মেঘের আড়ালে চাঁদ পর্ব ৩১

#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ একত্রিশ

তাওহী তুলতুলের কোলের ওপর বসে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর তুলতুল তাওহীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে তাওহীর উদ্ভট প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। কিন্তু তার মাথা থেকে রাফসানের ভাবনা সরছে না। যতই চাইছে মাথা থেকে সরাতে ততই যেনো জেঁকে বসছে। রাফসানের কথা ভাবতেই তার বুকের ভেতর ধুকপুক করছে, কেমন অজানা অনুভূতি কাজ করছে। কাল রাফসানের চোখের চাহনি যেনো কেমন ছিলো, চোখের পলক না ফেলে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল, তা মনে করতেই তুলতুলের গা শিউরে উঠছে। তারপর গাড়িতে বসে চলে যাওয়ার সময়ে তাকানোর ধরন ছিল আলাদা, মনে হলো চোখে মুখে হালকা কঠোরতা, একটু বেদনার ছাপ আর অব্যক্ত চোখের চাহনি উফফ! তুলতুল নিজের মাথা চেপে ধরলো। তারপর হাত দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই দুইটা গাট্টা মারলো, রাফসান তার মাথা থেকে যাচ্ছেই না, কিন্তু কেন? এসব গুন্ডা, পান্ডা মানুষ কেন তার মাথার ভেতর জেঁকে বসেছে, কেনই বা সে মনে করছে? অসহ্য!

তাওহী তুলতুলের এমন অস্থির হয়ে যাওয়ার দেখে তুলতুলকে ঝাঁকি দিয়ে বলে

-” আপু! এই আপু, তোমার কি হয়েছে? মাথা ব্যাথা করছে? মা কে ডাকবো?” কিন্তু তুলতুল কোনো জবাব দিল না, তার কানে তাওহীর কথা পৌছায় নি, সে তো রাফসানের ভাবনা তার মাথা থেকে সরাতে ব্যাস্ত। মনে হচ্ছে নিজের সাথে যুদ্ধ করছে যাতে রাফসানকে নিয়ে আর না ভাবে। তাওহী তুলতুলের জবাব না পেয়ে কোল থেকে নেমে তার মাকে ডাক দিল। আফসা বেগম দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকলেন, তুলতুলকে মাথা ধরে থাকতে দেখে সে এগিয়ে গিয়ে তুলতুলের কাঁধে হাত দিয়ে বলে

-” খারাপ লাগছে? মাথা কি বেশি ব্যাথা করছে মা? এই কথা বলিস না কেন? শুনতে পাচ্ছিস?”

মায়ের জোরে কন্ঠ শুনে তুলতুলের হুঁশ হয়। সে অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে

-” কি হয়েছে মা? এভাবে ডাকছো কেন?”

-“তুই এভাবে মাথা চেপে চোখ বন্ধ করে আছিস কেন? খারাপ লাগছে?” তুলতুল না বললো, তার মাথা ব্যাথা করছে না। তার মাথায় আস্ত একটা মানুষ ঢুকে গেছে, তাকে বের করতে ব্যস্ত ছিলো।

আফসা বেগম বিছানার একপাশে বসলো। তারপর তুলতুলকে টেনে তার মাথা নিজের কোলের ওপর রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আর তুলতুল গুটিসুটি মেরে মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে রইল। ভালো লাগছে এখন তার, সকল দুশ্চিন্তা মনে হয় মাথা থেকে আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে, মায়ের ছোঁয়া এমনই হয়। শত দুশ্চিন্তা, অশান্তির ভেতর থাকলেও মায়ের ভালোবাসা, একটু আদর মাখা কথা, আর ছোয়া পেলেই যেনো সব কিছু দূর হয়ে যায়, মনে একরাশ প্রশান্তি চলে আসে, শান্তি শান্তি লাগে তখন। তুলতুলের মাথায় হঠাৎ একটা প্রশ্ন খেলে গেলো। সে ভাবতে থাকে তার মাকে বলবে কিনা? কিন্তু কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেললো

-” মা সেদিন যদি আমি আপুকে না যেতে দিতাম তাহলে আজকে আপু আমাদের সাথে থাকতো তাই না?” কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলে

-” সব দোষ আমার। আমার জন্যই আপু চলে গেছে, আমি আসলেই অনেক খারাপ, অপদার্থ, বোকা হাদারাম!” বলে তুলতুল নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। আফসা বেগমের হাত থেমে যায়। কিছুক্ষন পর আবার একই ভাবে তুলতুলের মাথায় হাত বুলাতে থাকে

-” তুই চাইলেই কি তিয়াসাকে আটকে রাখতে পারতি? তুই মানা করলেও ও শুনতো না উল্টো তোকে বোঝাতো, ইমোশনাল কথা বলে ঠিকই রাজী করিয়ে নিত যাওয়ার জন্য। এখানে তোর কোন হাত নেই। ওর ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে, ভাগ্যের ওপর কারো হাত নেই। কেন অযথা নিজেকে দোষ দিচ্ছিস? তুই একজন, তিয়াস একজন, তোরা নিজেকে কেনো ওর জন্য দোষী ভাবিস? এটা মোটেও ঠিক না। আবার তিয়াসাকেও দোষ দিচ্ছি না, ও তো নিজেই কিছু জানতো না, যে ওর একটা পদক্ষেপ নিজের জীবনে কতবড় ক্ষতি করতে পারে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ফেঁসে গিয়েছে সে। আজ যদি ও থাকতো তো সবকিছু পরিপূর্ণ থাকতো। আমার ভরা সংসার সবকিছুই পরিপূর্ণ ছিল মাঝখান থেকে একটা জীবন সবকিছু উল্টে পাল্টে দিয়েছে। তোর বাবাকে দেখেছিস? মানুষটা সারাদিন খাটে আমাদের জন্য, মুখে হাসি থাকলেও ভিতরে ক্ষতবিক্ষত। আগেও পরিশ্রম করেছে কিন্তু তখন সবসময় মুখে হাসি না থাকলেও কষ্ট ছিল না ভেতরে। লুকিয়ে লুকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতো না। এখন বাড়িতে এসে দুদণ্ড বসে শান্তিতে শ্বাস নেয় না। সারাদিন এমনকি অনেক রাত পযন্ত দোকানে পড়ে থাকে। আর তিয়াস? ও তো একটা রোবট হয়ে গিয়েছে। যার না আছে কোনো ভালো লাগা না আছে মন্দ লাগা। মানে তার কাছে মেন কথা বেচে থাকলেই হলো আর কি লাগে? মন থেকে কখোনো হাসে না। আর তুই নিজের কষ্ট ঢাকতে সারাদিন এদিক ওদিক ঘুটে বেড়াস, হৈ-হুল্লোড়ের করে বেড়াস যাতে কেউ কিছু বুঝতে না পারে। আর তাওহীতো কিছু জানে না। আমি সারাদিন বাড়ি থাকি বাড়িটা নিস্তব্ধ হয়ে থাকে। আমার সেই ভরা সংসার আজ ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে। নিজেকে দোষ দিস না। তোর কোনো দোষ নেই। জানি আমার কিছু কথার জন্য তুই অভিমান করে আছিস, কিন্তু কি করবো ওই সময়ে আমার মাথা ঠিক ছিল নারে মা। রাগ হয়েছিল তুই আমাদের কেন বলিস নি? যদি বলতি তাহলে হয়তো আমরা ওকে যেতে দিতাম না বা সাবধান করতাম, আবার তুই বললেও হয়তো ও আমাদের কথা শুনতো না। যাক যা হয়েছিলো আর যেনো তা না হয়। এখন এসব কথা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়।” আফসা বেগম আস্তে আস্তে বললো। তারপর তুলতুলের মাথায় হাত বুলাতে থাকে। তার চোখের কোণায় পানি দেখা যায়, কিন্তু তা মুছে নিজেকে শক্ত করে নেয়। সে যে মা, সন্তানের সামনে ভেঙে পড়লে ওরাও ভেঙে পড়বে, তাই নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। আর তুলতুল নিঃশব্দে কান্না করছে। আর কোন কথা সে বললো না। মাঝে মাঝে হিঁচকি উঠছে।

তিয়াস এসেছিল তুলতুলকে দেখতে। তুলতুল কলেজের সব ঘটনাই তাকে বলেছে, রাফসানের কথাও বলেছে। সে রাফসান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্যই তুলতুলের কাছে আসে। কিন্তু রুমে ঢোকার আগেই তুলতুলের প্রশ্ন শুনে আর ভেতরে যায় না। উল্টো ঘুরে যেতে লাগবে তখনই মায়ের কথা শুনে থেমে যায়। কিন্তু ভেতরে যায় না, বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেই শুনে। তারপর নিজের রুমে চলে যায়। আর কিছু ভালো লাগছে না তার। মায়ের সামনে গেলে নিজেকে সামলাতে পারবে না সে। রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় সে।

-” সব আদর আপুকেই করো, আমি কেউ না।” তাওহী রুমে ঢুকে মুখ ফুলিয়ে বলে। তা দেখে আফসা বেগম হাসে। তুলতুলও উঠে বসে তাওহীর দিকে চোখ পাকিয়ে বলে
-” তোকে যখন আদর করে আমি কি কিছু বলি তখন? তাহলে আমার সময় বলছিস কেন?”

-” কারন মা তোমাকে বেশি আদর করে। আর আমি জানি কেন করে।” বলে আফসা বেগমের কোলে উঠে বসে পড়লো।

-” কেন করে?” তুলতুল বললো।

-” কারন তোমাকে কুড়িয়ে পেয়েছে তাই, তুমি যাতে মন খারাপ না করো তাই তোমাকে বেশি আদর করে। তোমাকে যে কুড়িয়ে পেয়েছে এটা তুমি জানলে যাতে বলতে পারে আমরা তো তোকে নিজের মেয়ের মতোই আদর করি। তাই তোমাকে এখন ভালোবাসে। কিন্তু আমি সত্যি জানিয়ে দিয়েছি তোমাকে তাই আর আদর নেবে না। সব আমি নেবো। ঠিকাছে?” বলে তাওহী খিলখিল করে হাসে।

-“তোকে তো আমি!” বলে তুলতুল তাওহীকে কাতুকুতু দিতে থাকে আর তাওহী খিলখিল করে হেসে গলে পড়ে। হাসি থামলে আফসা বেগম তাওহীকে বলে

-” তাওহী তোমার আপুকে আদর করা দেখে কি তোমার মন খারাপের হয়? মন খারাপ করো না। তোমাকেও তো আমি কতো আদর করি।”

-” না, মন খারাপ হয় না আমার। ভালো লাগে দেখতে। কিন্তু তোমারা মন খারাপ করে ছিলে দেখে আমি আমার কথা দিয়ে তোমাদের আরো মন খারাপ করে দিতে এসেছি। হা হা হা। কিন্তু একটা জিনিস ভাবলে আমার একদমই মন খারাপ হয় না। ” তাওহী বললো।

-” কি জিনিস?” তুলতুল জিজ্ঞেস করলো।

-” তোমার বিয়ে হয়ে গেলে তখন আর আদর পাবে না কারো, সব আমি নিয়ে নেব। হিহিহি।” বলে তাওহী হাসতে লাগলো। আর তুলতুল মুখ ফুলিয়ে রইল। আফসা বেগম বললো

-” আপুর বিয়ে হয়ে গেলে মিস করবে না? কান্না করবে না তো? কি বলো? আপুকে তো আমাদের থেকে তুমি অনেক ভালোবাসো। যখন ও দিয়ার বাসায় থাকতে যায় তখন আপুকে দেখার জন্য কান্না করো তাহলে বিয়ে করে চলে গেলে তখন থাকবে কিভাবে? হুম!”

একথা শুনে তাওহী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বললো

-” না আপুর বিয়ে দেব না। আমার আদর লাগবে না, সব আদর আপুকে দেও তাও আমি আপুর বিয়ে হতে দেব না।” বলে ছলছল চোখে একবার তুলতুলের দিকে তাকিয়ে উঠে বাইরে দৌড় দেয়। সে তার আপুকে ছাড়া থাকতে পারবে না। এত্তো ভালোবাসে তার বোনকে। আর তুলতুল তাওহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। তাকে ছাড়া তাওহীর চলবে না।

মাঝ রাতে তুলতুলের ঘুম ভেঙে যায়। রাতে মায়ের কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। আফসা বেগম তাকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে গায়ের ওপর পাতলা কাঁথা টেনে দরজা লাগিয়ে চলে যায়। তুলতুল উঠে বসে পাশে রাখা গ্লাস থেকে পানি খায়। ঘুম কি কারনে ভেঙে গেলো তা বুঝতে পারছে না। তুলতুল উঠে বারান্দার দিকে যায়। কিন্তু দরজা খুলতে গিয়ে সেদিনের কথা মনে পড়ে আর দরজা খুলে না। সে চুলগুলো হাত খোঁপা করে মাথায় ওড়না দিয়ে দরজা খুলে বের হয়। চারপাশে সব লাইট অফ করার কারনে অন্ধকার হয়ে আছে। তুলতুল আস্তে আস্তে ছাঁদের দিকে এগোয়। কেন জানি আজকে ছাঁদে যেতে ইচ্ছে করছে তার রাতের বেলায়। যদিও তার ভুতের ভয় আছে, কিন্তু আজকে কেন জানি তার ভয় লাগছে না। কোন কিছুই অনুভব করছে না। মন খারাপের সময় প্রচন্ড ভয় পাওয়া জিনিসগুলো দেখেও অনেকসময় ভয় কাজ করে না। তুলতুলেরও তেমন হয়েছে। সে ছাঁদে উঠে রেলিঙের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশের দিকে তাকায়।

রাতের আকাশ আসলেই অনেক সুন্দর। আকাশে বড় একটা গোল চাঁদ উঠেছে। আশেপাশে তারা মিটিমিটি করে জ্বলছে। আজকে বোধহয় পূর্নিমা, তাই চাদ গোল হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে কিছু ভেসে আসা কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। মেঘগুলো চাঁদকে কিছু সময়ের জন্য ঢেকে দিচ্ছে, এতে পুরো আকাশ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে আবার মেঘ সরে গেলে আবার আলোকিত হচ্ছে। তুলতুল আনমনে চাঁদের দিকে চেয়ে রইল। আপুকে ভিষণ মনে পড়ছে। মন খারাপের সময় তুলতুল সবসময় তিয়াসার সাথে একসাথে ছাঁদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখতো, সাথে টুকটাক গল্প। কোথাও হারিয়ে গেলো সেই সময়। তুলতুল ভাবছে, চাঁদটা ঠিকই আছে, আমিও আছি কিন্তু পাশে শুধু তুই নেই আপু। ভাইয়া তোকে চাঁদ বলতো, দেখ এই চাঁদের সামনে থেকে মেঘ সরে গিয়ে সবকিছু আবার আলোকিত করে তুলে সুন্দর হাসছে। কিন্তু তোর সামনে থেকে আর কখনো মেঘ সরবে না, আর দেখতে পারবো না তোর হাসি, মেঘের আড়ালে চাঁদ হয়েই রইলি আপু। মেঘের ভিড়ে হারিয়ে ফেলেছি আমি তোকে। কেন চলে গেলি সবকিছু ছেড়ে?’ তুলতুল ছাঁদে রেলিং ঘেঁষে বসে শব্দ করে কান্না করতে থাকে। তার হাসিখুশি সময় আর সেই হাসির সাথে সামিল হওয়া মানুষ কোথায় হারিয়ে গেলো।

.

এলা বসে বসে রোমানা চৌধুরীর ঝিমানো দেখছে। এই বুড়ি ঘুমালেই সে নিজের কাজ করতে পারবে। রাত অনেক হয়েছে কিন্তু কে জানে এই মহিলা এতো দেরিতে কেনো ঘুমায়। এলায় কথা মতো বুড়ি মানুষ রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বে কিন্তু ইনি তা করবে না।

রোমানা চৌধুরী রাতের খাবার খেয়ে যখন টিভির সামনে বসে রেস্ট করছিল নিচে বসে তখনই এলা বাড়িতে ঢোকে। আজকে সে ছোট ড্রেস পড়েনি, কিন্তু খুব ভালো ড্রেসও পরেনি। আজকে বাড়িতে রাফসানের দাদী আছে দেখে সে শাড়ি পরেছে। গাঢ়ো লাল রঙের শাড়ি, স্লিভলেস ব্লাউজ, সাথে একপল্ল মেকাপ আর জুয়েলারি। রোমানা চৌধুরী তাকে দেখেই মুখ ভেংচি দিল। কিন্তু সরাসরি কিছু বললো না। মেয়েটাকে কখনোই তার ভালো লাগে না, কেমন উচ্ছৃঙ্খল টাইপ। শাড়ি পড়েছিস ভালো করে পড়বি এভাবে এদিক ওদিক বের করে পড়ার কি আছে। কালকের মেয়েটাও তো শাড়ি পরেছিল, কই তাকে তো তার এমন মনে হয়নি নি বরং সুন্দর আর সুশীল লাগছিল। তার ছেলের বউয়ের কেমন দূর সম্পর্কের ভাইয়ের মেয়ে বলে এটা। সেই কেমন সম্পর্কের নামও তিনি জানেন না। এলা এসেই তার সামনে দাঁড়িয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো

-” হাই গ্রান্ডমা!”

রোমানা চৌধুরী এলার দাঁতের দিকে তাকালো। ডার্ক রেড লিপস্টিকের কিছু অংশ তার দাঁতে লেগে আছে। কেমন বিশ্রি লাগছে। সে নাক সিটকিয়ে বললো

-” হ্যালো ফেলা!”

-“উফফ! গ্রান্ডমা ইট’স এলা নট ফেলা ওকে!”

জবাবে রোমানা চৌধুরী কিছু না বলে মুখ বাকিয়ে টিভি দেখায় মন দিলেন। এলা তার পাশে বসে উশখুশ করছে। তিনি আঁড়চোখে একবার দেখে টিভি দেখতে লাগলো। এলা ভাবলো বসে থেকে কি হবে এই বুড়ির সামনে তার থেকে যেই কাজ করতে এসেছে তাই করুক। সে উঠে রাফসানের রুমে যাওয়ার জন্য ওপরের দিকে যায় আর পেছন থেকে রোমানা চৌধুরী প্রায় হুংকার দিয়ে বলে

-” এই মাইয়া কই যাও? এইহানে বও। রাফসান বাড়িতে নাই।” আর এলা পেছনে ঘুরে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো
-” ওহ, আই সি!” সে পুনরায় রোমানা চৌধুরীর পাশের সোফায় বসলো। কিছুক্ষণ পরে রাফসান আসে, দাদীর সাথে কথা বলে ক্রুর দৃষ্টিতে একনজর এলার দিকে তাকিয়ে সে উপরে চলে যায়। আর এলা শয়তানি হাসি দেয়।

-” বইসা বইসা কি করতাছো? আমারে এক গ্লাস পানি দেও তো।” রোমানা চৌধুরীর কথায় যেন এলার কাজ আরো সহজ হয়ে গেলো। সে বড় একটা হাসি দিয়ে পানি আনতে গেলো, পানি এনে দিলে রোমানা চৌধুরী খেয়ে গ্লাসটা এলার হাতে দেয়। এলা কিচেনে নিয়ে গ্লাসটা পরিষ্কার করে রেখে আসে। কোনো চিহ্ন নেই। সে দাদীর কাছে এসে বসে। রোমানা চৌধুরী কিছুক্ষণ পরে ঝিমানো শুরু করে। আর এলা মনে মনে হাসে। পানির সাথে যে গুড়া করা ঘুমের ঔষধ মিশিয়েছে। রোমানা চৌধুরীর ঘুম আসছে দেখে তিনি উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন আর এলা রাফসানের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

রাফসান বেলকনিতে ড্রিংকস এর বোতল নিয়ে বসে আছে। অলরেডি তিনটা বিয়ারের ক্যান সে শেষ করেছে। কিন্তু তার নেশা হচ্ছে না দেখে সে কড়া ড্রিংকসের বোতল নিয়ে এসেছে। হঠাৎ করেই আজকে মেয়েটার কথা মনে পড়ছে তার। খুব দেখতে মন চাচ্ছে তাকে। কিন্তু রাফসান তা করবে না। কেন তার মন এমন চাচ্ছে? সে কিছুতেই এ অন্যায় করবে না। তার মনে যে অন্য কারো বসবাস, তার মন থেকে তাকে কখনো মুছতে দেবে না সে। এজন্যই সবকিছু ভুলে থাকার জন্য দাদী থাকতেও আজকে এসব নিয়ে বসেছে। কিন্তু কিছুতেই সেই কাজল ল্যাপ্টানো কান্নামাখা চেহারা ভুলতে পারছে না। সে দরজা খোলার শব্দ পেলো। এলা তার সামনে এসে দাঁড়ালো। সে এলার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার কাজ করে যেতে লাগলো। এলা ভেতরে এসে রাফসানকে ড্রিংকস করতে দেখে খুশি হয়। এলা রাফসানের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে। আর রাফসান গ্লাসে ঢেলে একেরপর এক গিলছে। কিন্তু কিছুক্ষন পরে থেমে গেলো নেশা আর বেশি করা যাবে না, পাশে এই মেয়ে রয়েছে কি থেকে কি করবে আর তার নেশা হয়ে গেলে হুঁশ থাকবে না। এখনি তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। সে পাশে রাখলো হাতের গ্লাসটা। এলার দিকে তাকাতে চায় না সে কখন রাগের চোটে থাপ্পড় দিয়ে বসে। এলা এই সুযোগে গ্লাসে কড়া ড্রাগস দিল। তারপর রাফসানকে বলে

-” সরি রাফসান। আই এম রিয়েলি সরি। সেদিন আমার মাথা ঠিক ছিল না। প্লিজ মাফ করে দাও। কথা দিচ্ছি আর কখোনো এমন করবো না।”

কিন্তু রাফসান কিছু বললো না। দেখে এলা আবার শুরু করলো।

-” তোমার গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে? তাই তো মদ খাচ্ছো ভুলে যেতে তাইনা? আমারো কষ্ট হয় মেয়েটার জন্য ইশশ!” বলে রাফসানের হাতের ওপর এলা নিজের হাত রাখলো। কিন্তু এলা জানে না সে তাকে মনে রাখতে আর অন্য কাউকে ভুলার জন্যই খাচ্ছে। রাফাসান এলার হাত সরিয়ে গ্লাস হাতে নিয়ে বোতল থেকে ড্রিংকস ঢেলে একবারে গিলে ফেললো। চোখ ঝাপসা আর মস্তিষ্কে অন্য কিছুর চিন্তা থাকার কারনে সে দেখলো না গ্লাসে কি ছিলো। আর এলা বিজয়ের হাসি দিয়ে আবল তাবল বলতে লাগলো। রাফসান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হেসে উঠলো। আর বলতে লাগলো

-” সি ইজ সো কিউউউট!” তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।

-” কে তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ড?”

-” নো।” রাফসান আবার হেসে বললো। কিন্তু এলা ক্ষুব্ধ হলো এতে। রাফসানের মনে কি আবারও অন্য কেউ জায়গা করে নিলো? সে রাফসানকে জিজ্ঞেস করে -” নাম কি?”

-” সফট!”

-” এটা আবার করো নাম হয় নাকি?” রাফসান জবাব দিল না তার মাথা ঘুরছে। নিজের ওপরই নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই। এলা আবার জিজ্ঞেস করলো একটা হাসি দিয়ে

-” আর আমাকে কেমন লাগে?” রাফসানের এলার দাঁতে লেগে থাকা লিপস্টিকের দিকে নজর পড়লো। তারপর সেও দাঁত কেলিয়ে বলে

-” ডায়নি!” উত্তর শুনে এলা রাগে ফুসফুস করে, চিল্লাতে গিয়েও থেমে যায়। মনে মনে ভাবে, আজকে আমাকে ডায়নি বলছো তাই না? আজকে রাতের পর যাকে ডায়নি বলেছো তাকে বউ বানাতে বাধ্য হবে। এলা মুচকি হেসে রাফসানকে বললো সে তাকে রুমে নিয়ে যাবে। আর রাফসান কি যেনো বিরবির করছে। এলা রাফসানকে ধরে উঠতে সাহায্য করে। এরপর তার হাত ধরে রুমের দিকে আগায়। মুখে বিশ্বজয় করার মতো হাসি।

চলবে…

ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here