#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#পর্ব_১৫
রাতের নিস্তব্ধতা খেয়ালে নিয়ে জবুথবু হয়ে বিছানায় বসে আছে সাবিহা। বুকে চলে অবাধ্য অশান্তি, অস্বস্তির ঢেউ। সভ্যর কথা মতে সাবিহার বসত ঘর আজ রাতেই হলো সভ্যর রুমে। ফারজানা বেগমও আজই সাবিহাকে সভ্যর ঘরে যেতে বললেন। রাহেলা ইসলামও। রাত পৌঁনে একটার সময় ঠিক যেভাবে কণ্যা বিদায় দেওয়া হয় সেভাবেই সাবিহাকে আচমকা বিদায় দেওয়া হলো। হুট করে রাহেলা ইসলামের কান্নাকাটি। তিন মাসের বেশি হয় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সভ্যর সাথে ছিল না কোনো সৌহার্দ্য পূর্ণ সম্পর্ক। যা ছিল তা একে অপরের প্রতি রাগ, ঘৃণা, জেদ, আর প্রতি হিংসার আগুন। আজ সভ্য নিজ হতে আপন হাতে ঘর সাজিয়ে বউকে আহ্বান করলো ঘরে ওঠার। এ যেন সীমাতিক্রান্ত আনন্দের বিষয়। যেন বহু দিন পর, বহু রাগ উবে দিয়ে স্বয়ং রাজা ভালোবাসার পরশে তার রাণীর জন্য নিজ হাতে ঘর সুসজ্জিত করে ডেকেছে হাত বাড়িয়ে। ঠিক এমনটাই মনে হয়েছে রাহেলা ইসলামের। তিনি বুক ভরে দোয়া করে দিয়েছেন সাম্য বা সন্ধ্যাকে। আজ সেই নবজাতকের জন্যই তার মেয়ের অস্থায়ী ঘর স্থায়ী হচ্ছে। মেয়ে যে তার পাল্টে গেছে। অহংকার ছুড়ে ফেলে সাবিহা এখন একজন ভালো মা হওয়ার প্রয়াসে প্রমত্ত।
— রাতে কি পানি পিপাসা লাগে?
সভ্যর প্রশ্ন। সাবিহা মুখ তুলে চাইলো। জড়না নিমিষেই আঁকড়ে ধরলো সভ্যর দর্শনে। আকস্মিক বুকে ঢোল তবলায় ধুদ্ধুড়ি। আধা-আপাতে সাবিহার যেন বিয়ের প্রথম রাত। ছুটে পালাতে ইচ্ছে করছে এই দুরূহ পরিস্থিতির কবল হতে বাঁচতে।
— লাগে।
মিনমিন স্বরে জবাব দিলো সাবিহা। সভ্য সাবলীল হতে চাইলো। তার বুকের ব্যাথা প্রশমিত নয়। সাবিহার পূর্ব ব্যাবহার তার মনে সর্বদা জাগ্রত। খুব করে আঘাত করেছে সাবিহা।
— আচ্ছা পানি এনে রাখছি।
কথাটা বলেই দরজার নিকট হতে চলে গেলো সভ্য। জগ হাতে আবার আবার পানি নিয়ে ফিরে এলো তিন মিনিটের মাথাতেই। সাবিহা চুপচাপ বসে রইলো নত মাথায়। সভ্য বিছানার পাশে ল্যাম্প টেবিলের উপর পানির জগ রাখলো। সাথে গ্লাস। অতঃপর দরজা বন্ধ করে এসে জানালার কাচ টেনে বন্ধ করে দিলো। বিছানা কিনারায় পদার্পণ করতেই সাবিহার উদ্দেশ্যে বলল
— আমি বিছানায় থাকলে কি সমস্যা হবে?
কন্ঠে খানিকটা জড়িমা। সাবিহা দ্রুত বেগে মাথা নাড়িয়ে ধীর কন্ঠে বলল
— না।
সভ্য আর অতিরিক্ত কিছু বলল না। গত দু রাত হলো ঘুম নেই। সারাদিন আবার শুটিং মডেল নিয়ে ব্যাস্ত। আর আজকে তড়বড় করে ঘর গোছানোর কথা না হয় নাই ভাবা গেলো।
— লাইট অফ করলে কি সমস্যা হবে?
শেষ বারের মতো বিছানায় বসে সভ্য প্রশ্ন করলো সাবিহাকে। সাবিহা মাথা নড়চড় করে উত্তর করলো। লাইট অফ করলে সাবিহার সমস্যা নেই। সভ্য এক চুল পরিমাণ স্বস্তি নিয়ে লাইট অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। আলোর বিদ্যমানতায় ঘুমানো তার জন্য জটিল হতে জটিলতর। ওপাশে বামে সাবিহা শুয়ে পরলো কিনা তা সভ্য ঠাহর করতে পারলো না। আঁখি জোরা আর পারে না। ঘুমে তার জড়িয়ে যাচ্ছে আপনা আপনি। সভ্য ঘুমকে আপন করে বন্ধ করে নিলো দু-চোখ। কিন্তু তার বুঝি এ রাতেও ঘুম হবে না। আচমকা সে বন্দবস্ত হয়ে গেলো। মাথার উপর পরো দমে চলতে থাকা বৈদ্যুতিক ফ্যানটা হুট করে গতি হারিয়ে ফেলল। চলে গেলো বিদ্যুৎ। প্রচন্ড গরম। সভ্যর ঘরে আই পিএস নেই। সাবিহা ওপাশে শুয়ে পরেছিল। মিনিট দশেক পরেই সভ্য ঘুমের ঘোরে আঁচ করলো সাবিহা এপাশ ওপাশ করছে। সভ্যর ঘুম ছুটে যাচ্ছে ক্রমশ। ঘুম তার লঘু। একটু টুংটাং শব্দতেই ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। বিরক্ত মনে জায়গা করে নিলো কিনা তা বলা দুষ্কর। তবে শোয়া থেকে কুঞ্চিত কপালে উঠে বসে পরলো সভ্য। অন্ধকার চিঁড়ে সব অসম্ভব করে দিয়ে সে দেখতে চাইলো সাবিহাকে। কিয়ৎক্ষণ মনে চিন্তা চেপে বসে রইলো থম মেরে। অতঃপর আবার সিথান হাতিয়ে ফোন হাতে নিলো। টর্চ অন করে চলে গেলো সোফার নিকট। একটা প্লাস্টিকের হাত পাখা থাকার কথা। সভ্যর মা তখন কাজের ফাঁকে বাতাস করেছিল সভ্যকে। ভাবনা নিয়ে সভ্য হাতপাখা খুঁজতে গিয়ে নিরাশ হলো না। পেয়ে গেলো। অতঃপর তা হাতে নিয়ে এপাশ ওপাশ হেলিয়ে দুলিয়ে নিজে বাতাস নিতে নিতে চলে এলো বিছানায়। এবার অত্যন্ত বউ সোহাগি স্বামীর মতো ফোন রেখে বাতাস করার পালা। সভ্য অপটু হাত নাড়িয়ে ধীর গতিতে বাতাস করতে লাগলো। মনে তার জমে আছে এক টুকরো অনিচ্ছা। তবে মন বলল, সাবিহা ঘেমে নেয়ে অসুস্থ হলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। যদি ঠান্ডা লেগে আবার নিউমনিয়া হয়ে যায়? উপরন্তু সভ্যর এটুকু করা দায়িত্ব। সাবিহা যদি অসহ্য ঝামেলা নিয়ে সন্তান দিনের পর দিন পেটে যত্ন করে আগলে রাখতে পারে তাহলে সভ্যর বাবা হিসেবে উচিত তার সন্তানের মায়ের যত্ন নেওয়া।
— এমন বাতাস আমার লাগবে না। স্বার্থপর বাতাস এটা।
সাবিহার গাঢ় অভিমানের কন্ঠ। ফুঁসে উঠেছে তার মুখাবয়ব। সভ্য থমকে গেলো। অলোবিহীন অন্ধকারে অভিমানিনীর অভিমানে ছেয়ে যাওয়া মুখ সে দর্শনে আনতে পারলো না। সভ্যর ভাবনাতে ছিল না সাবিহা জাগ্রত। ঘুম যে তার সহজে আসে না সন্তান পেটে আসার পর হতে।
— বাতাস স্বার্থপর! আজব কথা।
নিশির আলোহীন অন্ধকারে নিবৃত্ত ঘরে সভ্যর মৃদু অবাক বাঁক চমৎকার শোনালো। সাবিহা ঝট করে বন্ধ করে নিলো দু-চোখ। মনে ঝঙ্কার তুলেছে সভ্যর হৃদয় কেড়ে নেওয়া কন্ঠ। সভ্যর কন্ঠস্বরে কি মধু আছে? সাবিহা ভেবে পেলো না। তবুও সে দমে যায়নি। শোয়া থেকে উঠে বসে নরম কন্ঠে বলল
— আপনি তো আমার জন্য বাতাস করছেন না। আপনি করছেন আপনার সন্তানের কথা ভেবে। আপনি আমার জন্য ঘর সাজাননি। আপনার সন্তানের জন্যই তো সাজিয়েছেন। এ কথা কি অস্বীকার করতে পারবেন আপনি?
— আমার এসব কথা শুনতে ভালো৷ লাগছে না সাবিহা।
সভ্যর মৃদু অবজ্ঞার সুর। সাবিহা পাত্তা দিলো না। সে তো একা দোষী নয়? সভ্যও দোষ করেছে। সভ্য যদি সাবিহার উপর সেভাবে নৃশংস আচরণ না করতো তবে নিশ্চয়ই সাবিহার আজ এ পরিস্থিতিতে আসতে হতো না।
— সভ্য ভাই, আমি কিন্তু একা অপরাধ করিনি। আপনিও অপরাধ করেছেন। আপনি কিন্তু আমার উপর জোর করে অধিকার খাটিয়েছেন।
সাবিহার নিস্তেজ কন্ঠে বলা শীতল বাণী। সভ্য বুঝি ভেতরে ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে গেলো। বুকটা আচমকা ধ্বক করে উঠেছে তার। তিমিরে ডুব দিয়ে সে দেখতে চাইলো সাবিহাকে। সাবিহাও গড়পড়তায় চেয়ে আছে ডান দিকে। আনুমানে সভ্যর পানে। সভ্য কিছু বলছে না। সাবিহাই পুনরায় বলে উঠলো
— কিছু অপরাধ কিন্তু এক চিলতে সুখ বয়ে আনতে সক্ষম। কিছু অপরাধের কারণে কিন্তু জীবনের মোড় ঘুরে যেতে পারে। কিছু কিছু ভুল জীবনে ফুল হয়ে ফোটে। মেনে নেওয়া কি যায় না?
শেষোক্ত কথায় আকুলতা। সাবিহার বুকের হাহাকার। সভ্য হাত পাখাটা আচমকা ছুড়ে ফেলে দিলো অজানা দিকে। রাগে নয়, হয়তো অত্যধিক কষ্ট আর আফসোস হতে। হঠাৎ করে সে বলে উঠলো
— আমি নিজের ভুলে ফেঁসে গেছি। এটা শোধরাবার কোনো পথ নেই তাই না? রাগের বশে কেন আমি এমন করেছিলাম? আফসোস হয়, সাবিহা।
সাবিহার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো। এতোটাই অপছন্দ করে সভ্য তাকে। বুকের মধ্যে দবানল নিয়ে সাবিহা হঠাৎ আনুমানে এগিয়ে গেলো সভ্যর দিকে। হুট করে সে এক প্রতিবন্ধক খুঁজে পেলো। মস্তিষ্ক বলল সে সভ্যর বুকের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। সাবিহা ভাবনা চিন্তা না করে হুট করে জড়িয়ে ধরলো সভ্যকে। গলায় আলিঙ্গন করলো দুটো হাত। বুকের মাঝে মুখটা লুকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আকস্মাৎ। থমকে আসা গলায় বলল
— আপনি কিন্তু অনেক বড় অন্যায় করেছেন কিন্তু আমি সেটা অন্যায় হিসেবে নিচ্ছি না। আমি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে যাওয়ার একটা পক্ষসমর্থন হিসেবে নিচ্ছি। আপনি কেন বলছেন না আপনার ভুলটা ফুল হয়ে যাচ্ছে। আপনি কেন আমাকে ক্ষমা করছেন না?
সভ্য নিরুত্তর। না দিলো সে সাবিহার কথার পিঠে জবাব। না দিলো সাবিহা কে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে না নিলো দু’হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে। সাবিহার চোখের পানি টিশার্ট বিদীর্ণ করে সভ্যর বুক স্পর্শ করছে। এমন সময় সভ্য বলে উঠলো
— সাবিহা ঘুমাও। আমাকে ছাড়ো।
সাবিহা ছাড়লো না। বলে উঠলো আকুলতা নিয়ে। জানতে চাইলো সে ব্যাকুল হয়ে
— ভালোবাসা কি যায় না সভ্য ভাই?
সভ্য স্বভাব বশেই ক্ষণকাল নিশ্চুপ রইলো। সাবিহা অপেক্ষায় রইলো সভ্যর জবাবের। অতঃপর প্রায় মিনিট দুয়েক পর সভ্য বলে উঠলো
— জানি না।
সাবিহার এবার সইলো না এমন হেয়ালি পনা। সে আচমকা ধাক্কা দিয়ে বসলো সভ্যকে। আক্রোশ তার আকাশ ছুয়ে গেলো। বলে উঠলো রাগ ভরা কন্ঠে
— আপনি আসলেই অসভ্য। আপনি দুই অক্ষরের সভ্য নন। আপনি আসলে তিন অক্ষরের অসভ্য।
#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#বোনাস_পার্ট
রাত কাটলো মান অভিমানের জয়ে। সাবিহা ঘুমালো না। নিশিযাপন হলো না ঘুমিয়ে সভ্যরও। আঁধারে বসে একজন ক্ষুদ্ধ হয়ে মনে মনে জপ করে গেলো, ” তিন অক্ষরের অসভ্য, দুই অক্ষরের ত্যাড়া”। সভ্য শোনেনি একথা। যদিও বা ভুলে সে আন্দাজ করতে পারতো সাবিহা তাকে এমন অপবাদে নিশিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে সমুদ্রে তবে সে নিশ্চিত রেগে তৎক্ষনাৎ ঢাকার পথে পা বাড়াতো। একদিনে কখনো ভালোবাসা হয়? আজব! তারউপর সাবিহা তাকে যে উপমায় উপস্থাপন করেছে সেদিন। সভ্যর প্রথম মডেলের ছবিগুলো দেখে যা বলেছিল ফোনে তা-কি ভোলার মতো? তবুও তো সভ্য প্রয়াসে প্রশমিত করতে চাইছে সব।
.
রাতের লগ্নের সমাপ্তি টেনে দিতে যখন সূর্য উদয় হলো। সকলে বিছানা ছেড়ে হুমড়ি খেয়ে পরলো নিজ নিজ কাজে। শুধু দক্ষিণের কক্ষে মনে মনে পুষে রাখা রাগ অভিমানের সেই নব দম্পতি ও নব হতে যাওয়া মা বাবা পরে রইলো বিছানায়। ঘুমের দেশে। দু’জনেই রাত ভর বসে বসে আপন কার্যভারে মহা ব্যাস্ত হয়ে সুবহে সাদিকের সময় বালিশে মাথা রাখে। অতঃপর ঘুমের দেশে পারি জমায় একে অন্যের ভাবনা ছেড়ে। আধো আলো অন্ধকারে কে কোন দশায় ঘুমালো তার খোঁজ কেউ রাখলো না। সভ্য ঘুমিয়ে পরে সাবিহার একটু আগে। বিছানার মাঝ বরাবর। সাবিহা যখন বালিশে মাথা রাখতে যাবে তখন আর হদিস মেলে না বালিশের। সটান শুয়ে পরলো ঝাঁক ঝাঁক রাগ মনে পুষে। সরল পথে সোজা গিয়ে মাথা পরলো তার সভ্যর বুকের মাঝে। ঘুম হালকা হয়ে যায় সভ্যর। সাবিহা বোঝেনি। বরং তার ইচ্ছে হয়েছিল এই কঠোর জেদি মনের মানুষটার হৃদপিন্ডে কামড় দিয়ে ধরতে। সম্ভব হলে সে এই ভয়ানক কাজটা করতো। নাক মুখ সিটকে সে সভ্যর হৃদপিণ্ড কামড় দিয়ে রক্ত ছুটিয়ে দিয়ে কোমল করে দিতো। এটুকুতেই অবশ্য সাবিহা থেমে থাকে নি। হৃদপিণ্ডে কামড় না দিতে পারলেও সে শক্তপোক্ত এক কামড় জেদ সমেত রাগ নিয়ে সভ্যর গলার মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। সভ্য যখন চমকে তড়াক তড়বড়িয়ে উঠতে যাবে ঠিক সেই সময় সাবিহার শাসিত বাণী
” নড়চড় করলেই এবার আরেকটা কামড় দিয়ে রক্ত বের করে দেবো। চুপচাপ থাকেন। আমি ঘুমাবো।”
অতঃপর সভ্য অসহায়। রাগ পা থেকে মাথায় প্রবাহিত হলেও বলার কিছু নেই। নেই কোনো গতিপথ। সাবিহার ইদুর দাঁতের কসরতে যদি তার গলায় কালসিটে দাগ জমে তো শুটিং বরবাদ। মডেলিং থমকে যাবে। ক্রিকেটের ব্যাট হাতে নিয়ে শার্টের দুই বোতাম খোলা রেখে আর যাওয়া হবে না স্মার্ট হয়ে মাঠে। সব সাবিহার চার দাঁতের ক্ষমতায় থমকে যাবে। ভাবা যায়? দাঁত এতো সাংঘাতিক বস্তু কেন? সভ্যর মনে হচ্ছে এই বস্তু ক্ষুদ্র হলেও এর তাৎপর্য বড্ড বৃহৎ।
.
তন্দ্রা যখন ছুটে পালালো লগ্ন তখন মধ্যাহ্ন। ক্ষুধার্ত ভাবপ্রবনতা মস্তিষ্ক ঠুকরিয়ে সতেজ করলো যেন। সভ্য কপাল কুঁচকে ঈষৎ চোখ খুলল। তাপদাহর কড়া প্রবণতাই জানান দিলো দুপুর বুঝি হয়ে এলো। বড় পল্লব দ্বয়ের ঘড়ি-ঘড়ি নড়চড়ে মডেল তারকাকে দেখতে লাগলো বড্ড বেশি মোহনীয়। শ্যাম শ্যাম বদনে ঘুমের ছিটেফোঁটা লেপ্টে আছে অতি যত্ন সমেত। সাবিহা একবার পরখ করলে বুঝি চকিতে নয়ন দ্বার রুদ্ধ করতো। তার হৃদপিণ্ড আজকাল সইতে পারে না সভ্যর সম্মোহনী দর্শন। বারে বারেই কেবল মনে হয়, বাঁধন হারা হবে হৃদপিণ্ড, অচেতন হবে সাবিহা। সভ্য ঘুমের রাজ্য পেরিয়ে আপন বুকে যখন সাবিহার ঠিকানা পেলো তখন তার দৃষ্টিতে ফুটে উঠলো ক্ষণিক থমকে যাওয়ার আভাস। অলক্ষ্যে জরো হলো বুকে কিছু ভাবনা। সাবিহা আকুল। তাকে সত্যিই ভালোবেসেছে। কিন্তু সভ্য জানে না তার বুকের দগদগে ক্ষত কোন দিন শুকবে। সে ভবেও সব ভুলে সাবিহাকে বলতে পারবে কিনা,
” সাবিহা, আই লাভ হউ উইথ মাই হার্ট ”
এহেন ভাবনা ভাবতে গিয়ে শুধুই আসে বুক চিঁড়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস। মোচড় দিয়ে ওঠে বুকের মাঝে। সভ্য ছেড়ে দিলো ভাবনা। পদার্পণ করলো বাস্তবে। চাইলো সাবিহাকে বুক থেকে নেমে বিছানা ছাড়তে। কিন্তু হঠাৎ বিবেক বাঁধা দিলো। আঁকড়ে ধরা টিশার্ট অসুস্থ এক মেয়ের হাতের কবল হতে ছাড়াতে গিয়ে না আবার ঘুম ভেঙে যায়। থাক ঘুমিয়ে একটু শান্তি কুড়াক। এমনই ভাবনা বুকে চেপে সভ্য পুনরায় বিযুক্ত করলো আঁখি। সাবিহা নিজ হতে চোখ না মেলা অব্ধি সভ্য স্থির থাকবে।
.
সকালের খাবার খেতে হলো সভ্যকে দুপুরে। দু’বেলার খাবার এক বেলাতে। সাবিহাকে লোকমা লোকমা তুলে খাওয়াতে হয়। রাহেলা ইসলাম খাইয়ে দিলেন সভ্যর সম্মুখেই। ফারজানা বেগম চলে গেছেন তার কলেজে। বাড়িতে শুধুই রাহেলা ইসলাম আর রওনক। সভ্য -সাবিহার মাঝে থাকাটা তার একক্ষণে বিপত্তিকর লাগলো। তাই তল্পিতল্পা গুছিয়ে তিনি তৈরি। সাবিহাকে খায়িয়ে দিয়ে হুট করে তিনি সভ্যকে শুধালেন কৌশলে
— সভ্য তোমার ঢাকা যেতে হবে কবে?
— কাল আর পরশু আছি। তারপর যেতে হবে।
— তাহলে আমি একটু দিনাজপুর যাচ্ছি। সাবিহার একটু খেয়াল রেখো। তোমার আঙ্কেল নতুন বাসায় উঠেছে এখনো জিনিসপত্র সেভাবে ঠিক করা হয়নি। ঘর গোছাতে হবে।
একথা বলেই তিনি বিদায় নিয়েছেন। সভ্য ঈষৎ বুঝলো এদের মতিগতি। তবুও মুখে হাসি ঝুলিয়ে নিশ্চুপ রইলো। মন ইতিমধ্যে এও ধারণা করে নিলো যে ফারজানা বেগমও কলেজ শেষে সভ্যকে ফোনে হাক দিয়ে বলবে
” বাপ, ফ্লাটে দুইদিন হলো নেই আমি। রুম গুলোর অবস্থা বোধ হয় ভালো না।৷ তুই তো আছিস সাবিহার কাছে। আমি আর এ’কদিন না যাই।”
ভাবতে গিয়ে সভ্য অসহায়ত্বের সমুদ্রে নিমজ্জিত হলো। তার প্রতিটি কর্ম রুটিন মাফিক। শুটিং চলতি দশায় কোনো রকম হেরফের হওয়া মানা ছিল। সেখানে গত রাতে ঘুম হয়নি। আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতের আজ রাত এবং আগামী রাতেও ঘুম হবে না। সাবিহার ওয়াক্ মুহূর্তে হাজির হতে হবে। বিদ্যুৎ পালিয়ে গেলে হাতপাখা নিয়ে পবনে প্রশান্তি মেলে দিতে হবে সাম্য বা সন্ধ্যার মাম্মা কে।
চলবে….
(