#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Last_Part
#Ariyana_Nur
তীব্র সোফায় বসে ল্যাপটপে নিজের কাজ করছে সাথে আড়চোখে রাইকে পর্যবেক্ষণ করছে।বাসায় আসার পর থেকেই তীব্র খেয়াল করছে রাই এর মুখটা কেমন গম্ভীর লাগছে।মনে হচ্ছে কোন কারনে রাই তার প্রতি রেগে আছে।তীব্র কিছু বললেই রাই সাথে সাথে কেমন ত্যাড়াবাকা করে উওর দিচ্ছে।কিন্তু কেন রাই তীব্রর প্রতি রেগে আছে সেই কারনটাই সে বুঝতে পারছে না।তীব্র ল্যাপটপের দিকে চোখ রেখে নিজের হাতের কাজ করতে করতে বলল,
—চাঁদ!একটু কফি বানিয়ে দিবে।কাজের চাপে মাথাটা কেমন যেন করছে।
তীব্রর কথা শুনে রাই মুখে কিছু না বলে ধুপধাপ পা ফেলে নিচে চলে গেলো।কিছুক্ষন পর কফি হাতে রুমে প্রবেশ করে তীব্রর সামনে কফির মগ বাড়িয়ে দিয়ে দাড়িয়ে রইল।কিন্তু মুখে একটুও টু-শব্দ করল না।তীব্র রাইকে দেখেও না দেখার ভান করে নিজের কাজ করতে লাগলো।রাই তীব্রর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থেকে পাশেই কফির মগটা শব্দ করে রেখে চলে যেতে নিলেই তীব্র রাই এর হাতটা খপ করে ধরল।রাই তীব্রর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই তীব্র রাইকে টান দিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে রাই এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরল।ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটল যে রাই হকচকিয়ে গেলো।রাই নিজেকে সামলিয়ে তীব্রকে নিজের কোল থেকে উঠানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু তিল পরিমানও সরাতে পারল না।তাতেই যেন রাই এর রাগ আরো বেড়ে গেলো।রাই রাগি গলায় বলল,
—হচ্ছেটা কি?সরুন তো আমার কাজ আছে।
তীব্র নিজের মত থেকেই স্বাভাবিকভাবে উওর দিল,
—আমারো তো একি প্রশ্ন?হচ্ছেটা কি?সবার সাথে স্বাভাবিক কথা বলছো আর আমার সাথে রাগ করে রয়েছো কেন?কি করেছি আমি?আমার কথা বা কাজে কি কোন কষ্ট পেয়েছো?দেখো দুদিন একটু কাজের চাপ বেশি ছিলো বলে তোমায় তেমন সময় দিতে পারিনি তার জন্য সরি।
প্লিজ রাগ করে থেকো না কি হয়েছে বল।
রাই তীব্রকে ধাক্কা দিতে নিজের থেকে সরিয়ে রাগি গলায় বলল,
—ঢং দেখলে বাচি না।ভালোবাসা একেবারে উপচে পরছে।আপনার এই আলগা ভালোবাসা আপনার কাছে রাখুন।
—আরে এতো রাগছো কেন?কি করেছি আমি?
রাই তেজি গলায় বলে উঠল,
—কি করেননি সেটা বলুন।ফাইজার কাছে শুনেছি বাসায় আশার প্রথম দিনই বাসার সকলের সামনে র্নিলজ্জর মত তো ঠিকই বলেছেন আমায় ভালোবাসেন তাহলে মুখ ফুটে একটা বারের জন্য আমায় কথাটা বলেননি কেন?
—মুখে ভালোবাসি বলাই কি সব?আমার কাজে,ব্যবহারে কি তুমি বুঝতে পারো না আমি তোমায় ভালোবাসি কিনা?
তীব্রর শান্ত গলার কথা শুনে রাই দমে গেলো।গাল ফুলিয়ে নিচু আওয়াজে বলে উঠল,
—বুঝবো না কেন?বুঝিতো।তারপরেও কি আপনার মুখে ঐ মধুর শব্দটা আমার বুঝি শুনতে ইচ্ছে হয় না।
তীব্র রাই এর বাচ্চা ফেস আর গাল ফোলানো দেখে মুচকি হেসে রাই এর নাক টেনে দিয়ে বলল,
—এই সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আমার মিসেস এর রাগ হয়েছে?
—মোটেও এটা কোন সামান্য কথা না।প্রিয় মানুষের মুখে এই একটা কথা শোনার অনুভূতি যে কি সে আপনি কি বুঝবেন?
—কখনো কি সেই কথাটা আমায় বলেছো?না বললে বুঝবো কিভাবে?
কথাটা বলেই তীব্র মিটমিট করে হাসতে লাগলো।তীব্রর হাসিমাথা মুখটা দেখে রাই এর ইচ্ছে তীব্রর মাথা ফাটাতে।সিরিয়াস বিষয় নিয়েও তীব্র মজা করতে হয়।রাই তীব্রর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে রাগ করে কিছু না বলে উঠে চলে যেতে নিলেই তীব্র রাই এর হাত ধরে টেনে পূনরায় তার পাশে বসিয়ে দিল।রাই এর হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে কোমল গলায় বলল,
—তুমি জানো মুখে আমি তেমন করে নিজের মনের কথা বলতে পারি না।নিজের মনের যত না বলা কথা,মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা সকল ফিলিংস আমি কাজে পরিনত করার চেষ্টা করি।কতটুকু করতে পারি তাও আমার অজানা।তার পরেও তোমার জন্য কিছুটা কথায় বক্ত করতে চাইছি।তুমি আমার জীবনে কি সেটা হয়তো তুমি হয়তো নিজেও জানো না।তুমি আমার আধার রাতের মাঝে এক ফালি আলোর ঝলক নিয়ে আমার আধার জীবনটা আলোকিত করে তোলা চাঁদ।ভালোবাসি চাঁদ ভীষণ ভালোবাসি।নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসি।আমি আমায় এই আধার জীবনে আলোর রশ্নি নিয়ে আশা চাঁদের হাত ধরে জীবনে সকল দুঃখ কষ্ট পাড়ি দিয়ে চাই।জীবনের শেষ মুহূর্ত পযর্ন্ত এই হাতে হাত রেখে চলতে চাই।রাতের আকাশে তারা দেখতে চাই। জোৎস্না বিলাস করতে চাই।কুয়াশার চাদড় গায়ে জড়িয়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপর পায়ে পা মিলিয়ে চলতে চাই।বৃষ্টি বিলাস করতে চাই। #মেঘের_ভেলায়_চড়ে মেঘের দেশে যেতে চাই।আমার সব ছোট ছোট ইচ্ছে তোমাতেই শুরু আর তোমাতেই শেষ করতে চাই।দিবে কি আমায় সঙ্গ চাঁদ?হবে কি আমার সকল আবদারের, সকল সখ পূরন করার সঙ্গী?
তীব্রর কথা শুনে রাই এর চোখ ছলছল করে উঠল।এই জল দুঃখের না সুখের।নিজের কাছের মানুষের কাছ থেকে এতো আবেগ মাখা কথা শুনে রাই এর চোখ জলে ভিজে উঠেছে।রাই চোখে জল ঠোটের কোনে হাসির রেখা নিয়ে বলে উঠল,
—ভালোবাসি।খুব বেশি ভালোবাসি আমি আমার মিঃ ভিলেনকে।তোমার সকল কাজের সঙ্গী হয়ে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আমি রাজি।
রাই এর মুখে ভালোবাসি শুনে তীব্রর মুখেও হাসির ঝিলিক ফুটে উঠল।তীব্র সাথে সাথে রাইকে জড়িয়ে ধরে নিজের বক্ষ পিঞ্জরে আটকে বিরবির করে বলল,
—ভালোবাসি চাঁদ।আমিও আমার এই চাঁদকে ভীষন ভালোবাসি।
রাইও তীব্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে তীব্রর বক্ষ পিঞ্জরে বন্দি হয়ে রইল।যাতে কেউ কখনো তাকে এই পিঞ্জর থেকে নিয়ে যেতে না পারে।কিছুক্ষন পর রাই এর ফুপানোর আওয়াজ তীব্রর কানে যেতেই তীব্র রাইকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে রাই এর চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,
—আবার কি হল?কাদছো কেন?
রাই নাক টেনে ফুপিয়ে বলল,
—ভয় হয় ভীষন ভয় হয়।যদি কখনো তোমায় হাড়িয়ে ফেলি।ফাহাদ নামের ঐ কালো ছায়া যদি কখনো আমাদের মাঝে চলে আসে তখন?
তীব্র রাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
—ফাহাদ নামের কালো ছায়া আর কখন আমাদের জীবনে আসবে না।ফাহাদ নামের কালো ছায়া যাতে না আসে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি।তার পরেও যদি আসে তাহলে তা দূর করার জন্য যা করতে হবে সবই করব।
রাই তীব্রর দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে বলল,
—মানে কি করেছো তুমি?ঐ সাইকোকেই বা তুমি পেলে কোথায়?
—আমি কোথাও পাইনি ঐ সাইকোই আমার কাছে এসেছিলো আমায় থ্রেড দিতে।তার ভাবসাব ভালো না দেখেই আমি আগে আমাদের গুড নিউজ তাকে শুনিয়ে দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছি।
রাই ভ্রু কুচকে বলল,
—কিসের গুড-নিউজ?
তীব্র বাকা হেসে রাইকে সব বলতে লাগলো।
ফ্লাসব্যাকঃ
ফোনে তীব্রকে হুমকি ধমকি দিয়ে কোন কাজ হয় না দেখে ফাহাদ সরাসরি তীব্রকে হুমকি দিতে তীব্রর কাছে গিয়েছিলো যাতে তীব্র রাইকে ছেড়ে দেয়।তীব্র ফাহাদ এর হাবভাব দেখেই বুঝে গেছে কাহিনীতে গন্ডগোল আছে।তাকে যে আজ ফাহাদ বিনা ডিটেরজেন্টে ধুয়ে দিতে এসেছে সেটা তার বুঝতে একটুও ভূল হল না।তাই তো ফাহাদ কিছু বলার আগেই তীব্র ফাহাদকে লম্বা করে একটা সালাম দিয়ে বলে উঠে,
—আরে ফাহাদ ভাইয়া যে!কেমন আছেন?
ফাহাদ তীব্রর কথার উওর না দিয়ে গর্জে বলে উঠল,
—লাষ্ট বারের মত তোমায় ওয়ার্নিং দিচ্ছি আমার রাই পাখি…..।
ফাহাদ কে আর কিছু বলতে না দিয়ে তীব্র ফোড়ন কেটে বলে উঠল,
—রাই এর কথায় মনে পরল।আপনাকে তো একটা গুড নিউজ দেওয়াই হয়নি।কংগ্রেচুলেশন ভাইয়া আপনি মামা হতে চলেছেন।
তীব্রর কথা শুনে ফাহাদ এর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল।ফাহাদ তীব্রর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই ফাহাদ মুচকি হেসে বলল,
—যা ভাবছেন তাই। কিছুদিনের মধ্যেই আপনার বোন রাই আপনাকে মামা বানাতে চলেছে।
তীব্রর কথাটা যেন ফাহাদ নিতে পারল না।তীব্রর কথা শুনেই পাথর হয়ে দাড়িয়ে রইল।তীব্র ফাহাদ এর অবস্থা বুঝতে পেরে মনেমনে মিটমিট করে হেসে সিরিয়াস হয়ে বলল,
—দেখুন ভাইয়া!রাই এখন আমার স্ত্রী।দুদিন পর আমার বাচ্চার মা হবে।আপনি রাইকে ভালোবাসলেও রাই আপনাকে কিন্তু বিন্দু পরিমানও ভালোবাসে নি আর না কখনো বাসবে।শুধু শুধু আপনি কেনই বা আমাদের মাঝে কাবাবে হাড্ডি হয়ে ঝামেলা করতে আসছেন?এই অবস্থায় হাসিখুশি থাকতে হয় তার মধ্যে আপনি যদি উল্টো আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাখেন তাহলে কেমন হবে?দিন দিন তো আপনার আতঙ্কে আরো ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে।
তীব্রর কথা শুনে ফাহাদ চোখের সামনে পুরোন কিছু স্মৃতি ভেসে উঠল।নিজের বাবার কাছ থেকে অবহেলা পেয়ে নিজের মা প্রেগনেন্ট অবস্থায় ড্রিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলো।শেষে মাকে বাচাতে পারলেও যাকে ঘিরে ফাহাদ কল্পনার রাজ্য সাজিয়েছিলো তার সেই ছোট ভাইকে আর বাচাতে পারেনি।ফাহাদ কিছুক্ষন থ’ মেরে দাড়িয়ে থেকে গম্ভীর গলায় বলল,
—ভেবোনা দূরে থাকবো বলে আমি আমার রাইপাখির খরব রাখবো না।যত দূরেই থাকি না কেন আমি আমার রাই পাখির খবর ঠিকই রাখবো।যদি আমার রাই পাখির কোন অযত্ন হয়,কোন প্রকার কষ্ট দেও তাহলে আমি ঠিকই আমার রাই পাখিকে আমার কাছে নিয়ে যাব।তখন শত চেষ্টা করেও তুমি আমার কাছ থেকে রাই পাখিকে ফিরিয়ে নিতে পারবে না।
তীব্র মুচকি হেসে বলল,
—চিন্তা করবেন না ভাইয়া যেখানেই যান না কেন গিয়ে নিশ্চিতে থাকতে পারেন।আপনার আর কষ্ট করে ফিরতে হবে না।আমি আমার স্ত্রীর এবং আমার বাচ্চার সুন্দর মত খেয়াল রাখবো।আর হ্যা খবর পেলে মামা হওয়ার খুশিতে মিষ্টি মুখ করে নিবেন।না মানে দূরে চলে যাবেন তো তাই তো মিষ্টি পাঠাতে পারবো না।তাই বললাম আরকি।যেমন হোক আপনি তো রাই এর বড় ভাই।
ফাহাদ তীব্রর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল,
—দূরে চলে যাব ভূলে না।রাই পাখিকে ভূলা আমার পক্ষে সম্ভব না আর না কখনো তার জায়গায় কাউকে দিব।
কথাটা বলেই ফাহাদ গটগট করে চলে গেলো।তীব্র ফাহাদ এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,
—আপনি আপনার রাই পাখিকে ভালো ঠিকই বেসেছিলেন কিন্তু আপনার ভালোবাসার প্রদ্ধতি ভূল ছিলো।তাই তো আজ আপনি আপনার ভালোবাসা দিয়ে আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে পারেননি।
বর্তমানঃ
তীব্রর মুখে সব শুনতেই রাই তীব্রর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল,
—সব না হয় ঠিক আছে পিছু ছাড়ানোর জন্য এই কথাই বলতে হল?অন্য কথা বলা যেত না?
—তাতে কি হয়েছে দুদিন পরের নিউজটা না হয় দুদিন আগেই দিয়ে দিয়েছি।আমার কিন্তু প্রথমে একটা চাঁদের টুকরা লাগবে মানে তোমার মত একটা মেয়ে লাগবে।তুমি কি বল? দিবে না আমায় একটা চাঁদের টুকরা উপহার আর তোমার ঐ সাইকো ভাইকে মামা ডাক শোনার অধিকার।
কথা শেষ করেই তীব্র রাই এর দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে চোখ মারল।রাই তীব্রর কথা শুনে মুখে কিছু না বলে কুশন দিয়ে মারতে লাগলো।রাই এর হাতে মার খেয়ে তীব্র উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো।
এভাবেই দুষ্টু মিষ্টি খুনশুটিতেষ একে অপরের ভালোবাসার চাদড়ে মুড়িয়ে থেকে তারা ভালো থাকুক সুখে শান্তিতে থাকুক।দোয়া করুন ফাহাদ নামের কোন কোন কালো ছাড়া যেন তাদের সুখের জীবনে না আসে।
~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~
(