের পরিচয় দিতে বারণ করেছেন।”
“তাহলে গিফট ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে উনাকেই রাখতে বলুন।”
“আপনি কি মীরা?”
“ওর যমজ বোন হলে আপনার কোন সমস্যা?”
“আপু প্লিজ আপনি উনাকে ডাকুন।”
“কে গিফট পাঠিয়েছে আপনি আগে তার নাম বলুন। অচেনা অজানা ব্যক্তির থেকে আমার বোন গিফট নেয় না। আপনি আসতে পারেন।”
“প্লিজ আপু।”
“প্লিজ ভাই। আপনি এবার যান তো।”
তনি আপুর এত দেরি হচ্ছে কেন? মীরা ঘাড় বাঁকিয়ে উঁকি দিল। তনিকে দেখা যাচ্ছে কারো সাথে কথা বলছে। কে এসেছে? মীরা নিজেই দেখতে এলো।
“কে তনি আপু? কার সাথে কথা বলো?”
“দেখ না পাগল একটা ছেলে মাথা খারাপ করে ফেলছে।”
তনি ছেলেটার সামনেই ওকে পাগল বলেছে। ছেলেটা চোখ বড়ো বড়ো করে তনির দিকে তাকালো। মীরা এসে ছেলেটার হাতে এতগুলো গোলাপ দেখেই কৌতূহলী হয়ে পড়ল,
“এত্ত গুলো গোলাপ! তোমার জন্য? কে পাঠিয়েছে? ওয়াও।”
তনি গাধীটার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তোর জন্য এসেছে।”
মীরার গলার স্বর একধাপ উঁচু হয়ে গেল,
“আমার জন্য! ওয়াও। ভাই, কে দিয়েছেন এগুলো? কতগুলো গোলাপ! জীবনের প্রথম কেউ আমাকে গোলাপ দিলো। তাও এতগুলো!”
তনি মীরার হাত চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে শাসন করল। কিন্তু মীরা এতগুলো গোলাপ দেখেই পাগল হয়ে গেছে। তনি মনে মনে ভাবল, এই মেয়ে কি গাধা?
“দিন, দিন। কতগুলো গোলাপ! যে পাঠিয়েছে তাকে আমার হয়ে ধন্যবাদ দিয়ে দিয়েন কেমন।”
“আপু একটা বক্সও আছে।”
“বক্স! কিসের বক্স? ওটাও আমার জন্য? কে পাঠিয়েছে এতকিছু! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”
তনি মীরার দিকে কটকট করে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
“গাধার বাচ্চা, তুই কি পাগল?”
তনির ধমক, চোখ রাঙানো কোনটাই মীরার গায়ে লাগছে না। কইতরি পেয়েছে পাঁচ দশটা গোলাপ। সে পেয়েছে একশোটার মতো। এখানে একশোটা গোলাপ নিশ্চয় হবে। দু’চারটা কম হলেও সমস্যা নেই। মীরা এবার কইতরিকে জ্বালাবে। এক্ষুনি গিয়ে স্টোরি দিবে। বান্ধবীদের ট্যাগ করে পোস্ট দিবে।
“পাগলের ঘরের পাগল! এগুলো কে পাঠিয়েছে তুই জানিস? চেনা নাই, জানা নাই কেউ গোলাপ পাঠাল আর তুই নিয়ে নিলি?”
“তাতে কি? যার ইচ্ছে হয়েছে পাঠিয়েছে। আমি কি কারো থেকে হাত পেতে নিয়েছি?”
“তুই একটা পাগল।”
“তোমার হিংসে হচ্ছে তাই না? ঠিক আছে। এখান থেকে দশটা গোলাপ তোমাকে দিয়ে দেব।”
“তোর গোলাপ দিয়ে তুই শাক রান্না করে খা। আমার দরকার নেই। পাগলের ছাও। যেকেউ কিছু দিলেই তুই নিয়ে নিবি? আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই?”
“গিফট নেওয়ায় আত্মসম্মান থাকবে না কেন আপু? তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”
তনি ব্যাঙ্গ করে বলল,
“ওহ-হো, অপমান বুঝো তুমি?”
মীরা মুখ মোচড়াল। আচ্ছা যে-ই দিয়েছে তাকে কি মীরা কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে জোর করেছে? নিজের ইচ্ছেতে দিয়েছে। এতে তার দোষ কি?
কে দিয়েছে তা না জেনে গিফট নেওয়ায় বাড়ির সবাই মীরার ক্লাস লাগাচ্ছে। বড়মা, ছোট চাচী সবাই বকাঝকা করছে। তনি এর মাঝে আবিরকেও জানিয়ে দিয়েছে।
“কতগুলো গোলাপ? একশোর মতো! বাপরে, বলিস কি? যে-ই পাঠিয়েছে ব্যাটা মালদার পার্টি। বক্সটা মীরাকে খুলতে দিস না। ভেতরে বোম টোম থাকতে পারে। আমি এসে তারপরে খুলবো।”
আবিরও বিষয়টা হেলায় ফেলায় নিচ্ছে দেখে তনির রাগ হলো।
“তুমি মজা করছো? কে পাঠিয়েছে, কেন পাঠিয়েছে…
” তনি আমি আসছি। বাইক চালাচ্ছি। ফোনটা রাখ প্লিজ। আমি অ্যাক্সিডেন্ট করে মরে গেলে তুই বিয়ের আগেই বিধবা হবি।”
ইভান এসে পুরোটা ব্যাপার শুনে গম্ভীর হয়ে গেল। আবির এখনও এসব মজা হিসেবেই নিচ্ছে। সবাই মীরাকে ঘিরে এমনভাবে মুখ ভার করে বসেছে মীরার এখন নিজেকে মার্ডার কেসের আসামি মনে হচ্ছে। জিনিস গুলো নিয়েও ভুল করে ফেলেছে মনে হচ্ছে। ইভান গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল,
“কে পাঠিয়েছে এসব?”
মীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উদাস গলায় বলল,
“আমি কী জানি?”
তনি ক্ষেপে উঠে বলল,
“জানিস না তাহলে নিয়েছিস কেন? ফেরত যেত। তাতে তোর তো কোন ক্ষতি হতো না।”
“তনি আপু, তোমরা এমন করছো যেন আমি এক হাজার টাকার মোটা এক বান্ডিল রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছি।”
ইভান ওদের থামিয়ে দিল। বিষয়টা তাকে ভাবাচ্ছে। মীরা এখন ছোট নেই। একটা মেয়েকে গোলাপ আর চকলেট উপহার দেওয়ার মানে ছোট বাচ্চাও বুঝবে। মীরাকে কেউ পছন্দ করে? কে করে? কখনও কি মীরাকে রাস্তাঘাটে, কলেজে বিরক্ত করেছে? আবির কাত হয়ে শুয়ে চকলেট খেতে খেতে বিচার সালিশ দেখছে। বেচারি মীরাবাঈ! শত্রুর আক্রমণে কপোকাত।
“চকলেটটা কিন্তু ভালো। খেতে মজা লাগছে।”
সিরিয়াস কথার মাঝে আবিরের এমন কথা শুনে তনি আগুন চোখে তাকাল। ইভান আবিরকে মজা করতে বারণ করলো।
মীরা এতক্ষণ মুখ কালো করে সবার প্রশ্নের উত্তর দিলেও এখন সে কেঁদে ফেলবে অবস্থা। সবাই তাকে কেন বকছে?
“আমি সব চকলেট আর গোলাপ ফেলে দিব। কিছু রাখব না। ভুল করে এগুলো রেখে পাপ করে ফেলেছি। সবাই আমাকে কথা শোনাচ্ছো। আমি কি কারো থেকে হাত পেতে এসব নিয়েছি?”
মীরার গলায় কান্না আটকে এলে ইভান উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
“পাগল তুই মন খারাপ করছিস কেন? তোকে তো আমরা কিছু বলছি না। তুই যে ভালো বাচ্চা এটা আমরা সবাই জানি।”
ইভা এতক্ষণ ভাই বোনদের মাঝে কোন কথা না বললেও এবার সকলকেই ধমক দিল।
“তোমরা সামান্য একটা বিষয়কে টানাহেঁচড়া করে কত বড় বানিয়ে ফেললে। এটা এমনও কোন গুরুতর ব্যাপার না। মীরা বিষয়টাকে সহজ ভাবে দেখলে তোমরা কেন পারছো না? আশ্চর্য! তোমাদের বোনকে চকলেট, গোলাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ নাকি? মেয়ে হয়ে চকলেট গোলাপ পাবে না এটাই তো কেমন বিষয়। বেশি বড় হয়ে গেছো তোমরা। তাই সব জিনিসকে এমন জটিল বানিয়ে ফেলো। সহজ ভাবে দেখলেই কারো উদ্দেশ্যে পাপ খুঁজে পাবে না। গোল মিটিং বাদ দিয়ে যার যার ঘরে যাও। মেয়েটাকে শুধু শুধু এত প্রশ্ন করছো।”
আবিরও ইভার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
“যে এগুলো পাঠিয়েছে তার টাকা বেশি হয়েছে। টাকা খরচ করার উপায় পাচ্ছিল না তাই এসব করেছে। এতে আমাদের কুটুস মীরার দোষ কী?”
মীরা নাক টানতে টানতে এবার একটু সহজ হলো। ইভা আপু, আবির ভাই তার পক্ষ নিয়েছে। ইভানও মীরার সামনে এই ব্যাপারটা নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাইল না। তবে গিফটদাতা কে হতে পারে তা খুঁজে বের করবেই।
আবির আসার পর থেকে আটটার উপরে চকলেট খেয়ে ফেলেছে। সে গোলাপ গুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,
“একশোটার উপরে আছে। এক পিস দশ টাকা করে হলেও এক হাজার টাকা।”
ইভান আবিরের গাধামি দেখে বলল,
“দশ টাকা পিস গোলাপ তোর শ্বশুর দিচ্ছে। যা নিয়ে আয়।”
ইভানের টিটকারি শুনে আবির তনির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
“আমার শ্বশুরের গোলাপের দোকান নেই। তবে এই ব্যবসায় লাভ হলে ফিউচারে জামাই শ্বশুর মিলে শুরু করে দিব।”
তনি মুখ মুচড়ে চলে গেল। মীরা চলে যেতে নিলে আবির ডাকল,
“মীরাবাঈ এগুলো কি আমাকে দিয়ে যাচ্ছ? আচ্ছা আমি বাড়ি নিয়ে যাই। চকলেট গুলো অনেকদিন খেতে পারব। আর গোলাপ গুলো যাবার সময় ফুলের দোকানে দশ টাকা পিস করে দিয়ে যাব।”
আবির সত্যি সত্যিই ওসব নিয়ে যাওয়া ধরলে ইভা আবিরের হাতে চড় দিল।
“একদম না। এসব আমার মিষ্টি ননদিনীর জন্য এসেছে। তুমি এতক্ষণ বসে বসে যে চকলেট গুলো খেয়েছ সেগুলোও ফেরত দিয়ে যাও।”
আবির ব্যথিত কন্ঠে বলল,
“ভাবী দুঃখ পেলাম।”
“মীরা তুমি এগুলো তোমার ঘরে নিয়ে যাও।”
মীরা রাগ করে এসব নিতে চাচ্ছিল না। ইভান বললে তারপর নিলো। রুমে এলেও তার মনটা আগের মতো ভালো নেই। জিনিস গুলো পেয়ে যতটা খুশি হয়েছিল, এগুলো নেওয়ায় সবার থেকে বকা শুনে এখন মনটা তার থেকেও বেশি খারাপ হয়ে গেছে। মীরা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবল, কে তাকে এতগুলো ফুল পাঠাতে পারে? আর তাকেই কেন পাঠালো?
চকলেটের বক্স পুরোটা বেডের উপর উপুড় করে ঢেলে দিলে তার ভেতর থেকেও ছোট্ট একটা বক্স বেরোলো।
“বক্সের ভেতর বক্স! ও মাই গড! ওটার ভেতর আবার কী আছে?”
চলবে#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৪১
মীরা কৌতূহলী হয়ে বক্সটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। দু’মিনিটে বক্সটা খুলে আশ্চর্য হয়ে গেল। ভীষণ সুন্দর এক জোড়া কানের দুল। কানের দুলটা মীরার ভীষণ পছন্দ হলো। খুশিতে মীরার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠেছে। দুলটা বের করতে গিয়ে তার নিচে হলুদ রঙের একটা কাগজ দেখতে পেল।
“চিরকুট! যে এগুলো দিয়েছে চিরকুটটা নিশ্চয় তার।”
মীরা কানের দুল রেখে চিরকুট নিয়ে পড়লো। উত্তেজনায় তার হাত কাঁপছে। ছোট্ট একটা কাগজ। ভেতরে মাত্র দুইটা লাইন লেখা।
“আমার সাধ্য থাকলে পৃথিবীতে রোজ যতগুলো গোলাপ ফোটে সব তোমার নামে করে দিতাম।”
কারো নামধাম তো দেওয়াই নেই। কিন্তু নিচে ছোট করে লেখা, তোমার ব্যক্তিগত বেডা মানুষ।
“আমার ব্যক্তিগত বেডা মানুষ! আমার আবার কোন বেডা মানুষ আছে?”
একটু ভাবতেই মীরার মুখ হাঁ হয়ে গেল। কেউ কি তার সাথে মজা করছে? কারণ সন্ধ্যায় সে মাহিমাকে নিয়ে মজা করে একটা স্টোরি দিয়েছিল। তাতে ক্যাপশন কিছুটা এরকমই ছিল। তার ফ্রেন্ড লিস্টের কেউ এই মজাটা করেনি তো?
“মজা করুক আর যা-ই করুক। আমার কি? টাকা কি আমার পকেট থেকে গেছে। কিন্তু কার বুকের কলিজা এত বড়ো? কতগুলো গোলাপ চকলেট পাঠালো। এত খরচো করতে বুক কাঁপলো না?”
মাহিমা খবর পেতে বেশি সময় লাগালো না৷ আবির বাড়ি গিয়েই বলে দিয়েছে। মাহিমা কল করে মীরাকে পাগল করে দিচ্ছে।
“কে দিয়েছে এতগুলো গোলাপ? আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। তবুও আমি এতগুলো গোলাপ পাই না। তুই সিঙ্গেল হয়ে এতকিছু কিকরে পেলি? দিলোটা কে? এই তুই তলে তলে টেম্পো চালাচ্ছিস না তো? আমাকে বলিস নি! কী হারামির হারামি রে তুই! আমাকেও বললি না।”
“আরে ফকিন্নি আমার এমন কেউ নেই।”
“নেই তাহলে এসব কি আসমান থেকে পড়েছে?”
“আমি নিজেও ভাবছি কে পাঠিয়েছে।”
“আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে মাত্র আটটা গোলাপ দিয়েছে। মানুষটা তোর বয়ফ্রেন্ডও হলো না। এখনই তোর জন্য গোলাপের দোকান পাঠিয়ে দিয়েছে। বয়ফ্রেন্ড হলে তখন কী করবে? দেশ তো ফুল শূন্য করে ফেলবে।”
“ফালতু কথা ভাবছিস তুই। আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার সাথে মজা করছে।”
“বোন, মজা করুক আর যাই করুক। এই ব্যাটাকে ধরে তুই বিয়ে করে ফেল। শালিকা হিসেবে আমিও তো কিছু পাবো। চকলেট গুলো কিন্তু একা খাস না। আমি সকালেই আসছি।”
“লোভী ফকিন্নি। কয়েকটা চকলেটের লোভে আমি যাকে তাকে বিয়ে করে নিব!”
“লোভ না রে। ভালোবাসা দেখেছিস? এই ব্যাটাকে বিয়ে করলে তোর সব কথা শুনবে। যা চাইবি সব দিবে।”
“তাহলে তুই মুবিন ভাইকে ছেড়ে এই লোককে খুঁজে বিয়ে করে ফেল। আমি তো কাল মুবিন ভাইকে বলবো তুই যে কতবড় লোভী।'”
পরীক্ষা শেষ করে ক্লাস থেকে বেরিয়েই বারান্দায় রাতুলকে দেখল। মীরার একবার মনে হয়েছিল রাতুলই হয়তো এসব করেছে। তাই সে রাতুলকে ডাকতে লাগল,
“ওই রাতুইল্লা দাঁড়া। দাঁড়া মুটকো।”
মীরার গলা পেয়ে রাতুল দাঁড়িয়ে গেল। বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল,
“তোর বাপেরটা খাই? মটকো ডাকস কেন?”
“আমার বাপেরটা তোকে খেতে দিব?”
“তাইলে ডাকস কেন?”
“তুই আমাকে গিফট পাঠিয়েছিস?”
“কিসের গিফট? আর তোরে গিফট পাঠানোর মতো দুর্দিন আমার এখনও আসেনি।”
রাতুলও পাঠায়নি! তাহলে কে পাঠিয়েছে? মাহিমা তবুও গলায় সন্দেহ নিয়ে বলল,
“তুই না পাঠালে কে পাঠাবে?”
“আমারে জিজ্ঞেস করিস কেন? আমার বাপের টাকা কি ছিনিমিনি খেলতেছে যে তোদের পেছনে খরচ করবো?”
রাতুলের ত্যাড়া কথা শুনে মীরা রেগেমেগে বলল,
“মর তুই। এইজন্য ডায়েট করেও জীবনে চিকন হবি না। পেট ভর্তি শুধু চর্বিই না। হিংসেমি দিয়ে ভরপুর।”
রাতুলকে ঝাড়ি টাড়ি দিয়ে বিদায় করে দু’জন ভাবতে লাগল আর কে হতে পারে। মাঠে নেমে কিছুটা দূর সাকিবকে দেখল। মাহিমার পাক্কা বিশ্বাস সাকিবই ওসব পাঠিয়েছে। এইটার বাপের অনেক টাকা। মীরারও সন্দেহ হচ্ছে কারণ সাকিব হাবভাবে অনেকদিন বুঝিয়েছে মীরাকে সে পছন্দ করে।
“সাকিব। দাঁড়াও কথা আছে।”
মীরা নিজে তাকে ডাকছে ছেলেটার বিশ্বাস হলো না। সাকিব নিজেই মীরাদের দিকে এগিয়ে এলো।
“বলো।”
“বলাবলির তো কিছু নেই। তুমি আমাকে এতগুলো চকলেট গোলাপ ফুল পাঠিয়েছ কেন?”
সাকিব কিছুই বুঝতে পারল না। মীরা কোন ফুল চকলেটের কথা বলছে? ব্যাটাকে টাইট না দিলে স্বীকার করবে না। তাই মাহিমাও জোর গলায় বলল,
“কতবড় সাহস! সোজা বাড়িতে এসব পাঠিয়ে দেয়। তুমি জানো আমাদের ভাইয়েরা তোমার কী হাল করবে?”
“এক মিনিট। কিসের কথা বলছো তোমরা?”
মীরা ভেঙ্গিয়ে বলল,
“ঢঙ। কিছুই যেন জানে না। তুমিই তো এতগুলো চকলেট পাঠিয়েছ। এখন নাটক করছো কেন?”
“প্রথমত আমি কিছুই পাঠাইনি। আমি যদি পাঠাতাম তাহলে অস্বীকার করতাম কেন? নিজে পাঠিয়ে নিশ্চয় অন্যকে ক্রেডিট নিতে দিতাম না। আর তার থেকেও বড় কথা, আমি গিফট চকলেট পাঠালে তুমি নিবে মীরা?”
মীরা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“জীবনেও না। পাঠাওনি ভালো করেছ। আর জীবনে পাঠিয়োও না।”
মাঠ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওরা আকাশ পাতাল এক করে ভাবছে কে হতে পারে। মীরা বিরক্ত হয়ে বলল,
“যে খুশি সে পাঠাক। আর ভাবতে পারবো না। চকলেট অর্ধেক খাওয়া শেষ। ফুল গুলোও নেতিয়ে যাচ্ছে। ব্যাটা এখন সামনে এলেও কিছুই ফেরত পাবে না।”
“হুম, যে-ই এসব করেছে সে কিন্তু তোকে ইমপ্রেস করতে চাচ্ছে।”
“চেষ্টা করতে থাকুক। প্রেম করি আর না করি। বিয়ে তো আমি বাবা, চাচা, ভাইদের পছন্দেই করব।”
…
পরীক্ষার পর লম্বা ছুটি নিবে ভেবেই মীরা শেষ পরীক্ষার আগের দিন মুবিনের কাছে পড়তে গেল। উদ্দেশ্য মুবিনকে পঁচানো। গার্লফ্রেন্ডকে একা চকলেট পাঠিয়েছিল। শালিকাকে অবহেলা করেছিল। এখন দেখে রাখুক উনার শালিকা কোন অসহায় বান্দা না। তাকেও কেউ এত্ত এত্ত চকলেট গোলাপ পাঠায়। মীরা কলিংবেলে চাপ দিয়ে দরজা খোলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইল। তার হাতের প্যাকেটে অনেকগুলো চকলেট। এগুলো মুবিন ভাইকে খেতে দিবে। দরজা খুলে গেলে মীরা সামনে না তাকিয়েই জোরে চিল্লিয়ে বলল,
“দুলাভা…
বলতে বলতে সামনে জায়িনকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে জিভ কামড়ে অসহায় চোখে তাকালো। পরক্ষণে বোকা হেসে বুদ্ধি খাটিয়ে বলল,
“ধুলা। বাইরে অনেক ধুলা।”
এতদিন পর জায়িনকে সামনে দেখে মীরার সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। কোনবারই জায়িনকে মীরা খুব ভালো ভাবে লক্ষ করে দেখে না। এবার দেখছে। জায়িন ভাই তার থেকে অনেক লম্বা। বিদ্যুতের খুঁটি একটা। ছেলে হয়েও মীরার থেকে বেশি ফর্সা। মীরা মনে মনে মুখ মোচড় দিল। মীরাকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে জায়িন ভ্রু নাচালো। তাতে মীরা অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নাড়ালো। মীরার কী হয়েছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। হুট করে হাতে ধরা প্যাকেট জায়িনের দিকে এগিয়ে ধরে বলে বসল,
“জায়িন ভাই চকলেট খাবেন?”
এবার জায়িনের চেহারায় ভাবের পরিবর্তন দেখা গেল। তবে সেটা মীরা বুঝতে পারলো না। জায়িন মীরাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যিই চকলেট নিল। মীরা ভেবেছিল জায়িন ভাই হয়তো নিবে না। সে এনেছিল মুবিন ভাইয়ের জন্য। মীরা মুবিনের ঘরের দিকে যেতে নিলে জায়িন পেছন থেকে জিজ্ঞেস করল,
“চকলেট কে দিয়েছে?”
মীরা জায়িনের দিকে ফিরল। বুক ফুলিয়ে বলল,
“কে দিবে? আমি নিজের টাকায় কিনেছি। আপনি খান।”
জায়িন একটা চকলেট ছিড়ে মুখে দিয়ে তখনও মীরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মীরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। জায়িন ভাই এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?
“না মানে। আসলে গিফট পেয়েছি জায়িন ভাই।”
জায়িন ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“গিফট! কে দিলো?”
“জানি না। অনেক খুঁজেছি বের করতে পারিনি।”
“গিফটদাতা কে তা না জেনেই চকলেট বিলাচ্ছ!”
মীরা মুখ মলিন করে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“একা খেয়ে শেষ করতে পারছিলাম না। বাসার সবাইকে দিয়েছি।”
“এগুলো কি আমাকে দেওয়ার জন্য রেখে দিয়েছিলে?”
জায়িনের প্রশ্নে মীরা সরল মনে বলে ফেলল,
“না। মুবিন ভাইয়ের জন্য এনেছিলাম।”
“ওহহো। তাহলে আমাকে দিলে কেন? নাও, মুবিনকে দিও।”
জায়িন চকলেট ফিরিয়ে দিচ্ছে। মীরা ভাবল তার এই কথাতে জায়িন ভাই হয়তো রাগ করেছে। তাই জায়িনকে খুশি করতে তাড়াহুড়ো করে বলতে লাগল,
“না না। এগুলো আপনি রেখে দিন। আসলে আপনি বাড়ি কবে আসেন আমি তো এটাই জানি না। নইলে আপনার জন্যও রাখতাম। সত্যি। বাসায় আরও আছে। কাল মুবিন ভাইকে এনে দেব।”
জায়িন মনে মনে হাসলো। মীরা ভাবছে সে রাগ করে ফিরিয়ে দিচ্ছে। বোকা মেয়ে সে যেন রাগ না করে তার জন্য কতকিছু করছে।
“চকলেট তো খেলাম। ধন্যবাদ কাকে দিব? তোমাকে? নাকি তোমার গিফটদাতাকে?”
“আমাকেই দিয়ে দিন। কারণ আমি হয়েই তো চকলেট আপনার হাতে এলো।”
“ঠিক আছে। ধন্যবাদ।”
মীরা মুবিনের ঘরে চলে গেলে জায়িন ফোঁস করে হেসে ফেলল। এই মেয়ে যতটা চঞ্চল ঠিক ততটাই বোকা। নইলে যে গিফট দিয়েছে তার থেকেই ধন্যবাদ নিচ্ছে! জায়িন ঠিকই ভেবেছিল, মীরা কোনদিন ধরতে পারবে না গিফট কে দিয়েছে। সে দিয়েছে এটা হয়তো কল্পনাও করবে না।
চলবে..