গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ১৫
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা (রাত)
নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,,
—সবকিছুর জন্য লাভ-ক্ষতির চিন্তা করতে হবে এর তো কোনো মানে নেই তাইনা? তবে এর উত্তর আমি একদিন দেবো। কিন্তু আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করো!এই অনুরোধটুকু রাখো।
—ঠিকাছে, আপনার এই অনুরোধ আমি রাখবো, আমি আবার পড়াশোনা শুরু করবো। আমার জন্য কঠিন হবে প্রথমদিকে কিন্তু আমি ঠিক মানিয়ে নিতে পারবো।
—এইতো এটাই চাইছিলাম।
দিশানী মুচকি হাসলো। সৌম্য দিশানীকে জিজ্ঞেস করলো,,
—স্কুলে-কলেজে তো কম দৌড় করাওনি মানুষকে তাহলে বিয়ের পরে এমন হয়ে গেছিলে কেনো?
—একটা সময় পর মানুষের সব প্রতিবাদ, সাহস সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়, নিঃশেষ হয়ে যায়, তখন তার পাশে কেউ থাকেনা, মানুষটা অসহায় হয়ে পড়ে। আমার অবস্থাও ঠিক তেমন হয়েছিলো।
মেঘা তখন বললো,,
—কিন্তু সেই কঠিন সময়টাতে যদি মানুষটার পাশে এসে কেউ দাঁড়িয়ে সেই মানুষটাকে সাহস জোগায় তাহলে মানুষটার মনে আবার প্রতিবাদ করার শক্তি জেগে ওঠে।
দিশানী নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,,
—ঠিক যেমন নীলাদ্রি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ঠিক তেমন।
নীলাদ্রি ভ্রু কুঁচকে বললো,,
—আরে!তোমরা এমনভাবে বলছো যেনো আমি কি না কি করেছি, শুধু পাশে দাঁড়ালেই হয়না যে মানুষটার পাশে দাঁড়াচ্ছি সে যদি সচেতন না হয় তাহলে পাশে দাঁড়িয়ে কোনো লাভ হয়না। দিশানী সচেতন ছিলো জন্যই আবার প্রতিবাদী হতে পেরেছে, এতে আমার কোনো ক্রেডিট নেই।
দিশানী নীলাদ্রির প্রতি বিরক্তি দৃষ্টি নিয়ে বললো,,
—আপনি এমন কেনো বলুন তো নীলাদ্রি?কেউ যদি মানুষটাকে সচেতন না করে তাহলে মানুষটা সচেতন কি করে হবে শুনি? উত্তর দিন আমার এই প্রশ্নের!
নীলাদ্রি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
—বিশ্বাস করো দিশানী তোমার কথার সাথে আমি কোনোদিনই পারিনি আজও পারবোনা,কথার বাজিতে এবারেও তুমিই জিতলে! খুশি?
দিশানী, নীলাদ্রি,সৌম্য, মেঘা সবাই হেসে ফেললো।নীলাদ্রি এক ধ্যানে দিশানীর হাসি মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে, মেয়েটাকে আজও হাসলে বড্ড মিষ্টি লাগে,কতদিন পর যে নীলাদ্রি এই হাসিখুশি দিশানীটাকে দেখছে তার কোনো হিসাব নেই।
মেঘা নীলাদ্রির কাছে এসে বললো,,
—একটা কথা বলি নীলাদ্রি দা?
—তুমি কথা বলার জন্য আবার কবে থেকে পারমিশন নেওয়া শুরু করলে বলোতো মেঘা?
—আমি এখন একদমই মজা করার মুডে নেই নীলাদ্রি দা, আমি তোমাকে এখন একটা সিরিয়াস কথা বলতে এসেছি!
—আচ্ছা বলো।
—তুমি সেদিন বললে অন্য কাউকে তোমার আর বিয়ে করা কখনো সম্ভব না তাইনা?
—হুম বলেছি!হঠাৎ এই কথা?কেন বলোতো?
—আচ্ছা দিশানীরও তো ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে আর তুমিও অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবেনা বলছিলে মানে আমি কি বোঝাতে চাইছি তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো!
—তুমি কি বলতে চাইছো সেটা আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু মেঘা আমার দিক থেকে দিশানীর প্রতি এখনো যে অনুভূতিটা আছে সেই অনুভূতিটা তো দিশানীর দিক থেকে না-ও থাকতে পারে তাইনা?
—আর যদি থাকে তাহলে?
—যদি কোনোদিন দিশানী নিজে বলে, দিশানীর মন চায় তাহলে আমাদের এই সম্পর্কটা অবশ্যই এগোবে। আমি নিজে থেকে ওকে জোর করতে চাইনা আর তোমরা ওকে জোর করো আমি সেটাও চাইনা, আশা করি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে গেছো মেঘা!
—ও যদি কোনোদিন নিজে থেকে না বলে তাহলে?
—মেঘা!নেগেটিভি খুব খারাপ জিনিস, কোনো সময় নেগেটিভ ভাবতে নেই,অল-টাইম পসিটিভ ভাবতে হয়!
—তাহলে বলছো দিশানী নিজে থেকে বলবে?
—বলতেই পারে,আমরা কখনো কি ভেবেছিলাম আমাদের আবার দেখা হবে? কিন্তু দেখো, আমাদের আবার দেখা হলো!সবসময় নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত তবে সেটা যেনো শুদ্ধতম ভালোবাসা হয় সেটাও দেখতে হবে, অপেক্ষা করে যেতে তো দোষ নেই।
—আমি সবসময় প্রার্থনা করবো তোমাদের ভালোবাসা যেনো জিতে যায়।
—আচ্ছা মেঘা তোমার ইমোশনাল কথা বলতে খুব ভালো লাগে তাইনা? কি সুন্দর হাসাহাসি হচ্ছিলো তার মধ্যেও তোমার এসব ইমোশনাল কথা বলতে হবে? যাও সৌম্যর কাছে যাও।
—হুম!
মেঘা চলে গেলে নীলাদ্রি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।সত্যিই কি দিশানী কোনোদিন নিজে থেকে এসে ভালোবাসার কথা বলবে?
————————
নির্ঝররা মেয়ে দেখতে এসেছে,মেয়ে দেখে সুজাতা আর নিরার খুব পছন্দ হয়েছে। সত্যি কথা বলতে মেয়ের থেকে বেশি ওদের যেটা পছন্দ হয়েছে সেটা হলো মেয়েরা খুব বড়োলোক।মেয়েটির নাম এলিনা। সুজাতা এলিনার মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,,
—আপনাদের ডিভোর্সি ছেলে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই তো?আর এলিনা তোমার কোনো সমস্যা থাকলে বলতে পারো মা!
এলিনার মা-বাবা উত্তর দিলো,,
—না না আমাদের ডিভোর্সি ছেলে নিয়ে কোনো প্রব্লেম নেই!তবে শুনলাম দু’মাস পরে নাকি ডিভোর্সটা হবে, তো কি কারণে ডিভোর্স টা হচ্ছে যদি ক্লিয়ারলি বলতেন।
সুজাতা মাথা নিচু করে বললো,,
—আসলে আপনাদের কাছে আমরা কিছু লুকোতে চাইনা, আমরা আপনাদেরকে সব সত্যি কথাই বলবো!আসলে আমার বর্তমান বৌমা মানে দিশানী কোনোদিন মা হতে পারবেনা, সৃষ্টিকর্তা ওকে মা হওয়ার ক্ষমতা দেননি, কিন্তু আমরা বলেছিলাম যে সন্তান না-ই হতে পারে তাতে কি করা যাবে সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। কিন্তু মেয়েটা উল্টো আমার ছেলের ওপর দোষ দেয়। আর ওর ব্যবহারের কথা তো মুখেই আনা যাবে না। অত্যন্ত জঘন্য ব্যবহার। আমার মেয়ে নিরাকেও ওই মেয়ে সবসময় এটা ওটা শোনাতেই থাকে,আপনারাই বলুন এরকম মেয়ের সাথে সংসার করা যায়?
—না না, একদমই না!চিন্তা করবেন না আমাদের মেয়ে আপনাদের ঘর আলো করে রাখবে, আর এলিনা আপনাদের বৌমা দিশানীর পুরো বিপরীত, ভীষণ মিষ্টি মেয়ে আমার!
নিরা উত্তর দিলো,,
—সেটা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে!কি গো নতুন বৌদি আমার দাদাকে তোমার পছন্দ হয়েছে তো?
এলিনা মাথা নাড়ালো, এর অর্থ পছন্দ হয়েছে।
সুজাতারা এলিনা কে দেখে ভীষণ খুশি, ডিভোর্স এর পর পরেই ওদের বিয়ের তারিখ ঠিক হবে!
মেয়ে দেখে বের হওয়ার পর নির্ঝর সুজাতাকে বললো,
—মা সবকিছু কেমন যেনো তাড়াহুড়ো হয়ে গেলোনা? মানে ডিভোর্সি ছেলেতে ওদের কোনো প্রকারের আপত্তি নেই? আবার ওদের কেমন যেনো তাড়াহুড়ো,এটা আমার কাছে কেমন একটা লাগলো!
সুজাতা রেগে গিয়ে বললো,,
—আহ!সবকিছুতে তোর এতো খুঁতখুঁতি কেনো বলতো? এটা তো আমাদের জন্য ভালো হলো, দেখ মেয়ে সুন্দর আছে, বড়লোক পরিবার, ওদের ডিভোর্সি ছেলেতে আপত্তি নেই, ব্যস আর কি চাই? তুই আর এসব নিয়ে ভাবিস না, যদি ভাবতে হয়
তাহলে ভাব কিভাবে তোর এই বউয়ের থেকে মুক্তি পাবি!
———————-
দিশানী মেঘাদের বাড়ি থেকে বের হলে নীলাদ্রি বলে,,
—এই সময় তোমাকে আর ট্যাক্সি করে ফিরতে হবে না আমার গাড়িতে ওঠো আমি তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি।
দিশানী হেসে বললো,,
—না থাক!আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না আমি ট্যাক্সি করেই চলে যাবো!
মেঘা রাগ দেখিয়ে বললো,,
—দিশানী তোর এতো কথা কেনো বলতো? এমনিতেও এখনকার দিনকাল ভালো না, এর মধ্যে তুই ট্যাক্সি নিয়ে যাবি? যা,নীলাদ্রি দা তোকে পৌঁছে দেবো!
দিশানী উত্তর দিলো,,
—আচ্ছা ঠিকাছে!
দিশানী নীলাদ্রির গাড়িতে উঠে গেলো,আসলে মেঘা চায় গাড়িতে ওরা যেনো আলাদাভাবে কোনো কথা বলে তাই জোর করে দিশানীকে নীলাদ্রির গাড়িতে উঠতে বললো।
চলবে