#মুহূর্তে
পর্ব-৭
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
“আরে কত পার্ফেক্ট স্টোরি। নায়ক নায়িকার প্রথমে দেখা হয় তারপর খুনসুটি হয় তারপর ভালোবাসা হয়। একদম পার্ফেক্ট লাভ স্টোরি।”
“অসম্ভব।” কবিতা ও কথন দুইজনে একত্রে কথাটি বলে একে অপরের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল। আবার বিরক্তিসহ চোখ ফিরিয়ে নিলো।
কথন তার দুলাভাইকে ঝাঁজালো গলায় জিজ্ঞেস করল, “আপনি এইসব কী আজেবাজে বলছেন। এইসব পাগল ছাগলদের মুখ লেগে লাভ নেই। আপনি যার সাথে দেখা করাতে এনেছিলেন তার সাথে দেখা করি চলেন।”
কথন তার দুলাভাইয়ের হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু তার দুলাভাই বললেন, “ওর সাথেই দেখা করাতে এনেছিলাম।”
কবিতা চোখ দুটো ছোট ছোট করে যাচাই করে লোকটাকে, “আপনি কী আমার চেনা?”
“আসলে তুমি আমাকে দেখ নি আমি দেখেছিলাম। সিদ্দিকের কাবিনে এসেছিলাম তখন।”
“সিদ্দিক কে?”
“যার বিয়েতে এসেছ সে।”
“ও” কবিতার হঠাৎ মনে পড়ে তার কবির ভাইয়ার কথা। কবির ভাইয়া যদি জানে সে এখানে এসে ঝামেলা করেছে তাহলে তাকে কালই নিয়ে যাবে। ভয়ে তার মুখের রঙ উড়ে যায়। সে জোরপূর্বক হেসে বিনয়ের সাথে কথনের দুলাভাইকে বলে, “সরি ভাইয়া আসলে আমি জানতাম না কবির ভাইয়া আপনার চেনা। প্লিজ উনাকে আজকের ব্যাপারে কিছু বলেন না। আমাকে সেই লেভেলের বাঁশ দিবে। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
কথন হাসে কবিতার হঠাৎ পরিবর্তন দেখে, “সিংহ এর বিড়াল হওয়ার গল্প চোখের সামনে দেখছি।”
“বিড়ালের মতো খামচি দিলে বুঝবেন।”
“দুলাভাই ওর ভাইকে কল দেন তো একটা। আমি কথা বলবো।”
“না, ওকদম উনাকে নাম্বার দিবেন না।”
কথনের দুলাভাই নির্বিকারে বলে দেয়, “তুমি আগেই ওর ভাইয়ের সাথে কথা বলেছ। ওই’যে আম্মুর তোমার জন্য একটা মেয়ে পছন্দ হয়েছিলো না মেয়ের বড় ভাই তোমার সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলল। মেয়েটা তো ও-ই।”
কথন ও কবিতা একে অপরের দিকে তাকাল অবিশ্বাস্য দৃষ্টি।
কথন আমতা-আমতা করে জিজ্ঞেস করে, “দুলাভাই তুমি মজা করছ তাই না? এই বিনা মগজের মেয়ের সাথে তোমরা আমার বিয়ের কথা চিন্তাও করতে পারো না। আর ওর ক্লাসজিনেসের ধারণা তোমার নাই। সকাল থেক আমার মাথা নষ্ট করে রাখছে।”
কবিতা মুখ বানায় কথনের কথাগুলো শুনে। কিন্তু এইবার সে মেজাজ গরম না করে বলে, “আমি নিজের দুর্নাম শুনে এত খুশি আর কখনো হই নি।”
কথন আড়চোখে তাকায় কবিতার দিকে। তার কথার পাত্তা না দিয়ে দুলাভাইকে আবার বলে, “দুলাভাই আপনে না ভালো। আমি এই মেয়ের সাথে কিছুতেই বিয়ে করব না।”
“এইটা তো আগে যখন এতগুলো মেয়েকে রিজেক্ট করসো তখন ভাবা উচিত ছিলো। এখন আম্মু আর তোমার কথা শুনবে না। আম্মুর ওকে অনেক পছন্দ হয়েছে। তোমার বোনদেরও। আমি এই নিয়ে কিছু বললে তোমার বোন যে ডেঞ্জারাস আমাকে কোরবানি করে দিবে। নিজে সামলাও তাদের। ওই’যে তোমার মা বোন আসছে।”
কবিতা দেখলো আবিরের সাথে একটি মহিলা তাদের দিকে আসছে। নিশ্চয়ই কথনের মা। তার সাথে কবিতার কথাও হয়েছে আগে। ভেবেছিলো কথনের মা ও বোন আসলে ভালোভাবে কথা বলবে না তাহলেই হয়তো বিয়েটা ক্যান্সেল হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তাও সম্ভব না।
কবিতা এখন বুঝতে পারছে তাকে এতটা জোর করে কেন আনা হলো এইখানে। যদিও কবির ভাইয়া বলেছিলো ঢাকায় তার বিয়ের জন্য ছেলে দেখেছে তবুও এত জলদি সব করবে বলে সে স্বপ্নেও ভাবে নি কবিতা। আজ বাসায় যেয়ে আবির ভাইয়ার খবর করবে সে।
কথনের মা এসে কবিতার সামনে দাঁড়িয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছো মামনী? মাশাল্লাহ তুমি দেখি আগের থেকে সুন্দর হয়ে গেছ। তবে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। নিজের খেয়াল রাখছ না?”
কবিতার মন সেখানেই গলে যায়। আগেও একবার কবির ভাইয়ার সাথে তার বন্ধুর বিয়েতে দেখা হয়েছিলো এই ভদ্রমহিলার সাথে। তখনও অনেক মিষ্টিভাবে ও নরমসুরে কথা বলেছিলেন এই ভদ্রমহিলাটা। তাকে আদরও করেছিলেন। এমনকি সবার সাথেই অনেক বিনয়ের সাথে কথা বলছিলেন তিনি। কবিতা পরেরদিন দুষ্টুমি করে নিজের বান্ধবীকে বলেছিলো, ‘দোস্ত অনেক ভালো আন্টিটা। খোঁজ নিস তো তার কোনো ছেলে আছে না’কি? লাগলে ছেলেকে উঠায় নিয়ে এসে বিয়ে করে ফেলব। এত ভালো শাশুড়ী পাইলে একদম লটারি লেগে যাইব বুঝলি। যেহেতু মা এত ভালো সেহেতু ছেলেও অনেক ভালা হইব।’
কবিতা আড়চোখে তাকাল কথনের দিকে। বিড়বিড় করে বলল, “ভালো মাই ফুট! এত ভালো মা’য়ের এমন অভদ্র ছেলে হয় কীভাবে?”
কথনের মা জিজ্ঞেস করে, “কোথায় হারিয়ে গেলে মামনী?”
“না আন্টি কোথাও না। আমি ভালো আছি, আপনার কী খবর?”
উওর দেবার আগেই কথন তার মা’য়ের হাত ধরে তাকে একপাশে নিয়ে গেল। তারপর কিছু বলল বেশ বিরক্তির ভঙ্গিতে। কবিতা কথাগুলো না শুনলেও সে বুঝতে পারছে
আজ সকালের কথাগুলো আবারও তার মা’কে শুনাচ্ছে কথন।
কবিতা বিরক্তি নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আবির তাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “তুই আবার কী করেছিস রে?”
“বাসায় যেয়ে তোমার কাকের বাসার মতো চুলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার পর বলব। ঠিকাছে?”
“তোর হঠাৎ কী হলো?”
“এইখানে যে আমাকে জোর করে বিয়ের জন্য দেখা করাতে নিয়ে এসেছ তা জেনে গেছি আর আমি বাসায় যেয়ে তোমার গার্লফ্রেন্ডকে এইটা জানাব যে তুমি কত ভিতু। বড় ভাইয়ের সাথে টু শব্দও করতে পারো না। আর বড় ভাইয়াকে বলবো তোমার গার্লফ্রেন্ডের কথা।”
“পাগল হয়ে গেছিস না’কি?”
“দেখ ভাইয়া আমাদের কি ডিল ছিলো যে তুমি আমাকে ভাইয়ার অত্যাচার থেকে বাঁচাবে আর আমি তোমাকে। তুমি তোমার পক্ষ থেকে ডিল ভাঙছ। আমি তো এত ভালো না যে চুপচাপ বসে থাকব। এছাড়া আমি শান্তি পাব না।”
“তুই… তুই এমন কিছু করতে পারবি না।”
“চ্যালেঞ্জ করছ? তুমি জানো না ভাইয়া আমাকে চ্যালেঞ্জ করা ডেঞ্জারাস।”
“এইজন্যই তোকে বিয়ের কথা এখন জানাই নি। তোকে এই বিয়ের কথা আবার কোন ছাগলে জানাল?”
কবিতা আঙুল দিয়ে ইশারা দিলো কথনের দুলাভাইয়ের দিকে। আবির তার দিকে তাকিয়ে নড়ে চড়ে দাঁড়াল। আমতা-আমতা করে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছেন ভাই? আপনাকে আজ অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।”
কথনের দুলাভাই মুখ বানিয়ে বলল, “আমি আপনার কথা শুনেছি। আর ওদের ঝগড়া দেখে ভুলে বলে ফেলেছি।”
জোরপূর্বক হাসে আবির। কথাটা মুখ থেকে বের করেও আফসোস হচ্ছে তার।
কথনের মা ফিরে এসে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে কবিতার সাথে। অনেক আদর করে তাকে। কথনের দুই বোনের সাথেও কথা হয় কবিতার। কথনের বড় বোনটা একটু শক্ত কিন্তু ভালো। আর ছোট বোন একদম কথনের মা’য়ের মতো মিষ্টি। কবিতা ভাবছে এই কথন নামক ছেলেটাই এমন কীভাবে হলো?
ভাবতে ভাবতেই কথনের দিকে চোখ যায় তার। এমন মুহূর্তে কথনও তার দিকে তাকাল। দুইজনের চোখেমুখে বিরক্তি। বিরক্তি নিয়েই দুইজনে চোখ ফিরিয়ে নিলো। সে রাতে সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান তারা দুইজন বিরক্তি নিয়েই কাটাল।
.
.
তাহিরা রান্না করছিলো। কলিংবেলের শব্দ শুনে সে চুলা বন্ধ করে যেয়ে দরজা খুলে। ধ্রুবকে দেখে বলে, “দাদী বাসায় নেই।”
“তো?” ধ্রুব নির্বিকারে ঢুকে যায় বাসার মধ্যে। তাহির অশান্ত হয়ে দ্রুত দরজা লাগিয়ে ধ্রুবর পিছনে যেয়ে বলে, “তোকে কতবার মানা করলাম এভাবে হঠাৎ করে তুই বাসায় ঢুকে যেতে পারিস না। মানুষ দেখলে কি বলবে?”
“তাদের মুখ, তারা যা বলার বলুক আমার কী?”
“দেখ তোকে নিয়ে কথা হলেও তোর কিছু আসবে যাবে না। কিন্তু আমি মেয়ে, আমার নামে বদনাম উঠবে।”
ধ্রুব সোফায় বসে ছিলো আর তাহিরা দাঁড়িয়ে ছিলো তার ঠিক সামনে। ধ্রুব তাহিরার হাত ধরে একটানে তাকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। আর দুষ্টুমি করে বলল, “চল এক কাজ করি, বিয়ে করে ফেলি। তারপর বাসায় এলে, তোর কোলে মাথা রাখলে অথবা তোকে জড়িয়ে ধরলেও কেউ কিছু বলতে পারবে না।”
তাহিরা এক মুহূর্তের জন্য চমকে উঠে ধ্রুবর কথা শুনে। পরের মুহূর্তে সে বুঝতে পারলো ধ্রুব রসিকতা করছে। তাই সে ধাক্কা দিয়ে ধ্রুবকে কাছ থেকে সরিয়ে দেয়, “ফাজলামো না ধ্রুব। এইসব ফাজলামো করার বিষয় না।”
“আমি সিরিয়াস। তোর বোন গতকাল বলল তুই না’কি সর্বগুণেগুণান্বিত। তোকে যে বিয়ে করবে তার ভাগ্য খুলে যাবে তাহলে আমি অন্যকাওকে চান্স কেন দিব?” বলেই শব্দ করে হাসে ধ্রুব। তাহিরা বরাবরই বিরক্ত ধ্রুবর ব্যবহারে। সে খোঁটা মেরে বলল, “আমার সাথে বিয়ে করলে তোর ওই হাজারো প্রেমিকার কী হবে?”
“ওরাও থাকবে।”
“আমি এমন একটি মানুষকে বিয়ে করব যে কেবল আমাকে ভালোবাসবে। আর যার মনে শুধু আমিই থাকব কিন্তু তোর মনে এত মেয়ে ভরে আছে আমার জন্য কোনো জায়গাও খালি হবে না।”
তাহিরা রাগে কটমট করতে করতেই রান্নাঘরের দিকে রওনা দেয়। তারপর আটার ডিব্বা বের করে রুটি বানানোর জন্য। হঠাৎ তার পিছনে কারও আসার আভাস পায়। নিশ্চয়ই ধ্রুব হবে। কিন্তু তার ধ্রুবর সাথে কথা বলার জন্য মোটেও রুচি হলো না।
ধ্রুব এসে তাহিরার পিছনে দাঁড়ায়। পিছন আলতো করে জড়িয়ে ধরে তাহিরাকে। তার হাত দুটো তাহিরার পেটে আবদ্ধ করে এবং তাহিরার পিঠ ঠেকায় নিজের বুকেতে। তাহিরার কাঁধে মাথা রেখে নরম গলায় বলে, “তুই এত ছোট এত রাগ করিস কেন বল তো।”
তাহিরা কেঁপে উঠে ধ্রুবর স্পর্শে। স্তব্ধ হয়ে গেল সে। আজকে ধ্রুব প্রথম তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলো। বাহিরে থেকে যতটা স্থির ভেতর থেকে ততটাই অশান্ত হয়ে আছে তাহিরা। ধ্রুবর নিশ্বাসের উষ্ণতা তার কাঁধে ছুঁতেই কেঁপে উঠে সে। কাঁপানো গলায় সে বলল, “দূরে সরে কথা বল।”
“কেন?”
“আমি বলেছিলাম না দূরে থাকতে। তুই দিনদিন আমার কথা অমান্য করতে মজা পাস তাই না? তোকে আমি আমার হাত ধরতে মানা করেছি আর তুই আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছিস? আমার স্বামী ছাড়া অন্যকোনো পুরুষের অধিকার নেই আমাকে এভাবে ছোঁয়ার। ছাড় আমাকে।”
“কিন্তু তোকে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না যে। নড়াচড়া না করে একটু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক। তোর চুলের ঘ্রাণটা অনেক সুন্দর। তোর ঘ্রাণও। কেমন মিষ্টি সুবাস।”
ধ্রুব আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাহিরাকে। তাহিরার চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে পারে। ধ্রুবর নাকের, ঠোঁটের ছোঁয়া এসে লাগছে তাহিরার গলায়। তার স্পর্শে কুঁকড়ে উঠে সে। তার ভেতরটা মুচড়ে উঠে। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে। এক অজানা অনুভূতি এসে তাকে কাবু করে। অশান্ত হয়ে উঠে সে।
#মুহূর্তে
পর্ব-৮
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
ধ্রুব আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাহিরাকে। তাহিরার চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে। ধ্রুবর নাকের, ঠোঁটের ছোঁয়া এসে লাগছে তাহিরার গলায়। কুঁকড়ে উঠে সে। চেপে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। নিজেকে জামাটা শক্ত করে চেপে ধরে। তার বুকের ভেতরের ধুকপুকানি বাড়ে। ঘন হয় তার নিশ্বাস। এই নিরবতার মুহূর্তে ধ্রুবর ছোঁয়া তাকে মাতোয়ারা করে তুলে।
তবুও বহু কষ্টে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে সে। পিছনে ফিরে ধ্রুবকে সরিয়ে বলে, “তোর সমস্যা কী? আমি তোকে এতবার বলছি কাছে আসতে না, কথাটা তোর মাথায় ঢুকে না?”
ধ্রুব আবারও এসে তাহিরার হাত ধরে নিলো, “তুই কখনো আমাকে ছেড়ে যাবি না প্রমিজ কর। ওই তোর আবির ভাই যেখানে তোর বিয়ের কথা চালাচ্ছে সেখানে বিয়ে করবি না তুই প্লিজ। তুই অন্যকাউকে বিয়ে করলে তার খুন করে ফেলব আমি। তুই অন্যকাওকে বিয়ে করতে পারবি না। তোর আবির ভাই গতকালের থেকে কানের নিচে ঘ্যানঘ্যান করতেছে। বিশ্বাস কর, আমার রাগ নিজের কন্ট্রোলের বাহিরে গেলে তার অস্তিত্ব খুঁজেও পাবি না আর। আর তোকে কে বলেছে তুই অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারবি? আমি তোকে কোথাও যেতে দিব না। কোথাও না। তুই শুধু আমার কাছে থাকবি বুঝলি?” ধ্রুবর নরম স্বর হঠাৎ রাগী হয়ে আসে।
তাহিরা কি করবে এই ছেলের সাথে সে বুঝতে পারে না। না এই ছেলেটা তাকে আপন করে নেয় আর না দূরে যেতে দেয়। ধ্রুব সবার সাথে হাসি মজা করে দিন কাটায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মেয়েদের সাথে তার অহেতুক ফ্লাটিং, নিজের মা ও তার দাদীকে হাসানোর মাঝেই তার দিন কাটে। কিন্তু তাহিরার কাছে সে অন্যরকম। তার মাঝেই ধ্রুবর সকল আবদার। তার সকল চোখের জলও তাহিরার কোলে মাথা রেখেই ভেসেছে। এই পৃথিবী তাকে হাসতে দেখলেও তার কান্নাটা কেবল তাহিরার পৃথিবীটুকু জুড়ে। তাহিরা জানে ধ্রুবর কাছে সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ধ্রুবর অজানা অনুভূতি তাকে কতটা কষ্ট দেয় তা ধ্রুবর জানা নেই।
তাহিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি অন্যকাওকে বিয়ে করলে তোর কি? তুই যে দিনে পাঁচ ছয়টা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াস তাদের থাকতে তোর একা তো ফিল হবে না। আর আমার উপর তোর কোনো অধিকার নেই। আমি যাকে ইচ্ছা তাকে বিয়ে করব।”
ধ্রুব শক্ত করে তাহিরার বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে টান দেয়। তার চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। তাহিরা ধ্রুবর দৃষ্টি দেখেই ভয়ে ঢোক গিলল। যেহেতু ধ্রুব বেপরোয়া ছেলে। হাসি মজাতেই তার দিন কাটে। তাকে রাগে খুব কম দেখা যায়। খুব বড় বিষয় ছাড়া সে রাগ হয় না। তাহিরা তা ভালোমতো জানে। কিন্তু আজ ধ্রুবকে শান্ত করার কোনো ইচ্ছা নেই তার।
ধ্রুব তাহিরাকে খুব কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করে , “তোর উপর আমার অধিকার না থাকলে কার আছে শুনি?”
“কী অধিকার আছে তোর আমার উপর?”
“আমি তোর ফ্রেন্ড। বেস্ট ফ্রেন্ড।”
“তো ফ্রেন্ডের মতো থাক না, প্রেমিকের মতো অধিকার জমাতে চাচ্ছিস কেন? আমার বিয়ে হলে কি আমরা আর দেখা করতে পারব না? আগের মতো দেখা হবে, কথা হবে, সব আগের মতো থাকবে। তাহলে তোর সমস্যা কোথায়?”
“অন্যকোনো পুরুষ তোকে ছোঁবে। আজ পর্যন্ত কোনো ছেলেকে তোর আশেপাশে আসতে দেই নি সেখানে অন্যকেউ কীভাবে তোকে ছুঁতে পারে?”
“আজব তো, তখন সে আমার স্বামী হবে। পরপুরুষ তো নয়। আমার দেহ, মন সবকিছুর উপর তার অধিকার থাকবে। এতে সমস্যা কোথায়?” শান্ত গলাতেই উওর দিলো তাহিরা। ধ্রুবর দৃষ্টি আগের মতো জ্বলন্ত। কিন্তু তার গলা কাঁপানো, “অন্যপুরুষ তোকে ছুঁলে বা ভালোবাসলে তোর সমস্যা হবে না?”
“আমার কেন সমস্যা হবে?”
ধ্রুব মুহূর্তে তাকে রাখা সব থালাবাসনই ছুঁড়ে মেঝেতে ফেলে দেয় আর আর্তনাদ করে উঠে, “তোর সাহস কি করে হয় এই কথা বলার?”
তাহিরা কেঁপে উঠে ধ্রুব উচ্চস্বর শুনে। সে কি ভুল কিছু বলে ফেললো।
মুহূর্ত না গড়াতেই সে তাহিরাকে নিজের বাহুডোরে শক্ত করে আবদ্ধ করে তার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়।
তাহিরা হতবাক। সে বুঝতেও পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে? ধ্রুব এমন কিছু করতে পারে সে কল্পনাও করতে পারে নি। ধ্রুব রুক্ষ ভাবে চুমু খাচ্ছে তাকে। অন্যদিকে সে এত শক্ত করে তাকে ধরে রেখেছে যে কোমরেও ব্যাথা লাগছে তার। সে ধ্রুবকে হাত দিয়ে ঠেলে সরাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
ধ্রুবর রুক্ষতা কমে আসে। সে একবার মুখ তুলে তাহিরার দিকে তাকায়। তাহিরার মুখ লালচে হয়ে আছে, তার নিশ্বাস গভীর, তার চোখদুটোও আজ অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে তার চোখদুটোয় একধরনের নেশা ভর করেছে। একটু আগে রাগের বশে তাহিরাকে চুমু খেলেও এই মুহূর্তে তার মুখখানি দেখে ধ্রুব মাতোয়ারা হয়ে উঠে। তাহিরা যখন চোখ নামিয়ে তাকে আলতো করে ঠেলে দূরে সরাতে চায় তখন সে আবারও তাহিরাকে কাছে টেনে নেয়। তার গালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে আলতো করে চুমু খায় তার ঠোঁটে। সে কেন এমন করছে নিজেও বুঝতে পারছে না। তাহিরার সাথে এমনটা করার কথা সে কল্পনাও করে নি। সে তো কেবল চেয়েছিলো তাহিরাকে সবসময় সে অন্যের খারাপ নজর থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। তার তাহিরা সবসময় পবিত্র থাকবে অথচ আজ নিজেই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আজ তাহিরার এত কাছে এসে সে ইচ্ছা করেও নিজেকে সামলাতে পারছে না।
তাহিরা প্রথমে ধ্রুবকে সরাতে চাইলেও কিছুক্ষণ পর সে থেমে যায়। একটু পর সে চেপে ধরে ধ্রুবর শার্ট। চোখ বন্ধ করে ধ্রুবর স্পর্শ অনুভব করতে শুরু করে। শার্ট ছেড়ে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ধ্রুবর গলা।
ধ্রুব একই অবস্থায় তাহিরাকে কোলে তুলে রান্নাঘরের তাকে বসায়। তাহিরাকে ঠোঁটজোড়া ছেড়ে তার দুইগালে হাত রেখে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, “তোর উপর কোনো অধিকার না থাকলে দূরে সরালি না কেন?”
“স..সরিয়েছিলাম তো। তুই সরতে চাস নি।” তাহিরা চোখ দুটো নিচে নামিয়ে উওর দেয়।
ধ্রুব এইবার তাহিরার গলায় ডুব দেয়। চুমু খেতে শুরু করে তার গলায় ও কাঁধে। কেঁপে উঠে সে। অশান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, “কেন করছিস এইসব?”
প্রশ্ন শুনে তাকায় ধ্রুব তাহিরার দিকে, “জানি না। তবে অন্যকেউ তোকে ছোঁবে অথবা ভালোবাসতে পারবে ভেবেই আমার মাথা ঠিক ছিলো না। আমি শুধু তোকে নিজের করে রাখতে চাইছিলাম তা যেভাবেই হোক। আমার মনে হচ্ছিলো আমি ছাড়া অন্যকেউ তোকে ছুঁতে পারবে না, তোর কোলে মাথা রাখতে পারবে না, তোর হাত থেকে খেতে পারবে না, তোকে ভালোবাস…..” এতটুকু বলে থেমে যায় ধ্রুব। শেষের বাক্যটা বলতে নিয়ে নিজেই থমকে যায়। আবার তাহিরার গালে হাত দিয়ে গালে আঙুল বুলিয়ে বলে, “আমি চাই তোর উপর কেবল আমার অধিকার হোক। আর কারও অধিকার হয়ে পারবে না। তুই অন্যকারো হতে পারবি না।” আবারও সে চোখ বন্ধ করে তাহিরার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খায়। সাথে সাথে কেঁপে উঠে তাহিরা। হঠাৎ তার চোখদুটোয় জল ভরে আসে।
হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠে। তাহিরার বুক কেঁপে উঠে কলিংবেলের শব্দটা শুনে। সে ব্যস্ত হয়ে হয়ে বলে, “নিশ্চিত দাদী এসেছে। তুই আমার রুমে যা, দাদী তার রুমে গেলে আমি দরজা খুলব আর তুই বের হয়ে যাবি।”
এমন নয় যে ধ্রুব আগে তার বাসায় আসে নি। প্রায় প্রতিদিনই ধ্রুবর তার বাসায় আসা যাওয়া। ধ্রুবর মা এবং দাদী তাদের বিয়েও ঠিক করে রেখেছে। তবুও আজ কেন যেন ভয় লাগছে তাহিরার। লুকোচুরি লুকোচুরি ভাব। এই ভয়ের অনুভূতিটাও তার কাছে ভালো লাগছে।
তাহিরা দ্রুত নেমে দরজা খুলতে যেতে নিলেই ধ্রুব আবার তাকে ধরে নেয়। তার গভীর উষ্ণ নিশ্বাসের স্পর্শ তাহিরার মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে। সে কিছু মুহূর্ত গভীর দৃষ্টিতে তাহিরার দিকে তাকিয়ে থেকে তাকে ছেড়ে দেয়।
.
.
একদিন পর, কবিতা তার বেস্ট ফ্রেন্ড অনুর সাথে ভার্সিটিতে যাচ্ছে। আজ তাদের ভার্সিটির প্রথম দিন। অনু কবিতার ছোট বেলার বান্ধবী। যখন কবিতা ঢাকায় ছিলো তখন সারাক্ষণ দুইজন একসাথে থাকতো। কুমিল্লা শিফট হবার পরও দুইজনের বন্ধুত্বে প্রভাব পড়ে না। কবিতার ঢাকায় আসার অন্যতম কারণ হলো অনু।
ভার্সিটির রাস্তায় অনেক কথা হয় দুইজনের মাঝে। বেশিরভাগই তীর্থ, ধ্রুব এবং কথনকে নিয়ে। এই কয়দিনের সব খুঁটিনাটি কবিতা অনুকে জানায়।
অনু বলল, “তুই কথন নামক ছেলেটার নামে গতকাল থেকে দুর্নাম করেই যাচ্ছিস। আরে ভাই রাগ হবার আগে ছেলের সাথে কথা বলে দেখ। তুই দুই ভাইয়ের আদরের বোন। তারা কি তোকে খারাপ কারও কাছে দিবে? তাহিরা আপু বলল তোকে তাদের সাথে দেখা করানোর আগে ভাইয়া নিজে যেয়ে ওই ছেলের এলাকায় খোঁজ নিয়েছে। প্রশংসা ছাড়া কিছু শুনে নি সে। একটা খারাপ কথাও না।”
“বাহ এখন তুইও তাদের সাইড নিচ্ছিস। লেডি মীরজাফর।”
“দেখ তুই জানিস আমি পরিষ্কারভাবে সব কথা বলি। ছেলের ফ্যামিলি ভালো, ছেলে ভালো, ছেলের ফিউচারও উজ্জ্বল আছে। তাহলে অকারণে একদিনের ঝগড়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া তো অনুচিত। ছেলের সাথে একদিন শান্ত ভাবে কথা বলে দেখ।”
“আজকে ভার্সিটি শেষে যাব তার সাথে ক্যাফেতে দেখা করতে। দেখি কি হয়।”
ভার্সিটির ভেতরে ঢুকে কথা বলছিলো দুইজন। তাদের রুম নাম্বার জিজ্ঞেস করে উপরে যাওয়ার সময় সিঁড়ির কাছে বসে থাকা কয়টা ছেলে তাদের ডাকল। দুইজনে পাত্তা না দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে চাইলে একটা ছেলে এসে বলে, “এই’যে নিউ স্টুডেন্ট না?”
“হ্যাঁ, কেন?”
“তোমার সিনিয়ররা ডাকছে শোনো না? অকারণে ঝামেলা করতে না চাইলে আমার সাথে আসো।”
কবিতা একটা বকা দিয়ে এইখান থেকে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সে দেখলো তীর্থ ছেলেগুলোর মাঝে বসা। কবিতা অনুর হাত ধরে বলে, “চল তো যেয়ে দেখি কি হইতেছে।”
“দরকার কি? আমিও দেখি এরা কি ঝামেলা করতে পারে।”
“উফফ আয় তো, মজা কাহিনী দেখাব তোকে।”
কবিতা ও অনু সেদিকে যেয়ে দেখে আগের থেকে কয়েকজন একপাশে কান ধরে উঠবস করছে। আবার কয়েকজন একটানা লিখেই যাচ্ছে। আর একপাশে বেঞ্চের উপর বসে আসে চারটি ছেলে। তারা সবাই সিগারেট খেতে ব্যস্ত। তাদের দেখেই বখাটে লাগছে। এর মধ্যে একজন তীর্থও। এর মাঝে একটি ছেলে বলল, “তখন ডেকেছিলাম কানে শুনো না?”
আরেকটা ছেলে বলে, “ভাই মাইয়া দুইটা সুন্দরী তো এইজন্য ভাউ খাইতে চাইছিলো। ভয় পাইয়া আইসা পড়সে।”
“মেয়ে দেখেই মাফ করলাম কিন্তু নতুন এডমিশন নেওয়া কিছু নিয়ম পূরণ করতে হয়। এইটা আমাদের রীতি। যেহেতু তোমরা মেয়ে সেহেতু তোমাদের একটা সহজ কাজ দেই। কী বলে তীর্থ ভাই?”
তীর্থ তার ফোনে ব্যস্ত। সে রুক্ষ গলায় উওর দিলো, “যা করার কর, আমাকে ডিস্টার্ব করিস না।”
কবিতা হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে তীর্থের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। অনু বলল, “এইটাকে রীতি না র্যাগিং বলে। টিচারদের বললে র্যাগিং এর মজা বের হয়ে যাবে। কবিতা চল তো এইখান থেমে। যত্তসব ফালতু ছেলে।”
কবিতার নাম শুনতেই চমকে মুখ তুলে তাকায় তীর্থ। কবিতাকে দেখে হড়বড়িয়ে নিজের সিগারেট ফেলে দেয়। কবিতা তীর্থের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “র্যাগিং কবে থেকে রীতি হয়ে গেল? আপনি জানেন অনেক দেশে র্যাগিং আইনগত অপরাধ।”
এরই মধ্যে তীর্থর এক সাথী বলল, “এই মাইয়া তোর মুখ বেশি চলে তাই…..” কবিতার সাথে এমনভাবে কথা বলতে শুনে তীর্থ রাগী দৃষ্টিতে তাকায় ছেলেটার দিকে। তীর্থের অগ্নিদৃষ্টি দেখে সাথে সাথে সে চুপ করে যায় ছেলেটা। চুপসে গিয়ে বলে, “ভাই আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিলো…. সরি ভাই।”
তীর্থ আবার নরম দৃষ্টিতে তাকায় কবিতা দিকে। বলে, তোমরা যেতে পারো। আমি ওদেরও যেতে দিচ্ছি।”
কবিতা মৃদু হেসে অনুর সাথে নিজের ক্লাসের জন্য রওনা দেয়। কবিতা যাওয়ার সময় তীর্থের দৃষ্টি আটকে ছিলো কবিতার উপর।
তীর্থের সাথে বসা ছিলো রতন, মনা এবং পলাশ। সে তিনজনকে আদেশের সুরে বলে, “ওদের যেতে দে।”
“ভাই আপনে মাইয়ার কথা শুনতাছেন কেন?” রতন জিজ্ঞেস করে। রতনের কথা শুনে পলাশও বলে, “ভাইয়ে আমার দিকে যেমনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাইসে মনে হইলো হাত ভইরা আমার জান বাইর কইরা নিব।”
“ও ধ্রুবর পরিচিত তাই।”
“এমন তো কত পরিচিতই আইলো গেল আপনে তো কখনো কারও কথা শুনেন নাই। আপনে ধ্রুব ভাইয়ের কথায় পাত্তা দেন না আর তার পরিচিত এর। ভাই আপনে কি মাইয়ার প্রেমে পড়ে গেছেন?”
তীর্থ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় পলাশের দিকে, “আজেবাজে কথা বলবি না। মেয়েটা ভুল বলে নি তাই ওর কথায় একমত হয়েছি ওদের ছেড়ে দে।”
“আপনার তাকানো দেখে তো এমন মনে হচ্ছে না।”
তীর্থ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিনজনের দিকে তাকাতেই তারা হড়বড়ে উঠে যায়। সবাইকে যেতে বলে সাথে সাথে।
এর মধ্যে একটা ছেলে বলে, “যাক বাঁচলাম এত সুন্দরী মেয়ের সামনে কান ধরে উঠবস করতে লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম। ওই কমলা রঙের মেয়েটাকে ভালো লাগছে। যেয়ে খুঁজব নে।”
কথাটা কানে গেল তীর্থের। কমলা রঙের পোশাক পরা মেয়েটি কবিতা। সে পলাশকে জিজ্ঞেস করে, “সবারকে কয়বার কান ধরে উঠবস করার কথা বলেছিলি?”
“ভাই পঞ্চাশবার।”
“নীল টি-শার্টকে আরও দুইশোবার কান ধরে উঠবস করাবি আর সবাইকে যেতে দে।” আদেশের সুরে বলে তীর্থ। তার সানগ্লাসটা চোখ পরে একটি সিগারেট জ্বালিয়ে উঠে যায় সেখান থেকে। ছেলেটা পিছন থেকে অনেকবার ডাকে কিন্তু সে না শোনার মতো চলে যায়।
.
.
কবিতা বসে আছে ক্যাফেতে। ভার্সিটি শেষে কথনের সাথে আজ দেখা করার কথা তার। তার ক্লাস হয় নি আজ। শিক্ষকরা কিছু কথা বলেই ছেড়ে দিয়েছে তাই জলদিই এসে পড়েছ সে। অপেক্ষা না করে নিজের জন্য একটা আইস্ক্রিম সানডে অর্ডার দিয়ে তা খাওয়াও শুরু করে সে। প্রায় পনেরো মিনিট পর আসে কথন। কথনকে দেখে কবিতা উঠতে নিলেই সে দূরে সরে যায় এবং কবিতাকে ইশারায় দূরে থাকতে বলে। সে নিজের সামনের চেয়ারে বসে বুকে হাত রেখে গভীর নিশ্বাস ফেলে।
কবিতার তার এই কান্ড দেখে বলে, “আমার মনেই হচ্ছিলো আপনার মাথায় সমস্যা আছে।”
“ও হ্যালো মেডাম, গতকাল আপনি যতবার আমার শার্ট নষ্ট করেছেন না আমার মাথা খারাপ হয় নি আমি আপনার কাছেও আসব।”
কবিতা বিরক্তি নিয়ে বসে নিজের চেয়ারে, “তাহলে এখানে আসলেন কোন দুঃখে?”
“মা’য়ের ইমোশনাল ব্লাকমেইলে। দেখ আমি ত্যাঁড়া ব্যাঁকা কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপ্টা বলি আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। আমি জানি আমাকে দেখে তুমি নিশ্চয়ই বিয়ের হাজারো স্বপ্ন সাজিয়েছ কিন্তু আমি প্রেম, ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না। তাই বিয়ে করারও আমার কোনো ইচ্ছা নেই।”
চলবে….
[