মেঘের পরে মেঘ-২০

মেঘের পরে মেঘ -২০

রুপসাকে ইদানিং খুব চঞ্চল লাগে শায়েরীর কাছে।যেন সারাঘরে উড়ে উড়ে বেড়ায়।চোখে মুখে এক অজানা দীপ্তি খেলে বেড়ায়।সৌন্দর্য্য যেন বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুন।এমনটা আগে ছিলো না।
মুখটা হাসি হাসি হয়ে থাকে।যেন কোন অজানা সুখের সাগরে ভেসে বেরাচ্ছে।মেয়ে খুশিতে আছে,এটা ভাবতেই ভালো লাগে শায়েরীর।
আবার ভয়ও হয়।এ বয়সটাই তো খারাপ।আবার না কোন ভুল করে বসে।নিজে যে ভুল করেছে সেটা নিজের মেয়েকে কিছুতেই করতে দেবে না।
রুপসা তো অবুঝ না, নিশ্চয়ই বুঝবে।শায়েরী কতোটা কস্ট করেছে তার কিছুটা হলেও আঁচ তো রুপসার গায়েও লেগেছে।তারপরও ও কি কোন ভুল করবে?
বলা যায় না একটু সাবধান থাকাই ভালো।
খেয়াল রাখতে হবে।পড়াশোনা ঠিকমতো করছে কি না এটা দিয়েই শুরু করা যায়।প্রেমে পরলে সবার আগে পড়ার ক্ষতি হয়।
মন উড়ুক্কু থাকে।পড়তে বসতে তো একদমই মন চায় না।তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রমান তো ও নিজেই।
কতোটা সময় এমন হয়েছে যে বই শুধু খুলেই রেখেছে,এক লাইন ও পড়তে পারেনি।নাবিলের কথাই ভেবেছে। যার দরুন একটা সময় সেমিস্টার গুলোতে রেজাল্ট আশানুরূপ হয় নি।
শায়েরী রুপসাকে ডাক দিলো।

“কি হয়েছে মা?”

“এদিকে বোস একটু,আজকাল তো কথা বলার সময়ই পাই না।তুই বিজি, আমিও বিজি।এখন বলতো পড়াশোনার খবর কি? ”

“ভালোই তো।খারাপ হবে কেন?”

“গত পরীক্ষার রেজাল্ট কি দিয়েছে? কততম হয়েছিলি ক্লাসে? ”

“তিন দিন হলো দিয়েছে।সেকেন্ড হয়েছি।”

“প্রথম হয়েছে কে?নাহিন?”

“হ্যাঁ।ও তো বরাবরই প্রথম হয় মা।এতে মন খারাপের কি আছে?”

“মন খারাপ করছি কোথায়?” জিজ্ঞেস করলাম।”

“তুমি আজ স্কুলে যাবে না?”

“যাবো।আরো পরে।তুই কি তৈরি? ”

“হ্যাঁ,মোটামুটি। ”

“যা।”

রুপসা চলে গেলো।শায়েরী ফোস করে দম ছাড়লো। ঠিকই আছে সব।শুধু শুধু চিন্তা করে মরছে।

______

দেখতে দেখতে কেটে গেছে সাতটা মাস।সামনেই রুপসার ফাইনাল পরীক্ষা। তাই পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করে। প্রলয় ও তেমন বিরক্ত করে না।নিজের নতুন চাকুরি আর অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। শুধু মাঝে মাঝে একটু আধটু দেখা করতে আসে।সে সময়টাতেও রুপসা বেশি সময় থাকে না।তবুও দুজনের সম্পর্কে কোন ভাঁটা পরে নি। বরং আত্মিক সম্পর্ক টা আরো বেড়েছে।
আজও দেখা করার কথা আছে।প্রলয় কাল বাড়ি এসেছে।কলেজ থেকে দুরে একটা রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করবে।রুপসার সাথে কথা বলে আবার ঢাকা চলে যাবে।
কিন্তু নিজের ক্লাসটেস্ট দিতে গিয়েই দেরি হয়ে গেলো রুপসার।রেস্টুরেন্টে ঢুকতে গিয়ে গ্লাসে চোখ পরতেই বুঝলো,খুব বেশি অগোছালো লাগছে ওকে দেখতে।কিন্তু উপায় নেই।সেই অবস্থাতেই প্রলয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রুপসা।

“সরি,আসতে দেরি হয়ে গেলো।আপনি কখন এসেছেন? ”

রুপসার দিকে তাকিয়ে একটুখানি হাসলো প্রলয়।ঘর্মাক্ত,পরিশ্রান্ত এবং এলোমেলো চুলের রুপসাকে দেখেও বুকের মধ্যে ঢেউ আছড়ে পরলো যেন।মেয়ে টা কি জানে ওর এই রুপটা প্রলয়ের কতো প্রিয়।
রুপসাকে চেয়ার এগিয়ে দিতে দিতে বললো,,
“তাও তো আসলে।আমি তো ভেবেছি আসবেই না।”

” জানেন ই তো সামনে পরীক্ষা।এখন একটু ব্যস্ত তো থাকতেই হবে।না হলে তো রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাবে।”

“সেজন্যই তো ছাড় পাও।কিন্তু খুব বেশিদিন মনে হয় তোমাকে সময় দিতে পারবো না।”

“কেন?কি হয়েছে? ”

“আমার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কাগজপত্র প্রায় ঠিক হয়ে গেছে।খুব বেশি হলে মাস তিনেক আছি।”.

প্রলয়ের কথা শুনে মনটা হোঁচট খেলেও নিজেকে সামলে নিলো রুপসা।হাসি হাসি মুখ করেই বললো,

” এতো ভালো একটা খবর এভাবে দিচ্ছেন কেনো?রসকষহীন মানুষ কোথাকার।”

“রসকষহীন না হলে কি আর তোমার মুখে আপনি ডাকে অভস্ত্য হতে হয়?এতোদিনেও তো তুমি করে বললেনা।”

“বলবো।বিয়ের পর।”
মাথা নিচু করে বললো রুপসা।

“তাহলে তো বলবো অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে খুব তাড়াতাড়িই।”

“মানে?”

“মানে খুব সোজা।আমি চাই যাওয়ার আগে আমাদের বিয়ে টা হোক।আমি এভাবে তোমাকে রেখে যেতে পারবো না।আর বাড়িতে সবাইকে জানিয়েছি তোমার ব্যাপারে।ওদের কোন আপত্তি নেই।উনারাও চান বিয়েটা হোক।হাজারহোক ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে।”

চোখ কপালে তুলে ফেললো রুপসা।
“এখন বিয়ে কি করে সম্ভব?ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি।মা মানবে না।”

“তুমি নিশ্চিতে পরীক্ষা দাও।যা হবে পরীক্ষার পর হবে।”

“কিন্তু মা?”

“সেসব আমি দেখবো।”

“আপনি না হয় ঘুরে আসুন।আপনি না বলেছিলেন গিয়ে ছয় মাসের মধ্যে আবার আসবেন।তখন না হয় বিয়ে টা করবেন।”

“তুমি এতো কথা বলছো কেন তাই তো বুঝতে পারছিনা।তুমি কি চাও না আমাদের বিয়ে টা হোক?”

“চাই।”
ছোট্ট করে উত্তর দিলো রুপসা।

“তাহলে?”

“মা র অনেক স্বপ্ন আমাকে নিয়ে।উনি চান আমি অনেক পড়াশোনা করে ভালো কিছু একটা করি।উনি তো আর জানেন না আমার আপনার সাথে সম্পর্ক আছে।তাই বিয়ের কথা শুনলেও রাজি হবেন না।আর আপনি যদি আমাদের কথা বলেন তো মা অনেক কস্ট পাবেন।তাই বলছিলাম কি, আপনি যান একটু ঘুরে ফিরে আসুন আর আমিও পড়াশোনা টা কমপ্লিট করি।তখন না হয়…”

“ততদিনে আমি বুড়ো হয়ে যাই আর কি?”

“বুড়ো হবেন কেনো?”
হি হি হি।

প্রলয় আর কথা বাড়ালো না।বুঝতে পারলো এভাবে হবে না এই মেয়ে কে অন্য উপায়ে রাজি করাতে হবে।ব্রেইন ওয়াশ করতে হবে ওর।যাতে নিজেই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যায়।
এরপর রুপসার দিকে একটা ছোটখাটো বক্স বাড়িয়ে প্রলয়।রুপসা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।

“এটা একটা মোবাইল। তোমার জন্য এনেছি। আমাদের যোগাযোগ করতে সুবিধা হবে। ”

“কিন্তু এটা আমি কিভাবে কি করবো।মা দেখলে খবর করে দেবে আমার।”

“উনি জানবে কেনো?তোমার কলেজ ব্যাগে লুকিয়ে রাখবে।”

“আমি নেবো না এটা প্লিজ।”
রুপসা অনুনয় করতে লাগলো।

“প্লিজ নাও এটা।আমি ঢাকা যাচ্ছি। জানিনা কবে দেখা হবে।তাছাড়া তোমার পরীক্ষার মধ্যে আসতেও চাই না।আসলেই তোমাকে দেখতে মন চাইবে।তোমাকে নানা অজুহাতে বাইরে আসতে হবে তার চেয়ে এই ভালো, এটা থাকলে একটু যোগাযোগ করতে পারবো। ”

রুপসা নিলো।
“আমি কথা টথা বলতে পারবো না।”

“বলতে হবে না।কল দিয়ে বই নিয়ে বসে থেকো আমি না হয় তোমার পড়াগুলোই শুনবো।”

_______

“এ্যাই রুপ,প্রলয় ভাই নাকি অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে?কাগজপত্র না কি সব ঠিক হয়ে গেছে? ”

“হু।”

“তো কি ডিসিশন নিলি?”

“কোন ব্যাপারে? ”

“তোদের বিয়ের ব্যাপারে।”

“কি আর ডিসিশন নেবো?উনি তো চাইছিলেন বিয়ে করতে,আমি মানা করে দিয়েছি।”

“কেনো?তুই কি বোকা? ”

“এখানে বোকার কি আছে? ”

“বিদেশ গিয়ে যখন বিদেশিনী ধরে নিয়ে আসবে তখন বুঝিস।”

“বিদেশিনী ধরবে কেনো?উনি আমাকে খুব ভালোবাসেন।”

“কতো হলো এমন।তখন কাঁদিস বসে বসে।ছেলেরা বিয়ে করতে চায় না আর ওকে বিয়ে করে রেখে যেতে চাইছে সিকিউরিটির জন্য তা উনার পোষাচ্ছে না।যখন বিদেশ গিয়ে তোকে ভুলে যাবে তখন বুঝিস।”

“কি বলছিস এসব?”
আঁতকে উঠলো রুপসা।কি বলছে মনিকা?সত্যিই কি এসব হবে?যদি হয় তাহলে?

চলবে…….

মুনিরা মেহজাবিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here