মিস্টার সিনিয়র পর্ব -১৮

#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_১৮
®ফিহা আহমেদ

|ফ্ল্যাশব্যাক|

“জোভান ভাইয়া আমায় এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? (পরশি)

“ভাইয়া” (জোভান)

“না মানে আপনি এখানে কেন নিয়ে এসেছেন আমায়? (পরশি)

“বিয়ে করতে” । (জোভান)

জোভানের কথায় পরশির চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

“মজা করা বন্ধ করুন কেন নিয়ে এসেছেন বলেন?

“বিয়ে করতে”। (জোভান পরশির দিকে তাকিয়ে চোখ কটমট করে বললো)

“কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে পারব না”। (পরশি)

“কেন? (জোভান)

“আমার ফ্যামিলিকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারব না আপনাকে”৷ (পরশি)

পরশির কথায় জোভান উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।

“হাসছেন যে ,,,,, (পরশি)

“ওরা তোমার ফ্যামিলি তো”। (জোভান হাসি থামিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো)

“মানে বুঝলাম না”। (পরশি)

“শুধু এইটুকু বলে রাখছি ওরা কেউ তোমার আপন নয় সবাই তোমায় পিছন থেকে আঘাত করতে বসে আছে।আর রইল বিয়ে।তুমি না চাইলে ও আমি জোর করে বিয়ে করব তোমায়। (জোভান)

জোভানের কথা শুনে পরশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো ,,,,,

“আমি রাজি” ।

“সত্যি” (জোভান)

“হুম” (পরশি)

“ওকে তাহলে চল”। (জোভান)

(পরশির বিয়েতে রাজি হওয়ার রহস্য পরে সময় মতো জেনে যাবেন সবাই)

পরশি জোভানের রুমে খাটে গুটিশুটি হয়ে বসে বিয়ের কথা ভাবছে।তখন জোভান রুমে আসলো।পরশিকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে পরশির কাছে এসে বসলো।

“মন খারাপ ,,,,, (জোভান)

“না” (পরশি)

“তাহলে চুপ কেন?

“আপনার বাড়ির অশান্তির মূল কারণ আমি। আমায় আপনি অন্য কোথাও দিয়ে আসেন প্লিজ। আমার জন্য আপনার মায়ের এই অবস্থা।কেন বিয়ে করলেন আমায় বলুন?কোন উদ্দেশ্যে বিয়ে করেছেন আমায় বলুন? (পরশি)

“তোমায় ভালোবাসি যে। আর রইলো উদ্দেশ্য। তোমায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাশে রাখার উদ্দেশ্যে বিয়ে করেছি আমি। জানো মিষ্টি পরী আমি যে বড্ড লোভী। তোমায় হারানোর লোভ সামলাতে না পেরে তোমায় বিয়ে করে নিজের করে নিয়েছি”। (জোভান)

“আমায় ছেড়ে দেন প্লিজ আপনার ই ভালো হবে”।(পরশি)

জোভান হালকা রেগে পরশির হাত শক্ত করে ধরে বললো ,,,,,

“ভুলে ও এই কথা মুখে আনবে না মিষ্টি পরী। আমার মৃত্যুতে তোমার মুক্তি মিলবে তার আগে নয়”।(জোভান)

পরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্য দিকে ফিরে নীরবে দু’ফোঁটা চোখের পানি ফেললো।

_____

অরিন রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার বাবা-মায়ের দিকে।

“কিভাবে তারা রিহানের সাথে আমার বিয়েটা মেনে নিচ্ছে”। (অরিন মনে মনে বললো)

“অরিন রিহানের সাথে একদম বাজে বিহেভ করবে না”। (মাহিদ হাওলাদার[অরিনের বাবা])

“না বাবা কিছুতেই না।আমি জোভানকে ভালোবাসি। আমি ওকে ই চাই”। (অরিন)

কথাটা বলার সাথে সাথে ঠাস করে চড় পড়লো অরিনের গালে। অরিন গালে হাত দিয়ে টলমল চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে ,,,,,

“বা ,,,,,,,, বা”

“চোখ নিচে নামাও। নামাও বলছি। আরেকবার চোখ ওপরে উঠালে তোমার চোখ খুলে গলায় ঝুলিয়ে দেব”। (মাহিদ)

অরিন ছোট থেকেই তার বাবাকে অনেক ভয় পায়। ভয় পেয়ে চোখ নিচে নামিয়ে ফেললো অরিন।অরিনের মা মিসেস রিয়া হাওলাদার অরিনের কাছে এসে পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ,,,,,

“মামনি তুমি মেনে নেও রিহানকে। যা হবার ভালোই হয়েছে। ওদের ফ্যামিলিতে অনেক বিপদ। তুমি বিপদ থেকে বেঁচে গেছ”।

“কিন্তু মা ,,,,,, (অরিন)

“কোনো কিন্তু না। আমরা মেনে নিয়েছি রিহানকে তুমি ও মেনে নেও। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে”। (রিয়া)

বলে অরিনের বাবা-মা রিহানের বাড়ি থেকে চলে গেল।অরিন মা-বাবার মুখের ওপর কিছু বলতে পারলো না।মা-বাবা যেতেই অরিন রিহানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।

রিহান টেবিলের ওপর বসে ফলের ঝুড়ি থেকে একটি আপেল নিয়ে খাওয়া শুরু করলো আর আড় চোখে অরিনকে দেখতে লাগলো।অরিন ধীর পায়ে রিহানের সামনে এসে দাঁড়ালো। রিহানের সামনে চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অরিন।অরিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিহান বলে উঠলো ,,,,,,

“কিছু বলবে জান”৷

রিহানের কথায় অরিন মাথা তুলে রিহানের দিকে তাকালো। রিহান মুচকি হাসলো।

“ক্ষুধা লেগেছে আমার”। (অরিন)

“কিচেনে সবকিছু আছে রান্না করে খেয়ে নেও”। (রিহান)

“আমি রান্না করতে পারি না”। (অরিন হালকা রেগে বললো)

“তাহলে না খেয়ে থাক”। (রিহান)

বলে রিহানের অর্ধেক খাওয়া হাতে থাকা আপেলটি অরিনের মুখে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।আর অরিন রাগী দৃষ্টিতে রিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অরিন আপেলটি মুখ থেকে বের করে ছুঁড়ে ফেলে দিল।তারপর রাগে গজগজ করতে করতে কিচেনে আসলো।

কিচেনে এসে চারিদিক ঘুর ঘুর করে দেখছে অরিন।কিভাবে কি করবে সে বুঝতে পারছে না।রিহান যে ইচ্ছে করে তাকে খাটাতে চাচ্ছে অরিন ভালো করেই বুঝতে পারছে। রিহান প্রতিশোধ নিচ্ছে।

|রিহান অরিনের খালাতো ভাই। রিহানের বাবা-মা কানাডায় থাকে। অরিন যখন ক্লাস টেনে পড়ে তখন রিহান অরিনকে প্রপোজ করে তার ভালোবাসার কথা জানায়।কিন্তু অরিন কাটকাট বলে দেয় সে জোভানকে ভালোবাসে।সেদিন রিহান অনেক কষ্ট পেয়েছিল।রিহান তার বাবার কোম্পানিতে চাকরি করে।জোভান আর জিহা রিহানের ব্যাপারে সবটা জানতো।দু’জন প্ল্যান করে রিহানের সাথে অরিনের বিয়ে দিল।তখন তাকে ফিরিয়ে দেওয়াতে রিহান এখন তার বদলা নিচ্ছে অরিনকে খাটিয়ে। রিহান ইচ্ছে করেই বাড়ির সব কাজ করার লোকদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে কিছুদিনের জন্য।তবে অরিনকে সেই আগের মতোই ভালোবাসে রিহান।|

অরিন অনেক খুঁজাখুঁজি করতে করতে ফ্রিজের কাছে আসলো।ফ্রিজ খুলে একটি মুরগির ডিম বের করলো।ডিমটিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে আর ভাবছে কিভাবে কি করবে।

অরিন ডিমটি হাত দিয়ে চাপ দিতেই ডিমটি ভেঙ্গে ডিমের ভিতরের সব নিচে পড়ে গেল। অরিন অসহায় ভাবে নিচে পড়ে থাকা ডিমের দিকে তাকাচ্ছে আবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে। অরিনের মন চাইছে রিহানের চুল গুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে।ইচ্ছে করে তাকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে। অরিনের ভীষণ কান্না পাচ্ছে।

অরিন কিছু না খেয়ে ই হাত ধুয়ে রুমে চলে আসলো।ক্ষুধায় মাথা ঘুরছে পেটে ইদুর দৌঁড়াচ্ছে।রিহান আড়াল থেকে সবটা দেখে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো।তারপর খাবার অর্ডার করে দিল।

অরিন ক্ষুধায় কতক্ষণ চটপট করে ঘুমিয়ে গেল। আধা ঘণ্টা পর খাবার আসলো। রিহান প্লেটে খাবার বেড়ে অরিনের কাছে আসলো। এসে দেখে অরিন ঘুৃমিয়ে গেছে।

মুখের ওপর কিছু পড়তেই অরিন ধড়ফড় করে ঘুম থেকে ওঠে বসলো।

“বৃষ্টি বৃষ্টি পড়ছে কেউ ছাতা ধরো আমার মাথার ওপর”। (অরিন বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলছে)

অরিনের কথা শুনে রিহান হো হো করে হেসে দিলো। রিহানকে হাসতে দেখে অরিনের বুঝতে বাকি রইলো না রিহান তার মুখে পানি ছিটিয়েছে। অরিন রেগে কিছু বলতে যাবে রিহানের হাতে বিরিয়ানির প্লেট দেখে চুপ হয়ে গেল।রিহান ইচ্ছে করে অরিনকে জ্বালানোর জন্য এক চামচ বিরিয়ানি খেল প্লেট থেকে।অরিন অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে বললো ,,,,,

“আমার এত লোভ নাই”।

অরিনের কথায় রিহানের মুখ থেকে খাবার বের হয়ে গেল।রিহান প্লেট রেখে কাশতে শুরু করলো। অরিনের কথা শুনে খাবার নাকে-মুখে ওঠে গেছে।

অরিন দ্রুত বিরিয়ানির প্লেট হাতে নিয়ে চামচে বিরিয়ানি নিয়ে খেতে খেতে বললো ,,,,,

“আমার সত্যিই এতো লোভ নাই খাবারের প্রতি” ।

চলবে…..
_____

(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না লিখে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here