মন নিয়ে কাছাকাছি পর্ব – ৪২+৪৩+৪৪

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৪২

জায়িনের ধন্যবাদ নিয়ে মীরা খুশি হয়ে পড়তে গেল। মুবিন মীরাকে দেখেই বলল,

“ঘটনা কী? বেশ খুশি খুশি লাগছে। এত খুশি হওয়ার বিশেষ কোন কারণ আছে নাকি?”

মুবিনের কথায় মীরা ভড়কে গেল। জায়িন ভাইয়ের সাথে কথা বলে সে খুশি হয়েছে! এরকম আজই প্রথম হলো। তবুও মীরা পুরোপুরি অস্বীকার করে বলল,

“কই খুশি লাগছে? কোন কারণ নেই তো। আপনার শুধু শুধু এমন মনে হচ্ছে।”

“তাই! তোমার চেহারায় স্পষ্ট লেখা আছে। তুমি আজ অন্য দিনের থেকেও বেশি খুশি।”

“আমি প্রতিদিনই এমন খুশিই থাকি।”

“উঁহু। আজ অন্য কোন কারণ তো নিশ্চয় আছে।”

মীরা বিরক্ত হয়ে বলল,

“মুবিন ভাই।”

মুবিন হাসতে হাসতে বলল,

“আচ্ছা আর বলবো না।”

মীরা ফেরার সময় জায়িনের ঘরের দিকে উঁকি ঝুঁকি দিলেও জায়িনকে দেখতে পেলো না। কারণ জায়িন তখন বাসার সামনে রাস্তায় মীরার বের হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। মীরা ব্যাগ কাঁধে আনমনে গেট থেকে বের হতেই সামনে জায়িনকে দেখল। ইনি এখানে কী করছেন? চট করে মীরা কিছুই বলতে পারল না। জায়িন সহজ গলায় নিজেই জিজ্ঞেস করল,

“পড়াশোনা কেমন চলছে?”

“ভালো।”

“জ্বর সেরেছে?”

“হুম।”

“হেঁটে যাবে?”

“হ্যাঁ।”

“সামনের গলিতে কুকুর থাকতে পারে।”

মীরা অসহায় মুখে তাকাল।

“তাহলে রিকশার জন্য দাঁড়াই।”

“অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।”

মীরা মুখ ফসকে বলে ফেলল,

“আপনি একটু এগিয়ে দিয়ে আসবেন?”

কথাটা বলে ফেলে মীরা নিজেকেই গালমন্দ করছে। জায়িন মনে মনে হাসলো। এই কথাটা শোনার অপেক্ষাতেই ছিল সে।

…..
“এই নেন আপা।”

মীরা ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে চোখে ইশারা করে বলল,

“মুবিন ভাই টাকা দেন।”

মুবিন লোকটাকে টাকা দিলো। মীরা ঝালমুড়ি চিবোতে চিবোতে বলল,

“আমার সামনে কথা বলতে অসুবিধা থাকলে বাড়ি গিয়ে ফোনে কথা বলে নিবি। কিন্তু আমি এখান থেকে নড়তে পারব না।”

মীরা বেঞ্চিতে বসে মনের সুখ ঝালমুড়ি খাচ্ছে। মাহিমা চোখ পাকিয়ে মীরাকে দেখলো। মুবিন হেসে মাহিমাকে নিয়ে সামনেই অন্য বেঞ্চে বসলো। ওরা কথা বলছে মীরা তা কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে। কিন্তু গর্দভ গুলো পরীক্ষার বিষয়ে আলাপ করছে। কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর মীরার চোখ একটু দূরে গেলে মানুষটাকে দেখে হাত ফসকে ঝালমুড়ি পড়ে গেল। জায়িন ভাই একটা মেয়ের সাথে এদিকে আসছে! মুবিন ভাইও তো এখানেই আছে। মীরা ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়ল। হঠাৎ মীরাকে এরকম করতে দেখে মাহিমা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল কী হয়েছে।

“চুপ চুপ কথা বলিস না। আরে মুবিন ভাই পেছনে তাকাচ্ছেন কেন? আপনার ভাই এদিকেই আসছে। আজ ধরা পড়ে গেলেন বলে!”

মুবিন ভাইকে ভয় পাচ্ছে না। কিন্তু ভাই যদি জানে সে প্রেম করছে তাহলে লজ্জা পাবে। মাহিমা সামান্য একটু ঘাড় ফিরিয়ে জায়িনকে দেখেই পাগলামি করতে লাগল।

“জায়িন ভাই আমার ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড। আমাদের এখানে দেখলে নিশ্চয় ভাইয়াকে বলে দিবে। আমি এখন কী করবো? কোথায় লুকাবো?”

“কোথাও লুকাতে হবে না মাহিমা।”

“না না। আমি চাই না এখনই আমাদের ব্যাপারে সবাই জেনে যাক। এখন তো আমার কলেজও শেষ হয়নি।”

এই মুহূর্তে কী করা উচিত মুবিনও বুঝতে পারছে না। মীরা হুট করে এক কাজ করে বসলো।

“সুযোগ পেলে তোরা পালিয়ে যাস।”

এটুকু বলেই জায়িনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে দূর থেকেই বলল,

“আসসালামু আলাইকুম জায়িন ভাই।”

জায়িনের কপালে ভাঁজ পড়লো। ওর সাথের মেয়েটা একবার জায়িনের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণে মীরাকে দেখতে লাগল। মীরা ওদের কাছাকাছি চলে এসে বলল,

“কেমন আছেন জায়িন ভাই?”

এই মেয়ের উদ্দেশ্য জায়িনের কাছে সুবিধার লাগছে না। তবুও সে সহজ গলায় বলল,

“ভালো। কী করছো এখানে?”

“ঝালমুড়ি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ আপনাকে দেখলাম। আপনিও কি ঝালমুড়ি খেতে এসেছেন?”

“না।”

“ওহ, এসব খাওয়া ভালোও না। গ্যাস্ট্রিক হয়।”

জায়িনের সাথের মেয়েটা এতক্ষণ মীরার কথা শুনে মুখ টিপে হাসছিল। এবার সে বলল,

“তুমি আবিরের বোন?”

“হ্যাঁ। আমাকে আপনি চিনেন?”

“আমরা তো একসাথেই পড়েছি। আবির, তনি, আমি জায়িন। তোমার নামটা..

” মীরা। আমি আবির ভাইয়ার মামাতো বোন।”

“ওহ হ্যাঁ। ওর বোনের নাম তো মাহিমা। মাহিমাকে দেখছি না। তোমরা একসাথে পড়ো না?”

মাহিমার কথা উঠতে মীরা মনে মনে ঢোঁক গিলল। জায়িন সন্দিহান চোখে মীরাকে লক্ষ করছে। কোথাও তো কিছু একটা গণ্ডগোল আছে।
জায়িন মেয়েটাকে নিয়ে সামনে এগোতে নিলে মীরা ওদের সামনে এসে বাধা দিয়ে বলল,

“দাঁড়ান জায়িন ভাই।”

জায়িন ভ্রু কুঁচকে তাকালে মীরা বোকার মতো বলল,

“আপনি ওদিকে যাবেন না।”

“মানে?”

“মানে, চলুন আইসক্রিম খাই। আজ অনেক গরম।”

মীরার স্বভাবে বাচ্চামি থাকলেও এমন পাগলামি কোনদিন দেখেনি জায়িন। তার থেকেও বড় কথা, মীরা আর যা-ই করুক তার সাথে কোনদিনও এমন উল্টাপাল্টা আচরণ করেনি। মেয়েটা ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে বলল,

“চল জায়িন, মীরাকে আইসক্রিম খাইয়ে নিয়ে আসি।”

জায়িন যেতে রাজি হলে মীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। শয়তান কইতরি, আর ভীতু মুবিন ভাইটার জন্য কতকিছু করতে হচ্ছে তাকে। মেয়েটা সাথে না থাকলে জায়িন ভাই শিওর ধমক দিয়ে তার কলিজা কাঁপিয়ে দিত।
মীরা নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত। পাগলের মতো জায়িন ভাইয়ের কাছে আইসক্রিম খাবার আবদার তো করে বসেছিল। কিন্তু লোকটা মনে মনে কী ভাবছে! নিশ্চয় তাকে ছ্যাঁচড়া ভাবছে। ভাবাই উচিত। নইলে যতই ভাইয়ের বন্ধু হোক, শিক্ষকের বড় ভাই হোক, ভাবীর ভাই হোক, ভাইয়ের শালা হোক বা বোনের ভবিষ্যত ভাসুর হোক। তার তো কিছু হয় না। তাকে কেন আইসক্রিম খাওয়াতে যাবে?
মীরা নাকিকান্না কেঁদে বলল,

“সব দোষ তোর কইতরি। তোর জন্য কত পাগলামি ছাগলামি করতে হয়!”

মীরা মাহিমা আর মুবিনকে খুঁজছে। কোথায় গিয়ে লোকালো? নাকি তাকে ফেলে বাড়িতে চলে গেছে! মাহিমা তাকে রেখে বাড়ি চলে গেলে আজই পৃথিবীতে ওর শেষ দিন। জায়িন কিছুক্ষণ আগেই মেয়েটার সাথে চলে গেছে।
মীরা ওদের খুঁজতে খুঁজতে কিছুটা দূর এসে পেয়েই গেল। মাহিমা মীরার হাত ধরে কৃতজ্ঞতায় গলে গিয়ে বলল,

“আজ তুই না থাকলে কী যে হতো রে মীরা! জায়িন ভাই আমাদের ধরেই ফেলত। তারপর সোজা বিচার যেত আমার ভাইয়ের কাছে।”

“এত ভয় তাহলে প্রেম করছিস কেন? এক্ষুনি ব্রেকআপ কর। মুবিন ভাই, আজ থেকে আপনাদের ব্রেকআপ।”

মীরার রাগ করাটা অন্যায় কিছু না। মাহিমা আহ্লাদ করে মীরাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“বোনের জন্য একটু তো কষ্ট করেছিস। তাই বলে এভাবে রাগ দেখাবি?”

“একটু কষ্ট! জায়িন ভাই হয়তো আমাকে পাগল ভাবছে। মুবিন ভাই থাকলেও একটা কথা ছিল। জায়িন ভাইয়ের সাথে কথা বলতেই তো আমার বুক কাঁপে। উনি আমার সম্পর্কে খুব বাজে ধারণা করছেন হয়তো।”

মুবিন মীরাকে আশ্বস্ত করে বলল,

“একদম না। আমার ভাই অনেক ভালো মীরা। ও তোমার সম্পর্কে এমন কিছুই ধারণা করবে না।”

“আপনার ভাই ভালো এটা আজ আমাকেও মানতে হচ্ছে। নয়তো উনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এক ধমক দিত।”

তবুও পুরোটা পথ আসতে আসতে মীরা মাহিমাকে দোষে গেছে।

“তোর জন্য। শুধুমাত্র তোর জন্য জায়িন ভাই আমাকে পাগল মনে করবে।”

“সমস্যা কি? জায়িন ভাই তোকে পাগল মনে করুক বা ছাগল মনে করুক তাতে তোর তো কিছু আসবে যাবে না। উনার মনে করা দিয়ে তোর কাজ কী? উনার যা খুশি উনি মনে করতে থাকুক।”

সত্যিই তো। জায়িন ভাই কী মনে করলো না করলো তা নিয়ে মীরা এত ভাবছে কেন? আগে তো কখনও এমন ভাবেনি। জায়িন ভাইয়ের সামনে তার ইমেজ নষ্ট হয়েছে বলে মীরার এত লজ্জা লাগছে কেন?

“হ্যাঁ রে, জায়িন ভাইয়ের সাথে মেয়েটা কে ছিল? দেখলি, ভাসুর ব্যাটা নিজেও তলে তলে টেম্পো চালাচ্ছে। মেয়েটা সুন্দর ছিল, না? ভালোই মানিয়েছে দু’জনকে।”

ওটা জায়িন ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ছিল! মীরার মানতেই ইচ্ছে করছে না। কিন্তু গার্লফ্রেন্ড না হলে মেয়েটার সাথে জায়িন ভাই কোথায় যাচ্ছিল? জায়িন ভাইয়ের এতো সুন্দর একটা গার্লফ্রেন্ড আছে জেনে মীরার মন খারাপ হয়ে গেল। বাকিটা পথ সে একটা কথাও বললো না। #মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৪৩

মীরা আজকাল তার নিজের মনের হুটহাট পরিবর্তনের উপর ত্যক্ত বিরক্ত। বড় বড় অন্যায় অপরাধ করে বড়মার কাছে বকা খেয়ে মন খারাপ না করা মেয়েটার হুটহাট কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই মন খারাপের নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পেয়ে আরও রাগ লাগছে। পরীক্ষা শেষ এখন কয়টা দিন আরাম আর আরাম। কিন্তু মীরার আরাম কে হারাম করলো?
দুপুরে ঘুমিয়ে জায়িনকে নিয়ে খুব সুন্দর একটা মিষ্টি স্বপ্ন দেখেছে। নিঃসন্দেহে মীরার জীবনে দেখা সবথেকে সুন্দর স্বপ্ন এটা। বিশাল এক গোলাপ বাগানের মাঝ দিয়ে হাঁটছে ওরা। যতদূর চোখ যাচ্ছে সাদা, লাল, গোলাপি রঙের গোলাপই গোলাপ শুধু দেখা যাচ্ছে। মীরার ভীষণ খুশি লাগছে। তাকে খুশি হতে দেখে জায়িনও খুশি হচ্ছে। মীরার ছুটতে ইচ্ছে করলেও জায়িন তার হাত ধরে রেখেছে বিধায় ছুটে ছুটে সবগুলো গোলাপ ছুয়ে দিতে পারছে না।

“জায়িন ভাই হাতটা ছাড়বেন?”

জায়িন দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না জানালো। হাতটা আরও শক্ত করে ধরলো। মীরা বলল,

“আমি পালিয়ে যাব না। আমার এই বাগানটার ভেতরে দৌড়াতে ইচ্ছে করছে।”

জায়িন মীরার হাত ধরে ছুটছে। মীরা অন্য হাতে সবগুলো ফুল ছুয়ে দিচ্ছে। অনেকটা সময় দৌঁড়িয়ে বাগানের মাঝামাঝি এসে থামল দু’জন। মীরা জায়িনের দিকে তাকিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে হাসছে। জায়িন একটা ফুল ছিঁড়ে মীরার কানে গুঁজে দিল। স্নিগ্ধ ঝিরিঝিরে বাতাসে মীরার চুল মুখের উপর এসে পড়েছে। পুরো বাগানের ফুলগুলো সব কেমন দোল খাচ্ছে। একঝাঁক প্রজাপতি ওদের ঘিরে উড়তে শুরু করেছে। জায়িন মীরার হাত ধরে কাছে টেনে নিল। তারপর যে কাজটা করলো এটা দেখে মীরা ঘুম থেকে জেগে উঠে ধপাস করে বিছানা থেকে নিচে পড়ে গেল । ব্যথা পেলেও মীরার এখন সেদিকে লক্ষ নেই। বেচারি এখনও স্বপ্নের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছে না। দু’হাতে মুখ চেপে ধরে হতবুদ্ধি হয়ে বসে আছে। অনেকটা সময় থম মেরে বসে থাকার পর মীরার কান্না পেতে লাগলো। এরকম একটা স্বপ্ন কীভাবে দেখল সে? এখন তো জানে জায়িন ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে। তার পরেও?

“অন্যের বয়ফ্রেন্ড হয়েও আপনি আমার স্বপ্নে কেন আসেন জায়িন ভাই? আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে। আপনি ওর স্বপ্নে গিয়ে যা খুশি তা করুন। আমার স্বপ্নে এসে কেন… উফ আল্লাহ! স্বপ্ন দেখতে দেখতে আবার বিছানা থেকেই পড়ে গেলাম।”

তনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত চোখে মীরার দিকে তাকিয়ে আছে। তার পেছনে রুশমিও এসেছে। মীরাকে বিছানার চাদর জড়িয়ে নিচে বসে থাকতে দেখে বলল,

“চাদর পেঁচিয়ে নিচে বসে কী করছিস তুই?”

রুশমি মীরার কাছে এসে মীরার গাল ধরে বলল,

“বেলাতে যাবে? আমলা ছবাই যাব।”

এই মেয়েটার কোন কাজ তনির পছন্দ হয় না। এনাকোন্ডা সাপের মতো সারাদিন বিছানায় পড়ে গড়াগড়ি খাবে। চাদর, বালিশের সাথে যুদ্ধ করবে। জীবনে তো একদিন নিজের বিছানাটা গুছায় না।

“কাজকর্ম নেই সারাদিন শুয়ে থাকিস ভালো কথা। কিন্তু বিছানা চাদরের উপর দিয়ে এই তুফান কেন চালাস? দিনে পঞ্চাশ বার কে তোর বিছানা গুছিয়ে দিবে? কাকে চাকর রেখেছিস রে?”

মীরা প্রতিবাদ করল না। রাগও হলো না। ফ্যালফ্যাল চোখে তনির দিকে তাকিয়ে রইল। ওর এরকম চাহনি দেখে তনি ভড়কে গেল।

“এরকম ভাবে কী দেখছিস?”

“কী করলে খারাপ স্বপ্ন/ভালো স্বপ্ন দু’টোই দেখা জীবনের মতো বন্ধ হয়ে যাবে?”

“মানে!”

“মানে এমন কোন দোয়া দুরুদ বা পানি পড়া, চিনি পড়া আছে যা খেলে আমি স্বপ্নই দেখব না।”

“দুনিয়ার সব ছেড়ে এখন স্বপ্নের পেছনে পড়েছিস কেন?”

“আমি স্বপ্নের পেছনে পড়েছি? এই স্বপ্নই তো আমার পেছনে পড়েছে। ভুল করে দু’টা মিনিটের জন্য চোখ লেগে গেলেও আমাকে এসে জ্বালা যন্ত্রণা শুরু করে দিবে।”

“এক দুইটা স্বপ্নের ধরন বল দেখি। অবস্থা বুঝে তো ব্যবস্থা নিতে হবে।”

“তোমাকে বলা যাবে না।”

“তাহলে চিকিৎসা কীভাবে করব?”

“তুমি কি ডাক্তার?”

“আমি ডাক্তার না হই। আমার বন্ধু ডাক্তার হওয়ার পথে। এই হয়ে গেল বলেই।”

“কে?”

“জায়িন।”

যার স্বপ্নে আসা নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে মীরা স্বপ্ন দেখাই বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে তনি নাকি তার থেকে ঔষধ এনে দিবে? হায় কপাল!
আজ সকলে ইভাদের বাড়িতে যাবে। এটা শুনেই মীরার হাঁপানি উঠে গেল। ওখানে গেলেই তো জায়িনের সাথে দেখা হবে। মীরা যতই লোকটার থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছে ততই যেন সবাই প্ল্যান করে মীরাকে উনার কাছে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই গেলে মীরাকেও যেতে হবে। কোন বাহানা দিয়েই সে বাড়িতে থাকতে পারবে না। মীরাকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে বড়মা বলল,

“এখনও বসে আছিস কেন? কখন রেডি হবি? সবাই কিন্তু তৈরি। তোর জন্য দেরি হলে ফেলে চলে যাব।”

” তা-ই করো গো বড়মা। তা-ই করো। ফেলেই চলে যাও। আমি উনার সামনে যেতে চাই না।”

….

“তোমার প্রজাপতির খবর কী বন্ধু? এখনও ফুলের উপর বসে আছে? নাকি মধু খেয়ে ফুড়ুৎ?”

আবির হাত উঁচিয়ে উড়ে যাওয়ার ভঙ্গি করে দেখাল। জায়িন কিছুটা দূরে দাঁড়ানো মীরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

“ফুলের চারপাশে ঘুরঘুর করছে। এখনও কোথাও বসছে না।”

“বড্ড চঞ্চল প্রজাপতি তো! সামলাতে পারবি?”

মীরা বড়দের কাছ থেকে না সরলেও চোরা চোখে একটু পরপরই জায়িনকে দেখছে। সে খুব করে চাচ্ছে জায়িনের সামনে যেন তাকে পড়তে না হয়। অসভ্য লোক গার্লফ্রেন্ড থাকা স্বত্বেও অন্যের স্বপ্নে আসে।

“প্রপোজ টপোজ করেছিস? নাকি এখনও পাতি মজনুর মতো দূর থেকেই দেখে যাচ্ছিস?”

বন্ধুর লাভ লাইফ নিয়ে আবিরের ভীষণ কৌতূহল। পারলে সে নিজে বন্ধুর মামলাটা সেট করে দেয়। কিন্তু গাধাটা তো কিছু বলতেই নারাজ।

” বল না রে জায়িন। প্রপোজ করেছিস?”

“না।”

“সে কী! কেন রে? আমার বন্ধু হয়ে তুই প্রপোজ করতে ভয় পাচ্ছিস? ইশ রে, আমার মান সম্মান ডুবিয়ে দিলি। তোর বন্ধু একদিনে চার পাঁচটা প্রপোজ করে ফেলত। একটা রাজি না হলে অন্যটা তো হবেই। কিন্তু তুই তো একটাও করতে পারছিস না।”

“আমি ভয় পাচ্ছি তা তোকে কে বলেছে?”

“ভয় না পেলে এখনও বসে আছিস কেন গাধা?”

“বসে আছি কারণ আমি চাই সে নিজে আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানাক।”

“ওরে জা… আবিরের চিৎকার শুনে সবাই এদিকে তাকালে আবির ঠোঁট টেনে হেসে সবার উদ্দেশ্যে জানাল, দুই বন্ধু মজা করছিল। সিরিয়াস কিছু হয়নি। সবার দৃষ্টি সরে গেলে আবির জায়িনের কাঁধ চেপে ধরে বলতে লাগল,

” তুই চাইছিস প্রজা.. মানে মেয়েটা তোকে প্রপোজ করুক!”

“প্রপোজ না। আমি শিওর হয়ে নিতে চাই সে-ও আমার জন্য সেরকমটাই অনুভব করে যেমনটা আমি তার জন্য করি।”

“এটা কোনদিন সম্ভব হবে না। এই দিন কখনোই আসবে না। কারণ মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না। মেয়েরা কখনও নিজের অনুভূতি জানতে দিবে না। ইম্পসিবল। তোকে সিঙ্গেলই মরতে হবে। কিছু করার নেই।”

আবিরের সাথে কথা বললেও জায়িনের চোখ মীরার দিকে। সে মনে মনে ভাবছে,

“উঁহু, সেই দিনটা আসতে খুব বেশি দেরি নেই। অনুভূতি তো তৈরি হচ্ছে। আর সেটা লুকানো সম্ভব হচ্ছে না।”

জায়িন ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে এই কথাটা মনে হলেই মীরার রাগ উঠে যাচ্ছে। অকারণ রাগ। সেই রাগ সবার উপর ঝাড়ছে। ব্যাটার গার্লফ্রেন্ড তো আছেই আবার তার স্বপ্নেও আসে! কত বড়ো খারাপ। মীরা কোনভাবেই সহজ থাকতে পারছে না। মাহিমার চোখে মীরার এই অস্বাভাবিক আচরণ ধরা পড়লে সে জিজ্ঞেস করল,

“সমস্যা কি তোর? কুচা মুরগির মতো ফুলে আছিস কেন? কেউ কাছেপিঠে এলেই ঠোঁট উঁচিয়ে ঠুকর মারতে যাচ্ছিস।”

মীরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,

“কথা বলিস না তো।”

“কেন? কথা বললে সমস্যা তোর?”

“ভালো লাগছে না।”

“সেই ভালো না লাগার কারণই তো জানতে চাচ্ছি।”

“কারণ আমার নিজের জানা থাকলে না বলবো। হুদাই রাগ উঠছে। কিছুই ভালো লাগছে না।”

মাহিমা গালে হাত দিয়ে কতক্ষণ গভীর ভাবনার অভিনয় করে বলল,

“এই তুই কারো প্রেমে পড়িসনি তো! লক্ষণ গুলো কিন্তু মিলে যাচ্ছে।”
#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৪৪

সে জায়িন ভাইয়ের প্রেমে পড়েছে! অসম্ভব। এমনটা কখনও হতেই পারে না। মীরা মাহিমার মাথায় গাট্টা মেরে ওর মাথা থেকে এই চিন্তা দূর করে দিতে চাইল।

“প্রেম বিশেষজ্ঞ হয়েছ না? দাঁড়াও তোমার প্রেমের কথা ফুপুকে বলে আসি। তখন দেখবে কেমন মজা।”

মীরা ফুপুর কাছে যেতে ধরলে মাহিমা হাত টেনে ধরে বলল,

“আমার এত বড়সড় সর্বনাশ করিস না বোন। তোর যা মন চায় কর। তোর কোন ব্যাপারে আমি আর কথা বলবো না।”

মীরা এখানে আসার পরই একবার জায়িনের সামনে পড়েছিল। জায়িন সহজ ভাবেই সবার সাথে কথা বলছিল। তখন মীরার চোখে চোখ পড়লে মীরা মুখ মোচড় দিয়ে চলে এসেছে। জায়িন হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। এই মেয়ের আবার কী হয়েছে? জায়িন অনেকক্ষণ পরে বুঝতে পারল মীরা হয়তো কোন কারণে তার উপর রেগে আছে। কারণটাও একটু ভেবেই ধরতে পারলো। মীরার রাগ করার এই ছেলেমানুষি কারণ দেখে জায়িনের হাসি পাচ্ছে। আবার এটাও শিওর হয়েছে মীরা তাকে নিয়ে ভাবে। জায়িন সকলের চোখের আড়ালে মীরার পাশাপাশি এসে দাঁড়াল। মীরা জায়িনকে দেখেই চলে যেতে চাচ্ছিল। জায়িন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

“তোমার চোখে কি কোন সমস্যা আছে?”

মীরা কটমট করে জায়িনের দিকে তাকাল। জায়িনের ঠোঁটে মৃদু হাসি।

“মানে?”

“মানে তুমি কি ট্যারা? একদিকে দেখো অথচ মনে হয় অন্য দিকে দেখছো।”

মীরার গা জ্বলে গেল। নিজের গার্লফ্রেন্ড একটু সুন্দর বলে এখন তাকে ট্যারা মনে হচ্ছে!

“হ্যাঁ আমার চোখে সমস্যা আছে। আমি ট্যারাই। তাতে আপনার সমস্যা?”

“না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আছো। হয়তো আমি ভুল। তুমি কেন আমাকে দেখবে?”

“হ্যাঁ আমি কেন আপনার দিকে তাকিয়ে থাকব? আমার কিসের ঠেকা? আপনার ওই সুন্দর থুবড়ার দিকে তো আপনার গার্লফ্রেন্ড তাকিয়ে থাকবে। আপনাকে দেখতে দেখতে যুগের পর যুগ পার করে দিবে।”

জায়িন গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে প্রথমটায় অবাক হলেও পরে খুব কষ্ট করে হাসি চেপে রাখল। মীরার রাগটা তাহলে এখানে! জান্নাতকে তার গার্লফ্রেন্ড ভেবে মীরা জেলাস ফিল করছে? জেলাস না হলে এভাবে কথা বলতো না। তার মানে মীরার মনেও তাকে নিয়ে অনুভূতি তৈরি হচ্ছে। জায়িন জেনেশুনেই মীরার ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করল না। সে বরং মীরাকে পরীক্ষা করার জন্য বলল,

“সেটাই তো। আমি তো আমার গার্লফ্রেন্ডেরই সম্পত্তি। ওর অনুপস্থিতিতে কেউ আমার দিকে তাকিয়েছে এটা দেখেও আমি প্রতিবাদ না করলে গার্লফ্রেন্ডের আমানতের খেয়ানত হবে না?”

মীরার সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠল। গার্লফ্রেন্ডের চামচামি যে করছে!

“এতদিন তো আপনার মুখ দিয়ে কথাই বেরুত না। আজ গার্লফ্রেন্ডের কথা উঠতে মুখ দিয়ে কথার খই ফুটছে। এতই লয়াল বয়ফ্রেন্ড তাহলে বোরখা পরে হিজাব নিকাব করে ঘুরছেন না কেন? আহা গার্লফ্রেন্ডের সম্পত্তি মানুষ দেখে ফেলছে তো।”

“তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই?”

“আছে। থাকবে না কেন? একটা না, অনেকগুলো আছে।”

জায়িন হেসে বলল,

“বাবা! তা তোমার বয়ফ্রেন্ডদের সাথে আমার দেখা করাবে না?”

“কিসের সুখে? আপনাকে যেমন শুধুমাত্র আপনার গার্লফ্রেন্ডই দেখতে পারবে। আমার আমার বয়ফ্রেন্ডদেরও আমি একাই দেখব।”

“ভালো। এতে বদনজর লাগার সম্ভাবনা কম।”

মীরা কোনভাবেই জায়িনের সাথে পেরে উঠছে না। জায়িন ভাই আজ কী খেয়ে এসেছে? এফএম রেডিওর মতো কথা বলে যাচ্ছে। লোকটার গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে তার রাগ লাগছে। তাহলে তার বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনে এই লোকের রাগ লাগছে না কেন? মীরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলে রেগেমেগে বলে চলে গেল।

“অসহ্য! ”

মীরা চলে যাওয়ার পরেই জায়িন শব্দ করে হেসে ফেলল। এখন আর কোন অনিশ্চয়তা নেই। নেই কোন সংশয়। মীরা নিজেও বুঝতে পারছে না সে জায়িনকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। এতদিন তার অনুভূতি, ভালোবাসা একতরফা ছিল। এখন মীরার মনেও তার জন্য সেইম অনুভূতি কাজ করছে দেখে জায়িনের খুশিতে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, তোমরা সবাই শোন, আজ আমি এই পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ। কারণ আমার ভালোবাসার মানুষটাও আমাকে ভালোবাসে।

জায়িনের রাগ মীরা সবার উপর দেখাতে লাগলে তনি মীরার মাথায় জোরে চাটি মেরে বলল,

“দিনদিন খিটখিটে হচ্ছিস। ব্যবহারের এমন অবনতি হতে থাকলে কপালে জামাই নেই।”

“আমার জামাই লাগবে না। তোমার জামাই রেডি হয়ে বসে আছে। তুমি গিয়ে গলায় মালা পরাও, যাও।”

তনি আশ্চর্য চোখে মীরাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,

“হয়েছে কী তোর? ভূতে ধরেছে?”

“একজনের উপর আমার ভীষণ রাগ লাগছে আপু। মনে হচ্ছে হাতের সামনে যা পাই তা দিয়েই মাথা ফাটিয়ে দেই। কিন্তু এখন সেটা পারছি না। তাই তোমার উপর রাগ দেখাচ্ছি। তুমি কিন্তু রাগ করো না।”

“কার উপর এত রাগ হচ্ছে তোর? মাহিমার উপর? কইতরিটা আবার কী করেছে?”

“কইতরি ছাড়াও দুনিয়াতে আরও মানুষ আছে আপু।”

“কইতরি না হলে আর কে?”

“কেউ না। তুমি আবির ভাইয়ার কাছে যাও তো। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”

সে রাতে ইভাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পর মীরা তিনদিন মুবিনের কাছে পড়তে আসেনি। এই তিন দিন সে নিজের মনকে নিয়ে নানান গবেষণা করেছে। মীরা মানতেই পারছে না জায়িন ভাইয়ের মতো একজন ‘পেটে পেটে শয়তানি’ এমন ধরনের লোককে তার ভালো লাগতে শুরু করেছে। এই ভালো লাগাটাও পথেঘাটে সুন্দর কোন ছেলেকে দেখে ভালোলাগা টাইপ না। সিরিয়াস টাইপ ভালো লাগা। জায়িন ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ডকে দেখে মীরা প্রেম ট্রেম না করেও ছ্যাকা খেয়ে বসে আছে। কতভাবে মনকে বুঝিয়ে, শাসন করেও ফিরিয়ে আনতে পারছে না। মীরা এই ব্যাপারটা নিয়ে ইভার সাথে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলেছে। যাতে ইভা বুঝতে না পারে। কিন্তু তার সমস্যাও সমাধান হয়।

“আচ্ছা ভাবী, গতকাল একটা মুভি দেখেছি। মুভিটাতে ছেলেটার গার্লফ্রেন্ড থাকে এটা জানা স্বত্বেও মেয়েটা ছেলেটাকে পছন্দ করে। বাস্তবে কি কখনও এমন হয়?”

“অনেক হয়। ভালোলাগা, ভালোবাসা কি ধরাবাঁধা জিনিস? যে, এই ছেলের গার্লফ্রেন্ড আছে তাই একে ভালো লাগতে পারবে না।”

“কিন্তু এটা তো অন্যায়।”

“অন্যায় কেন হবে? কাউকে ভালো লাগতেই পারে। এতে অন্যায় কিছু নেই। কিন্তু যে ছেলেটাকে তোমার ভালো লাগে তুমি যদি ওকে পাওয়ার জন্য অন্য মেয়ের সাথে তার সম্পর্কটাকে ভাঙতে চেষ্টা করো সেটা অন্যায় হবে। দূর থেকে তুমি পছন্দ করতেই পারো।”

মীরা নড়েচড়ে বসে বলল,

“তুমি আমার কথা বলছো কেন? আমি কাউকে পছন্দ করি না। আমি তো মুভির কথা বলছি।”

ইভা হেসে বলল,

“আরে উদাহরণ দিয়েছি।”

“হুম। আচ্ছা মুভির মেয়েটার তখন কী করা উচিত? যেহেতু ওদের সম্পর্কে ভাঙা যাবে না। আবার মেয়েটাও সেই ছেলেকে অনেক বেশি পছন্দ করে ফেলেছে।”

“ছেলেটা কি জানে দ্বিতীয় মেয়েটা যে তাকে পছন্দ করে?”

“দ্বিতীয় বলছো কেন? মেয়েটা তো ছেলেটার জীবনে দ্বিতীয় কেউ হতে চায় না।”

ইভা হাসতে হাসতে বলল,

“তোমাকে বোঝানোর জন্য উদাহরণ দিচ্ছি বোকা।”

“আচ্ছা। না, ছেলেটা জানে না।”

“তাহলে মেয়েটার উচিত তার নিজেকে সময় দেওয়া। মানে ছেলেটাকে নিয়ে তার অনুভূতি কতটুকু বাস্তব সেটা দেখা। সময়ের সাথে সাথে যদি মেয়েটা ওই ছেলেকে ভুলে যায় তাহলে ধরে নিতে হবে এটা শুধুই ভালো লাগা ছিল।”

“আর ভুলতে না পারলে?”

“তাহলে পরিস্থিতি গুরুতর। ওটা মেয়েটার ভালোবাসা ছিল।”

“ভালোবাসা কি ভুলা যায়?”

“সময় এমন একটা জিনিস মীরা যা সবকিছুই ভুলিয়ে দেয়। হয়তো সময় লাগবে তবে চেষ্টা করলে কোনকিছুই অসম্ভব না।”

“তুমি বলছো?”

“হুম।”

মীরা তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। জেনে গেছে তাকে এখন কী করতে হবে। বিষন্ন মন নিয়ে মীরা ইভার ঘর থেকে চলে গেল। মেয়েটা যাওয়ার পর ইভা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

“আমি জানি মীরা এটা কোন মুভির কাহিনি না। এটা তোমার নিজের গল্প। তোমার বয়সটাই এমন। এই বয়সে সবকিছুই তোমার চোখে ভালো লাগবে। পৃথিবীটা এখন তোমার কাছে ভীষণ রঙিন। এই বয়সে তুমি প্রেমে পড়বে। ভালোবাসবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বয়সের ভালোবাসা গুলো ভুল মানুষের সাথে হয়। কারণ এই সময়টাই যে ভুল। জানি না তোমার চোখে কাকে ভালো লেগেছে। তুমি কি তাকে ভালোবেসেছ নাকি শুধুই তার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছ। আবেগের বয়সটা কেটে গেলে তুমি নিজেই বুঝতে কোনটা তোমার জন্য ভালো। তুমি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নাও তা আমি চাই না। আর তাই তো আমি সবসময় তোমাকে সঠিক পথটা দেখিয়ে দেবার জন্য তোমার পাশে থাকব।

চলবে…
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here