#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_14
#Ariyana_Nur
হুট করেই মাঝরাস্তায় অপরিচিত একটা মেয়ে এসে জড়িয়ে ধরাতে হকচকিয়ে গেলো ফাহাদ।নিজের এতো কাছে অন্য একটা মেয়ের অবস্থান বুঝতে পেরে মুহূর্তেই কপালের রগ ফুলে উঠল।শরীরের মধ্যে মনে হয় জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে গেলো।ফাহাদ মেয়েটাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে রাগি গলায় বলল,
—কি হচ্ছে কি?এটা কোন ধরনের অভদ্রতা?ছাড়ুন আমায়।
মেয়েটি হাতের বাধন আরেকটুকু টাইট করে ভীতু গলায় বলল,
—প্লিজ নড়াচড়া করবেন না।যেভাবে আছেন ঠিক সেভাবেই থাকুন।
ফাহাদ চেচিয়ে বলল,
—হোয়াট?কি সব বলছেন আপনি?আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?ছাড়ুন আমায়।
মেয়েটি করুন কন্ঠে বলল,
—আমার মাথা খারাপ হয়নি।মাথা সম্পূর্ণ ঠিক আছে।কিছু বখাটে ছেলে আমার পিছু নিয়েছে।প্লিজ আমায় হেল্প করুন।
মেয়েটির কথা শুনে ফাহাদ আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
—কোথায় বখাটে ছেলে?আমি তো রাস্তায় কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না।
—মুন্ডুটা একটু বাকা করে পিছন দিকে তাকান তাহলেই দেখতে পাবেন।
মেয়েটার কথা শুনে ফাহাদ ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছন দিকে তাকাতেই দেখলো কয়েকটা ছেলে ওদের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।নিজেদের সাথে কিছু বলে সামনের দিকে আর পা না বাড়িয়ে উল্টো পথে হাটা ধরল।ছেলেগুলো চলে যেতেই ফাহাদ গম্ভীর গলায় বলল,
—ওরা চলে গেছে এবার ছাড়ুন।
ফাহাদের কথা শুনে মেয়েটির হাতের বাধন আস্তে আস্তে ছুটে গেলো।মেয়েটির হাত থেকে ছাড়া পেতেই ফাহাদ কোন কিছু না বলে মেয়েটির গালে ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দিল।ফাহাদের কাজে মেয়েটি ফ্যালফ্যাল করে গালে হাত দিয়ে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে রইল।ফাহাদ মেয়েটিকে চড় মেরেও যেন নিজের রাগ দমাতে পারছে না।ফাহাদ ধমকে বলে উঠল,
—হেই ইউ!কোন সাহসে তুমি আমার জড়িয়ে ধরেছো? র্নিলজ্জা,বেহায়া মেয়ে লজ্জা করে না অপরিচিত একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে?তোমার মত ছেছড়া মেয়ে আমি দ্বিতীয়টা দেখি নি।
ফাহাদ এর ধমক আর ঝাঝালো গলার কথা শুনে মেয়েটি ভ্যা ভ্যা করে কেদে উঠল।মেয়েটির কাজে ফাহাদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।মুহূর্তের মধ্যে নিজের রুপে ফিরে গিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
—এই মেয়ে বাচ্চাদের মত এভাবে কাদছো কেন?
ফাহাদ এর ধমক খেয়ে মেয়েটি কেপে উঠল।ভ্যা ভ্যা কান্না থামিয়ে ফোপাতে লাগল।ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে উঠল,
—আমি তো বাচ্চাই।
মেয়েটির কথা শুনে ফাহাদ এবার মেয়েটির দিকে ভালো করে নজর দিলো।মেয়েটির পরনে হোয়াইট টপস আর ব্ল্যাক স্কার্ট।গলায় ওড়না ঝুলানো।ফর্সা গোলগাল চেহারার অধিকারী মেয়েটার কান্নার কারনে নাকের ঢগা অনেকটা লাল হয়ে গেছে।সব মিলিয়ে মেয়েটিকে দেখতে আসলেই অনেকটা বাচ্চা লাগছে।মেয়েটাকে এভাবে কান্না করতে দেখেও ফাহাদের নিজের কাজের জন্য মনে কোনে অনুশচনা কাজ করল না।ফাহাদ রাগি গলায় বলে বলল,
—বাচ্চা যখন তখন একা রাস্তায় বের হয়েছো কেন?
মেয়েটি নাক টেনে ফাহাদের কথার উওর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করল,
—আপনার কাছে রুমাল আছে?
মেয়েটির কথা শুনে ফাহাদ মেয়েটির দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই মেয়েটি পূনরায় নাক টেনে বলল,
—কান্নার কারনে নাকে পানি চলে এসেছে।নাক মুছবো।
মেয়েটির কথা শুনে ফাহাদ বিরবির করে বলল,
—ডিসগাস্টিং।
মেয়েটি ফাহাদ কে চুপ করে থাকতে দেখে পূনরায় জিগ্যেস করল,
—আপনার কাছে রুমাল নেই?
ফাহাদ কাঠ কাঠ গলায় বলল,
—না নেই।
ফাহাদের কথা শুনে মেয়েটি নাক টেনে ফাহাদের অনেকটা সামনে চলে গেলো।ফাহাদ কিছু বুঝার আগেই ফাহাদের শার্টের কোনা দিয়ে নাক মুছে নিল।মেয়েটির কাজে ফাহাদ স্টেচু হয়ে গেলো।ব্যাপারটা যখন বুঝতে পারলো তখন বাজখাই গলায় চেচিয়ে বলল,
—ইউ! কি করলে তুমি এটা?
মেয়েটি অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
—হায় আল্লাহ!আপনি কানা নাকি দেখতে পারেন নি কি করেছি?
ফাহাদ রাগে দাত কিরমির করতে করতে বলল,
—তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার শার্ট দিয়ে….।ইয়াক।
—হায় আল্লাহ!এতে সাহসের কি হল?আপনি কাদিয়েছেন আপনার কারনে আমার নাকে পানি এসেছে আপনার শার্ট দিয়ে মুছবো না তো কার শার্ট দিয়ে মুছবো?তাছাড়া আপনার কাছে তো রুমাল চেয়েছিই।রুমাল নেই কিছু নেই তাহলে আমি কি করবো?(অসহায় ফেস করে)
ফাহাদ রাগে নিজের চুল টেনে দাতে দাত চেপে বলল,
—আমার সামনে থেকে তাড়াতাড়ি যাও তা না হলে তোমায় যে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।
মেয়েটা ভেঙচি কেটে বলল,
—এহ আসছে আমার সামনে থিকে যাও বলতে।রাস্তাটা কি আপনার যে আপনার কথা মত আমি এখান থেকে চলে যাবো?
ফাহাদ মেয়েটার দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে বলল,
—বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?
মেয়েটি কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
—বাড়াবাড়ির কি দেখেছেন।ভালোয় ভালোয় কেটে পরুন তা না হলে মানুষ জড়ো করে এমন মাইর খাওয়াবো একেবারে সোজা হয়ে যাবেন।মাইরের ঠেলায় শিখে যাবেন মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়।প্রথম থেকেই ধমকের উপর ধমক দিয়ে চলেছে।কোথায় আমার মত মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে মিষ্টি করে কথা বলবে।তা না করে শুধু ধমকাচ্ছে।
ফাহাদ মেয়েটার দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
—ইউ তোমাকে আমি….।
ফাহাদকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মেয়েটি ফাহাদের গাল টেনে দিয়ে মুখের মধ্যে হাসির রেখা টেনে বলল,
—ওলে আমার হিলো(হিরো) লে।বেশি লাগিয়ে(রাগিয়ে) দিলাম তোমায়?থাক আর লাগতে হবে না।আমিই চলে যাচ্ছি।নিজের খেয়াল রেখো।লাভ ইউ।
মেয়েটি হাত দিয়ে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।ফাহাদ যেন মেয়েটির কাজে কথা বলতে ভুলে গেলো।ফ্যালফ্যাল করে মেয়েটি যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
_________
রাই বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নানান কথা ভাবছে।হঠাৎ সকালের তীব্রর করা কাজের কথা মনে পরতেই আপনা আপনি নিজের হাত কপালে চলে গেলো।মুহূর্তেই মুখের মধ্যে এক রাশ লজ্জারা এসে ভীড় জমালো।
—রাইজু!এমন খাম্বার মত দাড়িয়ে কপালে হাত দিয়ে কি ভাবছিস?সেই কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?
ফাইজার জোর গলার কথা শুনে রাই হকচকিয়ে গলো।কপাল থেকে হাত নামিয়ে থতমত খেয়ে বলল,
—কই?কিছু না তো।
ফাইজা রাই এর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগি গলায় বলল,
—ঐ ছেমড়ি কিছু যদি নাই ভাবোস তাহলে এতো গুলো যে ডাক দিলাম জবাব দিলি না কেন?
রাই মিনমিনে গলায় বলল,
—শুনতে পাইনি।
ফাইজা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
—শুনতে পাবি না কেন?কানে কি তুলা দিয়া রাখছোস?
রাই অসহায় ফেস করে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,
—আরে এমন রাগ করছিস কেন?বললাম তো শুনতে পাই নি।
ফাইজা রাই এর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল,
—সকাল থেকেই তোকে অন্য রকম লাগছে।সত্যি করে বলতো কি হইছে?ভাইয়ার রাগ ভাঙছে?
ফাইজার কথার প্রতি উওরে রাই কপট রাগ দেখিয়ে ঝাঝালো গলায় বলে উঠল,
—বান্দরনী তোর মত বেষ্টু যার থাকবে তার আর শত্রুর প্রযোজন হবে না।জীবনে যা না করছি তাও আজ তোর কথা রাখার জন্য করলাম।সে রাগ করুক বা যাই করুক তাতে আমার কি?তার রাগে আমার কি আসে যায়?
রাই ভেঙচি কেটে বলল,
—হইছে আর ঢং করতে হবে না।আমার মুখ খোলাইও না।এখন যেটা জিগ্যেস করছি সেটা বল।
রাই কথা না বাড়িয়ে ছোট করে উওর দিল,
—হুম।
ফাইজা খুশি হয়ে রাই এর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—এই না হলে আমার বেষ্টু।সরিরে দোস্ত আমার জন্য তোর ভাইয়ার বকা শুনতে হল।
রাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলল,
—ফাইজু!লোকটা এমন কেন বলতে পারিস?এর হাব-ভাব, মতি-গতি কিছুই আমি বুঝতে পারি না।মাঝে মাঝে মনে হয় লোকটা পুরোই পাগল।
ফাইজা মুচকি হেসে বলল,
—হ্যা তোর জন্য।
রাই কপালে ভাজ ফেলে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,
—আমার জন্য মানে?
ফাইজা কথা ঘুড়িয়ে বলল,
—তোর জন্য পাগল কখন বললাম?বললাম তোর মত পাগল।
রাই,ফাইজার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ফাইজা,রাই এর হাত থেকে বাচার উদ্দেশ্য বলল,
—মনে হয় তিহান ডাকছে।তুই থাক আমি আসছি।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে ফাইজা কেটে পরল।
_________
রাই গুটিগুটি পায়ে দরজার সামনে এসে উকি দিতেই দেখলো তীব্র বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে কোলের উপর ল্যাপটব নিয়ে এক মনে কাজ করছে।এর আগেও রাই কয়েকবার দরজার সামনে এসে উকি ঝুকি দিয়ে তীব্রকে পর্যবেক্ষণ করে গেছে।রাই তীব্রর দিক থেকে চোখ সরিয়ে দেয়ালে টানানো ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো ১০:৪৫ বাজে।রাই মনে মনে বলতে লাগল,এতোক্ষনে তো সে রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে চলে যায় আজ এখনো বসে রয়েছে কেন?রাই এর ভাবনার মাঝেই তীব্র ল্যাপটবের দিকে চোখ রেখে বলল,
—তোমার লুকোচুরি খেলা শেষ হলে ভিতরে আসতে পারো।কথা আছে।
তীব্রর কথা শুনে রাই হকচকিয়ে গেলো।মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বেডের এক কোনে গিয়ে দাড়ালো।তীব্র এক পলক রাইকে দেখে কোল থেকে ল্যাপটবটা নামিয়ে আড়মোড়া দিয়ে রাই এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
—এতোক্ষন কোথায় ছিলে?
তীব্রর গম্ভীর গলার কথা শুনে রাই আর মাথা তোলার সাহস পেল না।কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রইল।তীব্রর কথার কিই বা উওর দিবে সে?সে তোর তীব্রর থেকে পালিয়েই বেড়াতেই এতোক্ষন রুমে আসেনি।সকালের ঘটনাটার কারনে তীব্রর সামনে আসতে সে বিব্রত বোধ করছে।
রাই মিনমিনে গলায় বলল,
—ড্রয়িং রুমে।
—কি করছিলে?
তীব্রর প্রশ্নে রাই পূনরায় মিনমিনে গলায় উওর দিল,
—কার্টুন দেখছিলাম।
তীব্র কপালে ভাজ ফেলে বিরবির করে বলল,
—দুদিন পর বাচ্চার মা হয়ে যাবে এখনো নাকি সে বাচ্চাদের মত কার্টুন দেখে।
রাই,তীব্রর কথা শুনতে না পেরে তীব্রর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো।তীব্র রাই এর প্রশ্নবোধক দৃষ্টি উপেক্ষা করে পাশ থেকে কিছু কাগজ আর কলম রাই এর দিকে বাড়িয়ে দিল।হাত দিয়ে এক জায়গায় দেখিয়ে দিয়ে বলল,
—এখানে সাইন কর।
রাই কাগজটা ভালোমত না পড়ে না দেখে বিনা বাক্যে সাইন কর দিল।সাইন করতেই তার মাথায় এল কিসের কাগজে সে সাইন করলো সেটাই তো সে জানে না।তাই দেড়ি না করে জিগ্যেস করে বসল,
—কিসের পেপার এটা?
রাই এর প্রশ্নে তীব্র মুখের মধ্যে রহস্যময় এক হাসি ঝুলিয়ে বলল,
—ডির্ভোস পেপাপ।
#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_15
#Ariyana_Nur
একটা সাক্ষরের কারনে যেমন মানুষ নতুন এক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে।ঠিক তেমনি একটা সাক্ষরের কারনে আবার সেই সম্পর্কের ইতিও টানে।
তীব্রর মুখে ডিভোর্স পেপারের নাম শুনেই রাই ঝাটকা খেল।ফ্যালফ্যাল করে তীব্রর দিকে তাকিয়ে রইল।না চাইতেও চোখের কোনে জমা হল নোনা জল।কিছু সময়ের জন্য রাই এর ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দিল।মনের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা সাইন এর মাধ্যমে গড়ে ওঠা নতুন সম্পর্কের ইতি আবার একটা সাইনের মাধ্যমেই টানলো।ভাবতেই রাই এর মনের মাঝে রক্ত ক্ষরন হতে লাগলো।কেন সেটা সে জানে না।
রাইকে ছলছল চোখে তীব্রর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তীব্র মনে মনে হাসতে লাগলো।রাইকে আরেকটুকু বোকা বানানোর জন্য কাগজটা বালিশের নিচে রেখে দিয়ে গম্ভীর গলায় জিগ্যেস করল,
—তোমার কিছু বলার আছে?
রাই চোখের কোনে জমে থাকা জলটুকু গড়িয়ে পরার আগেই ওড়না দিয়ে মুছে নিল।মাথা নিচু করে ছোট করে উওর দিল,
—না।
—কিছুই বলার নেই?
রাই একটু চুপ করে থেকে নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে বলল,
—আমি আপনার কাছে কৈফিয়ত চাইবো না যে,আপনি এটা কেন করেছেন?বরং আপনার কাজে আমি খুশি হয়েছি।আপনি আপনার মনের কথা শুনেছেন।যে সম্পর্কের কোন মানে নেই সেটা ঝুলিয়ে রেখেই বা কি লাভ বলুন?দ্বায়িত্ব, টানাপোড়া সম্পর্ক আর কতদিন?দয়া-করুনা করে একটা মেয়েকে আশ্রয় দেওয়া যায় কিন্তু তাকে নিয়ে সংসার করা যায়….।
রাই কথাটা আর পূর্ন করতে পারলো না।তার আগেই কিছু একটা ভাঙার শব্দ শুনে সে চমকে উঠল।তীব্র রাই এর কথার মাঝের বেড সাইড টেবিলের উপর রাখা জগটা নিচে ছুড়ে মেরেছে।তীব্রর দিকে তাকাতেই রাই এর কলিজা শুকিয়ে গেলো।তীব্র রাই এর দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে রয়েছে।মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই সে রাইকে ভস্ম করে দিবে।তীব্র কিছুক্ষন রাই এর দিকে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে থেকে কোন কথা না বলে গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তীব্র রুম থেকে বের হতেই রাই হাটু গেড়ে বসে ঢুকরে কেদে উঠল।তার জীবনটা এমন কেন?জীবনটা এতো কঠিন হওয়া কি খুব দরকার ছিল?
________
ফাহাদ তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বের হতেই ফাহাদের ফোনটা বেজে উঠল।ফাহাদ নাম্বার খেয়াল না করে ফোন রিসিভ করে কথা বলার আগেই অপর পাস থেকে কর্কশ কন্ঠে ভেসে এল,
—কোথায় ছিলে তুমি?কোন মেয়ের সাথে এতোক্ষন ধরে টাংকি মারছিলে যার কারনে আমার ফোনটা ধরতে পারো নি?আমি আগেও বলেছি এখন আবার বলছি আমি ছাড়া যদি অন্য কোন মেয়ের দিকে নজর দাও তাহলে দেখো আমি কি করি?তোমার চোখ তুলে নিব আমি।তারপর সেটা দিয়ে মারবেন খেলবো।
ঘন্টা খানেক সাওয়ার এর নিচে দাড়িয়ে থেকে ফাহাদ যতটুকু মাথা ঠান্ডা করেছিলো এই মেয়ের কথায় পূনরায় তারা মাথা আবার গরম হয়ে গেলো।ফাহাদ রাগি কন্ঠে বলল,
—এই মেয়ে কে তুমি?কেনই বা বার বার কল করে আমার মাথা খাচ্ছ?
ফাহাদের কথা শুনে মেয়েটি অভিমানী গলায় বলল,
—এই!এই মেয়ে এই মেয়ে কি হ্যা?জান, কলিজা এসব বলে ডাকতে পারো না?মাঝরাস্তায় তো ঠিকই অন্য মেয়েদের জড়িয়ে থাকতো পারো।আমার সাথে কথা বলতেই তোমার যত সমস্যা।সব সময় শুধু তেতো কথা আমার সাথে একটু মিষ্টি করে কথা বললে কি হয় তোমার?
মেয়েটির কথায় ফাহাদের রাগ সপ্তম আকাশে।ফাহাদ হুংকার দিয়ে বলল,
—আমাকে কি মনে হয় তোমার?আমি এতোটাই বোকা যে আমার সাথে চালাকি করে পার পেয়ে যাবে?নাকি নিজেকে বড় অভিনেত্রী মনে হয়?র্নিলজ্জর মত যে তুমিই মাঝরাস্তায় আমায় জড়িয়ে ধরে ছিলে সেটা ভেবো না আমি বুঝি নি।
মেয়েটি খুশি খুশি গলায় বলল,
—ওয়াও জান তুমি তো খুব বুদ্ধিমান।
এই জন্যই তো তোমায় এত্ত ভালোবাসি।
মেয়েটির প্রতিটা কথা ফাহাদ এর শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে।ফাহাদ কিছুক্ষন মেয়েটাকে বকাঝকা করে লাইন কেটে দিয়ে ফোনটা বেডে ছুড়ে মারল।অপর দিকে ফাহাদ লাইন কাটতেই মেয়েটির মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।মেয়েটি হাসতে হাসতে দেয়ালে টানানো ফাহাদ এর ছবির উপর হাত বুলিয়ে বলল,
—মিঃ সাইকো কেমন দিলাম?একটু ওয়েট কর।পাগলামো কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি সব তোমায় উদাহরন সহ কিছুদিনের মধ্যেই বুঝিয়ে দিব।তুমি এতোদিন তোমার সাইকোময় ভালাবাসা দেখিয়েছ।এবার আমি তোমায় আমার পাগলামো ভালোবাসা দেখেবো।সো রেডি থেকো।
________
হাটুতে মাথা গুজে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে চলেছে রাই।পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেতেই মাথা তুলে তাকালো সে।তীব্রকে পাশে হাটু গেড়ে বসে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি চোখের জল মুছে নড়েচড়ে ঠিক হয়ে বসল।তীব্র,রাই এর মুখটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে নরম গলায় বলল,
—তুমি এমন কেন?আমি বললাম পেপারে সাইন করতে বিনা বাক্যে পেপারে সাইন করে দিলে।একবারো কি পেপারটা পড়ে দেখা তোমার উচিত ছিলো না কিসের মধ্যে সাইন করছো?পড়া তো দূর সাইন করার আগে মুখ ফুটে একবার জিগ্যেস ও করলে না এটা কিসের পেপার।কাজটা কি ঠিক হল বল?
তীব্রর কথার প্রতি উওরে রাই মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইল।পেপারটা না পড়ে বা কিসের পেপারে সাইন করছে সেটা না যেনে যে সাইন করা ঠিক হয়নি সেটা সেও বুঝতে পারছে।তখন সে এমনিতেই তীব্রর সামনে আসতে বিব্রত বোধ করছিলো।তাইতো তখন তীব্র পেপারে সাইন করতে বলাল সাথে সাথে অতো কিছু না ভেবে পেপারে সাইন করে দিয়েছিলো।যখন মাথায় খেয়াল এল কিসের পেপারে সাইন করল তখন এক মুহূর্তও দেড়ি না করেই তীব্রকে সে জিগ্যেস করে বসেছিলো।রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে তীব্র পূনরায় বলল,
—আমি জানি না তুমি আমাদের সম্পর্কটাকে কোন চোখে দেখ।আমার সম্পর্কে কি ভাবো।
কথাটা বলে তীব্র থামলো।ছোট করে একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে পূনরায় বলল,
—সবার মত ভালোবাসা নিয়ে লেকচার দেবার সময় বা ইচ্ছে কোনটাই আমার নেই।মুখে তো সবাই নানান প্রতুশ্রুতি দেয়।কাজের বেলায় ক’জন ক’টাই বা পালন করে বল?তাই আমার মনের কথা আমার কাজে বুঝে নিও।তাহলেই বুঝতে পারবে এই হৃদয়ে কতটা জুড়ে আছো তুমি।
তীব্র কথাগুলো বলে উঠে দাড়ালো।দরজার সামনে গিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে বলল,
—পেপারটা বালিশের নিচেই আছে।ইচ্ছে হলে দেখে নিও।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে সেখান থেকে চলে গেলো।তীব্রর মুখে এমন কথা শুনে রাই রিয়েক্ট করতেই ভূলে গেছে।মাথাটা কেমন হ্যাং মেরে রয়েছে তার।তীব্রর বলা প্রতিটা কথা বার বার তার কানে ঘুড়পাক খাচ্ছে।
________
ফাইজার সামনে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রয়েছে রাই।ফাইজা তীক্ষ্ণ চোখে হাতের কাজটা একবার দেখছে তো এক বার রাই এর দিকে তাকাচ্ছে।রাই এর মুখে সব শুনতেই ফাইজার মেজাজ চড়া হয়ে রয়েছে।
—চোখের পাওয়ারের কি মাথা খাইছোস তুই?চোখে যদি ঠাওয়ার না পাস তাহলে একমে খালি চোখে ঘুড়োস কেন?পাওয়ারের চশমা লাগাইতে পারোস না গরু।তোরে গরু কইলেও গরুদের অপমান করা হইবো।পাগল,ছাগল ছেমড়ি।মনডায় চাইতাছে তোরে ড্রেনের থেকে চুবাইয়া আনি।
ফাইজার রাগি গলার কথা শুনে রাই কাদো কাদো ফেস করে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,
—তুই আমায় এভাবে বলতে পারলি ফাইজু?
ফাইজা ধমক দিয়ে বলল,
—তোরে যে আমি আস্ত রাখছি সেটার শুকরিয়া আদায় কর।বদমাইশ ছেমড়ি জীবনে ভর্তির ফরম দেখোস নাই?পড়ালেখা কি এমনে এমনেই করছোস নাকি?ডিভোর্স পেপার আর ভর্তির ফরম এর মধ্যে পাথর্ক্য চিনোস না।
রাই গাল ফুলিয়ে বলল,
—আমার কি দোষ বল?উনি সামনে থাকতেই তো আমার সব গুলিয়ে যায়।তাছাড়া সকালের কারনটার জন্যও তার সামনে যেতে একটু বিব্রত বোধ করছিলাম।তাই অতোকিছু না ভেবেই…..।
ফাইজা ফোস করে নিশ্বাস ফেলে বলল,
—হয়েছে আর সাফাই গাইতে হবে না।
যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।তোর ঐ ছাগল মার্কা করনেই তুই ভাইয়ার মনের খবর জানতে পারলি।এবার অতি তাড়াতাড়ি নিজের মনের খবরটাও ভাইয়াকে জানিয়ে দিস।তাহলেই সব সমাধান হয়ে যাবে।
ফাইজার কথার প্রতিউওরে রাই চুপ করে রইল।তার মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা।নিজের কথা ভেবে এখানে এসে গা ডাকা দিতে গিয়ে এই পরিবারের লোকদের উপর বিপদ ডেকে আনছে না তো?
#চলবে,
(