মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ২৬

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ২৬
#Saiyara_Hossain_Kayanat

রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ইচ্ছে করছে শুভ্র ভাইকে নদীর পানিতে ইচ্ছেমতো নাকানিচুাবানী খাইয়ে তারপর নিজেকে শান্ত করি। বিয়ের প্রায় দুই মাস হয়ে যাচ্ছে এখন কিসের অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরা!! এতোটা অসভ্য কি করে হলো উনি। এইসব ভাবতেই রাগ লাগছে আমার। রেগেমেগে গটগট করে সিড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছি। কলিংবেল বাজানোর কিছুক্ষণ পর আম্মু দরজা খুলে দিলেন। রাগের মাথায় আম্মুকে বললাম-

—”এতো সময় লাগে কেন দরজা খুলতে??”

—”আমি কি তোর জন্য দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকবো না-কি!! আর তুই আবার ফিরে এলি কেন?? আদনানদের বাসায় যাবি না??”

আম্মুর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রুমে চলে আসলাম। কিছুক্ষণ আগে সুন্দর করে রেডি হয়ে খুব ভালো একটা মুড নিয়ে শুভ্র ভাইয়ের সাথে বের হয়েছিলাম আদনানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাব বলে। নিচে নামে গাড়িতে উঠবো তখনই পুতুলের মতো সাদা চুলের একটা বিদেশি মেয়ে এসে শুভ্র ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্র ভাইকে দেখেই হয়তো উনি গাড়ি থামিয়ে এসেছে। অল্প কিছুক্ষণ হেসে হেসে ইংরেজিতে কথা বলেই আবার গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি করে চলে গেলেন। হয়তো খুব ব্যস্ত ছিলেন। ওনাদের এমন হেসে হেসে কথা বলা দেখে আমার গাঁ জ্বলে যাচ্ছিলো তাই রেগেমেগে আবার বাসার ফিরে আসলাম।

হঠাৎ করেই শুভ্র ভাই হন্তদন্ত হয়ে আমার রুমে আসলেন। এসেই জিজ্ঞেস করলেন-

—”অনন্য এভাবে চলে আসলি কেন?? আন্টি বললো তুই নাকি অনেক রেগে আছিস!!”

ওনার কথা শুনে আমার রাগ তরতর করে বেড়ে চলছে। শুভ্র ভাই আমার কোনো প্রতিত্তোর না পেয়ে আমার কাছে এসে বললেন-

—”কথা বলছিস না কেন অনন্য!! আদনানের জন্মদিনে যাবি না??”

এবার রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে সামনের টেবিলে থাকা পানির গ্লাস নিয়ে ওনার উপর সব পানি ঢেলে দিলাম। শুভ্র ভাই আমার এমন কাজে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি রাগে গজগজ করতে বললাম-

—”যান এখন ভালো করে গোসল করে আসুন।”

উনি অবাক হয়ে বললেন-

—”কিছুক্ষণ আগেই তো একবার গোসল করলাম এখন আবার কেন করবো? আর তুই এতো রেগে আছিস কেন? পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিলি কেন আমাকে?”

আমি জ্বলন্ত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললাম-

—”আগে করেছেন তো কি হয়েছে এখন আবার আধা ঘণ্টা শাওয়ার নিবেন। তার আগে আমার সামনে আসবেন না।”

শুভ্র ভাই আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-

—”তুই এতো রাগ দেখাচ্ছিস কেন আমাকে অনন্য।”

শক্ত গলায় বললাম-

—”মেয়েদেরকে জড়িয়ে ধরতে খুব ভালো লাগে তাই না!!”

আমার কথায় উনি বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের চুল গুলো ঠিক করতে করতে আমার কাছে আসলেন। কিছুটা ঝুঁকে আমার কানে ফিসফিস করে বললেন-

—”তুমি আমাকে নিয়ে এতোটা জেলাস কবে হলে অনন্যময়ি?? তোমার এমন রাগ দেখে আমি আবারও তোমার মুগ্ধতার প্রেমে পরে গেলাম। আর কতো রূপ দেখাবে তুমি আমাকে!!”

এই কথা বলেই আবার আগের মতো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন-

—”যার কথা তুই বলছিস তার নাম ক্যারি। বিদেশে উনি আমার আমার টিচার ছিলেন। আমাকে খুব ভালোবাসে। জরুরি কাজে বাংলাদেশে এসেছিলেন আজই চলে যাচ্ছেন। আর তাই যাওয়ার পথে আমাকে দেখেই গাড়ি থামিয়ে কথা বললেন।”

আমি ওনার কথা কিছুটা স্বাভাবিক হলাম শুভ্র ভাই ওনার মুখ শার্টের হাতায় মুছতে মুছতে বললেন-

—”গোসল তো করিয়েই দিলি একবার। যাই তৃতীয় বারের মতো আবার গোসল করে আসি।”

এইকথা বলে চলে যেতে যেতে উচ্চস্বরে বললেন-

—”ক্যারি কম করে হলেও আমার থেকে দশ বছরের বড় হবে।”

কথা শেষ করেই উনি হাসিতে ফেটে পরলেন। হাসতে হাসতে চলে গেলেন আর আমি থ মেরে মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম। নিজের উপরই রাগ হচ্ছে এমন বোকামির জন্য। তবে মাথায় একটা কথাই ঘুরছে এই বয়স্ক মহিলা এত স্মার্ট আর সুন্দরী কিভাবে!! বিদেশি মহিলা তাই!!

————————

আদনানদের বাসায় দাঁড়িয়ে আছি এতো মানুষের চিল্লাচিল্লি শুনতে একদম অসহ্য লাগছে। সবাই নিজেদের মতো ব্যস্ত শুভ্র ভাইও সাইফ, অর্ক ভাইদের সাথে আড্ডায় মেতে আছে। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি ড্রয়িং রুমে এক কোনায়। তখনই আদনানদের পাশের বাড়ির একটা ছেলে আমার কাছে এসে বললেন-

—”হাই আপনার নাম কি?”

আমি কিছু বললাম না। ছেলেটা আবার বললেন-

—”আরে ভয় পাচ্ছেন না-কি আমি তো এমনিতেই পরিচিত হতে চেয়েছি।”

আমি এবার স্বাভাবিক ভাবেই বললাম-

—”ভয় পাবো কেন আসলে… ”

—”আসলে আমার ওয়াইফ অপরিচিত কারও সাথে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে।”

আমার কথার মাঝেই হঠাৎ করে শুভ্র ভাই আমার কাছে এসে হাত ধরে দাড়িয়ে কথাটা বললেন। পাশে থাকা অর্ক ভাই, সাইফ ভাইয়া, স্মরণ আর আবির ওরা তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে চোখ গুলো এখনই বেরিয়ে আসবে। আমাদের কাবিনের কথা এখনো ওদেরকে বলা হয়নি তাই এমন শক খেয়েছে। ছেলেটা শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে ইতস্ততভাবে বললেন-

—”ওহহ তাহলে সরি আমি হয়তো আপনার ওয়াইফ কে অস্বস্তিতে ফেলে দিলাম।”

শুভ্র ভাই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন-

—”নো প্রব্লেম ভাই।”

ছেলেটা একটা মেকি হাসি দিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন। সাথে সাথে আমার কাজিনের দল আমাদের উপর ঝাপিয়ে পরলো হাজার খানেক প্রশ্ন সবাই একসাথেই জিজ্ঞেস করছে। সবার এমন চেচামেচিতে বিরক্ত হয়ে পেছন থেকে ভাইয়া এসে এক ধমক দিয়ে সবাইকে চুপ করিয়ে দিলেন। তারপর শান্ত গলায় বললেন-

—”আলাদা একটা রুমে চল সবাই ওখানে বসেই সব বলছি।”

সবাই মিলে একটা রুমে গিয়ে বিছানার উপর ভাইয়াকে ঘিরে গোল হয়ে বসে আছে। আমি সোফায় বসে আছি চুপ করে আর আমার পাশেই শুভ্র ভাই এসব দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন। ভাইয়া সবাইকে সব কিছু বলার পর এদের সবার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এরা সবাই মিমশির থেকেও বেশি গভীর আফসোসের সাগরে ডুব দিয়েছে। সাইফ ভাইয়া আমার কাছে এসে বললেন-

—”এতদিন হয়ে গেল অথচ আমাকে এই কথা বললি না অনি!!”

আমি স্বাভাবিক ভাবেই বললাম-

—”এটা কি বলার মতো কোনো কথা ভাইয়া?? আর আমি তো নিজেই কনফিউজড বিয়েটা বাস্তবে হয়েছে নাকি আমার স্বপ্নে!”

অর্ক ভাইয়া এসে কিছুটা গম্ভীর গলায় বললো-

—”এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে আর আমরা সবাই মিলেই তোকে শাস্তি দিব রেডি থাকিস।”

আমি রাগী চোখ অর্ক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললাম-

—”আমাকে শাস্তি না দিয়ে তোরা শুভ্র ভাইকে দে। উনি এইসব কিছুর জন্য দায়ী।”

এই কথা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। প্রায় ঘন্টা খানিক সময় পর শুভ্র ভাইয়ারা সবাই রুম থেকে বের হলেন। সবাইকে স্বাভাবিকই দেখা যাচ্ছে কেউ আর বিয়ে নিয়ে কোনো কথা বলেনি। আমি, ভাইয়া আর শুভ্র ভাই অনুষ্ঠান শেষে বাসায় চলে আসলাম। অনেক রাত হয়ে গেছে বাসায় আসতে আসতে। খুব ক্লান্ত লাগছে তাই বাসায় এসে ফ্রেশ হয়েই ঘুমিয়ে পরলাম।

———————

সকালে মানুষের চেচামেচির কারনে ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম এগারোটা বাজে অথচ আমাকে এখনও কেউ ডাক দেয়নি ভেবেই প্রচুর অবাক হলাম। অন্য দিন তো নয়টার বেশি ঘুমালেই আম্মু পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নেয়। আর আজ কিছুই বললো না!! বাহির থেকে মানুষের চেচামেচির শব্দ শুনে কোনো রকম ফ্রেশ হয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম দেখার জন্য। রুম থেকে বের হয়ে চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিতে আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। আমার সব মামা- মামি, কাজিনরা মিলে পুরো ফ্ল্যাট তাজা ফুল আর লাইট দিয়ে সাজাচ্ছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম মিমশিও আছি সাথে। এই বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হবে অথচ আমাকে কেউ জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না!! মিমশিকেও নিয়ে আসছে কিন্তু একই বাসায় থেকেও আমাকে কিছু বলেনি!! কিন্তু কিসের জন্য এতো সাজ, এতো মানুষ!! কেউ আমাকে এখনো খেয়াল করেনি আমার মতো এতো বড় একটা মানুষ এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাদের কারও নজরেই পরলো না। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। আমি মিমশির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

—”তুই এখানে কেন?? আর বাসা কিসের জন্য সাজানো হচ্ছে!! আমি তো এসব ব্যাপারে কিছুই জানি না।”

মিমশি কাজ করতে করতেই বললো-

—”আজ তোর বিয়ে আর তোর বিয়েতে আমি না আসি কিভাবে বল একমাত্র বেস্টি বলে কথা।”

মিমশির কথা শুনে আমি অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেলাম। হচ্ছে টা কি আমার সাথে!! সকাল থেকে শুধু অবাক হয়েই যাচ্ছি। আর পেয়েছি কি সবাই!! যখন ইচ্ছে হয় তখনই আমাকে বিয়ে দিবে অথচ আমাকে একটি বারের জন্যও জানাবে না!! রাগে জ্বলন্ত অগ্নিগিরির মতো জ্বলজ্বল করে রাগ উঠে গেল। মিমশিকে রাগী কন্ঠে বললাম-

—”মানে কি হচ্ছে এসব আমাকে না জানিয়েই বার বার আমার বিয়ে দিয়ে দেয় এটা কেমন কথা!!”

মিমশি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো-

—”শুধু শুধু রাগ দেখাচ্ছিস কেন?? তুই কি শুভ্র ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাস না! আর এইসব তোর ভাইদের প্ল্যান আমাকে তো কাল রাতেই ফোন দিয়ে সব জানিয়েছে। তোর গায়ে হলুদ আর বিয়ে সব কিছুই রাত দুইটা বাজে হবে। তোর কাবিন যেভাবে হয়েছে তারা নাকি ওভাবেই আবার সব কিছু করতে চায়। আমি তো বিয়ের প্ল্যানিং শুনেই মনে মনে লুঙি ডান্স দিয়েছি।”

এই মেয়ের কথা শুনে রাগ কমবে তো দূরের থাক আর বাড়িয়ে দিচ্ছে। ওর কথায় আমি বিরক্ত হয়ে বললাম-

—”তোর এইসব ফালতু কথায় আমি প্রচুর বিরক্ত মিমশি যা তুই আমার সামনে থেকে।”

মিমশি মুখ গোমড়া করে বললো-

—”আজ তোর বিয়ের দিনেও আমার সাথে এমন করবি!!”

—”নেকামো বাদ দিয়ে বল শুভ্র ভাই কোথায়”

মিমশি একটা সয়তানি হাসি দিয়ে বলল-

—”আগে বলবি না তুই শুভ্র ভাইয়া কে দেখতে চাস এখনই বরকে চোখে হা…..”

জ্ব্বলন্ত চোখে মিমশির দিকে তাকি ধমকে সুরে বললাম-

—”চুপ কর বেয়াদব মেয়ে বড্ড বেশি কথা বলিস তুই। যা জিজ্ঞেস করেছি সোজাসাপ্টা তার উত্তর দে।”

—”হুহ্… তোর বর তোর জন্য মার্কেট করতে গেছে।”

—”যা এবার গিয়ে বকবক করে অন্য কারও মাথা খা।”

মিমশি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল-

—”হুমম এখন তো তোর বর আছে আমি কি আর সুযোগ পাবো না-কি তোর মাথা খাওয়ার!!”

আমি কিছু বললাম না কারন এখন ওর কথায় কোনো প্রতিত্তোর করা মানেই এই মেয়েকে আজাইরা সব কথা বলতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। তাই চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলাম।

———————

সারাদিন এদের সবার ব্যস্ততা দেখেই কাটিয়ে দিলাম। শুভ্র ভাইয়ের সাথে কোনো কথা হয়নি এখনো উনিও খুব ব্যস্ত। একমাত্র আমাকে ছাড়া সবাই ব্যস্ত। আমিই ভূতের মতো এখানে ওখানে ঘুরেফিরে সময় কাটাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি না আমার কি করা উচিত। আজ বাদে কাল আমার বিয়ে এটা শুনে কেমন রিয়েক্ট করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।

শুভ্র ভাইয়ের সাথে বিয়ে আমার!! আচ্ছা আমার কি এখন কষ্টে কান্নাকাটি করা উচিত!! সারাজীবন ওনার ধমক শুনতে হবে, মুহূর্তে মুহূর্তে আমাকে লজ্জায় ফেলবে, কিছু করলেই আমাকে শাস্তি দিবে, বাঘের মতো হুংকার দিয়ে উঠবে, রাগে গর্জে উঠবে…… সারাজীবন ওনার সাথে থেকেই আমাকে এসব সহ্য করতে হবে। আমি পারবো তো এসব কিছু সহ্য করতে!! অবশ্যই পারবো কারন ওনার রাগ, ধমকানো, শাস্তি দেওয়া সব কিছুতেই ভালোবাসা থাকে। ভয়ংকর রকমের ভালোবাসা যা আর অন্য কারও কাছেই পাবো না। এই অদ্ভুত লোকটাই আমাকে আগলে রাখতে পারবে ভালোবাসা দিয়ে। আর এই অদ্ভুত চরিত্রের মানুষটাই আমার। ওনাকে চাই আমার খুব করেই চাই।

ছাদে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে নিচে এসে ড্রয়িংরুমে যেতে থমকে গেলাম আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আমাকে দেখে একটা অমায়িক হাসি দিয়ে বললেন-

—”কেমন আছো অনন্যা?”

ওনার কথা আমার কানে আসতেই বিস্ময় কাটিয়ে পরক্ষণেই খুশিতে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। এই মানুষটা আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। আচ্ছা প্রাক্তন বলতেই সব খারাপ হয়!! নাহ….এই মানুষটা খুব ভালো করে প্রমাণ করে দিয়েছে প্রাক্তন মানেই খারাপ, ধোকা বা ঘৃণা হয় না। আমার কাছে তো একদমই না। কারন এই মানুষটা শুধু সম্মান করা যায় ঘৃণা না।
আমি আহনাফের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম-

—”ভালো আছি আপনি কখন আসলেন? দেখলেন তো আমাকে কেউ কিছুই জানায় নি।”

আহনাফ আমার কথায় মুচকি হেসে বললেন-

—”আমাকে কাল রাতেই বলেছে তাই তাড়াতাড়ি টিকিট ম্যানেজ করে আজকেই চলে আসলাম। তোমার বিয়েতে না আসলে তো আমার ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে যাবে।”

পাশ থেকে একটা মেয়ে আমাদের কাছে এসে বলে উঠলো-

—শুধু কি আপনিই আপুর সাথে কথা বলবেন নাকি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিন।”

মেয়েটাকে দেখিয়ে আহনাফ বললেন-

—”ওর নাম অর্থি। আমার কাজিন এখান থেকে যাওয়ার কিছুদিন পরই আম্মু ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলে। এক মাস হলো আমাদের বিয়ের।”

আহনাফের কথা শুনে বিস্মিত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল। দেখতে খুব সুন্দর মিষ্টি একটা মেয়ে। তবে চেহারা তে চঞ্চলতার ভাব স্পষ্ট ফুটে আছে। মেয়েটা আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বললো-

—”তুমি নিশ্চয়ই আহনাফের প্রেয়সী তাই না!!”

অর্থির কথা শুনে আমি বিষম খেলাম। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে। অর্থি আবার বললো-

—”আরে তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?? আহনাফ আমাকে তোমার সব কথা বলেছে তাই অস্বস্তি ফিল করার কোনো দরকার নেই। তুমি আমাকে বোনের মতোই মনে করতে পারো।”

আহনাফ আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

—”তোমরা কথা বলো আমি শুভ্রর কাছে যাচ্ছি।”

এই কথা বলেই আহনাফ চলে গেল। আর আমি অর্থিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। মেয়েটা অল্পতেই মিশে যায় মানুষের সাথে। মেয়েটা বিছানায় বসে আমার হাত ধরে বললো-

—”জানো আপু আহনাফ বিয়ের আগেই আমাকে বলে দিয়েছে উনি তার প্রেয়সীর জায়গায় অন্য কাউকে দিবে না।ওনার এই কথা শুনে আমি কি বলেছি জানো??”

আমি ইতস্তত করে বললাম-

—”কি বলেছো?”

মেয়েটা বেশ গর্বের সাথে বললো-

—”আমি বলেছি “আপনার প্রেয়সীর জায়গায় তারই থাকবে আমি ওই জায়গা দখল করবো না তবে নতুন করে জায়গা তৈরী করবো আমার জন্য।” জানো আমি ওনাকে সেই ছোট্ট বেলা থেকেই পছন্দ করি তবে উনি আমাকে পাত্তাই দিতেন না। এবার একদম ডিরেক্ট বউ হয়ে গেলাম। ভালো হয়েছে না!!”

এই কথা বলেই মেয়েটা হেসে উঠলো। হাসিটা একদম মনকাড়ার মতো। আমিও হাসলাম তার সাথে। আমি জানি ওনারা দুজন খুব ভালো থাকবে। এই মেয়ে আহনাফের মনে ঠিক নিজের জায়গাটা করেই নিবে। আর আহনাফের উপর পুরো বিশ্বাস আছে উনি কখনো অর্থিকে কষ্ট দিবে না আমি জানি। আজ নিজের মনে এক শান্তি অনুভব করলাম। আহনাহ তার জন্য সঠিক একজন মানুষ পেয়েছে। মেয়েটা একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। মেয়েটার মন একদম পানির মতো স্বচ্ছ, নির্মল।

চলবে…..

(অনেকেই আহনাফের জন্য একজনকে চেয়েছিলেন এবার নিশ্চয়ই আপনারা খুশি হয়েছেন?? আগামী পর্বেই হয়তো গল্পটা শেষ করে দিব। আর হ্যাঁ আজকের পর্বটা বড় করে লিখেছি আপনাদের জন্য। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here