রুপালির রূপ
সাইয়্যেদাতুন নেছা আফনান
পর্ব:১২ (ধামাকা পর্ব)
সবুজ শাড়ী সাথে সবুজ হিজাব পরে বাসা থেকে বের হয় রুপালি। গেট অতিক্রম করতেই সামনে নাহিদ এসে দাঁড়ায়। অপরিচিত কাউকে সামনে দেখে হকচকিয়ে যায়। নাহিদ বলে,
-রুপালি, কেমন আছো?
– আপনি কে?
নাহিদ হাসে। বলে,
– হোয়াটসঅ্যাপ যাকে ব্লকে রেখেছো সে।
– আজব লোক আপনি, আমি আপনাকে চিনি না, পথ ছাড়ুন।
রাদ এসেছে রুপালিকে নেয়ার জন্য। এসে অপরিচিত ছেলের সাথে রুপালিকে কথা বলতে দেখে ভ্রু-কুঁচকায়। দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে এসে বলে,
– রূপ কোনো সমস্যা? দাঁড়িয়ে আছো কেন?
– দেখুন তো, এই নাছোড়বান্দ কি বলছে?
রাদ নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কে আপনি ভাই? আমার ওয়াইফের সাথে আপনার কি এমন কথা?
নাহিদ এবং রুপালি দু’জনই চমকে তাকায়। রুপালি নিজেকে সামলে নিলেও নাহিদ যেন নিজেকে সামলাতে পারছে না! বলে,
– আপনার ওয়াইফ মানে? কি বলছে এসব? রূপ ও কি বলছে?
রাদ এমন যেন বিরক্ত হচ্ছে। রুপালিকে রূপ বলায় যেন বিরক্তিটা আরো বাড়ছে। রুপালির দিকে তাকিয়ে রুপালির ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে হাতের পিঠে চুমু এঁকে বলে,
– রূপ চলো।
রুপালির পুরো শরীর যেন বরফ হয়ে গিয়েছে। অবশ শরীরটাকে টেনে নিয়ে যায় রাদ। নাহিদ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। নাহিদ হেলে পরে রাস্তায়।
রাদ রুপালিকে নিয়ে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। পিছনে ফিরে দেখেনি আর। রুপালি রাদের কান্ডে এখনো থম মেরে আছে। তবে এবার বলে,
– এই আপনি ওনাকে বললেন কেন আমি আপনার ওয়াইফ?
– তাহলে আপনি আমার কে? আমাকে এত বিশ্বাস কেন করলেন? কেন আমার উপহার পরে আমার সাথে গাড়িতে বসলেন?
– এহ! এখনো ওয়াইফ হই নি। এখনো হবু হয়ে আছি।
– তো?
– কতজন হবু থেকে পিছিয়ে যায়! তাই এত আগ না বাড়ানোই ভালো।
রুপালি খোঁচা মেরে কথাটা বলে মিটমিটিয়ে হাসে। তবে রাদ ফুঁসে ওঠে। ফোন দেয় নিজের বন্ধুমহলে সাথে পিয়াসাকেও। সেদিনের পর পিয়াসা নিজেই রাদের কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে গিয়েছে। শালি হিসেবে আবদার রেখেছে যাতে বিয়ের সময় সাক্ষী বানায় তাকে। তাই ফোন দেয়া। পাশে বসে অবাক হয়ে দেখছে রুপালি। রাদকে বলে,
– সবাইকে কাজি অফিসে আসতে বললেন কেন? আমি মজা করে বলেছি।
– কেন আপনি চান না আমাদের হবু নামটা কেটে যাক?
– চাই বলেই তো রাজি হয়েছি।
– তাহলে আজই কাটবে, নাহয় আপনার কথা অনুযায়ী পিছিয়ে যাবো।
রুপালি হা করে তাকিয়ে আছে। এই লোকটা রাগলে মাথা ঠিক থাকে না। রুপালিও কথা না বলে চুপ করে থাকে।
রাদ গাড়ি পার্ক করায় কাজি অফিসের সামনে। গাড়ি থেকে নেমেই ফাহিমকে দেখে অবাক হয় রুপালি। সাথে লজ্জাও পায়।
————
হানিফ সওদাগরের একমাত্র কন্যা রুপালি মানহাকে নগদ ১০,০০০০ টাকা মোহরানা বাবদ রাহুল শেখের একমাত্র পুত্র রাদ শেখ গ্রহণ করিতেছেন, রাজি থাকলে বলুন কবুল। রাদ কাজির আগেই তিন কবুল বলে ফেলে। এবার রুপালিকেও কবুল বলতে বলা হয়, ফাহিম এগিয়ে এসে রুপালির একহাতে ধরে আশ্বাস দেয়। রুপালি ধীরে ধীরে কবুল বলে। রাদ রুপালির দিকে তাকিয়ে কপালে চুম্বন করে। রাদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। পকেট থেকে ১০,০০০০ টাকার খাম বের করে রুপালির হাতে দিয়ে বলে,
– যেদিন থেকে বালেগ হলাম। সেদিন থেকে টিফিনের টাকাসহ রোজগায়ের টাকা জমিয়ে মোহরানার টাকা জমা করেছি। তোমার অধিকার তোমার হাতে দিলাম রূপ।
রুপালি অবাক চোখে তাকায়। শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে যায়।
কাজি অফিস থেকে বের হয়ে রেস্টুরেন্টে যায়। রাদ সবাইকে ট্রিট দেয়।
খাওয়া শেষে সবাই চলে যায়। তবে রুপালিকে নিয়ে রাদ বের হয়। ফাহিমকে বলে বিকেলে রুপালি বাসায় যাবে। ততক্ষণ নিজের কাছে রাখতে চায়। ফাহিমও বাঁধা দেয় না।
———
ফাহিম ফুটপাতে হাঁটছে আর ভাবছে এরকম স্বপ্ন তো তারও ছিল। মোহনার ইচ্ছায় সেদিন পূরণও হয়েছিল তবে মোহনার ধোঁকাতেই আবার সব শেষ!
হঠাৎ ফাহিম খেয়াল করে ওর পিছনে একটা মেয়ে অনেকক্ষণ যাবত ফলো করছে।ফাহিম আচমকা পিছন ঘুরে ফেলে। মেয়েটা দৌড়ে পালাতে চাইলে ফাহিম ধরে ফেলে। মুখের মাক্সটা টান দিয়ে খুলে ফেলে বলে,
– আফরা তুমি! পিছন থেকে পালাচ্ছিলে কেন?
– ফাহিম ভাই, তুমি এখনো ওই মোহনাকে ভালোবাসো?
– বাসলে তোমার কি?
– আমাকে ভালোবাসা যায় না?
– হ্যাঁ অবশ্যই, তুমি যেমন ভাইয়ের মতো ভালোবাসো আমিও তেমন বোনের মতো ভালোবাসতেই পারি।
– ধ্যাঁত, তোমাকে আমি ভাইয়ের মতো ভালোবাসি কে বললো?
– এই যে একটু আগে তুমিই তো ফাহিম ভাই বলে ডাকলে।
– আমি সিরিয়াস।
– তুমি কি চাচ্চুকে মানাতে পারবে?
– অবশ্যই পারবো।
– চল তাহলে বাসায় যাই।
– কেন?
– আজব! আমার বাবা-মায়ের বউমা হবি, তাদের একটা পছন্দ-অপছন্দের ব্যপার আছে না?
———–
রাদ রুপালিকে নিয়ে একটা স্বর্ণের দোকানে আসে। নাকফুল কিনে রুপালিকে পরিয়ে দেয়। আয়নার সামনে এনে রাদ রুপালিকে বলে,
“বলো তো আয়না তুমি কি দেখছো?
নিজেই আবার বলে,
” রাদের অপরূপা প্রিয়তমাকে দেখছো নিশ্চই?
“পলক ফেলো, এ আমার সম্পত্তি।”
রাদের কথা শুনে রুপালি লজ্জায় মাথা নত করে।
রাদ হাসে। বিল পে করে বের হয়ে আসে। বাইরে এসেই দেখে ফুলের ক্রাউন। একটা কিনে রুপালির মাথায় দিয়ে দেয়। গাড়িতে বসিয়ে স্টার্ট দেয় গাড়ি। ঢাকার রাস্তা ছাড়িয়ে গ্রামীণ রাস্তায় আসে। রুপালি কিছুই বলে না। আর বলবেই বা কেন? নিজের প্রিয় মানুষ বলে কথা!
———-
হানিফ সওদাগর ড্রয়িং রুমে বসে মিটিং করছিলেন অফিসের। কলিংবেলের শব্দে মিসেস রেহানা এসে দরজা খুলে দেখেন ফাহিম এবং আফরা একসাথে দাঁড়িয়ে। মিসেস রেহানা হা হয়ে তাকিয়ে থাকেন। এই দু’জনকে একসাথে দেখা যাবে তিনি কল্পনাও করেন নি। ফাহিম সবসময়ই আফরার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতো। আফরাও তেমন উচ্ছৃঙ্খল বা বেহায়াপনা করতো না। তবে আফরা নিজের অনুভূতিটা প্রদর্শন করতো।
আফরা চাচিকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কেমন আছো আম্মু?
আফরা ছোটবেলা থেকেই মিসেস রেহানাকে আম্মু ডাকে।
– ভালো, তুই? আছিস না কেন এখন আর?
– আলহামদুলিল্লাহ, সময় পাই না আম্মু।
-আয় ভিতরে আয়।
ফাহিম সোফায় এসে বসে। হানিফ সওদাগরের মিটিং শেষ। ল্যাপটপ অফ করে ফাহিমকে বলে,
– কে এসেছে?
– আফরা এসেছে।
হানিফ সওদাগর হাসেন। ডাকেন,
– আম্মাজান কোথায়? আব্বুকে ভুলে গিয়েছন একদম।
ফাহিম শ্বাস নেয়। অপ্রস্তুত কন্ঠে বলে,
– আব্বু, আফরাকে বাড়ির বউ হিসেবে কেমন হয়?
– হ্যাঁ ভালোই। কি বললে তুমি?
হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করে হানিফ সওদাগর। ফাহিম বলে,
– আফরা বললো চাচ্চুকে ম্যানেজ করতে পারবে। তাছাড়া আফরার মতো আমাকে কেউ বুঝবে না,ভালোবাসবে না। সব জেনেশুনে ও একমাত্র মেয়ে যে কীনা আমাকে কখনো কষ্ট দিবে না আশাকরি।
-নিজের স্বার্থের জন্য আফরাকে ব্যবহার করবে?
– আফরা সব জেনে শুনে যেহেতু আসতে চায় সেখানে একটু ভালো থাকার চেষ্টা করছি।
হানিফ সওদাগর বললেন,
– ভাই রাজি হবে?
– সে জানি না।
আফরা এবং মিসেস রেহানা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। সবটাই শুনেছেন তিনি। মিসেস রেহানারও আপত্তি নেই এসবে।
———–
-রুপালি হিজাবটা খুলে ফেলো না। খোলা চুলে শাড়ী পরিহিতা রূপকে কেমন লাগে একটু দেখি!
রুপালি হিজাব পিনগুলো খুলতে খুলতে বলে,
– এখানে আসলাম কেন?
– কেন তোমার ভালো লাগছে না?
– লাগছে, তবে অপরিচিত জায়গায় ভয় লাগছে।
– কাকে ভয় করছো আমাকে?
হেসে ফেলে রাদ। লজ্জায় আষ্টেপৃষ্টে হয়ে রুপালি বলে,
– আরে…. ধুর।
রাদ হেসে বলে,
– এই জায়গাটা আমি আমার টাকায় কিনেছি। ইচ্ছা আছে এখানে একটা বাড়ি করবো। বাড়ি করার টাকাও জমিয়েছি তবে করি নি।
– কেন করেন নি?
– আমার প্রিয়তমার পছন্দে হবে এই বাড়ি। রূপ তোমার কি পছন্দ হয়েছে?
উচ্ছ্বসিত হয় রুপালি। খুশিতে চারপাশ ঘুরে বলে,
– সত্যিই জায়গাটা সুন্দর। আসলে আপনি পুরোটাই সুন্দর।
রাদ ঘোর লাগা চোখে রুপালির দিকে তাকায়। এগিয়ে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে। নাকে নাক ঘষে বলে,
– রূপ, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার জীবনের প্রতিটা দিন তোমার রঙে রাঙাতে চাই। আমার জীবনটা তোমার হাতে তুলে দিলাম। ভালোবেসে আগলে নিতে জানলে এই রাদের প্রতিটা নিঃশ্বাস শুধু তোমাকে ভালোবাসবে।
চলবে,
(ধামাকা কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না।)