#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#পর্ব_১৮
গাড়ি চলছে এরশাদের নির্দেশ মতো। সে সভ্যর এসিস্টেন্ট হিসেবে নিয়গ প্রাপ্ত। বয়সে সভ্যর মতোই। এরশাদকে খুঁজে, বাজিয়ে অবশ্য পাঁচ দিন আগে নিয়োগ দিয়েছে সুষ্মিতা। শুধু সভ্যর জন্য নয় দিঠি, নয়ন, তন্ময়ের সাথেও সৌহার্দ্য পূর্ণ সম্পর্ক থাকায় তাঁদেরও এসিস্টেন্ট নির্বাচন করেছে সুষ্মিতা। বড্ড বেশি ভালো সম্পর্ক এই পাঁচ জনের। ভিন্ন ভিন্ন চারটা এসিস্টেন্ট খোঁজা তার জন্য আহামরি কিছু ছিল না। বরং বড্ড নগণ্য কাজই ছিল।
— ডিনার করেছো?
গাড়ির পেছনে ল্যাপটপের স্ক্রিনের পানে তাকিয়ে সভ্য ঈষৎ থতমত ভাব নিয়ে শুধালো সাবিহাকে। ওপাশে ভিডিও কলে থাকা সাবিহাও হতবুদ্ধি হয়ে বলল
— মাত্র সাড়ে সাতটা বাজে।
— ওহ, হ্যা। কিছু বলবে?
অপ্রস্তুত ভাব ঢেকে দিতে সভ্য প্রশ্ন করলো সাবিহাকে। সাবিহা হঠাৎই লাজে মুষড়ে পরলো যেন। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো মৃদু লাজুক হাসি। কিছু বলবে মানে ভয়ংকর আনন্দের একটা কথা সে সভ্যকে বলবে। এজন্যই তো ফোন করা।
— আজ হসপিটালে গিয়েছিলাম।
— হুম, ডাক্তার কি বলল? কি বাচ্চা?
সাবিহার গলা শুকিয়ে আসছে অত্যধিক খুশির দরুন। কথা আসতে কোথাও বাঁধা পাচ্ছে যেন।
— টুইন বেবির কথা বলেছে। সাম্য-সন্ধ্যা দু’জন আসবে।
বেশ সময় নিয়ে বলে উঠলো সাবিহা। সভ্য থমকে গেলো হঠাৎ। অতঃপর ভাব তার বড্ড অদ্ভুত হলো। কেমন গোপন এক আনন্দ অজান্তে ক্রমে ক্রমে জড়িয়ে নিলো তাকে। সভ্য স্থির তাকিয়ে রইলো প্রায় মিনিট দুয়েক সাবিহার পানে। সাবিহা সভ্যর অভিব্যাক্তি দেখার অপেক্ষায়। সভ্য মৃদুস্বরে হঠাৎ বলে উঠলো
— অভিনন্দন সন্ধ্যার মা’কে।
— অভিনন্দন সাম্যর বাবাকে।
প্রাণোচ্ছল, সজিব হাসিতে ঠোঁট রাঙিয়ে বলে উঠলো সাবিহা। চোখের কোণে আচমকা জমেছে পানি। অনিমেষ সে চেয়ে রইলো সভ্যর পানে। সভ্যর দৃষ্টিতেও সাবিহা স্থির। এভাবে এক সেকেন্ড, দু সেকেন্ড গড়িয়ে যেতে যেতে হঠাৎ সেকেন্ড দশেক পর সাবিহা মাথা নিচু করে জলযুক্ত চোখে হেঁসে উঠলো। আনন্দের হাসি। আচমকাই হাসি। সভ্যও হাসলো। যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গেলো গোপন কিছু। এ-মন ও-মন হুট করে ঘুচিয়ে ফেলছে দূরত্ব। এটা হলো কাছাকাছি আসার রহস্য সভ্যর অজান্তেই। যার রচয়িতা হলো সাম্য-সন্ধ্যা দু’জনে।
— স্যার এসে পরেছি আমরা।
এরশাদের কন্ঠ। সভ্য ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি তুলে তাক করলো এরশাদের পানে। সে দাড়িয়ে আছে বাইরে। সভ্য বরাবর গাড়ির কাছে। গাড়ি এসে পৌঁছেছে এক বাংলো বাড়িতে। ঝকমক ঝকমক করছে লাল, নীল, সবুজ বাতির বাহারী আলোতে। সভ্য বুঝলো এখানেই হয়তো সুষ্মিতা পার্টির ব্যাবস্থা করেছে। জন্মদিনের পার্টি।
— পরে কথা হবে। টেক কেয়ার।
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সভ্য বলল। সাবিহা মাথা দুলিয়ে সাঁই জানিয়ে বিচ্ছিন্ন করলো সংযোগ। সভ্য কান থেকে ব্লুটুথ নামিয়ে নিয়ে ল্যাপটপ সাড ডাউন দিয়ে নেমে পরলো গাড়ি হতে। এরশাদ গাড়ি পার্ক করার জন্য আবার উঠে পরলো গাড়িতে। তার পূর্বে সভ্যর পানে তাকিয়ে বলল
— স্যার মিরর লাগবে? আপনি কি ক্লোথ চেঞ্জ করতে চান? ব্লেজার নিবেন? গাড়িতে সব আছে।
সভ্য বরাবরই সব কিছু নাকচ করলো। লাগবে না। তার পরনে আছে হাতা গুটিয়ে রাখা আকাশ বর্ণ শার্ট। খোলা বোতামের ভেতর গায়ে জড়ানো অফ হোয়াইট টিশার্ট। এটাই তার নিজস্ব মডেল। অফ হোয়াইট রঙের জিন্সের সাথে পায়ে আছে কালচে ছাই রাঙা কেডস। নিত্য দিনের মতো মাথার জমকালো ঝলমল চুলগুলো ঈষৎ দাড়িয়ে আছে। বড্ড বেশি মোহনীয় হয়ে গেছে আজ হুট করে। স্মার্টনেস আজ যেন প্রতিদিনের তুলনায় আরো এক ধাপ বেড়ে গেছে।
— ও মাই গড! ভাইয়া এইটা আপনি কি করছেন। আজ তো আশপাশের হসপিটাল ভর্তি হয়ে যাবে। এমনেই যে হাসি দেন। তারউপর আজকে বেশি সুন্দর লাগছে বলেন তো আপনার স্মার্টনেসের রহস্য কি?
সভ্য পা বাড়িয়েছিল সামনের দিকে। আচমকা দিঠি এসে পাশে দাড়িয়ে গড়গড় করে বলে উঠলো এহেন কথা। সভ্য অধো দৃষ্টিতে হাসলো। পাশে ছিল নয়ন, তন্ময়ও। মাত্র তারাও এলো। নয়নের পরনে কালো পাঞ্জাবি। অতিরিক্ত সুদর্শন ছেলেটা বুঝি আজ আরো সুদর্শন হওয়ার যুদ্ধ করেছে। সভ্য আড় চোখে পরখ করে গোপনে একটু হাসলো। ছেলেটার হাবভাব অনেকটা সভ্যর কাছে এটাই প্রমাণ করে যে নায়ন সুষ্মিতার সমুদ্রে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে। লুকিয়ে, অগোচরে সুষ্মিতার প্রেমে পরেছে।
.
বলার অপেক্ষায় থাকে না মডেল তারকা, হিরো, হিরোইনদের জন্মদিনের পার্টি কতটা জাঁকজমকপূর্ণ হয়। চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া সৌন্দর্যে মুড়িয়ে ফেলা হয় ফাংশনকে। সুষ্মিতা আজ জড়িয়ে গেছে শাড়িতে। প্রসাধনী গহনা তার গায়ে খুব কমই দেখা যাচ্ছে। শুধু লাগছে তাকে অত্যন্ত মিষ্টি এক মেয়ে। যার ঠোঁটের মুচকি হাসিতে মনে দোলা দেয় অদ্ভুত কিছু। বারংবারই মনে হয় ” মেয়েটা চমৎকার” সুষ্মিতার জন্মদিনের উপহার হিসেবে সভ্য এনেছে একটা ফুলের তোরা। এরশাদ একটু আগেই তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলো। একশো একটা লাল গোলাপের তৈরি। এই একশো একটা গোলাপের মাঝে কিছু সাদা গোলাপ দিয়ে লেখা আছে “শুভ জন্মদিন”। বিশাল বড় হল রুমের ন্যায় ঘরটায় গুচ্ছ গুচ্ছ মানুষ। কিছু চেয়ারের ব্যাবস্থা আছে। গেস্টের পরিমাণ আর রিপোর্টারের পরিমাণ প্রায় সমানই হবে। সভ্য শঙ্কা নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সুষ্মিতার দিকে। আতঙ্কিত সে রিপোর্টারের কবলে পরা নিয়ে। মিনিটের মধ্যে শ্বাস প্রশ্বাস টানার ব্যাবস্থা যেন ওরা প্রশ্নের দরুন বন্ধ করে দেয়। সুষ্মিতা কথা বলছিলো জার্নালিস্টের সাথেই। সুষ্মিতার বাবা অনুপস্থিত। এ নিয়েই টুকিটাকি কথা। তিনি আউটডোর শুটিংয়ের জন্য হিরো হিরোইন নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থানরত। এছাড়াও সুষ্মিতা আর সভ্যর নাটক, টিভিসি নিয়ে কথা। বর্তামানের থিয়েটার তো শেষ, নতুন থিয়েটার কবে আসবে, পরবর্তী থিয়েটার কি সুষ্মিতা সভ্যর সাথেই করবে? তারা সিনেমায় যুক্ত হবে আর কতদিন পর আরো হরেক রকম প্রশ্ন। সভ্য এগিয়ে যেতেই আচমকা হুড়মুড় করে এগিয়ে এলো সভ্যর দিকে। এবার সভ্যর পালা। শুকনো একটা ঢোক গিলল সভ্য। সুষ্মিতার পানে অসহায় দৃষ্টিও স্থাপন করলো। এসব সামলে ওঠার অভিজ্ঞতা তার চারমাসে ততটা হয়নি। বারংবার সুষ্মিতা বাঁচিয়ে দিয়েছে নয়তো তন্ময়। সভ্যর শুধু হাশফাশ লাগে। কিন্তু আজ কেউ এগিয়ে আসছে না। এরশাদকেও কাছে কুলে দেখা গেলো না। অগত্যা সভ্যই ইন্টারভিউ দিলো অনেক সময় ধরে। এরমাঝে সুষ্মিতার হাতে ধরিয়ে দিলো ফুলের তোরাটা। ক্যামেরার সম্মুখেই সাবলীল ভাবে শুভেচ্ছা জানালো। সুষ্মিতা লাজুক হাসলো। অতঃপর হুট করে শুরু হলো ফুলের বর্ষণ। দৌড়ে এলো কিছু মেয়ে। হাত তাদের ফুলের পাপড়ি। গোলাপ, গাধার পাপড়ি। সভ্য ঈষৎ অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। হলো কি সবার? এতো আয়োজন কি অস্বাভাবিক নয়? চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ নজর করতেই সভ্যর শঙ্কিত হলো। ক্যামেরা ম্যানের ক্যামেরা সোজাসাপটা তাকে ঘিরে। রিপোর্টের কলম চলে দ্রুত গতিতে। তার আশপাশ ফাঁকা হচ্ছে ক্রমশ। যেন শুটিং শুরু হবে। চোখের পলকে এমন পরিবর্তন দেখে সভ্যর চোখে মুখে পরলো কৌতুহলের ছাপ।
— ভালোবাসি আপনাকে। হয়তোবা একটুখানি, তবে তা অফুরন্ত। হয়তোবা আপনার কাছে তা হবে তুচ্ছ তবে আপনিটাই আমার সবচেয়ে দামি। আমি বাড়িয়ে দিলাম হাতটা, ধরবেন না আপনি?
সুষ্মিতার গভীর চোখের বড্ড মায়াবী কন্ঠ। সভ্যর বুকটা ধ্বক করে উঠলো। তড়িৎ গতিতে সে চাইলো সুষ্মিতার পানে। দিশেহারা হলো তার মন মস্তিষ্ক। সুষ্মিতা তার সুন্দর, কোমল হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে সভ্যর পানে। সভ্যর অস্বস্তিতে মর মর দশা হলো। বুকে ক্রমাগত পিটিয়ে যাচ্ছে কেউ ঢোল তবলা। প্রত্যেকটা মানুষ নিশ্চুপ। লাইভে চলে গেছে ইতিমধ্যে অনেকে। সুষ্মিতা সভ্য হতে কোনো জবাবা না পেয়ে পুনরায় বলে উঠলো
— খুব কি অন্যায় হবে? আমার হাতটা এক সিকি ভালোবাসা দিয়ে ধরলে? আমি বিনিময়ে একশো আকাশসম ভালোবাসা দিবো।
#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#বোনাস_পার্ট
— খুব কি অন্যায় হবে? আমার হাতটা এক সিকি ভালোবাসা দিয়ে ধরলে? আমি বিনিময়ে একশো আকাশসম ভালোবাসা দিবো।
— আমার হাত অন্য কারো জন্য বরাদ্দ
সভ্য শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে ধুপ করে বলে উঠলো কথাটা। সুষ্মিতার আকুলতা বেড়ে তুঙ্গে। সে হাত নামায়নি। বরং সভ্যর ঘন ঘন পল্লবের নড়চড়ে যেন সে ফেঁসে গেলো দারুণ ভাবে। বলে উঠলো আশ্বাস দিয়ে
— আমি আপনার জন্য সব করবো। আমি যে ভালোবাসি প্রিয়।
সভ্যর হাশফাশ দশা। যেন থমকে আসছে নিশ্বাস। সে অজান্তেই হুট করে চাইলো ডানে। নয়নের দিকে। নয়ন আহত দৃষ্টিতে পলকহীন দেখছে সুষ্মিতাকে। যেন তার বুকের জখম চোখে ভাসছে। সভ্য চোখ ফিরিয়ে নিলো। সুষ্মিতার পানে চেয়ে হঠাৎই গভীর কন্ঠে বলল
— সুষ্মিতা, আমায় বাষ্প করে উড়িয়ে দিও। ধোঁয়াশার চাদরে মুড়িয়ে ফেলো। যে তোমার হাতটা জন্য হাত রেখেছে বাড়িয়ে, তার হাতটা শক্ত করে ধরো। বারংবার এটা বলে লজ্জা দিও না “ভালোবাসি প্রিয়”
কথাটা বলেই সভ্য আচমকা পাশ থেকে টান দিয়ে নায়নকে কাছে আনলো। নয়নের ডান হাতটা সুষ্মিতার বাড়িয়ে দেওয়া হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
— আমি অন্য কারো। তুমি এই হাতটাই শক্ত করে ধরো।
তারপর এক মুচকি হাসি সভ্যর। সুষ্মিতার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। সভ্যর তুমি সম্বোধনে বুকে শুরু হয়েছে নতুন ঝড়। চোখে নেমে গেছে জল। ওষ্ঠ আর অধরের মাঝে ক্রমেই বাড়ছে দূরত্ব। সভ্য আর ফিরে চাইছে না। সে হাঁটতে লাগলো সম্মুখপানে। মুহূর্তেই ঘিরে ধরলো রিপোর্টার তাকে। হাজারো প্রশ্ন। সুষ্মিতা অনিমেষ তাকিয়ে আছে। বুকটা কলিজা ছিদ্র করে সেখানে যেন লবণ ছিটানো হচ্ছে। নয়ন শক্ত করে যে তার হাতটা ধরেছে সে বার্তা যেন তার মস্তিষ্কে এখনো পৌঁছায়নি। এরই মাঝে কানে বেজে উঠলো সভ্যর একটা কথা। সভ্য রিপোর্টের এক প্রশ্নের জবাবে বলছে
— মডেল সাবিহা সুলতানা আমার ওয়াইফ। পারিবারিক ভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে। এবং আমরা মা বাবা হতে চলেছি। দোয়া করবেন।
একথা সুষ্মিতার কর্ণপাত হতেই সে যেন হারিয়ে ফেলল দেহের শক্তি। কিয়ৎক্ষণ যেন জ্ঞানে ধ্যানে কিছু ধরলো না। তারপরই হঠাৎ নতুন উদ্দমে জেগে উঠলো যন্ত্রণা। বুকে অসহ্য জ্বালা। আস্ত এক অগ্নিকুণ্ড বুকে উদয় হলো। চোখ বেয়ে দ্রুত গতিতে গড়িয়ে পরা জল নিয়ে সুষ্মিতা হঠাৎই ডুকরে কেঁদে বলে উঠলো
— আমি লক্ষ কোটি বার বলবো” ভালোবাসি প্রিয়”। তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা আমি সযত্নে বুকে পুষে রাখবো। আমি মুহূর্তের জন্য তোমাকে ভুলতে চাই না। রাত বিরাতে যখন তখন আমি বলবো, ভালোবাসি প্রিয়, ভালোবাসি প্রিয়, ভালোবাসি প্রিয়….
চিৎকার নয়, বেশ নমনীয় কন্ঠ সুষ্মিতার। সভ্যর কানে পৌছালো সেই কন্ঠ। আবারও একটু হওয়া শোরগোল থমকে গেলো। সকলে স্তব্ধ হলো। সভ্য একনজর সুষ্মিতাকে পরখ করেই হাঁটা দিলো। হুট করে মনে জায়গা নিলো একটুকরো বিষাদ। সুষ্মিতা এবার পাগল প্রায় হয়ে গেলো। সভ্য চলে যাচ্ছে। তার ভালোবাসার মানুষটা চলে যাচ্ছে। সে তার হবে না। কখনো না। কেমন এক অসহ্য যন্ত্রণা থেকে সুষ্মিতা হঠাৎ কাল পরিস্থিতি ভুলে দৌড়ে সভ্যর কাছে যেতে চাইলো। আঁকড়ে ধরতে চাইলো পেছন থেকে সভ্যকে। কিন্তু এক পা ফেলতে না ফেলতেই টান পরলো হাতে। সুষ্মিতার খেয়ালে মাত্র এলো নয়ন তার হাতে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে। বুকের দহনের সাথে বিষ্ময়কর এক দৃষ্টি নিয়ে সে নয়নের পানে চাইতেই কানে বেজে উঠলো
— ভালোবাসি প্রিয়।
নয়নের একপাক্ষিক ভালোবাসা থেকে আহবান। সুষ্মিতার হুট করে চড়াও হলো মাথা। সে হাত মুচড়িয়ে নিজেকে মুক্ত করে ছুটে যেতে চাইলো সভ্যর কাছে। কিন্তু অল্পে অল্পে হাতের বাঁধন শক্ত করলো নয়ন। সুষ্মিতা রাগে দুঃখে আচমকা চিৎকার করে সভ্যর উদ্দেশ্যে বলল
— আমি মধু ভেবে বিষ পান করেছি। আপনি আমার মধু নন, আপনি আমার বিষ।
ভেজা দুখানা আঁখিতে বড বেশি দুঃখী লাগলো সুষ্মিতাকে। সভ্য ফিরে না চেয়ে যথাসম্ভব দ্রুত পায়ে প্রস্তান করছে। তার অপরাধ বোধ হচ্ছে। বড্ড বেশি খারাপ লাগছে সুষ্মিতার জন্য। এমনটা কেন হয়? সবাই ভুল মানুষকে কেন ভালোবাসে ?সুষ্মিতা তো পারতো সভ্যকে ভালো না বেসে নয়নকে ভালোবাসতে? খামোখা তার উপর কেন প্রেমে পরলো? নয়ন তো অনেক বেশি ফর্সা, অনেক বেশি ধনাঢ্য। কে জানে আজ সুষ্মিতার এই আনন্দের রাত কতটা বিষাদে মুড়িয়ে যাবে। ভাবনা শেষে সভ্য দীর্ঘ এক নিশ্বাস বুকের মধ্য হতে মুক্তি দিলো।
.
গাড়ি আবারও চলছে দ্রুত গতিতে। সভ্য আঁধারের পানে তাকিয়ে বসে আছে বিষন্ন হয়ে। এরশাদ চুপটি করে চালিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। সভ্য কোথায় যাবে, কি করবে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ইতিমধ্যে মিডিয়ায় রমরমা সভ্য-সুষ্মিতার কাহিনী। সভ্যর পাশে সিটের উপর পরে আছে তার ফোন। লাইভ চলছেই চলছে। সভ্য জানালা থেকে চোখ সরিয়ে এবার সিটে হালকা পিঠ ঠেকিয়ে দিলো। বন্ধ করলো চোখ। মনোনিবেশ করলো ফোনে ক্রমাগত কথা বলে যাওয়া এক যুবকের কন্ঠের দিকে। অপমানিত হয়নি সুষ্মিতা। অপমান করা হচ্ছেও না সভ্যকে। সকলে ‘পা পিছলে গেছে ভুলে’ এমন কাহিনী নিয়ে মত্ত। আলোচনা করছে। আফসোস করছে। এরই মাঝে হয়তো আবার কিছু জন হেনস্তাও করছে সুষ্মিতাকে বা সভ্যকে। তবে প্রশ্ন যেটা বেশি উঠছে তা হলো সভ্যর বিয়ে নিয়ে। সভ্য বিবাহিত কিন্তু একথা গোপন কেন? এবিষয়ে নিশ্চয়ই সভ্যকে খামচে ধরবে মিডিয়া। সভ্যর রাগ হলো এই প্রশ্ন তোলা মানবদের ওপর । মাত্র চার মাস চলে তার মিডিয়া জগতে। তার তো ঢাক ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানানোর কথাও না সে বিবাহিত। কেউ খামোখা উজিয়ে, যেচে গিয়ে কাউকে বলবে? “আমি বিবাহিত, বিয়ে করেছি”। বড্ড আজব লাগলো বিষয়টা সভ্যর কাছে। এর বাইরে সভ্য প্রেস মিডিয়ায় পা ফেলার বাসনা আজন্মেও করেনি। সাবিহার সাথে জেদ হলো তাই তো তার মিডিয়ায় আসা।
চলবে….
( সাবিহার রিয়্যাকশন কালকে দেইখেন। সভ্যর গলায় কাপড় ঝুলিয়ে দেবেনি)
চলবে…….
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন )