#মুহূর্তে
পর্ব-৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
তাহিরা ও কবিতা হাস্পাতালের রিসেপশনেই দেখা পায় শিল্পা আক্তারের। উনি তাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। তাহিরা ও কবিতাকে দেখে সে জিজ্ঞেস করে, “কেবল তোমরা দুইজন কেন? ধ্রুব কোথায়?”
“তারা ঘুমের জগতে হারিয়ে গেছে।” কবিতা ঘুমের কথা ভাবতেই আবার কান্নার ভাব নিয়ে বলে, “আহারে আমার ভালোবাসার ঘুম।”
শিল্পা আক্তার হাসে কবিতার কথার ধরন দেখে। তারপর মিষ্টি হেসে তাহিরাকে বলে, “তোর বোন দেখি ছবির থেকে সামনা-সামনি বেশি কিউট।”
“আহ আন্টি আপনার চয়েজ এক নাম্বার, নাহলে একটু আগে একটা লোকের সাথে দেখা হয়েছিলো। একদম অসভ্য। বাই দ্যা ওয়ে, আন্টি আপনার কেবিন খালি আছে? নাস্তা এনেছি আর আমার পেটে ইন্দুরেরা কুস্তি খেলছে।”
তাহিরা বলল, “আগে মিদুলের মা’কে দেখে আসতাম। উনি তো অসুস্থ।”
“উনি অসুস্থ তুমি এইটা দেখলা, তোমার বোন এখন না খেলে অসুস্থ হয়ে যাবে তা দেখলা না?”
“আচ্ছা ভাই তুই যেয়ে আন্টির কেবিনে বসে খাওয়া-দাওয়া কর আমি মিদুলকে নিয়ে ওর মা’য়ের সাথে দেখা করে আসি।”
শিল্পা আক্তার একটি নার্সকে ডেকে বলল, “কবিতাকে আমার রুমে নিয়ে যাও। আর যাওয়ার সময় ক্যান্টিন থেকে ওর জন্য ওয়ানটাইম প্লেন, কেক ও জুস দিও।”
.
.
নার্স কেবিন দেখিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। কবিতা তো ভীষণ খুশি। অবশেষে সে তার খাবার খেতে পারবে। সে দরজা ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে তার জুসের গ্লাসে একটা চুমুক দেয়। সে ভাবে অবশেষে সে আরামে বসে নাস্তা করবে।
“মে আই কান ইন ম্যাম?” একটি পুরুষের কন্ঠ।
কবিতা বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে যায় হাত খাবার নিয়েই। দরজার কাছে যেয়ে তা খোলার পূর্বেই কেউ একজন রুমে প্রবেশ করে। সে দরজার সামনেই থাকার কারণে কবিতার সাথে ধাক্কা খায় সে। সাথেই প্লেটে থাকা পরটা, ডাল, কেক ও গ্লাসের জুস সব যেয়ে পড়ে পুরুষটার উপর। কবিতা তো পারলে এইখানেই কান্না করে দেয় তার খাবারের জন্য। বকার জন্য কবিতা তাকায় তার সামনে দাঁড়ানো পুরুষটার দিকে।
লোকটা কবিতার দিকে তাকিয়েই বিরক্তিকর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করল। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত এবং ক্ষোভিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “কেন? কেন আমার পিছনে পড়ে আছ তুমি? আর তোমার আমার শার্টের সাথে কী দুশমনি আছে?”
“হ্যালো মিস্টার, আপনি আমার পিছনে পড়ে আছেন। যে সকাল থেকে জ্বালাচ্ছেন। একটু খেতাম তাও দিলেন না। জানেন কাল রাত দুইটার পর থেকে কিছু খাই নি আমি।”
“রাত দুইটার পর কেউ খায়ও না। ধ্যুর আমিও কোন মেন্টালের সাথে কথা বলছি।”
“এই’যে আমাকে দেখে আপনার মেন্টাল মনে হয়?”
“আপনাকে দেখে মনে হয় না, বাট কথা শুনে আমি কনফার্ম।”
“ফাইজলামি করবেন না কিন্তু।”
“ফাজলামি আমি করতেছি? আপনি করতেছেন। সকালে আমার একটা শার্ট নষ্ট করলেন। এক্সট্রা একটা শার্ট ছিলো গাড়িতে তা পরেছি তাও এখন নষ্ট করলেন।”
“আপনার শার্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ না আমার খাবার?”
“আমার শার্ট। কারণ এইটা পরে আমার সারাদিন কাজ করতে হতো। কিন্তু এইটা তো আমার মেন্টাল মাথায় ঢুকবে না।”
“আপনাকে…..”
দুইজনের ঝগড়ার মাঝখানে উপস্থিত হলো শিল্পা ও তাহিরা। শিল্পা দুইজনকে এভাবে ঝগড়া করতে দেখে বলল, “কি হচ্ছে এইখানে এটা হাস্পাতাল, কোনো মাছের বাজার না। নার্সের এসে আমাকে বলতে হলো তোমরা না’কি ঝগড়া করছ। এইটা ঝগড়ার জায়গা?” শিল্পা সে পুরুষটির দিকে তাকিয়ে বলে, “আর কথন তোমার থেকে আমি এমন ব্যবহার আশা করি নি।”
“ম্যাম এই মেয়ে আমার মাথা নষ্ট করে দিয়েছে। সকালে একবার একটা বাচ্চা আমার গাড়িতে বসিয়ে দিলো। যখন বললাম এইটা ডেঞ্জারাস তখন আমার উপর চড়তে শুরু করে। পানি ঢেলে আমার শার্ট ভেজায় আর এখন চেঞ্জ করে আসলাম দেখেন আবার কি করল। দেখেন আমার অবস্থা।”
“ওহ প্লিজ। আপনি যে আমাকে মেন্টাল বলেছেন তার কি?” কবিতাও জবাব দেয় কথনের কথার। শিল্পা বেগম বিরক্ত হয় প্রচুর, “দুইজনে চুপ। একদম চুপ। হাস্পাতালে কেউ এমনভাবে ঝাগড়া করে?”
তাহিরা কথনের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলল, “ক্ষমা করবেন, আমার বোন এখনো ছোট। পরিস্থিতি না বুঝেই কথা বলে।”
“আপু তুমি এই ছেলের সাইড….” তাহিরা কবিতার কথা কেটে বলে, “চুপ। আরেকটা কথা বললে সোজা বড় ভাইয়াকে কল করে সব জানাব।”
“ওই হিটলারকে কেন মাঝে আনছ তুমি?” কবিতা মুখ ফুলিয়ে বলে।
কথন একবার কবিতার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আবার তাহিরার দিকে তাকিয়ে বলে, “যদিও উনাকে দেখে কোনো এংগেল দিয়ে বাচ্চা মনে হয় না কিন্তু আপনি নমনীয়ভাবে বলছেন দেখে কথা বাড়ালাম না।”
কথন শিল্পার দিকে তাকিয়ে বলল, “ম্যাম আমি চেঞ্জ করে আসছি পেসেন্টের ফাইল নিয়ে।”
“ওকে।”
কথন যাওয়ার পূর্বে আবার তাহিরাকে বলল, “প্লিজ উনাকে মেন্টাল হাস্পাতালের দেখাবেন প্লিজ উনার মাথায় একটাও স্ক্রু নেই। আপনার প্রয়োজন হলে আমি আপনাকে নাম্বার দিতে পারি।”
কবিতা কথাটা শুনে রাগে কটমট করতে করতে বলে, “এইখান থেকে না গেলে আমি সামনের চেয়ার উঠিয়ে একদম মাথায় মারব।”
“এ-কারণেই বলছিলাম।”
শিল্পা চোখে ঘুরিয়ে তাকায় কথনের দিকে। কথন জোরপূর্বক হাসার ব্যার্থ চেষ্টা করে। তারপর সেখান থেকে দ্রুত চলে যায়।
তাহিরা কবিতার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়, “তুই কবে বড় হবি? তুই আসলি একদিনও হয় নি এইসব শুরু করেছিস। আমি তোকে সামলাব কি করে?”
কবিতা কথাটা শুনে মুখ ফুলিয়ে নিলো।
শিল্পা হেসে কবিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “অসুবিধা নেই বয়সের সাথে সাথে বুঝ এসে পড়বে। আর তুই ওকে সামলে নিতে পারবি। আমি জানি।”
“আহ আন্টি আপনি কত ভালো! আন্টি আমার ব্যবহারে রাগ করবেন না প্লিজ। আমার মেজাজ একটু জলদিই খারাপ হয়ে যায়। বংশগত সমস্যা। কিছু করার নেই।”
শিল্পা হাসলেন, “এর পরের থেকে খেয়াল রেখ। আর কথন কিন্তু অনেক ভালো ছেলে। এর আগে কখনো ওকে এমন ব্যবহার করতে দেখি নি।”
“উনি ডাক্তার?” তাহিরা প্রশ্ন করে।
“না ইন্টার্নশিপ করছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত একদিন অনেক ভালো ডাক্তার হবে। জিনিয়াস ছেলেটা।”
কবিতা বিড়বিড় করে বলল, “কচুর জিনিয়াস। উপরের বুদ্ধির জায়গায় গোবর ভরা, তাইতো আমাকে মেন্টাল বলছিলো। আমাকে!”
“বিড়বিড় করে কি বলছিস তুই?” তাহিরার প্রশ্ন শুনে হাসে কবিতা, “কোথায় কিছু না।”
শিল্পা বেগম বলে, “কবিতা তোমার জন্য আমি নাস্তা পার্সেল করাচ্ছি। গাড়িতে বসে খেয়ে নিও। ততক্ষণে পেসেন্টের সাথে দেখা করে নেও। আমি রিপোর্ট বুঝিয়ে দিয়ে তোমাদের সাথে চলে যাব। আমার শিফট শেষ।”
“ঠিকাছে আন্টি।”
কবিতা ও তাহিরা শিল্পা আক্তারের সাথে যায় মিদুলের মা’য়ের সাথে দেখা করতে। কেবিনে লামিয়া ছাড়া তার বড় বোন ও মা’ও উপস্থিত ছিলেন। আর ছিলো একটা নার্স। সেখানে যেয়ে দেখে মিদুল তার মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে। সারারাত সে তার মা’য়ের জন্য ঘুমায় নি। বাচ্চাটার ফর্সা চোখমুখ লাল হয়ে আছে। সম্ভবত মা’কে দেখে কান্না করতে করতেই তার কোলে ঘুমিয়ে গেছে।
লামিয়া তাহিরার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ধন্যবাদ তাহিরা। আমি উঠে যখন শুনলাম মিদুলকে পাওয়া যাচ্ছে না অনেক চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তারপর শিল্পা আন্টি জানায় ও তোমার কাছে।”
লামিয়া নরম কন্ঠে কথাগুলো বললেই কবিতার রাগ উঠে যায় তা শুনে। সে ভ্রু কুঁচকে রাগান্বিত স্বরে বলে, “মানে আপনার হুঁশ আসার পর আপনার ছেলের চিন্তা হয়েছে কিন্তু যখন মরতে যাচ্ছিলেন তখন একবারও এই কথা মাথায় আসে নি যে আপনি না থাকলে আপনার বাচ্চার কী হবে? যদি ও আসলে হারিয়ে যেত অথবা ওকে কেউ উঠিয়ে নিয়ে যেত। এসবও বাদ দিন যদি আপনি মারা যেতেন এই বাচ্চাকে কে সামলাত? আপনার জামাই যে নিজের বউ বাচ্চার চিন্তা না করে অন্য জায়গায় বিয়ে করে বেড়াচ্ছে? আপনার জামাই আপনার বিশ্বাস ভাঙতে পারলো তাহলে আপনি এইটা কীভাবে নিশ্চিত হন যে সে তার ছেলেকে ফেলে দিবে না?”
লামিয়াকে লজ্জিত দেখা যায়। সে চোখ নামিয়ে বলে, “তখন এতকিছু মাথায় আসে নি। কথাটা জানার পর মাথা ঠিক ছিলো না।”
কথন কেবিনে প্রবেশ করে। দরজার শব্দ শুনে কবিতা একবার তাদের দিকে তাকিয়ে আবার আড়াআড়ি ভাঁজ করে লামিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে আপনি বিষের বোতল সাধারণভাবে ঘরে কিনে রাখেন? না’কি অপেক্ষায় ছিলেন সত্যি জানবেন এবং বিষ খেয়ে চলে যাবেন?”
কথন কবিতাকে এমনভাবে কথা বলতে দেখে বলে, “দেখুন পেসেন্টের সাথে এভাবে কথা বলবেন না। উনি আগের থেকেই দুর্বল মেন্টালি প্রেসার দেওয়া উচিত না। আপনি কী ঝগড়া দিয়ে পেট ভরেন। আপনাকে যতবার দেখলাম ঝগড়াই করছেন।”
“দেখেন ভাই আপাতত উনার কথা শুনে আমার এমনিতেই মেজাজ গরম আছে। মাঝখানে কথা বলবেন না। আর উনার কষ্ট আছে উনার তিন বছরের বাচ্চাটার কষ্ট নেই। গতকাল থেকে নিজের মা’য়ের জন্য কান্না করছে কিন্তু তার মা নিজের বাচ্চার চিন্তা না করে স্বার্থপরের মতো নিজের জীবন দিতে চলে গেল।” কবিতা আবার লামিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে এইবার বলেন এইসবের মধ্যে আপনার বাচ্চার কি দোষ?”
তাহিরা কবিতার হাত ধরে বলল, “হয়েছে চুপ কর। বাহিরের মানুষদের সামনে উনাদের ফ্যামিলি মেটারে কথা বলিস না।”
“তো তোমার কি মনে হয় উনি সুসাইড করতে গিয়েছে ডাক্তার এটা বুঝে নি যে বড় কোনো সমস্যার জন্যই গিয়েছে। আর এইটা লুকিয়ে থাকবে কেন? উনার স্বামী যা করেছে তার শাস্তি পাওয়া উচিত না? আর আপু আত্নহত্যা যে মহাপাপ উনাকে এইটা জানে না?”
“এই মেয়ে তুমি কে এত কথা বলার? তোমাকে তো আগে দেখি নি।” লামিরার বড় বোনের খোঁটা মারা কথাটা শুনে কবিতাও একই সুরে উওর দিলো, “আমি সে যে উনার বাচ্চার সাথে সারাদিন ছিলাম আর আমিও না আপনাদের কাউকে ওর খোঁজ নিতে দেখি নি।”
কবিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে লামিয়াকে বলল,” আপু দেখেন আমি অন্যায় সহ্য করতে পারি না আমার মাথা ঘুরে যায়। বেয়াদবি করলে, আই এম সরি। আমি আপনার অনেক ছোট আমি বুঝতে পারছি আপনি ভুল করেছেন তাহলে আপনি কেন পারছেন না? হয়তো আপনি না থাকার পরে আপনার ছেলেকে সবাই না পারতে দেখবে কিন্তু আপনার মতো কি ভালোবাসতে পারবে?”
কবিতা রাগে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। যেয়ে করিডরের চেয়ারে বসে বিড়বিড় করে সবাইকে বকতে শুরু করল।
লামিয়াকে, কথনকে, লামিয়ার বোনকেও।
সবাই এমন ব্যবহার করছিলো যেন সে-ই ভুল। সবাই এমন মনে করে কেন?
কেবিনে থেকে কথন বের হয়ে তার পাশে বসে। একটি টিস্যু বের করে করে কবিতার সামনে দেয়।
কবিতা ভ্রু কুঁচকে তাকায় কথনের দিকে, “আমি ক্রাই বেবি না যে কথায় কথায় কাঁদব।”
“তোমার মুখটা টমাটোর মতো হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখনই কান্না করে দিবে।”
“এক্সকিউজ মি, আমার মুখ একদম টমাটোর মতো হয় নি।”
“তোমার কখনো হার্ট ব্রেক হয়েছে? মানে যাকে তুমি ভালোবাসো সে কষ্ট দিয়েছে তোমায়।”
“আমি আপনাকে কেন উওর দিব?”
“বললে জানবে।”
“আমার একটা হিটলার ভাই আছে ছেলেদের সাথে কথা বলতে দিতো না আর প্রেম করব।”
“তুমি ভেতরে যা বলেছ তা একদম ভুল নয় কিন্তু আরেকটা কথা কি জানো অন্যকে উপদেশ দেওয়া খুব সহজ কিন্তু সে পরিস্থিতি যখন নিজের উপর দিয়ে যায় তখন মানুষ বুঝতে পারে। আর সবাই তো একরকম হয় না। সবার সহ্য করার ক্ষমতাও একরকম না। অনেক সময় এমন পরিস্থিতি আসে যেখানে মানুষের ব্রেন কাজ করে না।”
কবিতা চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।
“কিন্তু তুমি এই কথা কীভাবে বুঝবে তোমার ব্রেন থাকলে তো।” কথন মিটিমিটি হেসে কথাটা বলে। কবিতা চোখদুটো বড় বড় করে তাকায় কথনের দিকে। এই দুই মিনিটে কথনকে নিয়ে তার আগের করা ধারণাটা পরিবর্তন হচ্ছিল কিন্তু এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে তার আগের ধারণাটাই সঠিক।
কবিতা সজোরে কথনের পায়ের পাতায় লাথি মারে।
“এই মেয়ে তুমি কি আসলে পাগল না’কি?”ব্যাথায় কথনের দম আটকে আসে।
কবিতা উঠে দাঁড়ায়। কঠিন গলায় বলে, ” আপনার জন্য, একদম।”
“রোমেন্টিক ওয়েতে বললে সরি, আমি তোমার মতো মেয়ের প্রতি একদম ইন্টারেস্টেড না।”
“ওহ প্লিজ আমি আপনাকে রোমেন্টিক ওয়েতে বলব? আমার মুখে কি কোথাও ষ্টুপিড লেখা আছে? পাগল হয়ে যদি আপনাকে মেরে মেরে তক্তা বানিয়ে নিজের রাগ মেটাতে পারি তাহলে আমি পাগল হতেও রাজি।”
কথনও উঠে দাঁড়ায়, “মন খারাপ দেখে তোমাকে কনসোল করতে এসেছিলাম, তোমার সাথে কথা বলাটাও একদম ইম্পসিবল।”
“কে বলেছে আপনাকে কথা বলতে?”
“ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না। মাফ করো। আর প্লিজ আমার সামনে আর এসো না।”
“যেন আপনার সামনে ঘুরে বেড়াতে মারিয়া হয়ে পড়েছি আমি। আপনাকে দেখারও আমার কোনো শখ নেই।” বলে কবিতা বিরক্তি নিয়ে হাঁটতে শুরু করে হাস্পাতালের বাহিরে যেয়ে দাঁড়াবে বলে। অনেক হয়েছে আজ, আর না।
কথনও হায়রান হয়ে বলল, “তাহলে দয়া করে আর দেখা দিও না, নাহলে এইবার সত্যি সত্যি আমিই পাগল হয়ে যাব।” বলে সেও চলে গেল।
#মুহূর্তে
পর্ব-৬
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
কবিতা বিরক্ত হয়ে বাসায় রিকশায় একাই যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। গলির সামনে কিছু শব্দ শুনতে পায় সে। কারও চিৎকারের শব্দ। কবিতা রিকশা থামায়। সে দেখে তিন চারজন মিলে একটা লোককে মারছে। কবিতা ভয় পেল ভীষণ। সে একবার সেদিকে যেতে চাইলেও থেমে গেল। একা একটা লোককে ফেলে যাবে সে?
কবিতা অবাক হয়ে বলল, “কী আজব ব্যাপার! এতগুলো লোক তাদের পাশ কাটিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অথচ কেউ তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না?”
রিকশাওয়ালা হাসে কবিতার কথা শুনে, “এলাকার পোলাপানগো লগে পাঙ্গা নিয়া ফাঁসবো না’ক্কি? এমনিতেই শুনছি এই এলাকায় না’কি অনেক গুন্ডামী হয়। আপা আপনি কী করবেন এ-সব দিয়া। আপনাকে বাসায় দিয়া আসি।”
“মামা এভাবে উনাকে একা ফেলে যাব?”
“আপা গেলে চলেন, নাইলে টাকা দিয়া নাইম্মা যান। আমারে এইসবে ফাঁসাইবেন না।”
“আজব তো একজন মানুষকে এভাবে মারা হচ্ছে আর আপনি এভাবে রেখে যাবেন? মনুষ্যত্ব বলতে কিছু আছে না’কি?”
“দেখেন আপা আমি গরীব মানুষ। নিজের পোলাপানগো পেট পাইলা মনুষ্যত্বের কথা ভাবা লাগে। আমি গেলে যদি আমার রিকশা ভাইঙ্গা দেয় মনুষ্যত্ব দিয়ে পেট ভরব আমগো?”
কবিতা টাকা দিয়ে রিকশা থেকে নেমে যায়। সে এগিয়ে যায় সেদিকে কিন্তু হঠাৎ ভয়ের অনুভূতি তাকে কাবু করে নিলো। কবিতা হাতে থাকা ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে। সাহস নিয়ে এগিয়ে যায় সেদিকে। একটুখানি এগোতেই সে দেখতে পায় ধ্রুব একটি বাইকে বসে চিপ্স খাচ্ছে। আর দেখে যাচ্ছে দৃশ্যটা।
কবিতা হতবাক। ধ্রুব কিছু না করে এভাবে বসে আছে কেন?
“ধ্রুব ভাইয়া…” কন্ঠ শুনে কবিতার দিকে তাকাল সেখানে উপস্থিত সকলে। কবিতা দেখতে পায় সেখানে তীর্থ ও লিমনও উপস্থিত। সে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “আপনারা এইখানে এইসব কী করছেন?”
“তুমি এইখানে কী করছ?” ধ্রুব অবাক হয়ে উল্টো কবিতাকে প্রশ্ন করে। কবিতা তার ফোন বের করে ঝাঁজালো গলায় বলে, “দাঁড়ান আমি এখনই তাহিরা আপুকে কল করে আপনার কান্ড বলছি। আপনার মা’ও আপুর সাথে।”
তীর্থ সেখানে এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে কবিতার হাত ধরে তাকে অন্যদিকে নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় ধ্রুবকে ইশারা করেও কিছু একটা বলল।
কবিতা আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করে, “কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?”
তীর্থ রুক্ষ গলায় জিজ্ঞেস করে, “তুমি এইখানে কী করছ?”
“আমার কথা বাদ দিন। আপনারা সবাই মিলে মানুষটাকে মারছিলেন কেন?”
“তোমাকে উওর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি না।”
কবিতা তীর্থের হাত ছাড়িয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়, “আমাকে উওর না দিলে আমি সুন্দরভাবে পুলিশের কাছে যেয়ে বলে দিব যে আপনারা রাস্তার মাঝখানে একজনকে অনেক বাজেভাবে মারছিলেন।”
“তোমার মনে হয় আমি তোমার হুমকিতে ভয় পেয়ে যাব?”
“আপনার ভয় পাওয়া উচিত। আমাকে দেখে ছোট মনে হলেও আমার এতটুকু সাহস আছে যে আমি পুলিশের কাছে যেয়ে সব সত্যি বলতে পারব। বাই দ্যা ওয়ে আমার বড় ভাইয়াও পুলিশ। ”
তীর্থ ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ কবিতার দিকে তাকিয়ে থেকে তার পাশ কাটিয়ে বেপরোয়াভাবে বলে বলল, “লোকটা মিদুলের বাবা। ধ্রুব উনাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলো এবং আমি অনেকদিন ধরে কাউকে মন মতো ধোলাই করি নি। তাই সুযোগ বুঝে কাজ সেরে নিলাম।”
তীর্থ একটি সিগারেট বের করে ঠোঁটের মাঝে রাখল। পকেট থেকে লাইটার বের করতে যাবে আর কবিতা তার সামনে এসে সিগারেটটা তার কাছ থেকে নিয়ে বলল, “লামিয়া আপুর হাসবেন্ড শাস্তি ডিজার্ভ করে বলে মাফ করলাম, যেহেতু আমার মনে হচ্ছে লামিয়ার আপুর পরিবার তাকে কোনো শাস্তি দিবে না। কিন্তু আপনি সিগারেট খেতে পারবেন না।”
“আর তুমি বলার কে আমি কি করতে পারব?” কঠিন গলায় উওর চাইলো তীর্থ।
কবিতা কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “আমি কেউ না কিন্তু আমি এখন আপনার পাশে আছি। সিগারেটের ধোঁয়ায় শুধু নিজের না, আশেপাশে যারা থাকে তাদেরও ক্ষতি হয়। আর আমার কাছে নিজের জীবন অনেক প্রিয়। আমার সিগারেটের গন্ধ অসহ্যকর লাগে। তাই আপনি সিগারেট খেতে পারবেন না।”
“আর কেন আছ তুমি আমার পাশে?”
“কারণ আপনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে এসেছেন।”
তীর্থ এই কথার আর উওর দেয় না।
কবিতা তার আশেপাশে লাফালাফি করতে করতে নিজের কথা বলতে থাকে, “আর আপনি এখন আমাকে তাহিরা আপুর বাসায় পৌঁছে দিচ্ছেন যেন আমি সেইফলি সেখানে পৌঁছাতে পারি। আর আপনি মাত্র মিথ্যা বললেন, লোকটা ভুল করেছে জেনেই আপনি রাগে তাকে মেরেছেন। আর যেহেতু আজ আপনি মিথ্যা বললেন সেহেতু গতকালও আপনি মিথ্যা বলেছেন। আমার হাই আই-কিউ বলছে আপনি ঐরকম টাইপের মানুষ যে অন্যকে সাহায্য করে মহান হওয়ার জন্য তা স্বীকার করতে চান না। কিন্তু এর মধ্যে আপনি একজায়গায় ভুল করলেন গতকাল আমার সামনে ঐ ছেলেটাকে মেরে এখন আবার বলছেন অনেকদিন ধরে কাউকে না মারার কারণে লোকটাকে ধোলাই দিলেন। আর গতকাল আপনি যেভাবে মিদুলের বাবার দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনে রাগ করলেন এর অর্থ আপনার এই বিষয়ে ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা আছে। সব কথা ঠিক বললাম না? আমার ডিটেকটিভ মাইন্ড দেখেছেন?”
কবিতা পিছন দিক দিয়ে হেঁটে তীর্থের সাথে মুখোমুখি হয়ে কথা বলার চেষ্টা করছিলো। পিছন থেকে একটি বাইক দ্রুত গতিতে এলো। তীর্থের তার দিকে নজর যেতেই সে কবিতার বাহু ধরে একটানে তাকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। একদম ছুঁয়ে গেল বাইকটা কবিতাকে। ভাগ্যিস সঠিক সময়ে তাকে বাঁচাতে পারলো।
কবিতা স্তব্ধ। এই মুহূর্তে সে তীর্থের বুকে। এই প্রথম কোনো ছেলের বুকে সে। এই প্রথম একটি পুরুষের ঘ্রাণ পায় সে। এই প্রথম কোনো পুরুষের এতটা কাছে আসে সে। তার হৃদয়ের স্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত। সে একটিবার চমকে তার পাশের বাইকের দিকে তাকিয়ে আবার তীর্থের দিকে তাকাল। তীর্থ তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ করেই কেঁপে উঠে কবিতা। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয় সে। সে মিইয়ে যায়। দ্রুত পিছিয়ে যায়। তার ফর্সা মুখখানা গোলাপি আভায় ঢেকে যায়। অস্বস্তির কারণে সে আর চোখ উঠিয়ে তাকায় না তীর্থের দিকে। চুপচাপ তীর্থের পাশে এসে হাঁটতে থাকে।
তীর্থ কবিতার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসে। এই মেয়েটা লজ্জা পেতেও জানে এই ধারণা তার ছিলো না। লজ্জা পেলে একটু বেশিই সুন্দর লাগে তাকে। কথাটা জানাতে ইচ্ছা হয় কবিতাকে কিন্তু তীর্থ তা জানায় না।
তাহিরার বাসার কাছাকাছি এসে পড়ে দুইজন। এতক্ষণ পর তীর্থ জিজ্ঞেস করে, “তোমরা না হাস্পাতালে গিয়েছিলে? তাহিরা কোথায়?”
কবিতা মৃদুস্বরে উওর দেয়, “আমি একা এসে পড়েছিলাম। আপুকে মেসেজে বলেছি।”
“গতকাল ঢাকায় এলে আর আজ একা এসে পড়েছ? মেয়েদের এত সাহস দেখাতে নেই।”
কথাটা শুনে কবিতা ভ্রু কুঁচকে তাকায়, “অন্যভাবে বলতে পারতেন। মেয়েদের কথা বললেন কেন? ঢাকায় এসে যেকেউ হারাতে পারে সে ছেলে হোক বা মেয়ে।”
“দেখ তুমি যে একটু আগে ঝামেলার স্থানে একা গিয়েছিলে অন্যকোনো ছেলে হলে খারাপ…. ”
কবিতা তীর্থের কথা কেটে কঠিন গলায় বলল, “আমি
ঢাকায় প্রথমবার আসি নি। ছোটবেলা আমার ঢাকাতেই কেটেছে। আর আপনার কথা শুনে আমার বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। আপনাদের ধারণা অনুযায়ী মেয়েদের ঘরের থেকে বের হতে নেই। বের হলেই খারাপ কিছু হবে।”
কবিতা বিরক্তি নিয়ে যেতে নিলেই তীর্থ দ্রুত তার হাত ধরে নেয়। সে বলতে চাইলো, “আমি এভাবে বলি নি। শুধু তোমার চিন্তা হচ্ছিলো।” কিন্তু সে বলল না। মুখে কঠিন ভাব নিয়ে কবিতার হাত ছেড়ে দিলো।
কবিতাও আর সেখানে দাঁড়ায় না নিজের বাসায় চলে যায়।
বাসায় যেয়ে বেশ ক্লান্ত ছিলো কবিতা। ঘুম আসছিলো, ক্ষুধাও লেগেছিলো। ফ্রিজ থেকে ব্রেড বাটার বের করেই খেয়েই রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর ঘুমে ছিলো সে। তার ঘুম ভাঙ্গে বিকেলে। ঘুম ঘুম চোখেই সে রান্নাঘরে যেয়ে দেখে তাহিরা রান্না করছে।
“আপু ক্ষুধা লেগেছে।” কবিতার কন্ঠ শুনে তাহিরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। ঝাঁজালো গলায় বলে, “এভাবে একা আসলি কেন তুই? জানিস কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার জান গলায় আটকে গিয়েছিলো।”
“মেসেজ দিয়েছিলাম তো তোমাকে।”
“তো বাসায় আসার পর ফোন করেছিলি? এত কল করলাম ধরলিও না।”
কবিতা বাচ্চাদের মতো মুখ করে ড্যাবড্যাব করে তাকায় তাহিরার দিকে। আর কান ধরে বলে, “সরি আপু। আর হবে না, প্রমিজ।”
“এর পর এমন কিছু হলে খবর আছে তোর। তখন কিউটনেস দেখিয়ে লাভ নেই।”
কবিতা একগাল হেসে তাহিরাকে এসে জড়িয়ে ধরে বলল, “ওকে মাই সুইট আপু।”
তাহিরা হাসে কবিতার কথায়, “তোর জন্য টেবিলে খাবার রেখেছি খেয়ে নেয় আর তোর পছন্দের পুডিংও বানাচ্ছি। রাতে খেতে পারবি।”
“রাতে কবিতাকে নিয়ে আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।” আবিরের কথা শুনে কবিতা পিছনে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায়?”
“কবির ভাইয়ার এক বন্ধুর বিয়েতে।”
“তো আমরা কেন যাব?”
“কবির ভাইয়া বলেছে তাই।”
“ধ্যুর এখানে এসেও শান্তি নেই।”
কবিতা মেজাজ গরম করে মেঝেতে লাথি মেরে সেখান থেকে চলে গেল। রুমে একবার ঢুকার পর আবার ফিরে এসে নিজের খাবারের প্লেট নিয়ে যায়।
.
.
রাতে বিয়েবাড়িতে যায় আবির ও কবিতা। মেজাজ খারাপ লাগছে কবিতার। একতো আবির তাকে জোর করে এখানে নিয়ে আসে, এর উপর তাকে ছেড়ে নিজে যেয়ে গল্প করছে বরের সাথে। কবিতার চোখ যায় জুসের স্টলের উপর। তার তৃষ্ণাও পেয়েছে ভীষণ। তাই সে স্টলের কাছে যেয়ে একটি জুস নিলো। জুস নিয়ে তার আগের দাঁড়ানো স্থানে যেতে নেয় সে। এমন সময় তার ফোনে একটা মেসেজ আসে। সে ফোন চেক করতে করতে হাঁটে। না দেখে হাঁটার কারণে ধাক্কা লাগে কারও সাথে। তার হাতের জুস পড়ে যায়। তার উপর এবং তার সাথে ধাক্কা লাগা মানুষটার উপরও।
“সরি আসলে আমি…..”কবিতা চোখ উঠিয়ে দেখতে পায় কথনকে। কথনকে দেখেই সে চুপ হয়ে যায়। কবিতা এবার উদাসীন ও ক্ষোভভরা কন্ঠে বলে, “আপনি আবারও? কেন? আপনি আমার পিছু নিচ্ছেন তাই না?”
কথন রাগে দাঁতে দাঁত চেপে রাগে কটমট করে কিছু মুহূর্ত। তারপর তার পাশে দাঁড়ানো একটি লোককে বলে, “দুলাভাই শুধু একবার বলো আমি হ্যালুসিনেশন করছি। প্লিজ বলো আমার সামনে কোনো মেয়ে দাঁড়িয়ে নেই। এর জন্য আমার ডাক্তার দেখাতে হলেও আমি রাজি। শুধু বলো আমার সামনে এমন কোনো মেয়ে দাঁড়িয়ে নেই যে একদম টমাটোর মতো দেখতে।”
“আমি আপনাকে সকালে বললাম না এইটা বলবেন না আমায়। আপনি নিজে কোনো রাজকুমারের মতো দেখতে না।”
কথন বেপরোয়া ভাবে হেসে তার মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলল, “ও হ্যালো স্কুল, কলেজ, মেডিকেল স্টাডির ক্ষেত্রে মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে পপুলার ছিলাম আমি। এখনো আছি।”
“সব মেয়েদের চোখে কি সমস্যা ছিলো?”
কথনের দুলাভাই ফিক করে হেসে দেয় কবিতার কথা শুনে। এইবার লাগে কথনের ইগোতে। সে চোখ রাঙিয়ে একবার তার দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমার পিছনে কয়জন ঘুরেছিলো শুনি। লেট মি গেস, একজনও না কারণ তোমার ভাই তোমাকে ছেলেদের আশেপাশে ঘুরতে দেয় নি।”
“দেখেন জ্বলায় লবণ, লাল মরিচ, সবুজ মরিচ, গুড়া মরিচে আর যত মরিচ আছে তা লাগাবেন না। একদম… একদম…একদম কিছু একটা করে ফেলব।”
“যা করার পরে করো আগে বলো তো তুমি কি আমার শার্ট পাঞ্জাবি নষ্ট করার কন্ট্রাক্ট কারও কাছ থেকে নিয়েছিলে? সকাল থেকে যতবার দেখা হয় আর শার্টের উপর এত জুলুম করো কেন তুমি?”
কথনের দুলাভাই এইবার জিজ্ঞেস করে, “তোরা একে অপরকে আগের থেকে চিনিস?”
“দুলাভাই সকালের এক সাইকোর কথা বলছিলাম না, এইটাই সে মেয়ে। মাথা নষ্ট করে রেখেছে সকাল থেকে।”
কথনের দুলাভাই একগাল হেসে বললেন, “আরে কত পার্ফেক্ট স্টোরি। নায়ক নায়িকার প্রথমে দেখা হয় তারপর খুনসুটি হয় তারপর ভালোবাসা হয়। তারপর বিয়ে হয়। অথবা বিয়ের পরেও ভালোবাসা হতে পারে। একদম পার্ফেক্ট লাভ স্টোরি।”
“অসম্ভব।” কবিতা ও কথন দুইজনে একত্রে কথাটি বলে একে অপরের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল। আবার বিরক্তিসহ চোখ ফিরিয়ে নিলো।
চলবে….
[