মৃত কাঠগোলাপ পর্ব -২৩+২৪

#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

দুজন সার্ভেন্ট আয়েশীকে ধ্রুবর কক্ষে নিয়ে গেল। আয়েশীর বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। আত্মা বোধহয় এখনিই বেরিয়ে এল! আজ থেকে ধ্রুব তার স্বামী। কিন্তু আয়েশী কখনোই মৃদুলের জায়গা ধ্রুবকে দিতে পারবে না। আয়েশীকে ছোঁয়ার, ভালোবাসার অধিকার একমাত্র মৃদুলের। কিন্তু ধ্রুব যদি জোর করে? কি করে আটকাবে সে? ভয়ে ঘামে আয়েশী। হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ে। ভাগ্যের খাতা সঁপে দেয় উপরওয়ালার হাতে। তিনি যা ভালো মনে করেন, তাই যেন করেন।
আয়েশী বিছানার উপর বসে! লেহেঙ্গা বিছানায় গোল করে ছড়িয়ে রাখা। দেখতে কোনো অচিনপুরের রাজকন্যার মত লাগছে তাকে। আয়েশী এখনও ঘামছে। ঘামে সাজ নষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ দরজায় সিটকিনি আটকানোর শব্দে আয়েশী কেপে উঠে। চোখ তুলে তাকায় সামনে। ধ্রুব এসেছে! ধ্রুবর গায়ে বিয়ের শেরওয়ানি আর নেই। গায়ে জড়ানো ধবধবে সাদা টিশার্ট, কালো ট্রাউজার। ধ্রুবর চুল ভেজা, চুল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি গড়াচ্ছে। আয়েশী চোখ সরিয়ে নিল। বিছানার সাথে আঁটসাঁট হয়ে বসে রইল।
ধ্রুব এল, বসল আয়েশীর পাশে। কিছুক্ষণ আয়েশীকে মন ভরে দেখল। তারপর মৃদু হেসে বলল,
‘ যাও, শাওয়ার নিয়ে আসো। ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ‘
আয়েশী চুপ করে উঠে গেল বিছানা থেকে। লাগেজ থেকে কাপড় বের করতে গেলে ধ্রুব পেছন থেকে বলে,
‘ লাগেজ যেভাবেই আছে, সেভাবেই থাকুক। আলমারিতে তোমার কাপড় রাখা আছে। সেগুলো পড়। ‘
আয়েশী কিছুক্ষণ ভেবে লাগেজ থেকেই একটা সালওয়ার কামিজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ওয়াশরুম নাকি এ এক রাজার ঘর! আয়েশীর চোখ কপালে উঠে। সম্পূর্ণ ওয়াশরুম ফকফকা সাদা, কোথাও কোনো ময়লার ছিটেফোঁটা নেই। একপাশে বাথটাবও আছে। এ লোক ওয়াশরুমে এসে ঘুমায় নাকি? আয়েশী দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা লম্বা গোসল নেয়।
চুলে গামছা পেচিয়ে বের হয় আয়েশী। ধ্রুব বিছানায় শুয়ে আছে। এক হাত মাথার পেছনে রেখে হাতের উপর ঘুমে। ধ্রুব এত লম্বা যে পা দুটো বিছানার খানিক বাইরে চলে গেছে। জিরাফের মত লম্বা লম্বা হাত পা! আয়েশী ওয়াশরুম থেকে বের হলে ধ্রুব চোখ খুলে। ঘুমঘুম চোখে আয়েশীর দিকে চায়। সালওয়ার কামিজ পরিহিত নয়া বধূকে দেখে ধ্রুব বলে,
‘ শাড়ি পড়তে পারতে? ‘
আয়েশী স্পষ্ট কণ্ঠে জানায়,
‘ দরকার নেই। ‘
ধ্রুবর রাগ হয়। শাড়ি তো সে পড়িয়েই ছাড়বে!
আয়েশী বলে,
‘ আমি কোথায় শুব? ‘
ধ্রুব ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,
‘ কেন? বিছানায়! ‘
‘ আপনি? ‘
‘ আমিও বিছানায়। ‘
‘ মানে দুজন একসাথে? ‘
‘ হ্যাঁ! ‘
‘ না। আমি একসাথে শুব না। ‘
‘ কেন? ‘
‘ কারণ আমি আপনাকে ভরসা করতে পারছি না। ‘
‘ আমি তোমার হাসবেন্ড। ভুলে যাচ্ছ নাকি? ‘
‘ যখন থেকে ভালোবাসতে শিখেছি, তখন থেকে আমি একমাত্র মৃদুলকেই আমার হাসবেন্ডরূপে মেনে এসেছি। আপনি জোর করে আমায় বিয়ে করেছেন। তাই আপনাকে হাসবেন্ড হিসেবে মানার প্রশ্নই উঠে না। ‘
ধ্রুব তীক্ষ্ম চোখে চায়। বলে,
‘ তাহলে কোথায় শুতে চাও? ‘
‘ আমি অন্য রুমে, আপনি এ রুমে। ‘
ধ্রুব কোনো তর্ক না করে বলে,
‘ ঠিক আছে। ‘
আয়েশী কিছুটা অবাক হয়। তার এক কথায় ধ্রুব কি করে মেনে গেল? হয়তো বুঝতে পেরেছে, আয়েশী তার সাথে থাকলে অস্বস্তিতে ভুগবে। তবে ধ্রুবর হুট করে এত ভালো ছেলে হয়ে যাওয়া আয়েশীকে ভাবাচ্ছে।

আয়েশীকে তার রুম বুঝিয়ে দেয় সার্ভেন্ট। আয়েশীকে পূর্ব দিকের কক্ষ দেওয়া হয়েছে। ধ্রুবর এ বাড়ীর চারপাশ প্রচণ্ড খোলামেলা। জানালা থেকে ধু ধু বাতাস গায়ে লেপ্টে যাচ্ছে। পূর্ব দিকে থাকা ফুলের বাগানের মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে সুরসুরি দিচ্ছে। কি মনোরম পরিবেশ!
আয়েশী জানালা খুলে দেয়। বাতাসে আয়েশীর চুল উড়ে, ওড়নার অগ্রভাগ উড়ে যেতে চায়। আয়েশীর ঠান্ডায় জমে যায়। তবুও স্থির চেয়ে রয় জানালার বাইরে দূরের ওই আকাশের দিকে। আকাশে একটা তারা জ্বলজ্বল করছে। শুকতারা বোধহয়। আয়েশীর চোখে জল ভরে। অস্ফুটসুরে বলে,
‘ আমায় ক্ষমা করিস, মৃদুল। জনমভর তোর হয়ে বেচে থাকা হলো না আমার। আমার হাত বাঁধা, পা বাঁধা, মন বাঁধা। আমার ক্ষমা করিস রে, মৃদুল। আমার আর তোর হওয়া হলো না রে। ‘
আয়েশী ফুঁপিয়ে কাদঁছে। ল্যাপটপে তীক্ষ্ম চোখে ধ্রুব তা দেখে যাচ্ছে। মৃদুলের প্রতি আয়েশীর এই মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা ধ্রুবর সহ্য হচ্ছে না। কিছু একটা এবার করতেই হবে। কিন্তু কি? ধ্রুব ভাবছে, ভাবছে, ভাবছে। অতঃপর হঠাৎ ধ্রুবর মাথায় খেলে গেল নতুন চতুর বুদ্ধি। ধ্রুব বাঁকা হেসে খোঁচা খোঁচা দাড়িতে আঙ্গুল বুলায়। বিড়বিড় করে বলে,
‘ ভালোবাসা থেকে ঘৃ’ণার শক্তি বেশি। দুদিনের ঘৃ’না তোমার মন থেকে হাজার বছরের ভালোবাসাকে নিমিষেই মুছে ফেলতে পারে। কিন্তু ঘৃ’ণার দাগ কোনো কিছু দ্বারা মুছা যায়না। ঘৃ’না ভালোবাসারও উর্ধ্বে! ‘
________________________________
সার্ভেন্ট এসেছে। দরজায় কড়া দিচ্ছে। আয়েশী চোখ মুছে দরজা খুলে দিল। সার্ভেন্ট এক গ্লাস দুধ এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আপনার জন্য। ‘
আয়েশী দুধের গ্লাস হাতে নিল। সার্ভেন্ট মাথা নত করে চলে যাচ্ছিল। আয়েশী পেছন ডাকল,
‘ এই দাড়াও। ‘
সার্ভেন্ট থামল। মাথা নত করেই বলল,
‘ তোমার নাম কি? ‘
‘ হিয়া। ‘
‘ তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছ না কেন? আমি কি দেখতে খারাপ? ‘
হিয়া আঁতকে উঠে বলল,
‘ না, ম্যাম। আপনি পরির মত সুন্দর। ‘
‘ তাহলে তাকাচ্ছ না কেন? ‘
‘ স্যারের নিষেধ। ‘
‘ স্যারের নিষেধ? ‘
আয়েশী অবাক হয়।
‘ স্যার আদেশ, তার রক্তজবার দিকে কেউ যেন চোখ তুলে তাকায় না। নাহলে স্যার তার চাকরি কেটে দেবেন। ‘
‘ এসব তোমার স্যার বলেছেন? ‘
‘ জী, ম্যাম। ‘
আয়েশী ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ে। বলে,
‘ আচ্ছা তুমি যাও। ‘
হিয়া চলে যায়। আয়েশী দরজায় সিটকিনি আটকে দেয়। দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে পুনরায় জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। ভাবে, ‘ এই ধ্রুব এমন কেন? ‘
দুধের গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়েও আয়েশী আটকে যায়। সাবধানী চোখে গ্লাসের দিকে চায়। দুধের রঙ এত ঘোলা কেন? আয়েশী কিছুক্ষণ ভাবে। গ্লাসের দুধ ঝাঁকায় কয়েকবার। এখনো ঘোলা দেখাচ্ছে। আয়েশী কিছুক্ষণ ভেবে তারপর মাথা নাড়ায়। সে একটু বেশীই চিন্তা করছে। আয়েশী সম্পূর্ণ দুধটুকু এক চুমুকে খেয়ে নেয়।
আধা ঘন্টা পর আয়েশীর প্রচণ্ড ঘুম আসছে। চোখ খুলে থাকতে পারছে না। মাথা ঘুরছে। এখনি বোধহয় মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আয়েশী দেয়ালে হাত রেখে নিজেকে সামলালো। হেলেদুলে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। সঙ্গেসঙ্গে প্রচন্ড ঘুমে বালিশে নেতিয়ে গেল।
সম্পূর্ণ বিষয়টা ল্যাপটপে পর্যবেক্ষণ করতে পেরে ধ্রুব হাসল। যাক, ঔষুধটা কাজে দিয়েছে তবে। ধ্রুব ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাড়াল। টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে পা বাড়াল আয়েশীর ঘরের উদ্দেশ্যে। বড্ড শখ জেগেছিল না, একা ঘুমানোর? এখন সব শখ একেবারে ঘুচে দেবে! হা হা হা!
#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ক্লান্ত দিনের শেষভাগ। সম্পূর্ন দেশ ঢেকে আছে রাতের ঘুটঘুটে কালো রঙে। রাতের শেষভাগে ভীষন ঠান্ডা পড়েছে। ধ্রুব আয়েশীর গায়ের চাদর টেনে দিল। আয়েশী উম পেয়ে চাদর হাতের মুঠোয় পুড়ে নিয়ে পাশ ফিরল। ধ্রুব হাসল। মুগ্ধ চোখে খানিক চেয়ে দেখল প্রেয়সীকে। কি সুন্দর তার রক্তজবা! টানা টানা চোখ, রক্তিম ঠোঁট, লতানো দেহ। বিধাতা কি পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য্য তার মধ্যেই ঢেলে দিয়েছেন? এতটুকুও কমতি রাখেন নি।
ধ্রুব দেখছে, পলক না ফেলে। হঠাৎ পাশ থেকে একটি প্রজাপতি উড়ে গেল। ধ্রুবর ধ্যান ভাঙল। ধ্রুব সাবধানী চোখে প্রজাপতির দিকে তাকাল। প্রজাপতি ডানা ঝাপটে চঞ্চল পায়ে ইতি-ওতি উড়ছে। ধ্রুব কিছুক্ষণ প্রজাপতির দিকে নজর রাখল। তারপর হঠাৎ করে খপ করে ধরে ফেলল প্রজাপতিটি। ধ্রুবর শক্ত হাতের চাপে প্রজাপতি কষ্ট হল। দু’য়েকবার ডানা ঝাপটে যেন প্রাণ ভিক্ষা চাইল। ধ্রুব প্রাণ ভিক্ষা দিল না। একসময় ধ্রুবর বলিষ্ট হাতের চাপে পিষে গেল প্রজাপতি। ছোট্ট নরম দেহ থেতলে দেহের ভেতর থাকা পাকস্থলী বেরিয়ে গেল। ধ্রুব হাতের মুঠো খুলল। প্রজাপতির মরদেহ দেখে মুচকি হাসল। একটি কাঁচের স্বচ্ছ বোতলে প্রজাপতির মরদেহ প্রবেশ করিয়ে বোতলের ছিপি আটকে দিল। বোতলের উপর কালো মার্কার দিয়ে গোটাগোটা অক্ষরে লিখল, ‘ A Gift For My lovely wife ‘
ধ্রুব বোতলটা সুন্দর করে আয়েশীর বালিশের পাশে রাখল।
আয়েশী এখনো ঘুমাচ্ছে। আশপাশে কি হচ্ছে, কিছুই সে জানে না। ধ্রুব আবারও তাকাল আয়েশীর পানে। আজ পুরো রাতটা সে আয়েশীর মুখের দিকে চেয়ে কাটিয়ে দেবে। এত সুন্দর মুখখানা, জনমভর চেয়ে থাকলেও ধ্রুবর আঁশ মিটবে না।
ধ্রুব আয়েশীর মুখের দিকে একটু ঝুঁকে এল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল আয়েশীকে। হঠাৎ কি মনে করে চুমু খেয়ে বসল আয়েশীর গালে। ঘুমের মধ্যেই আয়েশী কেঁপে উঠল খানিক। দুবার পলক ঝাপটে বিড়বিড় করে বলল, ‘ মৃ-দু-ল ‘

আবার সেই মৃদুল! ধ্রুবর রক্ত গরম হয়ে যায়। হিংসায় জ্বলে পুড়ে আগুন হয়ে গেল। চটাশ চটাশ আয়েশীর গালে পরপর পাঁচটা চুমু খেয়ে তাকাল আয়েশীর দিকে। দু আঙুল দিয়ে আয়েশীর থুতনি চেপে বলল, ‘ এখনো মৃদুলের কথা মনে হয়? ‘
ঘুমন্ত আয়েশী অবুঝ ভাবে পাশ ফিরল। ধ্রুব আয়েশীকে দুধের সাথে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষুধ খাইয়েছে। তাই আয়েশী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। একজন ঘৃণিত পুরুষ তাকে স্পর্শ করছে, সে সম্বন্ধে সে সম্পূর্ন অজ্ঞাত। আয়েশী তো তখন সুখী সুখী নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘুমাচ্ছে। জেগে থাকলে নিশ্চয়ই তাণ্ডব চালাত। মনে পড়ায় হাসল ধ্রুব।
ধ্রুব সরে এল আয়েশীর থেকে। রাগ তার কপাল ফাটছে। ইচ্ছে করছে আজ এখনি আয়েশীকে গভীর ভাবে স্পর্শ করতে। ধ্রুবর স্পর্শে যেন আয়েশীর মন দেহ থেকে মৃদুলের সমস্ত স্মৃতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তবে ধ্রুব তা করল না। হাত দুটো ভয়ানকভাবে মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বুজে বড়বড় নিঃশ্বাস ছাড়ল। নিজের রাগ আয়ত্বে এনে আবার তাকাল আয়েশীর দিকে। সহসা চোখ গেল আয়েশীর লতানো দেহের দিকে। আয়েশী কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে আছে। নয়া বধূ কি করে বিয়ের দিনই কালো রঙ পড়তে পারে, ভেবে পায়না ধ্রুব। ধ্রুব আয়েশীর কক্ষে আসার আগে একটি হলুদ রঙের কাতান শাড়ি এনেছিল। নিজ হাতে আয়েশীকে এ শাড়ি পড়াবে বলে। নিজ হাতে শাড়ি পড়াবে বলেই, আজ আয়েশীকে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে।

ধ্রুব আয়েশীর গা থেকে ওড়না এক টানে সরিয়ে ফেলল। আয়েশীর কালো রঙের ওড়না দিয়ে নিজের দু চোখ বেধে নিল। এখন সবকিছু অন্ধকার লাগছে। কিছু দেখতে পারছে না। ধ্রুব এবার কাতান শাড়ি হাতে নিল। একে একে আয়েশীর গায়ের ছোট-বড় সমস্ত কাপড় খুলে ফেলল। আয়েশী এখন সম্পূর্ন নগ্ন। ধ্রুব এবার শাড়ি পড়াতে লাগল আয়েশীকে। চোখ বন্ধ অবস্থায় হাতের আন্দাজে বেশ সুন্দর করে শাড়ি পড়াল ধ্রুব। শাড়ি পড়ানোর সময় বেশ কয়েকবার আয়েশীর শরীরে হাত লাগে। ধ্রুব তখন উপভোগ করে সে স্পর্শ। তবে নিজেকে সামলে তাৎক্ষণিক হাত সরিয়ে নেয়।
শাড়ি পড়ানো শেষ হলে ধ্রুব চোখ থেকে কাপড় সরায়। আস্তে করে চোখ খুলে চায় বিছানার উপর ঘুমিয়ে থাকা প্রেয়সীর পানে। হলুদ পরীকে দেখে ধ্রুবর চোখ হাসে, মুখ হাসে। ধ্রুব ঝুঁকে আয়েশীর ঠোঁটের কোণায় চুমু খায়। একবার চুমু খেয়েও তৃষ্ণা নিভে না। আরো কয়েকবার একই জায়গায় পরপর চুমু খায়। তারপর সরে আসে।
ধ্রুব আয়েশীর চুলে হাত বুলায়। মুচকি হেসে বলে,
‘ এ ঘুম যেন তোমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঘুম হয়, ম্যাই লেডি। ‘
ধ্রুব বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। চলে যেতে উদ্যত হলে পেছন থেকে আয়েশী হাত আটকে ফেলে ধ্রুবর। ধ্রুব ভয়ে কেপে উঠে। আয়েশী জেগে গেল না তো? ধ্রুব পেছন ফিরে তাকায়। না, আয়েশী ঘুমে। ধ্রুব আস্তে করে আয়েশীর হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আয়েশীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। ঘুরে পাশ ফেরার সময় বিড়বিড় করে আওড়ায়, ‘ মৃ-দু-ল যা-স না। ‘
আয়েশীর কি সারাক্ষণ তজবি পাঠের ন্যায় মৃদুলকে মনে করে? ঘুমের মধ্যেও মৃদুলের নাম! বিরক্তিকর!
ধ্রুব রাগে আগুন হয়েও সামলে নেয়। সময় এসে গেছে দাবার গুটি উল্টে দেবার। পাখি অনেক ডানা ঝাপটেছে। সময় এসে গেছে তার ডানা কেটে দেবার! সে রাতে প্রায় চারটার দিকে ধ্রুব নিজের ঘরে আসে। চিন্তা করতে করতে সে রাত প্রায় নির্ঘুম কাটে ধ্রুবর।
____________________________
রাতের কালিমা কেটে সুন্দর এক সকাল হয়েছে। বাগানের সদ্য ফুটা সহস্র ফুল হতে মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে আসছে। পূর্ব দিক হতে ধু ধু বাতাস গায়ে শীতলতা সৃষ্টি করছে। আয়েশী দুয়েকবার পলক ঝাপটে চোখ খুলে তাকাল। মাথাটা বড্ড ভার ভার লাগছে। চিনচিনে ব্যথা মাথার ভেতরের সবকিছু কুটকুট করে খেয়ে ফেলছে। আয়েশী দু হাতে মাথা খামচে ধরল। বিড়বিড় করল, ‘ উফ! মাথাটা এত যন্ত্রণা করছে কেন? ‘
এবার ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন। অনেক বেলা হয়ে গেছে আয়েশী শরীর থেকে চাদর সরাল। বিছানা থেকে উঠতে গেলে গা থেকে শাড়ির আঁচল খুলে মাটিতে পড়ে। আয়েশী হতবম্ব হয়ে পড়ে। চকিতে নিজের দেহের দিকে চায়। সঙ্গেসঙ্গে তার মুখ থেকে চিৎকার বেরিয়ে আসে,
‘ শাড়ি? আমার শরীরে শাড়ি কোথা হতে এল? ‘
আয়েশীর চোখ যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। তার স্পষ্ট মনে আছে, ঘুমানোর সময় তার শরীরে সালওয়ার কামিজ ছিল। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে এ শাড়ি কোথা থেকে এল? আয়েশী মাথার পাশটা আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে মনে করার চেষ্টা করে। না, কিছু মনে পড়ছে না। তবে কি ধ্রুব কিছু করেছে? আয়েশী পাগলের মত হয়ে যায়। সম্পূর্ন শরীর উন্মাদের মত পর্যবেক্ষণ করে। কোথাও কোনো দাগ নেই তো? ধ্রুব তাকে একা পেয়ে কিছু করে ফেলে নি তো?
না, শরীরের কোথাও কোনো দাগ নেই। তাহলে শাড়ি কে পড়াল? আয়েশী মনস্থির করে, সে ধ্রুবকে প্রশ্ন করবে। তার সাহস হয় কি করে আয়েশীর ঘরে এসে তার দেহ জামা কাপড় খোলার? ছিঃ, ভাবতেই আয়েশীত ঘেন্না পাচ্ছে। মন চাচ্ছে, ধ্রুবকে টু’করো টু’করো করে ফেলতে। কতটা খারাপ লোক সে! ছিঃ!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here