মোনালিসা পর্ব ৫২

মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৫২
________________
প্রিয়মের অফিসের দুই সিনিয়র কলিগের সাথে মেসে উঠেছে। প্রতিদিন প্রিয়মের সাথে ভার্সিটি’তে যাওয়া একটা স্বভাবে পরিণত হয়েছে।স্বভাব গুলো এখন শূন্যতা অনুভব করায়। কিচেনে গেলেও শূন্যতা। শূন্যতায় পূর্ণ মোনার শহর। প্রিয়ম সকালে গেছে,মোনা ফোন দিয়েছে কয়েক বার। প্রিয়ম ফোন তুলে নি। হয়ত ব্যস্ত! মোনার মন ছটফট করছে। ক্লাসে টিচার লেকচার দিচ্ছে, মোনা উদাস হয়ে আছে। শ্রুতি কলম দিয়ে মোনার হাতে খোঁচা মেরে চাপা গলায় বলল,
– “কি হয়েছে?ক্লাসে মন দেও।”
মোনার ক্লাসে মন বসে না।অফিসে যায়,সেখানেও ভালোলাগে না। রাতে বাসায় ফিরে বই নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। কিছুক্ষণ পর বই গুলো অনাদৃত ভাবে রেখে বারান্দার গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বইয়ের উপর রাখা মোবাইল’টা বেজে চলেছে।মোনা তড়িৎ গতিতে ছুটে এসে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে ভারি ক্লান্ত গলায় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
– “সারাদিনে হাঁপিয়ে গেছি।এত ঝামেলার মধ্যে দিয়ে গেল দিন’টা।”
প্রিয়ম একটু থামলো। মোনা কোন প্রত্যুত্তর করছে না।মোনা’কে নিরুত্তর দেখে প্রিয়ম সেই পরিচিত সুরে ডাকল,
– “এই মোনা পাখি।”
মোনা কেবল মন্থর গলায় বলল,
– “জ্বী।”
– “মিস করো নি আমায়? এতদিন রাতে পাশে তুমি ঘুমাতে আর এখন সিনিয়র কলিগরা। হায় কপাল!”
মোনা ম্লান হাসলো।বলল,
– “না করি না মিস। খেয়েছেন‌ আপনি?”
– “খাওয়া হয় নি। সকালে খাবো। তুমি খেয়েছ তো? খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করো না।”
মোনা রাগ মিশ্রিত গলায় বলল,
– “আপনি কেন খান নি?”
– “তোমার বিরহে খাই নি।মিস করি তোমায়। চাকরি ছেড়ে-ছুড়ে চলে আসবো তোমার কাছে।হবে না আমায় দিয়ে।”
প্রিয়মের সাথে কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে যায়।কথা বলা শেষে মোনা ফোন রেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। পুরানো অনেক স্মৃতি মনে পড়ল হঠাৎ। বাংলাদেশ থেকে ফোন দেওয়ার মত কেউ নেই। যেখানে জন্ম,বেড়ে ওঠা, জীবনের আঠারো’টা বছর অতিক্রম করেছে সেখানে আপন কেউ নেই। মোনা একটা দীর্ঘ শ্বাস গোপন করল। হঠাৎ কেন জানি আজ মনে পড়লো এসব। কখনো কি আর বাংলাদেশে যাওয়া হবে? মোনা কেমন উদাস হয়ে যায়।বুকের ভিতর হাহাকার করতে থাকে।
প্রিয়মের সাথে সারা দিন পরে ফোনে কথা হয়। প্রিয়ম সময় পাচ্ছে না যে একবার আসবে মোনার কাছে। কয়েকদিন পর মোনা ভাবলো ও একদিন যাবে প্রিয়মের সাথে দেখা করতে। যেই ভাবা সেই কাজ। একদিন সকালে তাড়াতাড়ি গোসল মোনা বাসা থেকে বের হলো। বোস্টনের উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে।বাসে সব সময় জানালার পাশে বসবে মোনা। কানে ইয়ারফোন গুঁজে রবীন্দ্র সংগীত শুনছে। প্রিয়ম ও’কে দেখে চমকে যাবে! ভাবতেই মোনা পুলকিত হচ্ছে। আর কিছুক্ষণ পর প্রিয়মের সাথে দেখা হবে।মোনা এড্রেস জানত। বাস থেকে নেমে গাড়ি করে সোজা প্রিয়মের বাসার সামনে। লিফটে করে উপরে উঠল। কলিং বেল বাজাতেই এক ভদ্রলোক দরজা খুলে মোনা’কে আপাদমস্তক দেখলো। মোনা ইতস্তত বোধ করল। অস্বস্তি’তে গা গুলিয়ে যাচ্ছে। বিব্রত বোধ করে বলল,
– “প্রিয়ম আছে?”
– “না প্রিয়ম নেই।কে আপনি?”
মোনার কপালে ভাঁজ পড়ল।ভ্রু কুঁচকে বলল,
– “প্রিয়ম নেই মানে?কোথায় গেছে?এত সকাল সকাল অফিসে গেছে?”
মোনার এত প্রশ্নে ভদ্রলোক যেন বিরক্ত হলো। সংক্ষেপে উত্তর দিলো,
– “ঘুরতে গিয়েছি বন্ধুদের সাথে। দুই দিনের ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে।”
মোনা বজ্রাহত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।প্রিয়ম কাল রাতেও বলল অফিস থেকে মাত্র ফিরেছে। সারাদিন ব্যস্ত থাকে অফিসে। মোনা মুখ’টা পাংশু বর্ণ হয়ে গেল। চেহেরার অভিব্যক্তি অস্বাভাবিক।প্রিয়ম মিথ্যা বলল?বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছে?ছেলে বন্ধু নাকি মেয়ে বন্ধু? মোনার মস্তিষ্কে এই প্রশ্ন গুলো ঘোরপাক খেতে লাগল।বিস্ময়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে গেল। বিশ্রী এক অনুভূতি হচ্ছে। মুহূর্তেই মোনার মনে প্রশ্ন জাগল, ‘ভুল করল প্রিয়ম’কে বিয়ে করে?’ ভদ্রলোকের কথার বিপরীতে মোনার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বের হয়ে আসলো,
– “ও।”
মোনা বের হয়ে গেল ওই বাসা থেকে। হাঁটার গতি ধীর হয়ে আসছে। মোনার বুকের ভিতর কষ্টের মহাতরঙ্গ বয়ে যেতে লাগল। চোখের কোণ পানি জমছে। এলোমেলো পায়ে হাঁটছে। মোনার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। যে জিনিস গুলো মোনা ভয় করত তাই ঘটলো আজ। মুহূর্তেই প্রিয়মের উপর ঘৃনা জন্মালো। একদিকে যন্ত্রনা অন্যদিকে ক্রোধ। প্রিয়ম এসব কথার বিপরীতে কি উত্তর দিবে? মোনার বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে। ঘুরতে যাবে সেটা বললেই হত,মিথ্যা কেন বলেছে? অফিসের কথা কেন বলেছে? মোনার অবচেতন মনে বিভার সেই ম্যাসেজ’টা মনে পড়ল, ‘বিছানা অবধি নিয়ে ছেড়ে দেয় মেয়েদের।’ প্রিয়মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা জন্মিয়েছে। ভুলে গিয়েছে ওসব, ভুলে গিয়েছে প্রিয়মের অতীত।নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছে প্রতি মুহূর্তে। বিয়ের পর এই কয়েক মাসে প্রিয়মের প্রতি একবারও সন্দেহ জাগে নি মোনার। মোনা দেখেছিল নতুন এক প্রিয়ম’কে।যে ভালোবেসেছে মোনা’কে তীব্র ভাবে। মোনার পাঁজর কাঁপিয়ে ধ্বক ধ্বক করতে লাগল। অজানা আশঙ্কায় বিজড়িত হয়ে গেল। মোনার চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে ফেলল।মোনা সাথে সাথে মুছে ফেলল পানি ফোঁটা। মোনা প্রিয়মের ফোনে ডায়েল করল কয়েক বার, ফোন রিসিভ হলো না। মোনা’কে বলেছে ব্যস্ততার জন্য দেখা করতে আসতে পারে না! মোনার শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় ক্রোধের আগুন জ্বলছে। চোখ জোড়া নিদারূণ রাগে ধিকধিক করছে। মোনা ব্যারিংটনের উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে। যখন ব্যারিংটন থেকে বোস্টনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল কত রোমাঞ্চকর অনুভূতি জেগেছিল মনে! কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সেসবের কিছুই নেই এখন। মোনার চিৎকার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। একটু শান্তি চেয়েছে,ভালো থাকতে চেয়েছে কিংবা আস্থা রাখার মত একজন মানুষ চেয়েছিল। মোনার চিন্তাশক্তি লোপ পেতে লাগল।
________________________________________________________
বাসায় পৌঁছে ধপ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরল মোনা।দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েছে চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি ফেলবে না। যে মানুষ এভাবে মিথ্যা বলে তাঁর জন্য কিসের কান্না? জটিল এক সমীকরণের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে প্রিয়মের সাথে সম্পর্ক’টা। কখনো কখনো মনে হত প্রিয়ম’কে ভালোবাসা যায় না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোনার মনে হয়েছে প্রিয়ম ও’কে সত্যিই ভালোবাসে। ওঁর জন্য নিজেকে বদলিয়েছে। কেউ যদি কারো জন্য নিজেকে এত’টা বদলায় তাহলে তাঁকে ভালোবাসা অন্যায়? প্রিয়ম নিজেকে এমন ভাবে মোনার কাছে উপস্থাপন করেছে যে শুধু মোনা কেন যে কেউই ভালোবাসত। এখন যদি প্রিয়ম মোনা’কে ঠকায় তাহলে সেটা মোনার মানুষ চিনতে পারার ভুল নয়। মোনার চোখে কান্নার শুষ্ক রেখা। নির্জীব হয়ে বসে রইলো। জড় পদার্থের মত নিথর হয়ে রইল। মোনা চোখ বন্ধ করে আছে। চোখে-মুখে বিষাদের ছায়া। এত মিথ্যা মানুষ কিভাবে বলে?
রাত হয়ে আসে।প্রিয়ম সেই নির্দিষ্ট সময়ে ফোন দিলো। ফোন’টা বাজছে। মোনা গলার স্বর স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। প্রতিদিনকার মতই কথা বলবে। কথা বলা শেষে না হয় বাকিটুকু বলবে। মোনা ফোন রিসিভ করে বলল,
– “হ্যালো।”
– “মোনা পাখি।”
এই ডাক’টা আজ বিষক্ত লাগছে। নিদারূণ বিষাদ মোনার মনে। নিজেকে সংযত করে। আগে শুনবে প্রিয়মের মিথ্যা কথা গুলো। তবুও কষ্টের একটু রেশ গলায় আত্মপ্রকাশ করছে। মোনা নিচু স্বরে বলল,
– “জ্বী। অফিস থেকে কখন ফিরেছেন?খেয়েছেন?”
প্রিয়ম চিন্তিত গলায় বলল,
– “তোমার গলার স্বর এমন লাগছে কেন? ঠাণ্ডা লেগেছে?”
– “উঁহু।”
এই টুকু বলে আগের প্রশ্ন’টা মোনা আবার করল। প্রিয়ম সহজ গলায় বলল,
– “এইতো মাত্র ফিরে তোমায় ফোন দিলাম। হ্যাঁ খেয়েছি।”
কি চমৎকার সাবলীল অভিনয়! নিখুঁত মিথ্যা কথা! মোনার বাহবা দিতে ইচ্ছে করছে। অস্কার পাওয়া উচিত প্রিয়মের। ভিতরে ক্রোধ উপচে পড়ছে। জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকবে না।এমন একটা মানুষ বিশ্বাস করে নিত্য ঠকার চেয়ে একবারেই ঠকা ভালো। ভালোবাসা গুলো থাকুক ঘৃণার আড়ালে।
– “চুপ হয়ে আছো কেন মোনা?কি হয়েছে তোমার?মন খারাপ?”
মোনা আরো কিছুক্ষণ চুপ থাকে। হিমশীতল গলায় বলল,
– “আপনার আর আমার মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে কয়বার?”
হঠাৎ মোনার এমন প্রশ্নে প্রিয়ম নির্বুদ্ধি হয়ে গেল যেন। অবান্তর মনে হলো। প্রিয়ম চমকানো গলায় বলল,
– “মোনা কি বলছ এসব?হয়েছে কি তোমার?”
প্রিয়মের গলায় অস্থিরতা।মোনা জোর গলায় বলল,
– “আহা বলেন না?”
– “মোনা তোমার মাথা ঠিক আছে?এসব কেউ হিসেব করে রাখে? হঠাৎ কি হলো তোমার?”
– “আচ্ছা শুনুন, আমি যথা তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো। আপনি সাইন করে দিয়েন। আপনি আমায় বিয়ে করেছেন, বিছানা অবধি নিয়েছেন আমায়! এবার আমার চাপ্টার ক্লোসড করুন। এরকম নিখুঁত মিথ্যা বলা মানুষ’কে ছাড়তে মোনা দু দন্ড ভাববে না। জীবনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অনেক বার,অভিজ্ঞতা আছে। আমি ভালোবাসায় দুর্বল, মিথ্যাচার কিংবা অন্যায়ে দুর্বল নয়।”
মোনা এক শ্বাসে কথা গুলো ফোন’টা বন্ধ করে রাখলো।চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি গড়িয়েছে। মোনা ছুটে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ-মুখ ধুয়ে আসে। তারপর বিছানায় শুয়ে পড়ে।নানান রকমের চিন্তা ভাবনা, স্মৃতি মোনার মাথায় ভিড় করে। রাতে আর ঘুম হয় না। অজানা এক গ্লানিতে দগ্ধ হচ্ছে।”
___________________________________________________________
সকাল সকাল জ্যাক আসে ডায়েরি নিতে। একটা ডায়েরি লেখা শেষ।মোনা বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে বসে আছে।জ্যাক ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখছে। জ্যাকের চেহেরায় হাস্যেজ্জ্বল ভাব। মনে হচ্ছে খুব দামী কিছু পেয়েছে। কিছুক্ষণ ডায়েরি ঘেঁটে বলে,
– “মোনালিসা এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাকে? অসুস্থ আপনি?”
মোনা মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে।জ্যাক ডায়েরি’তে বিমগ্ন থাকায় দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করল না কিংবা প্রশ্নের উত্তর জানার তেমন কৌতূহল বোধ করল না। ডায়েরির দিকে চোখ দুটো আবদ্ধ রেখে বলে,
– “প্রিয়ম কতদিনের জন্য বোস্টনে গিয়েছে?”
মোনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করে বলল,
– “জানি না।”
মোনা কিছুক্ষণ পর আবার বলল,
– “আচ্ছা জ্যাক মিথ্যাচারের ভিতর দিয়ে সংসার কিংবা ভালোবাসা চলে?”
জ্যাক ডায়েরির দিকে তাকিয়ে উন্মনা হয়ে বলল,
– “কেউ যদি সব সময় অপর জন’কে মিথ্যা বলে সেখানে বিশ্বাস থাকে না।আর বিশ্বাস হলো ভালোবাসার প্রাণ। সম্পর্কের প্রয়োজনে সম্পর্ক থাকলেও সেই সম্পর্ক’টা অতি কষ্টে বয়ে বেড়ানো গ্লানির মত।”
মোনা চুপ হয়ে থাকে। জ্যাকের বলা কথা গুলো সত্যি।এই সত্যি কথা গুলো মোনার যন্ত্রনা যেন আরো বাড়িয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর যেন জ্যাকের সম্বিত ফিরে।ডায়েরি থেকে মুখ উঠিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মোনার দিকে।
– “আচ্ছা..আচ্ছা। আমি তো ডায়েরি’তে মগ্ন ছিলাম। কথা’টা খেয়াল করিনি। আপনি কেন হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন?”
মোনা জ্যাকের কাছে বলল সব।বলার ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু কথার স্রোতে বলে ফেলল। জ্যাক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
– “সামান্য এই ব্যাপার নিয়ে কেউ ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়? মোনালিসা মাথা ঠাণ্ডা করুন।হ্যাঁ প্রিয়মের মিথ্যা বলা উচিত হয়নি। তাই বলে ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত’টা যুক্তিক নয়।সম্পর্ক যত সম্ভব আগলে রাখার চেষ্টা করবেন,সুযোগ দেন।”
মোনা নিরাশ হলো।জ্যাক চলে গেল।সম্পর্ক’টা যে জটিল সমীকরণে ভিতর দিয়ে গড়ে উঠেছে তাতে ছেড়ে যাওয়ার জন্য এর থেকে বেশি কারণ লাগে না।বিশ্বাস জিনিস’টা একবার ভেঙ্গে গেলে, সেখানে কিভাবে সম্পর্ক? সারা জীবন মায়ের মত সম্পর্ক নামক গ্লানি বয়ে বেড়াবে?মায়ের মত ভুল অন্তত করবে না মোনা। যত কষ্ট হোক না কেন।

প্রিয়ম মোনার মুখোমুখি বসে আছে। প্রিয়ম জেনেছে মোনা গিয়েছিল ওঁর বাসায়। মোনার চেহেরায় রাগ,ক্ষোভ কিছু নেই। খুব শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে।প্রিয়ম ইতস্তত বোধ করে বলল,
– “মোনা স্যরি আমি।বন্ধুরা খুব জোর করছিল।আর তুমি তো ওসব পছন্দ করো না।তাই তোমায় জানাই নি।”
– “মিথ্যা বলা’টা আমি খুব পছন্দ করি? আপনি জানেন না আমায়? ভালোবাসার প্রতি কত বিতৃষ্ণা ছিলো তা আপনি জানেন না?”
মোনার মুখে প্রবল ঘৃণা। মোনা আবার বলল,
– “লজ্জা করে নি আমার সামনে আসতে?এত নিখুঁত মিথ্যা! আপনার সাথে এই সম্পর্ক কেন আমি দীর্ঘায়িত করব?হ্যাঁ আমি এই সামান্য কারণেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আপনায় বিশ্বাস করতে পারব না।যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে কিসের ভালোবাসা? ভালোবাসার খুব বেশি দরকার নেই আমার।”
– সামান্য একটা কারণে তুমি ডিভোর্সের কথা কেন বলছ?”
মোনা এবার গায়ের সমস্ত শক্তি জড়ো করে চেঁচিয়ে উঠে বলে,
– “সামান্য কারণ? কোন’টা সামান্য কারণ? বন্ধুদের নাম করে মেয়েদের সাথে ঘুরতে যাওয়া সামান্য কারণ। ভালোবাসা ছাড়া বাঁচা যায় কিন্তু বিশ্বাসহীন একটা সম্পর্কে মানুষ প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে মরে।”
– “ফেন্ডদের সাথে ওঁদের গার্লফ্রেন্ড গিয়েছে।আমি কোন মেয়ে নিয়ে যাই নি।”
মোনা অস্বাভাবিক ভাবে হেসে ওঠল,
– “আপনি একা গিয়েছেন? সেটা আমি বিশ্বাস করব!”
প্রিয়ম নিচু স্বরে বলল,
– “আমার মিথ্যা বলা ঠিক হয়নি। কিন্তু আমি কোন মেয়ে নিয়ে যাইনি।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here