মরুর বুকে বৃষ্টি ২ পর্ব – ৪

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-৪
®মেহরুমা নূর

★”আমি আর বাঁচতে চাইনা। একদমই না। এই ছাঁদ থেকে পড়েই জান দিয়ে দিবো আমি। এই জীবন রেখে কি লাভ! মশার গু সমান মূল্যও নেই আমার। আজতো সুই,সাইড পাক্কা। সুই,সাইড গাঁউ ওয়ালো, সুই,সাইড।”
ছাঁদের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় হাঁটছে আর নেকা সুরে এসব বলছে আবির। বিহান ছাঁদে বসে বাদাম চিবোতে চিবোতে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“তুই আছলে কহন ছুইসাইডডা করবি। ছঠিক ছময়ডা কইয়া দে। ছারাদিন সময় নাইক্কা হাতে। বহুত কাম আচে আমার।”
“ওই বিহাইন্নার বাচ্চা, তোর কি মনে হয় আমি মজা করছি! আবিরের কথা হলো ফেলে দেওয়া থুতু। একবার বের হলে আর ফিরানো যায়না। আজতো সু,সাইড হয়েই ছাড়বে৷ আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবি তোরা। আমার অভিশাপে তোরা জীবনেও বাথরুমে যেতে পারবিনা।”
ওদের কথার মাঝে আদিত্য ছাঁদে আসলো। গম্ভীর মুখে বলল,
“কি হচ্ছে এখানে এসব!”
বিহান বলে উঠল,
“কি আর ওইবো! দ্য গ্রেট আবিরের ফাটা লুঙ্গি মার্কা মেলোড্রামা চলতাচে।”
আবির মুখ চোখা করে বলল,
“আমি ড্রামা করছি! আমি সত্যি সত্যিই মরতে যাচ্ছি। এইযে এক্ষুনি ছাঁদ থেকে লাফ দিবো আমি। তোরা কিন্তু কেউ বাঁচাবিনা আমাকে। আমি একদম মানবো না। খবরদার বাঁচানোর চেষ্টাও করবি না।এক ফোটাও না।”
বিহান ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কেঠায় বাচাইবার চাইতাছে তোরে! আব্বে হালা, মরলে জলদি মরনা! আমার বাদামও ছ্যাস হইয়া গেল। অহন আবার বাদাম আনতে যাইতে হইবো।”
আবির বলে উঠল,
“ঠিক আছে, তাহলে আমার জন্যেও একটা স্যান্ডউইচ আর কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসিস।”
“তুই না মরবার যাইতাছস!”
“তো! খালি পেটে মরবো নাকি! খিদা লাগবেনা আমার!”
এই পর্যায়ে আবির গম্ভীর্যতার সহিত বলল,
“আবির,স্টপ দিস ননসেন্স।”
আবির এগিয়ে এসে নেকামির মাত্রা বাড়িয়ে বলল,
“ননসেন্স! এসব ননসেন্স মনে হচ্ছে তোর কাছে! আমার জানে জিগার, বন্দুকের ট্রিগার, সাইকেলের গিয়ার, টেবিলের চেয়ার, কলিজার বন্ধু। সে কিনা আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলল! এটা তোর কাছে ননসেন্স মনে হলো! সেই ছোট বেলা থেকে একসাথে সবকিছু শেয়ার করলাম। জাইঙ্গা থেকে শুরু করে কানের ময়লা বের করা কাঠিটাও শেয়ার করলাম। আর সেই বন্ধু কিনা এতবড় ধোঁকা দিলো আমারে! কয়দিনের জন্য একটু ট্যুরে কি চলে গেছি তুই বিয়ে করে ফেললি! একবারও আমাকে জানালিও না। এই দুঃখ কই রাখবো আমি! এত বিশাল দুঃখ রাখার জন্য পুরো আর্থও কম পড়বে। পৃথিবী নিতে পারবে না এতবড় কষ্ট। চাঁদ, তারাও খসে পড়বে আমার কষ্টে।আজ হাতে চুরি নেই বলে জামাই মরা মহিলাগো মতো মাটিতে হাত আছড়ে চুরি ভেঙে কাঁদতে পারছিনা। কত শখ ছিলো বন্ধুর বিয়েতে যাবো। ওই গানটা গেয়ে গেয়ে নাচব,♬ বন্ধু তোর বারাত নিয়া আমি যাবো, নওশা সাজাইয়া, পালকিতে চড়াইয়া, খুশিতে নেচে নেচে গান গাবো…। আমার নাচ দেখে তোর শালিকার দলগুলো এসে আমাকে ঘিরে ধরবে। আহা কতনা মজা হবে! কিন্তু তুই আমার সব স্বপ্ন ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে ফেললি। কেমনে পারলি এমন করতে!”
আবির নেকা কান্নার সুরে গাইলো,
♬ দোস্ত দোস্ত না রাহা,
♬ পেয়ার পেয়ার না রাহা
♬ এ জিন্দেগী হামে তেরা
♬ এতবার না রাহা….

আবিরের এই মহাকাশ সমান দুঃখ প্রকাশ শুনে বিহান বলে উঠল,
“হাচাই কইতাছচ তুই! তোর সাথে এক্কেরে ঠিক হয় নাইক্কা। এইডা মানা যাইনা৷ তুই যা, অহনি ছাঁদ থাইকা লাফ দে। মরাডা জরুরি। তুই চাপ লইস না। আমি তোর স্মরণে তোর কবরের ছামনে বিছাল একখান ডাস্টবিন স্তম্ভ বানাই দিমু। যেইহানে লেহা থাকব, ” এখানে পঁচা আবর্জনা ফেলে যান।সাথে চাইলে মলমূত্রও ত্যাগ করতে পারেন। আর এই কবর বাসির জন্য বদদোয়া করে যান।” ধন্যবাদ দেওনের দরকার নাইক্কা। তোর লাইগা এতটুকুতো করবারই করি।”
বিহানের কথায় আবির ক্ষেপে গিয়ে তেড়ে গেল ওর দিকে। তা দেখে বিহানও হেঁসে দিয়ে ছুটল নিজেকে বাঁচাতে। আবির দৌড়ে গিয়ে তার গলা পেচিয়ে ধরে বলল,
“বিহাইন্নার বাচ্চা, আমি মরি না মরি।তোরে আগে মেরে ছাড়ব।”
এই পর্যায়ে আদিত্য বিরক্ত হয়ে হালকা ধমকের সুরে বলল,
“থামবি তোরা! নাহলে দুটোকে আমিই ছুঁড়ে ফেলে দিবো নিচে।”
দুজন ফট করে স্বাভাবিক হয়ে গেল। আবির ফিচেল হেঁসে বলল,
“আরে তার কি দরকার! তুই যখন এত করে বলছিস তাহলে কি মরতে পারি! না আমি নিজের জন্য বলছিনা। আমিতো তোর কথা ভাবছি। আমার মরার শোকে যদি তুই নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অক্কা পাস তাহলে ভাবিতো বিধবা হয়ে যাবে তাইনা! তাই শুধুমাত্র তোদের জন্য মরা ক্যান্সেল। তোদের জন্য সেক্রেফাইস করে দিলাম৷ তুইতো জানিসই আমি কত মহান।আমার শরীরে হিমোগ্লোবিন-এর পরিবর্তে মহানতা বয়ে বেড়ায়।”
মাথা নেড়ে শব্দহীন হাসলো আদিত্য। আবিরও হেঁসে দিয়ে হাগ করল আদিত্যর সাথে। তারপর বলল,
“আচ্ছা এখন চল, আমার ভাবির সাথে দেখা করিয়ে দে। আমার মতো হ্যান্ডসাম এন্ড কিউট দেবর দেখে নিশ্চয় খুশি হয়ে যাবে ভাবি।”
আবিরের কথায় আদিত্যর মুখমণ্ডল একটু দ্বিধান্বিত হলো। বিহান তখন এগিয়ে এসে আবিরকে সবটা খুলে বলল। সব শুনে আবির অনেকটা অবাক হলো। তবে হাসিমুখে বলল,
“আরে তাতে কি হয়েছে? ভাবিতো ভাবিই। চাপ নিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
__

আদিত্য নিজের রুমে এসে দেখলো নূর নেই। বুঝতে পারল জমিলার সাথে চলে গেছে। বুক চিড়ে কেমন চাপা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো তার৷ বিছানায় বসল সে। মনটা হঠাৎ কেমন অস্থিরতা বহন করছে৷ যেন অদৃশ্য কোনোকিছু খচখচ করছে ভেতরটাতে। অবচেতন মন একবার দেখতে চায়ছে নূরকে৷ মনে এমন খেয়াল আসা নিয়ে আদিত্য ভীষণ বিরক্ত। আজকাল তার সাথে এসব কি হচ্ছে! এমন কিছু তো আগে কখনো হয়নি। তখন অতটা রাগই বা কেন হচ্ছিল! কেন নূরের ওই করুন ভয়ার্ত চোখ দুটো এত পীড়া দিচ্ছিল তাকে! পুরো দুনিয়ায় আগুন লাগিয়ে দিতে মনে চাচ্ছিল। ও’তো ওই মেয়েটাকে কখনো বউ হিসেবেই মানতে চায়নি। তাহলে ওই মেয়েটার ছোট্ট বিষয়ও কেন এতটা প্রভাব করছে তাকে! এখন তাকে একবার দেখার জন্য মনটা আনচান করছে কেন! নিজের মাথা ঝেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল আদিত্য। মনে জাগা ইচ্ছে ধামাচাপা দিয়ে শোবার চেষ্টা চালাল সে। তবে তাতে সক্ষম হতে পারল না খুব বেশিক্ষণ। চোখের পাতা ঢাকতেই সেখানে নূরের তখনকার ক্রন্দনরত নূরের মুখখানা সহসাই ভেসে উঠল। তৎক্ষণাৎই ঠাস করে চোখ মেলে তাকালো আদিত্য। ঝট করে শোয়া থেকে উঠে বসল সে। অস্থিরতা বাড়ল প্রচুর। পায়চারী করল রুম জুড়ে। কোনোকিছুতেই সুফল পেলনা। রাগ হচ্ছে ভীষণ। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারাটাই রাগের কারণ। শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠল না আদিত্য। মনের হাতে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো সে। হেঁটে এলো নূরের রুমের সামনে। কিন্তু ভেতরে কিভাবে যাবে! ভেতরে জমিলাওতো আছে। চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি দাঁড়াল! দরজায় নক করতে গিয়েও আবার থেমে গেল। ফিরে এলো আবার। কিন্তু চার কদম এসেই আবারও থেমে গেল। আবারও ফিরে এলো নূরের দরজার সামনে। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝে শেষমেশ নক করেই ফেলল। দু-তিনবার নক করার পর জমিলা এসে দরজা খুলে দিলো। আদিত্যকে দেখে অবাক চাহুনি দিয়ে বলল,
“ছোট সাহেব! কিছু বলবেন?”
আদিত্য যেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের অস্বস্তি এমুহূর্তে বোধ করছে। গলা খাকারি দিয়ে ইতস্তত কন্ঠে বলল,
“সরি আপনাকে এত রাতে জাগালাম।ওই আসলে আমার কেমন ক্ষুধা লাগছিল। ঘুম আসছে না। কিছু বানিয়ে দিতে পারবেন আমার জন্য? ”
জমিলা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
“আরে সরি বলার কি আছে। আমি এখুনি কিছু বানিয়ে আনছি আপনার জন্য। ”
“ওকে।”
বলেই আদিত্য দরজার সামনে থেকে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগল। জমিলা দরজা থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতেই আদিত্য আবারও দ্রুত ফিরে এসে দরজা ঠেলে নূরের রুমে ঢুকলো। বিছানার একপাশে কাত হয়ে ঘুমিয়ে আছে নূর। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল আদিত্য তার কাছে। বিছানার পাশের ক্যাবিনেটের উপর রাখা টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালাল। তারপর হাঁটু গেঁড়ে বসল নূরের মুখের সামনে। তার পুরান ছেঁড়া ফাটা পুতুলটা বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত মুখখানার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আদিত্য। এতক্ষণের অস্থিরতা যেন মুহূর্তেই গায়েব হয়ে গেল তার৷ সেখানে উপস্থিত হলো হিম শীতল প্রশান্তি। কি আছে এই মুখটাতে আদিত্য ভেবে পায়না। শুধু দেখার ইচ্ছে জাগে। যত দেখে তত যেন মুগ্ধতা ছড়ায় তার হৃদমহল জুড়ে৷ অজান্তেই আদিত্যর হাত চলে গেল নূরের গালে। আলতো করে হাত রাখল নূরের গালে। মুখে পড়ে থাকা চুলগুলো আঙুলের আলতো স্পর্শে কানের পিঠে গুঁজে দিলো। তখনই চোখে পড়ল গালে চড়ের লাল দাগ। চোয়াল শক্ত হল আদিত্যর। লাল হলো চোখের পর্দা। হঠাৎ একটা আশ্চর্যজনক কাজ করে ফেলল সে। অন্তত তার জন্য অবশ্যই সেটা আশ্চর্যজনক বলা চলে। আদিত্য হঠাৎ মুখ নামিয়ে নূরের গালের লাল দাগের উপর অধর ছোঁয়াল। একটু নড়ে উঠল নূর। হুঁশ এলো আদিত্যের। শক খাওয়ার মতো করে ঝট করে উঠে দাঁড়াল সে। নিজের করা কাজে নিজেই বিস্ময়ে হতভম্ব সে। আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেল। অন্তর্দেশে সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে তার।
__

সকালে ব্রেকফাস্টের জন্য নিচে আসতেই নূরের খিলখিল হাসির রিনিঝিনি সুর বাজল কানে আদিত্যর। তাকিয়ে দেখল লিভিং রুমের সোফায় আবিরের সাথে বসে হাসছে সে। আবির তার সাথে নানান রকম কমেডি করছে আর সে হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে। বুঝতে পারল আবির তার যাদু চালিয়ে দিয়েছে। খাতির জমিয়ে ফেলেছে নূরের সাথে। হবেই না বা কেন! রতনে রতন চেনে৷ আবিরওতো আরেক পাগল। দুজনে ভালোই মিলেছে। কিন্তু আদিত্যর কেমন যেন একটু রাগও হলো। কাল আসা আবিরের সাথে কি সুন্দর গলায় গলায় ভাব জমিয়ে ফেলেছে। আবার হাসছে খুশিমনে। অথচ আমাকে দেখলে এমন ভাবে পায় যেন কোনো বাঘ,ভাল্লুক সে।

আদিত্য এগিয়ে এসে টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসল। বিহান আর আবিরও এসে বসল। বিহান আবিরের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“কিরে তোর ট্যুর কেমন গেল? কয়ডা মাইয়ার থাপ্পড় গালে জমাইলি এবার? নাকি বোনাসে সাথে জুতাও ফ্রী পাইছস?”
আবির এটিটিউড দেখিয়ে বলল,
“থাপ্পড় আর আমি! হাঁহ! আরে মাইয়ারাতো পারলে টমেটো সস লাগিয়ে খেয়ে ফেলে আমাকে। আমাকে টেনেটুনে ভাগ করে নিতে চায়। কত কষ্ট করে যে নিজেকে বাঁচিয়ে এনেছি তা আমিই জানি। ইটস ভেরি টাফ ব্রো। এত হ্যান্ডসাম যে কেন হতে গেলাম! হ্যান্ডসাম হয়েও পাপ করে ফেলেছি।”
হাসলো বিহান। জমিলা তখন বিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“বিহান বাবা,বউমনি বাড়িতে কথা বলতে চাচ্ছে।”
“আচ্ছা আমি ফোন দিয়ে দিচ্ছি ।”
বিহান নূরের বাড়ির নাম্বারে ফোন দিয়ে জমিলার হাতে দিয়ে দিলো। জমিলা তা নিয়ে নূরের হাতে দিলে সে কথা বলতে লাগল। আদিত্যের ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগ হচ্ছে। আশেপাশের ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে বুঝি বাইরের কেউ। অযথাই মেজাজ টা কেমন চিড়চিড়ে হয়ে উঠছে তার৷ এরই মাঝে বিহান খাওয়া শেষ করে নূরের সামনে গিয়ে হাসিমুখে বলল,
“কথা শেষ হয়েছে ভাবি?ফোনটা দিন তাহলে।”
নূর হাসিমুখে বলল,
“হ্যাঁ হয়ে গেছে। এই নিন।”
বিহান ফোন হাতে নিতেই নূর হঠাৎ খুশিমনে বলে উঠল,
“আপনি অনেক ভালো, বর।”
মুহূর্তেই যেন উপস্থিত সবাই স্থির হয়ে গেল। আদিত্যর মুখের কাছে আনা খাবারের চামচ থেমে গেল সহসাই। মুখটা কঠিনতর ধারণ করল হঠাৎই।আবির শুধু ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইল। বিহানও ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল নূরের এমন সম্বোধনে। অপ্রস্তুত হেঁসে বলল,
“ভাবি কি বলছেন এসব। আমি বর?”
নূর নিজের মতো বলল,
“হ্যাঁ আপনিইতো আমার বর। সেদিন না বিয়ে বিয়ে খেলা হলো আমাদের। আপনি আমাকে নিয়ে এলেন এখানে। ”
বিহান বুঝতে পারল নূরের কোনো ভুল ধারণা হয়েছে। তাই সে বলল,
“না না ভাবি আপনি ভুল বুঝছেন। আমি আপনার বর না। আমিতো আপনার ভাইয়ের মতো।”
নূর ঠোঁট উল্টে বলল,
“তাহলে আমার বর কে?”
আদিত্যর চোখ মুখ এতক্ষণে ভয়ংকর কঠিন আকার ধারণ করেছে। চোয়াল ফুলে শক্ত হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে সে ঠাস করে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের খাবারের ঠেলে ছুঁড়ে ফেলে দিলো জমিনে। অগ্নিমুখ করে প্রবল বেগে তেড়ে গেল নূরের দিকে। বিহান কিছু বলার আগেই সে গিয়ে এক হাতে নূরের চোয়াল চেপে ধরলো। ভয়ে নূর আৎকে উঠল। মাথায় ক্রোধ চড়ে যাওয়া আদিত্য চোয়াল শক্ত করে বলল,
“আমি তোমার বর। এই সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য তোমার বর৷ তোমার হাসব্যান্ড। অন্য কেউ না। মাথায় ঢুকিয়ে নাও ভালো করে। আমি তোমার বর, আর তুমি আমার বউ। শুধু আমার। বুঝতে পেরেছ!”
নূর এমনিতেই ভয়ে কাহিল। তারউপর এত শক্ত করে চোয়াল ধরায় ব্যাথায় কেঁদেই ফেলল সে। নূরের চোখে পানি দেখে রাগে পাগল আদিত্যর হুঁশ এলো বোধহয়। সে নূরকে ছেড়ে দ্রুত পা ফেলে উপরে নিজের রুমে চলে গেল। ছাড়া পেয়ে নূর কাঁদতে লাগল। জমিলা এসে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। আবির বিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“কিরে সালা এসব কি হচ্ছে? কি চক্কর এসব?”
বিহান আপাতত আবিরের কথা কানে না নিয়ে আদিত্যর রুমের দিকে দৌড়াল। রুমে এসে দেখল আদিত্য ক্রোধের বশে রুমের মাঝে পায়চারী করছে। বিহান ওর সামনে গিয়ে অপরাধী সুরে বলল,
“আম সরি আদি৷ আমি আছলে বুঝবার পারি নাই ভাবি এমন ধারণা নিয়ে আছে৷ তাহলে আমি আগেই হেইডা ক্লিয়ার কইরা দিতাম৷”
আদিত্য নিজের রাগ দমিয়ে বলল,
“তুই কেন সরি বলছিস? তোর কি দোষ! বোঝাতো ওর উচিত ছিলো। যাকে তাকে বর বলে দিবে! ওকি জানে না ওর বর কে!”
বিহান জবাবে বলল,
“কিভাবে জানবে? তুই কখনো জানতে দিয়েছিস? তুইতো জানিসই ভাবির মানুষিক অবস্থা কেমন। সে সুস্থ মানুষের মতো ভাবতে পারে না। এখানে আসার পর থেকে আমাকেই শুধু সামনে দেখেছে। আমি টুকটাক খেয়াল রাখি তার ভালো মন্দের। হয়তো একারণেই সে মনে করেছে আমি… ”
আদিত্য স্থির দৃষ্টিতে তাকালো বিহানের দিকে। বিহান শান্ত সুরে বলল,
“দেখ আদি আমি তোর মনোভাব বুঝতে পারছি। তবে তোকেও বুঝতে হবে৷ ভাবি বাকিদের মতো না। তার সাথে শক্তি প্রয়োগ করে কখনো তার আপন হতে পারবিনা।ভাবির হলো ছোট বাচ্চার মতো মন। তাকে সেভাবেই আদর, আহ্লাদ আর কেয়ার করে আপন করতে হবে৷তাকে ফিল করাতে হবে তুই একমাত্র তার আপন। নাহলে হয়তো অনেক বেশিই পর হয়ে থাকবি তার। আমার কথাটা ভেবে দেখিস। আমি চাইনা আপন মানুষ থাকতেও তুই একা থেকে যাস সারাজীবন। ”
বলেই বেড়িয়ে গেল বিহান। আদিত্য ভাবতে লাগল বিহানের কথাগুলো। সে’কি সত্যিই ভুল করছে!

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here