মরুর বুকে বৃষ্টি ২ পর্ব – ৬

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-৬
®মেহরুমা নূর

★ঘুমের রেশ কেটে চোখ দুটো মেলে তাকালো আদিত্য। তাকিয়ে জীবনের সবচেয়ে প্রশান্তিময় মুহূর্তের সাক্ষী হলো সে। বুকের মাঝে যখন নূরের ঘুমন্ত নিস্পাপ, মায়ার সাগর মুখখানা নজরে এলো।মায়া ভরা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল নূরের মুখপানে। আজকের মতো সুন্দর সকাল যেন কখনোই দৃশ্যমান হয়নি আদিত্য জীবনে। যেমন কাল রাতের মতো প্রশান্তিময় ঘুমও এর আগে কখনও হয়নি আদিত্যের। বুক জুড়ে যেন কেবলই প্রশান্তির এক অনাবিল শিথিলতা। যেন শত বর্ষ ধরে অশান্ত ছুটে চলা পথিক তার মঞ্জিলের দেখা পেয়েছে। ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত বুকটা পেয়েছে পানির দেখা। জীবন এতটা সুখময়ও হতে পারে তা নূর ওর জীবনে না আসলে হয়তো জানতোই না সে। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায় আদিত্য। সেদিন নূরেরে বোন পালিয়ে না গেলে নূরকে কিভাবে পেত সে। নূরের মুখের উপর পড়া এলোমেলো চুলগুলো আঙুলের আলতো স্পর্শে সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিলো আদিত্য। মুখ নামিয়ে অধর ছোঁয়াল নূরের কপালে। কিছুসময় ওভাবেই থাকল সে। ঠিক তখনই হঠাৎ নূরের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে আদিত্যকে ওভাবে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে আচমকা দুই হাতে ঠেলে আদিত্যকে সজোরে ধাক্কা মারল। অপ্রস্তুত থাকায় আদিত্য আচমকা ধাক্কা খেয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে বিছানা থেকে নিচে পড়ে গেল। হতবাক দৃষ্টিতে তাকালো সে নূরের দিকে। নূর ঝট করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গিয়ে ভীতিগ্রস্ত হয়ে বলে উঠল,
“আমাকে ঘুমের মাঝে খেয়ে ফেলছিলে! পঁচা রাক্ষস।”
আদিত্যর রাগ হলো ভীষণ।যাকে সে নিজের সবটার মালিক করে দিয়েছে তাকে নাকি সে খেয়ে ফেলবে! আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে নূরের দিকে তেড়ে যেতে যেতে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“আমি রাক্ষস! তোমাকেতো আমি….”
আদিত্যর তেড়ে আসা দেখে নূর আরও ঘাবড়ে গেল। নিজের আত্মরক্ষায় সে আশেপাশে যা পেল তাই উঠিয়ে নিয়ে আদিত্যকে হুমকি দিলো,
“দে….দেখ, একদম কাছে আসবে না। নাহলে কিন্তু আমি এটা দিয়ে মারবো।”
তারপর জোরে জোরে চিল্লাতে লাগল নূর,
“বাঁচাও… বাঁচাও আমাকে। এই রাক্ষস আমাকে খেয়ে ফেলল। বাঁচাও কেউ আমাকে…”
আদিত্য বুঝল রাগলে কাজ হবে না। রাগ দেখে নূর আরও ভয় পেয়ে যাচ্ছে। তাই শান্ত হয়ে নূরকে বোঝাতে চাইল,
“নূর, মাই এঞ্জেল, দেখ আমার কথা শোনো। শান্ত হও প্লিজ। আমি তোমাকে কিচ্ছু করবোনা। আমার কাছে এসো।”
নূর যেন কোনোকিছুই শুনতে রাজি না। ধীরে ধীরে সে কেমন হাইপার হয়ে উঠছে।জোরে জোরে “বাঁচাও বাঁচাও” বলে চিল্লাচ্ছে। আদিত্য তার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই সে হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুঁড়ে মারছে। এরমধ্যে একটা কাচের বোতল এসে লাগল আদিত্যের হাতে। হাতে লেগে কাঁচে কেটে গেল হাত। ব্যাথা পেয়ে হাত ঝাকিয়ে হালকা আর্তনাদ করে উঠল আদিত্য। ততক্ষণে নূরের চিল্লাচিল্লি শুনে বিহানসহ বাকিরাও দৌড়ে এলো ওখানে। দরজা খুলে বিহান ভেতরে ঢুকল। পিছে পিছে জমিলাও এলো। বিহানকে দেখে নূর দৌড়ে বিহানের পেছনে গিয়ে লুকাল। লুকিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“বাঁচান আমাকে। এই রাক্ষস আমাকে খেয়ে ফেলল।”
নূরের কথায় তব্দা খেয়ে গেল বিহান। আদিত্যর দিকে তাকিয়ে দেখল আদিত্যর হাত থেকে রক্ত পড়ছে। বিহান ছুটে আদিত্যের কাছে গিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
“কিরে হাত কাইট্টা গেল কেমতে! কি হইচে এইহানে?”
আদিত্যর হাত কাটার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে নূরের এভাবে ওকে ভয় পাওয়া দেখে। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে নূরের পানে। যে এমুহূর্তে জমিলার পেছনে লুকিয়ে পড়েছে। সে’কি এতটাই ভয়ংকর! এতটাই খারাপ! হবে হয়তো। খারাপ বলেইতো নূর ওকে রাক্ষস ভাবছে। ওকে একসেপ্ট করছে না। আদিত্য চোখের ইশারায় জমিলাকে বুঝাল আপাতত নূরকে এখান থেকে নিয়ে যাক। নাহলে নূর শান্ত হতে পারবে না। আদিত্যর ইশারায় জমিলা নূরকে নিয়ে গেল আপাতত।

বিহান আদিত্যর হাতের ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। খেয়াল করল আদিত্যর মুখটা বিমর্ষ হয়ে আছে। বিহান হয়তো বুঝতে পারল এর কারণ। সে শান্ত সুরে বলল,
“এত জলদি হতাছ হইলে হইবো! জানি তোর লগে ভাবির এমন করা তোর দিলে লাগে। কিন্তু একটুতো ছময় লাগবোই। তোর বুঝন লাগবো ভাবির মনে তোরে লইয়া আতঙ্ক বইসা গেছে। এত জলদি কাজ হইবো না। ছময় লাগবো আর মেহনতও লাগবো। তয় পেরেছান হওনের কাম নাইক্কা। দেখবি বহুত জলদি ভাবিও তোরে পছন্দ কইরা ফালাইবো।”
আদিত্য দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আই জাস্ট হোপ সো। নূরের এই উপেক্ষা আমি আর নিতে পারছিনা৷আমি কি করলে ও আমাকে নিজের পছন্দের তালিকায় রাখবে বলনা! ও শুধু একবার বললে আমি সবকিছু ওর কদমে ঢেলে দিবো। অথচ ও আমাকেই চায়না৷ ওর চোখে যখন আমার জন্য ভীতি দেখি তখন নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তি মনে হয়।”
“চাপ লইস না৷ ছব ঠিক হইয়া যাইবো গা। বিয়া করছস যহন বউয়ের প্যারাতো লওনই লাগবো।”
স্মিথ হাসলো আদিত্য। তারপর বলল,
“গিয়ে দেখ নূর ঠিক আছে কিনা। ও শান্ত হয়েছে কিনা।”
“জমিলা খালা আছে ভাবির লগে। তুই চিন্তা করিছ না।”

জমিলা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে নূরকে শান্ত করেছে। নূরকে খাবারও খাইয়ে দিয়েছে। নূর এখন বিছানায় বসে পুতুল নিয়ে খেলছে। জমিলা তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“বউমনি, আপনি ছোট সাহেবকে দেখে এত ভয় পান কেন?”
নূর মুখটা ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো বলল,
“কারণ সে রাক্ষস। আমার দাদীর রুপকথার গল্পের সেই রাক্ষস। যে সবাইকে খেয়ে ফেলে।আমাকেও খেয়ে ফেলবে।”
জমিলা হালকা হেঁসে বলল,
“না বউমনি, আপনি ভুল বুঝছেন। ছোট সাহেব রাক্ষস হতে যাবে কেন! সেতো আপনার স্বামী। তার সাথে আপনার বিয়ে হয়েছে। ছোট সাহেব অনেক ভালো মানুষ। সে রুপকথার রাক্ষস না। বরং রুপকথার গল্পের যে রাজকুমার থাকে সেই রাজকুমার সে। আধুনিক জামানায় বলতে গেলে সিনেমার হিরো। দেখেন না, দেখতেও কি সুন্দর হিরোর মতো।”
জমিলার কথায় নূর গভীর ভাবনায় পড়ল যেন। হ্যাঁ লোকটা দেখতেতো ওই হিরোদের মতোই। কিন্তু উনিতো ভয়ংকর। জমিলা আরও বলল,
“আজকে আপনি ঠিক করেন নাই বউমনি। ছোট সাহেব আপনার স্বামী। তাকে আপনি ওভাবে মারলেন! আল্লাহ নারাজ হবে। স্বামীর সাথে এমন ব্যবহার করতে নেই। পঁচা মেয়েরা এমন করে। আপনি কি পঁচা হতে চান!”
নূর ঠোঁট উল্টিয়ে মাথা ডানে-বামে নাড়াল। মানে সে পঁচা হতে চায়না। জমিলা তখন মুচকি হেঁসে বলল,
“তাহলে আর ছোট সাহেবের সাথে ওমন করবেন না কেমন!”
নূর সঙ্কোচিত মুখে বলল,
“কিন্তু আমার যে ভয় করে। উনি কতো ভয়ংকর! যদি আমাকে মেরে ফেলে!”
“মারবে না। আপনি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন। হ্যাঁ, ছোট সাহেব অনেক রাগর। তবে সেতো আপনার স্বামী। আপনাকে কেন মারবে সে! আপনি শুধু একবার মনের ভয় দূর করেন। দেখবেন তাকে আপনার খুব পছন্দ হবে।”
নূর বেচারি ভীষণ ভাবনায় পড়ে গেল।এই ছটাক সমান মাথায় এত মহা ভাবনার বোঝা টানা দায় হয়ে যাচ্ছে।
__

আবির এসেছে দুপুরের দিকে। আদিত্য অফিসে তাই কতক্ষণ নূরের সাথে আড্ডা দিয়ে এখন লিভিং রুমের সোফায় টান টান হয়ে শুয়ে আছে। গিটার বুকের উপর রেখে টুংটাং আওয়াজ তুলছে তাতে। ঠিক তখনই দরজা দিয়ে এক সুন্দরী রমণীর আগমন ঘটল। সে এগিয়ে এসে বলল,
“এক্সকিউজ মি!”
আবির চোখ তুলে তাকাল। যথারীতি সুন্দরী রমণী দেখামাত্র তার ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটল। ঠাস করে উঠে দাঁড়াল সে। মেয়েটির দিকে হালকা ঝুঁকে ফ্লার্টি ভঙ্গিতে বলল,
“আগে কারেন্টতো হতে দাও। তারপর নাহয় এক্স কোরো।”
মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে বলল,
“সরি!”
“ডোন্ট বি। বাইদাওয়ে আপনার সুন্দর মুখে সুন্দর নামটা যদি বলতেন।”
“জিহ!”
“ওয়াও! হোয়াট আ ইউনিক নেম, জিহ।”
“না না আমার নাম জিহ না। আমার নাম মিথিলা।”
“হায় মিথিলা। আম আবির সিঙ্গেল।”
“আবির সিঙ্গেল! সিঙ্গেল আবার কারোর সারনেম হয় নাকি!”
“এটা সারনেম না। সিঙ্গেল আমার স্টাটাস।”
আবির দুঃখী ভঙ্গিতে বলল,
“জানেন আমি পুরো তিন ঘন্টা পঁচিশ মিনিট ত্রিশ সেকেন্ড ধরে সিঙ্গেল আছি। এই দুঃখ সওয়া যায় বলেন! দুঃখে আমার গেঞ্জি ছিঁড়ে যাচ্ছে। আমি এতো সিঙ্গেল হয়ে গেছি,এতো সিঙ্গেল হয়ে গেছি যে আমার জুতোও সিঙ্গেল হয়ে গেছে। এইযে দেখেন একপায়েই শুধু জুতো আছে। আমার দুঃখ দেখে নিশ্চয় আপনারও কষ্টে মুখের আটা ময়দা ঝড়ে যাচ্ছে! কষ্ট পেয়েন না। আপনি আছেনতো। নিশ্চয় আমার কষ্ট দূর করবেন তাইনা! যতযাই হোক আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম, কিউট ছেলেটাকে নিশ্চয় আপনি কষ্ট পেতে দিবেন না!”
মিথিলা এবার তব্দা খাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“এক্সকিউজ মি! কি আবোল তাবোল বলছেন! আমি এখানে মিঃ আদিত্যর সাথে দেখা করতে এসেছি। কেএস গ্রুপের বসের সেক্রেটারি আমি। বস আমাকে পাঠিয়েছেন মিঃ আদিত্যকে একটা ডিলের ব্যাপারে বলতে। ডিলটা কনফিডেনসিয়াল তাই বাসায়ই এসে কথা বলতে বলেছেন।”
আবির একগাল হেঁসে বলল,
“আরে আমিইতো আপনার মিঃ আদিত্য। আসুন আমরা রুমে গিয়ে ডিল ডিসকাস করি কেমন! এখানে অনেক ডিস্টার্বেন্স হবে।”
“ও আপনিই মিঃ আদিত্য! হ্যালো স্যার, নাইস টু মিট ইউ। ”
বলেই মেয়েটা হ্যান্ড শেকের জন্য হাত বাড়াল। আবির মেয়েটার হাত ধরে বলল,
“আরে হ্যান্ডশেক করা এসব বিদেশীদের ঢং। আমরাতো দেশী, আর দেশীরা করে কোলাকুলি। আসেন কোলাকুলি করি। দেশী সংস্কৃতিকেতো বাঁচিয়ে রাখতে হবে তাইনা!”
বলেই আবির মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে গেলে মেয়েটা বিভ্রান্ত হয়ে একটু সরে যায়।ঠিক তখনই বিহান এসে উপস্থিত হয় সেখানে। ওদের দেখে বলে,
“কি ওইতাচে এইহানে? আর এই মাইয়াডা কেঠা?”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“হতে আর দিলি কই সালা! একটু পরে আসলে কি তোর মগজে কিডনি হয়ে যেত!”
“কি কছ হালা! আর মাইয়া কেঠা?”
মিথিলা তখন বলে উঠল,
“জি আমি মিথিলা। কেএস কোম্পানি থেকে এসেছি আদিত্য স্যারের সাথে দেখা করতে।”
“ও আইচ্চা, মাগার আদিতো অফিছে অহন।”
মিথিলা বিস্মিত কন্ঠে বলল,
“অফিসে মানে! তাহলে উনি কে? উনিতো বলল উনিই মিঃ আদিত্য।”
আবির বেচারা ধরা খেয়ে নিজের মুখ লুকাতে এদিক ওদিক চোরের মতো তাকাতে লাগল। বিহান ভ্রু কুঁচকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো আবিরের দিকে। তারপর হঠাৎ হো হো করে হেঁসে দিয়ে বলল,
“হ হাচাই কইছেন৷ ও হইলো আদিত্য, আর আমি ছাহরুখ খান। আর এইডা হইলো গিয়া বাকিংহাম প্যালেস। আর এইডা পৃথিবী না, মঙ্গলগ্রহ।”
বলে আবারও হাসতে লাগল বিহান। মিথিলা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
“মানে?”
“আরে ম্যাডাম মানে হইলো এই হালা কোনো আদিত্য ফাদিত্য না। আরে ওতো আদিত্যর বাছার ঝাড়ুদারেরও যোগ্য না। আদিত্য দয়া কইরা ওরে বন্ধু কইরা রাখছে। নাহলে বেচারা পাগল ছাগলেরে ছবাই খালি উষ্টা মারে।”
মিথিলা এবার একটু ভয় পেয়ে আবিরের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে সরে দাঁড়িয়ে বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলল,
“কি বলেন! উনি পাগল!”
“খালি না।এক্কেরে বদ্ধ পাগল। ওর পাগলামো খালি ছুন্দরী মাইয়াগো দেখলেই বাড়ে। ছুন্দরী মাইয়াগো দেখলেই ওর মগজ পেটের ভিতরে ঢুইকা যায় আর কিডনি ঢুইকা যায় ফুছফুছির ভিতরে। পুরাই ক্যামিকেল মিক্সার হইয়া যায় গা। তহন ওর কোনো হুছ থাকে না।”
“বলেন কি! থ্যাংক গড আপনি আমাকে বাঁচালেন। নাহলে এই পাগলতো আজ আমাকে মেরেই ফেলতো। আমি বরং যাই। মিঃ আদিত্যর অফিসেই দেখা করে নিবো।”
বলেই মেয়েটি তড়িৎ গতিতে পালাল ওখান থেকে। তা দেখে বিহান হাসতে লাগল। তারপর আবিরের দিকে তাকাতেই দেখল আবির কেমন হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“আমি পাগল! ঠিক আছে আজ তোকে একটু পাগলামি দেখিয়েই ছাড়ি।”
বিহান অবস্থা বেগতিক দেখে ছুট লাগালো। তবে আবিরও ছাড়ার পাত্র নয়। দৌড়ে ধরে ফেলল তাকে। বিহানকে সোফার উপর চেপে ধরে ক্ষিপ্ত সুরে বলল,
“আমি পাগল! হা,রামি দেখ এখন কেমন লাগে! সকাল সকাল আমার ডেট নষ্ট করে দিলি তুই।”
বিহান হাসতে লাগল। এক পর্যায়ে আবির ক্লান্ত হয়ে বিহানকে ছেড়ে দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে পড়ল। বিহানও আরাম করে বসে বলল,
“তুই কি ফেড আপ হছনা! আর কত ভাই! কহোনোতো একটার উপরে টিকা যা।”
আবির পকেট থেকে সিগারেট বের করতে করতে বলল,
“এখানে কি ভোট চলছে নাকি যে একটার উপরে সিল মাইরা দিমু! আরে আবির হলো মহৎপ্রাণ ব্যাক্তি। সকল নারীদের সেবায় নিজেকে বিসর্জন করে দিয়েছি। শুধু একজনকে ধরে বাকিদের কষ্ট দেওয়ার মতো স্বার্থপর না আমি।”
বলেই সিগারেট মুখে পুড়ে লাইটার জ্বালাতে নিলো আবির। ঠিক তখনই বিহান বলে উঠল,
“আর আহানা?”
আহানার নাম শুনতেই জ্বলন্ত লাইটার তৎক্ষনাৎই স্থির হয়ে গেল আবিরের হাতে। সাথে থমকালো মুখশ্রীও। বেখেয়ালিতে হঠাৎ আগুনের হালকা ছ্যাঁকা লাগল আবিরের আঙুলে। ঝট করে লাইটার হাত থেকে ফেলে দিলো সে। ঠোঁটে গোঁজা সিগারেটটা বের করে দ্বিধান্বিত মুখ করে বলল,
“হোয়াট আহানা? এখানে আহানা কোত্থেকে আসল?”
“কোত্থাইকা আবার আইবো। আহানাতো বহুত আগে থাইকাই আইয়া বইসা আছে। তোর কইলজার ভিতরে। তা ওর সাথেও কি এমতেই করবি তুই? ”
“কি আবোল তাবোল বকছিস! এইজন্যই তোরে কই সস্তা মাল খাইস না। আরে আমাকে বললে আমিই তোরে দামি বিদেশি খাওয়াইতাম। এখন ভুলভাল বকছিস।”
“আইচ্চা, আমি ভুলভাল বকতাছি! ঠিক আছে এক কাম করি। তোরতো আর ইন্টারেছ নাই আহানার প্রতি। ভাবতাছি আমিই বিয়া কইরা ফালাই আহানারে। বিয়ার বয়ছতো হইয়াই গেছে। আর আহানা দেখতেও মাশাল্লাহ চান্দের লাহান। ভাল্লাগে আমার।”
আবির এবার চোয়াল শক্ত করে তাকালো বিহানের দিকে। চোখ ভীষণ তপ্ত। তা দেখে বিহান বাঁকা হেঁসে বলল,
“কিরে এমতে তাকাছ ক্যালা! খাইয়া হালাবি নি! তোর আবার রাগ টাগ হইতাছে নাতো আমার কথায়!”
আবির দাঁতে দাঁত পিষে উঠে দাঁড়াল। সামনের টি টেবিলটাতে সজোরে একটা লাথি মেরে হনহন করে বেড়িয়ে গেল সে। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিহান স্মিথ হেঁসে বলল,
“পাগলা।”
___

বেলা তখন রাতের নয়টা পার হয়েছে। নূর এখনো পর্যন্ত জমিলার কাছেই আছে। জমিলা কত করে বোঝাচ্ছে তাকে আদিত্যের রুমে যেতে। কিন্তু নূর ভয়ে রাজিই হচ্ছে না। আপাতত নূরকে রেখে জমিলা রান্নাঘরের কাজে গেছে। নূরের রুমে আর ভালো লাগছিল না তাই তার পুতুলটাকে কোলে নিয়ে সে একটু করিডরে এলো। সামনের দিকে হাঁটতে লাগল একটু সে। হাঁটতে হাঁটতে একসময় খেয়াল করল সে আদিত্যের রুমের সামনে চলে এসেছে। যেখানে কাল রাতে সে ছিলো ওই লোকটার সাথে। খেয়াল হতেই ভয় শুরু হয়ে যায় তার মনে। সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে দ্রুত চলে আসতে পা বাড়ায়। কিন্তু হঠাৎই কিছু চোখে পড়ে তার। যার দরুন তার বাড়ানো কদম থেমে যায়। আদিত্যর রুমের দরজা হালকা খোলা ছিলো। সেখান থেকে ভেতরে দেখতে পায় নূর। দেখতে পায় আদিত্য বিছানায় বসে আছে খালি গায়ে। তার পিঠে বড় একটা ক্ষত দেখা যাচ্ছে। তাজা ক্ষতের দাগ। আদিত্য তার ক্ষততে হয়তো মলম লাগাতে চাচ্ছে। কিন্তু ভালো করে হাত পৌঁছাচ্ছে না। হাতের সেই ব্যান্ডেজটাও রক্তে ভিজে উঠেছে। যেখানে সকালে আঘাত করেছিল নূর।আদিত্যকে এভাবে দেখে অবুঝ নূরের মনে অপরাধ জাগল যেন। জমিলার তখনকার কথা মনে পড়ল তার। সে’কি সত্যি সত্যিই পঁচা মেয়ে হয়ে গেছে! কিন্তু নূরতো পঁচা হতে চায়না। নূর দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝে হালকা ভীতু মনেই ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল রুমের ভেতর।

আদিত্য তখনও নিজের আঘাতে মলম দেওয়ার প্রয়াস করে যাচ্ছে। শত্রু গ্যাংয়ের সাথে আজ ফাইট করতে হয়েছে তাকে। শত্রুপক্ষকেতো বরাবরের মতোই কপোকাত করে দিয়েছে সে। তবে ফাইটে তারও একটু আঘাত লেগেছে। নূরের দেওয়া আঘাতের স্থানে আবারও নতুন করে আঘাত লেগেছে। আর পিঠে একটু লেগেছে। যদিও চাইলে ডক্টর দেখাতে পারতো। তবে এই সামান্য কারণে ডাক্তার দেখানো আদিত্যর কাছে সিলি মনে হয়। আর হাতের এই ক্ষততে সে কাউকে হাতই লাগাতে দিবেনা। এটা ওর এঞ্জেলের দেয়া প্রথম ক্ষত। এখানে অন্য কারোর হাত দেওয়ার অনুমতি নেই। তাই নিজেই নিজেরটা করবে সে। তবে হাত পৌঁছাতে না পারায় একটু অসুবিধায়ই পড়ল সে।ততক্ষণে নূর আদিত্যর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। আদিত্যর এমন স্ট্রাগল দেখে কেমন ময়া হলো তার। সে বলে উঠল,
“কি হয়েছে তোমার?”
তড়িৎ গতিতে পেছনে ফিরে তাকাল আদিত্য। নূরকে এখানে দেখে অনেকটাই বিস্ময় কাজ করল তার চকিত নজরে। যেন তার বিশ্বাসই হচ্ছে না নূর নিজে থেকে এখানে, ওর কাছে এসেছে। সেতো ভেবেছিল নূর বোধহয় আর ওর রুমে আসিবেই না। আদিত্যর চোখের পাতা কেমন চিকচিক করে উঠল। নূর আবারও আস্তে করে বলল,
“কষ্ট হচ্ছে তোমার?”
আদিত্য নূরের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেঁসে বলল,
“এতক্ষণ হচ্ছিল। এখন আর হচ্ছে না।”
নূর আমতাআমতা করে বলল,
“আমি লাগিয়ে দেই? ”
আদিত্যর চোখের চমক যেন বাড়ল। মনে হচ্ছে খুশিময় অনুভব। সে বিভোরিত কন্ঠে বলল,
“তুমি দিবে?”
নূর ঘাড় কাত করে বলল,
“হ্যাঁ দিবো। আমার পুতুলের কেটে গেলে আমিইতো মাটির মলম লাগিয়ে দেই। আমি পারিতো লাগাতে। ”
“আচ্ছা!”
“হ্যাঁ, দিন মলম দিন।”
আদিত্য মলমটা নূরের হাতে দিলো।নূর আদিত্যর পেছনে পিঠের পাশে বসল।অপরিপক্ক নূর মলমের টিউব টিপে একগাদা মলম নিজের হাতে ঢেলে নিলো। তারপর ক্ষত স্থানে জোরে জোরে লেপ্টে দিতে লাগল।নূরের অপরিপক্ক কাজে আদিত্যর শরীরে জ্বলনের অনুভব হলেও মন জুড়ে অসীম প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ল। ঠোঁটে হাসির রেখা বিদ্যমান।নূর তাকে নিজে হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছে। তার জন্য চিন্তা দেখাচ্ছে। এ যেন মহামূল্যবান কিছু ঘটছে তার সাথে। সামান্য এই ব্যাথার পরিবর্তে নূর যদি এভাবে ওর কাছে আসে তাহলে আদিত্য রোজ পুরো শরীরে আঘাত পেতে রাজি। মলম লাগানো শেষে নূর বলল,
“হয়ে গেছে।”
আদিত্য ঘুরে বসলো তার দিকে। নূর শুধাল,
“এখন ব্যাথা কমেছে? ”
আদিত্য মুগ্ধ অপলক নয়নে তাকিয়ে বলল,
“না কমে যাবে কোথায়! আমার নূর এত সুন্দর করে মলম যে লাগিয়ে দিলো। ব্যাথার বাপের সাধ্য আছে আর থাকার!”
নূরের নজর গেল আদিত্যর হাতের রক্তে ভেজা ব্যান্ডেজটার দিকে। অপরাধবোধ হলো ভীষণ। নূর অপরাধী সুরে বলল,
“আমি কি সত্যিই পঁচা মেয়ে? ”
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বলল,
“নাতো। আমার নূর কেন পঁচা হতে যাবে! কে বলল তোমাকে এই কথা! ”
“আমি জানি আমি পঁচা কাজ করেছি। ওইযে তোমাকে ব্যাথা দিয়েছি কত্তো! পঁচা মেয়েরাইতো এমন করে।”
“একদম না। তুমি পচা হতেই পারোনা। তুমিতো আমার এঞ্জেল।”
নূর এঞ্জেল শব্দের অর্থ বুঝলোনা। কেমন প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালো সে। আদিত্য বুঝতে পেরে বলল,
“এঞ্জেল মানে পরি। তুমি একটা পরি। আর পরিরা কখনো পঁচা হয়না।”
নূর যেন খুশি হলো তাকে পরি বলায়। নূর আহ্লাদী হেঁসে বলল,
“আমি পরি!”
“হ্যাঁ, তুমি পরি। আমার পরি, আমার এঞ্জেল।”
নূর হি হি করে খুশিমনে হাসলো। তাতে উজ্জ্বল হলো আদিত্যর হৃদকুঠির। নূর বলল,
“তুমি অতটা খারাপ না, হিরো।”
আদিত্য কৌতুহলী কন্ঠে বলল,
“হিরো!”
“হ্যাঁ, ওইযে সিনেমার হিরো। তুমিও ওই হিরোর মতোই। ”
“সত্যিই! ”
“তিন সত্যি।”
এভাবে নানান কথাবার্তার মাঝে নূর আদিত্যর সাথে অনেকটাই ফ্রী হয়ে গেল। তার ভয় কেটে গেল অনেকটাই। আদিত্যর মনে খুশির বাতাস বইছে। তার নূর তার সাথে সহজ হচ্ছে। এরচেয়ে খুশির আর কি হতে পারে তারজন্য। হঠাৎ নূর জিজ্ঞেস করল,
“আচ্ছা তুমি পিঠে ব্যাথা পেলে কিভাবে! তোমাকেও কি তোমার মা, বাবা,বোনেরা মারে?”
নূরের এই কথায় আদিত্য স্থির হলো খানিক। কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“মানে?”
“হ্যাঁ, ওইযে আমাকে যেভাবে মারতো সবাই। আমি পাগলতো, তাই ওরা মারে সবাই ধরে।”
আদিত্যর বুকের মাঝে মুষড়ে উঠল।চোখের পাতায় ছেয়ে গেল ব্যাথিত ছায়া। সে ঝট করে নূরকে টান দিয়ে বুকের মাঝে গেঁথে ফেলল। দুই হাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আর কেউ মারবে না তোমাকে। কখনো না। তোমার উপর আর কোনো প্রহারের হাত আমি উঠতে দিবোনা৷ তোমাকে আমার এই ছোট্ট রাজ্যের রানী করে রাখবো। যেখানে কেউ তোমাকে আঘাত করতে পারবেনা৷ শুধু ভালোবাসা আদরে ভরিয়ে দেবো তোমাকে। আর হ্যাঁ, তুমি পাগল না। ওই ফালতু কথাটা আর বলবে না। তুমি আমার পরি, আমার এঞ্জেল।”
আদিত্যর এভাবে জাপ্টে ধরায় প্রথমে একটু ভয় পেয়ে যায় নূর। তবে ধীরে ধীরে কেমন যেন ভয় কেটে যায় তার। আদিত্যর কথার মর্ম সে বুঝতে অক্ষম সে। তবুও কেন যেন ভালো লাগল লোকটার কথাগুলো। তার বুকের হৃৎস্পন্দনের ধ্বনি শুনতেও যেন ভালো লাগছে তার। আজ সবই ভালো লাগছে তার।

চলবে….

(সবার প্রিয় চরিত্র আবিরকে নিয়ে লেখা ইবুক। #শৈবলিনী গল্পের আবির আহানার জুটি নিয়ে লেখা ইবুক “ফেরারি মন”। বিস্তারিত নিচে দেখুন)

“কোমড় দেখিয়ে ইমপ্রেস করতে চাস আমাকে! ওয়েল, চেষ্টাটা ভালোই ছিলো। আই লাইক ইউর এপ্রোচ। এটা নতুন কিছু না। আমাকে দেখে মেয়েরা তাদের আকর্ষণীয় পার্ট দেখিয়ে আমাকে দূর্বল করার প্রচেষ্টা সর্বক্ষণই করে থাকে। এতে দোষের কিছু নেই। তুইও তাই করতে চাইছিস। বাট বুকে বিশাল একটা পাথর চেপে অতি দুঃখের সহিত বলতে হচ্ছে যে, তোর এই প্রচেষ্টা একেবারেই বিফল গেছে। ইট ডাজেন্ট ওয়ার্ক অন মি। আরে দেখানোর জন্য আগে ঠিকঠাক একটা কোমড়তো বানাতি! কোথায় আমার গার্লফ্রেন্ডদের হট হট মাখনের মতো স্লিম কোমড়।আর কোথায় তোর ঠান্ডা বাসি কোমড়। উল্টো তোর এমন অরুচিকর কোমড় দেখে বমি এসে যাচ্ছে আমার।”
রাগে দুঃখে সারা শরীর রি রি করে উঠলো আহানার। এই বিশ্ব অসংভ্য লোকটা এখানে আছে জানলে সে আসতোই না। চাচাত বোন হিয়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে শাড়ি পড়ে বের হয়েছিল সে। যদিও এটা হিয়ার জোরাজুরিতে পড়েছে। নাহলে শাড়ি পড়া তার পছন্দ না। কারণ সে শাড়ি ঠিকমতো সামলাতে পারে না। বারবার শুধু মনে হয় কোন দিক দিয়ে হয়তো তার শাড়ি খুলে যাচ্ছে। আজও তেমনই হচ্ছিল। একদিকে শাড়ি ঠিক করছেতো মনে হচ্ছে অন্য দিক দিয়ে সরে যাচ্ছে। এভাবেই শাড়ির সাথে যুদ্ধ করতে করতে সে হলুদের আয়োজনের কাছে আসতে নেয়। তখনই সামনে পড়ে এই অসহ্যকর লোকটা। যার জন্মই হয়েছে হয়তো একমাত্র আহানাকে জ্বালানোর জন্য। বখাটে ছেলেদের মতো বাইকের উপর পায়ের উপর পা তুলে আয়েসি ভঙ্গিতে শুয়ে থেকে সিগারেটের ধুঁয়া ছাড়ছিলেন জনাব। আহানাকে দেখেই সে ফট করে একলাফে নিচে নেমে দাঁড়ায় আহানার সামনে।পড়নে তার এ্যাশ কালারের টিশার্টের উপর কালো লম্বা ঢিলাঢালা ধরনের জ্যাকেট আর কালো প্যান্ট। তার ড্রেসিং সেন্স সর্বদাই আহানার কাছে উদ্ভট আর উগ্র মনে হয়। কানের নিচ পর্যন্ত লম্বা লম্বা চুল। যা কখনো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে থাকে, আবার কখনো উপর থেকে অর্ধেক চুল ঝুঁটি করে বেঁধে রাখে। হাতের সবগুলো আঙুলে অদ্ভুত ডিজাইনের সব আংটি আর দড়ির মতো একগাদা ব্রেসলেট হাতে ভরা। এটা নাকি তার রকস্টার লুক। এমনটাই বলে সে।আবির আহানার সামনে দাঁড়িয়ে চোখের রাউন্ড শেইপের কালো চশমাটা হাতের দুই আঙুল দিয়ে চোখের উপর থেকে খানিকটা নামিয়ে নাকের ডগায় ঠেকায়। তারপর ঘাড় বাঁকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আহানার নিচ থেকে উপর পর্যন্ত পুরোটা স্ক্যান করতে থাকে। তা দেখে আহানা কিছুটা ভড়কে যায়। সে কিছু বলবে তার আগেই আবির তার মহান উক্তি গুলো বলা আরম্ভ করে দেয়। যা বরাবরের মতোই আহানার রাগে শরীর জ্বলিয়ে দেয়। আহানা আজ পর্যন্ত ভেবে পায়না একটা এতটা অসভ্য আর অসহ্যকর কিভাবে হতে পারে! প্রতিবারই আবির অসভ্যতায় নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে দেয়। আহানা রাগে কিড়মিড় করে আবিরের কথার প্রতিত্তোরে বলল,”একদম বাজে কথা বলবেন না কিন্তু। আপনাকে কেন কোমড় দেখাতে যাবো আমি! আপনাকে কোমড় দেখাতে যাবে আমার জুতো।”
“তো কাকে দেখাতে কোমড় বের করেছিস! অন্য ছেলেদের! ”
“যাকে খুশি দেখাই আপনার এত মাথা ব্যাথা কেন?”
“আরে কি বলিস! এটাতো আরও ভয়াবহ ব্যাপার। তোর এমন বাসি,পঁচা কোমড় দেখে আমাদের যুবসমাজের ভেতরেতো ভুল ধারণা পয়দা হবে তাইনা! আমি নাহয় শক্ত মনের দেখে তোর এই কোমড় দেখেও সহ্য করে গেলাম। কিন্তু ওই মাছুম যুবসমাজ তোর এই কোমড় দেখে নির্ঘাত হার্ট করে মারা যাবে। যারা বেঁচে থাকবে তারাও ডিপ্রেশনে চলে যাবে। কোমড়ের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাবে তাদের। নিজের বউয়ের কোমড়ও দেখতে চাইবে না। ধীরে ধীরে যুবসমাজ শেষ হয়ে যাবে। আর আমার মতো দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যুবসমাজের এমন ক্ষতি আমি কিছুতেই হতে দিবোনা। কারণ যুবক না থাকলে যুবতীদের কি হবে? যুবকহীনা তারাতো অপূর্ণই রয়ে যাবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here