মরিচাধরা মনের খাঁচা পর্ব -১৬

#মরিচাধরা_মনের_খাঁচা
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১৬

নিঝুম বাড়ি ফেরার পর তয়ন তার সাথে দেখা করে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সাথীর দিকে। সেটা আর কারো চোখে না পরলেও নিঝুমের চোখে ঠিক ধরা পরে গেলো। নিঝুমের দিকে চোখ পরতেই সাথী নিজের রুমে চলে গেলো। মেয়েকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। অয়ন ড্রাইভিং সীটে বসলো আর তয়ন পাশের সীটে। সাথীর বেলকনিতে তাকিয়ে আরো এক নজর দেখে নিলো তাকে। তয়নের কেনো জানি মনে হচ্ছে আর কখনো দেখা হবে না এই মায়াবী মুখটা। তয়ন নিজের ভাবনায় শিউরে উঠলো। না না এসব কী ভেবে চলেছে সে ? গাড়ি চলতে শুরু করলো আর তয়নের বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো। মাত্র কয়েক ঘণ্টার পরিচয়ে কারো জন্য এমন অনুভূতির মানে খোঁজে পেলো না তয়ন। বারবার চেষ্টা করছে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে কিন্তু পেরে উঠছে না।

পৌঁছে একটা কল করে দিস।

অয়নের কথায় কোনো সাড়াশব্দ দিলো না তয়ন। অয়ন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কাঁধে ধাক্কা দিলো।

তয়ন চমকে অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো, কী,,,কী হয়েছে ?

কোথায় হারিয়েছিস তুই বল তো ?

কী আবোল তাবোল বকছিস, হারাতে যাবো কেনো ?

তাহলে কী ভাবছিলি এতো মনোযোগ দিয়ে ?

কিছু না, তুই কী বলছিলি সেটা বল।

পৌঁছে একটা কল করতে বললাম আমাকে আর পারলে আজই একবার অফিসে গিয়ে খোঁজ খবর নিস।

আচ্ছা ঠিক আছে।

টুকটাক কথায় দু’জনে পৌঁছে গেলো এয়ারপোর্টে। তয়নকে বিদায় দিয়ে অয়ন আবার নিঝুমদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। মাথায় হাজারো চিন্তা কীভাবে মানাবে এই রাগকুমারীকে ?

২৭.
সময় নিজ গতিতে বয়ে চলেছে সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ আর মাসে। হ্যাঁ প্রায় মাস হতে চললো অয়ন সিলেট আছে। কোনো চেষ্টা বাদ রাখেনি নিঝুমের রাগ ভাঙাতে। সকালে নিঝুমের সাথে খালি পায়ে সবুজ ঘাসে হাঁটতে যাওয়া থেকে শুরু করে এই শীতের মধ্যরাতে আইসক্রিম খেতে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব করেছে। কিন্তু নিঝুম এখনো মন খোলে কথা বলে না অয়নের সাথে। তবে কিছুদিন থেকে অয়নের মনে হচ্ছে নিঝুমের রাগ ভেঙেছে অনেক আগে কিন্তু এখন শুধু মজা নিচ্ছে। নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে তাকে। অয়ন ঠিক করে নিয়েছে আজ এর ফয়সালা করেই ছাড়বে। গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি যাচ্ছে নিঝুমকে নিয়ে আসতে। আজকাল নিজেকে ড্রাইভার মনে হয় অয়নের কাছে। সকালে নিঝুমকে ভার্সিটি পৌঁছে দিয়ে গাড়ি নিয়ে সারা সিলেট ঘুরে বেড়ানো আর নিঝুমের ছুটি হলে তাকে নিয়ে বাসায় যাওয়াটা তার সারাদিনের কাজ। দু’টো চা-বাগান কিনেছে তার টুকটাক কাজ করেছে তবে অয়ন পারলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পরে থাকে নিঝুমের সাথে, তবু যাতে রাগ কুমারীর রাগটা একটু কমে। ভার্সিটির সামনে আসতেই রেগে গাড়ির স্টিয়ারিং শক্ত হাতে চেপে ধরলো অয়ন। গেইটের সামনে ফুসকার দোকানে এক ছেলের সাথে ফুসকা খাচ্ছে নিঝুম। হাসি যেনো তার কিছুতেই থামতে চাইছে না। কিছুটা সময় সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অয়ন। আজকাল নিঝুম তার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা পর্যন্ত বলে না আর এখানে অন্য ছেলের সাথে তার হাসি থামছে না। হঠাৎ কাশি উঠে গেলো নিঝুমের। ছেলেটা ব্যস্ত হয়ে ফুসকার প্লেট রেখে নিঝুমের জন্য পানি আনতে গেলো। অয়ন গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে নিঝুমের সামনে ধরলো। পানির বোতল দেখে কে দিয়েছে সেটা দেখার সময় হলো না নিঝুমের। অয়নের হাত থেকে প্রায় কেঁড়ে নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করতে লাগলো। একটু শান্ত হতেই পানিটা কে দিয়েছে দেখার জন্য তাকাতেই দাঁড়িয়ে গেলো নিঝুম। কাশি যেটুকু বাকি ছিলো এমনই থেমে গেলো।

কাঁপা গলায় বললো, আপনি ?

তখনই ছেলেটা হন্তদন্ত হয়ে পানি নিয়ে এসে বললো, ঝুম এই নাও পানি খাও।

নিঝুম এবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আবার অয়নের দিকে তাকালো ভীত দৃষ্টিতে।

ছেলেটা অয়নকে খেয়াল করে বললো, উনি কে ঝুম ?

নিঝুম কিছু বলার আগেই অয়ন গম্ভীর গলায় বললো, ফুসকা খাওয়া হয়ে গেলে এবার যাওয়া যাক ?

কথাটা শেষ করে অয়ন আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো। নিঝুম ব্যাগটা হাতে নিয়ে ছেলেটার দিকে একবার তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ছেলেটা বোকার মতো শুধু তাকিয়ে দেখলো। প্রচন্ড স্প্রিডে গাড়ী চালাতে লাগলো অয়ন। নিঝুম ভয় পাচ্ছে কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।

অয়ন হঠাৎ বলে উঠলো, আচ্ছা নয়নার সাথে আমাকে দেখে তোমারও বুঝি এমনই কষ্ট হয়েছিলো ?

নিঝুম অবাক হয়ে তাকালো অয়নের দিকে। তার কথাটা বুঝার চেষ্টা করতে লাগলো, মস্তিষ্কে একটু চাপ প্রয়োগ করতেই বুঝতে পারলো কথাটার অর্থ।

অয়ন আবারো বললো, যদি এমনই কষ্ট হয়ে থাকে তাহলে আমি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। যে অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না।

কথাটা শেষ করে অয়ন তাকালো নিঝুমের দিকে। অয়নের লাল টকটকে চোখদুটো দেখে ভয়ে আঁতকে উঠলো নিঝুম। এতোটা রেগে গেছে অয়ন, কিন্তু কোনো ?

এতগুলো দিন ধরে তোমার অবহেলা আমাকে একটু একটু করে পুড়িয়েছে। আমিও বিনা বাক্যে পুড়েছি তোমার দহনে, কারণ আমি তার প্রাপ্য ছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করো আজ যে আগুন জ্বলছে তা সহ্য করার মতো শক্তি আমার নেই। আজ উপলব্ধি করতে পারছি তুমি কতটা সহ্য করেছো। তবে তোমার মতো সহ্য ক্ষমতা আমার নেই। তাই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তোমাকে আজই নিতে হবে।

নিঝুম এবার অবাক আর কম্পিত গলায় বললো, মানে ?

অয়ন একটা পাহাড়ের ঢালে গাড়ি পার্ক করলো। রাস্তা থেকে একটু এগিয়ে দাঁড়ালেই গভীর খাদ। সেখানে পড়লে হয়তো কারো চিহ্ন খোঁজে পাওয়া যাবে না। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে সেদিকে একটু এগিয়ে গেলো। তারপর ঘুরে তাকালো গাড়ির দিকে। নিঝুমও গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে।

অয়ন শান্ত গলায় বললো, ছেলেটা কে ছিলো ?

নিঝুমও বেশ শান্ত গলায় উত্তর দিলো, আমার নতুন বন্ধু সৌরভ।

অয়ন এটা নিয়ে আর প্রশ্ন করলো না কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো নিঝুমের দিকে।

আমাকে কী তুমি কোনোদিন মাফ করবে না ?

প্রশ্নটা করার পর চারদিকে কেবল নিরবতা। মিনিট দুয়েক পার হলেও নিঝুমের কোনো উত্তর কানে এলো না অয়নের। অয়ন এক পা পিছিয়ে গেলো নিঝুমের থেকে আর এক পা এগিয়ে গেলো খাদের দিকে। নিঝুম তখনো খেয়ালই করেনি অয়নের পিছনে গভীর খাদ আর অয়নও নিঝুমকে বুঝতে দিচ্ছে না সে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে খাদের দিকে।

অয়ন আবারও শান্ত গলায় বললো, তোমার মনে কী একটুও ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই আমার জন্য ?

এবারও উত্তর এলো না নিঝুমের দিক থেকে আর অয়ন আরো এক পা পিছিয়ে গেলো নিঝুমের থেকে। নিঝুম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাটির দিকে আর অয়ন নিঝুমের দিকে।

তুমি কী চাও আমি তোমার জীবন থেকে চিরদিনের জন্য চলে যাই অনেক দূরে ?

এবারও নিশ্চুপ, কোনো উত্তর নেই নিঝুমের মুখে। আরো এক পা পিছিয়ে গেলো অয়ন।

পারবে অন্যকারো সাথে নিজের জীবন সাজিয়ে নিতে, নতুন করে ?

আরো এক পা পিছুতে হলো অয়নকে, কারণ নিঝুম হয়তো সেটাই চাইছে। যেনো সে পণ করেছে আজ আর মুখ থেকে কোনো শব্দ বের করবে না। অয়নের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আজ বুঝতে পারছে সে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। অয়ন পারতো নিঝুমকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে নিজের কাছে ফিরতে বাধ্য করতে। কিন্তু নিঝুমকে আর কিছুর জন্য বাধ্য করতে চায় না সে। তাই ভাবলো নিরবে সরে যাবে নিঝুমের পথ থেকে। আর মাত্র এক পা পেছনে গেলে অয়ন হারিয়ে যাবে এই গভীর খাদে।

অয়ন অসহায় কান্না ভেজা গলায় বললো, একটুও কী ভালোবাসো না আর, একটুও না ? একটুও কষ্ট হবে না আমি হারিয়ে গেলে ? একবারও আমার শূণ্যতা পোড়াবে না তোমাকে ?

অয়নের কান্নাভেজা গলা নিঝুমের হৃদয়ে আঘাত করলো। ছেলেরা সহজে কাঁদে না, কষ্ট যখন সহ্য সীমা পার করে তখনই চোখে নোনাজল মজা হয় তাদের।

নিঝুম এবার চোখ তুলে তাকালো অয়নের দিকে আর চিৎকার করে বললো, আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না আমি আপনার জীবনে ফিরে গেলে বিশাল এক অপূর্ণতার কারণ হবো। জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলো থেকে বঞ্চিত হতে হবে আপনাকে।

অয়ন বাকি এক পাও পিছিয়ে যেতে শুরু করেছিলো কিন্তু পা থেমে গেলো নিঝুমের কথা শুনে। টলমলে চোখে তাকালো নিঝুমের দিকে। মেয়েটা দু’হাতে মুখ ঢেকে চিৎকার করে কাঁদছে। অয়ন দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো নিঝুমকে। মুখটা দু’হাতে উঁচু করে ধরে চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে দিলো।

আমি তো বলেছি আমার আর কাউকে চাই না।

নিঝুম কাঁদতে কাঁদতে বললো, সেটা আজ বলছেন কিন্তু একটা সময় গিয়ে আপনার আফসোস হবে আজকের এই সিদ্ধান্তের জন্য।

সেই সময়টা আসার আগে যেনো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় আমার।

নিঝুম চমকে উঠে অয়নের ঠোঁটে হাত রেখে বললো, একদম বাজে কথা বলবেন না।

অয়ন নিঝুমের হাতটা নিজের ঠোঁট থেকে সরিয়ে একটা চুমু খেয়ে বললো, একটু আগে বলা কথাটা বলতে আর এক সেকেন্ড লেট করলে হয়তো এতক্ষণে সত্যি বন্ধ হয়ে যেতো এই নিশ্বাস।

নিঝুম প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকালে সে আঙ্গুল উঁচিয়ে সামনের খাদের দিকে ইশারা করলো। সেদিকে তাকিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠলো নিঝুম।

শক্ত করে অয়নকে জড়িয়ে ধরে বললো, এটা কী করতে যাচ্ছিলেন আপনি ?

তোমাকে অন্যকারো পাশে দেখার মতো শক্তি আমার নেই, সেটা আজ বুঝতে পেরেছি আমি।

সৌরভ শুধুমাত্র ফ্রেন্ড আমার।

কিন্তু এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিলো সে তোমাকে কেড়ে নিবে আমার থেকে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো আমার। আজ হাড়ে হাড়ে বুঝেছি কতটা কষ্ট দিয়েছি আমি তোমাকে। যার সত্যি কোন মাফ হয় না।

নিঝুম বললো, তো কে মাফ করলো আপনাকে ?

অয়ন ভীত গলায় বললো, মানে ?

সারাজীবন এই অন্যায়ের শাস্তি ভোগ করতে হবে আপনাকে।

তোমার থেকে দূরে থাকার শাস্তি ছাড়া যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নিবো আমি।

দূরে থাকতে হবে কিন্তু আমার থেকে নয় পৃথিবীর বাকি সব মেয়েদের থেকে। আমি আর দুই মা ছাড়া আর কারো দিকে তাকাতে পারবেন না কোনোদিন।

তোমার এই শাস্তি আমি সানন্দে মেনে নিলাম রাগকুমারী।

রাগকুমারী নাম শুনে রেগে তাকালো নিঝুম। রাগে তার নাক ফোলে গেছে। অয়ন টুপ করে নিঝুমের নাকের ডগায় একটা ছোট কামড় বসিয়ে দিলো। নিঝুম আরো রেগে অয়নকে কয়েকটা চড় থাপ্পড় মেরে দিলে অয়ন জড়িয়ে ধরলো নিঝুমকে। আজ থেকে এই সম্পর্ক সযত্নে আগলে রাখার দ্বায়িত্ব নিলো অয়ন। কখনো ফুলের টোকা পরিমাণ কষ্ট নিঝুমকে দিবে না মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিলো নিজের কাছে।

২৮.
অয়নি তুমি এখনই রেডি না হলে তোমার ছোট আব্বু তোমাকে রেখে চলে যাবে কিন্তু।

ছোট আব্বু কখনোই আমাকে রেখে যাবে না। ছোট আব্বু তো অনেক অনেক ভালো। তুমি দেখোনি আমি যাকে বলেছি তাকেই ছোট আম্মু করে আনতে রাজি হয়ে গেছে।

অয়নও মেয়ের কথায় সায় দিয়ে বললো, তুমি আমার মেয়েকে মিথ্যা কেনো বলছো নিঝুম ? অয়নির ছোট আব্বু তো অয়নিকে ছাড়া যেতেই পারবে না।

হ্যাঁ এবার আপনিও মেয়েকে মাথায় তুলুন। সবাই রেডি হয়ে গেছে শুধু আমরা তিনজনই বাকি।

অয়ন মেয়ের চুল মুছে দিতে দিতে বললো, তোমাকে রেডি হতে মানা করেছে কে ? আমি আর আমার প্রিন্সেস একাই রেডি হতে পারি।

নিঝুম কোমরে হাত দিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো, ঠিক আছে আজ তোমরা একা রেডি হবে।

নিঝুম নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। অয়ন আর অয়নি রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো। এই দুজনের কাজই নিঝুমকে জ্বালানো। অয়ন খুব সুন্দর করে অয়নিকে রেডি করে দিলো।

কপালে চুমু খেয়ে বললো, আমার কিউট প্রিন্সেস এবার তুমি দাদুর কাছে যাও আমি আর তোমার মা এখনই রেডি হয়ে আসছি।

অয়নি অয়নের গলা জড়িয়ে গালে চুমু খেয়ে বললো, ওকে বাবা।

অয়ন বেড থেকে নামিয়ে দিতেই অয়নি দৌড়ে চলে গেলো রুম থেকে। অয়ন রেডি হতে লাগলো ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে। ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকিয়ে থমকে গেলো অয়ন। মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে বের হয়ে এসেছে নিঝুম। এগিয়ে এসে অয়নের পাশে দাঁড়িয়ে ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ারে হেয়ারড্রায়ার খুজতে লাগলো। অয়ন তখনো তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। দেখতে দেখতে বিয়ের আট বছর পেরিয়ে গেলো তাদের। তবে নিঝুমের প্রতি অয়নের মুগ্ধতা দিনদিন যেনো কেবলই বেড়ে চলেছে। হেয়ারড্রায়ার হাতে সোজা হয়ে দাড়াতেই অয়নকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে খেয়াল করলো নিঝুম।

ভ্রু কুঁচকে বললো, কী দেখছেন এভাবে ?

অয়ন হুট করে পেছন থেকে নিঝুম জড়িয়ে ধরে বললো, তুমি দিন দিন আরো সুন্দর হয়ে যাচ্ছো।

নিঝুম অয়নকে ছাড়িয়ে বললো, আমাদের লেট হচ্ছে।

মাথার টাওয়েল খোলে চুল শুকাতে গেলে অয়ন বললো, চুল নষ্ট হবে তো।

এখন সময় নেই চুল শুকানোর।

ওকে দাও আমি করে দিচ্ছি তাহলে।

অয়ন নিঝুমের হাত থেকে হেয়ারড্রায়ার নিয়ে নিজেই চুল শুকিয়ে দিতে লাগলো আর সাথে দুষ্টুমি।

ইজি চেয়ারে বসে সাথীর ছবির দিকে তাকিয়ে আছে তয়ন। চোখদুটো আজ আবারও পর হয়েছে তার, অন্যের জন্য নোনাজল ঝরাচ্ছে।

ছবিতে আলতো স্পর্শ করে বললো, ছয় বছর হয়ে গেছে তুমি নেই। তবু দেখো মাত্র কয়েক ঘন্টার পরিচয়ের জোরে আজও রাজত্ব করছো আমার মনে। কিছু ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়। প্রকাশ করার আগেই হারিয়ে যায়, থেকে যায় সারাজীবন অপ্রকাশিত হয়ে মনের কোণে সুপ্ত অনুভূতি হয়ে। এমন কেনো হলো বলতো সাথী ? একবার বলার সুযোগটাও পেলাম না কেনো আমি ? মরিচাধরা মনের খাঁচায় অন্যকারো আগমনের বার্তা নিয়ে এসেছে আজ। চিরতরে অন্যকারো হতে চলেছি, তবে তাকে তোমার মেয়েই বেছে নিয়েছে। তার ছোট আম্মু সেই পছন্দ করেছে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here