ক্যাসিনো পর্ব -০১

এক জন স্ত্রী পতিতালয়ে এসেছেন তার স্বামীকে নিতে। এটা শুনে পতিতালয়ের বিভিন্ন ঘর থেকে উঁকি মেরে দেখছেন,সব মেয়ে। যেন তারা ভূত দেখছে। সব চেয়ে আশ্চর্য করার বিষয়টি হলো,মেয়েটি পুরো পর্দা করে আছে,বোরখা, হিজাব, নিকাব হাত মুজা । শুধু বের হয়ে আছে চোখ দুটো।
মেয়েটি পতিতালয়ের হ্যাড যে এই পুরো পতিতালয়ের মালিক অর্ধবয়স্ক শাপলার সামনে বসে আছে। এবং শান্ত স্বরে প্রশ্ন করেছেন যে তার স্বামী এখন কোন ঘরে রয়েছে। শাপলা নিজেও হতভম্ভ হয়ে গেছেন,যে কি করে এক স্ত্রী পতিতালয়ে তার স্বামীকে নিতে আসতে পারে। তার গোটা পতিতালয়ের জীবনে এমন টা সে কখনো দেখেনি। পরক্ষনেই ভাবলো,বড় লোক দের পরিবারে অনেক কিছুই হতে পারে।

সেই বোরখা পরিহিত মেয়েটি আশে পাশে ঘর গুলো তে চোখ বুলাচ্ছে, মেয়ে গুলোর কৌতুহল দেখছে। তার খুব আফসোস হচ্ছে মেয়ে গুলোর জন্য। সব থেকে নিকৃষ্ট জায়গায় তাদের বসবাস। কত সুন্দর করে সেজেছে তারা। মেদহীন উদর বের করা, চাকচিক্যময় শাড়ি,বুকে শাড়ির আঁচল টা ঠিক নেই ঠোঁটে গাঢ় করে লিপস্টিক দেওয়া। ওদের থেকে চোখ সরিয়ে তিনি শাপলা কে আবার জিজ্ঞেস করলেন ‌,দয়া করে বলবেন আমার স্বামী কোন ঘরে আছে‌?? আমার একটু তারা আছে। বাসায় আমার ছোট বাচ্চা আছে, রাত এমনিই ১টা ছুঁই ছুঁই।

শাপলা বলল,, ঠিক আছে আমি দেখছি,,তার একটি মেয়ে কে ডেকে বললেন,মোহনা ১০নম্বর ঘরটাতে গিয়ে সাহেব কে নিয়ে আয় তো জলদি করে তাকে নিতে এসেছে।

মেয়েটি তখন বলল,১০ নম্বর ঘর,
মোহনা যেতে নিলে,বোরখা পরিহিত মেয়েটি বলল, আমি ও যাবো তোমার সাথে,উনি মনে হয় নেশাতে আছেন। তোমার একার পক্ষে নিয়ে আসতে কষ্ট হবে।

মোহনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। এমনিতেই পতিতালয়ের মেয়েরা বেশরম হয় বেশি। যা মুখে আসে বলে দেয় কিন্তু মেয়েটা কে পরহেজগার দেখে তাদের ভিতরেও আফসোস হচ্ছে,ইশ্ ঐ মেয়েটার মত তারাও যদি পরহেজগার হতে পারতো‌ তাদের জীবন যদি এই পঁচা নর্দমায় না কাটতো। প্রায় কিছু ক্ষন হাঁটার পর,১০নাম্বার ঘরটাতে এসে পৌঁছালো উরা। মোহনা মেয়ে টা ঘরের দরজায় টোকা দিল। তাতে কোন সারা শব্দ পাওয়া গেল না। অগত্যা মোহনা দরজার হাত দিয়ে বাড়ি দিতে দিতে ডাক দিল, জাহেরা জাহেরা??? দরজা টা খুলো জাহেরা। অনেক ডাকাডাকি করার পর জাহেরা দরজা খুললো। তার পর বিরক্তিকর কন্ঠস্বরে বলল,এই সমস্যা কি তোমার?? দেখতেই পারছো ঘরের ভিতরে কাস্টমার আছে এতো ডাকছো কেন?? জাহেরা আশে পাশে না তাকিয়ে এতো গুলো কথা মোহনা কে শুনিয়ে দিল।

এদিকে বোরখা পরিহিত মেয়েটি,জাহেরা কে আগা গোড়া পর্যবেক্ষন করতে ব্যস্ত। বুকে শাড়ি নেই। চুল এলোমেলো,কাপরের কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

মোহনা তখন বলল, সাহেবের স্ত্রী এসেছেন তাকে নিয়ে যেতে। নয়লে ঠেকা পড়েছে তোমাই ডাকতে। এই বলে মোহনা রাগ করে চলে গেল।

স্ত্রীর কথা শুনে সামনে থাকালো জাহেরা কিছু টা অবাক হলো সে‌। আর ভয় ও পেল,যদি তার স্বামীর সঙ্গে শোয়ার জন্য তাকে থাপ্পর মারে। কিন্তু মেয়েটি তেমন কিছু না বলে মিষ্টি কন্ঠে বলল, দয়া করে একটু সরবেন আমি উনাকে নিয়ে যায়।

মেয়েটি যখন দরজা থেকে সরে দাঁড়ালেন, তখন তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার আগে মেয়েটির গা থেকে এক তীব্র গন্ধ তার নাকে পৌঁছালো,এই ঘ্রান তার অতিব পরিচিত। তার স্বামীর গায়ের ঘ্রান। বুকটা অজানা কোন ব্যাথায় টনটন করে উঠলো। তবুও সে নিজেকে সংযত রেখে ঘরে প্রবেশ করল। বিছানায় এক সুদর্শন পুরুষ যে তার প্রানপ্রিয় স্বামী শুয়ে আছেন, অর্ধনগ্ন হয়ে নেশাক্ত শরীর নিয়ে।

মেয়েটি তার স্বামীকে পোশাক পরিয়ে দিলেন‌। কারন নেশার চোটে সে এখন অবচেতন।

নিজের বাহু তে স্বামীকে ধরলেন,টলমল করে হাঁটছে সে। অনেক কষ্টে শাপলার বসা খানায় এসে উপস্থিত হলেন।

তার স্বামীকে সোফায় বসিয়ে দিলেন। এবং সে নিজেও তার পাশে বসলেন।।

শাপলা মুচকি হেসে বলল,খান পরিবারের ছেলে , মেহমেত খান।
প্রতি টা বড় লোক ছেলেদের আমার লালকঠিরে আসতে হয় কি আজব।

মেয়েটি এবার নিজের নিকাবটি খুললো। চেহারা দেখে শাপলা স্তম্ভ হয়ে গেলেন। পরির মত চেহারা, চোখ মুখ দিয়ে নূরের ঝোলকানি বের হচ্ছে যেন ‌।।

মেয়েটি বলল, আমার চেহারায় কোন দিকটাই সমস্যা আছে আম্মা যে, আমার স্বামি কে আপনার লালকঠিরে আসতে হবে??

আম্মা ডাকটা শাপলার হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করলো। এতো মাধুর্যতা ছিল কথাটায় যে শাপলার মন ছুঁয়ে গেল। সাথে অবাক ও হলো। এতো সুন্দর ব্যাবহার এতো রূপ থাকার পর ও কেন তার স্ত্রীকে রেখে এই নর্দমায় আসতে হলো।

মেয়েটির চোখে ছলছল করছে পানি। কখন যেন অবাধ্যর মত টুপ করে ঝরতে থাকে।

মেয়েটি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে বলল, কত টাকা বিল হয়েছে আপনাদের??

শাপলা কাচুমাচু করে বলতে লাগলেন।
আরে টাকা দিতে হবে না। টাকা আগেই দেওয়া হয়েছে। মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে বললেন,কে টাকা দিয়েছে।
যিনি মেহমেত সাহেব কে এখানে রেখে গেছেন তিনিই।

মেয়েটি উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন। কে সে কেমন দেখতে ছিল তাকে, দেখেছেন আপনি???

শাপলা এত গুলো প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল তার পর জবাবে বললেন, আমি তার মুখ দেখিনি,সব সময় কালো মাস্কে মুখ ঢাকা রাখতো। এই গলিতে এর আগে আমি তাকে দেখিনি। উনি নিজেই আগামী ৯দিন থেকে সাহেব কে এখানে নেশাগ্রস্ত ভাবে আনেন তার পর আবার সকাল হওয়ার আগেই নিয়ে চলে যান। তবে সকালে উনি আসতেন না প্রতিদিন অপরিচিত লোক কে পাঠিয়ে দিতেন।

মেয়েটি চিন্তায় পড়ে গেলেন। কে সেই লোক কেন সামনে আসছে না তার,। যার কারণে তার সুখের সংসারে এভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সকালে মেহমেত কে নিতে আসবে। সে কি এখানে থেকে যাবে আজ। যদি সেই লোক টার কাছে পৌঁছাতে পারে।

কিন্তু যদি কেউ না আসে নিতে?? কারন লোকটা তো তার পরিবারের সব সদস্যের কড়া নজরদারি করে রেখেছে। কে কোথায় যায় কি করে সব জানতে পারে?? আজ যে আমি এখানে মেহমেত কে নিতে এসেছি এটিও নিশ্চই সে জেনে গেছে এতক্ষণে।

মেয়েটি কে এতো টা চিন্তা মগ্ন দেখে শাপলা প্রশ্ন করলেন।। কোন সমস্যা কি??

মেয়েটি ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে বলে। এখন তাহলে উঠি। আপনি যদি কখনো ঐ লোক টাকে দেখে থাকেন তো আমাকে অবশ্যই এক বার জানাবেন। মেয়েটি ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের শাপলার হাতে দিল। এই নাম্বারে একটা ফোন করবেন প্লিজ আম্মা। কার্ডের উপরে নাম লেখা মরিয়ম।

মরিয়ম মেহমেত কে নিয়ে চলে যেতে লাগলেন ‌। তার পর পিছন ফিরে শাপলাকে বললেন। আমি আবার আসবো এখানে। কিছু মেয়েকে আজাদ করার জন্য, যত টাকা লাগে আমি দিবো।

শাপলা এবার অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলেন। চোখ বড় বড় করে মরিয়মের দিকে তাকালো।।

মরিয়ম তার নিকাব টা ঠিক করে বেরিয়ে গেল।

নিস্তব্ধ রাস্তা, ঘুটঘুটে অন্ধকার, চারিদিক শুনশান। মরিয়ম চোখের পানি ফেলছে আর গাড়ি ড্রাইভ করছে। পাশের সিটে অবচেতন ভাবে শুয়ে আছে মেহমেত।

মরিয়ম চোয়াল শক্ত করে নিজের মনে কথা গুলো বলছে। কে সেই আগন্তুক লোক। যে তার শান্তিপূর্ণ জীবন টাকে নরকে পরিণত করেছে। তাকে খুঁজে বের করতেই হবে যে করেই হোক।

চলবে……????

#ক্যাসিনো
#পর্বঃ১
©লেখিকা (মায়া)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here