#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা
#পর্ব_পঁচিশ
রোদ আর প্রয়াস বসে আছে ফুচকা হাতে আগ্রাবাদ পার্কে। আগ্রাবাদ থেকে খুব নিরব একটা রাস্তা আছে এই পার্কটিতে যাওয়ার পথে।নিরিবিলি জায়গায় বসে আছে দুজন, রোদের হাতে ফুচকা খুব আরাম করে খাচ্ছে সে, প্রয়াস দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে রোদের বাচ্চাদের মত করে ফুচকা খাওয়া, মনে হচ্ছে কোন ছোট বাচ্চা চকলেট খাচ্ছে খুব সন্তুষ্টির সাথে। দেখতে বেশ লাগছে প্রয়াসের, প্রয়াসের হাতে আরেক প্লেট ফুচকা আছে, রোদ নিজের হাতেরটা শেষ করে এটা খাবে, অদ্ভুত এই মেয়ে অন্য কিছু খাবে না,কিন্তু ফুচকা দিলে সে যত দাও তত খাবে।প্রয়াসের কাছে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তগুলোর মধ্যে একটি রোদের এই ফুচকা খাওয়ার দৃশ্য।মনে হচ্ছে রোদ না সে খাচ্ছে আর আত্নার সন্তুষ্টি পাচ্ছে।
ফুচকা খাওয়া শেষ করে রোদ বলে “এই তুমি খাওনি কেন??”
” খেলাম তো”
“কই খাইছো তুমি?”
“এই যে তুমি খেয়েছো তাতেই আমার খাওয়া হয়ে গেছে।”
“ইশ ফিল্মি ডায়লগ দিবা নাতো!”
” একদম না, আমার কাছে ও আগে আশেপাশের প্রেমিক প্রমিকাদের এসব দেখে বা শুনে মনে হতো কেমন ন্যাকা এরা, আর ন্যাকা সব কথাবার্তা! কিন্তু আজ বুঝেছি আসলে ভালবাসলে মানুষ এমন অদ্ভুত সব অনুভব করে যা চাইলে ও সে উপেক্ষা করতে পারে না।
রোদ বলে, “আইচ্ছা তাই?”
“প্রয়াস বলে আবার তুমি আইচ্ছা বলা শুরু করছো?”
” জি আইচ্ছা! বলেও হেসে কুটিকুটি হয়ে যায় রোদ।রোদের মাথায় যখন দুষ্টুমি চাপে সে আচ্ছা কে বলে আইচ্ছা। যদিও এই কথাটা শুধু তার কাছের মানুষের জন্যে প্রযোজ্য।
” প্রয়াস রোদের নাক টেনে বলে, “জি আইচ্ছা!”
দুজন শব্দ করে হাসে, যুগল ভ্রু জোড়া নাচছে, হাসছে তাদের চোখ
“প্রয়াস প্রশ্ন করে, “রোদ তোমার পরিক্ষাতো চলে আসলো, পরীক্ষা শেষে তুমি কি নিয়ে পড়তে চাও,আই মিন তুমি প্রফেশন হিসেবে কি নিতে চাও?”
” আমি একজন শিক্ষিকা হতে চাই।”
” তুমি খুব ভালো ছাত্রী তুমি চাইলে তোমার পেশা হিসেবে অন্য কিছু বেচে নিতে পারতে। শিক্ষিকা হিসেবে কেন জানতে পারি?
“হুম পারো, আসলে আমার কাছে মনে হয় শিক্ষকের পেশা সবচেয়ে সম্মানের পেশা। আমি বাচ্চাদের খুব কাছে যেতে পারবো। তাদের কিছু শিখাতে পারবো। জীবনে এমন একটা সুযোগ আমি হাত ছাড়া করতে চাই না।
আমি ইন্টার পাশ করে বাইরে যেতে চাই, যদি স্কলারশিপ পাই,আসলে আমি ছোটবেলা থেকেস্বপ্ন দেখে এসেছি আমি বাইরে যাবো পড়াশোনা করতে।”
“ওয়াও গ্রেইট, এমন চিন্তা করা তোমার দ্বারাই সম্ভব, এই জন্যই বলি এতো মেয়ে থাকতে আমি তোমাকে কেন ভালবাসলাম। এর কারণ তুমি সবার থেকে আলাদা অন্যন্য।
তাহলে তুমি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার প্রস্তুতি নাও।
আমার একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছি মনে হচ্ছে হয়ে যাবে, আর এই বছরই আমার মাস্টার্স শেষ হবে। তাই আর বসে থাকা ভালো দেখায় না। যদিও এর আগে চাকরি করতে চেয়েছি বাবা দিলো না।বলে আমার এতো টাকা কে খাবে, তোর ইচ্ছে হলে তুই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করিস।”
“তাহলেতো ভালোই হয়।তুমি চাকরি করবে। তাহলে আমরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিতে পারবো”
“তোমার এখনো ১২ ক্লাসের পরিক্ষা শেষ হলো না,পিচ্চি মেয়ে বিয়ে করবে, ইশশ কি শখ!”
“কি বললে তুমি, প্রেম করার সময় মনে ছিলো না, আমি পিচ্চি মেয়ে, নাকি পিচ্চি মেয়ের সাথে প্রেম করে বড় মেয়ে বিয়ে করার ইচ্ছে।”
“মন্দ হয় না কিন্তু! আসলে শুনেছি বয়সে বড় মেয়েরা স্বামীদের খুব আদর করে।তুমিতো আমার অনেক ছোট তুমি এমন করে আদর করতে করবে না।” বলেই অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছে প্রয়াস।
“রোদের খুব রাগ হয়, সে বুঝতে পারেনি প্রয়াস যে তাকে খেপাচ্ছে।
“এই তোমার মত লুচু ছেলে আমি দুটো দেখিনি, ছিঃ আমার মত ছোট মেয়ের সাথে প্রেম করে এখন বয়সে বড় বোন বিয়ে করবে। জঘন্য লোক একটা” প্রয়াসের শার্টের কলার টেনে টেনে বলে রোদ, প্রয়াস হাসছে।
প্রয়াস বলে, “এই শোনো তুমি যদি বিয়ে করতে চাও এখনি বলো, আমি করে নিচ্ছি, এখন সমস্যা হচ্ছে আমার কিন্তু বিয়ের পর পরই বাচ্চা চাই, না দিলে আমি আন্দোলন করবো।এখন তুমি বলো তুমি কি বাচ্চা নিতে পারবে, বাচ্চা নিলে কত দায়িত্ব তুমি জানো। বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়, পরাতে হয়, গোসল করাতে হয়, দুধ খাওয়াতে হয়।”
কি একটা ভেবে প্রয়াস একটু থেকে রোদের দিকে তাকিয়ে বলে, “এই তোমার তো এখন নাক টিপলে দুধ পড়ে তুমি বাচ্চাকে খাওয়াবে কি?” বলেই হো হো করে হেসে দেয় প্রয়াস।
“রোদ এবার প্রয়াসের বুকে কিল বসাতে থাকে, “কি অসভ্য জঘন্য লোক। ছিঃ! কিসব ভাষা।”
“প্রয়াস রোদের হাত দুটো ধরে বলে, “এই যা তুমি এইটুকুতেই ভয় পেয়ে গেলে, তুমি বিয়ে করবে কিভাবে? তাহলে তুমি জানো বিয়ে করলে কি কি করতে হয়? আর বাচ্চা হবে এটা বলেছি, কিন্তু বাচ্চা হতে হলে ও তার প্রসেসিং করা লাগে সেটা বললে তো মনে হয় তুমি আমাকে মেরেই ফেলবে। এই জন্যই বলছি ছোট মেয়েকে বিয়ে করবো না। তুমি পারবে না।”
আচমকা রোদ বলে উঠে আমি পারবো, “সব পারবো।”
বলেই ঠোঁটে কামড় দেয়, ইশ কি বলে ফেললাম।এটা ভেবেই দুহাতে মুখ ডেকে ফেলে।
প্রয়াস হাসতে হাসতে সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে পড়ে। প্রয়াস চোখ বন্ধ করে হাসছে, রোদ এই সুযোগে প্রয়াসকে দেখছে, খুব স্নিগ্ধ লাগছে প্রয়াসকে। রোদের খুব ইচ্ছে করছে এই সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে থাকা প্রয়াসের বুকে মাথা রাখতে কিন্তু লজ্জা আর সংকোচে তা আর করা হয়ে উঠে না।এমনিতেই নিজের এমন বেফাঁস কথার জন্য খুব লজ্জা লাগছে।
প্রয়াস উঠে বসে বলে, “চিন্তা করো না আমি পিচ্চিকেই বিয়ে করবো। যদি পিচ্চি না-ও চায় জোর করে করবো। তবু পিচ্চিকে ছাড়বো না।”
প্রয়াস রোদের কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে, “আর আমি জানি পিচ্চি খুব ভালো পারবে!”
“রোদের কান এই মুহুর্ত গরম হয়ে গেছে, প্রয়াসের এই কথায় ঝাঁ ঝাঁ করছে, মনে হচ্ছে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে। পুরো শরীরে একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠে। এক অচেনা অনুভূতি মনের মাঝে চেপে বসেছে, এমনিতেই সন্ধ্যা নেমে আসছে গোধূলীর সুন্দর আলো হালকা মিষ্টি বাতাস শরীরে মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। তার উপর এমন একটা কথা যেন রোদের শরীরের প্রতিটি লোমকুপে শিহরণ দিয়ে গেলো। অবচেতনভাবেই প্রয়াসের হাত খামচে ধরে রোদ। খুব ইচ্ছে করছে প্রয়াসের বুকের সাথে মিশে যেতে। কিন্তু জড়তার জন্য তা হয়ে উঠে না। প্রয়াস বুঝতে পারে রোদের কি হয়েছে। তাছাড়া রোদের এমন আচমকা আকড়ে ধরায় তার ভেতরে রোদের মত আকাংখা জেগে উঠে। তার উপর এই সময়টা কেমন রোমান্টিক। আর বেশীক্ষন এখানে থাকা যাবে না।রোদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে এখন। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রয়াস রোদকে বলে, “চলো বাসায় যাই। তোমার বাসায় চিন্তা করবে।”
রোদ বুঝতে পারে প্রয়াস ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাচ্ছে তাকে, তাই শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক উত্তর দেয়।
দুজন রিকশায় উঠে চাইলেও কেউ কোন কথা বলতে পারে না।
প্রয়াস অনেকক্ষণ চেষ্টা করে বলে, “ফুচকা খাবে?
রোদ আবার মাথা নাড়িয়ে না করে দেয়।
প্রয়াস অবাক হয় রোদ ফুচকা খাবে না বলছে, যে কি না ফুচকা জোর করে খায় যদি সে বেশী খেতে বারন করে পেট খারাপ হবে বলে। কিন্তু এখন বারন করছে।প্রয়াস আর কথা বাড়ায় না।
রোদকে নামিয়ে দেয় প্রয়াস, রোদের বাসার আগে একটা তিন রাস্তার মোড় আছে সেখানে। রোদদের বাসার সামনে কখনও যায়নি প্রয়াস। কারণ রোদ চায়না কেউ তাদের এক সাথে দেখে ফেলুক।
পুরো রাস্তায় কেউ কোন কথা বলেনি।রিকশা থেকে নেমে রোদ ক্ষিন সুরে বলে, “আসছি।”
প্রয়াস হেসে বলে, “এসো। কল দিও।”
রোদ মাথা নাড়ায়।
রোদ চলে যাচ্ছে প্রয়াস পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে সেই পথের দিকে।প্রতিদিন অনেকবার পেছন ফিরে তাকালেও আজ রোদ একবার ও তাকায়নি। প্রয়াসের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। রিকশা মামাকে বলে চলেন মামা।
রোদ বাসায় এসে মাকে বলে,”আমার মাথা ব্যাথা করছে মা। আমি খাবো না।” বলেই রুমে চলে যায়।
রুমে গিয়ে দেখে মেঘলা নেই। মাকে জিগ্যেস করলে বলে, “মেঘলা তার বান্ধবীর বাসায় গেছে সেখানে থাকবে।”
রোদ মনে সস্থি পেলো। তার মন খুব খারাপ একটু একা থাকা প্রয়োজন, এখন মেঘা থাকলে বকে বকে মাথা খারাপ করে দিতো, হাজারটা প্রশ্ন করতো। এই ভালো একা থাকা যাবে রোদ দরজা আটকিয়ে দিয়ে। ওয়াশরুমে ঢুকে জোরে পানির টেপ ছেড়ে দাড়িয়ে যায় ঝরনার সামনে।এ তোক্ষনপর গলায় ধলা পাকিয়ে থাকা কান্না যেন বের হয়ে আসে। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু এই সামান্য বিষয়ে কেন কষ্ট হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। এমন অদ্ভুত কান্ড সে কখনো করে নি। তবে কি সেই আকাংখিত চাওয়াটি পুরন হয়নি বলেই তার এতো কান্না পাচ্ছে?
কিন্তু এমন চাওয়া মনে আসাটাও অন্যায়, তাহলে কেন এমন কষ্ট হচ্ছে তার।
এতোটা ভালবাসে সে প্রয়াসকে!!!
এভাবে কতক্ষণ বসে ছিলো ঝরনার নিচে কে জানে। বের হয়ে দেখে রাত ১১টা।
ওইদিকে প্রয়াসের মন খুব খারাপ হয়ে গেলো। সে ভাবছে, সন্ধ্যা নেমে আসছিলো। কেউ দেখতে পেতো না। কি হতো যদি একবার রোদকে বুকে জড়িয়ে নিতো! কেন সে পারলো না এই কাজটা করতে। কেন রোদের চাওয়া বুঝতে পেরেও সে সায় দিতে পারেনি। নাকি একবার বুকে জড়িয়ে নিলে তাকে আর ছাড়তে ইচ্ছে করতো না। এই ভয়ে সে রোদকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারেনি। তার চাওয়াগুলো আরও বেড়ে যেতো এই ভয়ে সে রোদকে দূরে রেখেছে। আর যাই হোক সে ও মানুষ কোন সাধু সন্ত না।তাই এই ভালো সে রোদকে সম্মানতো করতে পেরেছে।
এসব বলে নিজেকে বুঝালেও মন খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। বারবার মনে পড়ছে রোদের সেই ব্যকুলতা ভরা চোখের চাহনিতে।
ইচ্ছে করছে রোদকে বুকের সাথে পিশে ফেলতে, কিন্তু সে তা করতে পারছে না।
দুজন মানুষের এক অসম্ভব অস্থির রাত কাটলো নির্ঘুম।
এমন অস্থিরতা নিয়ে কি আর ঘুমানো যায়?
পরদিন সকালে রোদ কলেজে এসে ক্লাসে চলে আসে। অন্যান্য দিনের মত প্রয়াসের জন্য অপেক্ষা করে না সে। কেন যেন ইচ্ছে করছে না আজ প্রয়াসের মুখোমুখি হতে। কিন্তু সে জানে প্রয়াস তাকে ঠিক খুঁজে বের করবে।
প্রয়াস কলেজে এসে রোদকে খুজতে লাগে, কিন্তু খেয়াল করে দেখে, রোদদের ক্লাস বসে গেছে। রোদ ক্লাসে। এখন আরও ৪৫মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।ধুর এমনিতেই ভালো লাগছে না তার উপর ম্যাম ডেকেছে বলে কথা বলতে গিয়েই রোদকে পেলো না সে।সারারাত অপেক্ষা করার পর এখন আর এক মিনিট ও অপেক্ষা করতে মন চাইছে না।
সকালের সাথে বসে আড্ডা দিতে হবে তাহলে সময় কাটবে।তাই প্রয়াস সকালের কাছে যায়।
কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে তার কেন যেন এখানে মন বসছে না।
অবশেষে রোদদের ক্লাস থেকে স্যারকে বের হতে দেখে প্রয়াস, সাবাকে পাঠায় রোদকে ডাকতে।
সাবা রোদকে নিয়ে আসে। রোদকে একা রেখে প্রয়াসের কাছ থেকে তারা সবাই চলে যায়।
প্রয়াস রোদকে বলে, “আজ আমার সাথে বের হতে পারবে?”
“না, আমার ক্লাস আছে।”
“প্লিজ রোদ চল না, একটু সময়ের জন্যে।”
“না, আমি যেতে পারবো না।কাল গিয়েছি,আজ আর পারবো না।প্লিজ আমাকে রিকুয়েস্ট করবে না।” রোদের কথাবার্তা খুব স্বাভাবিক।
“আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে চল ফুচকা খেয়ে আসি।
“কি হয়েছে তোমার? তুমি সবসময় পড়াশোনার জন্য আমাকে কঠিন ভাবে শাসন কর, আর সেই তুমি আজ বলছো ক্লাস না করতে কি হয়েছে তোমার?”
“সরি রোদ কাল আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”
“কিসের কষ্ট বলতো! আমার তো মনে নেই। ”
“আমি জানি তোমার মনে আছে। প্লিজ রাগ করোনা।”
“আমি রাগ করিনি, বরং খুশী হয়েছি। তুমি আমাকে এতোটা রেস্পেক্ট কর? খুব ভালো লেগেছে আমার।”
“আচ্ছা তাহলে চল ফুচকা খাওয়াবো তোমাকে।”
“আচ্ছা দেখি কি করা যায়, আর শুনো কাল ভাইয়া আসছে দেশে, এবার আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। ভাইয়া সবসময় কলেজের এদিকে থাকে।”
“কি বলছো? তাহলে কি আমার ছোট বউটার থেকে আমি আর সময় পাবো না।”
“হয়তো খুব একটা বের হতে পারবো না। কিন্তু প্রতিদিন দেখা হবে এইতো অনেক।”
“রোদ আমার না কেন যেন ভয় লাগছে।”
“কেন? কিসের ভয়?”
“তোমাকে হারানোর ভয়।”
“আমাকে তুমি কখনো হারাতে পারবে না। কারণ তুমি চাইলে ও আমি তোমাকে হারাতে দিবো না। আমি আমার জীবনে যা চাই তা নিজের করে নিবোই। সে যা কিছু করতে হয় করবো।”
“সেটাই যেন হয় ম্যাডাম। নাহলে আমি আপনাকে মেরে নিজে মরে যাবো।”
“এতো বড় মানুষের মুখে ইমম্যাচুয়েড কথা মানায় না স্যার।আর আপনাকে আমি আমাকে মারতে দিবো, কিন্তু নিজেকে মারতে দিবো না।
“আচ্ছা তা এখন কি একটু আমার উপর কৃপা হবে?
“জি জনাব হবে।”
“শুনো আগামী পরশু আমার এক কাজিনের বিয়ে আমি কলেজে আসবো না।”
“আরে পরশু তো আমার ও এক কাজিনের বিয়ে রোদ।”
“বাহ ভালোই হলো দুজনের কাউকে কলেজে এসে বিরহের গান গাইতে হবে না।”
“হু।”
★★★
সাবা বসে আছে ক্লাসে, আজকাল সকালকে সাবা এড়িয়ে চলে। কেন সেটা সকাল বুঝতে পারছে না।
কিন্তু এই এড়িয়ে চলা যেন মেনে নিতে পারছে না সকাল। বুকের ভেতর কেমন যেন এক অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। কিন্তু এর কারণ সে জানেনা।
আজ সাবার সাথে কথা বলতেই হবে। নাহলে মনকে বুঝাতে পারবে না।
ওইদিকে সাবা সকালকে এড়িয়ে যাচ্ছে কারণ সে জানে সকাল কোনদিন তার ভালবাসা বুঝবে না।
কিন্তু আজ সকাল সাবার সাথে কথা বলবেই, যাই হয়ে যাক।সাবা ক্লাস থেকে বের হয়ে বাসার জন্য রওনা দিতেই সকাল তার পথ আগলে দাঁড়ায়।
“কিরে সাবা তোর বিয়ে হবে সেই খুশীতে বন্ধুদের ছেড়ে দিচ্ছিস? বাহ বিয়ে না হতেই এতো বদল, বিয়ে হলে কি করবি?”
“আমি বাসায় যাবো, আমার তাড়া আছে সকাল।”
“আমার তাড়া নেই। অনেকদিন ধরে এড়িয়ে যাচ্ছিস আর সেটা মেনে নেয়া যায় না। তোর সাথে এতো দিনের বন্ধুত্ব সব তুই ভুলে গেলি?”
“হ্যাঁ ভুলে গেছি এখন তুই কি করবি?”
“আমি কিছুই করবো না। কিন্তু তোর মত স্বার্থপর মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করেছি মনে হলেই ঘা ঘোলায়।”
“শাট আপ সকাল, অনেক হয়েছে আর বলিস না। কি সমস্যা তোর। আমার সামনে বিয়ে। আর বিয়ের পর যেন বন্ধুর জন্য কোন অসুবিধায় না পড়তে হয় তাই এখন থেকে তোর সাথে কথা কমিয়ে দিয়েছি। এখন আমি আমার ভালোর জন্য এটা করতেই পারি, তাতে তোর কি আসে-যায়?”
“আমার কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু তুই এমন কেন করবি? কই সবার সাথে তো খুব হেসে হেসে কথা বলিস, আমায় দেখলে তোর কি হয়? আমি কি তোর শত্রু?”
“হ্যাঁ তুই আমার সবচেয়ে বড় শত্রু। আর তুই না আমার কথায় বিরক্ত, আমার কথা নাকি সহ্য হয় না। তাহলে এমন কেন করিস। আমি তোর সাথে কথা না বললে নাকি তোর কোন কিছু আসে যায় না! তাহলে এখন আমি তোর সাথে কথা বলি বা না বলি তাতে তোর কি সমস্যা?”
“আমার কোন সমস্যা না, ইনফ্যাক্ট আমি তোর সাথে কথা না বলেই বরং ভালো আছি।তোর বিয়েটা কেন যে পিছিয়ে গেলো, না পিছিয়ে হয়ে গেলেই আমি বেচে যেতাম।”
“সেটা আমি বুঝি। আমি তোর পথের কাটা। আমি সরে গেলেই তুই ভালো থাকবি। চিন্তা করিস না। আমি আজকে গিয়েই রাকিব ভাইয়াকে কল দিয়ে বলবো তাড়াতাড়ি আসতে। তোকে যাতে মুক্তি দিতে পারি। আমি কেন এমন করি আল্লাহ না করুক কোন দিন যেন তোর বোধগম্য না হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশী কষ্ট তোর হবে সকাল। সেদিন রাকিব ভাইয়ার কাজ পড়ে গিয়েছিলো বলেই আসেনি। তা না হলে এখন আমাদের একটা বাবু থাকতো এই দুবছরে।” এই কথা বলে আর এক মিনিট ও দাড়ায়নি সাবা হনহনিয়ে চলে গেলো সকালের সামনে দিয়ে।
সকাল সাবার পথের দিকে তাকিয়ে আছে বেআক্কেলের মত।
কি বলে গেলো সাবা। সাবার লাস্ট কথাগুলো মনে হলো সকালের বুকে তীরের মত লাগলো। এভাবে কেন বলে গেলো সাবা? আর সাবার বিয়ে বাচ্চা এসবের কথা শুনেই বা তার এতো খারাপ লাগছে কেন? সাবার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে সাবা সকালের সাথে ঠিক করে কথা বলে না। সেই থেকে সকালের অনেক কষ্ট হয় সাবাবিহীন দিন রাত কাটাতে।সাবা প্রতিদিন রাতে ঝগড়া করে সকালের সাথে।সকাল যেদিন কল দেয় সেদিনই ঝগড়া। অথচ একদিন তারা রাতের পর রাত কাটিয়েছে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে।
কিন্তু সকাল নিজের অনুভূতি এখনও বুঝতে পারছে না।অন্য সব বন্ধু থেকে সাবা তার কাছে অন্যরকম। সবসময় ঝগড়া কথা কাটাকাটি। কিন্তু সেই সাবাকে ছাড়া যেন এক মুহুর্ত থাকতে পারছে না সে। কি হয়েছে তার? প্রয়াসের সাথে এটা নিয়ে কথা বলতে হবে।
মানুষ কি অদ্ভুত নিজের অনুভূতি নিজেই বুঝে না? নিজের চাওয়াগুলো বুঝতে এতো দেরি কেন হয় মানুষের? যখন বুঝে তখন আর কিছু করার থাকে না। কি হয় একটু আগে বুঝলে।কি হয় মনের সব কথা বলে দিলে। অদ্ভুত মানুষ যেটা মনের কথা সেটা মনে রাখে গোপনে যত্ন করে। আর যা দূরত্ব বাড়ায় তাই সে মুখে বলে, মনে হয় একে অন্যকে আঘাত করে আনন্দ পায়।
জীবন কেন এমন?
চলবে…