#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_২১
®ফিহা আহমেদ
“কি ভাবছেন ? (পরশি)
“মিসেস জুনিয়র আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে তোমার ওই মাস্টারকে আমি কোথাও দেখেছি”। (জোভান)
“এতে চিন্তার কি আছে।মাস্টার অনেক ভালো”। (পরশি)
“আমি কি বললাম নাকি মাস্টার খারাপ।যাই হোক বাদ দেও।মমকে নিয়ে চিন্তায় আছি”। (জোভান)
“কেন ? (পরশি)
“মম যদি এই অবস্থায় আমায় দেখে তোমায় অনেক বকবে”। (জোভান)
“এসব নিয়ে চিন্তার কি আছে।এসব বকাঝকা ছোট থেকেই সহ্য করে এসেছি। আমার সহ্য হয়ে গেছে। চিন্তা করবেন না মিস্টার সিনিয়র।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে”। (পরশি)
“ঠিক হয়ে গেলে ই ভালো”৷ (জোভান)
_____
দু’জন বাড়িতে প্রবেশ করতেই মিসেস স্বর্ণা বসা থেকে ওঠে দৌঁড়ে জোভানের কাছে আসলো।
“বাবা জোভান তোর এই অবস্থা কেন? (মিসেস স্বর্ণা)
“তেমন কিছু হয়নি মম”৷ (জোভান)
“হয়নি মানে।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোর মাথায় – হাতে আঘাত”। (মিসেস স্বর্ণা)
বলেই মিসেস স্বর্ণা পরশির দিকে তাকালো। পরশি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মিসেস স্বর্ণা ধীর পায়ে হেঁটে পরশির কাছে এসে কয়েক সেকেন্ড পরশির দিকে তাকিয়ে থেকে ঠাস করে পরশির ডান গালে চড় বসিয়ে দিলেন। পরশি মাথা ওপরে তুলে গালে হাত দিয়ে টলমল দৃষ্টিতে মিসেস স্বর্ণার দিকে তাকালো।
“মম” (জোভান)
“চুপ থাক জোভান।অনেক সহ্য করেছি এই মেয়েকে। আর নয়।অপয়া মেয়ে একটা।আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে আমার ফ্যামিলিকে নরক করে দিয়েছে। আমি নিশ্চিত এই মেয়ের জন্য আমার ছেলে বার বার বিপদে পড়ে”। (মিসেস স্বর্ণা রেগে বললো)
“মম এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে”। (জোভান)
“কি করবি তুই জোভান। আমায় মারবি তুই। মেরে পেল আমায়। মরে গেলেই আমার ভালো হবে।বেঁচে থেকে অন্তত এই অপয়া মেয়েটাকে সহ্য করতে হবে না”৷ (মিসেস স্বর্ণা রেগে চিৎকার করে বললো)
জোভান মাকে কিছু না বলে পরশির হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলো।
_____
পরশি জোভানের বুকে মাথা রেখে কান্না করছে। জোভান পরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“আর কয়টা দিন সহ্য করবে আমার মমকে পরশি।তারপর তোমায় এখান থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাব”। (জোভান বিষন্ন হয়ে বললো)
পরশি কিছু না বলে কান্না করে যাচ্ছে। জোভান পরশির মাথা ওপরে তুলে পরশির গালের দিকে তাকালো। লাল হয়ে আছে।জোভানের ভীষণ খারাপ লাগছে।
“মেয়েটা ছোট থেকেই কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে।একদন্ড সুখ ও আল্লাহ তার কপালে রাখেনি।আর কিছুদিন অপেক্ষা করো মিষ্টি পরী। তারপর তোমায় অনেক দূরে নিয়ে যাব। যেখানে কোনো কষ্টরা তোমায় স্পর্শ করতে পারবে না। তোমায় সুখ এনে দিব আমি”। (জোভান পরশির গালের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথাটি ভাবলো)
জোভান পরশির গালে পরপর দুু’টো চুমু খেল।পরশি চোখ বন্ধ করে ফেললো।পরশির দু’চোখ থেকে দু’ফোঁটা পানি পড়লো।জোভান পরশির কপালে চুমু দিয়ে পরশিকে শক্ত করে জড়িয়ে দিল।এমন ভাবে ধরেছে যেন পরশিকে ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।
নিচে হৈচৈ এর শব্দে জোভান বিরক্ত হলো।পরশি জোভানের বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো কান্না করতে করতে। জোভান পরশিকে খাটে শুইয়ে দিয়ে নিচে আসলো।নিচে আসতেই জোভানের অটোমেটিক ব্রু কুঁচকে আসলো।
“মাস্টার” (জোভানের মুখ থেকে নামটি নিজে নিজে বের হয়ে আসলো)
মিসেস স্বর্ণা জোভানের কাছে এসে বললো ,,,,,
“জিহাকে দেখতে এসেছে জোভান”৷
জোভান মায়ের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে মায়ের দিকে তাকালো। এদিকে মাস্টার জোভানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। জোভানের মনে হচ্ছে মাস্টার তাকে আগে থেকেই চিনে।জোভান তাদের সামনে এসে মাস্টারের সাথে হাত মিলালো।
“আপনি এখানে কেন ? (জোভান মাস্টারের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো)
“আপনার বোন জিহাকে জিজ্ঞেস করলে সব জানতে পারবেন”। (মাস্টার)
জিহার নাম শুনতেই জোভান বড়সড় ঝটকা খেল।
জোভান বসা থেকে ওঠে জিহার রুমের দরজা নক করলো। জিহা দরজা খুলে দিল। জিহাকে দেখে জোভান অবাক হলো। জিহা শাড়ি পড়ে সাজগোছ করে আছে।
“এসব কি জিহা ?
“তুই না তিয়াস নামের এক ছেলেকে ভালোবাসিস আমায় বললি।তাহলে এই মাস্টারটা আবার কে ? (জোভান শক্ত কন্ঠে কথাটি বললো)
“ভাইয়া তুই যাকে নিচে দেখছিস সে তিয়াস ই।মাস্টার ই তিয়াস”। (জিহা)
“কিহ্” (জোভান হালকা চিৎকার করে বললো)
“হুম” । (জিহা)
“এইজন্য ই দুপুরে আমার মনে হয়েছিল আমি কোথায় যেন এই মাস্টারকে দেখেছি । তাহলে এই হলো রহস্য। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আমি ছেলেটার চেহারা ভুলে গেলাম”। (জোভান মনে মনে ভাবছে)
“কি ভাবছিস ভাইয়া ,,,,, (জিহা)
“কিছু না। কিন্তু অপরিচিত একটা ছেলেকে বিয়ে করা কি ঠিক”। (জোভান চিন্তিত হয়ে বললো)
“ভাইয়া বাবার পরিচিত ছেলেটি। বাবাকে বলার সাথে সাথে রাজি হয়ে গেছে”৷ (জিহা)
“বলার সাথে সাথে ,,,,, (জোভান)
জিহা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বললো ,,,,,
“হুম” ।
“বাবা কোম্পানির পিএ”৷ (জিহা)
“আগে তো দেখিনি”৷ (জোভান)
“পিএ চেঞ্জ করেছে বাবা।আগে যে পিএ ছিল ওনার ছেলে তিয়াস এখন পিএ হয়ে কাজ করছে”। (জিহা)
বোনের কথা শুনে জোভান একগাল হেসে জিহার মাথায় আস্তে করে চড় মেরে জিহার রুম থেকে চলে গেল।
“তার বোন ভালো থাকলেই হলো”৷ (জোভান কথাটি ভাবতে ভাবতে নিচে নামছে)
_____
জিহাকে পাএকক্ষের সামনে নিয়ে আসা হলো। পাএের মা-বাবা দু’জনেরই মেয়ে পছন্দ হয়েছে। তারা চাইছে আজ ই ঘরোয়া ভাবে বিয়ের কাজটা সেরে নিতে।রিফাত মানা করলো না সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল।অবশ্য মিসেস স্বর্ণা ই তাকে রাজি হতে বলেছে।চারপাশে বিপদ হানা দিয়ে আছে। মিসেস স্বর্ণা মেয়েকে বিপদ থেকে সরাতেই দ্রুত বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে চাইছে।
_____
মিসেস স্বর্ণা জোভানকে বলে দিয়েছে পরশি যেন জিহার বিয়েতে না থাকে।যদি পরশির জন্য জিহার বিয়ে ভেঙ্গে যায়। ওনি এই ভয় পাচ্ছেন।
জোভান রুমে এসে দেখে পরশি এখনো ঘুমাচ্ছে। জোভান আর জাগালো না পরশিকে।পরশির কপালে চুমু দিয়ে কাঁথা ঠিক করে দিয়ে রুম থেকে চলে আসলো।
_____
মিসেস স্বর্ণা আর জামিলা বেগম মিলে সব রান্নাবান্না শেষ করলো। মিসেস স্বর্ণা অরিনকে ফোন করে নিয়ে আসলো। অরিন জিহাকে সাজাচ্ছে। জিহার ভীষণ মন খারাপ পরশির জন্য।মা পরশিকে আমার থেকে দূরে রেখেছে।মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট না দিলে ও পারে।
অবশেষে বিয়েটা হয়ে ই গেল জিহার।
কান্নাকাটির শব্দে পরশির ঘুম ভেঙ্গে গেল।পরশি ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠলো।ওপর থেকে দেখলো জিহার পরনে লালা বেনারসি। মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে লাল বেনারসিতে।লাল পরী মনে হচ্ছে পরশির কাছে। পরশি বুঝতে পারলো তাকে ছাড়া ই জিহার বিয়ে সেরে ফেলেছে মিসেস স্বর্ণা। পরশি ওপর থেকে জিহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যাওয়ার আগে জিহা পিছনে ফিরে ওপরে তাকালো।পরশির দিকে অসহায় ভাবে কয়েক মিনিট তাকিয়ে থেকে চলে গেল শশুড় বাড়ির উদ্দেশ্যে।
_____
রাত বারোটায় ফোন আসলো মিসেস স্বর্ণার কাছে।ফোন রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে বললো ,,,,,
“নিজের মেয়েকে বাঁচাতে চাও তো পরশিকে মেরে পেল। যদি পরশিকে না মার তাহলে তোমার মেয়ে জিহার লাশ যাবে তোমার বাড়ি”।
বলেই অপরিচিত লোকটি ফোন কেটে দিল। এসব শুনে মিসেস স্বর্ণার হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু করলো। রিফাত স্বর্ণাকে এভাবে ভয়ে কাঁপতে দেখে মিসেস স্বর্ণাকে জড়িয়ে ধরে বললো ,,,,
“ভয় পেয়ো না স্বর্ণা। এবার আর চুপ থাকব না।অনেক চুপ থেকেছি।আজ ই এই দুশমন কে বের করব আমরা।আমাদের জিহার কিছু হবে না।পরশির জীবন নরক করে তুলেছে এই দুশমন। আজ সব লুকোচুরির খেলা শেষ করবো”।
‘
চলবে…..
_____
(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না লিখে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]