#মন_যাকে_চায়
#পর্ব_৪
#সুবর্ণা_আক্তার_জুথি
অনুভবের হাসি দেখে ইশিতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।আর এদিকে অনুভব হো হো করে হেসেই চলেছে।
“ইউ আর সো ফানি ইশিতা।” উঠে বসে বললো অনুভব।
“যাক তাহলে অবশেষে তোমার মুখে হাসি ফুটলো। দুইদিন ধরে এই হাসিটা খুব মিস করছিলাম।”
অনুভবের কাঁধে মাথা রাখলো ইশিতা।
অনুভব সরে যেতে চাইলে ইশিতা অনুভবের হাত চেপে ধরলো।”আর বললো কেনো তুমি আমার সাথে এমন করছো? কি আমার অপরাধ?”
“আমি যদি কোন ভুল করে থাকি তাহলে তুমি আমাকে শাস্তি দাও তবুও তোমার অবহেলা আমি মেনে নিতে পারছি না।”
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে অনুভব। চোখের কোন বেয়ে পানি
গড়িয়ে পড়ছে ইশিতার।
অনুভব বুঝতে পারছে ইশিতা কাঁদছে।
অনুভব তো সত্যি বলতে পারবে না সে তো কারো অনুরোধে আবদ্ধ হয়ে আছে।সে চাই নি এই মিথ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক। তাকে তো একপ্রকার বাধ্য করা হয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই সে নিজেকে এই বন্ধন থেকে মুক্ত করে নিবে।
“শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা।”
আস্তে আস্তে ইশিতার কান্না থেমে গেল। অনুভব ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ইশিতা ঘুমিয়ে পড়েছে।
অনুভব আস্তে করে খুব যত্ন সহকারে ইশিতা কে শুইয়ে দিল। ইশিতা কে শুইয়ে দিয়ে সরে আসতে যাবে তখনই গেঞ্জিতে টান পড়লো।
ইশিতার চুলের সাথে অনুভবের গেঞ্জির বোতাম আটকে আছে।
“হয়তো কেউ চাইছে তারা আলাদা না হোক। দুজনকে একসাথে বেঁধে রাখার চেষ্টা করছে নিয়তি।”
অনুভব আস্তে করে চুলগুলো ছাড়িয়ে দিলো। ঠিক তখনই শুনতে পেলো ইশিতা ঘুমের ঘোরে কিছু একটা বলছে।আরেকটু এগিয়ে গেলো অনুভব তারপর শুনলো……..
“আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি অনুভব। তুমি তো আমার সবচেয়ে আপন ছিলে। কিন্তু এই দুদিন তোমাকে খুব অচেনা লাগছে। মনে হচ্ছে তুমি আমার অনুভব না। এমন কেন করছো তুমি?
“প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দিও না। আমি তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে পারবোনা।”
অনুভব উঠে বারান্দায় চলে গেল। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর আবার ঘরে চলে আসলো। এসেই ইশিতার নিষ্পাপ চেহারার দিকে নজর পড়ল। সবসময় এতো ছটফট করে আর এখন একদম বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।ইশিতার গায়ে চাদর দিয়ে অনুভব সোফায় শুয়ে পড়ল।যদিও সোফায় শুতে তার খুব কষ্ট হয় তারপরও শোয় কারন সে ইশিতার সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতে চাই না।
চোখ বন্ধ করতেই ফোনটা ভাইব্রেট হতে শুরু করলো।
অনুভব ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে খুব দ্রুত কলটা রিসিভ করলো।
ওপাশ থেকে নারী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।
“আই এম সরি বেবি, আমি এই দুই দিন তোমার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারিনি।”
“আই মিস ইউ ডার্লিং।”
আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে ফিরে যাবো।
“প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড বেবি লাভ ইউ বাই।”
ফোন রেখে পিছনে তাকিয়ে দেখলো ইশিতা দাঁড়িয়ে আছে।
অনুভব কথা বলার জন্য বারান্দায় চলে এসেছে। কিন্তু ইশিতা কখন যে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে টের পায়নি।
ভয়ে অনুভবের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।দরদর করে ঘামতে শুরু করলো।
“এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিলে তুমি?”
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অনুভব। ইশিতা এবার জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো।
“তুমি কি ভেবেছিলে আমি এই কথাটা বলবো তাইনা?”
তাহলে একদম ভুল ভেবেছো। তোমাকে নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করি আমি। হয়তো কোন কারনে তুমি আপসেট হয়ে আছো আর সেটা আমাকে জানাতে চাইছো না। তাই তুমি না চাইলে তোমার পার্সোনাল বিষয়ে জানতে চাইবো না।
ওকে ফাইন আমি আর তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো না। তোমার যখন ইচ্ছে হবে বলো।
কিন্তু এখন এসে ঘুমিয়ে পড়ো।
অনুভব যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো তারপর ইশিতার পিছুপিছু ঘরে এসে সোফায় শুতে যাবে তখন ইশিতা বললো।
তুমি নিশ্চিন্তে বিছানায় ঘুমাতে পারো তুমি না চাইলে আমি তোমার কাছে যাবো না। ইশিতা খাটের এককোনে শুয়ে পড়ল।
অনেক ভেবে অনুভব ইশিতা কে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।
অভিমানী ইশিতা নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগল। সেটা অবশ্য অনুভব বুঝতে পারলো।
একবার মন চাইছে ইশিতা কে কাছে টেনে নিতে। আবার পরক্ষনেই মন বাঁধা দিচ্ছে। “অনুভবের মনের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়েছে।”
“আসলে তার মন কি চায়???”
____________
চেঁচামেচির শব্দে অনুভবের ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলেই ইশিতার মুখ দেখতে পেল।ইশিতা অনুভবের একটা হাত জড়িয়ে শুয়ে আছে।যেন হাত ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। অনুভব খুব সাবধানে হাতটা ছাড়িয়ে নিল তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেল।
“তানিয়া খান গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কথা বলছে রাজীব চৌধুরীর সাথে।”
তাহেরা বেগম চুপ করে বসে আছে। লিজা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। অনুভবের ফুপু নিজের ঘরে আছে। এসব তিনি কয়েক মাস ধরেই দেখছেন তাই শুধু শুধু নিজের মুড খারাপ করার জন্য বাইরে আসেনি।
অনুভব কে নেমে আসতে দেখে তানিয়া খান আরো রেগে গেল আর তাহেরা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো আপা,আমি আজকেই লিজা কে নিয়ে যাবো।
“যেকারনে এখানে ছিল তা আর সম্ভব নয় তাই শুধু শুধু এখানে পড়ে থেকে কি করবে?”
“আমি লিজা কে নিয়ে গিয়ে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবো।”
না তানিয়া লিজা কে তুই নিয়ে যাসনা। আমি লিজা কে ছাড়া থাকতে পারবো না। সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমি ওকে কোলে পিঠে করে বড় করেছি।
“ও আমার মেয়ে।”
হাঁ মানছি আমি লিজা কে আমার ছেলের বৌ বানিয়ে সারাজীবন নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি সেটা করতে পারিনি। আমার নিজের ছেলে আমার কথা রাখেনি। কিন্তু তাই বলে তুই লিজা কে এভাবে নিয়ে যেতে পারিস না।
না আপা তখন বিষয়টা অন্য ছিল তখন তুমি আমাকে বলেছিল লিজা কে অনুভবের বৌ করবে। এখন যখন আর তা হচ্ছে না তাহলে তো এখানে থাকার কোন মানেই হয় না।তার চেয়ে বরং লিজা এখন থেকে আমার সাথে থাকবে আর খুব শীঘ্রই আমি ওর বিয়ে দিয়ে দেবো।
এটা কি বলছো তানিয়া? বাচ্চা একটা মেয়ে সবে এইচএসসি দিয়েছে।এখনই বিয়ে দেবে?
আমার মেয়ের ভালো কিসে হবে তা আমি দেখে নেবো।
লিজা আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে খালামনিকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না খালামনি।
“তুমি প্লিজ মাকে বোঝাও।”
“এতক্ষণ নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনুভব এবার মুখ খুললো, লিজা যখন যেতে চাইছে না জোর কেন করছেন?”
এই অনুভব তুই একদম এই বিষয়ে নাগ গলাবী না। এটা আমার আমার মেয়ের বিষয়।
ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, হতে পারে এটা আপনাদের পার্সোনাল ম্যাটার কিন্তু এখানে আমার ফ্যামিলী জড়িয়ে আছে তাই আমাকে কথা বলতেই হবে।
রাজীব চৌধুরী এবার তানিয়াকে অনুরোধ করে বললো লিজা কে রেখে যেতে। কিন্তু সবার কথাটা উপেক্ষা করে তানিয়া খান লিজার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইলো।
ইশিতা দৌড়ে এসে লিজার হাত ছাড়িয়ে নিল। তানিয়া খান ইশিতা কে দেখে খুব রেগে গেলেন আর বললেন তোর এতবড় সাহস বলে ইশিতা কে থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুললো। ইশিতা ভয় চোখ বন্ধ করে নিল।
“কারো আহ্ শব্দ শুনে চোখ মেলে দেখলো অনুভব তানিয়া খানের হাত চেপে ধরে আছে।”
তানিয়া খানের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে বেশ জব্দ হয়েছেন।
অনুভব বললো এতো যে বিয়ে বিয়ে করছেন কখনো লিজার কাছে জানতে চেয়েছেন সে কি চায়?
নিজের মেয়ের সাথে না পেরে এখন ইশিতার ওপর রাগ দেখাচ্ছেন।
“আগে নিজের মেয়ের মনের কথা জানুন তারপর অন্য কাউকে রাগ দেখাতে আসবেন।”
আরেকটা কথা ভুলেও আর কোনো দিন ইশিতা কে আঘাত করার কথা মাথায় আনবেন না।
একদমে কথা গুলো বললো অনুভব।
ইশিতা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
এই তো আমার সেই অনুভব যে আমার জন্য সবার সাথে লড়তে পারে।
“কিন্তু জানিনা এই চেনা অচেনার খেলা কতদিন চলবে।”
তানিয়া খান নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে বললো দেখেছো আপা বিয়ে হতেই ছেলে কেমন বৌ পাগল হয়েছে। দুদিন পর না জানি তোমার সাথে কি করে।
অনুভব ইতিমধ্যে তার হাত ছেড়ে দিয়েছে। লিজা ঈশিতা কে জড়িয়ে ধরে আছে। তাহেরা বেগমকে চুপ থাকতে দেখে অবশেষে তানিয়া খান হার মেনে চলে গেল।
আর যাওয়ার আগে সবাইকে শাসিয়েছেন তিনি পুলিশ নিয়ে খুব শীঘ্রই আসবেন।
মাকে চলে যেতে দেখে লিজা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
“তাহেরা বেগম অনুভবের মুখোমুখি হয়ে বললো বিয়ের পর তুই এতোটা বদলে যাবি ভাবতে পারিনি।”
এবার ইশিতার সামনে গিয়ে বললো
যে ছেলেটা মায়ের মুখ দেখে ঘুমাতে যেতো, মায়ের হাতে না খেলে তার পেট ভরতো না, মা ছিল যার কাছে সবকিছু।
সে আজ দু’দিন হলো আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলে নি। আমার ঘরে একটিবার যায়নি।
এসব হয়েছে শুধুমাত্র তোমার জন্য। তোমার জন্য আমাদের মা ছেলের সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে।
কি ভেবেছো তুমি এসব করে তুমি সুখী হবে। সেটা কোনো দিন হবে না।
এমন একটা দিন আসবে যেদিন তোমার ভালোবাসার মানুষটা তোমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেবে।
না মা এমন কথা বলবেন না ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে বলল।
অনুভব তাহেরা বেগমের কোনো কথা বুঝতে পারছেনা।তাই রাজীব চৌধুরীর দিকে তাকালো।
তিনি অনুভব কে তার ঘরে আসতে ইশারা করল।
সবাই নিজ নিজ ঘরে চলে গেল। অনুভবের ফুপু এসে ঝামেলা আটকেছেন।
সবাই কে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ইশিতা আর অনুভবের ফুপু রাশেদা চৌধুরী নাস্তা বানাচ্ছে।
___________
“এসব কি হচ্ছে মি: চৌধুরী?”
মি: চৌধুরী না বলে বাবা ডাকতে পারিসনা।
না পারিনা কারন আপনি যদি আমার বাবা হতেন তাহলে এতো গুলো বছর আমাকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারতেন না। আমার মায়ের আদর থেকে বঞ্ছিত করতে পারতেন না।
তখন আমি বাধ্য হয়েছিলাম বাবা। নিজের বোনের জীবন বাঁচাতে আমাকে বুকে পাথর রেখে এতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।যে কথাটা আজ পর্যন্ত নিজের স্ত্রীকে বলার সাহস হয়ে ওঠেনি।
আমি আপনার আর কোনো কথা শুনতে বাধ্য নয়। এমনিতেই অনেক বড় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছি।আর কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না। আমি খুব শীঘ্রই ফিরে যাবো।
এমন কথা বলিস না বাবা। তুই চলে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে। ইশিতা পাগল হয়ে যাবে।আর তোর মায়ের অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছিস।
তার অমতে বিয়ে করেছিস বলে নিজের কি হাল করেছে আর এখন যদি জানতে পারে তার ছেলে আর………… কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন রাজীব চৌধুরী।
“ওকে ফাইন আর কিছু বলতে হবে না আমি আরো কয়েকদিন পর যাবো আমার পাসপোর্ট বানাতে কয়েক মাস সময় লাগবে।”
আর একটা কথা অনুরাগ তুই ইশিতা কে কেন কষ্ট দিচ্ছিস ও তো খুব ভালো মেয়ে। সুন্দরী, শিক্ষিতা বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে।ও তোকে খুব ভালোবাসে। তুই ইশিতা কে মেনে নে বাবা।
“হাসালেন মি: চৌধুরী।”
“সুন্দরী, শিক্ষিতা আর বড়লোকের মেয়ে বলে আমার ইশিতা কে মেনে নিতে হবে?”
“চিনি না জানি না এমন একটা মেয়েকে কি করে আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেবো।”
“আর সবচেয়ে বড় কথা ইশিতা অনুভব কে ভালোবাসে আমাকে নয়।
আর আমিও ইশিতা কে নয় অন্য কাউকে ভালোবাসি।”
শুধু মাত্র আমার ভাইয়ের অনুরোধ রাখার জন্য আমি ইশিতা কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।
অনুরাগের চোখ লাল হয়ে গেল। সেদিনের কথা মনে পড়লেই অনুরাগ কেমন যেন একটা হয়ে যায়।
____________
“প্রথম বারের মত দেখেছিল নিজের জমজ ভাইকে আর প্রথম দেখায় শেষ দেখা ছিল।”
এয়ারপোর্ট থেকে নেমে সোজা অনুভবের সাথে দেখা করে অনুরাগ।
অনুরাগ অবশ্য জানতো না সেদিন অনুভবের বিয়ে ছিল। নিজের আসল পরিচয় জানার পর ছুটে এসেছিল
আপনজনদের কাছে। অনুভব কে আগে থেকেই সবকিছু জানিয়েছিল অনুরাগ।সে যে দেশে আসছে এই কথা শুধু অনুভব জানতো তা নয় রাজীব চৌধুরী কোন ভাবে যেনে গেছিলেন।
বরের গাড়িতে ড্রাইভার আর অনুভব ছিল। মাঝরাস্তায় ড্রাইভারের কাছে ফোন আসে তার মেয়ে রোড এক্সিডেন্ট করেছে।
অনুভব ড্রাইভারকে চলে যেতে বলে আর নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে।
অনুরাগ অনুভবকে কল করে জানাই সে পৌঁছে গেছে। তাই অনুভব গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্টে চলে যায়।
সেখানে গিয়ে অনুরাগ কে দেখে। দুই ভাই নিজেদের প্রথম বারের মতো দেখছে। দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
অনুরাগ বলে আগে তোর বিয়েটা হয়ে যাক তারপর মি: আর মিসেস চৌধুরীর কাছে জানতে চাইবো তারা কেন এতো গুলো বছর আমাদের কাছে থেকে সত্যিটা গোপন করেছে।
আচ্ছা সে হবে আমার হবু বউ অপেক্ষা করছে। তোকে নিয়ে গিয়ে চমকে দেবো সবাইকে।
তারপর দুজনে গাড়িতে উঠে পড়ে। অনুভব গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ইশিতার সাথে ফোনে কথা বলছে।
অনুরাগ গাড়ি ড্রাইভ করতে চেয়েছিল। অনুভব দেয়নি সবে মাত্র জার্নি করে এসেছে বলে।
মি: চৌধুরী ও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি তাকেই সামলাতে হবে দুভাই মিলে না জানি কি করে বসে।
আর সবাই যদি ওদের দুজনকে একসাথে দেখে ফেলে তখন কি হবে। অনুভবের লোকেশন ট্র্যাক করলেন তিনি।
অনুরাগ চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে রেস্ট করছে। অনুভব ইশিতার সাথে ফোনে ব্যস্ত তাই
সামনে দিয়ে আসা ট্রাক তার চোখে পড়েনি।
মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল।
অনুরাগ রাস্তার এক কোনে পড়ে আছে। গাড়িটা অনেক আগেই পাশের খাদে পড়ে গেছে।
অনুরাগ চোখ মেলে দেখলো অনুভব কোথাও নেই। চিৎকার করে অনুভবকে ডাকতে লাগলো।
খাদের ধার থেকে কারো ক্ষীণ আওয়াজ শুনে অনুরাগ ছুটে গেল।
অনুভব কে রক্তাক্ত অবস্থায় ঝুলে থাকতে দেখলো একটা গুঁড়ির সাথে।
অনুরাগের তেমন কোথাও আঘাত লাগেনি। কপালের একপাশে কেটে গেছে।
কারণ অনুভব যখন বুঝতে পারলো গাড়িটা খাদে পড়ে যাচ্ছে তখন অনুরাগ কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
অনুরাগ অনেক চেষ্টা করেও অনুভব কে টেনে তুলতে পারলো না। সাহায্যের জন্য এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো। রাজীব চৌধুরী গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল অনুরাগ কে দেখে গাড়ি থেকে নেমে আসেন।
তাকে দেখে অনুরাগ আশার আলো দেখতে পেলো। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল অনুভবের কাছে। ছেলের এমন অবস্থা দেখে রাজীব চৌধুরীর বুকটা হু হু করে উঠলো।
দুজনে মিলে অনুভবকে তোলার চেষ্টা করছে। অনুভব বুঝতে পেরে গেছে তার হাতে বেশি সময় নেই।
তাই শেষ মুহূর্তে এসে সদ্য পাওয়া ভাইয়ের হাত ধরে অনুরোধ করে বললো আমি আর বাঁচবো না এই খবরটা পেলে দুজন মানুষ মরে যাবে। তাদের কে একমাত্র তুই বাঁচাতে পারিস অনুরাগ।
তাই ওদের জন্য এখন থেকে তুই অনুভব। কথা দে আমাকে আমার অবর্তমানে তুই ঔ দুজনের খেয়াল রাখবি।
কথাটা বলেই অনুরাগের হাত থেকে অনুভবের হাত ফসকে গেল আর অনুভব খাদে পড়ে গেল।
_____________
বাড়িতে পৌঁছে গেছি তো নেমে এসো অনুভব।
ইশিতার ডাকে অনুভব ভয়ংকর অতীত থেকে বেরিয়ে আসলো।
বিকেলে দুজনে বেরিয়েছে।প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
ইশিতা আর অনুভব দুজনে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
তাদের কে আসতে দেখে ঈশান দৌড়ে আসলো। ইশিতা কে জড়িয়ে ধরে বললো তোকে খুব মিস করেছি আপু।
আমি ঈশান।
আনোয়ারা বেগম এসে নাতনিকে জড়িয়ে ধরল।
“আমার নাতনী তো বিয়ের পর আরো সুন্দর হয়ে গেছে।
কি নাতজামাই খুব আদর যত্ন করেছে মনে হয়।” ইশিতা ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল। “অনুভব ও বেশ লজ্জায় পড়ে গেল।”
ঈশান অনুভবকে ইশিতার ঘরে নিয়ে গেল।
ইশিতা দাদীকে সঙ্গে করে মায়ের সাথে দেখা করতে গেলো।
ইশিতার মা রান্নাঘরে আছেন।মেয়ে জামাই আসছে বলে কথা। নিজের হাতে সবকিছু রান্না করছেন। আজিজুল হক সকাল সকাল গিয়ে সবকিছু বাজার করে এনেছেন।
মিষ্টির প্যাকেট একপাশে রেখে পিছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরল ইশিতা।
“ইশিতা তুই এসেছিস?”
“ও মা না দেখেও কি করে বুঝে যাও তুমি?”
মায়েরা সন্তানের স্পর্শে সব বুঝে যায়।
“জামাই কোথায়?”
আরে বাহ্ আমি কেমন আছি তা জিজ্ঞেস না করে আগেই জামাইয়ের খোঁজ করছ।
জামাই প্রথম বার আমাদের বাড়িতে এসেছে বলে কথা একটু খাতির যত্ন না করলে হয়।
তুই বরং অনুভবের জন্য নাস্তা নিয়ে যা।
“আচ্ছা মা যাচ্ছি, কিন্তু বাবা কোথায়?এসে থেকেই বাবাকে দেখছি না!”
বাইরে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।
ইশিতা ঘরে গিয়ে দেখলো অনুভব ঘরে নেই।আর অনুভবের ফোনটা বাজছে।
“ইশিতা নাস্তার ট্রে রেখে ফোন হাতে নিয়ে দেখল ফোনের স্ক্রীনে D লেখা আর নম্বর টা বাংলাদেশের নয়।”
রিং হয়ে কেটে গেল ইশিতা ফোনটা রাখতে যাবে তখন আমার কল আসলো। জরুরী হতে পারে তাই ইশিতা রিসিভ করে কানে ধরতেই শুনতে পেলো……………………..
.
.
.
.
.
#চলবে
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।