রঙ বেরঙের খেলা পর্ব -বোনাস পর্ব

#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#বোনাস_পার্ট

সেলিব্রিটিরদের জীবন নব নির্মিত পদ্মা সেতুর মতন। যে-ই দেখে সে-ই একবার ধাক্কা মারতে চায়। নাট খুলে হুলস্থুল কান্ড বাজিয়ে দেওয়ার বাসনা মনে লালন করে। এই নাট খোলার মতো বেখাপ্পা চিন্তা ধারা অবশ্য শুধু রিপোর্টাররাই করে থাকে। তবে সব রিপোর্টার আবার একই ঘাটের মাঝি না। রাস্তায় এখন আর পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক কায়দায় চলতে পারে না সভ্য। কেউ পদ্মা সেতুর পুল ভেবে ধাক্কা মারতে আসে, কেউ আসে স্মরণীয় করে ফোন ফ্রেমে বন্দি করতে, কেউ বা আসে নিউজ নিতে। আবার দুচারজন আসে ইমেজ পুলের নাট আগলা করতে। এই জ্বালায় পড়ে সভ্যর অবস্থা যাচ্ছেতাই ছিল দিন কয়েক পূর্বে। এই গত তিন দিন আগে একটা প্রাইভেট কার কিনে রক্ষা। মোটামুটি ধাঁচের তার কার। ত্রিশ লক্ষ দিয়ে কেনা হয়েছে। ফারজানা বেগমই মোটামুটি জোর করে কিনিয়েছেন। সভ্যর কাছে এতো টাকা এখনো হয়ে ওঠেনি। মা-ই কিনে দিলেন। সভ্যর বাবার জমিয়ে রেখে যাওয়া টাকা দিয়ে। ছেলে তো সেলিব্রিটি। একটা প্রাইভেট কার না হলে চলে নাকি! কার কিনে ড্রাইভিং শিখে সভ্য আজ নিজেই ড্রাইভ করে বাসায় ফিরছে। একটা আ্যাসিসটেন্ট লাগবে এখন। কিন্তু সভ্যর রাখার ইচ্ছে নেই। ভাব গতি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে।

.
মাগরিবের আজান হয়েছে। সাবিহার বড় মা, আম্মাহ নামাজ পরতে নিজের ঘরে জায়নামাজ বিছিয়ে হয়তো বসে আছে। ভাইটাও একটু আগে মসজিদে চলে গেলো। বাসা থেকে বেশি দূরে নয় মসজিদ। সাবিহা ড্রয়িং রুমে বসে ছিল। চোখ তার বন্ধ। ঝিমোয় সে ঘুমে। উঠে নিজ ঘরে গিয়ে আরাম করে ঘুমের বন্দবস্ত করার মধ্যেও আছে মহা অলসতা। উঠতে ইচ্ছে করছে না। চোখে প্রায় ঘুম এলো। মাথা ক্রমশ হেলিয়ে পরতেই হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ। টুংটাং আওয়াজ কাঁচা ঘুমটা দমলাম পাকিয়ে উড়িয়ে দিলো হুট করে। সাবিহা চকিতে চোখ মেলল। মৃদু ক্ষুব্ধ না হয়ে পারলো না মন। অসময়ে সবার আগমন। সাবিহা বিরক্তি নিয়ে যখন উঠতে যাবে ঠিক তখনই ফারজানা বেগম এলেন। সাবিহাকে বললেন

— থাক তুমি আমি দরজা খুলছি।

সাবিহা স্বস্তি নিয়ে বসে রইলো। কিন্তু ঘুনাক্ষরেও সে বুঝলো না একটু অলসতা তার বুকের প্রশান্তি কেড়ে নিলো। ওপাশে যে সভ্য দাড়িয়ে আছে তার জন্য অবাকতা নিয়ে। সাবিহার মন খুশি হয়ে যাওয়ার মতো ছোট কিছু নিয়ে। প্রিয়র অনবদ্য মুখটা আর তার কিছু উপহার সাবিহার দেখার ভাগ্য হলো না। ফারজানা বেগম দরজা খুলে দিতেই সভ্য ব্যাসৃত ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকলো। হাতে তার বড়সড় একটা মিষ্টির প্যাকেট। অন্য হাতে আরো একটা ব্যাগ আছে। দু’হাতের বদ্ধতা দূর করতে সভ্য দরজার ওপাশ হতেই মায়ের হাতে ধরিয়ে দিলো ব্যাগ। বলে উঠলো ব্যাস্ত ভঙ্গিতে

— এর মধ্যে ওই টক ঝাল টাইপ কিছু আছে সাবিহাকে দিও। আমি একটু আসছি। একটা ট্রাক আসার আসার কথা আসেনি মনে হয় এখনো।

ফারজানা বেগম ছেলের এমন ব্যাস্ত ভঙ্গি দেখে অবাক হলেন। সভ্যর কথাও তার হৃদয়ঙ্গম হচ্ছে না। তিনি মিষ্টির ব্যাগ হাতে নিয়ে অপর হাতের ব্যাগটার মুখ খুলে উঁকি দেওয়া দশায় বললেন

— কি আছে এই ব্যাগে? আর ট্রাক কেন আসবে? তুই তো ট্রাকের কথা কিছু বলিসনি আমাকে।

সভ্য ব্যাগের কথা এড়িয়ে গিয়ে বলল

— ট্রাকে কিছু জিনিসপত্র আসার কথা। আজকেই হুট করে কিনে ফেললাম। বলার সময় পাইনি মা।

এরপর আর একটা বাক্যও বলার সুযোগ না দিয়ে সভ্য পা বাড়িয়ে চলে গেলো। ফারজানা বেগম বিষ্ময় দমিয়ে পেছন ঘুরলেন। সাবিহা নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। চোখে তার আকাশসম বিস্ময় আর অবিশ্বাস। সভ্য এলো? তার জন্য এসেছে? আবার বলল সাবিহার জন্য কিছু এনেছে? কি এনেছে? সাবিহার অন্তঃপুর ছেয়ে গেলো শুধুই বিস্ময়ে বিস্ময়ে। সভ্যর মা মুচকি হাসলেন। সাবিহার মুখের অভিব্যাক্তি তখন কেমন হবে যখন সভ্যর দেওয়া টক ঝাল মিষ্টির প্যাকেকটা ফারজানা বেগম ধরিয়ে দেবে সাবিহার হাতে? সাবিহা পলিথিন রকমের একটা প্যাকেটের ভেতর দৃষ্টি তাক করে দেখবে সভ্য তার জন্য ফুসকা, চটপটি, তেঁতুলের চাটনি আর রসমালাই দিয়ে টক ঝাল মিষ্টির প্যাকেজ তৈরি করেছে। সাবিহা বুঝি তখন তব্দা লেগে যাবে আশ্চর্যের ঘোরে। চোখের পলক ফেলতে বেমালুম ভুলে যাবে।

আজ যেন সকলের অবাক হওয়ার পালা। সভ্য দমে দমে প্রতি পদক্ষেপে চমকে দিলো সকলকে। সে ঢাকা থেকে ফিরতি পথে ফার্নিচার কিনে এনেছে। তার ঘর পূর্বে ততটা সাজানো গোছানো ছিল না। ফার্নিচার ছিল খুবই কম। সবসময় তো থাকতো মায়ের সাথে তাদের ফ্লাটে৷ সাবিহাদের এখানে প্রয়োজন ছাড়া তেমন যাওয়া আসাও হতো না তাই জাঁকজমক যা করারা তাদের ফ্লাট করা হয়েছে। কিন্তু আজ এ বাড়িতে তার ঘরটা সাজানো হলো স্বপ্নের মতো করে। জানালার পর্দাগুলো পর্যন্ত পাল্টে ফেলা হলো সভ্যর আদেশে। সে নীল রাঙা পর্দা লাগালো। নিজেই বাইরের মানুষদের সাথে ছোটাছুটি করে আসবাবপত্রের স্থান ঠিক করলো। ঘরে তুলল নতুন সোফা, আলমারি, ড্রেসিন, বিছানা, টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানি, ফুল আরো অনেক কিছুই। ঘরের লাইট গুলোতে পর্যন্ত বৈচিত্র্য আনলো। সব যেন তার আগেরই পরিকল্পনা ছিল। গুছিয়ে গুছিয়ে সব ক্রয় করে এনেছে। ফারজানা বেগম ছেলের পরিবর্তন দেখে মুচকি হাসলেন। হাত লাগালেন কাজে। ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি বিদায় হওয়ার পর সে ঘর ঝাড়ু দিয়ে বিছানা পত্র সুন্দর করে গুছিয়ে দিলেন। ফার্নিচার মুছে পরিষ্কার করে দদিলেন। সভ্য পোশাক না পাল্টেই, বিশ্রাম না নিয়েই মায়ের সাথে কাজে লেগে পরেছে। ক্লান্তি তার চোখ মুখ ভরা। তবুও জানালার পর্দা লাগালো, ফুলদানিতে ফুল নিয়ে এখানে ওখানে রাখলো। তারপর আবার বহু কষ্টে খুঁত খুঁত করা মন নিয়ে একটা জায়গায় স্থির করলো। দেওয়ালে কিন্তু পেইন্টিং ঝুলিয়ে দিলো ফুলের। এসব করা কালে মাকে ডেকে বারবার জিজ্ঞেস করলো

” মা এখানে কি মানিয়েছে? সুন্দর লাগছে কি?”

ফারজানা বেগম ছেলের কথায় কটমট দৃষ্টি তাক করেছেন। কখনোবা সাঁই জানিয়েছেন। কখনো বা বিরক্ত হয়েছেন। এভাবেই মা ছেলে ঘর পরিপাটি করলো। রাত এগারোটা বেজে গেলো তাদের কর্ম সম্পাদন হতে হতে। সাবিহা ভয়ে বা সঙ্কোচে কাছে যায়নি। রাহেলা ইসলাম পরে আছে রান্নাঘরে। জামাইয়ের জন্য রান্না করছেন তিনি।

সভ্য ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গেলো গেলো প্রায় রাত বারোটায়। সাবিহাও ছিল তখন। যথারীতি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই সভ্য খাবার টেবিলে বসেছিল। রাহেলা ইসলাম প্লেটে খাবার সাজিয়ে দিলেন। সভ্য এক লোকমা ভাত মুখে নেওয়ার আগ মুহূর্তে হঠাৎ থেমে যায়। হুট করে তার মনে হলো যাদের জন্য আজ এখনই ক্লান্ত শরীর নিয়ে এতো কিছু করলো তাদের বলা উচিত। ভাবনা অনুযায়ী সভ্য পূর্বের রাগ দুঃখ দমিয়ে রেখে সাবিহার পানে চেয়ে এক চিলতে হেঁসে বলল

— আজ থেকে আমার ঘরে উঠে যেও। ঘর গুছিয়ে দিয়েছি। ছোট মা মেয়ের কাপড় চোপড় গুছিয়ে দিয়ে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েন।

চলবে……..

( ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here