মৃত কাঠগোলাপ পর্ব -৪৫ ও শেষ

#মৃত_কাঠগোলাপ – ৪৫ ( রহস্যের খোলাসা)
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_________________________
‘ কোথায় গিয়েছিলে? ‘
ধ্রুবর গম্ভীর তথা খিটখিটে কণ্ঠ শুনে আয়েশীর দমে যাওয়ার কথা। অথচ আয়েশী দমে যায় না। বরং কঠিন সুরে বলে দেয়, ‘ তোমার পাপ সম্বন্ধে জানতে। ‘
‘ পাপ? আমি কোনো পাপ করিনি। ‘
‘ করো নি? বাহ, এখনো মিথ্যা বলে যাচ্ছ। কি দিয়ে তৈরি তুমি, ধ্রুব? ‘
‘ পাথর দিয়ে। ‘
আয়েশী ধ্রুবর দিকে চায়। ধ্রুব মিহি হেসে আয়েশীর গালে চুমু এঁকে দেয়। আয়েশী ঘৃণায় থুথু ফেলে মাটিতে। ধ্রুব দেখে। রাগ করে। তবে রাগ প্রকাশ না করে অত্যন্ত উচ্ছাস নিয়ে বলে, ‘ হাসপাতালে গিয়েছিলে? কী বলেছে ডাক্তার? আমাদের সন্তান আসছে? ‘
আয়েশী থমকে যায়। অর্থাৎ ধ্রুব সব জানে। আয়েশী কি বলবে ভেবে পায় না। উপায় না পেয়ে মিথ্যা বলে, ‘ কোনো সন্তান আসছে না। এসিডিটি হয়েছে শুধু। ‘
‘ এসিডিটি? এসিডিটি হলে তোমার পিরিয়ড কেন মিস যাচ্ছে? ‘
ধ্রুবর শকুনি মস্তিষ্কের প্রশ্ন আয়েশীকে ভরকে দেয়। আয়েশী বলে,
‘ এসব গাইনী প্রবলেম। ঔষুধ দিয়েছে। ঠিক হয়ে যাবে। ‘
ধ্রুবর সমস্ত আশায় পানি পড়ে। আয়েশীকে নিজের কাছে বন্দী করে রাখতে একটা সন্তানের খুব প্রয়োজন ছিল। অথচ……..ধ্রুবর সমস্ত প্ল্যান মাঠে মারা গেল। আজকের পর এখন আয়েশী নিশ্চয়ই ধ্রুবকে আর কাছে ঘেঁষতে দেবে না। তাহলে? তাদের সন্তান কি আসবে না? আয়েশী কি আর ধ্রুবর কাছে থাকবে না? আয়েশী কি ধ্রুবকে ছেড়ে চলে যাবে? ধ্রুব ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যায়।
ধ্রুবর আঁখিতে কাতরতা। ধ্রুবর আয়েশীর গালে হাত রাখে। করুন কণ্ঠে বলে, ‘ এই রক্তজবা, সত্যি করে বলবে। আমাদের সন্তান সত্যিই কি আসছে না? তুমি আমাকে বাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারো না। ‘
আয়েশী নিজের গাল থেকে ধ্রুবর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাটছাট কণ্ঠে বলে, ‘ না। আসছে না কেউ। আর কেন আসবে? যেন তুমি আমায় তোমার কাছে বন্দী করে রাখতে পারো? সেজন্যে? ‘
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ফেলে। আয়েশীর চুল কানের পেছনে গুঁজে শান্ত কণ্ঠে বলে, ‘ তুমি সব জানো? ‘
‘ হ্যাঁ। তোমার সকল পাপের খবর আমার জানা হয়ে গেছে। জানিনা আর কি পাপ করেছ তুমি! তবে যা জেনেছি, তাই’বা কম কিসের? ‘
ধ্রুবর রাগে কপালের রগ ফুলে উঠে। দু আঙুলের ফাঁকে আয়েশীর গাল চেপে ধরে বলে, ‘ কি পাপ করেছি আমি? তোকে ভালোবাসা আমার পাপ ছিল? বল? ‘
গালের আয়েশী ব্যথায় আয়েশীর চোখ বুজে আসে। আয়েশী তবুও হার মানে না। স্পষ্ট কণ্ঠে হুংকার ছাড়ে,
‘ হ্যাঁ, পাপ ছিল। কেন আমায় ভালোবেসেছিলে? আমি বলেছিলাম ভালোবাসতে? তোমার ভালোবাসা আমার জীবন থেকে আমার প্রেমিককে কেড়ে নিয়েছে। আমার মা, বাবা, ভাইকে কেড়ে নিয়েছে। তোমার ভালোবাসা আমায় কি দিয়েছে, বলো? কষ্ট ছাড়া আর কিছুই না। তোমাকে ভালোবেসে আমি শুধু কষ্টই পেয়ে গেছি। ভেতর ভেতর গুমড়ে ম’রেছি। আর কত এভাবে তিলে তিলে মারবে আমায়? এর চেয়ে বরং একেবারে মেরে ফেলো। সেই মৃত্যু উপহার হবে আমার জন্যে। অন্তত তোমার স্বার্থপর ভালোবাসা থেকে তো মুক্তি পাব। ‘

আয়েশী ধ্রুবর চোখে চোখ রেখে উক্ত কথাগুলো বলে। আয়েশী চোখে জল উপচে পড়ছে। মৃদুলের পরে আয়েশী এই ধ্রুব ইউহান শেখ নামক এই পাষণ্ডকে ভালোবেসেছিল। কখনো ধ্রুবের সামনে নিজের গলা উঁচু করে নি। ধ্রুবকে সম্মান করে এসেছে। শ্রদ্ধা করেছে। অথচ আজ? আজ আয়েশীর মনে থাকা ধ্রুবর জন্যে সকল সম্মান, শ্রদ্ধা সব ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। আয়েশীর মনে ধ্রুবর জন্যে থাকা ভালোবাসা সব ম’রে গেছে। জিন্দা লা’শ হয়ে গেছে আয়েশী।
ধ্রুব রাগে রীতিমত কাঁপছে। আয়েশী স্পষ্ট অনুভব করছে, ধ্রুবর কাঁপুনি, অস্থিরতা। ধ্রুব রেগে গেলে ভ’য়ংকর হয়ে যায়। আয়েশীর সেটা জানা আছে। তবুও আজ সাহস করে কতগুলো কথা বলে ফেললে আয়েশী। ভঅপরাধবোধ হচ্ছে না, তবে গা শিউরে উঠছে। ধ্রুব রাগ সামলাতে ব্যর্থ হয়। আয়েশীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। তারপর চপাট চপাট থাপ্পড় বসায় আয়েশীর গালে। আয়েশীর নরম গাল রক্তিম হয়ে যায় চকিতেই। ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়। আয়েশী কেঁদে উঠে চিৎকার করে বলে,
‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ। মে’রে ফেলো আমায়। তবে বেঁচে যাব তোমার অতিরিক্ত ভালোবাসার য’ন্ত্রণা থেকে। ‘
ধ্রুব আয়েশীর হাত নিজের বুট জুতো দ্বারা পিষে ধরে। আয়েশী ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে চোখ বুজে চোখের জল ফেলে। ধ্রুব আয়েশীর গাল আঙ্গুলে চেপে ধরে হিড়হিড় কণ্ঠে বলে,
‘ তোকে মা’রব না। তোকে বাঁচতে হবে। আমার ভালোবাসা সহ্য করার জন্য হলেও তোকে বাঁচতে হবে। আমার মুখের উপর কথা বলবি না। ঠোঁট আগুনে জ্বা’লিয়ে দেব। কথা বলার ক্ষমতা চিরতরে গুচিয়ে দেব। তাই ভেবেচিন্তে ঠোঁট নাড়াবি। বুঝা গেছে? ‘

ধ্রুবর চিৎকারে আয়েশীর গা ঝড়ের বেগে কেঁপে উঠে। আয়েশী ফ্যালফ্যাল চোখে ধ্রুবর দিকে চায়। এ কোন ধ্রুবকে দেখছে আয়েশী? যে ধ্রুব আয়েশীর গায়ে ফুলের টোকা লাগতে দিত না, সে ধ্রুব আজ আয়েশীকে আ’ঘাত করেছে। এতটা কষ্ট দিয়েছে? ঘে’ন্নায় আয়েশীর গা গুলিয়ে আসে। ধ্রুব আয়েশীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে চলে যায় ঘর ছেড়ে। যাবার পূর্বে ঘরের দরজায় বিশাল এক তালা ঝুলিয়ে যায়। আয়েশী মাটিতে হাঁটু ভেঙে নিজে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। গাল জ্বলে যাচ্ছে। নাক থেকেও রক্ত ঝড়ছে। আয়েশী পেটে হাত রাখে। নাক টেনে, চোখ মুছে বলে,
‘ তোর কষ্ট হচ্ছে বাবু? কষ্ট পাবি না। বাবাকে তোর মা খুব শা’স্তি দেবে। বাবা খুব খারাপ। তুই একদম বাবার পাগল হবি না। তুই মায়ের শিক্ষায় বড় হবি। তোর বাবার শান শওকতের কোনো প্রয়োজন নেই। তোর মা তোর জন্যে যথেষ্ট! ‘
_______________________________
‘ ওসমান, আমি বাইরে যাচ্ছি। আয়েশী উপরের ঘরে আছে। খবরদার ও দরজা ধাক্কালে খুলবে না। খাবারের সময় খাবার দিয়ে আসবে। আর হ্যাঁ, তার সাথে অতিরিক্ত কথা বললে লা’শ হওয়ার জন্যে প্রস্তুত হবে। বুঝা গেছে? ‘
ওসমান মাথা নাড়ায়। ধ্রুব বাইরে চলে যায়। ওসমান জানে ধ্রুব এখন কেন বাইরে যাচ্ছে। মুনিজ ও তার স্বামী খু’ন হয়েছে। তাদের ধ্রুব তার লোক দিয়ে খু’ন করেছে। তাদের খু’ন নিয়ে পুলিশ কেইস হয়েছে। ধ্রুব সে মামলা পরিষ্কার করতে গিয়েছে।
উপর থেকে আয়েশীর কান্নার শব্দ আসছে। দরজা ধাক্কাচ্ছে। ধ্রুব নাহয় কঠিন, নি’ষ্ঠুর লোক। তাই বলে ধ্রুব যাকে ভালোবাসে, তার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করবে? তার গায়ে হাত তুলবে?
না, অনেক হয়েছে। ধ্রুবর পা’পের ঘটা পূর্ন হয়েছে। আয়েশীকে সব জানাবে ওসমান। আয়েশী যদি চায়, ওসমান আয়েশীকে মুক্তি দেবে। এতদিন ধ্রুবর সাথে থেকে ওসমান যা পাপ করেছে, সেসব পাপের আজ প্রায়শ্চিত্ত করবে ওসমান।
দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেছে। ওসমান খাবার নিয়ে আয়েশীর ঘরে যায়। আয়েশী তখনো মাটিতে হাঁটু গেড়ে কাঁদছে।
‘ ম্যাম, আপনার খাবার। ‘
আয়েশী মাথা তুলে তাকায়। আয়েশীকে দেখে ওসমান আঁতকে উঠে। এ কি অবস্থা হয়েছে আয়েশীর চেহারার। চেহারা জুড়ে ছোপ ছোপ র:ক্তের দাগ। ঠোঁট কেটে র’ক্ত পড়ছে। নাকের নীচে সরু র’ক্তের দাগ। ধ্রুব কি আদৌ মানুষ? নাকি প’শু? এতটা খা’রাপ মানুষ কি করে হয়?
ওসমান আয়েশীর দিকে আর চেয়ে থাকতে পারে না। মাথা নত করে আয়েশীর দিকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ খেয়ে নিন ম্যাম। ‘
আয়েশী রক্তলাল চোখে খাবারের দিকে চেয়ে ধাক্কা দিয়ে খাবার ফেলে দিতে চায়। পারে না। ওসমান প্লেট সরিয়ে নিয়ে মিনমিনে কণ্ঠে বলে, ‘ আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এই প্লেটে আছে, ম্যাম। ‘
আয়েশী অবাক হয়ে তাকায় ওসমানের দিকে। ওসমান স্বাভাবিক। সে বলে, ‘ স্বাভাবিক থাকুন ম্যাম। এই ঘরে সবকিছু সিসিটিভি ক্যামারে দিয়ে লক্ষ রাখছেন ধ্রুব স্যার। ‘
আয়েশী মুখ স্বাভাবিক করে। ওসমান প্লেট এগিয়ে দেয় আয়েশীর দিকে। আয়েশী প্লেট হাতে নেয়। প্লেটের উপরে সাজানো সালাদের স্তর সরিয়ে দেখে একটা সাদা কাগজ। সেখানে লেখা, ‘ আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর, ম্যাম। ‘
আয়েশী ওসমানের দিকে চায়। ইশারায় সিসিটিভি ক্যামেরা দেখিয়ে দেয়। ওসমান বলে, ‘ আমি দেখছি। ‘
ওসমান কাউকে ফোন করে। কিছুক্ষণ পর ঘরের ইলেকট্রিসিটি চলে যায়। সম্পূর্ন ঘর অন্ধকার হয়ে যায়। ওসমান বলে, ‘ বারান্দার চাঁদের আলোয় কাগজ খুলে পড়ুন, ম্যাম। আশা করি আপনি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। ‘
আয়েশী কাগজ হাতে উঠে বারান্দায় যায়। ডান হাত ভীষন ব্যথা করছে। কে’টে গেছে বোধহয়। আয়েশী বহু কষ্টে কাঁপা হাতে কাগজ খুলে। লেখা সেখানে,

‘~একজন নিকৃষ্ট পুরুষের গল্প~
ম্যাম, আজ আমি আপনার স্বামী ওরফে একজন ভয়ংকর খু’নি, পা’ষণ্ড লোকের কথা বলব। আপনি যে ধ্রুবকে বিয়ের আগে দেখেছেন সে ধ্রুব একটা নাটকীয় ব্যক্তি ছিল। যে আপনার কাছে ভালো সাজার জন্যে ক্রমাগত নাটক করে গেছে। আর এখন আপনি যে ধ্রুবকে দেখছেন ধ্রুব, এক ভয়ঙ্কর ঝড়ের নাম। এই ধ্রুব, এক মর’ণঘাতী অ’সুখের নাম। ধ্রুব, এক নি’ষ্ঠুর মানুষের নাম। তার হৃদয় পাথরের তৈরি। সে ডান হাতে মানুষ খু’ন করলে, বাম হাত তা টের পায়না। যে লোক একবার তার আয়ত্তের ভেতর চলে আসে, সে সারাজীবন ধ্রুবের শিকলে বন্দী থাকে। সেই বন্দী লোককে ভুলে যেতে হয় তার পরিবার, তার স্বাধীন জীবন। ধ্রুবের হাতের পুতুল হয়ে বেঁচে থাকে মরার আগ অব্দি। যেমন আমি বেঁচে আছি। ধ্রুব স্যারের সাথে কাজ করছি আজ দশ বছর। অথচ আজ অব্দি আমি আমার পরিবারকে একবার চোখের দেখা দেখিনি। ধ্রুব স্যার একপ্রকার বন্দী করে রেখেছেন আমায়।
আপনি জানেন, আপনি স্যারের প্রথম স্ত্রী কিংবা প্রেমিকা নন। ধ্রুব স্যারের ন্যায় পাথরের মত মনের অধিকারীর জীবনেও প্রেম এসেছিল বহুবার। প্রেম স্বাধীনতা কেড়ে নেয়না। বরং প্রেম মানুষকে বিশাল আকাশের নিচে শীতল বাতাস অনুভব করতে শেখায়। কিন্তু ধ্রুব স্যারের কাছে প্রেম হলো সম্পূর্ণ আত্মকেন্দ্রিক। তার কাছে প্রেম হলো নিজের কাছে আটকে রাখা। যে মেয়েকে ধ্রুব স্যারের মনে ধরবে, সেই মেয়ে সেদিন থেকেই তার হাতে বন্দী হয়ে যাবে। কিন্তু অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। স্যারের অতিরিক্ত ভালোবাসায় একসময় সেই মেয়ে হাঁপিয়ে উঠে। মুক্তি পেতে চায় তার থেকে। ধ্রুব নিজ হাতে তখন তার প্রেমিকাকে খু’ন করে ফেলে। আপনিও সেই পথেই হাঁটছেন ম্যাম।
ধ্রুব স্যারের এমন হওয়ার পেছনে আছে তার বাবার অকথ্য অ’ত্যাচার। ধ্রুব স্যারের মা ছিলেন আপনার মতই। সহজ সরল। কিন্তু তার বাবা ছিলেন ধ্রুব স্যারের ন্যায় ক’ঠিন, ভ’য়ংকর। ধ্রুব স্যারের বাবা স্যারের মাকে নিজের কাছে আটকে রাখতে একটা বাচ্চা চেয়েছেন। একজন সন্তান একটি পরিবারের সুখ নিয়ে আসে। কিন্তু ধ্রুব স্যার সুখ নিয়ে আসেন নি। এনেছেন বি’ষাক্ততা। ধ্রুব স্যারের মা, ধ্রুব স্যারকে খুব ভালোবাসতেন। সন্তান হওয়ার পর তিনি স্বামীকে বেশি সময় দিয়ে পারতেন না। এই নিয়ে স্যারের বাবা খুব রেগে ছিলেন। স্যারের মা যখন স্যারকে একা ফেলে গোসল কিংবা রান্না করতে যেতেন, স্যারের বাবা স্যারকে তখন ভীষন মারধর করে স্ত্রীর ঝাঁজ সন্তানের উপর মেটাতেন। স্যার কখনো বাবার ভালোবাসা পায়নি। মায়ের ভালোবাসাও বেশিদিন ভাগ্যে জুটেনি। একদিন স্যারের মা সু’ইসাইড করেন। কারণটা পুলিশ ধরতে পারেনি। তবে সবাই বলে ধ্রুবর বাবার অ’ত্যাচার ধ্রুবর মা সইতে পারছিলেন না। তাই তিনি সুইসাইড করেন। ধ্রুবর বাবা তারপর থেকে কেমন যেন মিইয়ে যান। কারো সাথে কথা বলেন না। তাকে মানুষিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকদিন ভর্তি থাকেন সেখানে। অতঃপর একদিন সেই হসপিটালে ধ্রুবর বাবা সু’ই’সাইড করে মারা যান। ধ্রুব স্যার একা হয়ে যান। তারপর নিজেই গড়ে তুলেন এক নতুন সাম্রাজ্য। বাবার কুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে হয়ে উঠেন প্রাণনাশ, ভয়ংকর পুরুষে।
পুনশ্চ..
১-মৃদুলকে ধ্রুব স্যার নিজের হাতে ট্রাকের তলায় পি’ষে খুন করেছেন। মৃদুল আপনাকে ভীষন ভালোবাসত, ম্যাম। সেদিন মরণ কালেও আপনার কাছে ফিরে আসার জন্যে ধ্রুব স্যারের কাছে ভীষন কাকুতি মিনতি করেছিল। কিন্তু ধ্রুব স্যার রেহাই দেন নি তাকে। আপনাকে পাবার জন্যে তিনি সেদিন রাতে খু’ন করেন মৃদুলকে। তার সাক্ষী আমি নিজে। তারপর নিজে ভালো হওয়ার নাটক করলে আপনাকে বিয়ে করেন।
২- ধ্রুব স্যার একটা পাগল পুষেছেন। আপনার মৃদুলের শেষ স্মৃতি নষ্ট করার জন্যে ফোন সেই পাগলটা ভেঙেছিল ধ্রুব স্যারের আদেশে। যখনি স্যার কোনো খু’ন করতেন, সকল দোষ ওই পাগলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেন। আমাদের দেশে পাগলদের সাজা হয়না। তাই সেই পাগল কদিন পরেই ছাড়া পেয়ে যেত। ধ্রুব স্যার আবার তাকে নতুন কোনো খু”নের মামলায় জড়িয়ে নিতেন। সেই পাগল থাকে বাগানের পূর্ব দিকের ওই কালো কক্ষে। আপনি সেদিন ওই কালো কক্ষে প্রবেশ করবেন বলে, ধ্রুব স্যার পাগলকে তাৎক্ষণিক সরিয়ে দিয়েছিলেন।
৩- মুনিজ ও তার স্বামীকে ধ্রুব স্যার আজ দুপুরে খু’ন করেছেন। তাদের খুনের মামলাও সেই পাগলের উপর দায়ের করা হয়েছে।
এই ছিল ধ্রুব স্যারের কুকীর্তির সকল প্রমাণ। ধ্রুব স্যারের পারসোনাল সেক্রেটারি হওয়ায় এসব কিছুর সাক্ষী আমি নিজে। ম্যাম আমি আপনাকে দুটো পথ বলছি।
১- আপনি পালিয়ে যান। আমি সাহায্য করব আপনাকে।
২- আপনি সারাজীবন ধ্রুব স্যারের কাছে বন্দী থেকে যান।
যেকোনো দুটো আপনাকে বেছে নিতে হবে। কোনটা বেছে নিবেন আপনি? আপনার সকল মতামতকে শ্রদ্ধা করব আমি। ‘

আয়েশী এসব পড়ে পাথর হয়ে যায়। শরীরের সমস্ত শক্তি অবশ হয়ে আসে। ধ্রুব এতটা খারাপ? মৃদুল…. আয়েশীর প্রাণের চেয়ে প্রিয় মৃদুলকে ধ্রুব খু’ন করেছে? এতটা মানুষের প্রাণ নিয়েছে ধ্রুব? আয়েশী ছাড়াও ধ্রুবর আরো প্রেমিকা ছিল? ছিঃ! কার সাথে এতদিন আয়েশী সংসার করেছে? এক মানুষরূপী জা’নোয়ারের সাথে? এক নিখুঁত অভিনেতার সাথে? ছিঃ! ঘে’ন্নায় আয়েশী মুখ থেকে থুতু ফেলে।
ওসমান প্রশ্ন করে,
‘ কোন পথ বেছে নেবেন, ম্যাম? ‘
আয়েশী ভাবে কিছুক্ষণ। অতঃপর বিবশ চাওনি দূরের পিচডালা সড়কে নিক্ষেপ করে বলে, ‘ আমি পালাব না, ওসমান চাচা। ‘#মৃত_কাঠগোলাপ – শেষ পর্ব
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
__________________________
‘ তুই আয়েশীকে সব বলে দিয়েছিস? ‘
ধ্রুবর হাতে ছুরি। সেই ছু’রি ক্রমাগত ধ্রুব ওসমানের মুখ থেকে গলদেশ অব্দি ছুঁয়ে দিচ্ছে। ওসমান আজ ভয় পাচ্ছে না। অদ্ভুত এক সাহস ওসমানের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ওসমান খিটখিটিয়ে বলে, ‘ হ্যাঁ, আমি সব বলে দিয়েছি ম্যামকে। আপনার পা’প আর কত এই পৃথিবী সহ্য করবে? এবার অন্তত থামুন। আর কত? ‘
ধ্রুব ছুড়ি এবার ওসমানের গালে ঠেকালো। দাবিয়ে দিল ছুড়ির অগ্রভাগ ওসমানের গালে। ওসমানের গাল কেটে র’ক্ত ফিনকি দিয়ে বের হল। ওসমান চোখ খিঁচে নেয়। ধ্রুব হিড়হিড় করে বলে, আমার খেয়ে, আমার পড়ে, আমারই পিঠে ছু’ড়ি মেরেছিস। এত বড় অপরাধ করলি, শা’স্তি পাবি না, তা কি করে হয়? ‘
ওসমান ধ্রুবর চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট কণ্ঠে বলে, ‘ মে’রে ফেলুন আমায়। আমি পরোয়া করিনা। আপনার কাছে থেকে পা’পের ভাগীদার হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ঢের ভালো। ‘
ধ্রুব হাসে। বলে, ‘ তবে ম’রেই যা। ‘
অতঃপর ছু’ড়ির এক ঘা বসিয়ে দেয় ওসমানের গলায়। ওসমানের গলা কে’টে বিভক্ত হয়। মাথা ঘাড় থেকে আলাদা হয়ে মাটিতে পড়ে। এক ফোঁটা র’ক্ত ধ্রুবর নাকের মধ্যে ছুঁড়ে পড়ে। ধ্রুব হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে রক্ত মুছে ওসমানের কাটা মাথার কাছে এসে দাঁড়ায়। বলে, ‘ আমার সাথে বি’শ্বাসঘাতকতা শাস্তি হয় মৃ’ত্যু! ভয়ঙ্কর মৃ’ত্যু! ‘

ধ্রুব লাশকে ঠিকানা লাগাতে বলে সে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। এখন আয়েশীর কাছে যাবে ধ্রুব। আয়েশী সব জেনে গেছে! ভালোই করেছে। এখন আর ধ্রুবকে আয়েশীর সামনে অভিনয় করতে হবে না। ধ্রুব যেমন আয়েশী ধ্রুবকে তেমনই দেখবে। হা হা হা!

‘ রক্তজবা! দরজা খুলো না। এই রক্তজবা। দরজা খুলো। আমি এসে গেছি। তোমার ধ্রুব এসে গেছে না? রাগ করছ কেন? দরজা খুলো। ‘
আয়েশী দরজা খুলে না। ধ্রুবর ভ্রু কুঁচকে যায়। ধ্রুব এবার দরজায় জোরে জোরে ধাক্কায়। ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসে না। ধ্রুব রেগে একাকার হয়। দরজা বন্ধ করে এতক্ষণ কি করছে?
ধ্রুব দরজায় গায়ের শক্তিতে এক ধাক্কা দেয়। দরজা ভেঙে পড়ে।
অতঃপর ধ্রুব থমকে যায়!
আয়েশীর দেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছে। আয়েশীর পা জোড়া নি’থর হয়ে আছে। হাত দুদিকে ঝুলছে। মুখ থেকে সাদা ফ্যানা বের হচ্ছে। ধ্রুবর মস্তিষ্ক ঘুরে উঠে। চোখ দুখানা বোধহয় কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। গলা কেপে উঠল। ধ্রুব ঘাড় হালকা কাত করে ফ্যালফ্যাল চোখে আয়েশীর ঝুলানো দেহের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে, ‘ রক্তজবা? ‘
ধ্রুবর রক্তজবা আজ উত্তর দেয়না। কেমন যেন ঠান্ডা পাথরের ন্যায় চোখ বুজে আছে। ধ্রুব হেলেদুলে আয়েশীর কাছে আসে। কাঁপা হাত উঁচু করে আয়েশীর হাত ছুঁয়ে দেখে। ঠাণ্ডা হাত। শ্বাসপ্রশ্বাস লক্ষ করে। নিঃশ্বাস নেই। রক্তজবা নিঃশ্বাস নিচ্ছে না কেন? যে নিঃশ্বাসের স্পর্শে ধ্রুবর পশম সোজা হয়ে যায়, আজ সে নিঃশ্বাস এত ঠান্ডা কেন? ধ্রুবর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। এই প্রথম ধ্রুবর মত নিষ্ঠুর, কঠিন, পাথরের তৈরি হৃদয়ের অধিকারী মানুষের চোখে জল এসেছে। ধ্রুব মাথা উচু করে আয়েশীর দিকে চেয়ে বলে, ‘ কেন করলে এমন, রক্তজবা? ‘

ধ্রুবর চিৎকারে বাড়ির সকল সার্ভেন্ট এসে জড়ো হয়েছে ধ্রুবর কক্ষে। আয়েশীর নিথর দেহ ফ্যানের সাথে ঝুলতে দেখে সবার চোখ কপালে উঠে গেছে। সবাই মুখে হাত চেপে বলে উঠে, ‘ ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন। ‘
আয়েশীর খুব কাছের সার্ভেন্ট হিয়া এগিয়ে আসে। ধ্রুব তখনো নিথর দৃষ্টিতে আয়েশীর দিকে চেয়ে। চোখের পলক ফেলতে ধ্রুব ভুলেই গেছে যেন। হিয়া ধ্রুবর কাছে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে, ‘ স্যার, আয়েশী ম্যামকে নিচে নামান। উনার কষ্ট হচ্ছে। ‘
হিয়ার কথায় টনক নড়ে ধ্রুবর। যেন হঠাৎ করে ধ্রুবর শকুনি মস্তিষ্ক সচল হয়ে উঠেছে। ধ্রুব উন্মাদের ন্যায় আচরণ করতে থাকে। আয়েশীর পা নিজের দুহাতে আগলে নিয়ে বিলাপ করে, ‘ এই রক্তজবা, এই আমার প্রাণের টুকরা। একবার ধ্রুব বলে ডাকো। সত্যি বলছি, আমি আর তোমায় আ’ঘাত করব না। তোমায় ভীষন ভীষন ভালোবাসবো। সামান্য একটু আ’ঘাত করেছি বলে এভাবে আমায় শাস্তি দেবে? এতবড় অ’ন্যায় কি করে করলে তুমি? এই রক্তজবা?’

আফসোস, ধ্রুবর রক্তজবা আজ নিরুত্তর! ধ্রুব আয়েশীর পায়ে একটা চেয়ার রেখে আয়েশীকে ঠায় দেয়। আয়েশীর গলা থেকে শাড়ির গিট খুলে আয়েশীকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আয়েশীর সারামুখে চুমু এঁকে আয়েশীর গলায় মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠে। বারবার বলে,
‘ এই রক্তজবা? এই? এই? একবার উঠ। এমন করে শুয়ে আছো কেন? আমার ভয় লাগছে। এই প্রথম আমার ভয় লাগছে। ধ্রুব ইউহান শেখ ভয় পাচ্ছ। তোমাকে নিয়ে। বুঝেছ? উঠ আয়েশী! এতবড় শাস্তি আমায় দিও না। দোহাই তোমায়। ‘
হিয়া এগিয়ে আসে। আয়েশীর মাথার কাছে এসে বসে। ধ্রুব এখনো আয়েশীর গলায় মুখ গুঁজে ক্ষমা চাইছে বারবার। অথচ আজ আয়েশী ধ্রুবকে ক্ষমা করবে না। আয়েশীর মৃ’ত্যু ধ্রুবর জন্যে সেরা শাস্তি ছিল। বাড়ির সকল সার্ভেন্ট আজ কান্না করছে। বাড়ির লক্ষ্মী তাদের সামনে আ’ত্ম’হত্যা করেছে। ইশ, কি ভীষন কষ্টের সংবাদ। সবার চোখে জল। একে একে সবাই মনে করতে লাগল, আয়েশীর উদারতা, মহত্ত, ভালোবাসা!
হিয়া চোখের জল ফেলে। ধ্রুব এখনও আয়েশীর গলায় মুখ গুঁজে আছে। হিয়ার হঠাৎ চোখ পড়ে আয়েশীর শাড়ির কোমড়ে গুঁজে রাখা একটি চিরকুট! হিয়া ধ্রুবকে জানায়,
‘ স্যার, একটি চিরকুট! ‘
ধ্রুব চিরকুট লক্ষ্য করে। আয়েশীর কোমড়ে হাত ছুঁয়ে চিরকুট হাতে নেয়। ধ্রুবর হাত স্পষ্ট কাঁপছে। না জানি চিরকুটে কি লেখা আছে? ধ্রুবর ভীষন ভয় করছে। চিরকুট খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ধ্রুব চিরকুট পড়ে। লেখা সেখানে,
‘ আমি মা’রা যাচ্ছি। জানি অবাক হবে। তোমায় শা’স্তি না দিয়ে আমিই বা কেন মা’রা যাচ্ছি। আসলে তোমাকে কেমন করে শা’স্তি দেওয়া যায় আমার জানা নেই। তুমি আদৌ শা’স্তি পাওয়ার যোগ্য না! সকল শা’স্তি তোমার হিং’স্রতার কাছে তুচ্ছ! তোমার পাপের শা’স্তি আদৌ এই পৃথিবীর আছে কি না জানা নেই। আমি জানি, এই পৃথিবীতে তুমি একজন মানুষকে ভীষন ভালোবাসো। আর সে হলো আমি, আয়েশী! আমি চাইলে তোমায় কঠিন থেকে কঠিন শা’স্তি দিতে পারতাম। তবে ভাবলাম, শা’স্তি দিয়ে লাভই বা কি? তুমি কখনো শুধরাবে না। তোমার জন্মই হয়েছে পা’পের জন্য। পৃথিবীতে ত্রাস চালানোর জন্যে। আমাদের সন্তান আসছে। হ্যাঁ, আমি ঠিক বলেছি। তুমি ঠিক তোমার বাবার মত ধ্রুব। তোমার বাবা যেমন তোমাকে অ’ত্যাচার করেছে। তেমনি তুমি আমাকে, আমার সন্তানকে অত্যা’চার করবে। আমার সন্তান তোমার আদর্শে বড় হবে। একসময় তোমার ন্যায় এই পৃথিবীর সর্বোচ্চ পা’পী ব্যক্তি হবে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। আবারো এক আয়েশীর জগৎ ধ্বংস হবে। মৃদুলের ন্যায় পবিত্র প্রেমিকের খু’ন হবে। নিখুঁত মায়াজালে ফাঁসিয়ে নিবে এক নিষ্পাপ মেয়েকে। আমি চাইনা আমার ছেলে বাঁচুক, তোমার মত পাপ করুক। আমি চাইলে পালাতে পারতাম। তবে আমি জানি, আমি তা পারব না। আমি পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকি না কেন,তুমি ঠিক আমাকে খুঁজে নেবে। শা’স্তি দেবে, আমাকে, আমার সন্তানকে। সবশেষে বন্দী হবো তোমার ইন্দ্রজালে আমি এবং আমার সন্তান। আমি চাইনা আমি যেমন কষ্ট পেয়েছি, জিন্দা লা’শ হয়ে গেছি, আমার সন্তানের কারণে অন্য কেউ এমন কষ্ট পাক। জানি, আমি খুব খারাপ মা। তবে একটা পা’পের জগৎ ধ্বংস করতে আমার এই স্বার্থ ত্যাগ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তুষার ভাই ঠিক বলেছে, আমি একজন খা’রাপ মেয়ে, খা’রাপ বোন। আজ আমি বলছি, আমি একজন খারা’প স্ত্রী এবং একজন খা’রাপ মাও বটে! তবে আমি আজ জিতে গেছি, ধ্রুব! তোমায় বি’ভৎস ভাবে হারিয়ে আজ আমি কি দুর্দান্ত ভাবেই বা জিতে গেলাম। আমি নেই, আমাদের সন্তানও আর নেই, ধ্রুব। আমাদের সন্তান আর নেই! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ধ্রুব! ভীষন কষ্ট! যে কষ্ট আমি ভোগ করেছি, সেই একই কষ্ট তুমি ভুগবে ধ্রুব। আজ বুঝবে তুমি, কি হারিয়েছ! চলে যাচ্ছি আমি। বিদায়! ‘

ধ্রুব চিরকুট পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখের কার্নিশ বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়ায়! ধ্রুব ফ্যালফ্যাল চোখে আয়েশীর পেটে হাত রাখে। বিড়বিড় করে বলে,
‘ আমাদের সন্তানকে তুমি মেরে ফেললে? আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে? এতটা খারাপ কি করে হলে তুমি? ‘

অতঃপর পুলিশ আসে। আয়েশীর ম’র’দেহ পোস্ট ম’র্টেম করা হয়। দাফন করা হয়। অথচ এতসব হয়ে গেল। ধ্রুব এখনো নির্বিকার হয়ে নিজের কক্ষে বসে আছে। অন্ধকার এক কক্ষ, যেখানে আলোর ছিঁটেফোঁটা নেই। এমন কক্ষে ধ্রুব আয়েশীর একখানা ছবি ও প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট নিয়ে বসে আছে। ধ্রুবর মত শক্ত ব্যক্তি আজ কাঁদছে। ভেতর ভেতর গুমরে ম’রছে। আজ ধ্রুব বুঝতে পারছে, তার পাপের শাস্তি! মৃদুল ম’রে যাওয়ায়, আয়েশী কতটা কষ্ট পেয়েছি আজ ধ্রুব বুঝতে পারছে। নিজের প্রিয় মানুষ নিজেকে ছেড়ে চলে গেল, বুক কতটা পুড়ে আজ ধ্রুব বুঝতে পারছে। আর বুঝতে পারছে বলেই ধ্রুবর ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে। আয়েশী কেন ধ্রুবকে নিজের হাতে মে’রে ফেলল না? আয়েশীর হাতে ম’রন ধ্রুবর জন্যে উপহার হত। আয়েশী ধ্রুবর থেকে নিজেকে কেড়ে নিয়ে ধ্রুবকে সর্বোচ্চ শা’স্তি কেন দিল? ধ্রুব কি করবে এখন? ধ্রুবর এই জগৎ নিয়ে আর একটুও আগ্রহ নেই। বেঁচে থাকলে আয়েশী ও নিজের সন্তানের কথা ভেবে, অপরাধবোধে ধ্রুব ধুঁকে ধুঁকে মরবে। তার চেয়ে বরং ম’রে যাওয়াই ঢের ভালো! হ্যাঁ! ঠিক ভেবেছে ধ্রুব!

ধ্রুব ইউহান শেখ আ’ত্মহ’ত্যা করেছেন। আজকের তাজা খবর! দেশের সকল টিভি চ্যানেলে এই নিউজ ছড়িয়ে গেছে। ধ্রুবর লা’শ ধোয়া হচ্ছে। ধ্রুবর চোখে বুজে রাখা। মুখে হাসি! আর মাত্র কিছুক্ষণ! তারপরই আয়েশীর কাছে, নিজের প্রিয়তমার কাছে, রক্তজবার কাছে পৌঁছে যাবে ধ্রুব। এর চেয়ে সুখের আর কিইবা হতে পারে! ধ্রুবর তর সইছে না। সবাই কেন ধ্রুবকে দ্রুত ক’বর দিচ্ছে না। ধ্রুবর লা শ দাফন করা হল। আয়েশীর কবরের ডান পাশে ধ্রুবকে কবর দেওয়া হল। দাফন কার্য শেষ করে সবাই চলে গেছে। ধ্রুব মিটমিটিয়ে হাসছে। অবশেষে সে শুয়ে আছে নিজের প্রিয়তমার পাশে। আজ থেকে ধ্রুব এবং আয়েশীকে আর কেউ আলাদা করতে পারবে না। কেউ না! ইশ, মকরে গিয়েও ধ্রুব আয়েশীর পিছু ছাড়লো না। আয়েশীর মেয়েটা শেষপর্যন্ত সুখী হতে পারলো না। জনমভর দুঃখকে সঙ্গী করে নিল। ইশ! কি ভীষন গা জ্বলে যাওয়া দুঃখ!

বৃষ্টি পড়ছে। ঝড়ো হাওয়া বইছে। কোথা হতে একটি মৃত কাঠগোলাপ ঝড়ে পড়ে ধ্রুব এবং আয়েশীর ককবরের ঠিক মাঝখানে। ধ্রুব চেয়ে আছে আয়েশীর দিকে! আয়েশীর চোখে ভয়! রক্ষে কি এবারেও হলো না?

ছোটবেলায় আমরা এক গল্প শুনতাম! এক ছিল রাজা, এক ছিল রানী! দুজন ম’রে গেছে। খতম কাহিনী। ধ্রুব-আয়েশীর কাহিনীটা খানিক এমনই। তাদের গল্পে বিচ্ছেদ ছিল না। কারণ ম’রে গিয়েও ধ্রুব আয়েশীর সাথে আছে। আয়েশীকে ভালোবাসছে। তবে তাদের মৃ’ত্যুর পরের কাহিনী আমাদের অজানা। তাদের কাহিনীটা এবার শুধু ধ্রুব আয়েশীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ! আমরা কেউ জানব না, মৃ’ত্যুর পরে তাদের কি হয়েছিল! কেমন আছে তারা?

পুনশ্চ…
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না! চাই সে ভালোবাসা হোক কিংবা দুঃখ হোক অথবা যন্ত্রণা হোক! ভালোবাসা, কারো কাছে সুখের নাম, কারো কাছে কেড়ে নেওয়ার নাম, কারো কাছে বেঁচে থাকার সম্বল, আবার কারো কাছে এক চিমটি য’ন্ত্রণার নাম! ধ্রুবর কাছে ভালোবাসা অর্থ কি ছিল? ধ্রুব, এক ম’রণঘাতী অ’সুখের নাম! ধ্রুব এক য’ন্ত্রণার নাম! ধ্রুব এক ভ’য়ংকর পুরুষের নাম! ধ্রুব মৃ’ত্যুর অন্য রূপ! অতঃপর এক ধ্রুব নামক মৃত্যুরও মৃত্যু হল! ধ্রুব ম’রে গিয়েও জিতে গেল। আর আয়েশী? হেরে গেল কি?

#সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here