মোনালিসা পর্ব ৫৫এবং শেষ

মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৫৫ (শেষ পর্ব)
_____________________
মোনা তাকায় প্রিয়মের দ্বিখণ্ডিত লাশ’টার দিকে।কি অদ্ভুত! মোনার একটুও ভয় করছে না। অন্ধকারে অস্পষ্ট ভাবে বুঝা গেল প্রিয়মের মুখ’টা হাঁ হয়ে আছে। বেইমান’দের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।যে মানুষ গুলো অন্যের মন-হৃদয়,স্বপ্ন-আবেগ ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত করে দেয় তাঁদের জন্য কষ্ট পেতে নেই। মোনার হাতের ছুরি’টা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়ছে। ছুরি জুড়ে রক্তের বৃষ্টি। শেরোয়ানি পরা নিথর রক্তাক্ত লাশ প্রিয়মের।এ তো সামান্য মৃত্যু, ছুরির কয়েক’টা আঘাতে প্রাণ চলে গেছে। চলে গেছে যন্ত্রনা। আর মোনা তো প্রতি মুহূর্তে খুন হয়েছে,যন্ত্রনা নামক ছুরির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। কোথায়ও যেন কোন প্রমান না থাকে,কোন ফিঙ্গার প্রিন্ট যেন না থাকে। বাঁচবে মোনা পৃথিবীর বুকে। মোনারা কেন আত্মহত্যা করে মরবে? মরবে তো মোনাদের যারা ঠকায় তাঁরা।ছুরি’টা খুব সতর্কতার সাথে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলে।কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বাসার দিকে হাঁটছে মোনা। প্রচণ্ড বাতাস মোনার চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে। চোখ গুলো অন্ধকারে যেন‌ ঝকঝক করছে। মোনার ঠোঁটের কোণে দুর্ভেদ্য হাসি। মোনার আকাশ-বাসাত কাঁপিয়ে হাসতে ইচ্ছে হচ্ছে। পৃথিবীর সকল মোনাদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, “প্রতারনায় স্বীকার হয়ে আত্মহত্যা কেন? বেঁচে থাকার প্রতি এতই যখন বিতৃষ্ণা তখন প্রতারক’কে খুন করে মরো।” মোনা হাঁটতে থাকে,হাজার বছর ধরে প্রতারিত হওয়া মোনদের হয়ে প্রতিশোধ নিয়ে অহংকারের পথচলা মোনার।
বিয়ে বাড়ির শোরগোলের মাঝে মিশে যায় মোনা। কেউ জানে কি হয়েছে একটু আগে।করুক সবাই আনন্দ। কিছুক্ষণ পর এ আনন্দ আহাজারি হয়ে আকাশ-বাতাস কাঁপাবে। মোনা সে মুহূর্তের অপেক্ষায়। কখন দেখবে সবাই প্রিয়মের লাশ? মোনা অপেক্ষার প্রহর গুনছে। চোখ বুঁজে বসে আছে। চারদিকে হৈচৈ।
প্রিয়ম বেঁচে নেই। নীল চোখওয়ালা টুইন বেবি হবে! ছোট একটা সংসার হবে। প্রিয়ম বলেছিল সেই সংসার নাকি সুখের চাদরে আবদ্ধ থাকবে। মোনার হাসি পাচ্ছে,মাথার ঘুরাচ্ছে। মোনা নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছে, “আমি কি পাগল হয়ে গেছি?আমার সেই সুখের সংসারের স্বপ্ন দেখানো মানুষ’টাকে খুন করে ফেলেছি?হায় আমি কি নিষ্ঠুর! কষ্ট হচ্ছে না কেন আমার?” মোনার মনে হচ্ছে ও ঢলে পড়ে যাবে। মোনা সোফায় শক্ত হয়ে বসে।
– “এই মোনা তোর শরীর আবার খারাপ লাগছে? এখনো সুস্থ হোস নি? হাসপাতালে গিয়েছিলি তুই?আমার রুমে গিয়ে শুয়ে থাক।”
মোনা কাঁপা কাঁপা ভাবে চোখ মেলে তাকায় লিলি বেগমের দিকে। মোনার হাত-পা ঈষৎ কাঁপছে। লিলি বেগমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কত সুন্দর করে সেজেছে লিলি বেগম, সবুজ রঙের একটা শাড়ি পরেছে। মোনার মনে হচ্ছে ওঁর মা দাঁড়িয়ে আছে ওঁর সামনে। মোনা মন্থর গলায় টেনে টেনে বলে,
– “খালা আজ তোমায় একদম আমার মায়ের মত লাগছে।”
লিলি বেগম মিষ্টি হাসে।ব্যস্ত গলায় বলে,
– “তোকে ওইদিনও বলে আসলাম তুই হসপিটালে যা। গেলি না তুই। একটু পরই বিয়ের কাজ শুরু হয়ে যাবে।যা তো মোনা কথা শোন। রুমে গিয়ে শুয়ে থাক।”
মোনা ক্ষীণ স্বরে বলে,
– “মানুষের ভিতর থাকলে মাথা ব্যথা হয় আমার। অসুস্থ হয়ে যাই।”
এর ভিতর লিলি বেগম’কে কে যেন জরুরি তলব করল।ছেলের বিয়ে মায়ের তো ব্যস্ততার শেষ নেই। লিলি বেগম দ্রুত পায়ে সেদিকে যায়। মোনা চোখ খুলে তাকায় এবার। মোনার একটু তফাতেই দাঁড়িয়ে আছে হাবিব সাহেব।হাবিব সাহেবের হাত দুটো ছুরি দিয়ে কেটে দিতে পারলেই মোনার সব অশান্তি চুকে যেত। জীবনের সব যন্ত্রনা মুছে যেত।মোনা অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকে হাবিব সাহেবের দিকে।এর ভিতর বাসা জুড়ে সবাই বলছে, “প্রিয়ম কোথায়?প্রিয়ম কোথায়?” এই দুই’টা শব্দ বাসা জুড়ে।বিভার চেহেরায় উৎকণ্ঠা। আচমকা’ই পুরো বাড়ি নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়। সবাই সবার চোখের দিকে তাকাচ্ছে। অস্ফুট স্বরে বলে, “পুলিশ এসেছে।” মোনা বিস্ফোরিত চোখে সেদিকে তাকায়। ধরা পড়ে গেল? নিশানের কি হবে? মোনার পৃথিবী থমকে গেল। তাঁরা কি বুঝবে মোনা নির্দোষ? কয়েক মুহূর্ত পর শোনা গেল, “এলিটা হত্যার দায়ে ইফতিয়াদ প্রিয়ম’কে গ্রেফতারের নির্দেশ।” প্রিয়ম খুন করেছে? পুলিশ মোনা’কে ধরতে আসেনি। মোনা মূর্তির ন্যায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকে। নিষ্পলক চাহনি। মোনার অবাক হওয়ার পালা শেষ’ই হচ্ছে না। খানিকের ব্যবধানে সব আনন্দ শেষ হয়ে গেল। মরা মানুষ’কে গ্রেফতার কিভাবে করবে? মোনার মুখ হাঁ হয়ে থাকে। পুলিশ প্রিয়মের লাশ উদ্ধার করে। দ্বিখণ্ডিত লাশ’টা! চারদিকে শুধু আহাজারি। এলিটা প্রিয়মের কলিগ ছিলো। ওঁদের মাঝে নাকি প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। পরবর্তীতে কোন এক কারণে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।সেই দ্বন্দ্ব থেকে খুন। মোনা বিস্ময়ের ডুবে আছে। প্রিয়ম হত্যার ব্যাপার’টা অন্যদিকে মোড় নিলো। প্রিয়মের মৃত লাশ’টার উপরও ঘৃণা হচ্ছে। মোনার চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কি হবে এখন? ঘটনা জটিল হয়ে গেল। সন্দেহ গেল এলিটার ফ্যামিলির দিকে। মোনার প্রতি ঘুনাক্ষরেও কারো সন্দেহ হচ্ছে না।
_________________________________________________________
অশান্তি, তীব্র দহন, যন্ত্রনায় দগ্ধ মোনা শেষ হয়ে যাচ্ছে। শান্তি নেই কোন কিছুতে শান্তি নেই। কয়দিনের ব্যবধানে সব এলোমেলো হয়ে গেল? দশ দিন? মোনা নিজের হাতের দিকে তাকায়। খুন করে ফেলেছে এই হাত দিয়ে প্রিয়ম’কে? মোনা খুন না করলেও তো এলিটা হত্যার দায়ে গ্রেফতার হতো প্রিয়ম। কি এক নিকৃষ্ট মানুষ’কে ভালোবেসেছে! কি করবে মোনা? শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই ‌। নিজের চুল গুলো পাগলের মত টানতে থাকে। মোনা ছুটে যায় ওঁর বুক সেল্ফের দিকে। ওঁর ডায়েরি’টা কোথায়? যেখানে ও নিত্য ভালোবাসার গল্প লিখতো। যে গল্পের নায়ক ছিলো এক বেইমান! মোনা পাগলের মত ছুটে গিয়ে ডায়েরি’টা হাতে নেয়। ডায়েরি’টা শেষ করতে হবে। বাকি লেখা গুলো লিখতে হবে। মোনা ডায়েরি হাতে বসে। কাঁপা কাঁপা হাতে কলম’টা ধরে।লেখা শুরু করে,
“আমি মান্নাত চৌধুরী। লিপি বেগম আর ইমরুল চৌধুরী নামক দাম্পতির সন্তান নামক প্রথম অনুভূতি ছিলাম আমি।মায়ের কাছে শুনেছি আমার জন্মের আনন্দে আমার বাবা অঝোরো কেঁদেছিলো। হসপিটালের ডাক্তার-নার্স সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। মায়ের কাছ থেকে শোনা এসব আমার কাছে রূপকথা মনে হতো। শুধু মনে হত আমার বাবা আমায় এত ভালোবাসত? কই আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে তো বাবা নামক মানুষ’টার ভালোবাসা পাইনি।
জন্মের পর আমার রাখা হয় মান্নাত। আমি যখন হাসতে শিখি তখন আমার মা নাকি আমার হাসি দেখে অবাক হয়ে যেত।এত সুন্দর হাসি তাঁর মেয়ের! মা বাবা’কে বলে আমার নাম পাল্টে রাখবে মোনালিসা। বাবা নারাজ নাম বদলাতে। কিন্তু শেষে মায়ের সিদ্ধান্ত’ই টিকলো।আমার নাম রাখা হয় মোনালিসা। কেউ আমায় মান্নাত ডাকলেই মায়ের সাথে তাঁর তুমুল লেগে যেত। মা কতবার যে আমায় এই নাম বদলানোর কথা শুনিয়েছে আর হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়েছে।
আমার বাবা-মায়ের প্রেম করে বিয়ে হয়।কারো পরিবার’ই মেনে নেয় নি। প্রেমের কারণে দুইজন’ই ফ্যামিলিচ্যুত হয়। আত্মীয়-স্বজন বলতে কেউই ছিলো না আমার। শুধু লিলি খালার সাথে মায়ের ফোনে কথা হতো মাঝে মাঝে। আমার জন্মের চার-পাঁচ বছর পর বাবা ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে।মায়ের উপর শুরু হয় অমানবিক অত্যাচার।বুঝ হওয়ার পর আমার মনে পড়ে না যে বাবা আমার কিংবা নিশানের সাথে ভালো ভাবে কথা বলেছে। একা বাসায় ভীষণ এক বিষণ্ণতার মাঝে বেড়ে উঠতে লাগলাম। মায়ের প্রতি বাবার অত্যাচার আমার সেই বাচ্চা মন’কে ভীষণ ভাবে পীড়া দিতো। সেদিন গুলো চোখের সামনে পর্দার মত ভাসছে আমার।আহা কি যন্ত্রনা! বাবা যখন মা’কে মারত আমি ভয়ে ঝড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমার হাত-পা কাঁপত। চোখ দিয়ে নিঃশব্দে পানি পড়ত।
আমি যখন ক্লাস থ্রী’তে পড়ি তখন আমাকে বাসায় এসে এক টিচার পড়াতো। তাঁর সামনে বসে বাবা মুখে বিশ্রী ভাষা করে গালি দিতো।টিচারের সামনে বসে আম্মুর গায়ে হাত তুলল। আমি স‌্যার’কে একদিন চুপিচুপি বললাম, “স্যার কাল থেকে আর পড়াতে আসতে হবে না। আপনার সামনে আব্বু এমন খারাপ আচরণ করলে আম্মু অপমান বোধ করে, আমার অস্বস্তি হয়।” আমার কথা শুনে স্যার হাঁ করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে অবাক হয়ে। স্যারের সেদিন অবাক হওয়ার কারণ আমি বুঝতে পারিনি,এখন বুঝি। স্যার ক্লাস থ্রী’তে পড়া বাচ্চার মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়েছিল। স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল। তারপর আর কখনো হোম টিউটরের কাছে আমি পড়িনি। আম্মু শত জোর করেও আমায় পড়াতে পারেনি।
সবাই বলত আমি বয়সের তুলনায় নাকি বেশি পরিপক্ক ছিলাম। যে বয়স’টা বাচ্চা’রা পুতুল খেলে কাটায়। সে বয়সে আমি চুপচাপ বারান্দায় বসে থাকতাম। না ছিলো আমার খেলার সাথি,না ছিলো আমার কথা বলার মানুষ। স্কুলেও কারো সাথে মিশতে পারতাম না।
তারপর আমার ভাইয়ের জন্ম হয়।আহা আনন্দ! এই তো আমি কথা বলার সাথী পেয়ে গেছি। আমি পুতুল খেলতে পারবো এবার। কিন্তু না, আমার ভাই কথা বলতে পারেনা। আমার বোবা ভাই’কে নিয়ে আমার বাবার আক্ষেপের শেষ ছিলো না। মানুষের কাছে হেয় হয়ে গেছে। কখনো নিশান’কে কোলে নেয় নি বাবা নামক মানুষ’টা। নিশান কখনো বাবার কোলের ওম পায়নি।আমার স্পষ্ট মনে আছে আমাদের পাশের বাসায় নিশানের বয়সী একটা বাচ্চা ছিলো। সেই বাচ্চার একটা গাড়ি ছিলো। নিশান ওরকম গাড়ির জন্য কি কান্না! আম্মুর কাছে টাকা নেই। আর আব্বু তো নিশানের মুখের দিকেই তাকায় না গাড়ি এনে দেওয়া তো দূরের কথা।আমি উপবৃত্তির টাকা পেয়েছিলাম।টাকা পেয়েই মনে পড়ল গাড়ির জন্য নিশানের কান্নার কথা। আমি গাড়ি কিনে নিয়ে আসি। নিশানের সে কি খুশি! আর আম্মু কেন যেন কাঁদছিলো।
আমার ভাগ্য বরাবরই খারাপ।যে মেয়ে’টা আমার খাতা দেখে পরীক্ষায় লিখত সে মেয়ে’টাও আমার থেকে বেশি নম্বর পেত‌। এসএসসি’তে পাঁচ মার্কসের জন্য এ+ মিস হয়ে যায়, এইচএসসি’তে একই অবস্থা।আমি ততদিনে বুঝে গিয়েছিলাম আমার ভাগ্য খারাপ।এসএসসি এক্সামের পর আমার কলেজের ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে যায়।‌ আব্বু টাকা দিতে পারবে না। দিবে বা কোত্থেকে টাকা? ব্যাংকে লোন জমে লাক্ষ লাক্ষ টাকা। আর ব্যবসার টাকা সব মদ খেয়ে,জুয়া খেয়ে উড়ায়। আম্মু এক প্রকার যুদ্ধ করে ভর্তি করায় আমায় কলেজে। কলেজ বাসা থেকে দূরে। হোস্টেলে থাকতে হবে। সরকারী কলেজের হোস্টেল হওয়াতে খরচ কম। কিন্তু খাবার-দাবারের যা অবস্থা! হোস্টেল ফি, প্রাইভেটের ফি সব মিলিয়ে টানটান অবস্থা। মাসে এক টাকাও দিতো না হাত খরচের জন্য। ডিম আমি একদম পছন্দ করতাম না। সেই ডিম’ই বেশি খেতে হতো। মাঝে মাঝে কয়েক বেলা না খেয়ে থাকতাম। ক্যান্টিনের দিকে কখনো ফিরেও তাকাই নি। কারণ আমার কাছে টাকা নেই। হোস্টেলের ততদিনে আমি কিপ্টা নামে পরিচিত হয়ে গেলাম। বিশেষ করে রুমমেটদের কাছে। ওঁরা বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে এনে খেতো। আমায় সাধলেও আমি খেতাম না আবার মাঝে মাঝে সাধতো না। আমার এই দিন গুলোর সাক্ষী হোস্টেলে যে বালিশ’টাতে ঘুমাতাম সে বালিশ’টা। এর ভিতর দুই মাস ধরে বাসা থেকে কোন টাকা দিচ্ছে না। আমার খুব কাছের ফ্রেন্ড পিয়ুর কাছ থেকে ধার নিলাম প্রথম মাসে। পরের মাসে হোস্টেলের ম্যাম সবার ভিতর বসে অপমান করে। আমি বাসায় চলে যাই। মায়ের সাথে যোগাযোগ করার উপায় ছিলো না, মায়ের ফোন আব্বু ভেঙে ফেলেছে লিলি খালার সাথে কথা বলেছে বলে। সে দিন বাসায় যাওয়ার পর আম্মু আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয় গহনা বিক্রি করে আমার পড়ার জন্য। সে রাতেই আমার চোখের সামনে ইমরুল চৌধুরী মেরে ফেলে আমার মা’কে। যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে আমার সামনে চোখ উল্টে মারা যায় মা। সে কষ্ট,সে যন্ত্রনা,সে অসহায়ত্ব আমি কাউকে বুঝাতে পারব না। কাউকে বলতে পারিনি এ কথা। আমাদের দুই ভাই-বোন’কে বলা হয়েছে এই কথা কাউকে বললে আমাদেরও খুন করে ফেলবে। আমি অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়ি। কেমন যেন রোবট হয়ে যাই। সারাক্ষণ শুধু মায়ের কাতরানো মুখ’টা চোখের সামনে ভাসত। জীবনে তো নিজ গতিতেই চলবে। থেমে থাকবে না কারো মৃত্যু’তে। আমার এইচএসসি এক্সাম শুরু হয়ে যায়। আমার মন নেই লেখাপড়ায়, আমার লেখাপড়ায় অনুপ্রেরণা জুগানো আমার মা মানুষ’টা তো নেই। নিশান থাকতো বাসায় ওই জঘন্য মানুষ’টার সাথে। ও’কে তো আর আমার সাথে হোস্টেলে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। দারোয়ান চাচার ফোন দিয়ে যে কথা বলব তাও সম্ভব নয়, নিশান তো বোবা কথা বলতে পারেনা। আমি সারাক্ষন ছটফট করতে থাকি, নিশানের চিন্তায় দম বন্ধ হয়ে আসে। পরীক্ষার বন্ধের মাঝে আমি বাসায় যাই। দারোয়ান চাচা গোপনে আমার কাছে বলে বাসার সব কাজ নাকি নিশান’কে দিয়ে করায়। বাজার করা থেকে শুরু করে। নিশানের পুরো গায়ে মাইরের দাগ। আমায় দেখে কি কান্না! আমার সাথে চলে আসবে। কিন্তু আমি ও’কে হোস্টেলে কিভাবে নিয়ে যাবো? পরের দিন আমার পরীক্ষা। নিশান’কে ওই নরকে রেখেই আমার চলে যেতে হয় হোস্টেলে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আই ইএলটি এস কোর্স। নিশান তখনো বাসায়। আমার অসহায়ত্বের সীমা নেই! আজন্ম কোন পাপ ছিলো আমার।
এর ভিতর আমার এক ফ্রেন্ড বলে আমার বাবা’কে নাকি পতিতালয়ে যায় মানুষ বলাবলি করে। দারোয়ান চাচা বলল বাসায় রাত-বিরাতে মেয়ে মানুষ নিয়ে আসা। এত লজ্জা রাখি কোথায়? কাকে বুঝাবো আমার এত অসহায়ত্ব? আমার আমেরিকায় আসার জন্য সব রেডি হয়ে যায়। যাওয়ার দুইদিন আগে রাতে আমি বাসায় যাই। নিশান’কে নিয়ে আসবো আর দারোয়ান চাচা’কে বলে আসবো। গিয়ে দেখি দারোয়ান চাচা নেই ছুটি’তে গেছে। বাসায় নিশান আর ইমরুল চৌধুরী। নিশানের হাতে লেগে টেবিল থেকে পড়ে ইমরুল চৌধুরীর মোবাইল ভেঙে যায়। আমি বাসায় ঢুকে দেখি নিশানের বাসা দেয়ালে ঠুকতে ঠুকতে রক্ত বের করে ফেলছে, নিশানের গলা চেপে ধরেছে। ইমরুল চৌধুরী ছিলো নেশাগ্রস্ত। আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই নিশান’কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই বাবা আমার গলা টিপে ধরে। উন্মাদের মত করতে থাকে। আমার জিহ্বা বের হয়ে যায়। নিশানের বাচ্চা মনে তীব্র ক্ষোভ টেবিলে পাশে রাখা বঁটি দিয়ে ইমরুল চৌধুরীর গলায় আঘাত করে। ইমরুল চৌধুরী ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গিয়ে মাথার পিছন সাইডে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সাথে সাথে মারা যায়। আমি উদভ্রান্তের মত তাকিয়ে রইলাম। কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। শুধু বললাম, “নিশান কি করলি তুই?” দিশেহারা হয়ে অযথাই ছোটাছুটি করছি,কি হয়ে গেল?কি করব আমি? আমার হাত-পা কাঁপছে শুধু। কিছু একটা উপায় বের করতে হবে নয়ত আমরা ফেঁসে যাবো।মাথায় কোন কাজ করছে না।নিশানের হাত থেকে ধারালো বঁটি নিয়ে ধুয়ে ফেললাম, লুকিয়ে রাখলাম বঁটি’টা। আমাদের বাঁচতে হবে। কেউ দেখে নি,কেউ জানে না আমাদের বাঁচার উপায় আছে এখনো। আমি বাসার সমস্ত ড্রয়ার, ওয়াড্রব, আলমারি ভেঙে টাকা-পয়সা গহনা নিয়ে নিলাম।যেমন করে ঢাকাতরা লুট করে। নিশান’কে বললাম , “আমি যাওয়ার পর রাত আর একটু গভীর হলে তুই চিৎকার করবি, পাশের বাসার মানুষদের ডাকবি। বলবি ডাকাত এসে সব নিয়ে গেছে মেরেছে বাবা’কে ,বাবা বাঁধা দেওয়ায়। একটুও ভুল করবি না তাহলে আমরা বাঁচবো না।”
আমি বেরিয়ে গেলাম।নিশান যা বলার ইশারায় বলবে। ছোট মানুষ, গুছিয়ে কথা বলতে না পারলে ধরা খেতাম। কথা তো বলতে পারে না আর লিখতেও পারে না। তাই একটু স্বস্তি পেলাম। ইমরুল চৌধুরী খুন হওয়াতে আমার মোটেও কষ্ট লাগে নি,আমি অনুতপ্তও নয় কিংবা নিশানের প্রতি আমার কোন রাগও হয়নি। সকাল বেলায় আমায় খবর দেওয়া হয় আমার বাবা বেঁচে নেই,খুন হয়েছে আর বাসা লুট হয়েছে। কান্না করলাম মানুষ’কে দেখিয়ে। আমার মোটেও কান্না আসছিলো না। শুধু ঘৃনা আর ঘৃনা! নিশান সব কিছু ঠিকঠাক’ই করেছে। মানুষ বলছে , “ছেলে’টা বেঁচে গেছে ভাগ্যক্রমে, ছেলে’কেও মেরেছে ডাকাতরা।” নিশানের গায়ে রক্ত ছিলো, ইমরুল চৌধুরী মেরে রক্তাক্ত করেছে। কোন সন্দেহের তীর আমাদের দিকে আসেনি। কিন্তু পরের দিন আমার আমেরিকা যাওয়া নিয়ে পুলিশের খানিক খটকা লাগলো। প্রতিবেশীরা বলল, “ওঁদের কেউ নেই বাংলাদেশে। শুধু একটা খালা আছে।” আফসোস করল সবাই। পুলিশ আসলো ইনফরমেশন নিতে আমার দাদা-দাদী খুনি বের করতে চায়। নিশান আর আমাকে সন্দেহ করা হাস্যকর! বরংচ সবাই শোক প্রকাশ করল। সে খুনি আজও বের করতে পারেনি।
আমি আমেরিকা আসলাম। খালুর অপমান, আমাদের কারণে খালার সাথে ঝগড়া! তার উপর প্রিয়মের বাড়াবাড়ি। এক রাতে হাবিব সাহেব আমায় ধর্ষন করার চেষ্টা করে পালিয়ে গেলাম সেই বাসা থেকে। জ্যাক নামক মানুষ’টার জন্য রক্ষা পেতে লাগলাম সব বিপদ থেকে!
ভালোবাসা! আমি ছিলাম ভালোবাসা বিদ্বেষী।সে ভালোবাসায়ই আমি আজ..! আমি লিলি খালার বাসা থেকে চলে আসার পরেই শুরু হয় প্রিয়ম নামক জানোয়ার’টার প্রেম নামক অভিনয়! সে মানুষ’টাকে রাস্তার মাঝে চড়ের উপর চড় মারার পরেও বেহায়ার মত স্যরি বলেছে তাকে আমি কিভাবে অবিশ্বাস করব?ছুরি আঘাত কিংবা শত অপমানের পরেও যে হেসেছে তাকে কিভাবে আমি অবিশ্বাস করব? আমার কঠিন,প্রেম বিদ্বেষী হৃদয়ে ধীরে ধীরে ভালোবাসা জাগায়। প্রিয়মের কাছে ছিলাম আমি মোহ। শুধুই মোহ। আমার অসুখে যে এত অস্থির হয়ে ছিলো তাঁকে আমি উপেক্ষা করতে পারিনি কিছুতেই। আমি অবজ্ঞা করেছি তাই আমার পিছনে লেগে ছিলো। আমি কাউকে উপেক্ষা করলে আমার প্রতি তাঁর আগ্রহ জাগবে এটা স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিক আগ্রহ আর মোহই ছিলো আমার প্রতি প্রিয়মের। প্রিয়মে নেশা ছিলো মেয়েদের শরীর।আমার প্রতি নেশা’টা একটু বেশিই ছিলো। বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক আমার সাথে সম্ভব ছিলো না তাই বিয়ে। কত রঙিন স্বপ্নের কথা বলেছে! এক বছর শেষে আমরা বাংলাদেশে যাবো,পালকি করে আমায় নিবে, পৃথিবীর সব সুখ পদতলে এনে দিবে, টুইট বেবি নীল চোখওয়ালা! সব মিথ্যে সব। বিয়েও মিথ্যে।না ..বিয়ে হয়নি। ওইদিন কোন বিয়ে হয়নি। আমায় একটা রুমে নিয়ে যায়। হুজুর টাইপের একটা লোক ছিলো। আমি শুধু কবুল বলেছি। আর প্রিয়মের যে বন্ধু ছিলো তাঁরা প্রিয়মের বন্ধু না, ভাড়া করা লোক ছিলো। বিয়ে সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিলো না, কিভাবে বিয়ে হয়? ছোট বেলা থেকে কোন বিয়ে দেখিনি কারণ আমার কোন আত্মীয় ছিলো না।আর আমেরিকান বিয়ে সম্পর্কে আমার কিছুই ধারণা ছিলো না। এক বছর যে সময়’টা সেটা ছিলো আমাকে ভোগ করার মেয়াদ।কি বোকা আমি! কিছুই বুঝিনি। শুধু আমি কেন কেউই বুঝতো না।চলতে থাকে এভাবে। কিন্তু আমার প্রেগন্যান্সিই সব এলোমেলো করে দেয়। ফেঁসে যাবে প্রিয়ম। মুহূর্তেই আসল রূপ বেরিয়ে যায়। ওঁর ডাক্তার ফ্রেন্ড’কে দিয়ে এবরশন করায় আমার। এর আগেও চার’টা এবরশন করিয়েছে প্রিয়ম তাঁর গার্লফ্রেন্ডদের। তাঁরা স্ব-ইচ্ছায়ই করেছে। চোখের পলকেই বদলে গেল আমার পৃথিবী। যে ভালোবাসা ছিলো আমার কাছে বিষক্ত কাঁটা। সে কাঁটায় আমার শরীর-মন বিদ্ধ হলো। প্রিয়ম বলেছে ডিভোর্স পেপার পাঠাবে কিন্তু ডিভোর্স পেপার আসবে কোত্থেকে? আমাদের তো কোনো বিয়েও হয়নি।আর আমার কাছে কোন প্রমান ছিলো না। প্রমান থাকলেও আমি কাউকে বলতাম না। কি বলতাম আমি?কি বলার ছিলো আমার?
বিভা’কে বিয়ে করবে প্রিয়ম। বিয়ে করবে! নিজ হাতে শেষ করে দিয়েছি। আমার একটুও খারাপ লাগছে না, আফসোস হচ্ছে না। আরো কঠিন শাস্তি দিয়ে মারতে পারলে শান্তি পেতাম। এলিটা খুনের দায়ে শাস্তি ওঁর জন্য রেডিই ছিলো কিন্তু খুন’টা যে আমি আগেই করে ফেলেছি। ও’কে নিজ হাতে খুন করতে না পারলে আমি ছটফটিয়ে শেষ হয়ে যেতাম।
আমার খুব শান্তির দরকার।আমি বাঁচতে চাই। বাঁচার অধিকার আমার আছে।আমি কোন পাপ করিনি। সারা জীবনে এক ফোঁটা সুখ পেলাম না। কেন এমনটা হয়েছে আমার সাথে? কি বিষাক্ত একটা জীবন আমার! কি ভুল আমার? কি দোষ আমার? কেন আমার শান্তি নেই? কোথায় পাবো শান্তি?ছোট এই জীবনে এত কষ্ট কেন পেয়েছি? কেন এত আঘাত? দুই’টা নিকৃষ্ট মানুষ খুন করেছি এটাই আমার জীবনের প্রাপ্তি। ওঁদের মত নিকৃষ্ট মানুষ কেন বেঁচে থাকবে?আমার কোন পাপ বোধ নেই। যদি আবার সুযোগ আসে হাবিব সাহেবের হাত দুই’টা কেটে দিবো। আমার শান্তি আমি খুঁজে নিবো, আমার অশান্তির কারণ গুলো’কে হত্যা করে।
প্রিয়মের খুনের কোন প্রমান নেই। আমার সাথে বিয়ের ব্যাপারেও কোন প্রমান নেই, জ্যাক ছাড়া কেউ জানে না। খুনের তদন্তে আমার ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা ১০%।”
এইটুকু লেখার পর কলিং বেল বেজে ওঠে। মোনা কলম’টা হাত থেকে রেখে,ডায়েরি’টা বন্ধ করে রাখে। কয়েক পা দরজার দিকে এগিয়ে যায়। কে এসেছে? ডায়েরি যদি দেখে ফেলে? মোনা আবার ডায়েরির কাছে ছুটে যায়। ডায়েরি’টা ওয়াশরুমে গিয়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ভিজিয়ে রাখে। জ্যাকের বউয়ের মত সব লিখে লিখতে চেয়েছিল। প্রতি’টা ভালোগালা- ভালোবাসার মুহূর্ত ডায়েরির ভাঁজে রেখে দিতে চেয়েছিল। যাতে স্মৃতি গুলো মলিন না হয়! কিন্তু এই বিষাক্ত কথা লিখে রাখা যায় না। এই বিষাক্ত স্মৃতি অম্লান রেখে কি হবে?
দরজা খুলে দেখে জ্যাক আসে।জ্যাকের চোখ-মুখে অস্থিরতা। চিন্তাগ্রস্থ হয়ে বলে,
– “আপনার আর প্রিয়মের বিয়ের ব্যাপার’টা কে কে জানে?”
– “আপনি ছাড়া কেউ জানে না।”
জ্যাক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে,
– “সত্যি?”
মোনা মাথা নাড়ায়। জ্যাক বলে,
– ” আপনার সাথে প্রিয়মের বিয়ে কিংবা সম্পর্ক কোন একটা জানাজানি হয়ে গেলেই এই মার্ডার,কেস এসবে আপনি জড়িয়ে যাবেন।কোন ভাবেই যেন কেউ না জানে।”
মোনার জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা’টা ক্ষীণ। তবুও যদি সব বেরিয়ে আসে তাহলে নিশানের কি হবে? মোনা অস্থির হয়ে বলে,
– “জ্যাক আমি যদি এসবে জড়িয়ে যাই আপনি প্লীজ নিশান’কে দেখে রাখবেন।”
– “আপনি কেন জড়াবেন এসবে?আমি আপনায় সাবধান করলাম শুধু। আমার মনে হয় কি জানেন মোনালিসা?”
মোনা আগ্রহী ভাবে তাকায়।জ্যাক বলে,
– “আমার মনে হয় এলিটার ফ্যামিলির কেউ খুন করেছে প্রিয়ম’কে।”
– “আমারও তাই মনে হয়।”
জ্যাক মোনা’কে সাহস জোগায়। মোনা তাকিয়ে আছে জ্যাকের দিকে। মাথায় শুধু একটা চিন্তা যদি সব জানাজানি হয়ে যায়? নিশানের কি হবে?মোনার বুকের ভিতর ধ্বক ধ্বক করছে। নিজের জন্য মোটেও চিন্তা হচ্ছে না। শুধু নিশানের কথা ভাবছে। মোনা শরীর’টা আবার নিস্তেজ হয়ে যায়। অস্পষ্ট ভাবে বলে,
– “জ্যাক আমার সাথে কেন এমন হলো? অশান্তি! যন্ত্রনা! আমার কি কষ্ট হচ্ছে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
জ্যাক মোনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অদ্ভুত ভাবে উঠে চলে যায়। মোনা জ্যাকের আচরণে বিস্মিত হচ্ছে খুব। জ্যাক চলে যাওয়ার পর মোনা দেখে জ্যাক ছোট একটা চিরকুট রেখে গেছে মোনার পাশে। মোনা এতক্ষণ খেয়াল করেনি চিরকুট’টা। মোনা কাঁপা কাঁপা হাতে খুলে।লেখা,
“মোনালিসা আপনার সাথে যা হয়েছে সব’টা অপ্রত্যাশিত। আমি চেয়েছি আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হবেন। আপনার কষ্ট আমি পুরোপুরি অনুভব করতে পারছি।আপনার এই অবস্থা আমায় ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। আমার সৃষ্টি কর্তার উপর আক্ষেপ হচ্ছে! আপনি কেন সুখ পেলেন না? সব সময় খারাপ’টা কেন হচ্ছে আপনার সাথে?
আপনার জীবনের এই কালো অধ্যায় আপনি একা।আমি আপনার পাশে থাকতে চাই। এরপর যদি কখনো সুখ অন্বেষণ করেন তাহলে চলে এসেন আমার কাছে।”
চিঠি’টা এক টুকুই ছিলো।মোনা বার বার পড়ছে চিঠি’টা। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলছে, “শান্তি পাবো!” পরক্ষণে মোনার মনে প্রশ্ন জাগে জ্যাক যদি প্রিয়মের মত হয়? কাউকে বিশ্বাস করবে না ,কখনো বিশ্বাস করবে না। মোনা নিজেকে নিজে উত্তর দেয়,
– “জ্যাক যদি প্রিয়মের মত হয় তাহলেও জ্যাকও মরবে প্রিয়মের মত।”
মোনা ঘর কাঁপিয়ে হাসছে। দুর্ভেদ্য সে হাসি। হাসতে হাসতে মোনার চোখ থেকে পানি গড়াচ্ছে। অস্ফুট স্বরে বলে,
– “কাউকে বিশ্বাস করব না,কাউকেই নয়। শান্তি প্রয়োজন শান্তি অন্বেষণে যাবো। শান্তি না পেলে খুন করে ফেলবো।”
প্রিয়মের খুনের ব্যাপারে যদি ফেঁসে যায় তাহলে নিশান’কে জ্যাকের কাছে রাখবে। জ্যাক মোনা’কে ভুল বুঝবে না। বুঝতেও পারে ভুল মানুষের বিশ্বাস কি? মোনা বিড়বিড় করে বলে,
– “কোন প্রমাণ নেই ফাঁসবো না আমি।”
মোনা পা বাড়ায় জ্যাকের উদ্দেশ্যে। নতুন অধ্যায় জীবনের। মোনার চোখে-মুখের অজেয় ভাব।অনমনীয় মোনালিসা,তেজস্বী মোনালিসা। “লিওনার্দো ভিঞ্চির সেই রহস্যময়ী মোনালিসা পৃথিবী’তে ফিরে এসেছে”- জ্যাকের বলা কথা’টা মোনার কানে ভাসছে এখন শুধু।
(সমাপ্ত)
~গল্প এখানেই শেষ। সিজন২,৩ কিছু নেই।

6 COMMENTS

  1. গল্পটা সত্যি চমৎকার, আরো সিজন দিলে ভাল হতো।

  2. সত্যিই প্রিয়ম এরকম করবে ভাবতে পারিনি। যাই হোক গল্পটা অসাধারণ ছিল।

  3. অসাধারণ একটা গল্প ছিলো ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। খুব ভালো লাগলো গল্পটা পড়ে।Thank you apu🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here