মায়াবতী পর্ব ২০

#মায়াবতী
#পর্ব_২০
#সুলতানা_পারভীন

বয়স্ক মহিলাটাকে দরজায় দেখে রাহাত দ্রুত ভাবার চেষ্টা করছে। কোথায় দেখেছে সে এই মহিলাকে! কিছুতেই মনে পড়ছে না। স্মৃতিরা কোনভাবেই হেল্প করছে না রাহাতের।

-জে? সাহেব? কারে খুঁজেন?

-আম? এটা মায়াদের বাসা না?

-মায়া! কুন মায়া! এই নামে এই বাসাত কেউ নাই–। আপনে ভুল বাসাত আইছেন সাহেব–।

কথাটা শেষ করেই দরজাটা ধুম করে বন্ধ করে দিল মহিলা। রাহাতও হতাশ হয়ে গাড়িতে ফিরে এলো। মায়াদের বাসা এটা না? তবে গেল কোথায় মায়া! আর কোথায় খুঁজবে সে তার মায়াকে! আরেকবার গাড়িটা পুরো গলিটায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মায়াকে খোঁজার চেষ্টা করলো রাহাত। ফলস্বরূপ আরেকটা বিফল দিন কাটলো ওর। মায়াকে খুঁজে তো পেলই না। যে ছোট্ট একটা আশা ছিল সেটাও হারিয়ে গেল।

রাতে রাহাত শুয়ে শুয়ে মায়ার সাথে কাটানো প্রত্যেকটা ঘটনা ভাবছে। তার মন বলছে মায়াটা তার আশেপাশে কোথাও আছে। হয়তো ওই মাঝবয়সী মহিলা মিথ্যে বলেছে ওকে। যদিও মহিলাটার ওকে মিথ্যে বলার কোন কারণ রাহাতের মাথায় আসছে না। তবুও মন বলছে ওই মহিলা মিথ্যে বলছে। আসলে ওটাই মায়াদের বাসা। ভাবতে ভাবতেই রাহাতের চোখ ক্লান্তিতে বুজে এলো। সারাদিনের এতো দৌঁড় ঝাপের পর শরীরে আর এক বিন্দুও শক্তি অবশিষ্ট নেই। এভাবে না খেয়ে কয়দিনই বা আর কার শক্তিতে কুলোয়!

-মায়া???

——————————

-মায়ায়য়য়য়য়াআআআআআআ?

-আরে? কি মুশকিল? এভাবে চেঁচাচ্ছেন কেন জনাব?

-কাছে এসো? বলছি—-।

-জি না—। মা রহিমা খালাকে দিয়ে খাবার রান্না করে পাঠিয়েছে আজকে আপনার জন্য–। আমার ওদিকে মেলা কাজ পড়ে আছে—–।

-আরে! এটা কিন্তু ঠিক না মায়াবতী। সকাল সকাল এভাবে কথা শুনবে না—? আমি মানবো না এসব—। এসো বলছি?

-কি?

মায়া বিরক্ত হয়ে খাটের কাছে আসতেই রাহাত মায়াকে টেনে বিছানার শুইয়ে দিয়ে হাত দুটো চেপে ধরলো। রাহাত চোখ মেলে মায়াকে অনেকক্ষণ দেখলো। তারপর মায়ার ঘাড়ে মুখ গুঁজলো। মুখ ডুবিয়ে মায়ার ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

-সরো? কি করছো?

-বাহ! এখন সরব কেন? ঘুম ছুটতে আজকে তোমাকে পেলাম না কেন? এখন শাস্তি ভোগ কর–। সারাদিন আমি এভাবে তোমার বুকে ডুব দিয়ে থাকবো–। কোথাও যাবো না—। হুহ–।

-আরে? কি করছ? পাগল হলে?

-হুম হুম–। পাগল ই হয়েছি–। না জাগিয়ে দিয়ে চলে গেলে কেন? জানো না ঘুম ভাঙতেই তোমাকে বুকে চাই আমার–। চোখ খুলে প্রথম আমার মায়াবতীর মুখটা দেখতে চাই—।

-হুহ—। মায়াবতীর মুখ দেখতে চাই না? আজ আমি মরে গেলে কালই বিয়ে করে নতুন বউ আনতে ছুটবে—। জানি জানি—–।

-কি বললা তুমি?

-ঠিকই তো–। বউ মরলে স্বামীর কি যায় আসে বলো! না মরে ধরো কোমায় চলে গেলেও আরেকটা সুন্দরী বউ নিয়ে চলে আসবে–। ছেলেদের কিছু থাক না থাক- বউ থাকা চাই ই চাই–। ঘর খালি রাখা চলবে না—–।

-মায়া?

-কি মায়া! আমি এখন ধুম করে মরে গেলে তুমিও আমাকে কবরে পাঠানোর আগে নতুন বউ ঘরে আনার ব্যবস্থা করবে- জানি না ভেবেছ?– সবাই একই তোমরা —।

মায়া আর কিছু বলার আগেই রাহাতের ঠোঁট দুটো মায়ার নিচের ঠোঁটটা আঁকড়ে ধরলো কামড়ে। মায়া রাহাতের এমন আচমকা স্পর্শে কেঁপে উঠে চোখ বুজে নিল। রাহাতও গভীরভাবে মায়ার ঠোঁট আঁকড়ে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিতে লাগলো। বেশ অনেকক্ষণ পর রাহাত মায়াকে থেকে সরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। মায়া লাজুক হেসে চোখ খুলতেই রাহাতের সাথে চোখাচোখি হলো। বিছানা থেকে উঠে পালানোর আগেই রাহাত আবার মায়াকে টেনে বুকে জাপটে ধরলো।

-কি করছো?

-উল্টাপাল্টা কথা বলে কেন আমাকে ঘাবড়ে দাও বলো তো মায়াবতী? তোমার কিছু হলে আমি নেচে নেচে বিয়ে করতে যাবো -এটা সত্যিই তোমার মনে হয়?

-সবাই তো করে——-।

-হু—–। সবাই করে বলে তোমার বরটাকেও করতে হবে? —আমার তো তুমি আছো—সারাজীবন আছো–। তোমারও কিছু হচ্ছে না- আর আমিও বিয়ে-টিয়ে করছি না-। বোঝা গেল?

-তবুও—। কখনো মরে টরে গেলে—–।

-আবার শুরু করলে? ধ্যাত—-।

-আরে?

রাহাত আর কিছু না বলে রাগ করে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে এসে দেখলো একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা ঘোমটা মাথায় জবুথবু হয়ে মায়ার পাশে বসা। কে কি জানতে না চেয়ে রাহাত গাল ফুলিয়ে খাওয়ায় মন দিল। দেশি অনেক পদের রান্না রাহাতের প্লেটে। সব কিছুই চেটেপুটে খেল রাহাত। খাওয়ার মাঝে একটাও কথা বললো না। মায়াও রাহাতের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে প্লেটে এটা ওটা উঠিয়ে দিচ্ছে। খাবার শেষ হতে হাত ধুয়ে বয়স্ক মহিলার দিকে তাকালো রাহাত।

-খালা–। মা কে বলবেন উনার হাতের রান্না অসম্ভব ভালো খেতে–। নয়তো এখানে তো তিত করলা গিলছি প্রতি সেকেন্ডে—–।

-কি যে কন সাহেব——–!

রাহাতের কথায় রহিমার খালা খিল খিল করে হেসে ফেললেন। এর মধ্যে একবার মহিলার মুখটা দেখেছে রাহাত। পরিচিত মুখটা। আর তার হাসির সাথে মায়াও হাসিতে যোগ দিয়েছে। সেই সাথে গলা ছেড়ে হাসছে রাহাতের বাবাও। সবার হাসি দেখে রাহাত নিজেও ফেললো।

হাসতে হাসতেই ঘুমটা ছুটে গেল রাহাতের। হাসির কারণটা ২ সেকেন্ডের মধ্যে ভুলে গেলেও একটা চেহারা চোখের সামনে এখনো স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে রাহাতের। আর সেটা হলো রহিমা খালার। খাট থেকে প্রায় লাফ দিয়ে উঠে বসেছে রাহাত। এই মহিলাই দরজা খুলেছে। ইচ্ছে করেই মিথ্যে বলেছেন উনি। আসলে ওটাই ওর মায়াবতীর বাসা। রাহাত কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। মায়াবতীটাকে খুঁজে পেয়েছে সে। অনেক বাধা পেরিয়ে সে তার মায়াবতীকে পেয়েছে। আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা মাত্র। কথাটা ভাবতে ভাবতেই ঘড়ির দিকে চোখ গেল রাহাতের। ঘড়িতে দুটো বাজে।

রাত দুটো। বেশ গভীর রাত। সকালে মায়াবতীটাকে দেখতে হলে আরো চার-পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে৷ ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো রাহাতের। আরো পাঁচ ঘন্টা! অসম্ভব। ছুটে গিয়ে আলমারি থেকে একটা টি শার্ট নিয়ে সেটা পড়তে পড়তে রুম থেকে বেরিয়ে এলো রাহাত। আর একটা সেকেন্ডও অপেক্ষা করা তার পক্ষে অসম্ভব। মায়াবতীকে যে তার এখনই চাই।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here