মেঘের ওপর আকাশ উড়ে পর্ব -০৮

#মেঘের_ওপর_আকাশ_উড়ে
#Part_08
#Writer_NOVA

পরের দিন…..

বিকেলবেলায় মৃদুল বের হয়ে গেছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। এখনো ফিরে আসেনি। তাতে সাবার কোন টেনশন নেই। মৃদুল না থাকলে তার কোন সমস্যা নেই। সোফায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে টিভি দেখছে।হঠাৎ কোলিং বেল বেজে উঠলো। নাসিমা বেগম কিচেন থেকে চেচিয়ে বললো,

— সাবা দেখ তো কে এসেছে?

— আমি পারবো না। তুমি যাও।

— জলদী যা নয়তো খুন্তি দিয়ে ছ্যাকা দিবো।

— প্লিজ আম্মু বিরক্ত করো না। আমার ফেভারিট শো হচ্ছে। আমি উঠতে পারবো না।

নাসিমা বেগম ফোঁস করে উঠলেন। তবে তিনি আরও কিছু বলার আগে কোলিং বেল বেজে উঠলো। এখন হাজার কথা শুনলেও সাবা উঠবে না। মেয়ের ওপর ঈষৎ রেগে দ্রুত পায়ে দরজা খুলে দিলেন। দরজা খুলতেই মিথিলা বড় করে একটা সালাম দিলো।

— আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

— ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছো মা?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো মা। ভেতরে এসো।

মিথিলা হাতে থাকা বড় বক্সটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
— আম্মু আপনাদের জন্য খিচুড়ি রান্না করে পাঠিয়েছে। তাই দিতে এসেছিলাম।

— তুমি ভেতরে আসো আগে।

মিথিলা ভেতরে ঢুকতেই নাসিমা বেগম দরজা আটকে দিলেন। মিথিলা এদিক সেদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— মৃদুল, সাবা কোথায় আন্টি?

— মৃদুল বিকেলে বের হয়েছে। এখনো আসেনি। সাবা টিভি দেখছে। তুমি ওর কাছে যাও। আমি আসছি।

মিথিলা বক্সটা সাবার মায়ের হাতে দিয়ে ভেতরে চলে গেলো। টিভির রুমে গিয়ে দেখলো সাবা এক ধ্যানে টিভি দেখছে। আশেপাশে কোন দিকে খেয়াল নেই। মিথিলা পাশে বসে গলা খাকরি দিয়ে বললো,

— বাবার বাসায় এসে আমাকে ভুলেই গেছিস।

মিথিলার কন্ঠ পেয়ে সাবা চোখ দুটো বড় বড় করে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
— মিথিলা আপু!

— সর, কথা নেই তোর সাথে। আমাকে ভুলে গেছিস।

— কি যে বলো না তুমি। আমার কিউটি পিউটি আপুটাকে কি আমি ভুলতে পারি।

— তাতো দেখলামই। গত তিনদিন ধরে এখানে। একবার আমার খোঁজ নিতে বাসায় যাসনি।

— হ্যাঁ, সত্যি যাইনি। গতকাল বিকালে যাবো বলেছিলাম। তারপর আম্মু বললো তুমি নাকি টেইলর্সের দোকানে গিয়েছিলে ড্রেস বানাতে। তাই যাওয়া হয়নি।

— হু হয়েছে আর অযুহাত দিতে হবে না।

দুজন টুকটাক কথা বলতে লাগলো। মিথিলার বিয়ে হয়েছে আরো আট মাস আগে। স্বামী তুহিন প্রবাস থাকার সুবাদে বেশিরভাগ সময় বাবার বাসায় থাকে সে। মৃদুল ও মিথিলার বয়সের ডিফারেন্স মাত্র দুই বছর। সাবার ভীষণ ভালো লাগে মিথিলাকে। সাবার মৃদুলের সাথে যতটা খারাপ বন্ডিং তার থেকেও ভালো বন্ডিং মিথিলার সাথে। মিথিলাকে নিজের বড় বোন মনে করে। সাবাকেও মিথিলা নিজের ছোট বোনের মতো স্নেহ করে। সেই ছোট থেকে একসাথে বড় হচ্ছে তারা। মৃদুলদের বাসা তৃতীয় তলায়, সাবাদের বাসা দুই তালায়। তারা ভাড়া থাকে। তবে তাদের বাবা দুই বন্ধু মিলে শহরে প্লট কিনতে চাইছে। আর কত ভাড়া থাকবে।

দুজন হেসেখেলে কথা বলছিলো। সেই হাসির ঝংকার নাসিমা বেগমের কানে এসে বারি খাচ্ছে। খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে টিভির রুমে প্রবেশ করলেন তিনি। মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— তুহিন কেমন আছে মা?

— আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছে।

— কথা হয় ওর সাথে?

— হ্যাঁ, একটু আগেও হয়েছে। অবসর পেলেই ভিডিও কল দিয়ে বসিয়ে রাখে।

— তোমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি কেমন আছেন?

— শ্বাশুড়ি ভালো আছে। শ্বশুরের শরীর ততটা ভালো না। ডায়বেটিস বেড়ে গেছে। সকালে কল করেছিলা তখন শ্বাশুড়ি বললো।

— ডায়াবেটিস আজকাল কাউকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। নাও মা, খাও।

— এসব কেন করতে গেলেন আন্টি?

— কুটুম বাসায় এলে কি খালি মুখে ফিরিয়ে দিবো? কথা না বলে সব শেষ করো।

— সিয়াম কোথায়?

— মৃদুলের সাথে বের হয়েছে।

সাবা চুপচাপ তাদের কথা শুনছিলো। হঠাৎ ট্রে-তে রসগোল্লা দেখে তার জিভে জল এসে পরলো। রসগোল্লা তার ভীষণ পছন্দ। হাসফাস করতে করতে তার মা কে বললো,

— আম্নু আমায় কয়েকটা রসগোল্লা দাও না?

নাসিমা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকালো। মিথিলা হাসিমুখে বললো,

— নে এখান থেকে নে। তোর যত খেতে ইচ্ছে হয় খেতে থাক।

নাসিমা বেগম বললেন,
— না মা তুমি খাও। আমি ওকে এনে দিচ্ছি।

নাসিমা বেগম ফ্রীজ থেকে রসগোল্লা আনতে চলে গেলেন। মিথিলা ও সাবা গল্প করতে করতে এটা সেটা খেতে লাগলো। বেশ কিছু সময় পর নাসিমা বেগম রসগোল্লা নিয়ে এসে ওদের গল্পে শামিল হলো।

💞💞💞

মৃদুল ফিরেছে কিছু সময় আগে। মায়ের সাথে উপরতলায় দেখা করে এসে রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলো সাবা এক বাটি নুডলস নিয়ে বসেছে। মোবাইলে টম এন্ড জেরী দেখছে আর খাচ্ছে। মাঝে মাঝে হাসতে হাসতে খাটে চিৎ হয়ে পরছে। মৃদুল হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে সাবাকে বললো,

— আস্তে হাসি দে। মনে হচ্ছে শেওড়া গাছের পেত্নী হাসছে। এতো হাসলে দাঁত পরে পা কেটে যাবে।

সাবা কোন উত্তর দিলো না। মুখ ভেংচে নুডলস খেতে খেতে কার্টুন দেখতে মনোযোগ দিলো। মিথিলা যাওয়ার পর ঝটপট নুডলস বানিয়ে নিয়ে এসে কার্টুন দেখতে বসেছে। মৃদুল সাবার থেকে কোন উত্তর না পেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে সাবার সামনে এসে হা করে বললো,

— একটু খাইয়ে দে।

— যা ভাগ।

— এতো হিংসুটে কেন রে তুই? কোন কিছু চাইলে দিস না। এই মাসুম বাচ্চাটার সাথে এমন করতে তোর বুক কেঁপে ওঠে না?

সাবা সবেমাত্র মুখে এক চামচ নূডলস দিয়েছিলো।মৃদুলের কথা শুনে সেভাবেই অবাক হয়ে তাকালো। ওর চাহনি দেখে মৃদুল বললো,

— সত্যি বলছি।

— তুই মাসুম বাচ্চা?

— হুম।

— আচ্ছা বস তুই। আমি এখুনি তোর জন্য সুজি জ্বাল করে আনছি।

— সুজি আনতে হবে না। নুডলস দিলেই হবে।

— সরি, আমি নিজের পছন্দের জিনিস কারো সাথে শেয়ার করি না। মন চাইলে আম্মুকে বল। আম্মু বানিয়ে দিবে।

— গতকাল ঝাল চা খাইয়েছিলি।

সাবা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— তারপর তো মিষ্টিও খাইছিস😬।

মৃদুল শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— হুম অনেক মিষ্টি ছিলো। এখন থেকে ঝাল লাগলে এমনি করবো।

— যা সর তো। আমাকে কার্টুন দেখতে দে।

মৃদুল সাবার সামনে থেকে সরে গেলো। কিন্তু এই মুহূর্তে সাবার খাওয়া পন্ড করার শয়তানি বুদ্ধি খুঁজতে শুরু করে দিলো। ওকে নুডলস না দেওয়ার শাস্তি তো দিতেই হবে। গতকাল ঝাল চা খাওয়ানোর শাস্তি দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু শাস্তিটা অন্যভাবে পুষিয়ে দিয়েছে বলে মনে মনে পৈশাচিক হাসি দিলো। বেশ কিছু সময় এদিক সেদিক পায়চারি করে সাবার খাওয়া বন্ধ করার শয়তানি বুদ্ধি পেয়ে গেলো। সামনের পাটির দাঁত বের করে জোরে চেচিয়ে সাবাকে বললো,

— ওয়াক ছিঃ এগুলো কি খায়? কিরকম কেচোর মতো দেখতে মনে হয় লম্বা,লম্বা কেঁচোগুলো। সাপের মতো পিচ্ছিল লাগে।সুড়ৎ করে টান দিলে মনে হয় কেঁচো টান দিলাম।

মেয়েরা কিছু খাওয়ার সময় কেউ এমন কিছু বললে যত ভালো জিনিস হোক অভক্তি ও ঘৃণা লাগবেই। মনে হবে আসলে সে এগুলো খাচ্ছে। তবে সব মেয়েরা নয়। অনেকে আছে এসব শুনেও ঘৃণা না করে অনায়াসে খাবার খেতে পারে। তবে সাবা এগুলো অনেক ঘৃণা করে।ওর বমি পায় এসব শুনলে। সাবা দুই কানে হাত দিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো,

— খাচ্চোর ছেমরা চুপ কর। আমার গা গুলিয়ে আসছে🤢।

মৃদুল একটুও থামলো না। তার কথায় কাজ হয়েছে ভেবে আবার শুরু করলো,

— মাঝে মাঝে সাদা কৃমির মতো লাগে। এর মধ্যে আমি একদিন সাদা ছোট লেদা পোকা পেয়েছিলাম।
যেবার লেদাপোকা পেয়েছিলাম কি করেছিলাম জানিস?

— চুপ করে তুই। ওয়াক 🤮।

— আর শুন না।

সাবা নুডলসের বাটিটা বিছানায় রেখে দুই হাতে মুখ চেপে বললো,

— থামতে বলছি আমি।

— আর শুন তুই। লেদাপোকাটা যখন দাঁতের নিচে পরলো তখন কচ করে উঠলো। আমিও পেঁয়াজ ভেবে চাবিয়ে কচমচ করে খেয়ে নিলাম। পোকাটায় মসলাপাতি পরে সেই টেস্ট হয়েছিলো।

সাবার মুখের নুডলসটুকু ফেলে না দিয়ে হালকা একটা চাবান দিতেই নুডলসে থাকা পেঁয়াজ কচ করে কামড় পরলো। সাবা মনে হলো পোকা পরেছে। তাই দ্রুত ওয়াসরুমে ঢুকে ওয়াক ওয়াক করতে করতে বমি করে দিলো। সাবাকে বমি করতে দেখে মৃদুল বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে লাগলো। বেশ কিছু সময় পর সাবা মুখ ধুয়ে, কুলি করে, ক্লান্ত শরীরে ফিরে এলো। দুপুরে যা খেয়েছিলো সব ফেলে দিয়ে আসছে। ওকে দেখে মৃদুল বললো,

— কি কেমন দিলাম? আমাকে জীবনে আর কিছু না দিয়ে খাবি? খেলে এমনটাই হবে।

সাবা ওয়াসরুমের দরজার সামনে পা ছড়িয়ে বসে পরলো। মুখ তার তিতা লাগছে। মৃদুল এখনো পেট ধরে হেসে যাচ্ছে। সাবা দুই হাত মুঠ করে তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। একটু সময় ভেবে সেও বুদ্ধি পেয়ে গেলো মৃদুলকে জব্দ করার। শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

— আমি না মুখ ধুই নি। ঠোঁটে এখনো বমি লেগে আছে। আয় সামনে আয়। তোকে একটা চুম্মা দেই।

সাবার কথা শুনে মৃদুলের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। চোখ দুটো আপনাআপনি বড় হয়ে গেলো। সাবা ধীরপায়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। এতখন নিজে এতকিছু বলেও সাবার কথায় তার গা গুলাচ্ছে। যদি সাবা সত্যি আধোয়া মুখে চুমু খেয়ে বসে। ওকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। মৃদুল জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,

— একদম সামনে আসবি না। আগে কুলি করে মুখ ধুয়ে আয়।

— না, আমি তোকে আধোয়া মুখে চুমু খাবো। এদিকে আয় দুইটা চুম্মা দেই।

— না, দূরে সর।

মৃদুল সারা রুমে গোল গোল করে ঘুরতে লাগলো। ওর পিছন পিছন সাবা। মৃদুলকে ভয় পেতে দেখে সাবা আরো বেশি সাহস পেয়ে গেছে। একবারের জন্য বললোও না যে ও কুলি করে, মুখ ধুয়ে এসেছে। মৃদুল সারারুম চক্কর মেরে দরজা দিয়ে পরিমরি করে বাইরের দিকে ছুট লাগলো। সাবা ওর পিছু না নিয়ে হাসতে হাসতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here