#মন_মহুয়ায়_শূণ্যতা
#পর্বঃ৩
#Tasfiya_Nur
পরেরদিন,,
সকালের কাজ গুলো যথারীতি সম্পন্ন করে সবে বারান্দায় একটু বসেছিলো মহুয়া।তখনই তার শ্বাশুড়ি ওর সামনে এসে বলে,
‘রিঠিরা আসবো বিকাল দিকে।বইসা রইলা ক্যান?যাও পিঠাপুলি,নাস্তা-সেমাই,মাছ গোস্ত রান্দো গিয়া।আরমান বাবায় গন্জে যাইবো বিয়ের বাজার করতে।বিকেল থন মানুষ আইবার শুরু করবো।আর তুমি বইসা রইলা!’
‘আম্মা একটু দম নেই!ক্লান্তি লাগতেছে একটু!’
মহুয়ার কথায় নাজমা বেগম তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে দাতে দাত পিষে বলে উঠে,
‘আমার ছেলেও এমনে কাম করতো নদীতে।তুমি সইবার পারতা না।বলতা এগুলা কাজ করতে কয় কে!এগুলা কাজ হইলো।এখন সামান্য ঘরের কাম করতে হাপায় যাও ক্যা রে।বাইত্তে বিয়ার কাম না থাকলে ধানের কাজে হাত লাগাতে কইতাম তোমারে।করতে না পারলে বাপের বাড়ি যাও গা।ডাইনি মাইয়া মানুষ,তোমার লিগা আমার পোলা আজ আমার ধারে নাই।আল্লাহ মালুম সে বাইচা আছে কিনা।’
শ্বাশুড়ির এমন কথায় দম আটকে হাসফাস অনুভূতি হয় মহুয়ার।চোখের ধারে পানি জমতে থাকে।নাজমা বেগম কথাটা শেষ করেই বড় বড় পা ফেলে বাইরের উঠোনে যায়।মহুয়া দম ছেড়ে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে আস্তেধীরে শ্বাশুড়ির আদেশ অনুযায়ী সব করতে থাকে।রিঠি তার ননদ একমাত্র ননদ।বিয়ের হয়েছে পাশের গ্রামেই। কাজের লোক সহিদা আগ-পিছ করে আগিয়ে দিতে থাকে।সেই সময় আরমান রান্নাঘরের সামনে।এসে দাড়ায়।মহুয়া ওকে দেখে তারাহুরো করে জিগাসা করে,
‘কিছু লাগবে ভাই?তুমি আসতে গেলে কেনো?আমায় ডাকতে গিয়ে দিয়ে আসতাম!’
‘হাইপার হওয়ার কিছু নেই।বলছি ভাবী লাঞ্চে আমি বাড়িতে তো থাকবোনা,তাই খাওয়াও হবেনা। আমার জন্য আলাদা যে রান্না হয় তা করতে হবেনা আজ।’
কথাটা বলেই আরমান নিজের রুমে যায়।মহুয়া আপনমনে কাজ করতে থাকে।গোসলের আগ আবার উঠোন লেপে দিতে হবে ভাবতেই গা গুলিয়ে আসে ওর।বাপের বাড়িতে কি অবস্থায় থাকতো আর এখন কত কি করতে হয়।এজন্যই আরও জিদ চাপে মহুয়ার।এত কথা শুনে তবুও বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবেনা।পিঠার জন্য বয়াম থেকে আটা বের করে পানিতে গুলিয়ে নিতে নিতে কথাটা ভাবে মহুয়া।
আরমান নিজের রুমে গিয়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলে রাখা ফোনটার উপর।একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে সেটাই জ্বলজ্বল করে আলোয়।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তোর্ষার নাম্বার।মেয়েকে দেখতে গিয়ে মেয়ের বোনের সাথে অনেকটা ফ্রি হয়ে এসেছে আরমান।কারণ একই সাথে ওরা ইন্টার অব্দি পড়াশুনা করেছে।ক্লাসমেট হওয়া সত্বেও সে সময়ে ওদের মাঝে তেমন কথা হতোনা কিন্তু জান্নাতকে দেখতে গিয়ে আসার সময় তোর্ষা আগ বারিয়ে কথা বলে নাম্বার দিয়েছে জান্নাত সহ তারও।কিন্তু কথা বলা হয়ে উঠেনি এরমাঝে একবারও।এতদিন বাদে ঢাকা থেকে ফিরেছে গ্রামের পুরাতন ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেখা করার মাঝেই সময় চলে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে গেলে আরমান নিজেই কল ব্যাক করে। একসাথে আজ শহরে বিয়ের মার্কেট করবে মেয়ের যা লাগে সব মেয়ের পছন্দে কিনতে একসাথে যাওয়া।আর ওরাও ছেলের জন্য ওদের পছন্দ অনুযায়ী কিনে দিবে সেসব নিয়ে আলোচনা করে। দুই গ্রামের মাঝে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে যে রাস্তা আছে শহরে যাওয়ার সেখানে মিলিত হবে তারা।জান্নাতদের গ্রামের নাম নেত্রপুর(ছদ্মনাম)আর আরমানদের গ্রামের নাম সুকনপুর(ছদ্মনাম) মাঝখানে রিঠির শ্বশুরবাড়ির গ্রাম বড়ইকান্দি।সেখানে সবাই একত্রিত হয়ে জেলাশহরে গিয়ে বিেয়র মার্কেট সেরে ফেলবে।এজন্য এত তোরজোর চলছে।কাল গায়ের হলুদ, পরশু বিয়ে।সময় কম বলে যতটা তাড়াতাড়ি সবটা করা সম্ভব ততটা তাড়াতাড়ি করছে আরমান।কালো জিন্স, ওফ হোয়াইট শার্টের উপর কালো ব্লেজারটা জড়িয়ে মানিব্যাগ পকেটে ডুকিয়ে ফোনটা নিয়ে রুমে দরজা দিয়ে বেরিয়ে পরে আরমান।উঠানে এসে মাকে ডেকে যাওয়ার কথা বলে অনুমতি চায়।নাজমা বেগম কলপারে এসেছিলেন কামলাদের পানি নিতে তারা পানি খাবে বলে।ছেলের যাওয়ার কথা শুনে অনুমতি দিয়ে বিরবির করে বলে উঠেন,
‘আমার আরমানটার কপাল যেন আরফাজের মতো নয় হয় খোদা।রক্ষা কইরো আমার পোলাডারে।’
কথাটা বলেই নাজমা বেগম চলে যান কাজে।মহুয়া রান্নাঘর থেকে সবই দেখতেছে।তার দাদী শ্বাশুড়ি মনিরা বেগম ভাপা পিঠা বানানোর জন্য আটার গুড়ি বানাচ্ছে।উনি মহুয়াকে রান্নাঘরের দরজার ওখানে দাড়ায় থাকতে দেখে ডেকে উঠেন।মহুয়া দাদী শ্বাশুড়ির ডাকে তার দিকে তাকায়। পাশে বসে ভাপা পিঠা ভাপ দেওয়ার গরম পানিটা দেখে পিঠা দেওয়ার জন্য দেখে নেয়।মহুয়া একটা ভাপা পিঠা বানিয়ে পাতিলে করা গরম পানির উপর দিয়ে আনমনে ভেবে উঠে,”কোথায় আপনি আরফাজ সাহেব!ভাপা পিঠা যে আপনার খুব প্রিয়।স্মৃতিগুলো কুড়ে খাচ্ছে আরফাজ সাহেব।একটাবার ফিরে আসুন, কথা দিচ্ছি আর আপনাকে আঘাত দিবোনা।”
💖💖💖
মার্কেটে দ্বিতীয় তলায় শাড়ির দোকানে একটার পর একটা শাড়ি জান্নাতের উপর পড়িয়ে চেক করে যাচ্ছে তোর্ষা।কিন্তু কিছুতেই মন মতো শাড়ি পছন্দ হচ্ছে না তার।জান্নাত পারছেনা তোর্ষার সাথে ঝগড়া শুরু করে।প্রচুর বিরক্ত লাগতেছে তার।কিন্তু মানুষ আছে বলে ভদ্রতার খাতিরে বসে আছে সে।আসতেই তো চেয়েছিলোনা জান্নাত। বাবাকে যতটা ভালোবাসে তার থেকে বেশি ভয় করে তাই বাবা আসতে বলায় তার মুখের উপর না করতে পারেনি বিধায় এসেছে।কিন্তু তোর্ষা তো বেশি বাড়াবাড়ি করছে শাড়ি চুজ করা নিয়ে।একটা পছন্দ করলেই হয়।বিরক্তিতে জান্নাত মনে মনে তোর্ষাকে বকে যাচ্ছে।তোর্ষার পিছে দাড়িয়ে আছে আরমান আর রিঠির স্বামী রাহাদ।রিঠি জান্নাতের বাম পাশে বসা,ডানপাশে তোর্ষা।আরমান এত সময় লাগিয়ে শাড়ি চুজ না হওয়ায় ফোনে এফবি স্ক্রল করছিলো হঠাৎ-ই কি মনে করে জানি দোকানে সাজিয়ে রাখা শাড়ির তাকগুলোতে নজর যায় তার।কিছু শাড়ির ভাজে আকাশী-গোলাপি কালারের সংমিশ্রণে একটা শাড়ি দেখে তার ভালো লাগে।একবার শাড়ির পানে তাকিয়ে জান্নাতের দিকে তাকায় সে।হলুদ ফর্ষা মেয়েটাকে ভালো মানাবে শাড়িটা।তাই দোকানদারকে উদ্দেশ্য করে শাড়িটা বের করতে বলে।শাড়িটা বের করলে তোর্ষা দেখে বলে উঠে,
‘আরে আরমান বিয়ের বেনারসি লাল হয়,তুমি এসব কি কালার চয়েজ করো?’
‘আপা মনে হয়না তুই এবার বেশি বেশি করছিস?পুরো মারকেট ঘুরিয়ে তোর শাড়ি চুজ হয়না।যদি এমনই হয় তো দুলাভাইকে বল শাড়ির মারকেট দিতে তোর পছন্দে।মানুষকে এভাবে বিরক্ত করছিস কেনো?’
তোর্ষার কথায় আরমান কিছু বলার আগেই দাঁতে দাঁত পিষে কথাটা বলে জান্নাত। তোর্ষা দমে যায় বোনের কথায়।সব শাড়িই তো চুজ করা শেষ শুধু বিয়ের বেনারসিটাই পছন্দ করতে হিমশিম খাচ্ছিলো তোর্ষা।আরমানের বোনটাও কিছু বলছেনা এসব ব্যাপারে।তাই সে নিজেই একা সব চয়েজ করছিলো বলে সময় লাগছিলো।তাই বলে এভাবে বলতে হবে।গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকায় তোর্ষা।জান্নাত বোনের এই অবস্থা দেখেও কিছু বলেনা।আরমান পরিস্থিতি সামলাতে দোকানদেরকে শাড়িগুলো প্যাকিং করতে বলে সে কাউন্টারে গিয়ে বিল পে করে দেয়।তারপর সবাইকে নিয়ে কসমেটিকস এর দোকানে ঢুকে সব কিনে নেয় দীর্ঘ চারঘন্টা লাগিয়ে।
তারপর একটা রেস্তোরাঁয় খেয়ে সিএনজিতে উঠে রওনা দেয় বাসার উদ্দেশ্যে।
💖💖💖
‘মহুয়া ভালো আছো তুমি?শান্তিতে আছো তো!এটাই তো চেয়েছিলে যেন মুক্তি দেই তোমায়!ছেড়ে তো এসেছি মুক্তি দিয়ে।কিন্তু আমার মনে এত যন্ত্রণার দহনে পুড়তে কেনো হয় বলোতো?’
মহুয়ার একটি ছবি হাতে নিয়ে সোফায় বসে ছিবিটা দেখে বিরবির করতে করতে কথাটা বলে আরফাজ।পিছন থেকে ছাব্বিশ বছর বয়সী একটা মেয়ে এসে হাত রাখে আরফাজের কাধে।আরফাজ কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছন ফিরে তাকায়। মেয়েটাকে দেখে আরফাজ বলে উঠে,
‘শিখা তুমি?কলেজে না গিয়ে এখন এই সময় বাসায় কি করো?তোমার তো আজ ইম্পরট্যান্ট ক্লাস করানোর ছিলো সেখানে।তাহলে বাসায় যে!’
‘আর কত তার দহনে পুড়বে আরফাজ?মনে হয়না কি বাসায় ফেরা উচিত তোমার!একটা মেয়ের জন্য তোমার পরিবারকে কষ্ট দিচ্ছো। এটা কি ঠিক আরফাজ?’
শিখার কথায় মুচকি হাসে আরফাজ।তারপর সোফা ছেড়ে উঠে শিখার মুখোমুখি দাড়িয়ে আরফাজ বলে উঠে,
‘সে আমায় মরতে বলতে দুবার ভাবেনি শিখা!তার জীবন নষ্ট করেছি না আমি,চলে আসছি সুখে থাকুক সে।সে বলেছিলো আমি মরলে বাবার বাড়িতে গিয়ে আবার শান্তিতে জীবন পার করতে পারবে,তো থাকুক না হয় শান্তিতে। বাকি সব আগুনে পুড়ুক।’
শিখা আরফাজের কথায় তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দেয়।তারপর ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে উঠে,
‘এত ভালোবাসা!কিন্তু আরফাজ এতকিছুর পরও তো সে ফিরে যায়নি বাবার বাসায়। তোমার মায়ের অকথ্য গালিগালাজ,অত্যাচার সহ্য করে দাতে দাত পিষে তোমার বাসায় কেনো পরে আছে বলোতো?’
শিখার কথায় আরফাজ বিমূঢ় মূর্তির মতো দাড়িয়ে রয়।শিখা কথাটা বলে চলে যায় রুমের দিকে।আরফাজের ইচ্ছে করছিলো শিখাকে জিগাসা করতে শিখা এসব জানলো কিভাবে।সে তো গ্রামে যায়নি এর মাঝে তাহলে মহুয়ার খবর জানলো কিভাবে!মাথায় প্রশ্ন গিজগিজ করছে আরফাজের।এত কিছু ভাবা বাদ দিয়ে এগিয়ে যায় শিখার রুমের দিকে।শিখার রুমের সামনে দাড়িয়ে দেখতে পায় শিখা বাচ্চাকে তার শ্বাশুড়ির থেকে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে।তাই বিরক্ত না করে নিজের রুমে চলে আসে।
শিখা আরফাজের বড় চাচা সাইফুল শিকদারের মেয়ে।শিখা, আরফাজ একই বয়সী।শিখা ভালোবেসে তাদেরই বন্ধু রিহানকে বিয়ে করে।রিহান বেকার ছিলো আর তাদের সাথে শিকদার বাড়ির মর্যাদা মিলে না বলে সাইফুল শিকদার মেয়ের অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে চাইলে পালিয়ে বিয়ে করে নেয়।শিখা শহরে এসে কলেজের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ শুরু করে।অনেক কষ্ট করে জবটা ম্যানেজ করেছিলো শিখা।রিহান তখনও বেকার ছিলো।রিহানের বাবা ছিলোনা, রিহানকে ছোটো রেখেই মারা যায় রিহানের বাবা।রিহানের মা ওকে লেখাপড়া শিখিয়ে কষ্ট করে মানুষ করে।সেজন্যই শিখার বাবার মেয়ের ভালোবাসা মানতে পারেন না।শিখার বিয়ের দিন আরফাজের সাহায্য নিয়ে শিখা পালিয়ে শহরে আসে।এজন্যই আজও শিকদার বাড়ির কেউ শিখাকে মেনে নিতে পারেনি।তাই শিখাদের সাথে শিকদার বাড়ির কারোর যোগাযোগ নেই।দিনের পর দিন আরফাজের সাহায্যে দিন পার করে শিখারা।বিয়ের একবছর পর রিহানের জব হয়।দুবছর হয়েছে ওদের বিয়ের।আজ ওদের ছোট্ট একটা ছেলে আছে আটমাস বয়সের।তার আর মহুয়ার মাঝে সব ঠিক থাকলে হয়তো আজ তাদেরপ একটা সন্তান হতো।কারণ শিখার বিয়ের পরেই তো মহুয়াকে বিয়ে করে সে।কিন্তু হায় জীবনটা আজ শূণ্যতায় ভরপুর।রিহানের জব হলে গ্রাম থেকে শ্বাশুড়িকে আনতে গিয়ে আরফাজকে নদীর পানিতে নিজেকে শেষ করে দিতে দেখে শিখা আর রিহান মিলে টেনে তুলে আনে রাতের আধারে।ভাগ্যিস শিকদার বাড়ির কারোর সামনে পড়তে না হয় সেজন্য রাতের বেলাতেই তারা রওনা দিয়েছিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।নয়তো আরফাজের লাশ নদীতে ভেসে উঠতো কথাও একটা।”
নিজের রুমে বসে আরফাজ একবছরের আগের অতীত বিচরণে ব্যস্ত যখন শিখা আবারও আরফাজের রুমের সামনে দাড়িয়ে বলে,
‘কাল আরমানের গায়ে হলুদ,পরশু বিয়ে।ভাইয়ের বিয়েতে যাবেনা?’
শিখার কথায় আরফাজ পিছন ফিরে তাকায়। অবাক হয় খুব। তার ছোটো ভাইটা বিয়ের আসরে বসবে,অথচ সে যেতে পারবেনা।কথাটা ভেবে মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে বিছানায় বসে আরফাজ।এত যন্ত্রণা কেন তার জীবনে!আনমনে ভেবে উঠে সে।শিখা তখনও দরজার সামনে দাড়িয়ে।
#মন_মহুয়ায়_শুণ্যতা
#পর্বঃ৪
#Tasfiya Nur
সময়টা প্রায় সন্ধ্যা।আজ জান্নাত আর আরমানের গায়ে হলুদ।গায়ে হলুদের জন্য সাজানো স্টেজে বসে আছে জান্নাত।গায়ে হলুদের শাড়ি আর কাচা হলুদরঙ গাদা ফুলের গহনা,চুল খোপা করে বেধে তাতে গোলাপ ফুল গুজে দেওয়া। মুখে হালকা মতো মেকআপ, ঠোটে গাড় লাল লিপস্টিক দেওয়া।মোবাইলের গ্যালারিতে থাকা পিকটা এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে তাকিয়ে দেখছে আরমান।তোর্ষা কে বলেছিলো সে জান্নাতের হলুদ সাজের পিক যেন দেয়।তোর্ষা সেই কথা রাখতেই আরমানকে পিকটা দিয়েছে।ছেলের পক্ষ হতে মানুষ গিয়েছে মেয়েকে হলুদ মাখাতে।ওরা আসলে তার পরপরই মেয়েপক্ষ আসবে আরমানকে হলুদ মাখাতে।কিন্তু আরমান সে তো জান্নাতকে দেখতে ব্যস্ত।তাকে দেখতে দেখতেই তার মনে পরে গেলো জান্নাতকে প্রথম দেখার দিন। সৌভাগ্যক্রমে যেদিন আরমান বাড়িতে আসছিলো যেই বাসে সেই বাসেই জান্নাত উঠেছিলো।বোরখা সাথে মানানসই হিজাব পরিহিত জান্নাতকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয় তার।আরমানের থেকে দুই সীট পিছনেই জান্নাতের সীট ছিলো।কিন্তু বাসে এত মানুষ থাকায় জান্নাত তাকে খেয়াল করেনি তার উের আবার আরমানের মাথায় ক্যাপ আর মুখে মাস্ক ছিলো।চেনা একটু কঠিনই বটে।বাস থেকে নামেও দুজন একসাথে।গাড়ি থেকে জেলাশহরে নেমে সিএনজি ধরে সব গ্রামের হাটবাজার বসে এক জায়গায়। সেখানে নেমে অটো ভ্যান ধরে যার যার গ্রামে যেতে হয়।আর সেখান হতেই জান্নাতের গ্রামের নাম জানে আরমান।জান্নাতদের গ্রামের বাজারে নামার সময় জান্নাতের বাড়ি থেকে আসা কাজের লোক জান্নাত নামতেই বলে উঠেছিলো যে,জমিদার বাবু তারেই পাঠিয়েছে জান্নাতকে নিতে।সেখান থেকে আরও সহজ হয় আরমানের জান্নাতকে খুজে পেতে।তাইতো সে বাড়িতে আসার পর বিয়ের কথা তুলতেই বলে দেয় ওমুক গ্রামের জমিদারের মেয়েকে পছন্দ তার।জান্নাতের বাবার জমিদারীর অধীনে আরমানদের গ্রাম সহ আর আটটি গ্রাম।তাই আরমানের বাবা প্রথমে ভয় পান পছন্দ হয় কিনা তাদের পরিবারকে।এই ভেবে উনি যেতে চাননি।পরে ঘটকের মারফত খবর পাঠালে উনারা যেতে বলেন আরমানদের।সব খবর নিয়ে বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়।আরমানের সদ্য নতুন চাকরি। প্রথম মাসের বেতন তুলে মা-বাবা,দাদা-দাদী,ভাই-ভাবী,বোন-বোন জামাইয়ের জন্য গিফট কিনে নিয়েই গ্রামে আসা তার।সেখানে বিয়ের কাজটাও হয়ে গেলো তার।আরফাজের কথা মাথাতে আসতেই আরমানের চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়।ফোন ঘেটে ভাইয়ের ছবিটা বের করে বুকের সাথে চেপে ধরে বিরবির করে বলে উঠে,
‘মিস ইউ ভাই!হোয়ার আর ইউ!প্লিজ কমা ব্যাক।আই মিস ইউ সো মাচ।’
কথাটা শেষ হতেই দরজা খুলে আরমানের রুমে প্রবেশ করে রাহাদ।আরমান ছোটো বোনের স্বামীকে রুমে ঢুকতে দেখেই ফোনটা বিছানায় রেখে বলে উঠে,
‘কোনো দরকার রাহাদ?এসময় রুমে আসলে যে!বাইরে সব ঠিক আছে তো?
‘হ্যা ভাইয়া সব ঠিক আছে, শুধু আপনাকে নিতে আসলাম বাইরে ওয়েট করছে সবাই।মেয়েপক্ষ এসেছে হলুদ মাখাতে।আমাদের লোকজনরাও এসে গেছে।তাই আম্মা আপনাকে নিতে পাঠালো।’
রাহাদের কথায় হলুদ পান্জাবীর উপর হলুদ ব্লেজারটা চাপিয়ে নেয় আরমান।প্রচুর শীত পড়েছে এরমাঝে যে কিভাবে এতক্ষণ বসে থাকবে ভেবে পেলোনা আরমান।তারপর রাহাদের সাথে উঠোনে যায়। উঠোনের পূর্বপাশে সাজানোর স্টেজে বসানো হয় তাকে।প্রথমে আরমানের দাদী এসে হলুদ ছুয়িয়ে শুরু হয় হলুদ অনুষ্টান।সবাই প্রায় হলুদ মাখালেও মহুয়াকে কোথাও দেখতে পেলোনা আরমান।আরমানের থেকে একটু দূরে দাড়ানো মনিরা বেগমকে দেখে আরমান হাতের ইশারায় ডাকেন।নাতীর ডাক পেয়ে মনিরা বেগম ভীর উপেক্ষা করে এগিয়ে গেলে আরমান তাকে জিগাসা করে বলে,
‘কি ব্যাপার দাদী!ভাবীকে কোথাও দেখছিনা কেনো?’
মনিরা বেগম আরমানরে কথায় একটু চিন্তায় পরেন।মহুয়ার সাথে যে বিকেলে তার পুত্রবধূর ভাইবউরা আর তার নাতনী রিঠি যে ব্যবহার করেছে তা বললে এখন তুলকালাম হবে।তাই তিনিসেসব এড়িয়ে আরমানকে বলেন,
‘মহুয়া একটু অসুস্থ দাদুভাই।মেয়ে মানুষ বুঝোয় তো কি হয়। ‘
আরমান দাদীর কথা বিশ্বাস করে হলুদের অনুষ্ঠানে মনোনিবেশ করে।মনিরা বেগম হাফ ছেড়ে বাচেন।ওখান থেকে সরে গিয়ে বড় ছেলের বউয়ের পাশে চেয়ার টেনে বসে পরেন।সবাই স্টেজের সামনে সাজিয়ে রাখা চেয়ারে বসে যে হলুদ অনুষ্টান দেখছে।
💖💖💖
সবেমাত্র গোসল সেরে বেরুলো জান্নাত।মাথা থেকে টাওয়েল খুলে রুমে রাখা ছোট সোফায় ছুড়ে মেরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে যায়। হেয়ার ড্রয়ার নিয়ে চুল শুকাতে শুরু করে।শহরে পড়াশুনা করার দরুণ বাড়ির বাকি রুম গুলোর থেকে তার রুমে আভিজাত্যের ছোয়া বেশি।জমিদারের মেয়ে হওয়ার দরুণ কখনও কোনো কিছুর অভাব হয়নি।তাছাড়া তাদের গ্রামগুলোতেও আধুনিকতার ছোয়া আসতে শুরু করেছে।তাই যত্রতত্র সব জিনিস অহরহ পাওয়া যায়।চুল শুকানো শেষ হতেই হাতে পায়ে লোশন মেখে বিছানায় কম্বল টেনে নিয়ে শুয়ে পরে।আজ বেশ ধকল গেলো বেচারির উপর দিয়ে।শীতের ভিতর এই সন্ধ্যায় গোসল করা কি ভয়ংকর কষ্টকর ব্যাপার।কিন্তু তার থেকে বড় ভয়ংকর কষ্ট যে তার মনের ভিতর বয়ে চলেছে তার খোজ কে রাখে।কম্বলের নিচে ঢুকে আনমনে এসব ভাবছে জান্নাত।হুট করে একটা কথা মাথাতে আসতেই কম্বলের নিচ থেকে মাথা বের করে বেড সাইড টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে মেসেন্জারে লগ ইন করে।হলুদে তোলা কয়েকটা পিক একজনের আইডিতে সেন্ড করে একটা মেসেজ লিখতে শুরু করে।মেসেজে ছোট্ট করে লিখে সে,”ভালো থেকো প্রিয় ভালোবাসা।কাল থেকে সম্পূর্ণ আমি অন্যকারো হবো।”লিখাটা শেষ হলে সেন্ড করে ডাটা ওফ করে ফোনটা আবার আগের মতো করে রেখে শুয়ে পরে।বাড়ির ছাদে সবাই এখনও মজা করছে। পুরো বাড়ি আত্মীয় স্বজনে গিজগিজ করছে।এসবে মাথাটা ধরে যাচ্ছে জান্নাতের। কিন্তু সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই।কফি খেলে ভালো লাগবে,এই ভেবে গায়ে শাল জড়িয়ে রুম থেকে বাইরে বেরোয় জান্নাত।রান্নাঘরে যাওয়ার আগেই দেখা হয়ে যায় বোন তোর্ষা আর মা আহিদা বেগমের সাথে।তাদের কেউ যেন একজন কফি করে রুমে নিয়ে যায় এই বলে রুমের দিকে পা বাড়ায় সে।রুমের কাছাকাছি যেতে দেখা হয় বড় ভাই সুজনের সাথে। বিয়ে নিয়ে বড্ড ছুটছে সে।অভিমানী চোখে তাকায় সে ভাইয়ের দিকে।সুজন বোনের দিকে একনজর দেখে সে তার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।বোনের বিয়ে প্রচুর কাজ তার।কিন্তু তার বোন যে তার কাছে একটা আবদার করেছিলো তাতো সে রাখেনি।জান্নাত শেষ ভরষা হিসেবে ভাইকে বলেছিলো বিয়ে ভাঙতে কিন্তু সুজন তার বোনের অন্যায় আবদারটা রাখেনি।ভাইয়ের পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রুমে ঢুকে দরজা এলিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে জান্নাত।একটুপর তোর্ষা কফি হাতে ঢোকে।কফিটা জান্নাতকে দিয়ে বসে পরে বোনের পাশে। নিশ্চুপ দুবোন বসে আছে।জান্নাত কফি খেতে খেতে ফোনটা আবার চেক করে।নিষ্ঠুর মানুষটা তার মেসেজ সীনই করেনি এখনও।তোর্ষা একমনে চেয়ে বোনের কাজকর্ম দেখছে।চাইলেও কাল থেকে পারবে না যখন তখন বোনকে দেখতে।তারও তো একদিন এইভাবে আড়াল হয়ে যেতে হবে বাবার বাড়ি ছেড়ে।ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তার।শুধুমাত্র আকদ হয়ে আছে বলে আজ সে বাবার বাড়ি।স্বামী তার প্রবাসী, দেশে আসলেই উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে।এসব ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তোর্ষা।
🦋🦋🦋
বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে চোখের পানি বির্সজন দিচ্ছে মহুয়া।এই ব্যতীত তার কাজ নেই আপাতত।তার এই অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ী।তবুও বেহায়া মন কষ্ট পেয়ে কাদে।চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে তাকে বিকেলে করা অপমানগুলো।উপুর থেকে সোজা হয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো বিকেলের কথা।
বিকেলে,,
মহুয়াকে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য তার শ্বাশুড়ি পায়েস করতে বলেছিলো তাকে।সাথে হলুদ মাখানোর হলুদটাও পাটায় পিষতে বলেছিলো মিহি করে।রান্নাঘরে বসে এসব করছিলো মহুয়া।বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে আসা আত্মীয় স্বজনে পা ফালানোর জো নেই।উঠোনে হেঁশেল খুড়ে বাবুর্চি দিয়ে রান্না করানো হচ্ছে সবার জন্য। বাড়ির বাকি সব বউ-ঝি তারা হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে বিধায় মহুয়াকে এই দায়িত্ব দেয় তার শ্বাশুড়ি। সে যখন এসব করছিলো রিঠি প্রবেশ করে সেখানে।মহুয়াকে এসব করতে দেখে মহুয়াকে বলেছিলো,
‘বাহ!আমার বড় ভাইয়ের খুনী আজ আমার ছোটো ভাইয়ের হলুদের জন্য হলুদ বাটছে।তা বিধবাদের যে হলুদ বাটতে নেই জানোনা?তাতে যে নতুন জোড়া বাঁধা হওয়া বর বউয়ের অকল্যাণ হয় জানোনা?’
রিঠির কথায় মহুয়ার চোখ জলে ভরে উঠে।বুকের ভিতরটায় যেন কেউ ছুড়ি দিয়ে ফালাফালা করছে এমন অনুভূতি হচ্ছিলো মহুয়ার।অনেক কষ্ট নিজেকে সংবরণ করে ননদকে উত্তর দেয়
‘তোমার ভাই মারা গেছে কিনা এটাই তো নিশ্চিত না রিঠি আপু।এভাবে কও ক্যান?’
ব্যস মহুয়ার এক কথা আগুনে ঘি ঢালার মতো হয়েছিলো।রিঠি চিৎকার করে তার মা, মামী, দাদী,বড় চাচিদের জোড়ো করে ফেলে। তারাও নানান কথা বলতে থাকে।রিঠি তো ঠিকই বলেছে এই কথা বলে নাজমা বেগমকেও দোষারোপ করেন এই বলে,বিধবাকে কেন হলুদ বাটতে দিছে সে।এরমাঝে তো মহুয়ার ছোটো মামী শ্বাশুড়ি বলেই বসেন তখন যে,
‘আমাগো আরফাজ বাবা তো একবছরের লাহান সংসার করছে তোমার সাথে।তাইলে বাচ্চা ক্যান নেও নাই।বান্জা(গ্রামের ভাষায় বন্ধ্যাকে বান্জা বলে আমাদের গ্রামে)নাকি তুমি হ্যা?একেতো বিধবা তার উপর বান্জা। তোমার খারাপ নিয়তির প্রভাব আমাগো আরমান বাবার উপর পরবো।বিয়ের মতো শুভ কাজে তোমার মতো অশুভ ছায়া না পড়াই ভালা।’
বাকিরা তো এই কথা শুনে আর মশলা মাখিয়ে কথা শুনাতে শুরু করে।মনিরা বেগম আর নাজমা বেগমেরও এইসব শুনতে কষ্ট হচ্ছিলো খুব।তার ছেলে মারা গেছে কিনা এটাই তো নিশ্চিত না।তারপরও এসব কেনো হচ্ছে!এই ভেবে নাজমা বেগম মহুয়াকে ধমকে ঘরে যেতে বলে,সাথে বিয়ের কাজগুলোর ধারে কাছে ঘেষতেও মানা করে।মহুয়া তখন মেঝের দিকে তাকিয়ে কাদছিলো।শ্বাশুড়ির ধমক শুনে একদৌড়ে ঘরে এসে শুয়ে কাদছে তো কাদছে থামার নাম নেই।
ফোনের মেসেজ টোনে বিকেলের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মহুয়া।ফোনটা নিয়ে ইনবক্সে ঢুকে মেসেজ পড়ে।মেসেজে লিখা আছে,”কেমন লাগলো সারপ্রাইজ আগুন সুন্দরী?বিকেলের অপমানটা খুব সুন্দর বলো!এতকিছুর পরও কেনো পরে আছো এই বাড়িতে?চলে যাও না বাপের বাড়ি।আগের মতো ভালো থাকো।” মেসেজটা পড়া শেষ হতে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় মহুয়া।শুয়ে থাকা অবস্থা দেখে উঠে বসে ব্যালেন্স চেক করে মেসেজ কিনে নেয় সে।তারপর রিপ্লাই করতে বাটন চেপে টাইপ করে,”পিপিড়ার পাখা গজায় মরিবার তরে।বলছিলাম না শিকদার পরিবারের কোনো ক্ষতি করবেনা।কিন্তু তুমি শুনার মানুষ না।তাই যেতে পারলাম না সরি।জানি আজ বিকেলের ঘটনা তোমার সাজানো।রিঠি আমারও একবছরের ছোটো।তার মাথায় এসব কথা আসবেনা।ভুলে কেনো যাও তোমার প্রাণভোমরা আমার হাতে আছে।” মেসেজটা লিখা শেষ হতেই সেন্ড করে চুল চেপে থম মেরে বসে থাকে মহুয়া।মেসেজটা সেন্ড হওয়ার দুমিনিটের ভিতরেই রিপ্লাই আসে।মহুয়া মেসেজটা ওপেন করে দেখে তাতে লিখা, “আমি উড়ছিনা মহুয়া।উড়ছো তুমি।শিকদার বাড়ির সম্পত্তি আমার চাই মহুয়া।রাস্তা থেকে সরে।দাড়াও নয়তো খুব খারাপ হবে।” মহুয়া মেসেজটা পড়ে ফোনটা রেখে দিলো।মানুষটাকে যত ঘাটাবে বিপদ বাড়বে,এই ভেবে সে বিছানা ছেড়ে উঠে শাড়ির আচলটা ঠিক করে গায়ে জড়িয়ে বিছানার তলায় রাখা ট্রাঙ্ক খুলে ল্যাপটপ নিয়ে বের করে নিয়ে বিছানায় বসে।ল্যাপটপ ওপেন করে একটা জিনিস চেক করে নেয়।”না সব ঠিক আছে।অনেক হয়েছে লুকোচুরি এবার আরও স্ট্রং প্রমান বের করে তোমায় ধ্বংস আমিই করবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড সী।” কথাটা আনমনে ভেবে মহুয়া ল্যাপটপ পুনরায় আগের জায়গায় রেখে চুলগুলো আটকে নেয়।রুমের জানালার কাছে এসে খুলে দেয়।জানালা দিয়ে সরাসরি আরমানের হলুদের জন্য সাজানোর স্টেজ দেখা যায়।মহুয়া সেটাই দেখতে লাগলো মন দিয়ে।
💖💖
‘আরমানের হলুদটা আজ হয়েই গেলো।তুমি সত্যিই আর ফিরবেনা আরফাজ!’
ডাইনিং টেবিলে বসে রাতের খাবার খাচ্ছিলো শিখা,রিহান আর শিখার শ্বাশুড়ি সহ আরফাজ।খেতে খেতেই উক্ত কথাটি জিগাসা করে শিখা।আরফাজ খাওয়া থামিয়ে শিখার দিকে তাকায়।শিখা এসব কিভাবে জানছে এটা কাল থেকে প্রশ্ন করতেছে কিন্তু শিখা উত্তর দেয়না।উল্টে আরও ইনফরমেশন তাকে জানায়।আরফাজ খাওয়া রেখে শিখাকে প্রশ্ন করে,
‘কি হয়েছে শিখা বলোতো?তুমি এসব এত কিছু কিভাবে জানো?তোমার তো গ্রামের কারোর সাথে তেমন যোগাযোগ নেই বলে আমি জানি।তা এসব জানতেছো কেমনে তুমি? ‘
সবার দৃষ্টি এখন আরফাজ আর শিখার দিকে।রিহান খাওয়া রেখে তার বউ আর বন্ধুকে দেখছে।তাকিয়ে তাকিয়ে।শিখার শ্বাশুড়ি একপলক পরিস্থিতি দেখে খেতে থাকেন।উনি বয়স্ক মানুষ, খেয়ে শুয়ে পরলে বাচেন।শিখা মুচকি হেসে উত্তর দেয়,
‘বাদ দাও এসব প্রশ্ন।বাড়ি ফিরো আরফাজ শিকদার।মহুয়া আজ আর ভালো নেই, সেআজ চরম ভাবে অপমানিত হয়েছে। যার ভালোর জন্য এসব করলে সেই যদি ভালো না থাকে,তোমার তার জীবন থেকে চলে যাওয়ার মানে হয়না।’
‘তোমার আরফাজের ব্যাপার নিয়ে না মাথা ঘামালেও চলে শিখা।শতহোক আরফাজ আর তুমি একসাথে পড়লেও সমবয়সী হলেও আরফাজ তোমার একবছরের বড়।বড় তো বড়ই এক সেকেন্ডের জন্য হলেও বড়।তার জীবনে তোমার সিদ্ধান্ত চাপানো উচিত নয়।’
এতক্ষণে মুখ খুলে কথাটা বলে শিখার স্বামী রিহান।আরফাজ শূন্য দৃষ্টিতে শিখার দিকে তাকিয়ে জিগাসা করে,
‘কি হয়েছে আজ বলবে প্লিজ?’
শিখা আরফাজকে মহুয়ার সাথে ঘটা বিকেলের কথাগুলো বলে দেয়।আরফাজ তা শুনে রাগে ফেটে পরে।যে তার প্রাণপাখি,সেই ভালো নেই।তবে কেনো এই দূরত্ব। সময় এসেছে দূরত্ব মেটানোর। কথাটা ভেবেই রাগটা দমন করে নেয় আরফাজ।চুপচাপ হাত ধুয়ে চলে যায় রুমে।শিখা হতাশ দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।ভাইয়ের এই ছন্নছাড়া জীবনতার ভালো লাগছে না বলেই প্ল্যান করে এতকিছু করছে সে।
চলবে?
(