মিস্টার সিনিয়র পর্ব -২০

#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_২০
®ফিহা আহমেদ

ফজরের আজানের ধ্বনিতে পরশির ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভাঙ্গতেই পরশি নিজেকে জোভানের বুকে দেখতে পায়। রাতের কথা মাথায় আসতেই লজ্জায় পরশির গাল দুটো হালকা লাল বর্ন ধারণ করলো।পরশি জোভানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো। জোভানের চুলগুলো চোখের ওপর পড়ে আছে। পরশি মুচকি হেসে চোখের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেল তারপর গালে চুমু দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল গোসল করতে।

পরশি গোসল সেরে নামাজ পড়ে কিচেন রুমে এসে সবার জন্য চা বসালো। দশ মিনিটে চা বানানো হয়ে গেল।জামিলা বেগমকে দিয়ে সবার চা রুমে রুমে পাঠিয়ে দিল পরশি।সবার জন্য আলাদা আলাদা নাস্তা বানাতে শুরু করলো। যে যেমন নাস্তা খেতে পছন্দ করে।জিহা তাকে বলেছে কে কি খেতে পছন্দ করে।পরশি সেই অনুযায়ী সব খাবার তৈরি করতে শুরু করলো।

দুই ঘন্টায় সব রান্না করে শেষ করলো।সবাই টেবিলে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে। জামিলা বেগম কিচেন থেকে সব খাবার নিয়ে টেবিলে রাখলো।পরশি জামিলা বেগমকে মানা করেছে কাউকে না বলতে সে রান্না করেছে। যদি জানে তাহলে কেউ ই তার রান্না করা খাবার খাবে না। সবাই তাদের পছন্দের সব খাবার দেখে তো অবাক।এত সকাল সকাল এত খাবার জামিলা বেগম রান্না করলো কিভাবে তাও একা একা কারোর সাহায্য ছাড়া। যাক এতদিকে মন না দিয়ে সবাই খাবার খাওয়া শুরু করলো। জোভান আর পরশি ছাড়া সবাই খাবারের টেবিলে। মিসেস স্বর্ণা খাবার চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করছে খাচ্ছে না। রিফাত তা দেখে মিসেস স্বর্ণাকে বলে উঠলো ,,,,,

“স্বর্ণা খাচ্ছো না কেন খাও।পরোটা দারুণ হয়েছে খেয়ে দেখ”।

“জোভানকে বলো খেতে আসতে তাহলে খাব”। (মিসেস স্বর্ণা)

“ওহ্ আচ্ছা এই ব্যাপার।জামিলা আপা আপনি জোভানকে ডেকে নিয়ে আসেন খাবার খেতে”। (রিফাত)

“ঠিক আছে ছোট সাহেব”। (জামিলা বেগম)

কিছুক্ষণের মধ্যেই জোভান খাবারের টেবিলে এসে বসলো।সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো।

“বাহ্ আজ দেখি সবার পছন্দের খাবার টেবিলে”। (জোভান)

বলে জোভান গ্লাসে জুস নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আর এদিক ওদিক তাকিয়ে পরশিকে খুঁজছে।

“এই মেয়েটা কোথায় গেল। ঘুম থেকে ওঠার পর তার চাঁদমুখ খানি এখনো দেখিনি।যা লজ্জা এই মেয়ের মনে হয় আর একমাসে ও তার চাঁদমুখ খানি দেখা হবে না আমার”। (জোভান মনে মনে বললো)

তারপর মুখে হাসির রেখা এনে খাওয়ার মনোযোগ দিল।

_____

পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় পরশি ভাবনা ভেঙ্গে গেল।

“মিস্টার সিনিয়র একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন”। (পরশি)

জোভান পরশিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ,,,,

“বলো মিসেস জুনিয়র ,,,,,

“মিসেস” (পরশি)

“যেহেতু তুমি বিবাহিত এখন থেকে মিসেস জুনিয়র ই ডাকব”। (জোভান)

জোভানের কথা শুনে পরশি হেসে দিলো।

“আমার বাড়ি থেকে কেউ আমার খবর নিচ্ছে না কেন?

“কারন তোমার থাকা না থাকাতে তাদের কিছু যায় আসে না”। (জোভান)

“এটা কি বলছেন আপনি।তারা সবাই আমায় ভালোবাসে”। (পরশি)

“ভালোবাসলে তোমার খবর নিচ্ছে না কেন? আজ দু’দিন তুমি বাড়িতে নেই একটা ফোন তো আসেনি সিকদার বাড়ি থেকে”। (জোভান)

“সত্যি তো।আগে ব্যাপারটা এমনভাবে ভাবিনি।আচ্ছা আমি একবার বাড়িতে যাব”। (পরশি)

“না গেলে হয় না।একরাশ কষ্ট নিয়ে আসতে হবে”। (জোভান)

“একবার যাই”। (পরশি)

জোভান কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো ,,,,,

“ঠিক আছে সাথে আমি ও যাব”।

“ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নেও”। (জোভান)

“না গেলে হয় না। এখন পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে না আমার”। (পরশি অসহায় ভাবে বললো)

“কথা না শুনলে হাত-পা ভেঙ্গে গলায় ঝুলিয়ে দিব।যাও রেডি হয়ে নেও”। (জোভান)

“যাচ্ছি” । (পরশি মন খারাপ করে বললো)

পরশি যেতেই জোভান একগাল হেসে বললো ,,,,,

“পাগলিটা আমার” !

_____

|ভার্সিটিতে|

মাঠের মাঝখানে জোভান, নিহান আর নয়ন বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এরই মাঝে অরিন জোভানের কাছে এসে দাঁড়ালো।জোভান দেখে ও না দেখার মতো ভান করে আছে।

“জোভান তুই কি করে পারলি আমার সাথে এটা করতে।আমি তোকে কত ভালোবাসি আর তুই আমায় ঠকালি”। (অরিন কাঁদো কাঁদো হয়ে বললি)

“আমার বউ দেখলে মাইন্ড করবে তুই এখান থেকে যা।তোর সাথে কথা বলার আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই”। (জোভান অন্য দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো)

অরিন মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে গেল। সোজা ভার্সিটি থেকে বাড়ি চলে গেল।

_____

জোভান পাঁচ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে পরশির জন্য। পরশির আসার কোনো খবর নেই।

“সরি সরি। আসলে একটা নোট লিখতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে। চলুন”। (পরশি)

“ঠিক আছে চলো”। (জোভান)

বেশিরভাগ মেয়েরা রাগী দৃষ্টিতে পরশির দিকে তাকিয়ে আছে।জোভানের সাথে পরশিকে তাদের সহ্য হচ্ছে না। তাদের ক্রাশকে পরশি কেঁড়ে নিয়েছে।

_____

জোভান সিকদার বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।পরশি হাসি মুখে গাড়ি থেকে নামতেই অবাক হলো।বাড়ির গেইটে তালা দেওয়া।

“সবাই কোথায় গেল।আর গেইটে তালা দেওয়া কেন? (পরশি অবাক হয়ে বললো)

“সময় হলে বুঝতে পারবে।এখন চলো”। (জোভান)

পরশি জোভানের দিকে তাকালো। জোভানের মুখে রহস্যময় হাসি।পরশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই জোভান পরশির হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিল।

জোভান গাড়ি ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে পরিশকে দেখছে।পরশি মন খারাপ করে বসে আছে।

“মেয়েটা এতবড় ধকল সহ্য করতে পারবে তো”। (জোভান মনে মনে বললো)

জোভান ডান হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে। আর বাম হাতটি পরশির ডান হাতের ওপর রাখলো।নিজের হাতে জোভানের স্পর্শ পেয়ে পরশি জোভানের দিকে তাকালো।

“হাসো ,,,, (জোভান)

“হাসবো ,,,, (পরশি)

“হুম” । (জোভান হালকা হেসে বললো)

জোভানের মুখে হাসি দেখে পরশি ও হেসে দিলো।

“এখন ঠিক আছে”। (জোভান)

হঠাৎ কিছুর সাথে গাড়ি ধাক্কা খায়।পরশি সামনে তাকিয়ে কিছুটা চিৎকার করে বলে ,,,,

“জোভান”

জোভান দ্রুত গাড়ি থামালো। ছয়-সাতটা বাইক তাদের গাড়িটি ঘিরে ধরলো। মূলত বাইকের সাথে তাদের গাড়ির ধাক্কা লেগেছে। জোভান পরশির হাত শক্ত করে ধরে বললো ,,,,

“ভয় পেয়ো না মিসেস জুনিয়র”।

“আপনি থাকতে আমার কোনো ভয় নেই মিস্টার সিনিয়র”। (পরশি)

জোভান গাড়ি থেকে নামলো। জোভানের পিছন পিছন পরশি ও গাড়ি থেকে নামলো। তারা দু’জন নামতেই বাইক গুলো তাদের চারপাশে ঘুরা শুরু করলো। বাইক থামিয়ে সব গুলো লোক তাদের ঘিরে ধরলো। প্রত্যেকের হাতে হকিস্টিক । একজন জোভানের কাছে তেড়ে আসতেই জোভান পেটে হাত দিয়ে ঘুসি মারলো।লোকটি অনেক দূরে ছিটকে পড়লো। লোকটিকে মারতে দেখে সবাই জোভানকে তেড়ে আসলো। জোভান সবগুলোকে ধোলাই দিতে লাগলো।

হঠাৎ একজন হকিস্টিক দিয়ে জোভানের হাতে অনেক জোরে মারলো।জোভান আঘাত পেয়ে নিচে বসে পড়লো।পরশি আর না পেরে কোমরে ওড়নাটি বেঁধে সবাইকে মারতে শুরু করলো সব শক্তি দিয়ে। কয়েকটার নিচ বরাবর লাথি মারলো পরশি।

জোভানকে আবার আরেকটি লোক আক্রমণ করলো।জোভানের ঘাড়ে হকিস্টিক দিয়ে মারলো।পরশি ওদের মারা থামিয়ে জোভানের কাছে আসতে যাবে তখন পরশিকে দু’টো লোক হাত দিয়ে আঁটকে ফেললো।পরশির হাত দু’টো পিছনে নিয়ে একসাথে করে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিল।পরশি এখন কিছুই করতে পারছে না। পরশির এখন অনেক কান্না পাচ্ছে। তবে নিজের জন্য না জোভানের জন্য। জোভানকে মেরে যাচ্ছে দু’টো লোক। জোভান ব্যথা পেয়ে হালকা চিৎকার করে উঠছে।

“ছাড়ুন আমায়। ওনাকে মারবেন না। ওনি ভীষণ ব্যথা পাচ্ছে। প্লিজ ওনাকে মারবেন না”। (পরশি হাত মুচড়াতে মুচড়াতে কান্না করতে করতে বললো)

তখন কারোর লাথি খেয়ে দূরে ছিটকে পড়লো লোক দু’টো।পরশি ঠোঁটে হাসি এনে বললো ,,,,,

“মাস্টার”

লোকটি ইচ্ছে মতো ধোলাই দিল সবগুলোকে।সবগুলো লোক মার খেতে খেতে কোনোরকমে পালিয়ে গেল বাইক নিয়ে।

পরশি দৌঁড়ে জোভানের কাছে আসলো। জোভানকে জড়িয়ে ধরে হেঁচকি তুলে তুলে কান্না করা শুরু করলো।জোভান ধীরে ধীরে ওঠে বসে পরশির মাথায় ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ,,,,,

“আমি ঠিক আছি মিসেস জুনিয়র। কান্না করো না”।

“না।আপনি ঠিক নেই মিস্টার সিনিয়র”। (পরশি কান্না করতে করতে বললো)

পিছন থেকে লোকটি বললো ,,,,

“পরশি ও কি হয় তোমার?

“আমার স্বামী মাস্টার”। (পরশি)

“বিয়ে করে ফেললে”৷ (মাস্টার হেসে বললো)

পরশি লজ্জা পেল মাস্টারের কথায়।পরশি জোভানের দিকে তাকিয়ে বললো ,,,,,

“আমাকে মারপিট শিখিয়েছে এই মাস্টার”। (পরশি হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো)

পরশিকে জোভান ধরে উঠালো।জোভান একগাল হেসে মাস্টারের সাথে হাত মিলালো।

“লোকটাকে কোথায় যেন দেখেছি মনে পড়ছে না আমার”৷ (জোভান মাস্টারের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো)

চলবে…..
_____

(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না লিখে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here