মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ২৩

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ২৩
#Saiyara_Hossain_Kayanat

”আমি এখানে থাকব না তার মানে এই না যে তুই যা ইচ্ছে করবি আর আমি কিছুই জানতে পারবো না। আমি সিলেট থেকেও তোর প্রতিটা কাজের খবর নিব মনে রাখিস।”

আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়লাম। শুভ্র ভাই এখানে থাকবে না এটা শুনেই আমার মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেছে। এখনই কিছু একটার শূন্যতা অনুভব করছি তাহলে উনি চলে গেলে কি হবে!!

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে শুভ্র ভাই আমার পাশে এসে দোলনায় বসলেন। আমার হাত ধরে খুব শান্ত গলায় বললেন-

—”মন খারাপ করে আছিস কেন অনন্য আমি তো একেবারে চলে যাচ্ছি না।”

আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি মাথা তুলে। লোকটা সারাক্ষণ ধমক দেয় আবার হঠাৎ করে শান্ত হয়ে যায়। তবে এই অদ্ভুত লোকটাকেই যেন আমার প্রতিমুহূর্তে খুব করে চাই।

শুভ্র ভাইয়ের দু’হাতের মুঠোয় আমার হাতটা আগলে নিয়ে আবার বললেন-

—”আচ্ছা আমি যদি দূরে থাকি তাহলে কি তোর প্রতি আমার অনুভূতি কমে যাবে না-কি আমি হারিয়ে যাবো কোনটা?? শুধু শুধু কেন চুপ করে আছিস বল তো। এই যে এই মুহুর্তে আমি তোর অনুভূতি গুলো অনুভব করতে পারছি। তুই আমাকে এখনই মিস করা শুরু করছিস এটা আমি বুঝতে পারছি। তাহলে তুই কি পারবি না আমি দূরে থাকলেও আমার অনুভূতি গুলো অনুভব করতে?? কিরে বল পারবি কি না!”

আমি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ জানালাম। উনি আমার মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-

—”আমি তোমাকে আগেও বলেছি অনন্য আমি মুখের কথায় না অনুভব করতেই বেশি পছন্দ করি আর বিশ্বাস করি। আমরা কি কখনো কাউকে ভালোবাসি বলেছি?? নাহ বলিনি তবুও তো আমরা অনুভব করেই একে অপরকে আপন করে নিয়েছি। আর এই অনন্যময়ির প্রতি মুগ্ধ প্রেমিকের মুগ্ধতা কখনোই কেটে যাবে না।”

এই কথা বলেই উনি আমার হাতের উল্টো পিঠে ওনার ঠোঁট ছোঁয়ালেন। আমার হাত ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে সরে বসলেন তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বললেন-

—”শোন অনন্য যখন তখন ছাদে এসে বসে থাকবি না। এই ছাদটাকে আমার প্রচন্ড হিংসা হয়।”

আমি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

—”কেন?? ছাদের প্রতি আবার কারও হিংসা হয় না-কি!!”

শুভ্র ভাই কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন-

—”সবার হয় কি না জানি না তবে আমার হিংসা হয়। কারন তুই এই ছাদেই বেশি সময় থাকিস, অবসর সময় এই ছাদ তোর সঙ্গী, মন খারাপের সময়ও এই ছাদ তোর সঙ্গী। আমার সাথেও তো এতটা সময় থাকিস না তুই।”

ওনার এমন কথায় আমি ফিক করে হেসে দিলাম। হাসতে হাসতেই বললাম-

—”আপনি তো খুব হিংসুটে লোক শুভ্র ভাই।”

উনি ভাবলেশহীন ভাবে বললেন-

—”সেটা শুধু তোর জন্যই অনন্য।”

শুভ্র ভাইয়ের কথা গুলো ভেবে আনমনেই হেসে ফেললাম। এই লোকটার স্মৃতি গুলোই এখন আমার সঙ্গী হয়ে উঠেছে।

আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি তখনই হঠাৎ করে পেছন থেকে আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমি কিছু বললাম না কারন আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি এই মানুষটা কে হতে পারে। আমার কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আমাকে ছেড়ে পিছন থেকে আমার পাশে এসে ছাদের রেলিং ধরে দাড়ালো। খানিকটা নিরাশ হয়ে বললো-

—”ভেবেছিলাম তোকে সারপ্রাইজ দিব কিন্তু তোর তো কোনো সাড়াশব্দই নেই।”

আমি মিমশির দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বললাম-

—”কারন আমি জানতাম এটা তুই তাই অবাক হইনি। তা এই সময় কি মনে করে আসলি?”

—”তোর কথা মনে পরলো তাই চলে আসলাম। তুই এমন মনমরা হয়ে আছিস কেন জানু?”

—”এমনিতেই ভালো লাগছে না।”

মিমশি আমার কাধে হাত রেখে বললো-

—”আমার কাছে কখনো মিথ্যা বলে পার পেয়েছিস তুই? আর তুই কি ভুলে যাস নাকি তুই না বললেও আমি তোর মন খারাপের কারণ ভালো করেই বুঝতে পারি।”

এই মেয়েটা সব সময়ই আমার মনের খবর জেনে যায়। মন খারাপের সময় এই মেয়েটা সব সময় আমার মন ভালো করার ওষুধ হয়ে আসে। আমি মিমশির চুলে টান দিয়ে মুচকি হেসে বললাম-

—”হয়েছে হয়েছে আর জ্ঞান দিতে হবে না নিচে চল।”

————————

আজ সারাদিন শুভ্র ভাইয়ের একবারও কথা হয়নি। আমি ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু বার বার বন্ধ আসছে। কখনো তো এমন হয় না প্রতিদিনই তো ফোন দেয় তাহলে আজ কি হলো!! তারপর আবার ফোনটাও অফ করা। কিছু হয়েছি না-কি!! চিন্তা করতে করতে রাত প্রাত একটা বাজে চোখটা একটু লেগেছিল। ঘুম যেন আমাকে একদম আঁকড়ে ধরেছে। চোখ বন্ধ করার কিছুক্ষণ পরই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো সাথে সাথেই লাফিয়ে উঠলাম। ফোন হাতে নিয়ে শুভ্র ভাইয়ের নাম্বার দেখে আমার ঘুম সেকেন্ডের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেল।

ফোন বেজে ওঠার সাথে সাথেই রিসিভ করে কানের কাছে নিলাম। আমি কিছু বলার আগেই উনি ধমকের সুরে বললেন-

—”এতো রাতে জেগে আছিস কেন? ফোন দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করে ফেললি। পাচঁ মিনিটের মধ্যে ছাদে যা এক৷ মিনিটও যেন দেরি না হয়।”

—”কিন্তু শুভ্র ভাই… ”

আমি কিছু বলার আগেই আবার ধমকে বলে উঠলেন।

—”এতো কথা বলিস কেন অনন্য যা বলেছি তা কর জলদি।”

আমি বিছানা থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পরলাম ছাদে যাওয়ার জন্য। ছাদে গিয়েই থমকে দাড়ালাম বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সামনের দিকে। সবাই ঘুম ঘুম চোখে এভাবে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে কেন!! ভাইয়া, আম্মু, আব্বু, মামুনি আর আংকেল সবাই চোখ মুখ কুচকে দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়াকে দেখে তো মনে হচ্ছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এখনই ঘুমে তলিয়ে যাবে। আমি অবাক হয়ে ওদেরকে জিজ্ঞেস করলাম-

—”তোমরা সবাই এখানে কি করছো? আর শুভ্র ভাই আমাকে কেন আসতে বলেছে?”

মামুনি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললেন-

—”আজ তোর শুভ্র ভাইয়ের জন্মদিন তাই একটু পর গিফট নিতে আসবে আর সে জন্যই সবাই এভাবে দাঁড়িয়ে আছি।”

শুভ্র ভাই আসবে শুনেই আমার মনটা ভালো হয়ে গেল। কিন্তু পরক্ষনেই কিছুটা ভেবে আবার জিজ্ঞেস করলাম-

—”জন্মদিন তা না হয় বুঝলাম আর গিফট দিবে সেটাও বুঝলাম কিন্তু গিফট দেওয়ার জন্য কি সবাইকে এই মধ্যরাতে ছাদে আসা লাগবে নাকি?”

ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বললো-

—”উফফ অনু এতো প্রশ্ন কেন করছিস ভালো লাগে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক তো….. অসহ্যকর প্রাণী একটা।”

ভাইয়ার কথায় শুনে আমি রাগী কন্ঠে বললাম-

—”তুই অসহ্যকর ছাগল। আচ্ছা বাদ দে গিফট কোথায় সেটা বল দেখি কি গিফট।”

ভাইয়া আবার বিরক্তির সুরে বললো-

—”তুই”

—”আমি মানে আমি কি?”

আম্মু আমাদের ঝগড়া দেখে হুংকার দিয়ে উঠলেন

—”এইই বেয়াদব গুলা চুপ করবি তোরা নাকি থাপ্পর দিব।”

আম্মুর ধমকে আমরা দুজন চুপসে গেলাম।

হঠাৎ ছাদের দরজা খোলার শব্দে সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে সেদিকে ডাকালাম। হ্যাঁ শুভ্র ভাই এসে….. দেখে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে হয়তো জার্নি করে এসে তাই। উনি দরজা দিয়ে সামনে এসে পিছন ফিরে কাউকে বললেন-

—”আসুন আপনি।”

শুভ্র ভাই আবার কাকে নিয়ে আসলেন এতো রাতে!!

চলবে…….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here