#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ নয়
রাফসান শান্ত দৃষ্টিতে সামনে বসা মেয়েটিকে দেখছে। মেয়েটি কেমন যেন। এখন রাফসানের পায়ে কাটা জায়গায় পরিষ্কার করে স্যাভলন লাগিয়ে দিচ্ছে। তার চোখে মুখে কোনো ভয় দেখতে পারছে না। সে কিছুক্ষন আগের কথা ভাবছে। যখন সে রিভলবার বের করে চুপ করে বসে থাকতে বলেছিল তখন মেয়েটি ঠোঁট উল্টে বলেছিল-” আপনিতো আমাকে দেখতেই পারেন না তাহলে আমি কেন আপনার সামনে বসে থাকবো।”
একথা শুনে রাফসান কিছু বলেনি। রিভলবার ওর মাথা থেকে সরিয়ে ওখানেই হাতের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। মেয়েটির কথায় স্পষ্ট যে সে রাফসানকে একটুও ভায় পায় না। এক বিন্দুও পায় না। শুধু মনে মনে করে সে একটা গুন্ডা, বদমাশ, খারাপ লোক।
রাফসান কিছুক্ষন চুপ থেকে মেয়েটিকে জিজ্ঞাস করল
-“নাম কি?”
-” মানে?”
-” তোমার নাম কি? বাংলা বুঝনা? ”
-” ওহ! আমার নাম? কেনো আপনি জানেন না?
-” জানলে অবশ্যই জিজ্ঞাস করতাম না। আর এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে তুমি দেশের প্রেসিডেন্ট। তোমার নাম আমার জানাই লাগবে।
-” নাহ তা না। মানে আপনার সাথে তো দুইদিন দেখা হয়েছে তো আমার মনে হলো আপনি আমার ব্যাপারে সব খোঁজ খবর নিয়ে নিয়েছেন। গুন্ডা মানুষ তো। লোকও আছে আপনার। তাই ভাবলাম নাম হয়তো জানবেন।
-” তোমার সম্পর্কে খোজ নেওয়ার কারন আছে কি কোনো”
-” আমাকে গুলি করেছেন। আর ওভাবেই রেখে গিয়েছেন। মানে আপনি জানতেনও না যে আমি বেঁচে আছি কিনা। মানে আপনার কাছে মরে গিয়েছি। তো যাকে মেরে ফেললেন তার সম্পর্কে জানবেন না? যে সে কে ছিল?
-” না! প্রয়োজন বোধ করি না।”
-” তা করবেন কেনো আপনিতো মানুষকে মানুষ মনে করেন না। তারা মরলেও আপনার কিছু যায় আসে না বাচলেও কিছু যায় আসে না। রাক্ষস একটা।” তুলতুল বিরবির করে বললো।
-” বিরবির না করে জোড়ে বল। আর এক কথা বার বার বলতে আমি পছন্দ করি না। নাম কি জিজ্ঞাস করেছি?
-” তুলতুল”
-” তুলতুল! এটা আবার কেমন নাম?”
-” সুন্দর নাম। আচ্ছা আজকে আপনি আমার সাথে একটু মানে বেশি না একটু ভালো করে কথা বলেছেন ব্যাপার কি?
-” তুমি কি চাও আমি এখন তোমার সাথে খারাপ বিহেব করি?”
-” না না আমি কখন তা বললাম” ভালোভাবেই কথা বলুন।” বলে তুলতুল মনে মনে বললো -” শালা খারুস
-” ভালো ব্যবহার এখন করছি দেখে ভেবো না সবসময়ই তা বহাল থাকবে।”
-” হ্যা হ্যা বুঝেছি। তা আপনি এখানে কোন? রাতের বেলা এখানে একা একা বসে আছেন। আপনার দলবল আর গাড়ি কোথায়।”
-” সেটা তোমার না জানলেও চলবে। জায়গায়টা তোমার দাদার না।সো আমি যখন ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা আসবো এটা তোমার না ভাবলেও চলবে।”
-” ত্যাড়ার বাচ্চা ত্যাড়া। সোজা ভাবে কথা বলা যায় না? তুলতুলের এই কথাটা চিল্লিয়ে বলতে মন চাচ্ছে। কিন্তু বললো না আবার কি করে বসবে। এখান থেকে চলে যেতে পারলে বাঁচে সে। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে হয়তো সবাই টেনশন করছে। উফফ। এমন সময় রাফসানের আওয়াজ শোনা গেলো। তার পা যেখানে কেটে গেছে সেখানে গাছের শিকড়ের সাথে গুতা খেয়েছে।
তুলতুল তাকিয়ে দেখে এতক্ষণ কাটা জায়গায় হালকা রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত পড়া কিছুসময়ের জন্য বন্ধ ছিল এখন গুঁতা লেগে আবার গলগল করে বের হচ্ছে। তুলতুলের খারাপ লাগলো ব্যাপারটা। লোকটি খারাপ হলেও তাকে এই অবস্থায় দেখে তুলতুলের খারাপ লাগলো। তিয়াসের কাছে রাফসান সম্পর্কে শুনে কিছুটা ভালো ধারণা হয়েছে যে সে নির্দোষ মানুষের হয়তো কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু তার নিজের ব্যাপারটা নিয়ে নিশ্চিত না যে রাফসান তার সাথে কেন এমন করে? সে তো কিছু করে নি। যাইহোক।
তুলতুল তার সাথে আনা ব্যাগ থেকে পানির বোতল, স্যাভলন আর একটু গজ কাপড় বের করে রাফসানের পায়ের দিকে এগিয়ে গেলো। তুলতুলকে এগোতে দেখে রাফসান বললো-” এই কোথায় যাও। আমি চুপচাপ বসে থাকতে বলেছি না। আর হাতে ওগুলো কি?”
-” আপনার পা কেটে গেছে অনেক রক্তও বের হচ্ছে। এভাবে থাকলে আর কিছুক্ষন অজ্ঞান হয়ে যাবেন। তাই দেখি কিছু করতে পারি কিনা।
-” কিছু করতে হবে না চলে যাও এখান থেকে। আমার কিছু হয়নি। আর ওটুকু কাটার জন্য আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো না। তাই ভালোই ভালোই বলছি চলে যাও আমি মত পাল্টে ফেললে কিন্তু তোমার জন্য ভালো হবে না।”
তুলতুল কোনো কিছু কে পাত্তা না দিয়ে তার কাজ করতে লাগলো। রাফসান আর কিছু বললো না। সে যে তুলতুলের কাজে অবাক হয়েছে তা বুঝা যাচ্ছে। যে মেয়েকে গুলি করে ওভাবেই ফেলে রেখে এসেছিল সে এখন তার পা কেটে রক্ত পড়ছে দেখে রক্ত বন্ধ করার জন্য পড়েছে। রাফসান তুলতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তুলতুল পশ্ন করলো-” আচ্ছা আপনি আমাকে দেখতে পারেন না কেন? আমি একজনের থেকে শুনেছি আপনি নির্দোষ কাউকে কিছু করেন না। তাহলে? আমি তো কিছু করি নি।”
রাফসান বেখেয়ালেই উত্তর দিল -” কারন তোমার ফেস আমার খুব কাছের মানুষের.. কিছুনা।” রাফসান হঠাৎ করে বেখেয়ালি হয়ে যাওয়ায় ঔ কথা গুলো বলছিল যখন হুঁশ আসে সে কি করছিল এটা ভেবে কথা পাল্টে ফেলে। তুলতুল জিজ্ঞেস করে -” মানুষের?
-“কিছুনা। তোমাকে আমার ভালো লাগে না তাই।”
তুলতুল ভেংচি কেটে বললো-” আপনার পা কোনোরকম পরিষ্কার করে বেঁধে দিয়েছি। পরে ডাক্তার দেখিয়ে নিবেন। মনে হয় না হাঁটতে পারবেন। আপনার লোকজনের কাউকে ফোন দিয়ে আসতে বলুন।
-” আমি ফোন আনিনি আর তোমার এতো ভাবা লাগবে না যাও। রাফসান কেমন ভাবে যেনো বললো। তার মাথা ভার হয়ে আসছে। নেশাও হয়ে গিয়েছে ভালোই। মেয়েটার সাথে আর কথা বলতে চায় না। কখন কি করে বসে।
-” তা আনবেন কেন? ওটা আনতে তো ভুলে যাবেনই কিন্তু রিভলভার আনতে ভুলবেন না। হুহ”
-“তুমি বেশি কথা বলছো। রিভলবার আমার কাছেই আছে।”
-” আজাইরা মানুষ। মনে হয় ছ্যাঁকা খাইয়া ব্যাকা হয়ে গেছে। এই জন্যই এ অবস্থা। ভালো কথাও বলা যায় না।হুহ্ ” তুলতুল বিরবির করতে করতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে তিরিশটা মিসকাল উঠে রয়েছে। সে চোখ বড় বড় করে ফোন দেখতে থাকে। সবই বাড়ি থেকে এসেছে। নিশ্চয়ই অনেক চিন্তা করছে। খোজাখুজিও হয়তো শুরু করেছে। একবার ভাবলো ফোন দিয়ে বলে দেবে এখনি কিন্তু পরে আবার কি ভেবে রাফসানের কাছে ফোন দিয়ে বললো আপনার লোকেদের ফোন করুন।
-” তোমার ফোন আমার লাগবে না।”
-” আমি আপনাকে ফোন দিচ্ছি না। ফোন করতে বলছি। দেখুন আর কিছু বলবেন না।”
রাফসান কথা বলে ফোন ফেরত দিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই তুলতুল বলে উঠে -” ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই। এখনই আপনার লোকজন এসে পড়বে। এখন আমি যেতেই পারি? নাকি?
-” তোমাকে ধন্যবাদ কে দিল?” রাফসান গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে ভ্রু কুচকে বললো।
-” দেন নি কিন্তু আমি জানি আপনি ধন্যবাদ বলতে যাচ্ছিলেন। তাই আমি আগেই উত্তর দিয়ে দিলাম। হুহ। আর আপনি ভালো হয়ে যাবেন ঠিকাছে। আমি এই আশা করছি। ভালো হতে পয়সা লাগে না৷ বুঝেছেন গুন্ডা মশাই। আমি আসি। বায় বায়। আর যেনো দেখা না পাই।
বলে তুলতুল দ্রুত ব্যাগ নিয়ে হাটা দিল যাতে রাফসান কিছু বলতে না পারে।
রাফসান তুলতুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদের আলোর জন্য তুলতুলকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তুলতুল আস্তে আস্তে রাফসানের চোখের দৃষ্টির আড়ালে যেতে লাগলো। একটা অস্পষ্ট অবয়ব হয়ে আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল মেয়েটা। রাফসান ওভাবেই ওদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মেঘ যেমন চাঁদকে ঢেকে দেওয়ার পরে সারা আকাশে অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে রাফসানেরও মনে হলো তার আশেপাশেও অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। মেয়েটা যতোক্ষণ তার পাশে ছিল ততক্ষণ চারপাশ পরিপূর্ণ মনে হচ্ছিল। সবকিছুই ক্ষনিকের জন্য ভুলে ছিল। কিন্তু রাফসানের এমন কেন মনে হলো তা সে জানে না। কাছেই কোথাও গাড়ির শব্দ শোনা গেল। হয়তো তার লোকেরা এসে গিয়েছে। সে তুলতুলের চিন্তা ভাবনা করা সেখানেই স্থগিত করলো।
চলবে…