#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#তেত্রিশ
প্রজ্ঞা জামান দৃঢ়তা
রোদ, সুচি, সনি,বসে আছে সবার থেকে একটু দূরে।
রোদ বলে, “কিরে রহিম, রাহাত,তোদের দেখে কেমন রিয়াকশন দেখালো বললি না।”
“সুচি, সনির মুখে হাসি উজ্জ্বল হাসি।সে হাসিতে ভোরের সদ্য ফুটে উঠা গোলাপ ফুলের মত সৌন্দর্য!”
ঠিক যেমনটা অনেক অপেক্ষার পর ভালবাসার মানুষকে দেখতে পাওয়ার সুখ লাভ করে ঠিক তেমনি।
সুচি বলে, “আমি রাহাতকে বলেছি আমাদের বাসায় যেতে আম্মা অসুস্থ।”
রাহাত এটা শুনে বাসায় আসে। ভাবী তাকে, বলে ছাদে অর্পা আছে একটু নিয়ে আসতে। অর্পা মানে আমার ভাইয়ার মেয়ে।
ভাবীকে হাসপাতালে যেতে হবে আম্মাকে নিয়ে।
রাহাত ছাদে আসে। তখন সন্ধ্যা নামে। চারপাশে অল্প আলো অল্প আধাঁর মিষ্টি শীতল বাতাস। যা শরীরকে হীম করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
আকাশের চাঁদটা ঠিক যেন অর্ধবৃত্ত।
মানে বৃত্তের অর্ধেক!
আমি দাড়িয়ে আছি ছাদের কার্নিশের সাথে লেপ্টে। রাহাত আসে, প্রথমে সে অনেকটা শব্দ করে উপরে উঠে আসে। ওর পায়ের শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছিলাম।
যেমনটা কোন কাজে তাড়া থাকলে মানুষ করে ঠিক তেমনটা।
ছাদে পা রাখতেই রাহাতের পায়ের শব্দ ধীর হয়ে আসে! আমি তা দেখতেই তাকাই পেছনে। দেখি একটা সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট পরিহিত একটা ছেলে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। হয়তো অফিস থেকে এসেছে তাই একদম ফর্মাল লুক!
আমি জানিনা আমার মুখটা তার কাছে স্পষ্ট ছিলো কি না?
তবে তার মুখটা আমার কাছে দিনের আলোর মত স্পষ্ট ছিলো। হতে পারে দিনের আলো থেকে একটু বেশী স্পষ্ট!
সে এগিয়ে আসছে আমার দিকে ধীরে ধীরে আর আমার হৃদয়ের কম্পন বেড়ে যাচ্ছিলো কয়েক হাজার কিংবা কয়েক লক্ষ গুনে!
এতোদিন পর ছেলে বেলার সেই বন্ধু টিকে দেখে, এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে মনের মাঝে।
চারবছর আগে যে বন্ধুটিকে রেখে গিয়েছিলাম ঠিক তেমনটা নেই সে। দেখতে একদম পরিনত লাগছে!
হালকা গড়নের শ্যামলা বর্নের ছেলেটার মুখে পরিনতর চাপ স্পষ্ট। তার সাথে সৌন্দর্য বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
আমি জানিনা তোদের কাছে কেমন লাগছে। কিন্তু আমি জানি আমার কাছে কেমন লাগছে!
সেই ছেলেটি এসে দাঁড়ায় আমার পাশে। এক হাত দুরত্বে এই জিনিসটা আমায় খুব অবাক করে! কারণ আগের রাহাত আমাকে কয়েকটা দিন পরে দেখলেই জড়িয়ে ধরে ফেলতো!
আজকের রাহাত জড়িয়ে ধরছে না। বরং এক হাত দূরে দাড়িয়ে আছে।তাকাচ্ছে না। আমার দিকে!
অথচ আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে। আর অবাক হচ্ছি!
আর মনে জমছে একটু অভিমান। ভাবতে লাগলাম দূর কেনো এলাম দেশে। যার জন্য আসলাম সে তাকাচ্ছে পর্যন্ত না! খুব কান্না পাচ্ছিলো আমার।
কিছুটা সময় দাড়িয়ে ছিলাম। যখন দেখলাম পাশের মানুষটির দৃষ্টি আকাশে তখনও রাগ হলো। চলে আসতে চাইলাম জায়গাটা থেকে। যেই চলে আসবো পেছন থেকে কেউ একজন আমার হাত টেনে ধরেছে।
অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করলাম কি জানিস! তার হাত কাঁপছে!
শুধু হাত না ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম হাত না শুধু। পুরো শরীর কাঁপছে তার!
আরও একটা বিষয় খেয়াল করলাম তার স্পষ্ট মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। যে হাতে আমার হাত ধরেছে সেই হাতের ঘামে ভেজা ভাব বুঝতে পারলাম আমি!
আমি শুধু অবাক হলাম!
খুব খুব খুব অবাক!
যে ছেলে আমার ঘা ঘেষে বসতো সবসময় সেই ছেলে! সেই ছেলে হাত ধরতে ঘামছে, কাঁপছে?
তারপর বুঝতে পারলাম। বয়সের পরিনত হওয়া বোধহয় এটাকে বলে।
বয়সের সাথে সাথে প্রতিটি মানুষের মাঝে পরিপক্কতা আসে।
“বেখেয়ালি প্রেমিক হয়ে ওঠে অধিক যত্নবান।
অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ করা প্রেমিক হয়ে যায় ধৈর্যশীল প্রেমিক!”
অল্প বয়সের যে প্রেমিক সারাক্ষণ প্রেমিকার কাছে আসার কিংবা স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখে। আর সেটাকে অধিক ভালবাসা বলে মনে করে। পরিনত বয়সে সেই প্রেমিকের প্রেম ও বয়সের সাথে সাথে ভারী হয়ে যায়।
সম্পর্কে সম্মানের দিকটা বেড়ে যায়।
আর সেটা যখন বুঝতে পারলাম। রাহতকে আরও বেশী ভালবেসে ফেললাম। লক্ষ কোটি গুনে তার প্রতি আমার সম্মান বেড়ে গেলো।
দুজনের মাঝে খুব বেশী কথা হয়তো হয়নি। কিন্তু এই যে দুজন দুজনের পাশে দাড়িয়ে ছিলাম অনেকটা সময়। মনে হচ্ছিলো আমি তার হৃদয়ের প্রতিটি কম্পন অনুভব করছিলাম। বুঝতে পারছিলাম তার মনে কি অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে! হয়তো একইভাবে সেও আমার নিঃশ্বাসের প্রতিটি বাক্য বুঝতে পারছে!
মুহুর্তে মনে হলো এতো সুখী কেনো আমি! এমন কাউকে পেলাম যে বন্ধু প্রেমিক আবার হয়তো স্বামী হবে!
এই যে এতোগুলো বছর ভালবাসা মানে কাছে আসা মনে করতাম। আজ বুঝতেছি ভালবাসা কখনোই কাছে আসা না।
ভালবাসা তো অপেক্ষা!
ভালবাসা তো শুদ্ধতা!
ভালবাসাতো একে অপরকে পড়তে পারা!
ভালবাসাতো মনের মাঝে ধরে রাখা!
আর বাকী রইলো স্পর্শ সেটা তো শুধু ভালবাসার পরিনয়। ভালবাসার একশো ভাগের একটা অংশ। যেটা না থাকলে হয়তো নিরানব্বই একশো হয়না! তবে এই একের জন্য নিরানব্বইয়ের গুন ফিকে হয়ে যায় না।
রোদ আর সনি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো সুচির ভালবাসার কথা। মনে হচ্ছিলো তারা শুনছে না। বরং তাদের সম্মুখে ঘটছে। আর সেই ঘটনা দেখে তারা তৃপ্তি লাভ করছে।
রোদ সুচিকে জড়িয়ে ধরে। সনি ও যোগ দেয়।
রোদ বলে, “ঠিক বলেছিস দোস্ত কাছে
“থাকা মানে ভালবাসা নয়!
দূরে থাকা মানে দুরত্ব বেশী নয়”
রোদ বলে, সনি এবার তুই বল তোর কি হয়েছিলো?
সনি বলতে যাবে তখন ইরা এসে তাদের ডাকে। চল সবাই তোমাদের ডাকছে।ননদিনীরা চার বছর একসাথে থেকে বুঝি কথা শেষ হয়নি? এখন আমাদের সময় দাও প্লিগ?
সবাই প্লিগ শুনে হাসে।
রোদ ইরা কে জড়িয়ে ধরে বলে, “ভাবীজান আমাদের কথা বুড়ো হলেও শেষ হবে না। তখন দেখা যাবে কার ছেলের বউকে কতটা জ্বালানো যায় সেই কুটিল বুদ্ধি বের করবো তিন বান্ধবী মিলে।”
সবাই হাসে।
দুর থেকে দুটি চোখ রোদের উপর নিবদ্ধ আছে। রোদ দেখলে হয়তো বুঝতে পারতো সেই দুটি চোখকে কতটা অতৃপ্ত দেখাচ্ছিলো। কতটা অসহায় দেখাচ্ছিলো! মনে হচ্ছে জনম জনমের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে দুটি চোখ!
ইরার সাথে বান্ধবীরা আবার আগের জায়গায় গোল হয়ে বসা দলটির দিকে যায়।
রোদের বাবা আল মাহমুদ রহমান বলে, “রোদ মা অনেকদিন তোর আবৃত্তি শুনি না।একটা আবৃত্তি শুনাবে মা?”
রোদ মাথা নাড়িয়ে হাসি মুখে সায় দেয় বাবার কথায়।
প্রয়াস বসে আছে রিপাতে পাশে। তার কোলে তার বাচ্চা।
রোদ একবার সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবে তোমাকে দেখে খুব সংসারী লাগছে প্রয়াস ভাইয়া! কতটা যত্ন করে মেয়েকে কোলে নিয়েছো আদর করছো!
হয়তো স্বামী হিসেবেও তুমি যত্নবান। আর ভাবতে পারেনি রোদ। বুকের ভেতর যন্ত্রনাটা বেড়ে যায়। চোখ নামিয়ে নেয় সেদিক থেকে।
কবিতা আবৃত্তি শুরু করে।
বছর চারেক পর
-সৃজা ঘোষ
❝দেখা হল বছর চারেক পর।
তুইও এখন অন্য কারোর বর, অন্য কারোর ঘর।
এখন অনেক হাল্কা রঙের শার্ট,
ঠোঁটের নীচের চুম্বকটাও নেই
ভিড়ের মাঝে দেখতে পেলাম তোকে,
দাঁড়িয়ে গেলাম বিপদ পাড়াতেই।
এখন অনেক শান্ত হয়েছিস,
রগচটা সেই চোখ দুটো ‘সংসারী’…
বছর চারেক পরে আবার দেখা,
মুখ ঢেকেছে কাঙ্ক্ষিত চাপ দাড়ি!
এখন অনেক বুঝতে পারিস বুঝি?
আমার প্রিয় গন্ধটা আর মাখিস?
নতুন মানুষ আদর করার পরে-
আলগা পিঠে জল-আলপনা আঁকিস?
আমার মতন সেও কি অভিমানী?
চুল খুলে দেয়?, লাল টিপ সেও পরে?
আচ্ছা, অমন ঝক্কি পোহায় কে তোর!
কেই বা এখন মিথ্যে নালিশ করে?
নেভি ব্লু-টা ছাড়াও তো শার্ট পরিস,
আমার বেলায় রাজিই হতিস না যে?
আচ্ছা এখন বাংলা ছবি দেখিস?
নাকি আজও আঁতেল ছবি- বাজে?
এখনও কি ঠান্ডা লাগার ধাঁচ?
মাথা মুছিস কার বকুনি খেয়ে?
ফুটবলে আর হাত পা কাটিস নাকি?
ভাল্লাগে আর কাব্য করা মেয়ে?
আগের মতই দেরিতে ঘুম ভাঙে?
নাকি ‘নতুন’ আগেই জাগায় তোকে?
কানের নরম কামড়ে ধরে কেউ,
একটা কিছু বলতে চাওয়া ঝোঁকে!?
নতুন মানুষ বৃষ্টি ভালবাসে?
আমার মতন জোর করে ভেজবার?
নাকি এখন তোর বারণের জোরে,
বৃষ্টি থামায় বর্ষা হাজার বার!
সেই ব্যথাটা আজও জ্বালায় খুব?
সেও কি জানে কপাল টিপে দিতে?
আচ্ছা অমন জাপটে ধরে সে-ও?
পেছন থেকে ঝাঁপায় অতর্কিতে?
তার নিশ্চই বুকের ব্যথা নেই,
নিশ্চই নেই মন খারাপের ব্যামো?
আজকে কেমন প্রাপ্ত দেখায় তোকে,
আগের মতন নাক উঁচু নস কেন!
এই তো কেমন বেল্ট ঘড়িও পরিস,
আমার বেলাই চেনের বাড়াবাড়ি?-
নতুন মানুষ দিব্যি রেখেছে তো!
কক্ষণো তার জন্যে বলিস ‘আড়ি’?
কাবাব আজও অমন ভালবাসিস?
মাংস খেকো নাম কি দিতাম সাধে
আজকে দেখি ভিড়ের মাঝে তোকে
সত্যি গুলোই বলতে কেমন বাধে…
আচ্ছা, তোর ওই অভ্যেস টা আছে?
অল্প কথায় আজও ছেড়ে আসিস?
নতুন মানুষ ঝগড়া করার আগেই,
বুকের ভেতর অমন ভালবাসিস!
তারও হঠাৎ মন্দ কিছু হলে,
চুমুর জোরে ঘুম পাড়িয়ে দিস?
আচ্ছা সেও শক্ত করে ধরে
কাছে চেয়ে জ্বালায় অহর্নিশ?
সেও কি খুব তুই-পাগলী মেয়ে?
চশমা পড়ে? কথায় কথায় কাঁদে?
সেও কি খুব কষ্ট পেলে একা-
খুব গোপনে জায়গা খোঁজে ছাদে?
সে বুঝি খুব বকবকিয়ে নয়?
স্বল্পভাষী? চাইতি যেমন তুই?
আজকে কেমন নরম দেখায় তোকে,
একটা ভিড়ে থমকে গেছে দুই।
এই যে এখন চুপটি করে একা,
দাঁড়িয়ে আছিস নালিশ ভুলে গিয়ে
নতুন মানুষ, নতুন নতুন প্রেমে
খুব বেঁধেছে শক্ত করে নিয়ে?
আমার মত ও ও কি এত ভোগে?
শরীর খারাপ হলেই তোকে চায়?
বিদঘুটে সব গান শুনলে ওর ও
সমস্ত রাগ এমনিই কেটে যায়!
ইনসোম্যানিক সে নিশ্চই নয়?
রাত জাগবার ঝক্কিটা আর নেই…
ভীষণ ভিড়ে লুকিয়ে দেখি তোকে
হারিয়ে যাব ও চোখ ফেরালেই।
তোকে দেখে সুখীই মনে হল…
হয়ত নতুন ঘরেই বেশি আলো-
আমার মতন জ্বালায় না আর কেউ,
নতুন মানুষ আমার চেয়েও ভাল।
দেখা হল বছর চারেক পর।
তুই এখনো আমার একার ঘর
আমার একার বর ।❞
আবৃত্তি করার সময় রোদের দৃষ্টি নিচের দিকে। একবার ও মুখ তুলে উপরের দিকে তাকায়নি তাকালে দেখতে পেতো প্রয়াস অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
রোদের নিচের দিকে তাকানোর আরেকটি কারণ আছে সেটা হচ্ছে তার চোখের জলকে সবার থেকে আড়াল করা। এখানে উপস্থিত প্রায় অনেকের জানা। শুধু প্রয়াস আর রোদের বাবা মা ছাড়া।
প্রয়াস রোদের চোখের জল স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে। রিমির কাছে মেয়েকে দিয়ে উঠে চলে যায়। পানির ট্যাংকের আড়ালে।
তার পিছু পিছু যায় প্রয়াসের মা রাহেলা বেগম।
প্রয়াস পানির ট্যাংকে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরে আঘাত করে কয়েকবার।
রাহেলা বেগম গিয়ে ছেলেকে আটকায়। বলে ব্যাথা পাবি বাবা।
প্রয়াসকে ধরতে গেলেই। প্রয়াস বলে, “শরীরের ব্যাথা দেখছো মা? এই চারটি বছর যে হৃদয়ের ব্যাথায় ধুকেধুকে মরছি সেই ব্যাথা দেখলে না মা?
আই এম সরি টু সে মা আজ রোদ আমার থেকে দূরে শুধু তোমার জন্য। আমার সকল যন্ত্রনার দায় শুধু তোমার মা।তুমি চাইলে সেদিন আমাদের মেনে নিতে পারতে।কিন্তু তুমি তা করোনি।তুমি আলাদা করে দিলে আমাদের।রোদকে দেখেছো মা?কি যন্ত্রনার চাপ তার চোখে! আমি জানি মা এই এতো গুলো বছরে সে আমাকে ভুলেনি।বরংআমাকে মনে করে ধুকেধুকে মরেছে।
আজ চোখের জল সবার থেকে আড়াল করতে পারলেও আমার থেকে পারেনি মা!
কি সমস্যা হয় মা তোমাদের মত মায়েরদের? তোমরা কেনো ছেলে মেয়ের পছন্দকে ভালবাসাকে মেনে নিতে পারো না? জীবনটা আমাদের মা। আমরা যদি সুখে থাকি তোমাদের কি সমস্যা হয় মা? আমি তো জানি সন্তানের সুখ মায়ের সুখ হয়। তুমি হয়তো তার উল্টো তোমার সন্তানের দুঃখে তোমার সুখ হয়!
এখন তুমি সুখী তো মা? এই যে রোদকে কষ্টে দেখছো, আমাকে কষ্টে দেখছো?
নিশ্চয়ই সুখী তুমি। তোমার সুখের জন্যই আজ আমাদের এই অবস্থা। কয়টি জীবন তুমি শেষ করে দিলে হিসেব করে দেখো। চারটি জীবন মা।
ওই যে রিমির কোলে ছোট বাচ্চাটা তার কি দোষ ছিলো মা?
তার জীবনটাও শেষ হবে শুধু তোমার জন্য। রিমি, আমি, আর রোদ সবার জীবনের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তুমি ভালো আছোতো মা?”
প্রয়াস হাটু গেড়ে বসে কাঁদছে। ছেলেরা নাকি কাঁদতে জানে না! ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই! কাঁদলে নাকি পুরুষ হওয়া যায় না!
কিন্তু প্রতি রাতে শহরের বাতাসে মিশে যায় কত ছেলের কান্না কত ছেলের দীর্ঘশ্বাস কে তার খবর রাখে?
প্রয়াসও কাঁদছে নিঃশব্দে, নিশ্চুপ হয়ে!
রাহেলা বেগম ও কাঁদছেন। হয়তো কোন অপরাধবোধে নয়তো ছেলের কান্নায় কষ্ট পেয়ে। আজ প্রথম প্রয়াস উনার সাথে এভাবে কথা বলেছে। সারাজীবন মায়ের সব কথাকে বেদবাক্য বলে মেনে এসেছে। গত চারটি বছর তিনি দেখেছেন উনার ছেলে কিভাবে দিন রাত কাটিয়েছেন।
মায়ের কাছ থেকে আলাদা থাকার জন্য ট্রান্সফার করিয়েছে সিলেট।
৬মাসেও বাসায় আসে না। এবার বাবার অসুস্থতার কথা শুনে এসেছে।
প্রয়াসের কান্না ও মিশে যাবে এই শহরের বাতাসে। কেউ দেখবে না। কেউ শুনবে না।
এই যেন “মেঘের আড়ালে বৃষ্টি”
প্রয়াসের চোখ একটু সামনে যেতেই দেখতে পায় কোন এক নারী মুর্তি দাড়িয়ে আছে। রাহেলা বেগম দেখার আগেই সেই নারী মূর্তি সরে যায়।
প্রয়াসের বুঝতে দেরি হয় না। কে সেই নারী মুর্তি।
হ্যাঁ রোদেলা, হ্যাঁ তার রোদ!
সব কি শুনে ফেলেছে রোদ?
বুকের ভেতর ভয়ংকর উত্তাল হয়ে ওঠে। যেন মুহুর্তেই মাটি ফাঁক হয়ে গেলে ঢুকে যাবে প্রয়াস।
কি হবে এবার?
এতোগুলো বছর লুকিয়ে রাখা কষ্ট কি তবে প্রকাশ পেয়ে গেলো?
চলবে…