মান অভিমান পর্ব -১৮

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১৮_পর্ব
,
আর্দ্র ভাই নিজের বউ এর সামনে এভাবে বললে আবার আপনার বউ কিন্তু অভিমান করবে, আর অভিমান তো করারই কথা সত্যি আপনারা দুজন এটা মোটেও ঠিক করেননি, আপনি তো তাও শেষ মুহুর্তে আমাকে সবটা বলেছিলেন আর আপনার বন্ধু ওনি তো আমায় কিছুই বলেনি উল্টো এমন ব্যবহার করলো যেনো আমার বিয়ে হয়ে গেলে ওনার কিছুই নাহ।

আরে রাগ করছিস কেনো আমি আর মেহরাব তো ওদের দুজন কে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই মেহরাব তোকে কিছু বলেনি আর আমিও ইয়ানাকে কিছু বলিনি তবে তোকে বলেছি এই জন্য কেননা তুই নাহ থাকলে তো প্লানটা সফলই হতো নাহ।

আরে শুধু আমি নাকি সাথে তো ওই বিচ্ছু দুইটাও ছিলো মানে অনু আর ইশান ।

হমম এটা ঠিক বলেছিস, ওদের কথার মাঝেই অনু দরজায় ধাক্কা দিলো আর্দ্র গিয়ে দরজা খুলে দিলো, কিরে তুই একা কেনো ইশান কই??

আরে ইশান তো ইয়ানা ভাবির মাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে গেছে আর বলেছে ওমদেই ওর বাসায় চলে যাবে সকালে আবার আসবে।

ওরা কথা বলছে কিন্তু ইয়ানা কোনো কথা বলছে না চুপচাপ বিছানার এককোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে, অনেক অভিমান জমে আছে আর্দ্রর উপর একবার আমাকে সবটা বললে কি এমন ক্ষতি হতো মানলাম সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে তবে এই সারপ্রাইজ এর চক্করে যদি সত্যি আমি কিংবা মাহি কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতাম তাহলে কি হতো। ইয়ানা বসে বসে অতীতের কথা ভাবছে আসলে কাহিনি টা কি হয়েছিলো।

ফ্লাশব্যাগ,,,

আসল কাহিনি শুরু হয়েছিলো আরো অনেক আগে থেকে একদিন মাহি আর মেহরাব রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছিলো, মেহরাব প্লেট হাতে মাহিকে খাইয়ে দিচ্ছিলো আর মাহি ফোন টিপছিলো আর খাচ্ছিলো, সেই রাস্তা দিয়েই আর্দ্রর দাদু বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলো আর মাহি মেহরাব কে ওই অবস্থায় দেখে ফেলে তবে ওনি তখন ওখানে কিছু বলেছিলো না সোজা বাড়ি ফিরে গিছিলো ওনি ভেবেছিলো মাহি বা মেহরাব কেউই ওনাকে দেখেনি তবে সেটা ভুল মাহি না দেখলেও মেহরাব দাদুকে ঠিকিই দেখে ফেলেছিলো আর মাহিকে কিছু বলেছিলো নাহ। পরে মেহরাব মাহিকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার পর অফিসে গিয়ে আর্দ্র কে সবটা বলেছিলো একথা শুনে আর্দ্র ও অনেক চিন্তায় পরে যায় তারপর মাঝে আরো দুদিন কেটে যায় এর ভিতর দাদু কাউকেই কিছু বলেনি এমনি সবার সাথে যেমন ব্যবহার করে তেমনি করছিলো আর ওদিকে আর্দ্র মেহরাব দাদুর এমন চুপ থাকা মেনে নিতে পারছিলো নাহ তাই ওরা প্লান করা শুরু করে কেমনে কি করা যায়, তখনি মেহরাব কে বিদেশ যেতে হলো আর দাদু যেনো এমন একটা সুযোগ এরই অপেক্ষাই ছিলো। মেহরাব যাওয়ার পরের দিনই আর্দ্রর সাথে মাহির বিয়ের কথা বলে যেহেতু আর্দ্র আর মেহরাব আগে থেকেই সবটা জানত তাই দাদুর এমন সিদ্ধান্তে চমকায়নি বরং ঠান্ডা মাথায় প্লান করে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর ভাবে মাহি বা ইয়ানাকে কিছু বলবে নাহ ওদের কে সারপ্রাইজ দেবে আর বিয়ের দিন রাতেই মেহরাব এর ফ্লাইট তবে সেটা কেউ জানে নাহ।

বিয়ের দিন,,,,

মাহিকে যখন সাজানো হচ্ছিল তখন আর্দ্র নিচে এসে দেখে অনু ইশান দাঁড়িয়ে গল্প করছে মূলত আর্দ্র কে পানি ছাড়া ধুয়ে দিচ্ছে, দেন আর্দ্র অনু আর ইশান কে ডেকে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে যায় আর ওদের দুজনকে সবটা বলে সবটা শুনে তো দুজনে হা করে ছিলো তারপর আর্দ্রর কথামত অনু মাহির কাছে যায় আর সবার আড়ালে মাহিকে সবকিছু বলে সবশুনে মাহির রাগ হলেও মনে মনে খুশি তারপর মাহি ইয়ানাকে ওদের প্লানটা বলে আর ওদের প্লান হলো,, ছেলে আর মেয়ের তো আলদা বিয়ে হবে আর্দ্র কে নিচে ডয়িং রুমে বসানো হয়েছে আর মাহির বসানোর কথা হলো রুমে তো যেহেতু বিয়েতে বেশি মানুষ নেই হাতে গুণা কয়েকজন তাই ইয়ানাকে মাহির ঠিক পিছনে বসানো হয়েছে আর তারপাশে অনু, কাজি সাহেব যখন মাহিকে কবুল বলতে বলবে তখন মাহির বদলে যেনো ইয়ানা কবুল বলে যেহেতু মাহি ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে আছে তাই বোঝা যাবে না আর রেজিস্ট্রার সই করার সময় অনু খাতা টা নিয়ে মাহির কোলের উপর রাখে আর ওখানে থাকা অন্য সবাইকে কথায় ভুলিয়ে রাখবে আর সেই ফাঁকে পিছন থেকে ইয়ানা মাহির হাতের নিচে দিয়ে সই করে দেবে কাজি যেহেতু অচেনা তাই মেয়ের নাম ওতোটাও ভালে করে জানে নাহ তাই কোনো সম্যসা হয়নি আর অন্য কেউও নামটা খেয়াল করেনি, বিয়ে হয়ে গেলে হয়ে মাহিকে যখন বাসর ঘরে নিয়ে যাবে তখন সবার সাথে ইয়ানাও ছিলো আর মাহির সাথে ও রুমে চলে গিছিলো পরে ইয়ানার মা ইয়ানাকে দেখতে না পেয়ে অনুর কাছে জিগালে অনু বলে ইয়ানা আজকে এই খানেই থাকবে, তারপর আর ভুলভাল বুঝিয়ে খাওয়া শেষ করে ইশান ওনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে আর এভাবেই বিয়েটা হয়েছে।

বর্তমান,,,

অনেক রাত হয়েছে আমরা বরং এখন যাই কি বলেন আর্দ্র ভাই নাকি এখানেই থাকবো হমম,, দুষ্টামি করে বলল মাহি।

কান টেনে লম্বা করে দেবো বের হ রুম থেকে দুটোই আর মাহি মেহরাব কিন্তু আসছে আমায় ফোন দিয়েছিলো সকালের মধ্যেই চলে আসবে।

তো তাতে আমার কী ওনি আসবে ভালো এই কথা আমায় বলছেন কেনো যত্তসব ফাউল লোকজন এর কথা বলেন শুধু মুড টাই নষ্ট হয়ে গেলো এই অনু চল তো ঘুমাবো আর বাইরে কেউ নেই তো??

না আপু সবাই সবার রুমে চলে গেছে আজকে অনেক খাটনি হয়েছে তো সবার তাই সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে আর যারা জেগে আছে ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিক আমরা আমার রুমে চলে যাবো, চলো তাহলে আর হ্যাঁ ভালো করে বাসর করো ওকে।

মাহি আর অনু চলে যাওয়ার পর আর্দ্র গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে বিছানার উপর বসে থাকা ইয়ানার দিকে তাকালো এখানে এতোকিছু হয়ে গেলো আর ও একটা কথাও বলেনি আর্দ্র ভালোই বুঝতে পেরেছে আজকে এর অভিমান ভাঙাতে গেলে সারারাত লেগে যাবে আর বাসর তো দূরে থাক কি খায়ে যে এই সারপ্রাইজ এর ভূত মাথায় চাপল কে জানে, সব দোষ ওই মেহরাব এর নিজে তো ফাঁসলোই সাথে আমাকেও ফাঁসালো আসুক একবার মাহিতো ওকে ঝাড়বেই সাথে আমিও ছাড়বো নাহ,, এক বু্ক সাহস সঞ্চয় করে আর্দ্র বিছানায় ইয়ানার পাশে গিয়ে বসল তারপর আস্তে করে ইয়ানার হাত ধরতেই বিদ্যুৎ গতিতে ইয়ানা তার হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, ডোন্ট টার্চ মি ওকে।

ইয়ানা আমি জানি তুমি আমার উপর অনেক রেগে আছো সত্যি আমার এমনটা করা মোটেও ঠিক হয়নি তবুও দেখো,,,

কি দেখবো হম কি দেখবো, কি মনে করেন আপনারা নিজেদের কে নিজেরা যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই ঠিক আমাদের মতামতের কোনো দাম নেই তাই নাহ সত্যি তো কে আমি?? আমি মত দিলেই কি না দিলেই কি আমি তো আপনার হাতের পুতুল তাইতো এই জন্যই তো একবারও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন নাহ, এতোগুলি দিন আমাকে কাঁদালেন কষ্ট দিলেন, আনন্দ পেয়েছেন তো? অনেক আনন্দ পেয়েছেন তাইনা? আমাকে কষ্ট দিয়ে খুশি তো আপনি??, ইয়ানা কথাগুলো বলছিলো আর আর্দ্রর বুকে ধাক্কা দিচ্ছিলো,, ধাক্কা দিতে দিতে বিছানা থেকে নামিয়ে দেওয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে ইয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর্দ্র আর ইয়ানা কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছে তারপর দুহাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে বলল,, কি হলো এখন চুপ করে আছেন কেনো কথা বলছেন না কেনো ও বুঝেছি এখনো খুশি হতে পারেননি তাইতো আপনি বোধহয় চেয়েছিলেন আমি আপনার বিয়ের কথা শুনে আত্মহত্যা ক,,,

ইয়ানার কথা পুরো করতে না দিয়ে আর্দ্র ইয়ানার কমর চেপে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,, হুঁশ খবরদার যদি এমন কথা বলো তাহলে একদম শেষ করে ফেলব, এতোক্ষণ চুপ করে ছিলাম কারণ আমি ভুল করেছি আর তোমার রাগ করার হক আছে তাই আমি চুপ করে ছিলাম কিন্তু এই না যে তুমি আমার চুপ থাকার সুযোগ নিয়ে যা খুশি তাই বলবা , আমি সেদিন রেস্টুরেন্টেই সবটা বলেদিতাম কিন্তু মেহরাব এর জন্য বলতে পারিনি ওই সালার সারপ্রাইজ এর চক্করে আমি তোমাকে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেললাম, আর্দ্র ওর দুহাত দিয়ে ইয়ানার মুখটা ধরে বলল, সরি বউ আর এমন হবে নাহ সত্যি বলছি।

আপনি খুব খারাপ আপনি জানেন এই কয়দিন আমার কতটা কষ্ট হয়েছে, মনে হচ্ছিল আপনাকে খুন করে ফেলি তারপর আমিও নিজেকে শেষ করে ফেলি,, আর্দ্রর বুকে মাথা রেখে আর্দ্র কে জরিয়ে ধরে বলল ইয়ানা।

আর্দ্র ও ইয়ানার কপালে চুমো দিয়ে ইয়ানাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, বাহ কি কপাল আমার বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে আবার আমাকেই বলছে আমি নাকি খারাপ,।

আর্দ্রর কথা শুনে ইয়ানা আর্দ্র বুকের মধ্যে আলতো করে একটা কাঁমড় দিলো।

আঁউচ, কাঁমড়াও কেনো এতো, আমি যদি এখন কামড়ানো শুরু করি তাহলে তো আমারি দোষ হয়ে যাবে এই জন্যই বলে যত দোষ নন্দ ঘোষ।

তো কাঁমড়ান নিষেধ করেছে কে।

সত্যি?? ইয়েস, আর্দ্র খুশি হয়ে ইয়ানাকে কোলে নিয়ে খাটের দিকে গেলো আর ইয়ানাও লজ্জায় আর্দ্রর বুকে মুখ গুজল।

চলবে,,,,,,????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here