মাতাল_হাওয়া পর্ব ১২

#মাতাল_হাওয়া
#১২ম_পর্ব
#তাসনিম
সময় পেরিয়ে রায়নার বিয়ের সময় চলে এলো। তুলিকে রায়না জোর করে বিয়ের ৪ দিন আগে নিয়ে এলো। রায়নার মা বাবা ও তুলিকে খুব পছন্দ করে। উনার ভাই যে কেন তুলিকে পছন্দ করে না তা ভেবে পায় না রায়নার বাবা। তুলি আসাতে উনারা অনেক খুশি হলো। রায়নার মা বাবার নাম রাশেদ সাহেব আর রাশিদা বেগম। কি সুন্দর মিল দুইজনের নামের তাই না??? রাশেদ সাহেব তুলিকে দেখে বলে উঠলো,

—- তুলি মা তুমি এসেছ আমি অনেক খুশি হয়েছি। তা কেমন আছো মা??

—- জি আংকেল আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

— হ্যা মা ভালো আছি।

রাশিদা বেগম তুলিকে যেয়ে জরিয়ে ধরে বললো,

—— মা কেমন আছিস তুই? কবে থেকে তোকে দেখিনা বল!! একটু এসে তো দেখা করা যায় এই মা টার সাথে নাকি???

—- আন্টি সরি!! আসলে কলেজ নতুন জব সবনিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম। এখন আমি আমার আন্টির কাছে চলে এসেছি এখন এতোগুলা ভালোবাসা দিব।

তুলি রাশিদা বেগমকে জরিয়ে ধরে আদরমাখা কন্ঠে বললো। রাশিদা বেগম তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

—– যা এখন ফ্রেশ হয়ে নে। সন্ধায় আবার প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যাবে এখন একটু রেস্ট নিয়ে নেয়।

—- আচ্ছা আন্টি।

মেহেদি, সংগীত, হলুদ আর বিয়ে এই নিয়ে ৪ দিনের প্রোগ্রাম। এতগুলো দিন নিরব ভাইয়ের সামনে থাকতে হবে ভেবেই তুলির গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। নিরব ওর সামনে এলেই পুরনো ব্যাথাগুলো জেগে উঠবে। তুলি মনে মনে ভাবছে যতকিছুই হোক আমি নিরব ভাইয়ের সামনেই যাবনা তাহলেই হলো। ভাবতে ভাবতে হুট করে নিরবকে সামনে দেখে তুলি চমকে উঠে। একটা কথা আছে না “যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়” এই উক্তিটা পুরো মিলে যায় তুলির সাথে কেন জানি। নিরব তুলিকে ওর দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,

—– আমি কি আগের থেকেও অনেক সুদর্শন হয়ে গেছি নাকি?? এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস যেন এখনই আমার চরিত্র হরণ করবি। অবশ্য আমি মানুষ টাই এমন যে মেয়েরা একবার দেখলে চোখ সরাতে পারে না।

তুলি নিরবের কথা শুনে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল। এইলোকটা আসলেই একটা মুখকাটা। যা মুখে আসে তাই বলে। একটু ভাববেও না যে আমি কত লজ্জা পাচ্ছি। কিসব লুচু লুচু কথাবার্তা বলছে ফাযিল লোক একটা। ইচ্ছা করে আমাকে সবসময় লজ্জা দিবে। নিরব তুলির ভাবনা দেখে চুটকি বাজিয়ে জিজ্ঞেস করল,

—– মনে মনে আমাকে বকা শেষ হলে নিচে চলেন মহারানী। মা তোর জন্য অপেক্ষা করছে নিচে।

—- হুম চলেন।

নিচে যেয়ে তুলি সালেহা বেগম আর রহমান সাহেব কে সালাম দিল। রহমান সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এই মেয়েটার সাথে উনার অনেক রাগ জমে আছে। রাগ করে না হয় কিছু কথা বলেছিল তাই বলে বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে?? যতই কটু কথা বলুক না কেন মেয়েটাকে তো উনি কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে। একটা পোষা পাখি পাললেও তার জন্য মায়া জন্মে যায় আর তুলিকে তো উনি মেয়ের মতোই মানুষ করেছে। মায়া তো অনেক করে তুলিকে উনি কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারেনা। হুট করে নিরবের মুখে এমন কথা শুনে উনি বুঝে উঠতে পারেনি যে কি করা উচিৎ কিভাবে রিয়েক্ট করা উচিৎ তাই এভাবে বলেছে বাবা হয়ে শাসন করতেই পারে তাই বলে বাসা ছেড়ে চলে যাবে এটা কেমন কথা। না বলবে না উনি কথা এই মেয়ের সাথে। সালেহা বেগম তুলিকে কাছে টেনে নিয়ে বসালো আর বললো,

—- নিজের কোনো খেয়ালই রাখিস না মনে হয়। কত শুকিয়ে গেছিস বলতো।

তুলি হেসে সালেহা বেগমকে জরিয়ে ধরে বললো,

—- খালামনি!! তুমি যে আমাকে অনেক ভালোবাস তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে যে আমি শুকিয়ে গেছি কিন্তু তেমন কিছুই না আমি একদম ঠিক আছি। ফিট এন্ড ফাইন।

তুলি শাওয়ার নিয়ে রেডি হতে লাগলো। আজকে মেহেদী প্রোগ্রাম। তুলি একটা সবুজ শাড়ি পরেছে, হালকা কিছু গয়না পরেছে, হালকা সিম্পল মেকাপ করেছে, ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক দিয়েছে ব্যস আর কিছু না। এতেই যেন তাকে পরির মতো লাগছে যে কেউ দেখলেই বলে উঠবে অসম্ভব রূপবতী একজন মেয়ে। তুলি নিজেকে দেখে বললো,

—- নাহ তুলি খারাপ লাগছে না তোকে বরং অনেক সুন্দর লাগছে। কিন্তু আফসোস যাকে দেখাতে চাই সে তো এখন অন্য কারো।

এইসব ভেবে একফোঁটা জল গরিয়ে পরল তুলির চোখ থেকে। নিপা, সুমি ডাকতে আসলে তুলি নিজের চোখের জল মুছে ওদের সাথে নিচে চলে গেল। তুলি নিচে নামতেই একজোড়া চোখ যেন আটকে গেল ওর পানে। তুলিকে দেখে নিরবের যে কতগুলো হার্টবিট মিস হলো তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সবুজ কালার শাড়ী, গারো লাল কালারের ঠোঁট যেন তুলিকে কোনো অপ্সরী থেকে কম মনে হচ্ছেনা নিরবের। মনে মনে নিরব বলে উঠলো,

—– এইমেয়ে আজকে আমাকে পাগল করে ছাড়বে মনে হচ্ছে। ভয়ংকর রকমের কিছু করে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে। এতো সুন্দর করে কেন সাজতে হবে ওকে!!!

তুলি নিচে নেমে নিরবকে দেখে চোখ আটকে গেল ওর। সবুজ কালার পাঞ্জাবিতে স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে অনেক। খোচাখোচা দাড়ি, হাতে ঘড়ি, চুলগুলো অনেক গুছিয়ে সাজানো, সাথে মুখের মুচকি হাসিতো আছেই বড়সড় রকমের একটা ধাক্কা খেল তুলি নিরবকে দেখে। ও বুজে পায়না এইছেলেটা এতো সুন্দর কেন।দেখলেই মনের ভিতর হাতুড়ি পিটানো শুরু হয়ে যায়। এসব যখন ভাবছিল তখন নিরব এসে গম্ভীর গলায় বললো,

—– আর কখনো যদি লাল লিপস্টিক দিয়েছিস তো একদম কামড় দিয়ে ঠোঁট কেটে ফেলব। ফাযিল মেয়ে একটা মাথাটা নষ্ট করে দিল।

নিরবের কথা তুলির মাথার উপর দিয়ে গেল। কি বলে গেল এটা কামড় দিবে মানে??? বুঝতে পেরে তুলির লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। অসম্ভব রকমের লুচু ছেলে একটা। লজ্জায় লাল নীল হতে হতে স্টেজে চলে গেল তুলি।

চলবে…………..

(গল্পটা কিছুদিনের ভিতর শেষ হয়ে যাবে। এরপর আপনারা কেমন ধরনের গল্প চান কমেন্টে বলবেন প্লিজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here