মাতাল_হাওয়া পর্ব ১৩

#মাতাল_হাওয়া
#১৩ম_পর্ব
#তাসনিম
স্টেজে সবাই বসে মেহেদী পরছে। এরমধ্যে রাকিবের ফোন এলো নিপা দুষ্টমি করে রায়নার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে পিক করে লাউডস্পিকার দিল,

—– জানপাখি একটু ভিডিও কলে আসোনা!! তোমার হাতের মেহেদীতে আমার নামটা খুব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে সাথে তোমাকেও ভিষণ দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। মিস করছি খুব।

রাকিবের কথা শুনে নিপা জোরে হেসে দিয়ে বললো,

—- ভাইয়া শালীর সাথে এইটাইপ কথা বললে বিয়ে ভেংগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে না???

রাকিব বেকুব বনে গেল। তারপর হেসে বললো,

—- শালী তো হিসাবে আধা ঘরওয়ালিই হয় তাই না?? তো একটু আকটু বলা যায় কি বলো শালীকা??

নিপাসহ বাকি সবাই সশব্দে হেসে দিল। তুলি হেসে দিয়ে বললো,

—– নিপা কি করছিস এখন দিয়ে দেয় ফোনটা বেচারা রাকিব ভাই পরে বৌয়ের সাথে কথা বলতে না পেরে দুঃখে ঘুমের টেবলেটই না খেয়ে ফেলে।

এইবলে সবাই হাসিতে যোগ দিল। নিরব দূর থেকে দারিয়ে তুলির হাসি দেখতে লাগলো। এই মেয়েটাকে তার জীবনে চাই ই চাই যে কোনো মূল্যে। এতো মিষ্টি হাসি দেখে নিশ্চিন্তে আজীবন কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
“ইশ!! এতো সুন্দর করে কেন হাসতে হবে মেয়েটাকে??? ওর হাসি দেখে যে একজনের মনের ভিতর তোলপাড় করে উঠে তা কি ও জানেনা??

তুলি হাসতে হাসতে হঠাৎ নিরবের দিকে চোখ পরে। দেখে নিরব একধ্যানে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নিরবের চোখেমুখে এক অজানা মাতাল করা চাহনি চোখে পরছে তুলির। মনে হচ্ছে কতদিনের তৃষ্ণার্ত পথিক তার তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। কি যে ভাবছি আমি উনি কেন আমাকে দেখবে উনার তো এখন নিলীমা আছে যাকে উনি মনে প্রাণে ভালোবাসে। একটা চাপা অভিমানে মনটা ছেয়ে গেল তুলির। তুলি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। নিরব তা দেখে ভাবলো,

—- আর মাত্র কয়েকটাদিন তুলি তারপর তোকে আমার জন্য পারমানেন্ট করে নিব। তোর এই অভিমান ভেঙে গুরিয়ে দিব। এই নিরবের মনে যে শুধু তোরই বসবাস।

তুলির শাড়ীর কুচিটা সামান্য নিচে নেমে গেছে তাই ভাবলো উপরে যেয়ে ঠিক করে নেই। আয়নায় দাঁড়িয়ে তুলি শাড়ী ঠিক করছিল। হঠাৎ করে নিরবকে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে তাকালো। নিরব এসে দরজা বন্ধ করে দিল। তুলি ভয়ে জোরেশোরে একটা ঢোক গিলল।

—– এই আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন?? কেউ দেখলে খুব খারাপ হবে। প্লিজ দরজাটা খুলুন।

—– খুলবনা!! কি করবি?? ব্রু নাচিয়ে বললো নিরব।

—– দে—–খু–ন!!! দরজা খুলুন বলছি। কাপাকাপা স্বরে বললো তুলি।

নিরব তুলির সামনে এগিয়ে এলো। তুলি ভয়ে বড়সড় ঢোক গিলে বললো,

—– দেখুন নিরব ভাই আপনি কিছুদিন পরে কারো স্বামী হবেন। এইসব কাজকর্ম আপনার শোভা পায়না। দরজা খুলুন বলছি।

এইবলে তুলি দরজা খুলতে গেলে নিরব তুলির হাত ধরে একটানে বুকের মাঝে মিশিয়ে নেয়। তুলি হঠাৎ হেচকা টানে অবাক হয়ে নিরবের দিকে তাকায়।

—- বাব্বাহ!!! এতো রাগ।

তুলি নাক ফুলিয়ে বললো,

—- কি বুঝাতে চাচ্ছেন বলুন তো?? আমার মনে আপনার জন্য কোন ফিলিংস নেই আর আপনারও নেই জানি। নিজে একজনের হবু বর হয়েও এসব কর‍তে আপনার লজ্জা করেনা। আর এটা কোন ধরনের অসভ্যতামী???

নিরব দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,

—— আমার বরাবরই লজ্জা কম জানিস তো। ছেলে মানুষের এতো লজ্জা থাকলে আর যুগে যুগে বংশবৃদ্ধি হওয়া লাগতো না। আর কি জানি বললি আমি খাটাশ, ফাযিল, লুচু আর এখন অসভ্যর ও টেগ মেরে দিলি। আচ্ছা আমার এতো গুণ জানতাম না তো। এক কাজ করি সবগুলো গুণ এপ্লাই করি কি বলিস??? অসভ্য কত প্রকার ও কি কি চল আজকে তোকে বুঝাই।

তুলি কাপাকাপা কন্ঠে বললো,

—– না নিরব ভাই আমি ওভাবে মিন করে বলি নাই। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। আপনি তো অতিমাত্রায় ভদ্রছেলে।

নিরব তুলির অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বললো,

—- আর কি জানি বললি ও হ্যা মনে পরেছে আমার জন্য কিছু ফিল করিস না!! আচ্ছা আমি যে তোর এতটা কাছে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বুকে তোলপাড় হচ্ছেনা?? কিছু ফিল হচ্ছেনা???

তুলি কেপেকেপে উত্তর দিল,

—- না কিছু ফিল হচ্ছেনা।

নিরব তুলির কোমড় ধরে আরো কাছে নিয়ে গেল আর বললো,

—- এবার???

তুলি চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়লো। নিরব বুঝতে পারছে মুখে যতই বলুক না কেন মনে মনে তুলির কেপেকেপে অবস্থা খারাপ। ওর বুকে যে তোলপাড় খুব ভালো করেই শুরু হয়ে গেছে তা নিরবের আর অজানা নয়। নিরব কিছু না বলে তুলির সামনে হাটু গেড়ে বসলো। তুলির কোমড়ে একটা খুব সুন্দর পাথরের কাজ করা বিছা পরিয়ে দিল। নিরবের হাত ওর কোমড়ে পরায় তুলি কেপে উঠলো। তুলির সুন্দর কোমড়ে যেন বিছাটা আরো বেশি সুন্দর মানিয়েছে। তুলির নাভির পাশে গাড়ো তিলটা দেখে নিরবের মাথা ঝারা দিয়ে উঠলো। এখনি ছুয়ে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে। নিরব তার ইচ্ছাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ালো। তুলিকে কিছু না বলে চলে গেল। তুলি নিরবের যাওয়ার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে রইলো। এই ছেলের আগা মাথা ও কিছুই বুঝেনা। ঝড়ের মতো আসে আবার ঝড়ের মতো চলে যায়। তুলি বিছাটায় হাত বুলালো আসলেই অনেক সুন্দর বিছাটা উনার পছন্দ আছে বলতে হবে। তুলি লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসলো আর ভাবলো,
“ইশ!! এইছেলেটাকে যদি ওর জীবনে পেতো জীবনটা না জানি আরও কত রঙিন হতো।”

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here