রুপালির রূপ পর্ব -১৫ ও শেষ

রুপালির রূপ

সাইয়্যেদাতুন নেছা আফনান

পর্ব:১৫

ড্রয়িংরুমে বসা ইকবাল হোসেন। হানিফ সওদাগর ইকবাল হোসেনের দিকে তাকিয়ে বলে,

– ভাই, তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো। দিবি?

– ভাইজান, আপনি আমার কাছে কিছু চাইবেন আর আমি দিবো না এমনটা কখনোই হয় নি।

– তোর মেয়েটাকে এখন থেকে আমার মেয়ে বানিয়ে দে।

– আমার মেয়ে তো আপনারও মেয়ে ভাইজান।

– সে তো আছেই। ফাহিমের জন্য তোর মেয়েটাকে চাইছি রে। ফিরিয়ে দিস না।

ইকবাল হোসেন চমকে যান। এমন কথা আশা করে নি সে। খুশিতে চোখমুখ চকচক করে ওঠে। বলে,

– কি বলেন ভাইজান! কেন রাজি হবো না। অবশ্যই রাজি হবো।

হানিফ সওদাগর খুশি হন। ইকবাল হোসেন নিজের স্ত্রী’কেও জানান। সেও খুশি হয়।

——-

খাবার টেবিলে বসে হানিফ সওদাগর রাইয়ান শেখকে বলে,

– কাকা আপনি কবে রুপালিকে আপনাদের বাড়িতে তুলতে চান?

রাইয়ান শেখ খুশি হয়ে বলেন,

– রুপালি রাজি হয়েছে?

– হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ।

ইকবাল হোসেন বলেন,

– ভাইজান আমার মনেহয় ফাহিমের বিয়ের দিনই রুপালির বিয়েটা হলে ভালো হয়।

——-

জমজমাট আয়োজনের মধ্যে রুপালি-রাদ এবং ফাহিম-আফরার বিয়ে হয়ে। রুপালি চলে যাওয়ার সময় বেশ কান্নাকাটি করে। ফাহিমেরও কষ্ট হচ্ছিলো অনেক। প্রিয় বোনটাকে আরেক বাড়িতে পাঠাতে সবারই কষ্ট হয়।

——-

আফরা ফাহিমের রুমে বসে আছে অনেক সময় হলো। সবার শোরগোলও কমে এসেছে তবে ফাহিম আসছে না। আফরা ধরে নেয় ফাহিমের হয়তো এখানে আসতে ইচ্ছে করছে না। আফরা কষ্ট মনে নিজের সাজগোজ উঠিয়ে ফেলে। শাড়ি খুলে থ্রি-পিস বের করে পরে নেয়। ওয়াশরুম থেকে ওজু করে আসে।

জায়নামাজ বিছিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে। মোনাজাতে নিজের মনের সকল দুঃখগুলো পেশ করে আল্লাহর দরবারে।

জায়নামাজ উঠিয়ে দাঁড়িয়েই চমকে যায়। দরজায় হেলান দিয়ে ফাহিম দাঁড়িয়ে। আফরা চোখের পানি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বলে,

– তুমি কখন আসলে?

– যখন আল্লাহর দরবারে আমার নামে অভিযোগ করছিলে তখন।

– অভিযোগ করি নি।

ফাহিম এগিয়ে আসে। আফরার কপালে চুম্বন করে বলে,

– এতদিন আমার যা ছিল সবটা অতীত। মোহনার সাথে এতদিন বৈবাহিক একটা সংযোগ ছিল, ও আমার স্ত্রী ছিল। তোমার সাথে বিয়ের কথা বলার পরেই আমি আইনজীবীর সাথে কথা বলে ডিভোর্স পেপার রেডি করি। আমি সাইন করে পাঠিয়ে দিলেও ও সাইন করে নি। তাই ওর থানায় গিয়ে ওর থেকে সাইন নিয়ে জমা দিয়ে এসেছি। আমার হৃদয়ে মোহনার কোনো অস্তিত্ব নেই। সবটা জুড়ে শুধু তুমি আফরা।

আফরার চোখের কোণে পানি জমা হয়েছে। ফাহিম আলতো হাতে মুছে দিয়ে বলে,

– একা একা তো নামাজ পড়ে নিয়েছো এখন আমি কি করবো?

– জি নাহ! ওটা তো ছিল তোমাকে যাতে নিজের করে পাই সেজন্য। এখন পেয়ে গিয়েছি তাই খুশিতে নামাজ পড়বো। আসো।

ফাহিম হাসে। প্রেয়সীর পাগলামো,বাচ্চামো কথা শুনে হাসে। প্রশান্তি ছেয়ে যায় অন্তরে। ভালো লাগা কাজ করে পুরোটা জুড়ে।

———

রুপালি চিন্তায় অস্থির। সাথে একরাশ লজ্জা ভীড় জমিয়েছে।

দরজা খুলে রাদ এসে রুপালির কাছে একটা প্যাকেট রাখে। বলে,

– এখনো এসব পরে বসে আছো? কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়ই? যাও চেঞ্জ করো। আর এই প্যাকেটটা নিয়ে যাও।

একরাশ চিন্তা নিয়ে প্যাকেটটা সাথে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে। প্যাকেট খুলেই অবাক হয় সাথে রাদের উপর মুগ্ধ হয়।

ফ্রেশ হয়ে বের হতেই রাদ ওয়াশরুমে ঢোকে।

ফ্রেশ হয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। রুপালি মন খারাপ করে বসে থাকে। ভাবে হয়তো মন খারাপ করেছে। এসব ভেবে আরো মন খারাপ হয়।

রাদ ফিরে আসে হটব্যাগ সাথে চা নিয়ে। রুপালিকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাদ। বলে,

– কি হয়েছে রূপ? বেশী খারাপ লাগছে? এই হটব্যাগটা নাও। আরাম লাগবে।

রুপালি লজ্জা মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

– আপনি এতকিছু কখন খেয়াল করলেন?

-এমা! আমার বউয়ের দিকে আমি খেয়াল রাখবো না তো কে রাখবে? দশটা না একটা মাত্র বউ! নাও চা খেয়ে নাও, ঠান্ডা হয়ে গেলে কাজ করবে না।

রুপালি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

– আপনি মন খারাপ করছেন?

– কেন?

– এই যে……..

– বাসর রাত তো আমাদের আরো পাঁচদিন আগে গিয়েছে। আর এসব নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। তুমি যে কষ্ট করছো এটা দেখে খারাপ লাগছে প্রিয়তমা।

রুপালি মুগ্ধ হয়ে রাদের দিকে তাকায়। রাদ রুপালিকে নিজের উরুতে শুইয়ে দেয়। কপালে চুমু এঁকে হটব্যাগটা পেটে দিয়ে দেয়। কপাল আলতো মালিশ করতে করতে বলে,

– রূপ, তোমার এই মূহুর্তে কি ইচ্ছে করছে?

– আপনার লেখনি ছন্দগুলো মুখের ভাষায় শুনতে।

রাদ দুষ্টু হেসে বলে,

– সত্যিই তাই? নাকি “ভালোবাসি” শুনতে?

——–

বারান্দায় দাঁড়িয়ে রুপালির ছবির দিকে তাকিয়ে আছে নাহিদ। সেদিন রাস্তায় পরে যাওয়ার পরে হানিফ সওদাগর নাহিদকে হসপিটালে ভর্তি করে। নাহিদের বাবা-মায়ের কাছে ফোন দিয়ে তাদের নিকট পৌঁছে বাসায় আসে।

নাহিদ ওর বাবা-মায়ের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।

নাহিদের মা নিজের ভুল বুঝতে পেরে বেশ কয়েকবার মাফও চেয়েছে। তবে মাফ চাইলেই তো আর সব কিছু ফেরত পাওয়া যায় না!

রুপালির ছবির দিকে তাকিয়ে নাহিদ বলে,

– “তুমি আমার হৃদয়ের গোপনে থাকা রূপ,

কারো জীবনের স্বর্গীয় মাখা সুখ,

ভালো থেকো প্রিয়তমা অন্যের বুকে,

আমি নাহয় জ্বলতে থাকি রূপ হারানোর শোকে।

———

রাদ রুপালির চুলের ভাজে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

” আজ হৃদয়ের গহীন থেকে বলছে,

তুমি রুপালি রূপের আগুনে ডুবেছো।

এ ডুবের কোনো কিনারা নেই,সীমানা নেই,

অন্তরের তৃষ্ণা মেটাও আজন্ম ধরে।

ওগো চাঁদ তুমি পূর্ণিমায় মাতো

অবমর্ষায় যাও ডুবে,

এই রুপালির অস্ত নেই কভু,

থাকবে সদা সুখে।

সমাপ্ত।

{

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here