মিসেস চৌধুরী পর্ব ৪+৫

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_04
#Writer_NOVA

অফিসে আসার পর থেকে ফিহার ভালো লাগছে না।মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে।অনিকে বেবি দোলনায় শুইয়ে দিয়ে টেবলেট কে বললো।

ফিহাঃ টেবলেট অামার মাম্মাম -এর দোলনাটা আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে দে তো।আমার মাথাটা এতো ব্যাথা করছে কেন বুঝতে পারছি না। একটু খেয়াল রাখিস ওর।আমি বোধ হয় মাঢা ঘুরিয়ে পরে যাবো।

ফিহার কথা শুনে টেবলেট দৌড়ে টেবিলের দিকে গেল।সেখানে ছোট দুইটা ড্রয়ার আছে।একটা ড্রয়ারের উপরে আঁচড় কাটতে লাগলো।এর মানে হলো টেবলেট সেটা খুলতে চাইছে।ফিহা সেটা খেয়াল করে ওর কাছে এগিয়ে গেলো।

ফিহাঃ কি হয়েছে টেবলেট? তুই এখানে কি খুঁজছিস? তুই সামনে থেকে সর আমি দেখছি।

টেবলেট সরে গেল।ফিহা ড্রয়ার খুলে সেখানে মাথা ব্যাথার বাম দেখতে পেলো।মুখটা এমনি খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেল।ফিহা যত টেবলেট কে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। সাথে ভালবাসার পরিমাণটাও বেড়ে যাচ্ছে। একটা বোবা প্রাণী যে মানুষকে কতটা হেল্প করতে পারে সেটা টেবলেটকে দেখে বোঝা যায়।আসলেন এটা সত্যি। কারণ আপনি মানুষ কে তিনবছর জান-প্রাণ দিয়ে সাহায্য করবেন। কিন্তু সে তিনদিনও মনে রাখবে না।অথচ এই বোবা প্রাণীটাকে তিনদিন সাহায্য করবেন তারা তিন বছরের বেশি আপনাকে মনে রাখবে।ফিহা খুশি হয়ে টেবলেটকে কোলে নিলো।

ফিহাঃ তোর মালিক তোকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে।যত দেখি তোকে ততই মুগ্ধ হয়ে যাই।তুই সবসময় আমার ও অনির সাথে থাকবি।তুই সাথে থাকলে অনেক ভালো লাগে।আমি আগে বামটা কপালে লাগিয়ে নেই।তারপর তোর সাথে কথা বলি।

বাম লাগানো শেষ হতেই অনিয়া হাত পা তুলে গগণ বিদারক চিৎকার শুরু করলো।ওর সামনে কাউকে না দেখে সে তার একাকিত্ব জানান দিচ্ছে। ফিহা দৌড়ে গিয়ে অনিয়াকে কোলে তুলে নিলো।

ফিহাঃ ওরে আমার জাদু। কি হয়েছে তোমার লক্ষ্মীটা?তোমার মাম্মাম এখানেই আছে।আমি কি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি?মা কি তার মেয়ে ছেরে চলে যাবে।যে যাই বলুক তুমি আমার মেয়ে।মা কি শুধু জন্ম দিলেই হয় যায়।মা হতে তো কতগুলো দায়িত্ব লাগে।আমি না হয় জন্ম না দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করে তোমার মা হয়ে থাকবো।আমি তোমার আর্দশ মা হয়ে দেখাবো।তুমি আমার পরিচয়ে বড় হবে।এখন আমার মানিক, একটু কান্না বন্ধ করো।তোমার মা তোমার সাথেই আছে,আর সাথেই থাকবে।আমার মা-মণির কি খুদা লেগেছে।মাম্মাম পঁচা তাই না মা-মণি।তোমার খিদে পেয়েছে এখনো খাবার দেইনি।এক্ষুনি দিচ্ছি সোনা মণি।

ফিহার গলার আওয়াজ পেয়ে অনিয়ার কান্না বন্ধ হয়ে গেছে।তখনি কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলো আবদুল আজিজ সাহেব।

আবদুলঃ আসতে পারি ছোট বউমা।
ফিহাঃ আরে চাচা আসুন।এটা তো আপনাদের অফিস।অনুমতি নেওয়ার কি আছে।
আবদুলঃ অনি দিদিভাই।কি হয়েছে তোমার?মায়ের কোলে সবসময় বসে থাকলে মা কাজ করবে কি করে?মা সারা দিন কত কাজ করে।তুমি যদি মায়ের কোলে উঠে বসে থাকো তাহলে মায়ের কাজ করতে সমস্যা হবে।তুমি তো ভালো মেয়ে।ভালো মেয়েরা কখনও মা-মণিকে জ্বালাতন করে না।

আবদুল সাহেবের কথা শুনে খিল খিল করে হাসছে অনিয়া।এমন ভাবে হাসছে মনে হয় সব কিছু সে বুঝতে পেরছে।ফিহা ফিটার তৈরি করছে।
আবদুলঃ দাও ছোট বউমা।আমার কাছে দিদিভাইকে দেও।তুমি ওকে নিয়ে কাজ করতে পারবে না।আমি দিদিভাইকে রাখছি। তুমি ফিটার তৈরি করো।
ফিহাঃ না পারলেও অভ্যাস তো করতে হবে চাচা।আমি আমার মেয়ের গায়ে একটা ফুলের আঁচড়ও লাগতে দিবো না।এখন যে আমার অনেক দায়িত্ব। অনিয়াকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে।সারা পৃথিবীর কালো ছায়া থেকে ওকে রক্ষা করতে হবে।তা না হলে আমি যে মা হয়ে ব্যর্থ হয়ে যাবো।

ফিহা অনিয়াকে আবদুল সাহেবের কোলে দিয়ে কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে গেল।
আবদুলঃ মা গো তোমার মতো যদি সবাই বুঝতো।তাহলে হয়তো কোন বাচ্চা আজ এতিমখানায় থাকতো না।যখনি কোন দম্পতির সন্তান না থাকে তাহলে আমরা আফসোস করি।কিন্তু কোন এতিমখানার বাচ্চার বাবা -মা না থাকলে আমাদের মনে আফসোস হয় না।আমরা ভাবি সে তো এতিমখানায় আছে তার মানে ভালো আছে।সন্তান ছারা বাবা-মায়ের কষ্টের চেয়ে যে বাবা-মা হীন সন্তানের কি কষ্ট সেটা আমরা উপলব্ধি করি না।যদি করতাম তাহলে হয়তো মনবতা নামক বস্তুটা আরো উচ্চ মর্যদায় থাকতো।

ফিহাঃ বাবা-মা হীন থাকা যে কি কষ্টের সেটা আমি জানি চাচা।প্রতিটা মুহূর্তে নিজেকে কুঁড়ে কুঁড়ে কষ্ট দেয়।মাথার ওপর একটা ছায়া নেই। পায়ের নিচে মাটি নেই। মুখ মুছে দেওয়ার জন্য কোন আঁচল নেই। মাঝে মাঝে বেঁচে থাকতেও ইচ্ছে হয় না।তারপরও বেঁচে থাকতে হয়।সেজন্য আমিও চাই না অনি তার মা ছারা বাঁচুক। আমি শুধু মাত্র এই ছয় মাসের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে এখানে এসেছি।আমি একটা মা হীনা মেয়ে হয়ে অন্য বাচ্চাকে তো মায়ের অভাব বুঝাতে দিতে পারি না।তাই আমি ওকে আমার সর্বস্ব দিয়ে বড় করবো।

হাতের ফিটার টাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে কথাগুলো বললো ফিহা।আবদুল সাহেবের কোল থেকে অনিয়াকে নিয়ে ফিটার খাওয়াতে লাগলো।
ফিহাঃ চাচা, কোন দরকার ছিলো?
আবদুলঃ কতগুলো ফাইলে তোমার সাইন লাগতো।
ফিহাঃ দিন আমি করে দিচ্ছি।
আবদুলঃ তুমি আগে অনি দিদিভাই কে ফিটার খাইয়ে নেও।তারপর সব কাজ।
ফিহাঃ আমাকে এখন একসাথে সব সামলাতে হবে চাচা।এক হাতে আমার মেয়ে আরেক হাতে অফিস।এখন থেকেই সব অনুশীলন করে রাখতে হবে।

ফিহা একহাতে অনিকে ধরে আরেক হাতে সাইন করে দিলো।আবদুল সাহেব অবাক চাহনিতে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে দিনকে দিন শুধু মুগ্ধ হচ্ছে। আচার,ব্যবহার, মন-মানসিকতা মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।নিজের মেয়ে নয়,নিজের অফিস নয়।তারপরও নিঃস্বার্থ ভাবে সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।অবিবাহিত হয়েও মায়ের অধিকার নিয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়ার পাশে।
ফিহাঃ নিন চাচা,হয়ে গেছে।
আবদুলঃ মা গো তোমায় দেখলে মনটা ভরে যায়।মেয়ে জাতির প্রতি শ্রদ্ধাটা আরেক ধাপ বেড়ে যায়।

সত্যি তোমার মতো মেয়ে যদি ঘরে ঘরে থাকতো।
ফিহা এত কথার বিনিময়ে শুধু মুচকি হাসলো।আবদুল সাহেব ফাইল কমপ্লিট করে খুশি মনে চলে গেল।ফিহা অনিয়াকে খাইয়ে ঘুৃম পারাতে লাগলো।কিছু সময়ের মধ্যে অনিয়া ঘুমিয়ে পরলো।অনিয়াকে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে টেবলেটকে এক প্যাকেট বিস্কুট এগিয়ে দিলো।এত সময় ধরে টেবলেট দোলনার পাশে ঘাপটি মেরে বসে ছিলো।বিস্কুট পেয়ে টেবলেট খুশি মনে খেতে লাগলো।

বাসায় এসে আনিস চৌধুরীর সাথে বসে রাতের খাবার খেলো। তারপর অনিয়াকে এক হাতের ওপর নিলো।ফিহা নিজের ও অনির গায়ে চাদর টেনে দিয়ে ঘুমের দেশে পারি দিলো।গভীর রাতে অনিয়া নড়েচড়ে উঠলো।ওর নড়াচড়া ফিহা ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারলো। অনিয়া কান্না করতে নিলেই ফিহা ঘুমের ঘোরে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।যাতে করে অনিয়া আর কান্না করলো না।ঠোঁট ফুলিয়ে রাখলো।
#মিসেস_চৌধুরী
#Part_05
#Writer_NOVA

একটা টি-স্টলের সামনে থামনে বাইক থামালো সাফান।স্টল থেকে ম্যাচ নিয়ে সিগারেট ধরালো।বেশ কিছু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে সিগারেট শেষ করলো।
খাওয়া শেষ করে বাইকে উঠে রওনা দিলো তার গন্তব্যে।অনেক দিন পর প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা হবে।সেটা মনে হতেই সাফানের মন খুশিতে ভরে গেল।

কেবিনের দক্ষিণ পাশের আবছা সবুজ কাচের দিকে তাকিয়ে আনমনে গত কয়েক দিনের কথা ভাবছিলো ফিহা।টেবলেট অনির দোলনার পাশে ঘুমাচ্ছে।অনিয়া চুপচাপ নিজের হাত-পা নিয়ে খেলা করছে।হঠাৎ পেছন থেকে ফিহার চোখ একজোড়া হাত আটকে ফেললো।ফিহা জানে ব্যক্তিটা কে?তাই কোন রিয়েকশন দেখালো না।ওর একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড সাফান ছারা অন্য কেউ এ কাজ করবে না। অন্য কোন ছেলের হয়তো সাহসও হবে না।

ফিহাঃ চোখ ছার সাফান।
সাফানঃ (নিশ্চুপ)
ফিহাঃ কেন এসেছিস এখানে?তোর সাথে আমার কোন কথা নেই। ভালো চাস তো চুপচাপ চোখ ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যা।

সাফান বেশ বুঝতে পেরেছে ফিহা ওর সাথে রাগ করেছে।তাই ফিহার চোখ ছেড়ে দিলো।তারপর ফিহার দুই বাহু ধরে ফিহাকে সামনের দিকে ঘুরালো।

সাফানঃ তুই আমার সাথে রাগ করেছিস মনে হচ্ছে।
ফিহাঃ আমি কারো সাথে রাগ করি না।সর সামনের থেকে। আমার কাজ আছে।
সাফানঃ হুম থাকবেই তো।তুই তো এখন বিশাল বড় কোম্পানির ওনার।আকশি চৌধুরীর ওয়ান এন্ড ওনলি ওয়াইফ।কি যেনো বলিস সবাইকে? (একটু ভেবে)ও মনে পরেছে মিসেস চৌধুরী। এম আই রাইট মিসেস চৌধুরী?
ফিহাঃ বিলাই,হনুমান,বান্দর,শয়তান,ফাজিল,
গাধা,গিরগিটি। তুই ও মজা নিচ্ছিস।

ফিহা সাফানকে ইচ্ছে মতো বকে ওর পিঠে কিল, ঘুষি দিতে লাগলো।সাফান ওর হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। বেশ কিছু সময় মার দেওয়ার পর ফিহা শান্ত হলো।কিন্তু সাফান ওর গায়ে একটা আঁচড়ও দেয়নি।অবশ্য এটা নতুন নয়।এতিমখানায় থাকতে সাফানের সকাল শুরু হতো ফিহার মার খেয়ে।দুজন একসাথে বড় হয়েছে। বেস্ট ফ্রেন্ড ও ভাই-বোনের সম্পর্ক দুজনের মাঝে। যদিও ওদের পরিচয় এতিমখানায়।

সাফানঃ আমাকে মেরে আলু ভর্তা করে ফেলেছিস।
আহ্ সারা শরীর ব্যাথা করছে।
ফিহাঃ আমার মতো সামান্য মশার আঁচড় যে হাতির শরীরে কোন প্রভাব ফেলিনি তা আমি ভালো করে জানি।বড়লোক হয়ে গেছিস তাই আমাকে মনেও পরে না।হুম ভালো ভালো।
সাফানঃ বড়লোক আমি নই তুই হয়েছিস।বিশাল বড় বাড়ি,অফিস,শ্বশুর, মেয়ে সবকিছু নিয়ে এত বিজি তুই। তোকে তো ফোন দিলেও পাওয়া যাবে না।তাই তোকে আমি ডিস্টার্ব করি নি।
ফিহাঃ আমায় ভুলে গেছিস সেটা বলিস না কেন?যা যেখান থেকে এসেছিস সেখানে চলে যা।লাগবে না আমার কাউকে।

কথাটা বলে মুখ ঘুরিয়ে চোখের অবাধ্য পানির ফোঁটা কে সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো ফিহা।এই কয়েক দিনে সে অনেকটা হাঁফিয়ে উঠেছে।স্বাভাবিক ভাবেই নিজের কাছের আপন মানুষটাকে দেখলে অভিমানটা খুব জোরালো ভাবে জেঁকে বসে মনে। ফিহার ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হয়নি।যেই সাফানকে ছারা তার দুদন্ড চলতো না আজ তাকে ছারা সে রয়েছে। এই পনেরো দিনে এক মিনিটের জন্যও কথা হয়নি।যাতে করে সাফানের প্রতি খুব অভিমান হয়েছে ফিহার।সেটা বুঝতে পেরে সাফান আলতো হাতে ফিহাকে জরিয়ে ধরলো। ফিহা প্রথমে ছারানোর চেষ্টা করলেও পর মুহূর্তে নিজেই সাফানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

সারা পৃথিবীর কাছে ফিহা নিজেকে স্ট্রং দেখালেও এই একটা মানুষের কাছে সে পুরোপুরি দূর্বল।সব মানুষের কাছে নিজের চোখের পানি আড়াল করলেও এই মানুষটার কাছে সে পারে না।সাফান ওর বন্ধু কম ভাই বেশি। যাকে ফিহা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে।সেই ছোট্ট বেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছে। দুজন দুজনকে ঠিক কতটা চেনে তা হয়তে আমি বুঝাতে পারবো না।ওদের মাঝেও ভালবাসার সম্পর্ক আছে।তবে সেটা বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু নয়।
বাবা-মা না থাকায় ফিহার সবচেয়ে কাছের মানুষ সাফান। সাফান সবসময় ফিহাকে হেল্প করে।ফিহার বেঁচে থাকাটাই সম্ভব হয়েছে ওর জন্য। আজ যদি সাফান না থাকতো তাহলে কবে ফিহা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতো।হারিয়ে যেতে এই স্বার্থপর পৃথিবী থেকে।আমরা তো সবসময় এমন একটা বন্ধু চাই যে আমাদেরকে বুঝতে পারবে,সারা পৃথিবীর সাথে আমাদের জন্য যুদ্ধ করবে,দিন শেষে ক্লান্তি বেশে থাকলে জিজ্ঞেস করবে আমরা ঠিক আছি কি না।এক চিলতে মুখের হাসির জন্য হাজারটা বাহানা খুঁজবে। সাফান ঠিক এরকম একটা বন্ধু ফিহার।

ফিহা চোখ বুজে এখনো কান্না করছে।সাফান ওকে থামালো না।কান্না করলে মনটা হালকা হয়।আজ ফিহা কান্না করে এই পনেরো দিনের সব বোঝা মাথা থেকে হালকা করুক।ফিহার কান্নার আওয়াজটা কমে আসতেই সাফান ওর মাথায় হাত রাখলো।

সাফানঃ ধূর,পাগলী কাঁদছিস কেন? আমি আছি না।তোর এই বন্ধু থাকতে তোকে কেউ কিছু করতে পারবে না।আমি কখনও তোর কিছু হতেই দিবো না।তুই যে আমার ওয়ান এন্ড ওনলি বেস্ট ফ্রেন্ড +বোন।কোন ভাই কি তার বোনের কোন ক্ষতি হতে দিতে পারে?তুই বল।আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের দিকে যে আঙুল তুলবে পরের দিন তার হাত সে খুঁজে পাবে না।

ব্যাস, আর কি লাগে? একটা মেয়েকে যখন তার বিশ্বাস্ত মানুষটা মাথায় হাত রেখে এই কথাগুলো বলে তখন সে মানসিকভাবে নিজেকে এতটা প্রস্তুত করে যে পুরো পৃথিবীর সাথে সে একাই লড়াই করতে পারবে।কিন্তু আফসোস সবার কপালে এমন ফ্রেন্ড জোটে না।ফিহা সত্যিই ভাগ্যবতী।তাই সাফানের মতো এতো ভালো একটা বন্ধু পেয়েছে।

সাফানঃ হয়েছে তো এবার আমাকে ছাড়।তোর মতো মুটকি আমারে এইভাবে ধইরা রাখলে আমি তো গাইল্লা যামু বোইন।এবার আমারে ছাইরা একটু সইরা দাঁড়া। আমার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তোকে মুটকি বললে মুটকিরেও অপমান করা হবে।
ফিহাঃ কি বললি তুই?

ফিহা সাফানকে ছেড়ে দিয়ে রেগে ওর কান টেনে ধরলো।আজকে ওর খবর আছে।
সাফানঃ ছার হাতি লাগছে তো।
ফিহাঃ হাতি কে আমি, নাকি তুই?
সাফানঃ খেয়ে খেয়ে তো দিনকে দিন ফুলতাছিস।কবে জানি বাস্ট হয়ে যাস।তখন তোর জামাই কপাল চাপড়াবে।
ফিহাঃ তুই থামবি।
সাফানঃ না না হ্যাঁ থামবো।বোইন এবার কানটা ছার।আমার কানটাকে টেনে টেনে তো বড় করে ফেললি।
ফিহাঃ একদম ঠিক করেছি।আর কখনও মুটকি বলবি।মনে রাখিস কান মলাটা।
সাফানঃ তোকে মুটকি বলবো না।এখন থেকে হাতি বলবো রে হাতি।
ফিহাঃ আমার ওজন মাত্র ৫০ কেজি।আর তুই আমাকে হাতি বলিস কোন দিক দিয়ে। শয়তান,ডানকি,মানকি,ফাজিল।ভাগ চোখের সামনে থেকে। আসতে না আসতেই শয়তানি শুরু করেছিস।
সাফানঃ হাতি মেরি সাথি।দয়া করে কানটা ছেড়ে দেও।তুই না আমার ভালো বোইন।
ফিহাঃ যা এবারের মতো ছেড়ে দিলাম।
(কান ছেড়ে দিয়ে)
সাফানঃ
কি সুন্দর তারাগুলো,
জোসনা তাহার রাত্রী।
আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে,
একপাল মোটা হাতি।

সাফানের কবিতা শুনে ফিহা হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। সাফান মানুষটা খুব রসিক।যেখানে যাবে সবসময় হাসিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখবে।যার কারণে ফিহা ওকে আরো বেশি পছন্দ করে।তবে বন্ধু হিসেবে।অন্য কিছুতে নয়।যারা এমন সবাইকে হাসি-খুশিতে মাতিয়ে রাখে তাদের মনেই হাজার দুঃখের ভীর থাকে।তেমনি সাফানের মনেও আছে।তবে সেটা সে কাউকে বুঝতে দেয় না।ফিহা এখনো হাসছে।ওর সাথে থাকলে ফিহার মনটা এমনি ভালো হয়ে যায়।ফিহা হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

ফিহাঃ এটা কি হলো?
সাফানঃ এটা একটা সুন্দর কবিতা হলো।আমাদের সোলাইমান ভাইয়ের থেকে শুনেছিলাম।খুব সুন্দর তাই না।
ফিহাঃ তোকে ইচ্ছে করছে নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করতে।তুই জীবনেও ভালো হবি না।

ওদের কথার মাঝে অনিয়া কান্না করে উঠলো।ফিহা জলদী গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো।
ফিহাঃ এই তো মা-মণি।এই যে আমি এখানে।দেখ কে এসেছে।তোমার মামা তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে।তোমার মামার সাথে আমরা কথা বলবো না ঠিক আছে।এত দিন পরে কেন এসেছে?সে জন্য তার সাথে আড়ি।

সাফানঃ বাহ্ তুই বিয়ে ছারা এক বাচ্চার মা ও হয়ে গেলি।থাক তোর আর কষ্ট করতে হবে না।রেডিমেড মা হয়ে গেছিস।
ফিহাঃ পায়ে কিন্তু আমার দামী ব্রান্ডের জুতো আছে।ঠাস করে দুই গালে দুটো দিলে দ্বীন- দুনিয়ার সব ভূলে যাবি।কথা সাবধানে বলিস।
সাফানঃ আচ্ছা 🥺।আমি তো ভুলেই গিয়েছি তুই এখন মিসেস চৌধুরী। বাদ দেই এসব।এবার তোর মেয়েটাকে আমার কোলে একটু দে তো।আমার ওয়ান এন্ড ওনলি ভাগ্নি কে আমিই এখনো কোলে নেই নি।এসব কি ভাবা যায় বল?
ফিহাঃ তুই কি তোর ঐ ওয়ান এন্ড ওনলি কথাটা ছারবি।এটা তোর কথার মধ্যে মুদ্রা দোষ। এটা বদলাতে শেখ।
সাফানঃ পকপক না করে আমার ভাগ্নিকে দে তো।
ফিহাঃ দাঁড়া একটু।
সাফানঃ আমি দাঁড়াতে পারবো না।এখনি দিবি।এত কষ্ট করে ওর জন্য আমি এখানে এলাম।আর তুই নাকি ওকেই দিবি না।
ফিহাঃ ও এখন আসলের থেকে সুদের মায়া বেশি হয়ে গেছে। আমি তোর কেউ নয়।
সাফানঃ কথা বলিস না। দে আমার কাছে।
ফিহাঃ ব্যস্ত হচ্ছিস কেন তুই? অনির ডায়পার লিক করেছি।আমি পাল্টিয়ে দিচ্ছি তোকে।নাকি এভাবেই নিবি।নে ধর তাহলে।তোর টি-শার্ট পুরো ভিজে যাক।

সাফানের আগ্রহ দেখে শেষ পর্যন্ত অনিয়াকে ওর কোলে দিতেই হলো।সাফানের কোলেই ফিহা ডায়পার চেঞ্জ করে দিলো।তারপর সাফান অনিয়ার সাথে কথা বলতে শুরু করলো।অনিয়াও খুশি হয়ে ওর সাথে মুখ নারাতে শুরু করলো।

সাফানঃ আমার মামা কোথায়?তোমার মা একটু ভালো না অনেক পঁচা। দেখো আমার সাথে কেমন করে।একটু ভালো না।ওকে পাল্টিয়ে নতুন মা নিয়ে আসবো আমরা।এই মুটকি কে রাখবো না।পোল্ট্রি মুরগির মতো সবসময় বসে বসে খায়।কাজের কাজ তো একটু করে না।

সাফানের কথা শেষ হওয়ার আগেই অনিয়া জোরে কান্না শুরু করলো।ওর মা কে যে খারাপ বলেছে সেটা বোধ হয় সে বুঝে গেছে।
সাফানঃ কি রে এই কয়েক দিনে এতো জাদু করে ফেলছিস।তোকে এসব কথা বলায় দেখ কান্না করে দিলো।মনে হচ্ছে সব বুঝে ফেলেছে।
ফিহাঃ তুই আমার মেয়ে কে চিমটি মারছিস আর আমার মেয়ে কাঁদবে না তা কি হয়?তাছারা ওর মা ওর জীবন।তুই সে মাকে নিয়ে বাজে কথা বলবি আমার মেয়ে বুঝতে পারবে না।তোর মতো শয়তানকে চিনতে আমার মেয়ে ভূল করে না।
সাফানঃ যেমন মা তেমন মেয়ে। দেখতে হবে না মেয়েটা কার?
ফিহাঃ আমার মেয়ে কে নিয়ে একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবি না।

টেবলেট এতখন ওদের কথা শুনছিলো।এবার সাফানের সামনে এসে ঘেউ ঘেউ শুরু করলো।ফিহাকে যে এতগুলো কথা বলেছে সেটা টেবলেটও বুঝতে পেরেছে।
সাফানঃ এটা আবার কোথা থেকে আসলো?এই টাকে তো এতখন খেয়াল করি নি।
ফিহাঃ এটা আমাদের পোষা কুকুর। তুই আমাকে নানা কথা বলবি আর ওরা কিছু বলবে না।এখন থেকে আমাকে কিছু বলতে হবে না।আমার মেয়ে ও কুকুরই উত্তর দিয়ে দিবে।
সাফানঃ যা বাবা!! এটাকেও পটিয়ে নিয়েছিস।ভালো ভালো খুব ভালো।

ফিহা ফিটার তৈরি করে অনিয়াকে খাওয়াতে লাগলো।তখনি ওর চোখ গেলো সাফানের দিকে।বয়স খুব বেশি নয়। ২৫ শেষ হওয়ার পথে।গায়ের রংটা তামাটে বর্ণের।ওর মুখের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ওর হালকা গোলাপি বর্ণের ঠোঁট দুটো।চুলগুলো এলোমেলো। পরনে ডার্ক ব্লু টি-শার্ট, সাদা প্যান্ট।পায়ে বেল্টের জুতো। কিছু সময় ফিহা ভেবে বললো।

ফিহাঃ চল আমার সাথে।
সাফানঃ কোথায় যাবো?
ফিহাঃ আমার কিছু কেনাকাটা আছে।অফিসে আজ তেমন কোন কাজের চাপ নেই। টেবলেটের জন্য, অনিয়ার জন্য কিছু ড্রেস লাগবে।
সাফানঃ তুই যা। আমি তোর সাথে কেন যাবো?
ফিহাঃ তুই আমার মেয়ে কে রাখবি।আর আমি কেনাকাটা করবো।
সাফানঃ আমি যাবো না।তোদের মেয়েদের সাথে
শপিং -এ যাওয়া মানে আমার সারাদিন শুধু শুধু নষ্ট করা।একবার আমার গার্লফ্রেন্ড সারার সাথে গিয়ে আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।
ফিহাঃ তুই যাবি না তো তোর ঘাড়ে যাবে।জলদী চল।তুই আমার মেয়ে ও শপিং ব্যাগ ধরতে যাবি।

সাফানকে টেনে নিয়ে গাড়িতে উঠলো ফিহা।আজ ওর অবস্থা নাজেহাল করে ছারবে সে।অবশ্য শপিং করবে সাফানের জন্য। কিন্তু সাফানকে বললে সে রাজী হবে না।তাই ওকে জানালো না।

#চলবে

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here