#মায়াবতী
#পর্ব:২৬
#তানিশা সুলতানা
“আমি কখনোই অস্বীকার করবো না যে নিধির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিলো না। আমরা রিলেশনশিপ এ আছি দীর্ঘ তিন বছর যাবত। কিন্তু নিধি জানেও না আমার বার্থডে কবে আমিও জানি না নিধির বার্থডে কবে। আমরা দুজন দুজনের প্রিয় রং, প্রিয় খাবার, প্রিয় জায়গা এসব কিচ্ছু জানি না।
আমাদের রিলেশন টা হলো ভেসে আসা মেঘের মতো। যার কোনো ভ্যালু নেই। এই আছে তো এই নেই।
নিধিকে আমার ভালো লাগে না এমনটা কিন্তু নয়। একটা সময় ছিলো যখন আমার নিধিকে খুব ভালো লাগতো।
সেই সাধারণ নিধিকে।
তন্নি মনোযোগ দিয়ে অর্ণবের কথা গুলো শুনছে।
” মায়াবতী জীবনটা না সাধারণই সুন্দর। আর আমার তো একটুই ভালো লাগে।
নিধির প্রতি আমার ভালো লাগাটা আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে গেছে।
এমন অনেক কথা আছে যেগুলো বললে নিধিকে অসম্মান করা হবে। আর অর্ণব চৌধুরী মেয়েদের অসম্মান করে না। আর নিধিকে তো স্পেশালি না। কজ সে আমার ভালো লাগার একজন মানুষ ছিলো।
এখন তোমার মনে হতে পারে ইন ফিউচার তুমিও যদি বদলে যাও তাহলে কি তোমার প্রতি আমার অনুভূতি মরে যাবে কি না?
তুমি কখনোই বদলাবে না মায়াবতী। আমি বদলাতে দিবো না। তুমি সারাজীবন এরকম থাকবে।
মানুষ বলে না “পছন্দের মানুষকে মুক্ত করে দাও ”
এটা ভূল। পছন্দের মানুষকে নিজের মতো করে আটকে রাখো। যাতে সে খারাপ হতে না পারে।
আমি তোমাকে আটকে রাখবো অথৈয়ের তন্নি৷ সারাজীবন আগলে রাখবো।
তুমি ভালোবাসার কাঙাল। আর আমি তোমাকে সেই ভালোবাসা দিবো।
বুকের ভেতর জাপ্টে ধরে তন্নিকে। তন্নির কান্না পাচ্ছে। সে দুই হাতে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে।
“আমি কখনোই নিধিকে কিছু বলবো না তোমার আর আমার বেপারে। সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজে থেকেই সরে যাবে।
তোমার থেকে বেপারটা হাইট করতে পারতাম কিন্তু করলাম না কজ আমি চায় আমাদের মধ্যে কোনো মিথ্যে থাকুক৷ সম্পর্ক নষ্ট হয় মিথ্যে দিয়ে। আর আমাদের সম্পর্ক কখনো নষ্ট হবে না।
আশা করবো তুমিও কখনো আমার থেকে কিছু হাইট করবা না।
তন্নি মাথা নারায়। অর্ণব তন্নির দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে। তন্নি চোখ বন্ধ করে ফেলে। অর্ণব খানিকটা সময় নিয়ে তন্নিকে দেখে। তারপর মুচকি হেসে তন্নির কপালে চুমু দেয়।
তন্নি অর্ণবের পিঠ খামচে ধরে।
” আমার অনির মাম্মা।
বলে আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
__
সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসে তন্নি। কিন্তু বাড়ি ফিরেই চমকে ওঠে। কারণ উঠনো চেয়ার টেনে বসে আছে মামাতো ভাই সিফাত।
তার পাশেই ইতি বেগম দাঁড়িয়ে আছে। কেনো এসেছে ভাইয়া?
তন্নি শুকনো ঢোক চিপে গুটিগুটি পায়ে গিয়ে দাঁড়ায়। তন্নিকে দেখে সিফাত হেসে উঠে দাঁড়ায়।
“কেমন আছিস তন্নি?
তন্নি মাথা নিচু করে সালাম দেয়।
” এইতো ভাইয়া ভালো। আপনি?
“আমিও ভালো। এসেছি তোকে নিয়ে যেতে। দাদু অসুস্থ তোকে দেখতে চাইছে।
তন্নি ইতি বেগমের দিকে তাকায়। উনি কিছুই বলে না।
” যা জামাকাপড় গুছিয়ে নিয়ে আয়। কিছুদিন থাকবি আমাদের বাড়িতে।
“মা
তন্নি বলে ওঠে। ইতি বেগম আমতাআমতা করতে থাকে। সিফাতের মুখের ওপর সে কখনোই কথা বলতে পারবে না। তার এতো সাহস নেই। তবুও আমতাআমতা করে বলতে থাকে
” ওর বাবা যেতে দিবে না। সে খুব রাগ করবে।
সিফাত খানিকটা বিরক্ত হয়। এই মহিলাকে সে সয্য করতে পারে না।
“ফুপার সাথে আমি কথা বলে নিবো। তুই যা তন্নি। যা বলছি কর।
খানিকটা ধমক দিয়েই বলে। তন্নি চলে যায় রুমে।
আব্দুল্লাহ শেখের দুই ছেলে এক মেয়ে। বংশের ডেমাগ তার। তার পরিবারে মেয়ের সংখ্যা কম। দুই ছেলের চার ছেলে হয়েছে। একটা মাত্র মেয়ের মেয়ে তন্নি।।
তন্নির মা যেদিন তারেকের হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এগেছিলো সেদিনই আব্দুল্লাহ বলে দিয়েছে ” তার মেয়ে মারা গেছে”
কোনোদিনও খোঁজ নেয় নি মেয়ের।
তন্নি হওয়ার পরে একটু আতটু খোঁজ নিতো। আর তন্নির মা মারা যাওয়ার পরে তাদের ভালোবাসা বেরে গেছিলো তন্নির ওপর।
অনেকবার তন্নিকে নিতে চেয়েছে। তারেক দেয় নি। এমনকি যোগাযোগও রাখে নি।
তন্নি সময় নিয়ে রেডি হয়ে বের হয়। নতুন জামা জুতো পড়েছে সে। সিফাত তন্নিকে দেখে মুচকি হাসে। তন্নির হাত ধরে বেরিয়ে যায় ইতির দিকে এক বার তাকায়ও না। তন্নি তাকিয়ে থাকে মায়ের দিকে।
ইতির বুক কেঁপে ওঠে। তারা কি জেনে গেলো তন্নির ওপর করা অত্যাচারের কথা?
সারাজীবনের জন্য তন্নিকে নিয়ে যাচ্ছে কি?
হাঁটু মুরে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে ইতি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে তন্নিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। সে তন্নিকে হারাতে চায় না।
দোতালা বাড়িটা তন্নির নানুবাড়ি। খুব বেশি দূরে না। এই তো তন্নি যে রুমে আছে এই রুম থেকে উঁকি দিয়ে দেখা যাচ্ছে অথৈদের বাড়ি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে।
নানুবাড়িতে সবার থেকেই এক্সট্রা কেয়ার পায় তন্নি।
সবার সাথে দেখা করে নিজের জন্য বরাদ্দ করা রুমটাতে আসে সে।
এতো বড় রুম এতো দামি আসবাবপত্র এসবে ভালো লাগছে না তন্নির। তার মনটা পড়ে আছে সেই ছোট্ট টিনের ঘরের মা আর ভাইয়ের কাছে।
তন্নি বিছানায় বসতেই ফোন বেজে ওঠে।
সিফাত ফোনটা নিয়ে এসেছে। আর বাড়ি পৌঁছে তন্নিকে দিয়েছে।
তন্নি ফোনের দিকে তাকিয়েই থাকে। কারণ অচেনা নাম্বার। কল ধরবে কি ধরবে না এটাই ভাবছে।
ভাবতে ভাবতে কেটে যায়। আবারও বেজে ওঠে। এবার ধরে তন্নি।
“এতোখন লাগে রিসিভ করতে?
অর্ণবের ঝাঁঝালো গলার কথা শুনে মুচকি হাসে তন্নি। তাহলে স্যার কল করেছে।
” কথা কেনো বলছো না? সকালে আমাকে বলে কেনো আসো নি? কতো খুঁজেছি আমি।
জলদি বের হও বাড়ি থেকে। আমি দাঁড়িয়ে আছি।
“আমি নানু বাড়িতে এসেছি।
” মানে টা কি? তুমি কেনো গেছো? আমাকে জিজ্ঞেস করেছো একবারও? লোকেশন বলো। আমি এখুনও আসছি।
“আসতে হবে না।
” আমার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমি আসবোই।
“ঘাড় ব্যাঁকা লোক একটা।
” আই নো দ্যাট জান।
বলো জলদি।
তন্নি বলে। অর্ণব ফোনে শব্দ করে চুমু দেয়। তন্নি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে।
“আসছি। আজকে তোমার সাথে থাকবো রাতে। গট ইট
বলেই কল কেটে দেয়। তন্নির চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। কি বলছে এ? থাকবে মানে?
চলবে