মোনালিসা পর্ব ২৫

মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-২৪
মোনার ভার্সিটি বন্ধ। নিশান স্কুলে গেছে। ভরদুপুরে মোনা খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে বইয়ে মুখ গুঁজে আছে। খানিকক্ষণ পর বাইরের দিকে তাকায়। বাইরে আজ অত্যুজ্জ্বল রোদ। রোদের তীক্ষ্ণ’তা একটু বেশি। মোনা আবার বইয়ে মগ্ন হয়।
ডোর বেলের শব্দে মোনা মুখ কুঁচকে ফেলল। নিশান তো এত তাড়াতাড়ি ফিরে না। লিলি বেগম এসেছে?এসব ভাবতে ভাবতে মোনা দরজা খুলে। দরজার সামনে প্রিয়ম দাঁড়িয়ে আছে। মোনার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, অর্থবহ সে দৃষ্টি। অনেকদিন দেখে নি, মনে হচ্ছে সেই তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। মোনা আগের ন্যায় রুক্ষ ব্যবহার করল না। চমকানো গলায় বলল,
-“আপনি! কোত্থেকে আসলেন এত দিন পর?পায়ে ব্যথা কমেছে?”
প্রিয়ম তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো না। মোনার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে মগ্ন হয়ে আসছে, যেন ঋষি এক ধ্যানে তাপস্য করছে। প্রিয়ম মোনার দিকে দুই পা এগিয়ে গেলো। দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে মোনার চোখে চোখ রেখে অদ্ভুত এক স্বরে বলল,
-“চলে যাবো?”
মোনা না করতে পারল না। অদ্ভুত এক আচরণ করছে প্রিয়ম। এর বিপরীতে না বলা খুব কঠিন। কোন জোরজবরদস্তি করছে না। শান্ত গলায় কথা বলছে, যেখানে কিছু’টা রাগ, চাপা অভিমানও বিরাজ করছে।
প্রিয়ম রুমের ভিতরে ঢুকলো। বাসায় নিশানও নেই, প্রচন্ড অস্বস্তি মোনা’কে গ্রাস করছে যেন। প্রিয়মের সামনে একা মোনার অস্বস্তি লাগে, অস্থির , বিব্রত লাগে।
-“আমায় দেখতে গেলে না কেন?পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছিলাম।‌‌‌ ভেবেছি তুমি একবার হলেও দেখতে যাবে!এত অপ্রিয় আমি?”
উৎকট এক অভিমান প্রিয়মের গলায়। মোনা আঁতকে উঠলো, প্রিয়মের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ও? প্রিয়মের সাথে তাহলে কেন খারাপ আচরণ করতে পারছে না? ভিতর থেকে আড়ষ্ট’টা কেন কাজ করছে? মস্তিষ্ক যেন সায় দিচ্ছে না।
প্রিয়ম আবার বলল,
-“আমায় কেন দেখতে গেলে না?”
মোনা কি বলবে গুছিয়ে উঠতে পারল না। এলোমেলো কিছু শব্দ হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে বের করে বলল,
-“ভার্সিটি,জব সব মিলিয়ে ব্যস্ত ছিলাম খুব।”
মোনা আজ প্রিয়মের চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। প্রিয়মের চোখে যেন আজ সাগরের মত গভীরত্ব, অনুরাগ পূর্ণ। আবার কিছু অনুযোগও রয়েছে।
মোনার প্রিয়মের সামনে বসে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। মোনা এরূপ পরিস্থিতি এড়াতে বলল,
-“চা বা কফি খাবেন?”
প্রিয়ম মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে। বাসার ভিতর বিজনমূর্তি বিরাজ করছে । মোনার দৃষ্টি ফ্লোরে আবদ্ধ। আর প্রিয়ম এক আহ্বায়ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যে দৃষ্টি মোনা’কে ভালোবাসার আহ্বান জানাচ্ছে।
-“প্রিয়ম ভাই, নিশানের কে এগিয়ে আনতে যেতে হবে। ওঁর স্কুল ছুটি হবে এখন।”
প্রিয়ম হাসলো। প্রিয়মের এই অহেতুক হাসির কারণ খুঁজে পেলো না মোনা। প্রিয়ম বলল,
-“মিথ্যা কেন বলছো? আমার সামনে থাকতেও তোমার সমস্যা হয়?এত সমস্যা আমায় নিয়ে?”
মিথ্যা বলে ধরা খেলে মুখের অবস্থা যেমন সঙ্গিন হয় মোনাও তাই হলো। মোনা সমস্ত আড়ষ্ট’টা কাটিয়ে গাঢ় স্বরে বলল,
-“আপনার সামনে থাকতে আমার অস্বস্তি লাগে।”
প্রিয়ম যেন মনোক্ষুণ্ন হলো। আগে প্রিয়ম সব কিছু’তে জোর করত, মোনা যা বলত কর্ণপাত করত না। কিন্তু আজকাল কেমন বোকা বোকা হয়ে গেছে, মোনা যা বলে তাই বিনা বাক্যে মেনে নেয়। তাই মোনা আগের মত কঠোর গলায় কিছু বলতে পারে না।
-“আচ্ছা তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।”
প্রিয়ম উঠে পা বাড়ালো। মোনা কিছুই বলল না। কয়েক পা সামনে এগিয়ে আবার পিছনে ফিরে তাকালো প্রিয়ম। হঠাৎ ছুটে গিয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরলো মোনা’কে। মোনা হতভম্ব হয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। প্রতিবাদ করতে ভুলে গেল যেন। হতভম্বের রেশ কাটতেই জোর গলায় বলল,
-“ছাড়ুন!আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”
প্রিয়ম মোনার কোন কথাই শুনছে না। মোনা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। তীব্র এক মোহনীয় ঘ্রান আসছে প্রিয়মের শরীর থেকে। প্রিয়মের নিঃশ্বাস মোনার শরীরে বিঁধছে, মোনার সমস্ত শিরায় উপশিরায় অস্বস্তি’তে তোলপাড় শুরু করে দিলো। মোনার শরীর যেন অবশ হয়ে যায়। কি হবে কি না হবে , এসব না ভেবে মোনা মোনা চুপচাপ প্রতিবাদ হীন ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। মোনার মস্তিষ্কে থেকে এমন’টা-ই সায় দিলো।‌‌‌‌এর ঊর্ধ্বে গিয়ে কিছুই করতে পারল না মোনা। মোনা জানে না কতক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। মোনার সময়জ্ঞান ছিলো না, চিন্তাশক্তি যেন লোপ পেয়ে গেছে পুরোপুরি। কিছুই ভাবতে পারছিলো না। মোনার মনে হয়েছে অন্য কেউ ও’কে নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে মোনা যেতে পারলো না।
প্রিয়মের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হয়ে মোনা নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করল। প্রিয়মের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখল সীমাহীন ভালোবাসার জোয়ার মোনা’কে তার আপন সুরে ডাকছে। মোনার দৃষ্টি হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেলো । রোষারক্ত নয়নে তাকিয়ে রাগে চিৎকার দিয়ে বলল,
-“বেরিয়ে যান এখান থেকে।”
প্রিয়ম বের হয়ে গেল। কোন কথা বাড়ালো না। মোনা শব্দ করে দরজা আটকে ওয়াশরুমে চলে গেলো। বেসিনের সম্মুখে অবস্থিত আয়নায় নিজেকে নিরীক্ষণ করতে লাগল। বড্ড অচেনা লাগছে। কেন প্রতিবাদ করল না? কেন প্রিয়মের সাথে খারাপ আচরণ করতে পারলো না? নিজের উপর ক্ষোভে ফেটে পড়ল, তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করছে। মোনা চোখে-মুখে পানি দিলো। নিজেকে উদ্ভ্রান্তের মতো মনে হচ্ছে। মোনা নিঃসাড় দৃষ্টিতে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে রইল।
মোনার চোখ দিয়ে আষাঢ়ের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। মোনা বুঝতে পারছে না ও কেন কাঁদছে। শুধু মনে হচ্ছে নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পুরুষ মানুষ’কে কেন বিশ্বাস করবে? তাও প্রিয়মের মত মানুষ’কে!
মোনার রাগ হয় শ্রুতির উপর। শ্রুতি মোনার ব্রেন ওয়াশ করেছে। তাই প্রিয়ম’কে নিয়ে পজেটিভ চিন্তা এসেছিল। আর সেই চিন্তা থেকেই মোনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। শ্রুতি তো ভালোবাসায় মত্ত। ও তো কখনো কাছের মানুষ’দের হিংস্র রূপ দেখে নি। শ্রুতি তো সমীরের কাছ থেকে অগাধ ভালোবাসা পেয়ে যাচ্ছে, তাই ভালোবাসার উপর এত শ্রদ্ধা। ভালোবাসা এত সহজ শ্রুতির কাছে।
মোনা কাঁদল কেন জানি। কান্নার নির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পেলো না। জীবনে পাওয়া সব আঘাত গুলো যেন উথলে উঠছে।মোনার চোখ দুটো ফুলে উঠেছে। কান্নার ফলে লালচে এক আভা দেখা যাচ্ছে। মোনা রুমে গিয়ে খাটের উপর বসল। অতিরিক্ত চিন্তায় মাথা’টা ঝিমঝিম করছে। আস্তে আস্তে মাথা ব্যথা শুরু হয়। মোনার মাথার দুই পাশের রগ গুলো সব দপদপ করছে। ছিঁড়ে যাবে যেন। মগজ গলে যাবে যেন ব্যথায়।
নিশান বাসায় এসে মোনার পাশে বসে। মোনার একটু অসুস্থতায় নিশান অসহায় হয়ে পড়ে যেন। নিশানের মুখ চুপসে গেল। কেঁদে ফেলব যেন। ব্যস্ত হয়ে পড়ল নিশান। দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মুখে ইশারায় জিজ্ঞেস করল,
-“কি হয়েছে আপা?এমন দেখাচ্ছে কেন?”
মোনা মুখে কিছু বলল না। কথা বললেই যেন ব্যথা আরো তীব্র হবে। নিশান মোনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, চুল গুলো টেনে দিচ্ছে। নিশানের চোখ দিয়ে যেন পানি গড়িয়ে পড়বে এক্ষুনি। মোনা নিশান’কে শাসিয়ে বলল,
-“আমার মাথা ব্যথা করছে। এতে কাঁদার কি হলো? মরবো না আমি।”
নিশান কান্না গিলে ফেলল । ছোট দুইটা হাতে মোনার মাথা টিপে দিচ্ছে পরম আদরে। মোনার আরাম বোধ হচ্ছে, মাথা ব্যথা কিছুটা কমছে। মোনা ঘুমিয়ে গেলো।
—-
ঘুম থেকে উঠার পর মাথা’টা ভারী লাগল ,ব্যথা নেই। মোনার মনে পড়ল ভরপুরের কথা। কিভাবে পারল মোনা প্রতিবাদ না করে ওভাবে প্রিয়মের আলিঙ্গন আবদ্ধ হয়ে থাকতে? নিজেকে নিজের ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। মোনার মনে হচ্ছে মাঝেমধ্যে কিছু জিনিস আপনাআপনি ব্যক্তির ইচ্ছা উপেক্ষা করেই হয়ে যায়। মোনা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলল।
মোনার ফোনে রিং হচ্ছে। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ম ফোন করেছে। মোনা ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে দিলো। খানিক বাদে ম্যাসেজ আসলো-
“মোনা, তোমার চোখ গুলো আজ ভিন্ন কথা বলেছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছো না। তোমার অবচেতন মন আমায় ভালোবেসে ফেলেছে।”
মোনার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো।প্রিয়ম যা বলছে তা কি সত্যি? মোনা নিজেকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছে না।নিজের মন বুঝতে পারছে না। মোনার মনে হচ্ছে ও পাগল হয়ে যাবে।
রাতে ভালো ঘুম হয়নি। নানান চিন্তা-ভাবনা মাথা অবশ করে রেখেছে। মোনার চোখ গুলো ছোট হয়ে গেছে ফুলে, লালচে দেখাচ্ছে। ভার্সিটি’তে যাওয়ার পর শ্রুতি হঠাৎ প্রিয়মের প্রসঙ্গ তুললে। মোনার মুখ ইস্পাতের মত কঠিন হয়ে গেলো। চেহেরা যেন ভয়ংকর কালবৈশাখীর রূপ ধারণ করেছে। চোয়াল শক্ত করে বলল,
-“শ্রুতি এর পর থেকে তুমি কখনো আমার কাছে প্রিয়মের কথা বলবে না। এ প্রসঙ্গে কখনো আমার সাথে কথা বলবে না।”
হঠাৎ মোনার এমন আচরণে চমকালো শ্রুতি,মনোক্ষুণ্ন হলো। শ্রুতি পুরো ক্লাসে তেমন কথা বলল না। মোনা বুঝেও শ্রুতি’কে স্যরি বলল না।
—–
মোনা অফিসে যায়। শরীর খারাপ লাগছে আজ। চোখ গুলোও জ্বলছে বড্ড। চোখের বিশ্রাম প্রয়োজন। মোনা অফিসে যাওয়ার সাথে সাথেই লরি আসে।
-“মোনা আজ আমার বার্থডে। তোমাদের রেস্তোরাঁয় খাওয়াবো। আমার গার্লফ্রেন্ডও আসবে,ও’কে তোমার কথা বলেছি। ও তোমায় দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।”
মোনার লরির দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
-“বার্থ ডে আগে তো বলেন নি।আর আমার শরীর’টাও ভালো না।”
লরি মোনা কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-“প্লীজ মনা ডোন্ট শো এ্যানি এক্সুয়েজ।”
মোনা আর কিছু বলতে পারল না। লরি প্রথম থেকেই মোনা কে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। তাছাড়া লরি খুব আন্তরিক এবং বন্ধুসুলভ। কিন্তু মোনা চিন্তায় পড়ে গেল! নিশান তো বাসায় একা। শরীর ,মন কিছুই সায় দিচ্ছে না। উপহারও তো নিতে হবে। এ মুহূর্তে মোনার কাছে ভালো উপহার দেওয়ার ডলার নেই। লরি বলেছিলে ও বই পড়তে পছন্দ করে। মোনা ঠিক করল বই উপহার দিবে।
মোনা অফিস শেষে বই কিনলো। এলিন ও গেলো। মোনার উপস্থিতি’তে এলিন যেন বিরক্ত বোধ করছে।
লরির গার্লফ্রেন্ড আসলো এর ভিতর। লরি পরিচয় করিয়ে দিলো। চঞ্চল, প্রাণবন্ত ,উচ্ছ্বাসিত মেয়ে’টা। মুখের কোণে হাসি লেগে আছে। হোয়াইট স্লীভলেস শর্ট কুর্তি টাইপ কিছু পড়েছে, আর হাঁটুর অবধি স্কার্ট‌। মোনাও হাত বাড়িয়ে হায় জানালো। লরির গার্লফ্রেন্ড মোনা’কে বলল,
-“তোমার কথা লরি বলেছে অনেক বার। প্রশংসা করেছে তোমার।”
নিজের প্রশংসার কথা শুনে মোনা একটু লাজুক হলো। মেন্যু কার্ড দেখে অর্ডার দিতে বলা হলো। মোনা খুব বেশি কিছু অর্ডার করল না। লরির গার্লফ্রেন্ড ওঁদের সামনেই লরি’কে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে। দুইজনে কোন সংকোচহীন ভাবে আলিঙ্গন করে যাচ্ছে। মোনা অন্যদিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করলো। বিরক্ত লাগছে মোনার। তিনজনে যা অর্ডার করেছে, এলিন একাই তার দ্বিগুণ খাবার অর্ডার করল। লরির গার্লফ্রেন্ড একটু সরু চোখে তাকালো এলিনের দিকে। মোনার খাবার প্রায় অর্ধেক শেষ। এর ভিতর রেস্তোরাঁয় হন্তদন্ত হয়ে ঢুকল প্রিয়ম।‌ প্রিয়ম মোনার দিকেই আসছে। মোনা অপ্রস্তুত ভাবে তাকালো। মোনার কাছে এসেই মোনার হাত ধরল। জোর গলায় বলল,
-“এদিকে আসো।”
মোনা রোষারক্ত নয়নে তাকালো। প্রিয়মের এত অধিকার খাটানো, কর্তৃত্ব বোধ ফলানো এসবে মোনা প্রচন্ড তেতো হলো। মোনা এখানে কোন ঝামেলা করল না। প্রিয়মের পিছু পিছু গেলো। লরি উদগ্রীব হয়ে বলল,
-“মনা কি হয়েছে?কোথায় যাচ্ছো?”
মোনা সে সব কথা ভ্রুক্ষেপ করল না। মোনার শরীর রাগে কাঁপছে। কিছুদূর গিয়ে দাঁড়ালো। প্রিয়ম রাগান্বিত গলায় বলল,
-“ছেলে’টা কে? রাতের বেলায় রেস্তোরাঁয়! বাহ্ মোনা।”
প্রিয়মের কথায় মোনার মুখের অভিব্যক্তি আবছা অন্ধকারে স্পষ্ট বুঝা গেলো না। তবে মোনার গলার স্বর শুনে বুঝা গেলো প্রচন্ড ক্ষুব্ধ মোনা।
-“সমস্যা কি আপনার?কিসের এত অধিকার দেখান আপনি? কর্তৃত্ব বোধ ফলাতে এসেছেন? আমি যার সাথে ইচ্ছে রেস্তোরাঁয় আসবো, যা ইচ্ছে তাই করবো। এর জবাবদিহিতা আপনার কাছে করতে হবে?”
রাগে মোনার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে যেন। প্রিয়ম মোনার হাত হিংস্র ভাবে চেপে ধরল। বলল,
-“তোকে ভালোবাসি এটা’কে তুই আমার দুর্বলতা ভেবেছিস?তোর মত মোনা মেরে রাস্তায় ফেলে রাখবো। চিনিস তুই আমায়? আমি তোর সব অবজ্ঞা সহ্য করি, তাই বলে এসবও সহ্য করব?”
মোনার চোখ জোড়া আবছা অন্ধকারের মধ্যেও যেন রাগের ফুলকি ছড়াচ্ছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসছে রাগে। কি যেন হয়ে গেলো মোনার মাঝে, ক্রোধে থরথর করে কাঁপছে।
-” ডোন্ট জাজ এ্যা বুক বাই ইট’স কভার।”
মোনার এই কথার অর্থ বুঝলো না প্রিয়ম। জিজ্ঞেসও করল না।প্রিয়মের রাগ যেন মুহূর্তে মিইয়ে গেল। প্রিয়মের গলার স্বরে পরিবর্তন আসলো।‌ একটু আগে করা রাগের জন্য যেন অনুতপ্ত সে।
-“মোনা স্যরি,স্যরি মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তুই-তুকারি করে ফেলছি। রাগ হয়েছিল।”
মোনা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
-“ইট’স ওকে।”
প্রিয়ম বলল,
-“মোনা আমি অনুতপ্ত। আমি খারাপ আচরণ করে ফেলেছি।” প্রিয়ম একটু থেমে আবার বলল,
-“চলো পৌঁছে দিই তোমায়।”
মোনা গাড়িতে উঠলো। গম্ভীর হয়ে বসে রইলো। অন্য সময় হলে হয়তো উঠত না। মোনার আচরণে অবাক হলো প্রিয়ম।
পুরো রাস্তায় কোন কথাই বলল না। প্রিয়ম অনাবরত স্যরি বলে গেলো।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here